নীড়ের খোঁজে ২ পর্ব-০২

0
38

#নীড়ের_খোঁজে
#সিজন_দুই
পর্বঃ০২
#জান্নাতুল_বিথী

শৈবাল কথা শেষ করে প্রস্থান করে। এদিকে চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে থাকে তুহা৷ শৈবালের কথা গুলো তুহার নিকট অনেকটা এরকম লেগেছিলো, তুহার বাবা তুহাকে শৈবালের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন শৈবাল যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে তাকে ব্যবহার করবে। কথা গুলো ভেবেই তুহা নিজেকে সামলে মনে মনে ভাবে,

“আপনার মনে কি চলে আমি জানিনা। তবে যদি ভেবে থাকেন আপনার ইচ্ছে মতো আমাকে চালাবেন তাহলে আপনি ভুল মিস্টার শৈবাল শাহরিয়ার। আমি আপনার কাছেই থাকবো এবং প্রতিটা মুহূর্তে আপনাকে অনুভব করাবো আমি কি জিনিস। আমাকে অবলা ভেবে ভুল করবেন না!”

কথা গুলো মনে মনে ভেবে তুহা পুনরায় আফসানা বেগমের দিকে তাকায়। তিনি ছেলের যাওয়ার দিকে তখনো তাকিয়ে ছিলেন। তুহা হালকা কাশি দিয়ে তার মনোযোগ আকর্ষন করে বলে,

“আমার ক্লাস আছে মামনি। আমি কি ভার্সিটিতে যেতে পারবো? নাকি এখানেও তোমার নাক উঁচু ছেলে বাঁধা দিবে?”

তুহার কথায় আফসানা বেগম থতমত খেয়ে যায়। আমতা আমতা করে আওড়ায়,

“আজকেই যেতে হবে? আচ্ছা থাক যেতে পারিস, তবে শৈবাল বের হয়ে যাক তারপর গেলেই হবে।”

আফসানা বেগমের কথা শুনে হাসে তুহা৷ শৈবাল পুনরায় আবার ফিরে এসেছে কেন তা জানে না সে। তবে কোনো কিছু ফেলে রেখে গিয়ে সেটা যে এখন নিতে এসেছে তা বুঝেছে। তুহা কিছু না বলে সোজা উপরে যায়। ততক্ষণে শৈবাল মোবাইল হাতে ফিরে এসেছে। সিঁড়ির শেষ মাথায় তাদের দেখা হয়। তুহা শৈবালকে দেখে এমন ভাবে চোখ ফিরিয়ে নেয় যেন শৈবালের জায়গায় সেখানে কোনো একটা আবর্জনা পড়ে আছে। তাকে এড়িয়ে গিয়েই ক্ষান্ত হয়নি সে, বরং শৈবালকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,

“অ*সভ্য, ইতর একটা ছেলে কখনো কাউকে বিয়ে করার যোগ্য হতেই পারেনা।”

তুহার কথা শুনে শৈবালের পা থেমে যায়। হতভাগ হয়ে চেয়ে থাকে তুহার দিকে। তুহা তখন মাত্র কয়েক সিঁড়ি উপরে উঠেছে। ঠিক তখনি শৈবাল হু*ঙ্কার ছাড়ে,

“দাড়াও, এ্যাই মেয়ে কি বললে তুমি?”

তুহা শৈবালের ডাক শুনেও তাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে রুমে ঢুকে যায়। শৈবালের মাথায় তখনো তুহার বলা কথাটা ঘুরঘুর করতে থাকে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। মেয়েটার কত্তো বড় সাহস তাকে কথা শোনাতে আসে। তার তাড়া আছে কারণে, নাহলে সে মেয়েটাকে ভালো করে বুঝিয়ে দিতো শৈবাল কি জিনিস।
.
তুহা ভার্সিটির চত্বরে উপস্থিত হয়ে আশে পাশে তাকায়। পরিচিত কারো মুখ না দেখে হতাশ হয়ে ক্লাস রুমের দিকে এগোয় তুহা৷ অবিশ্বাস্য যে তাদের দলের কাউকেই তুহা দেখেনি। তুহা ক্লাসে গিয়ে বসতেই একে একে পাঁচজন ঘিরে ধরে তাকে। তাদের মধ্যে শান্ত বিচলিত স্বরে আওড়ায়,

“কালকে থেকে তোর ফোন বন্ধ কেনো তুহা? কোন চিপায় পড়ে থাকিস যে ফোনের দিকে ধ্যান থাকেনা?”

উত্তর দেয় না তুহা। তাকে ঘিরে পাঁচজনই বসে পড়ে। ইকরা বলে উঠে,

“তোর হঠাৎ কি হলো ভাই? কথা বলছিস না কেন?”

শান্তকে বেশ খানিকটা অশান্ত দেখায়। তাদের মধ্যে সব থেকে বুদ্ধিমান ছেলে হলো শান্ত। আর মেয়েদের মধ্যে তুহা আর ইফা। ইফা তাদের ছেলে বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে শুধালো,

“তোরা ক্লাসে বস আমরা একটু কমনরুমে যাই।”

হিমেল, শান্ত আর রাতুল অবাক হয় ইফার কথায়। ওরা কিছু বলতে গেলে শান্ত চোখ দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে বলে৷ ইফা আর ইকরা তুহাকে নিয়ে কমনরুমের দিকে চলে যায়। এই এতোটুকু সময়ে তুহা চুপচাপ থাকে। কমনরুমে গিয়ে ইফা তুহাকে একটা বেঞ্চে বসিয়ে আলতো করে গালে হাত বলে,

“কি হয়েছে পাখি? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”

তুহা কিছু না বলে নিচের দিকে তাকায়। ইফা খানিকটা অবাক হয়ে আরেকটু নরম স্বরে আওড়ায়,

“তোর গলায় এগুলো কিসের দাগ তুহা? কথা বলছিস না কেন?”

তুহা নিজেকে সামলাতে পারে না। ইফাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। তার কান্না দেখে নরম মনের ইকরাও কেঁদে ফেলে৷ সব কিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তারপরো প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর কষ্ট তার সহ্য হচ্ছে না৷ ইকরা একটুখানি এগিয়ে গিয়ে তুহার মাথায় হাত রেখে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। প্রায় দশ মিনিট কেঁদে তুহা খানিকটা শান্ত হয়। ইফা তাকে পানি খেতে ইশারা করে তার হাতে পানির বোতল এগিয়ে দেয়৷ তুহা ঢকঢক করে পুরো বোতল খালি করে। ইকরা কিছুটা নড়েচড়ে তার পাশে বসে বলে,

“কি হয়েছে তোর? এভাবে কান্না করছিস কেন? তুই কি চ্যা*কা খেয়েছিস?”

ইকরার অবান্তর কথা শুনে চোখ রাঙায় ইফা। তুহা উত্তর দেয় আরো দুই মিনিট পরে৷ মৃদু স্বরে বলে,

“আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে কাল। সব কিছু শেষ হয়ে গিয়েছে ইফা, সব কিছু। আমার সাজানো গোছানো জীবন টা নষ্ট করে দিবে ওই ছেলেটা৷”

তুহার কথা শুনে যেন ইফা আর ইকরার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। লাস্ট কোনদিন তারা এতো অবাক হয়েছে জানা নেই। ইফা সামান্য একটা ঢোক গিলে বলে,

“কি হয়েছে খুলে বলবি? কালকে থেকে হঠাৎ করে গায়েব হয়ে গিয়েছিস। আজ এসে বলছিস তোর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বিয়ে জিনিসটা এতো সহজ?”

তুহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“জীবনটা যদি হয় তুহা পাটোয়ারীর তাহলে সবই সম্ভব।”

তুহা ইফা আর ইকরাকে গত কাল থেকে আজকে পর্যন্ত ঘটা সব ঘটনা বলে। তাদের বিয়ে থেকে শুরু করে শৈবালের প্রতিটা আচরণ সম্পর্কে অবগত করে তাদের৷ সবটা শুনে ইকরা বেফাঁসে বলে ফেলে,

“ভাই তোর জামাই তো আস্ত একটা বেয়াদব। মানুষ হয়ে পশুর মতো আচরণ করছে কেন?”

তুহা প্রতিত্তর করেনা। ইফা ঠোঁট কামড়ে চিন্তিত স্বরে বলে,

“তোর জামাই কি করে?”

“ডাক্তার!”

তুহার জবাবে অবাক হয় দুজনে। ইকরা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“আমি তো ভেবেছি তোর বাপ কোনো অশিক্ষিত কাঙালের সাথে তোকে বিয়ে দিয়েছে। এখন তো ধারণা বদলে যাচ্ছে।”

তুহা জবাব দেয় না। এদিকে টেনশনে ইফার মাথা ফেটে যাচ্ছে। ওই মানুষটাকে সে কিভাবে বলবে তুহার বিয়ের কথা? ছেলেটা যে মরে যাবে। তার ভাবনার মাঝেই তাদের ডাক পড়ে। তুহা নিজেকে স্বাভাবিক করে কমনরুম থেকে বের হয়। শান্ত, হিমেল আর রাতুল বাহিরে দাড়িয়ে আছে। ওরা বের হতেই তিনজনে এগিয়ে আসে। রাতুল তুহার মুখের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে,

“কিরে ড্রামাকুইন কান্না করেছিস কেনো?”

তুহার উত্তর ভেসে আসে ইকরার মুখ থেকে,

“গত কালকে তুহার বিয়ে হয়েছে।”

শান্তর হাতে পানির বোতল ছিলো। ইকরার কথা শুনে বোতলটা হাত থেকে খসে নিচে পড়ে যায়৷ আকস্মিক কথাটা তার বিশ্বাস হয়নি। তারপরো ভয়ে ভয়ে বলে,

“এটা কি সত্যি তুহা?”

এবারো হ্যাঁ বলে ইকরা উত্তর দিলে তাকে জোরে ধমকে উঠে শান্ত। রাগত স্বরে আওড়ায়,

“তোকে জিজ্ঞেস করেছি আমি? যাকে প্রশ্ন করেছি সে উত্তর দিবে। তোর ননস্টপ বকবকানি দয়া করে বন্ধ কর।”

শান্তর ধমকে ইকরা ইফা দুইজনেই কেঁপে উঠে। শান্ত রেগে গেলে হুশ থাকেটা ভেবে তুহা ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

“এতে এতো রিয়েক্ট করার কি আছে শান্ত? যেটা সত্য সেটাই বলেছে ইকরা।”

তুহার কথায় শান্ত আরো রেগে যায়। কিছু বলতে গেলে হিমেল বাঁধা দিয়ে বলে,

“তুই হঠাৎ কাউকে না জানিয়ে এভাবে বিয়ে করার মানে কি?”

“কোনো মানে বলতে ইচ্ছে করছে না আমার।”

কথাটা বলে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যায় তুহা। তখনি তার ফোনে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ আসে। মেসেজটা দেখে তুহা রেগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে। সেখানে গুটি গুটি অক্ষরে লেখা ছিলো,

“বিয়ে করেছ নতুন বউদের মতো তিনদিন বাড়ি থেকে বের হবে না। সেটা না করে বিয়ের পরেরদিনই ভার্সিটি গিয়ে হাজির? নতুন বউ নতুন বউয়ের মতো থাকো নাহলে পরে পস্তাতে হবে মিসেস।”

চলবে,,,,,,,