নীলাবতী পর্ব-০৩

0
192

#নীলাবতী
[৩য় পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

নীলাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চলে গেলো। নীলাকে গার্ড দেওয়ার জন্য অনেক গুলো পুলিশ নিয়ে আসে সাথে। নীলাকে হাসপাতালের বেডের উপরে শুইয়ে দিয়ে সবাই বাহিরে চলে গেলো। এবার নীলা চোখ খুলে তাকাল। সে তাকিয়ে দেখে এখানে কেউ নাই। আসলে তখন নীলার কিছুই হয়নি। নীলা ইচ্ছে করেই অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করছে। নীলা এবার বেড থেকে উঠে দরজার কাছে এসে বাহিরে উঁকি মেরে দেখে এখানে অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। নীলা আবার বেডের উপরে শুইয়ে পড়ে। নীলা ইচ্ছে করে চিৎকার করতে শুরু করে। কারণ নীলার উদ্দেশ্য এখান থেকে সে যে ভাবেই হোক পালাবে। নীলার চিৎকার শুনে নিহান ভিতরে চলে আসে।

— কি হইছে তোমার? এই ভাবে চিৎকার করছো কেন?

— আমার মাথা খুব বেশি ব্যাথা করছে।

নিহান এবার ডাক্তারকে ডাকতে চলে গেলো। ডাক্তার একজন নার্সকে ঘুমের একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে বলল রোগীকে দেওয়া জন্য। নার্স ইঞ্জেকশন নিয়ে নীলার কেবিনে আসে। নার্স নিহানকে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে সে ভিতরে চলে আসে। নার্স নীলার কাছে এসে যখনই নীলাকে ইঞ্জেকশন দিবে তখনই নীলা চোখ খুলে তাকিয়ে নার্সের মুখ চেপে ধরে। আর নীলার জন্য আনা ঘুমের ইঞ্জেকশন সেই নার্সকে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। নীলা এবার নার্সের সাদা ড্রেস পড়ে আর নার্সকে তার যায়গায় শুইয়ে দেয়। নীলা মুখে মাক্স পড়ে কেবিন থেকে বের হবে এমন সময় নিহানের সাথে ধাক্কা খায়। নীলা অনেকটা ঘাবড়ে যায়। নীলা ভাবতে থাকে নিহান কি তাকে চিনে ফেলছে নাকি? এটা ভেবে নীলা একটু ঘাবড়ে যায়। কিন্তু নিহান নীলাকে চিনতে পারেনি। নিহান নিজে থেকে সরি বলল। নীলা কোনো কথা না বলে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেলো। নীলা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে একটা দোকানে গিয়ে রাসেলকে ফোন দেয়।

— হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?

— রাসেল আমি নীলা বলছি।

— আপু! এই নাম্বার কার?

— একটা দোকানের, শোনো বেশি কথা বলার সময় নাই। আমি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছি।

— হাসপাতাল মানে?

— আমি তোমাকে পরে সব বলব। তুমি আমার জন্য একটা নতুন ফোন আর সিম এর ব্যবস্থা করে তাড়াতাড়ি আমাদের ক্লাবে চলে আসো। আমি ওখানেই যাচ্ছি।

— ঠিক আছে আপু।

এবার নীলা ফোন কেটে দিয়ে ক্লাবে চলে গেলো।

ওই দিকে অনেক সময় পার হয়ে গেলো। নিহান এবার কেবিনের ভিতরে আসে নীলাকে দেখার জন্য। কিন্তু নিহান কেবিনে এসে দেখে এখানে নীলা নাই, নীলার যায়গায় পড়ে আছে নার্স। নিহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে চলে আসে। নিহান এখন বুঝতে পারে তখন তার সাথে ধাক্কা নীলা খেয়েছে। নিহান মেয়েটার বুদ্ধি দেখে বেশ অবাক হলো। কারণ এই প্রথম কেউ নিহানের সামনে থেকে পালিয়ে গেলো। নিহান এবার সবাইকে নিয়ে থানায় চলে গেলো।

অন্যদিকে নীলা রাসেলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাসেল নীলার জন্য একটা নিউ স্মার্ট ফোন আর একটা সিম নিয়ে আসে।

— আপু আপনার নিউ ফোন আর সিম।

— ধন্যবাদ।

— কিন্তু আপু আপনি থানা থেকে কি ভাবে আসলেন? তারা কি আপনাকে ছেড়ে দিয়েছে?

— না,

নীলা এবার সব কিছুই বলল রাসেলের কাছে।

— আচ্ছা আপু বুঝলাম না আপনাকে কি ভাবে পুলিশ খুঁজে পেলো! আমাদের এই জায়গার কথা তো আমারা ছাড়া আর কেউ জানেনা। তাহলে কি আমাদের মধ্যেই কেউ!

— ওই সব আপাতত বাদ দাও। আমাদের কাজ শুরু করতে হবে। সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলো। আর আজ রাতে আমার একটা কাজ আছে।

— আমাকে থাকতে হবে আপু?

— না।

— ঠিক আছে।

এবার নীলা আর রাসেল কিছুক্ষণ কথা বলে। কথা বলা শেষ করে রাসেল তার বাসায় চলে গেলো। নীলা মারিয়ার বাসায় যাওয়ার প্ল্যান করছে। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। নীলা মারিয়ার বাসায় ঢুকে সোজা মারিয়ার রুমে গিয়ে বসে থাকে।

অন্যদিকে নিহানের সিনিয়র অফিসার নীলা পালিয়ে যাওয়ার ব্যপারে জানতে পেরে সে থানায় চলে আসে।

— নিহান আমি তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি। তুমি এতো কেয়ারলেস কি করে হলে? সামান্য একটা মেয়ে তোমাদের সামনে দিয়ে চলে গেলো আর তোমরা কিছুই করতে পারলেনা। দেখো নিহান মেয়েটাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এখানে দেখতে চাই। উপর মহল অব্দি যদি খবর চলে যায় তখন কি হবে বুঝতে পারছো! তোমার আর আমার দুজনের চাকরি চলে যাবে।

নিহান কোনো কথা না বলে চুপচাপ হয়ে আছে। সিনিয়র অফিসার অনেক কথা বলে চলে গেলো। নিহান একটা কথাও বলেনি।

হাবিলদার এসে নিহান কে বলল — স্যার এখন কি করবেন? বড় স্যার তো ২৪ ঘন্টার সময় দিয়ে গেলো।

— দেখতে থাকো কি হয়! ২৪ ঘন্টা অনেক সময়।

এই কথা বলে নিহান কাওকে ফোন দিয়ে কথা বলে ফোন রেখে দেয়।

এই দিকে মারিয়ার রুম পুরো অন্ধকার হয়ে আছে। একটা চেয়ারের মধ্যে বসে আছে নীলা। মারিয়া খাবার খেয়ে নিজের রুমে এসে লাইট অন করে দরজা বন্ধু করে খাটের দিকে এগিয়ে আসতেই চেয়ারের দিকে চোখ পড়ে তার। মারিয়া একটু ভয় পেয়ে যায়। মারিয়া এবার চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেলো। মারিয়া চেয়ারের কাছে যেতেই নীলা চেয়ার ঘুরিয়ে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। মারিয়া নীলাকে এখানে দেখে ভুত দেখার মতো ভয় পেয়ে যায়।

— নীলা তুই এখানে?

— অবাক হলি তাইনা! আমিও সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম। যেদিন দেখলাম তুই আমার সব থেকে কাছের বন্ধু হয়ে আমার সাথে বেঈমানী করলি। আমি তো তোকে নিজের বোন মনে করতাম আর সে তুই আমার সাথে এমন করলি?

— নীলা আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ। আমি জানি আমার ভুল হয়েছে। তুই আমার বয়ফ্রেন্ড কে হত্যা করলি আমি কিছু বলিনি। আমার ভাইকে কেন মারলি? আমি তো তোর কাছে অনেক অনুরোধ করছি আমার ভাইকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।

— তোর ভাই মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলে। এসব মানুষকে বাঁচিয়ে রেখে আমি দেশের জনসংখ্যা বাড়াতে চাইনা। যাইহোক তোর জন্য আমাকে জেলে যেতে হয়েছে। আর তুই আমার সাথে বেঈমানী করলি। বেঈমান দের শাস্তি মৃত্যু।

— নীলা আমাকে তুই ক্ষমা করে দে প্লিজ।

— তোর কোনো ক্ষমা নাই। বেঈমান দের ক্ষমা করা যায়না।

এই কথা বলে নীলা মারিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। নীলা একটা চাকু বের করে মারিয়ার গলায় বসিয়ে একটা টান মারে। সাথে সাথে মারিয়া ঘুম থেকে উঠে যায়। ভয়ে মারিয়ার শরীর ঘেমে একাকার হয়ে যায়। মারিয়া এক গ্লাস পানি নিয়ে খেয়ে নেই। মারিয়া বুঝতে পারে সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছে। মারিয়া এবার খেয়াল করল চেয়ারটা নিজে থেকে নড়ছে। মারিয়া ভয়ে ভয়ে চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেলো। চেয়ার ঘোরাতেই দেখে চেয়ারের উপরে বসে আছে নীলা। নীলাকে দেখে মারিয়া ধপাস করে ফ্লোরের উপরে বসে পড়ে।

— নীলা তুই এখানে কখন আসলি?

— আসছি অনেক সময় হয়েছে। দেখলাম তুই ঘুমিয়ে আছিস তাই বিরক্ত করলাম না।

— কিন্তু তুই না জেলে থাকার কথা তুই এখানে কেন?

— জেলে আমাকে আঁটকে রাখা এতো সহজ নাকি? আমি তোর কাছে একটা জিনিস জানতে এলাম।

মারিয়া ভয়ে ভয়ে বলল — কি জিনিস?

— তুই আমার সাথে এমন বেঈমানী কেন করলি? তোর ভাইকে মেরে ফেলছি সেই জন্য? তাহলে শোন তোর ভাই এর ঘটনা। তোর ভাই মানে সে-তো আমারও ভাই। কেউ কি তার ভাইকে হত্যা কর‍তে চায়?

— কারো কথা আমি জানিনা, তোর কথা আমি জানি। যে নিজের হাসবেন্ডকে হত্যা করতে হাত কাপে না সে ভাইকেও ছাড় দিতে পারেনা।

— রাইট, যে অন্যায় করবে সে তার ফল পাবে। এটাই আমার রুলস। এখন তুই বল আমি তোর সাথে কি করব? তুই আমার বিশ্বাস ভেঙে দিলি।

এই কথা বলে নীলা মারিয়ার দিকে এগিয়ে গেলো।

চলবে?