#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২২
আইরাত তো ভেবেছিলো যে আজই এখান থেকে কেটে পরবে কিন্তু না আজও নাকি আর বাসায় যাওয়া হবে না। আগামীকাল যেতে হবে। মানে এই সাইকোর সাথে আজ আর কাল মিলিয়ে আরো দুই দিন থাকতে হবে। ধুর ভালো লাগে না। সাজ-সকাল বেলা ঘুম ভেঙে গিয়ে এই চিন্তা গুলোই যেন মাথায় বারবার আসা-যাওয়া করছে। আইরাত বিছানাতে হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে ওপরের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে এই কথা গুলো ভাবছে। বড়ো বড়ো কিছু হাই তুলে মাথা চুলকাতে চুলকাতে উঠে পরে। নিজের ফোন খোঁজার জন্য পাশে তাকাতেই দেখে সাইড টেবিলের ওপর এক কাপ গরম কফি আর তার পাশেই একটা ছোট লাভ স্যাপের স্যান্ডউইচ। তাতে রেড কালার জ্যাম দিয়ে ছোট করে স্মাইলি আকা আছে। আইরাত তা দেখে খানিক কপাল কুচকায়। সে তো ঘুমে ছিলো। এর মধ্যে ভেতরে কে এলো। আর আসলেও সে একটুও টের পেলো না কেন।
আইরাত;; এগুলো আবার কে দিয়ে গেলো। কে এসেছিলো? আরে ধুর যাজ্ঞে আমারই ভালো হলো ব্রেকফাস্ট হয়ে যাবে।
আইরাত খুশিতে গদগদ হয়ে ট্রে টা হাতে তুলে নিলো। কফির মগ টা হাতে নিতেই দেখে ট্রে তে একটা চিরকুটের মতো কি যেন। তা হাতে নিয়ে ভাজ খুলে পড়তে থাকে…
“”” Good morning Honey, today i have a surprise for you “””
সাধারণত আইরাত বেশ অবাক। কি এমন সারপ্রাইজ আছে তাই ভাবছে। আর কে দিলো এগুলো। আইরাতের সন্দেহ কিছুটা আব্রাহামের ওপর গেলেও পরক্ষণেই তা আবার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। উনার খেয়ে দেয়ে তো কোন কাজ নেই যে এমন কিছু একটা করতে যাবে। চিরকুট টা হাত দিয়ে দুমড়েমুচড়ে ট্রে তেই রেখে দেয়। কফি আর স্যান্ডউইচ টা খেয়ে উঠে পরে। আইরাত ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হচ্ছে।
আইরাত;; ব্যাপার কি। এই কোথায় গেলো। আজ কোন দেখা নেই, কথা বলা নেই। গেলো টা কোথায়। অন্যান্য দিন তো সকাল হতে না হতেই হাজির হয়ে পরে। আজ এই কোথায়? (মনে মনে)
আইরাত আজ সকাল থেকে আব্রাহাম কে দেখে নি। যে কিনা সকাল থেকেই মাথা খাওয়া শুরু করে দেয় সে আজ নেই। আইরাত নিজের ফোন টা হাতে করে নিয়ে বাইরে বের হয়ে পরে। বাইরের দিকে রিসোর্টে অনেক মানুষ। কিন্তু আব্রাহাম নেই। রুমের বাইরে কিছু স্টাফ কে পেয়েছিলো আইরাত তাদের কেউ জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু কেউ জানে না আব্রাহাম কোথায়। আজ রোদ অনেক কড়া। আইরাত হাটতে হাটতে সমুদ্রের পাড়ে এসে পরেছে। এক হাত দিয়ে কপালের ওপরে ধরে রেখেছে যেন সূর্যের আলোর আসা থেকে বাচা যায়,, আরেক হাত নিজের কোমড়ে রেখে দিয়েছে। এবার যেন বিরক্তি লাগছে। এই ছেলে গেলো কোথায় না বলে কয়েই।
আইরাত;; মানে এভাবেই একটা মানুষ গুম, নেই। এত্তো বেলা হয়ে গেলো না দেখতে পেলাম আর না ই কথা বলতে পারলাম। আব্রাহাম কোথায় গেলো? আমি এখন সিওর যে ওই চিরকুট এই উগান্ডার পোলায় দিছে। I have a surprise for you ঘোড়ার ডিম (বেঙ্গ করে) এই যে এইভাবে গায়েব হয়ে যাওয়া, এটাই উনার সারপ্রাইজ বুঝি। মাথার তার ছিড়া আছে দুই একটা হাহ।
আইরাত রাগে রিসোর্টের ভেতরে চলে গেলো। গিয়েই একটা লেমন জুস অর্ডার দিলো। মাথার এক পাশে হাত দিয়ে বসে আছে। আর মনে মনে আব্রাহামের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে। তখন একটা মেয়ে আইরাতের কাছে আসে।
মেয়ে;; এক্সকিউজ মি ম্যাম…
আইরাত;; ইয়েস
মেয়ে;; এটা আপনার জন্য।
আইরাত;; এটা কি?
মেয়ে;; এটা কি তা না হয় আপনি নিজেই দেখে নিন। আমি আসি, হ্যাভ এ গুড ডে ম্যাম।
মেয়ে টি মুচকি হেসে আইরাতের হাতে একটা ছোট চার কোণা বক্স দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। আইরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এই বক্সে আবার কি। আইরাত তড়িঘড়ি করে বক্সের র্যাপার টা খুলে ফেলে। ওপরের র্যাপার টা খুলতেই দেখে তার ভেতরে আরো একটা র্যাপার।
আইরাত;; এতো কাগজ কেন, আরে বাবা আছে টা কি এখানে?!
আইরাত বেশ কৌতুহল নিয়ে এক সময় সেটা খুলেই ফেলে। আর খুলতেই আইরাতের মুখে হাসি এসে পরে। ভেতরে সাদা ধবধবে এবং অনেক সুন্দর একটা
শঙ্খ 🐚। আইরাতের সমুদ্রের এই ঝিনুক & শঙ্খ খুব ভালো লাগে। আইরাত অনেকের কাছে শুনেছিলো যে সমুদ্রের শঙ্খের মাঝে কান পাতলে নাকি সমুদ্রের স্রোতের তীব্র আওয়াজ শোনা যায়। আইরাত সেটাই ট্রাই করলো। এন্ড ইট ওয়ার্ক্স। সত্যি সমুদ্রের স্রোতের ধ্বনি শোনা যায়। আইরাতের তো খুশিতে মন ভরে গেলো। তার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো যে এমন সাদা একটা শঙ্খ তার কাছে থাকবে। আজ আছেও। তবে আইরাতের এই হাসিমাখা চেহারাতে আবার কপাল কুচকে এলো। আইরাত তার আশে পাশে তাকাতাকি করে কাউকে খুজছে। মানে আইরাতের যে এটা পছন্দ তা কেউ কি করে জানলো আর দিলোই বা কে। আইরাত তো শুধু এমনি কথায় ছলে একদিন বলেছিলো যে তার সমুদ্র পাড়ের শঙ্খ তার অনেক প্রিয়, তাও রোদেলা কে বলেছিলো৷ সব চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে আইরাত তার হাতে থাকা শঙ্খের দিকে তাকায়। যাই হোক যেই দিক না কেন তবে অনেক বেশি সুন্দর। আইরাত আবার হেসে হেসে শঙ্খ টা কানের কাছে ধরে। তবে কেউ একজন আড়াল থেকে আইরাত কে দুই চোখ ভরে দেখছে। আইরাত সেখানেই কতোক্ষন বসে থাকে। দুপুর হয়ে গেছে। এখনো আব্রাহামের আসার নাম গন্ধ নেই। আইরাত সেখানে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেলো। তাই সে তার শঙ্খ নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
আইরাত;; আচ্ছা মানে বুঝলাম না। দুপুর শেষ হয়ে এলো বলে। কিছুক্ষন পর বিকেল হবে, এই ছেলে কোথায় গেলো। আমি একা কীভাবে কি করবো..!
আইরাত এগুলো মনে মনে বলছিলো আর নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো কিন্তু তখন কেন যেন সবাই রিসোর্ট থেকে আস্তে আস্তে চলে যেতে লাগলো। আইরাত বুঝতে পারছে না যে হচ্ছে কি। সবাই এভাবে চলে যাচ্ছে কেন। দেখতে দেখতেই কয়েক মিনিটের মাঝে সব চলে গেলো। আইরাত ভাবলো এখানে আবার কিছু হলো না তো। আইরাত আর না দাঁড়িয়ে থেকে সেও নিজের রুমে চলে গেলো।
রুমে গিয়ে করিডরে বসে থাকলো। করিডর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম সেখানে নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। কেন যেন আব্রাহাম কে দেখে আইরাতের মনে একটু শান্তি আসলো। তাকে যে একা ফেলে রেখে যায় নি তাই ভেবে। আইরাত জলদি করে আব্রাহাম কে ডাকতে থাকে…
আইরাত;; আব্রাহাম, আব্রাহাম। আরে এই যে শুনছেন আপনি। শুনছেন আমার কথা। আব্রাহায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াম।
আব্রাহাম অবশ্যই শুনেছে আইরাতের ডাক তবুও না শোনার ভান ধরে চলে গেলো। আইরাতের রাগে গায়ে আগুন ধরে গেলো।
আইরাত;; বেটা কতো বড়ো খচ্চর আমার ডাক না শুনেই চলে গেলো। পুরো রিসোর্টে খোজা শেষ, এই ছিলো টা কই এতোক্ষণ।
আইরাত দৌড়ে রুমের বাইরে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম কেবখুজছে। কিন্তু সে আবার গুম নেই। আইরাত হয়রান হয়ে গেছে।
আইরাত;; ধুরু ছাই এতো খুজতে পারবো না, যেখানে মন চায় সেখানে যাক।
আইরাত বিরক্ত হয়ে রুমে চলে আসে। রুমে এসে অফিসের কিছু ফাইলস দেখতে থাকে। সময় গড়িয়ে কখন যে বিকেল হয়ে গেছে আইরাত তা খেয়ালই করে নি। ল্যাপটপে কাজ করছিলো এরই মাঝে ধুপ করে কারেন্ট চলে যায়।
আইরাত;; যাহ বাবা, রিসোর্টেও কি আবার কারেন্ট যায় নাকি। আগে জানতাম না তো।
তখনই টুং করে আইরাতের ফোনে মেসেজ আসে।
“” দুই মিনিটের মাঝে রিসোর্টের বাইরে আসো “”
এই সময়ে এমন মেসেজ কেই বা দিতে পারে আইরাত তাই ভেবে পায় না। যাই হোক ল্যাপটপ টা বন্ধ করে আইরাত উঠে পরে। রুমের বাইরে এসে রিসোর্টের দিকে যেতে ধরে। আইরাত যাচ্ছে আর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। একটা মানুষের ছায়া অব্দি নেই রিসোর্টে। মানে পুরো রিসোর্ট ফাকা। আর ছোট ছোট গোল গোল সাদা আর হলুদ বাতি দিয়ে সম্পূর্ণ রিসোর্ট টাই সাজানো। আইরাত যাচ্ছে আর নিজের চাইপাশে সব দেখছে। সিম্পলের মাঝেও অনেক সুন্দর দেখতে লাগছে সবকিছু। আইরাত হেটে হেটে রিসোর্টের একদম বাইরে সমুদ্রের কিণারে চলে আসে। আরে আজব, যেখানে এই টাইমেই সবাই বাইরে বের হয় সেখানে আজ কেউ নেই।
বিকেলের দিকে আকাশে এক নতুন আভা ফুটে ওঠেছে। সূর্য যেন এই অস্ত যায় এমন একটা ভাব। গোধুলির লগ্ন এটা। আকাশ টা যেন হরেক রকম রঙ দিয়ে রঙিন হয়ে আছে৷ ঠিক এই আকাশের নিচেই নীল স্রোতের ঢেউ খেলানো বিশাল এক সমুদ্র। সমুদ্রের পাড়ে দাড়ালে তার স্রোত গুলো যেন তীব্র বেগে এসে পা গুলোকে ছুয়ে যায়। আর তার সাথে সাথে রেখে যায় কিছু ঝিনুক নামক চকচকে সৌন্দর্যের অস্তিত্ব। চারিদিকে ঠান্ডা-শীতল হাওয়া। পরিবেশ টা অন্যরকম। এর জন্যই হয়তো এই সমুদ্রের পাড় অনেকের কাছে অনেক বেশিই প্রিয়। এমন একটা পরিবেশ দেখে কার ই মন ভালো না হবে। আইরাতের মুখে আপনা আপনিই হাসি ফুটে ওঠে। আইরাত যাচ্ছিলো আর নিজের চারিপাশে লক্ষ্য করছে। হঠাৎ আইরাতের সামনে একটা মেয়ে আসে। মেয়ে টা বিদেশি দেখেই বুঝা যায়। সে আইরাতের দিকে একটা ফুলের বুকে এগিয়ে দেয়। ফুলের বুকে টা এতো সুন্দর যা বলার বাইরে। কমপক্ষে ৭-৮ রকমের ফুল দিয়ে বুকে টা সাজানো আছে। আইরাত কিছু বলতে যবে তার আগেই মেয়ে টা সেখান থেকে চলে আসে। আর যাওয়ার আগে মেয়ে টা আইরাতকে সামনের দিকে হেটে যেতে বলে। আইরাত হাতে ফুলের বুকে টা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। তার প্রায় আরো কয়েক মিনিট হাটার পর আইরাত যখনই আরো একটু সামনে যাবে তখনই চারিপাশ থেকে লাল-নীল কালারের বেলুন উড়ে আসতে লাগে। অনেক গুলো বেলুন। আইরাতের বেশ হাসি পাচ্ছে। তবুও সব বেলুন গুলো হাত দিয়ে কোন রকমে সরিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়।
______;; আইরাত..!
নিজের নাম ধরে ডাক দিতেই আইরাত থেমে যায়। আইরাত আশে পাশে খুজে চলেছে কিন্তু কাউকেই দেখতে পারছে না। আর এখন আইরাতের পেছন থেকে আব্রাহাম আসে। সেই আইরাতের নাম ধরে ডেকেছে। তার চোখ গুলো যেন আইরাতেই স্থীর। আস্তে আস্তে আইরাতের দিকে সে এগিয়ে যায়। আইরাতের কেন যেন মনে হলো যে তার পেছনে কেউ আছে। আইরাত ঝট করে তার পেছন ঘুড়ে তাকায়। আর তাকাতেই আইরাত বেশ বড়োসড়ো একটা ঝটকা খায়।
আব্রাহাম আইরাতের সামনে এক হাটু ভাজ করে দিয়ে বসে আছে। চোখ গুলো বেকুল ভাবে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত হাতে ফুলের বুকে টা নিয়েই আব্রাহামের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহামের চোখ গুলোতে যেন এক প্রকার নেশা রয়েছে। আইরাতের সাধ্য নেই তার সেই চোখ গুলোর দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকার। তাই আইরাত চোখ গুলো দ্রুত নিচে নামিয়ে ফেলে।
আব্রাহাম;; “ভালোবাসি”
আব্রাহামের এমন কথায় আইরাত অবাক নয়নে তার দিকে তাকায়। আইরাত দুই কদম পিছিয়ে গেলো। দম যেন তার আটকে আসছে। সে কখনো কল্পনাও করতে পারে নি যে আব্রাহাম তাকে এমন কিছু একটা বলবে। আর এতোক্ষণে আইরাত খেয়াল করলো যে তার চারিপাশে খুব সুন্দর করে সব কিছু দিয়ে ডেকোরেট করা। অনেকগুলো ঝিনুক আর সাদা স্টোনের বল দিয়ে সাজানো গোল করে। আর আইরাত ঠিক সেগুলোর একদম মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। আর আব্রাহাম ঠিক তার সামনেই এক হাটু ভাজ করে।
আইরাতের নিঃশ্বাস যেন ঘন হয়ে আসছে। কিন্তু আব্রাহাম তো আইরাতকে নিজের নজর বন্দি করে রেখেছে একদম।
আব্রাহাম;; ভালোবাসি আইরাত, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি। এতো টাই বেশি যে এখন তোমাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা অব্দি করতে পারি না। তুমি আমার কাছে আমার বেচে থাকার অবলম্বন। যাকে ছাড়া আমি অচল। আইরাত হবে কি তুমি আমার বেচে থাকার কারণ? আমার পুরো অস্তিত্ব হবে কি, আমায় ভালোবাসবে কি..!!
আইরাতের অগোচরেই তার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি চুইয়ে পরে। সাথে সাথে সে তা মুছে ফেলে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আব্রাহাম এখনো তার উত্তরের আশায় আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে আব্রাহামকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আইরাত বলে ওঠে…৷
আইরাত;; না, কখনোই না।
আইরাতের এমন কথায় আব্রাহাম বেশ হার্ট হয়। ভেতরে যেন কেউ ছুড়ি দিয়ে তীব্র ভাবে আঘাত করেছে।
আইরাত;; ভালোবাসা বললেই হলো নাকি। ভালোবাসার মানেও বুঝেন আপনি। আপনি ভাবলেন কি করে যে আমি আপনার মতো একজন গুন্ডা-মাফিয়া কে ভালোবাসবো। আপনার ভেতরে মোটেও ভালোবাসা নেই। আমি আর যাই হোক আপনার মতো কাউকে ভালোবাসতে পারি না। ভালোবাসা না, ভয় পাই আমি আপনাকে। আপনি যে নির্মম ভাবে মানুষকে খুন করেন। আমার ভয় লাগে আপনার থেকে। ঠিক কতোটা ভয় তা হয়তো বলেও বুঝাতে পারবো না। ভালোবাসি না আমি আপনাকে। আর আপনার থেকে দূরে চলে যাবো থাকবো না।
আব্রাহাম এতোক্ষন মাথা নিচু করে আইরাতের এই সব কথা গুলো শুনছিলো। আর আইরাত লাগাতার এই কথা গুলো বলে সেখান থেকে চলে আসতে নিলে আব্রাহাম খপ করে আইরাতের হাত ধরে ফেলে। আইরাত নিজের হাতে টান অনুভব করে তার পেছন ঘুড়ে তাকায়। আইরাত দেখে যে আব্রাহাম তার মাথা নিচু করে আইরাতের হাত শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত একবার তার হাতের দিকে আরেক বার আব্রাহামের দিকে তাকায়। এবার আব্রাহাম নিজের চোখ তুলে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত আব্রাহামের চোখ জোড়া দেখেই ভয়ে আতকে উঠে, কাদো কাদো চেহারা হয়ে যায়। আব্রাহামের যে এখন কি পরিমান রাগ উঠেছে তা আইরাত বেশ ভালোই আন্দাজ করতে পেরেছে। আব্রাহাম রক্তচক্ষু নিয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আইরাতের তো কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে পুরো দমে। আব্রাহাম এবার আইরাতকে এক হেচকা টান দেয় যার ফলে আইরাতের হাত থেকে ফুলের বুকে টা নিচে পরে যায় আর আইরাত সোজা এসে আব্রাহামের বুকের ওপর পরে। আইরাতের সামনের চুল গুলো তার মুখের ওপর আছড়ে পরে। আইরাত এবার ভারি ভারি দম ফেলতে লাগে। আব্রাহামের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখে আব্রাহাম তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। আইরাত আব্রাহাম কে ধাক্কা দিয়ে চলতে আসতে নিলে আব্রাহাম এবার তার বাম হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে। আইরাতকে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে নেয়। আইরাত ছাড়া পাবার জন্য ছুটাছুটি করতে লাগলে আব্রাহাম আইরাতের মাথার পেছলে চুলের মুঠিতে খামছে ধরে। আইরাতের মুখ টা তার মুখের সামনে আনে। এতে আইরাত ব্যাথায় তার চোখ মুখ সব খিছে বন্ধ করে ফেলে। কেদে দিয়েছে সে। আব্রাহাম তার দাতের চোয়াল শক্ত করে বেশ রেগে বলে ওঠে…..
আব্রাহাম;; আমাকে ভালোবাসিস না তুই তাই না। আমি মানুষ মারি, আমি নির্দয়। আমার মাঝে কোন দয়া মায়া নেই। ভয়, আমাকে ভয় পাস তুই তাই তো। আমাকে ভালোবাসতে পারবি না তাই না। তবে আমিও দেখবো যে তুই আমার থেকে ঠিক কতোদূরে থাকতে পারিস। তোকে আমার হতেই হবে। হ্যাঁ মাফিয়া আমি আন্ডারগ্রাউন্ডের তো! তোকে এই মাফিয়া কেই মেনে নিতে হবে, আর একেই ভালোবাসতে হবে। তোকে অন্য কোন ছেলের সাথে দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায় আমার। কারণ তুই শুধু আমার আর আমার। যে ছেলে তোর ছায়ার ধারে কাছেও আসবে না তাকে বিনা নোটিশে আমি পরকালের টিকিট ধরিয়ে দিবো বুঝেছিস। রাতদিন তোর ওপর নজর রেখেছি। একটা মূহুর্তের জন্যও একা ছাড়িনি। কারণ, কারণ আমার বাচা মুশকিল তোকে ছাড়া। তুই আমার। তুই আমারই হবি তা যদি তুই চাস তবুও আর যদি না চাস তবুও। ভালোবাসি আমি তোকে। আর তোকে এই আমারই হতে হবে তা যে কোন মূল্যেই, যে করেই হোক। আমার চাই তোকে বুঝেছিস। (আইরাতকে আরো জোরে নিজের সাথে চেপে ধরে)
আইরাত শুধু অবাক হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। কি বলবে, কি করবে কিছুই বুঝে আসে না তার।
আইরাত আবার বলে…
আইরাত;; না ভালোবাসি না আর কখনো আমার পক্ষে আপনাকে ভালোবাসা সম্ভবও না।
আব্রাহাম;; আমাকে আমার রুপে ফিরে আসতে বাধ্য করো না বেবিগার্ল। খুব একটা ভালো হবে না তা তোমার জন্য। তুমি আমার ছিলে আছো আর থাকবে। কান খোলে শুনে রাখো তুমি আমার মানে আমার। আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর। তুমি আমার নামে লিখা।
যতদূরেই যাও না কেন বা যেখানেই যাও না কেন ঘুড়ে ফিরে তোমাকে সেই আবার আমার কাছেই আসতে হবে। আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আমার চাই তোমাকে ব্যাস।
আইরাত অশ্রুসিক্ত নয়নে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর আব্রাহাম আইরাতের দিকে একটা রাগি লুক দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। আইরাত এবার বুঝতে পারছে যে সকালেই সেই চিরকুট, সেই শঙ্খ আর এই এতোকিছু সব আব্রাহামেরই করা, সবকিছুই। আইরাত জোরে জোরে দম নিচ্ছে আর আব্রাহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
।
।
।
।
চলবে~
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৩
এখন গভীর রাত। হয়তো সবাই ঘুম বা যার যার রুমে। বাইরে কেউ নেই বললেই চলে। কিন্তু আব্রাহাম, সে হাতে একটা স্যাম্পেনের বোতল নিয়ে বিচ সাইডে হেটে চলেছে। রাতের আধারের নীরবতায় সমুদ্রের স্রোতের আওয়াজ বেশ জোরে শোনা যাচ্ছে। চারিদিক শান্ত থাকলেও আব্রাহামের ভেতর টা মোটেও শান্ত নেই। তার মনের ভেতরে বয়ে চলেছে এক উথাল-পাতাল। আব্রাহাম সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। স্রোত গুলো এসে পায়ের ওপর বারি দিয়ে যাচ্ছে। আব্রাহাম এক ধ্যানে সেদিকেই তাকিয়ে আছে৷ আইরাতের কথাই মাথায় এসে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। পারবে না সে, সম্ভব না কোনমতেই আইরাত কে ছাড়া।
আব্রাহাম;; হয়তো আইরাত, নয়তো মৃত্যু। আইরাত নেই তো আব্রাহাম নেই। আইরাত হলে আমারই হবে। নয়তো কারোর না। আর যদি আমার না হয় তাহলে প্রথমে আইরাত কে মারবো তারপর আমি মরবো। ভালোবাসার অধিকারও আমার আর জানে মারারও।
আব্রাহাম তার হাত থেকে স্যাম্পেনের বোতল টা ছুটে ফেলে দেয়। তারপর সোজা সমুদ্রের মাঝে হাটা শুরু করে। যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। কোন দিকে কোন খেয়াল নেই। সমুদ্র অনেক টাই গভীর। তবে আব্রাহাম যাচ্ছে। যেতে যেতেই সমুদ্রের পানিতে বেশ খানিক ভিজে গেলো।
অন্যদিকে আইরাত তার রুমে বসে আছে। সে কখনো ভাবেই নি যে আব্রাহাম তাকে এমন কিছু একটা বলবে।
সে নিজেকে তেমন একটা পর্যায়ে ভাবতেই পারে না। সে একটা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিলং করে। কোথায় আইরাত আর কোথায় আব্রাহাম। এটা হয় না। আব্রাহামের পাশে আইরাত কখনো নিজেকে কল্পনাও করতে পারে না। রাতের মতো রাত চলে যাচ্ছে কিন্তু চোখে নেই ঘুমের ছিটেফোঁটাও। আব্রাহামের বলা প্রত্যেক টা কথা যেন কানে বেজে চলেছে তার। আব্রাহাম কে সে মানা তো করে দিয়েছে কিন্তু আব্রাহাম কি শুনবে তার কথা। আবার উলটা পালটা কিছু করে না বসলেই হয়। আইরাতের কিচ্ছু ভালো লাগছে না। যাই হোক কাল হয়তো তারা এই রিসোর্ট থেকে বের হয়ে পরবে। আইরাত যেন এখান থেকে যেতে পারলেই বাচে। নিজের বাড়ি গিয়ে একটু শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়বে। এগুলো আর ভালো লাগছে না তার। রাত বাজছে ২ঃ৪৫ মিনিট। এখন তো দুনিয়া উলটে গেলেও ঘুম আসবেই না আর এভাবেই বসে থাকলে মাথা হ্যাং মারবে। তাই আইরাত হাতে এলটা সাইকোলজি বুক নিয়ে করিডরে চলে যায়।
।
।
আব্রাহাম;; আমি কোন ধরনের ঝামেলা টামেলা চাচ্ছি না। গাড়ি নিয়ে এখানে এসে পরো।
রাশেদ;; জ্বি স্যার।
আজ এখান থেকে তারা চলে যাবে। বাকি স্টাফ গুলো গতকালই সেই ফাইভ স্টার হোটেল থেকে বের হয়ে গেছে। আর আব্রাহাম এখান থেকে একা বের হতে পারবে না। অনেক জিনিসপত্র আছে এগুলো নিতে হবে তাই সে রাশেদ কে ফোন করে এখানে আসতে বলে।
আব্রাহাম ফোন রেখে দিয়ে সোজা আইরাতের রুমের দিকে যায়। এখন তার মূল কাজ হচ্ছে আইরাত কে জ্বালিয়ে মারা।
আব্রাহাম আইরাতের রুমে গিয়েই দেখে আইরাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কানে ঝুমকো পরছে কিন্তু ঠিক ভাবে পরতে পারচ্ছে না তাই মুখের বিরক্তির ছাপ সুস্পষ্ট। আব্রাহাম হাত দুটো ভাজ করে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আইরাতের পেছনে দাঁড়িয়ে পরে। মুখে এক চিলতে হাসি রেখে আইরাতের ঘাড়ের ওপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। আইরাত আয়নাতে আব্রাহাম কে দেখে থমকে দাঁড়ায়। আব্রাহাম আইরাতের হাত থেকে ঝুমকো টা নিয়ে খুব যত্নের সাথে আইরাতের কানে পরিয়ে দিতে থাকে। তবে আব্রাহামের চোখ গুলো আয়না দ্বারা আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। আইরাত আয়নাতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকতে না পেরে চোখ নামিয়ে ফেলে। ঝুমকো পরিয়ে দেওয়া শেষ হলে আব্রাহাম কিছুটা সরে এসে পরে। তারপর আবার দুই হাত নিজের প্যান্টের পকেটে দিয়ে দাঁড়ায়।
আব্রাহাম;; কাজল টা একটু গাঢ় ভাবেই দিও।
আইরাত;; কেন?
আব্রাহাম;; অন্যের নজর লেগে যাবে। যা আমি হতে দিবো না। কারণ তোমার ওপর নজর শুধু আর শুধু মাত্রই আমার আছে & থাকবে।
আইরাত;; ______________
আব্রাহাম;; আমরা আজ এখান থেকে চলে যাচ্ছি।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; সব প্যাক করা শেষ!!
আইরাত;; অনেক আগেই।
আব্রাহাম;; হুম চলো।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; ব্রেকফাস্ট করতে, একসাথে করবো চলো।
আইরাত;; কিন্তু আমি খাবো না। মানে আমার ক্ষিদে নেই আর কি।
আব্রাহাম;; কি বললা?
আইরাত;; ক্ষিদে নেই।
আইরাত;; ভালোই ভালোই বলছি চলো। হয়তো তুমি এখন ব্রেকফাস্ট খাবে নয়তো আমিই এখন তোমাকে পানি ছাড়া কাচ্চা খেয়ে ফেলবো।
আইরাত;;______________
আইরাত কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে বের হয়ে আসে রুম থেকে। বাইরে এসে একটা টেবিলের ওপর বসে পরে। আব্রাহাম তো বসে পরে। তবে আইরাত দাঁড়িয়ে থাকে৷ আব্রাহাম মাথা তুলে তার দিকে তাকায়। ইশারাতে আইরাতকে টেবিলে বসতে বললে, আইরাত মুখ ঘুড়িয়ে নেয়। আব্রাহামের গেলো মেজাজ চটে। সে আইরাতের হাত ধরে হেচকা এক টান দিয়ে সোজা তাকে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে দেয়। আর এক হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে। হুট করে এমন কিছু একটা হওয়াতে আইরাত অবাক হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়। তবে আব্রাহাম বেশ স্বাভাবিক তার মতে কিছুই হয় নি। আইরাত আব্রাহামের কাছ থেকে সরে আসতে চাইলে আব্রাহাম যেন আরো শক্ত করে ধরে রাখে ।
আইরাত;; দেখুন ছাড়ুন সবাই তাকিয়ে আছে। ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; আমার জিনিস আমি নিয়ে বসে আছি এতে কার বাপের কি?
আইরাত;; জিনিস মানে আমি এখন জিনিস?
আব্রাহাম;; চুপ করো।
আইরাত;; ছাড়ুন
আব্রাহাম;; প্রথমে ভালোভাবে বসতে বলেছিলাম বসো নি। এখন এখানেই বসে থাকবে চুপচাপ। আর একটা বাড়তি প্যাচাল পারলে ওইযে সামনে ফল কাটার ওই ছুরি দেখছো না সেটা দিয়ে ভুড়ি ফুটো করে দেবো একদম।
আইরাত;; 😟।
আব্রাহাম;; হা করো।
আইরাত;; আমি নিজে খেতে জানি।
আব্রাহাম;; এই হা কর (ধমক দিয়ে)
আইরাত;; খাচ্ছি তো 🥺।
আইরাত চুপ চাপ খাবার মুখে পুড়ে নিলো আব্রাহামের হাত থেকে।
আব্রাহাম;; দ্যাটস্ লাইক মাই বেবিগার্ল।
আইরাত মুখ টাকে বাংলার পাচ বানিয়ে রেখে দিয়েছে। আব্রাহাম নিজেও খেলো আর আইরাতকেও খাইয়ে দিলো মানে হুমকি দিয়ে আর কি। আর এতোক্ষন এক হাত দিয়ে আইরাতকে আকড়ে ধরে ছিলো। আইরাত তার কোলের ওপর থেকে সরে আসতে চাইলে আব্রাহাম তার দিকে চোখ গরম করে তাকায় আর আইরাত যেন সেখানেই শেষ।
দেখতে দেখতে প্রায় অনেক সময় পার হয়ে গেলো। আর তখন রাশেদও গাড়ি নিয়ে এসে পরে।
রাশেদ;; স্যার।
আব্রাহাম;; কেমন আছো?
রাশেদ;; জ্বি স্যার ভালো। আপনি?
আব্রাহাম;; অনেক বেশিই ভালো। (আইরাতের দিকে তাকিয়ে)
রাশেদ;; স্যার গাড়ি নিয়ে এসেছি। সব কিছু আমি স্টাফ কে বলে ঠিকঠাক করে নিবো।
আব্রাহাম;; হুম আমরাও রেডি হচ্ছি।
আইরাত সেখান থেকে দ্রুত চলে যায় নিজের রুমে। গিয়েই সব গুছিয়ে, সবকিছু আরেক বার চেক করে বের হয়ে পরে। সে দ্রুত যাচ্ছে যেন আব্রাহামের চোখে না পরে। নিজের ব্যাগ টা হাতে নিয়েই আইরাত রাশেদের কাছে চলে যায়।
আইরাত;; রাশেদ!
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম।
আইরাত;; আপনি যেই গাড়ি টা এনেছেন তার চাবি কোথায়?
রাশেদ;; জ্বি আমার কাছেই।
আইরাত;; আমাকে দিন।
রাশেদ;; সরি ম্যাম কিন্তু কেন?
আইরাত;; মানে আমি ওই গাড়ি দিয়ে যাব আর কি। আর ওই গাড়িতে ড্রাইভার আছে না?
রাশেদ;; ড্রাইভার তো আছে কিন্তু আপনি না ড্রাইভ করতে জানেন?
আইরাত;; ড্রাইভ করতে জানি কিন্তু জায়গা না। এখন চাবি দিন আমি ড্রাইভারের সাথে ওই গাড়ি দিয়ে চলে যাবো। আব্রাহাম স্যার অন্য গাড়ি দিয়ে যাক।
রাশেদ;; না মানে স্যার তো নিজের গাড়ি দিয়েই যাবেন আর স্যার কখনো ড্রাইভার কে সাথে নেন না তবে…!
আইরাত;; আরে কিছু হবে না চাবি দিন আমায়।
রাশেদ;; আব..আচ্ছা।
আইরাত রাশেদের কাছ থেকে সেই গাড়ির চাবি নিয়ে এসে পরে। মানে শয়তানি বুদ্ধি যেন উপচে উপচে পড়ছে তার। আইরাত কোন রকমে লুকিয়ে চুরিয়ে সব করছে। রিসোর্টের পার্কিং সাইডে গেতেই আইরাত দেখে দু দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আইরাতের চিনতে আর বাকি নেই যে এগুলোই আব্রাহামের গাড়ি। একটা ব্রাউন কালারের আরেকটা ব্লেক। আর আব্রাহামের অধিকাংশ জিনিসপত্র ই ব্লেক কালারের। আইরাত আস্তে করে গিয়ে কালো গাড়ির পেছনে টায়ারের পাশে বসে পরে। নিজের মাথার পেছন থেকে ক্লিপ নিয়ে ঠুউউউউস করে টায়ার টা পাঞ্চার করে দেয়। আর খিলখিল করে হাসতে থাকে। তারপর হাত ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়ায়।
আইরাত;; এইবার দেখবো চান্দু যে তুমি আমার কাছে কী করে পৌছাও। হিহিহিহিহিহিহিহিহিহিহি 😁।
আইরাত হেলেদুলে গিয়ে ব্রাউন কালার গাড়ির পেছন সীটে গিয়ে বসে। কিন্তু শুনে যে ড্রাইভার নাকি কোথায় গিয়েছে আসতে একটু দেরি হবে। আইরাত বিরক্তি নিয়ে বসে থাকে। আর তখনই একজন লোক আসে এসেই দেখে আব্রহামের গাড়ির টায়ার পাঞ্চার। তার তো মাথায় হাত। আব্রাহাম যদি জানে যে এই সময়ে টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে তাহলে এই গাড়ি টাই ভেঙে ফেলবে পুরো। লোকটি দ্রুত গাড়ির টায়ার সারাতে লাগে। কিছুক্ষন পর ড্রাইভার এসে পরে। আর আইরাত তাকে দ্রুত চলে যেতে বলে। ড্রাইভার তো ভেবেছে যে আব্রাহামই যেতে বলেছে তাদের তাই সেও কোন কথা না বলে চলে আসে।
আর ওইদিকে আব্রাহাম সারা রুমে আইরাত কে টই টই করে খুজছে। কিন্তু আইরাত নেই। আব্রাহামের মেজাজ এবার চরম পর্যায়ে। আব্রাহাম রেগে আগ বাবুলা হয়ে বাইরে এসে পরে।
আব্রাহাম;; রাশেদ, আইরাত কে দেখেছো?
রাসেদ;; জ্বি স্যার উনি তো ড্রাইভার কে নিয়ে গাড়িতে করে চলে গেছেন।
আব্রাহাম;; হুয়াট?
রাশেদ;; জ্বি স্যার।
আব্রাহাম;; আমাকে না বলেই গেলো।
রাশেদ;; আপনার নাকি দেরি হবে তাই উনিই আগে চলে গেলেন।
আব্রাহাম;; গিয়েছে কতোক্ষন হবে?
রাশেদ;; বেশি না স্যার ৫-১০ মিনিট হবে।
আব্রাহাম;; হুমম ৫-১০ মিনিট। ওকে ফাইন শুনো ভেতরে সবকিছু আছে সেগুলো নিয়ে তুমি এসে পরো আমি গেলাম।
আব্রাহাম তার সাদা শার্টের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে হাতে নিয়ে নেয়। তারপর গাড়িতে এসে বসে। কোন রকমে শান্ত শিষ্ঠ ভাবে রিসোর্ট থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু সেখান থেকে বের হতেই যেন আব্রাহামের চোখে ধুপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। গাড়ির যতো স্পীড ছিলো সম্পূর্ণ দিয়ে হাওয়ার গতীতে ছুটে চলেছে।
আব্রাহাম;; আমাকে ফাকি দিয়ে গাড়িতে করে যাওয়া তাই না। দাড়াও বুঝাচ্ছি।
আব্রাহামের সব গাড়িতেই ট্রান্সমিটার লাগানো। ভাগ্য ভালো যে আইরাতের সেই গাড়িতেও লাগানো ছিলো। তাই তারা এখন কোথায় বা কোন দিক দিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই ট্রেস করা যায়। আব্রাহাম তার ট্যাবে দেখলো বেশি না আইরাতের গাড়ি তার গাড়ি থেকে আরো কয়েক মিনিটেই দূরত্বেই। আব্রাহাম গাড়ির স্পীড টা আরো একটু হাই করে দিলো। কিছুক্ষণ পরই আইরাতের সেই গাড়ির একদম পাশাপাশি হয়ে গেলো। এবার আব্রাহাম তার গাড়ি টা নিয়ে ব্রেক কষে সোজা আইরাতের সেই গাড়ির সামনে চলে গেলো। রাস্তা টা যেন ধুলোয় পুরো ভরে গেছে। আব্রাহাম তো তীব্র গতীতে গাড়ির ব্রেক কষে তাদের গাড়ির সামনে নিজের গাড়ি থামায়। আর ওই গাড়ির ড্রাইভার এতে ভেবাচেকা খেয়ে যায়। এভাবে হুট করে আরেকটা গাড়ি নিজের গাড়ির সামনে এসে পরতেই । ড্রাইভারও বেশ জোরেই দ্রুত ব্রেক কষে। আইরাত আরামছে পেছনের সীটে বসে ছিলো। কিন্তু এভাবে হুট করে ব্রেক করাতে আইরাত অল্পের জন্য মাথায় আঘাত পায় নি। সে রেগে যায়।
আইরাত;; আরে আস্তে, হয়েছে কি?
ড্রাইভার;; ম্যাম, সামনে আব্রাহাম স্যার।
আব্রাহামের নাম শুনতেই আইরাতের বুক টা ধুক করে ওঠে।
আইরাত;; কি?
ড্রাইভার;; জ্বি।
এতোক্ষনে আব্রাহাম তার গাড়ি থেকে নেমে এসে আইরাতের গাড়ির পাশে দাঁড়ায়। কোন কথা না বলেই গাড়ির দরজা খুলে আইরাতের হাত খামছে ধরে। তাকে এক প্রকার টেনেই গাড়ি থেকে বাইরে বের করে আনে। আইরাত হাত ছাড়ানোর জন্য চিল্লাচ্ছে কিন্তু আব্রাহাম তো জীবনেও হাত ছাড়বে না। আইরাত কে নিয়ে সে নিজের গাড়ির দিকে যেতে ধরলো।
আব্রাহাম;; ওহ হ্যাঁ, তুমি গাড়ি নিয়ে সোজা এখান থেকে আবার রিসোর্টে বেক করো। সেখানে রাশেদ আছে তাকে নিয়ে আসো।
ড্রাইভার কে এই কথা বলে আব্রাহাম আবার আইরাতের হাত ধরে টেনে এনে সামনের সীটে বসিয়ে দেয়। বসিয়ে দিয়ে দরজা লক করে দেয়। তারপর নিজেও ঘুড়ে এসে গাড়ির ড্রাইভিং সীটে বসে পরে। আইরাত তাকিয়ে আছে আব্রাহামের দিকে। আর আব্রাহাম যেন ভাবলেশহীন। সে এসে আবার নিজের চোখে সুন্দর করে সানগ্লাস টা চোখে পরে নিলো।
আইরাত;; এটা কি হলো?! সবসময় গুন্ডাগিরি করা কি জরুরি?
আব্রাহাম;; সবসময় ত্যাড়ামি করা কি জরুরি?
আইরাত;; আপনি কি ভালো হবেন না।
আব্রাহাম;; That doesn’t suit”s me babygirl…
আইরাত;; ওই গাড়ি দিয়ে গেলেই কি হলো আচ্ছা একই কথা তো।
আব্রাহাম;; গাজর আর মূলা কি এক??
আইরাত;; 😑😑।
আব্রাহাম;; এমন টা করতাম না যদি আমার সাথে আগে থেকেই আসতে। আর তার ওপর আমার গাড়ির টায়ার পাঞ্চার করে দিয়ে এসেছো।
আইরাত;; আপনি কি করে জানলেন? 😳😬
আব্রাহাম;; স্টাফ বলেছে আমায়। আর তুমি যেহেতু নেই মানে ড্রাইভারের সাথে এসেছো তাও আমার আগে তো আমার কাছে ক্লিয়ার ছিলো সব যে এটা তুমিই করেছো। আর তাই আমিও তোমাকে এমন টেনে হিচড়ে গাড়ি থেকে নিয়ে এলাম। Tit for Tat baby…
আইরাত যে আব্রাহামের সাথে জীবনেও পারবে না তা জানা আছে। তাই আইরাত দুই হাত ভাজ করে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে।
প্রায় দুই তিন ঘন্টা যার্নির পর আব্রাহাম আইরাতের বাসায় সামনে গাড়ি থামায়। আইরাত কিছু না বলেই গাড়ি থেকে নেমে পরতে ধরে তখনই আব্রাহাম আবার তাকে হাত ধরে থামিয়ে দেয়। হাত টা কিছুটা টান দিয়ে আইরাতকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। তারপর আইরাতের কপালে চোখ বন্ধ করে একটা চুমু একে দেয়। আইরাত নিজেও তার চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। বেশ সময় হয়ে যায় তবে আব্রাহাম এখনো আইরাতের কপালে নিজের ঠোট দুটো ঠেকিয়ে দিয়েই আছে। যেন এখানেই সে নিজের সুখ খুঁজে পায়। আইরাত কিছুটা নড়ে চড়ে উঠলে আব্রাহাম তাকে ছেড়ে দেয়। আইরাত মাথা নিচু করে সেখান থেকে এসে পরে।
আইরাত বাড়ির ভেতরে চলে গেলে আব্রাহামও সেখান থেকে চলে আসে। তবে বাড়ির ভেতরে গিয়েই পাকে আরেক ঝামেলা।
।
।
।
।
চলবে~