#নীরবে_নিভৃতে
#পর্ব_১৯
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
( সতর্কতা – এই পর্বটি শুধুমাত্র কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)
” কী হয়েছে, কেনো হয়েছে, কখন হয়েছে আমি জানি না মেহেক কিন্তু এটা হয়েছে। হ্যাঁ তোমার প্রতি একটা অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে আমার। তবে তোমার অনিচ্ছায় এভাবে ইন্টিমেট হতে চাই না আমিও। আমি চাই তুমি নিজে ইচ্ছে করে এসো আমার কাছে। ভালোবাসার দাবি নিয়ে। ”
” আবারো ঢং! ”
” ঢং? নাহ সুন্দরী এটা আমার মনের কথা, ভালোবাসার কথা। ”
মেহেক জোরে হাসতে লাগলো ভয়ংকর রকমের সুন্দর সেই হাসি। যার অন্তরালে লুকিয়ে আছে রাগ, ঘৃণা, বিদ্রুপ। শাড়ির আঁচল বুকে টেনে সবকিছু ঠিকঠাক করতে করতে মেহেক বলে,
” আপনার মতো মানুষের মুখে ভালোবাসা শব্দ মানায় না। কারণ ভালোবাসলে কেউ জোর করে না, অসম্মান করে না, এভাবে নিজের ইচ্ছেমতো সবকিছু চাপায় না, তাকে কষ্ট দেয় না মিস্টার রোশান।”
রোশন মেহেকের হাতদুটো নিজের হাতে ধরে শান্তভাবে বসলো। চোখে চোখ রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
” সবার ভালোবাসার ধরণ তো এক রকম না সুন্দরী। আমি তো নায়ক নই! আমার ভালোবাসার মধ্যেও তাই এসব গুণ নেই। আমি সমাজের চোখে ভিলেন। তাই আমার ভালোবাসার ধরণও মনে করো ভিলেনের মতোই। ”
” কিন্তু আমি চাই না আপনাকে, আপনার অস্তিত্বকে, আপনার ভালোবাসাকে। ”
মেহেক নিজের হাত সরিয়ে ফেলে বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে এগোলো। রোশন কালক্ষেপণ না করে চটপট উঠে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে শুধালো,
” কিন্তু কোথায় যাচ্ছ? নিজের দিকে দেখো, শাড়ি ঠিকমতো পরা হয়নি। বাইরে গেলে পোলাপান এরকম দেখবে।”
” দেখুক, সমস্যা কী? আপনি তো কতো মেয়েদের নগ্ন অবস্থায়ও দেখেছেন। আমাকেও কেউ দেখুক, স্পর্শ করুক। সারাজীবন হাডুডু খেলে এখন পবিত্র মেয়ে আশা করেন? ”
” মেহেক! চুপ একেবারে চুপ। মাথা গরম করবে না কিন্তু…. ”
রোশনের রাগান্বিত মুখ দেখে মেহেকের দারুণ লাগছে। তাই ইচ্ছে করে বুকের কাছ থেকে আঁচল আরেকটু সরিয়ে দরজার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করে। রোশন হাত ধরে হেঁচকা টানে ঘরের মধ্যে রেখে দরজা একেবারে লক করে দেয়।
” কী হলো? মনে নেই? প্রথম যেদিন আমাকে আনা হয়েছিল আপনার এই সো কলড পোলাপান আমার সাথে গ্রুপ সে* করতে চেয়েছিল? সেদিন আমার সমস্যা ছিলো। আজ নেই। সবার সাথে হাডুডু খেললেই তো আপনার লেভেলের হতে পারবো তাই না?”
মেহেকের এমন আচরণে নিজের রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে রোশন। রাগে কপালের শিরাগুচ্ছ টনটন করছে, দুচোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তবুও নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছে রোশন। মেহেকের ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। ও ভাবছে এসব করলে রেগেমেগে হয় খুন করবে ওকে নয়তো বাড়ি দিয়ে আসবে। এখানে থাকার চেয়ে মৃত্যু অধিক ভালো। কিন্তু আচমকা রোশন এসে মেহেককে কোলে তুলে নেওয়াতে চমকাল মেয়েটা। রোশনের চোখে চোখ রাখতেই ভয়ে কেঁপে উঠল ওর সমস্ত শরীর। মনে হচ্ছে নরক থেকে কোনো শয়তান উঠে এসেছে। যার চোখে আগ্নেয়গিরির জলন্ত লাভা ফুটছে। রোশন মেহেককে বিছানায় ফেলে দেয়। তারপর পাশের রুমে গিয়ে দু’টো হ্যান্ডকাফ নিয়ে আসে। মেহেকের পিলে চমকে উঠে সেসব দেখে লোকটা কী করবে এখন! রোশনের ভাবগতিক বিশেষ সুবিধার ঠেকছে না। রাগে কি পাগল হয়ে গেছে?
” খুব শখ সে* করার? তা-ও অতগুলো ছেলের সাথে? আরে ওরা যখন বলেছিল তখন তুই আমার কেউ ছিলিস না আর আমিও একটা জানোয়ার ছিলাম। কিন্তু এখন তুই আমার বউ, আমার ভালোবাসা, আমার সব সবকিছু। তোর দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও তাকে আমি মাটিতে মিশিয়ে ফেলবো। আর সেই তুই কী বললি? তোর শরীর দেখবে ওরা? ওয়েট!”
রোশন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মেহেকের হাতদুটো হ্যান্ডকাফ দিয়ে আঁটকে দিলো। মেহেক ভয়ে চুপসে গেছে ঠিকই কিন্তু রাগ হচ্ছে। নিজেই নিজের কবরটা খুঁড়ল মনে হয়। কিন্তু চুপ করে থাকলে তো হবে না।
” খবরদার আমাকে কিছু করবি না তুই। আমি তোকে ঘৃণা করি। তুই এখনো একটা জানোয়ারই আছিস আর তাই থাকবি।”
” চুপ! ঘৃণা বলিস আর ভালোবাসা বলিস তোর সবকিছু আজ থেকে আমার জন্য। ভালোবাসায় না থাকি ঘৃণা তেই রইলাম। তোর জ্বালা আমি মিটিয়ে দিচ্ছি। বাসর রাতে তুই গ্রুপিং চাচ্ছিলিস না? নে সিঙ্গেল সে* সহ্য করতে পারিস কিনা দেখ।”
রোশন উন্মাদের মতো আচরণ করছে। হিংস্র প্রাণীর মতো ক্ষিপ্র হয়ে উঠেছে। মেহেকের শাড়ি খুলে মেঝেতে ফেলে আস্তে আস্তে সমস্ত পোশাক খুলে ফেললো। মেহেক চেঁচিয়ে যাচ্ছে।
” কুত্তা* বাচ্চা! হারা*, তোকে খুন করে ফেলবো।”
রোশন কিচ্ছু শুনছে না। সমস্ত কথারা ওর কানের বাইরে পর্যন্তই যেনো আঁটকে যাচ্ছে। মেহেকের চোখের জল, চেঁচামেচি কিচ্ছু রোশনকে থামাতে পারছেনা। উন্মত্ত হয়ে গেছে সে। রাত কিছুটা গভীর হতে শান্ত হয় রোশন। হুঁশে ফিরে মেহেকের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই আঁতকে উঠে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে মেয়েটা। চোখেমুখে জল শুকিয়ে, কাজল লেপ্টে আছে। ঘাম আর চোখের জল মিলেমিশে একাকার অবস্থা। একটু আগের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে স্মৃতিচারণ করতেই অবাক হয় রোশন। কী হয়ে গেলো! এভাবে মেয়েটার ধারণা সত্যি করে নিজেকে প্রকৃত পশু প্রমাণ করলো সে? নিজের উপর তীব্র রাগে বিছানায় সজোড়ে ঘুষি মারলো রোশন। পাশ থেকে প্যান্ট নিয়ে নিজের নগ্নতা আড়াল করে মেহেককেও শাড়ি দিয়ে ঢেকে দিলো। বসা থেকে উঠে পানির জগ নিয়ে এসে মেহেকের চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিলো বারকয়েক।
” মেহেক? সুন্দরী? এই সুন্দরী! কথা বলো একটু। প্লিজ একটু কথা বলো। আমি….আমি আর কখনো এমন করবো না। প্লিজ তাকাও…..”
বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে বলছে রোশন। চোখেমুখে পানির ছিটে লাগায় চোখ পিটপিট করছে।
” প্লিজ তাকাও…”
সম্বিত ফিরে আসাতে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাচ্ছে মেহেক। শরীর ভীষণ দূর্বল লাগছে। হাত-পা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। চোখের সামনে রোশনকে দেখে সবকিছু খেয়ালে আসে। ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে ফেলে মেহেক। রোশন কাঁদতে কাঁদতে হাসে। দু’হাত গালে রেখে থেমে থেমে বলে,
” এই সুন্দরী, আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এই শোনো আমি এসব করতে চাইনি কিছু। বিশ্বাস করো সত্যি আমি চাইনি। তুমি ওসব কেনো বললে? আমার মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল। রাগে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম হয়তো। সরি! তুমিও আমাকে মারো। লাগলে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দাও তবুও মুখ ফিরিয়ে থেকো না। ”
মেহেক চুপ করে আছে। কথা বলার শক্তিটুকুও যেনো অবশিষ্ট নেই। রোশন নিজের মতো করে আরো নানান কথা বলতে থাকলো কিন্তু মেহেক কিচ্ছু বললো না। আচমকা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। চমকাল, থমকাল রোশন। মুহুর্তেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো মেয়েটা। রোশন বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তর্ক, রাগারাগি, মারামারি কিছু করার অবস্থা নেই এখন মেহেকের। তাই নিজেকে আর ছাড়ানোর চেষ্টাটুকুও করলোনা সে। ক্লান্ত শরীরে রোশনের বাহুডোরে চোখ বন্ধ করে ফেললো আবারো।
বাড়ির উঠোনে বসে আছেন সিদ্দিক আহমেদ। বসে আছেন বলতে ঝিমাচ্ছে। কী হলো আর কী হবে সেই নিয়ে ভাবনার অতলে হারিয়ে যাচ্ছেন বারবার।
” পান্তা খেয়ে নাও গো। আরো দেরি করে খেলে টক লাগবে। বেলা তো কম হলোনা ! ”
স্ত্রী আনজুমের কথায় ভাবনার ছেদ ঘটে সিদ্দিকের। মিষ্টিও দাঁড়িয়ে আছে মায়ের পাশে।
” হ্যাঁ বাবা খেয়ে নাও। ”
” তোরা খেয়েছিস?”
” হ্যাঁ বাবা।”
” আমি খাবো না এখন। একেবারে দুপুরে গরম ভাত খাবো। ”
মিষ্টি জানে বাবা দুপুরে খাওয়ার কথা বলে সকালের খাওয়ার কথা এড়িয়ে গেছে। এমনিতেই মেয়ের জন্য চিন্তা তার উপর গ্রামের লোকজনের কথাবার্তায় মনটা বিষিয়ে যাচ্ছে। মিষ্টির খুব করে ইচ্ছে করছে সবকিছু খুলে বলবে। যে ছেলে তার আপুর জন্য তাকে ওরকম একটা জায়গা থেকে বের করে এনেছে সে নিশ্চয়ই ততটা খারাপ নয় যতটা সবাই জানে, ভাবে। তাছাড়া সমস্ত রাস্তায় মেহেকের প্রতি তীব্র ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছিল ওর আচার-আচরণে। হ্যাঁ ভালোবাসলে কথাবার্তায়, আচার-আচরণে বোঝা যায়। মিষ্টি মনস্থির করে ফেললো। রাতে সবকিছু বলবে বাবা-মাকে। সব!
পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙেছে মেহেকের। ক্লান্তিতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলো ভোররাতের পর থেকে। তাই উঠতে এতো বেলা হলো। চোখ মেলে তাকিয়ে আশেপাশে নজর বুলিয়ে দেখল ঘরে সে একা! তড়িঘড়ি করে উঠে বসতেই নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠল। কোনোমতে শাড়ি দিয়ে ঢাকা! গতকাল রাতের ঘটনার কথা মনে পড়তেই ঘৃণায় চোখমুখ কুঁচকে ফেললো মেহেক।
“ জানোয়ার! ”
না চাইতেও মুখ থেকে শব্দটা বেরিয়ে এলো মেহেকের। আশপাশে তাকিয়ে বাকি জামাকাপড় শরীরে পেঁচিয়ে উঠে দাঁড়ালো। সামনে ড্রেসিং টেবিল একটা, ওপাশে হয়তো আরেকটা রুম আছে। বাথরুম? ভাবল মেহেক। দরজা খুলে চেক করতে গিয়ে দেখল সত্যি বাথরুম। কিন্তু এই শাড়ি পরে কীভাবে থাকবে আবার! এসব ভাবতেই বাথরুমে অন্য পোশাক দেখতে পেলো। থ্রিপিস রাখা আছে, লাল রঙের। নিশ্চিত যে রোশান রেখেছে এটা। জুতো মেরে গরু দান!
চলবে,