#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৭০ & {Last part 🖤🥀}
“ভালোবাসা” কথা টা শুনলেই বুকের ভেতরে কেমন এক শিহরণ জাগা অনুভুতি বয়ে যায়। ভালোবাসা খুব অদ্ভুত একটা জিনিস। মানুষ কে, তার ব্যাক্তিত্ব কে পালটে দিতে সক্ষম এটা। ধূসর অন্ধকারাচ্ছন্ন কালো জীবন টাকেও হাজারো রঙে রঙ্গিন করে দিতে পারে এই ভালোবাসা। পশু কে মানুষও বানিয়ে দিতে পারে। তবে এই ভালোবাসার একটা বিপরীত শব্দ হচ্ছে “ঘৃণা”। কাটা দিয়ে কাটা তুললেও এই ঘৃণা কে কিন্তু ঘৃণা কাটাতে পারে না। এই ঘৃণার জন্য দরকার পরে ভালোবাসার। অন্ধকার কে অন্ধকার না একমাত্র আলোই দূর করে আলোকিত করে দিতে পারে। মানুষ ভালোবাসা-মায়া এই দুটোর ক্ষুদার্থ,, তাই এটার গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই ” ভালোবাসা” দিয়েই আব্রাহাম-আইরাতের জীবন সাজানো। আব্রাহাম-আইরাত দুইজন দুইজনের পরিপূরক।
পাখিদের কিচির-মিচির আর হালকা রোদের আলো এসে যেনো আইরাতের ঘুম ভাঙাতে বড্ড ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। তাই আর না পেরে আড়মোড়া ভেঙে আইরাত ঘুম থেকে উঠে পরে। চোখ গুলো হাতের উল্টো পাশ দিয়ে ডলে রুমের আশে পাশে তাকাচ্ছে। মূলত আব্রাহাম কে খুঁজে চলেছে কিন্তু আব্রাহাম নেই। আইরাত তখন বেডের পাশেই থাকা ছোট্ট টেবিলের দিয়ে তাকায়। সেখানে সুন্দর করে একটা কফি আর ব্রেড রাখা। ব্রেডের ওপর জ্যাম দিয়ে স্মাইলি আকা
তার ওপর লিখা “গুড মর্নিং আমার বিউটিফুল কুইন”।
আইরাত তা হাতে নিয়ে হেসে দেয়। অতঃপর উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হতেই দেখে আব্রাহাম সামনে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত খেয়াল করলো আব্রাহাম একটা হুয়াইট প্যান্ট আর ব্লু কালারের চ্যাক চ্যাক টি-শার্ট পরে আছে। মুখ টা বেশ ফর্সা হয়ে আছে আর তাতে কালো চাপদাড়ি। বেশ সুন্দর লাগছে৷ আব্রাহাম কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আইরাতের মনে যেনো সারা দুনিয়ার প্রশান্তি এসে ভর করলো। আইরাত এক লম্বা দম ছাড়ে। আব্রাহাম তার দুই হাত আইরাতের দিকে মেলে ধরলে আইরাত দ্রুত গিয়ে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষন পর আইরাত গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। আব্রাহামও আইরাতের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়৷ তার মাথা থেকে টাওয়াল টা সরিয়ে দেয়। আইরাতের চুলগুলো ঘাড়ের এক সাইডে এনে ঘাড়ে আলতো করে চুমু একে দেয়। পেছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরে আইরাতের চুলে নিজের মুখ ডুবায়। ঘ্রাণ নিতে থাকে। যারর ফলে আইরাত থেকে থেকে কেপে উঠছে। আব্রাহাম এক টান দিয়ে আইরাতকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। আইরাতও আব্রাহামের কাধে নিজের দুই হাত রেখে দেয়।
আইরাত;; জামাইজান!!
আব্রাহাম;; জ্বি।
আইরাত;; গতকাল আপনি আমায় কিছু বলেন নি কেনো?
আব্রাহাম;; তুমি তো কিছু করো নি তাহলে কি বলবো?
আইরাত;; কাল আমি কিছুটা শর্ট কাপড় পরেছিলাম। মানে দেখা তেমন কিছুই যায় নি বাট অত্যাধিক স্মার্ট ছিলো। কিছু বলেন নি কেনো?
আব্রাহাম;; লিসেন, প্রথমত ভালোবাসা মানে সম্মান করা। আমার ভালোবাসার মানুষ্টার ইচ্ছে বা মতামতের প্রাধান্য দেওয়া। আর আমি তোমার ইচ্ছের কখনোই অসম্মান করি না আমার জান। তুমি কি পরবে কি খাবে কোথায় যাবে সেটা তোমার ইচ্ছে। আর হ্যাঁ আমি জানি তুমি ভুল বা খারাপ কিছু কখনোই করবে না, কখনোই না। ভালোবাসা মানে মুক্তি দেওয়া, এনাফ স্বাধীনতা দেওয়া। কারো ইচ্ছে কে নিজের ইচ্ছে দিয়ে চালিয়ে তার খুশিকে কেড়ে নেওয়া নয়। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার সবকিছু কেও ভালোবাসি। আর আমি জানি যে তুমি কেমন ড্রেসাপ পরো। আমি তোমাকে শুধু একটা বিষয়ে জোর করতে পারি। একটা বিষয়ের ওপর নিজের সব সাইকোগিরি পাগলামি দেখাতে পারি তা হচ্ছে তোমার ভালোবাসা। বেবিগার্ল দুনিয়া উলটে গেলেও তোমাকে এই আব্রাহামের কাছেই থাকতে হবে আর এই আমাকেই ভালোবাসতে হবে।
আইরাত;; সত্যি বলতে আমি আপনার রিয়েকশন দেখার জন্য পরেছিলাম।
আব্রাহাম;; আমি একবার রিয়েকশন দেখানো শুরু করলে তুমি সামল দিতে পারবে না।
আইরাত;; চুপ করুন।
আইরাত আব্রাহামের কাছ থেকে চলে যেতে ধরেও আবার ঘুড়ে তার কাছে আসে।
আইরাত;; আব্রাহাম!!
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; আমাদের কি কথা ছিলো আজ?
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; কি 😤
আব্রাহাম;; ওপস্, সরি সরি সরি। বিয়ে করবো তো।
আইরাত;; এইতো আমার লক্ষী জামাইজান।
আব্রাহাম;; সিরিয়াসলি বিয়ে করবো?
আইরাত;; ওকে ফাইন না করলেন। আমার জন্য হাজারো ছেলের লাইন ধরে আছে। আমি গেলাম।
আব্রাহাম;; এইইইইইইইইই (গম্ভীর কন্ঠে)
আইরাত;; 🤪
আব্রাহাম;; রিভলবারের অর্ধেক গুলি যাবে তোমার এখানে (মাথায় আঙুল দিয়ে) আর অর্ধেক যাবে এখানে (পেটের মাঝ বরাবর হাত দিয়ে)
আইরাত;; থাক বিয়েই করবো না।
আব্রাহাম;; না না বেবিগার্ল এখন তো এটা বললে হবে না এখন তো বিয়ে করতেই হবে, মাস্ট। দাড়াও বিয়ের সানাই বাজাচ্ছি।
আইরাত;; আরে কিন্তু, আব্রাহাম!
আব্রাহাম সিটি বাজাতে বাজাতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো আর আইরাত মুখ টাকে বাংলার পাঁচ বানিয়ে রেখে দিয়েছে। আর অন্যদিকে আব্রাহাম এতোক্ষন সবকিছু মজার ছলে নিলেও এখন যেনো বেশ সিরিয়াস হয়ে গেছে৷ সে ইলা কেও বলে দিয়েছে যে দুই জামাই-বউ এর আবারো বিয়ের পিড়িতে বসার শখ জেগেছে। ইলা বেশ খুশি হয় শুনে। যাক সবকিছু আবার নতুন করে শুরু। আহহহ, ভাবতেই এক আলাদা ভালোলাগা কাজ করে নিজের মাঝে। আব্রাহাম নিজে দিয়া-অয়ন, রহিত-আরুশি, কৌশল-অবনি, তনয়া, রোদেলা, রাশেদ, আহসান সবাই কে ডাকে। বিয়ে টা ঘোরয়া ভাবেই হবে এবার, শুধু ঘরের মানুষ-জন তবে জাকজমক প্রচুর৷ অবশেষে অনেক আয়োজন করা হয়। তবে মেয়েরা সবাই বাহানা ধরলো যে মেহেদি পরবে। তাই মেয়েরা সবাই হলরুমেই ছিলো আর ছেলেরা সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলো। আইরাতের হাতে যেই না মেহেদি পরাতে যাবে তখনই আব্রাহামের আগমন…..
আব্রাহাম;; হেই ওয়েট…
সবার নজর সামনে আব্রাহামের দিকে। আব্রাহাম এগিয়ে আসে। আইরাত নিজেও ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
আব্রাহাম;; আইরাতের হাতে সবার আগে আমি মেহেদি লাগাবো। এই যে কন্যা (আইরাতের উদ্দেশ্যে) আপনাকে আমি মেহেদি লাগাবো।
দিয়া;; আয় হায় জিজাজি,, কত্তো রোমান্টিক।
আব্রাহাম;; তো তোমরা কি কম প্রেম করো নাকি।
দিয়া;; ম মা মানে?
আইরাত;; হয়েছে আর ভোলা সাজতে হবে না, আমরা সবই জানি যে আপনি আর অয়ন ভাই ডুবে ডুবে জল খাচ্ছেন বহু আগে থেকেই। শুধু তাই না অবনি আর কৌশল ভাইও।
অয়ন-কৌশল;; হাটে একদম হাড়ি ভেঙে গেলো।
সবাই হেসে দেয়৷ আর আব্রাহাম আইরাতের কছে বসতেই মেয়েরা সেখান থেকে উঠে দূরে সরে বসে৷ আব্রাহাম তার দু পা গুটিয়ে বসে আইরাতের হাতে মেহেদি দিয়ে দেয়। আর আইরাত এক মনে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর একদম আইরাতের দুইহাত ভরে মেহেদি লাগানো শেষ হয়ে গেলো। আব্রাহাম এতোক্ষন একবারের জন্যও অন্য দিকে তাকায় নি। একমনে মেহেদি লাগাচ্ছিলো, মেহেদি লাগানো শেষ হলে আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত কে ইশারা দেয় যেনো সে নিজের হাতের দিকে তাকায়। আর আইরাত তাকাতেই থ।
আইরাত;; আব আব্রাহাম এটা এটা আপনি পরিয়েছেন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ মাত্রই তো লাগিয়ে দিলাম।
আইরাত;; এর আগে কি মেহেদি পরানোর কাজ করতেন?
আব্রাহাম;; এই মেয়ে ইজ্জতের ফালুদা করো না তো।
আইরাত;; এত্তো সুন্দর, না মানে এত্তো সুন্দর। আর এভাবে তো পার্লারের মেয়েরাও দেয় না। সিরিয়াসলি অনেক সুন্দর হয়েছে। আচ্ছা রহস্য কি হ্যাঁ এই যে এত্তো সুন্দর করে শাড়ি পরানো, মেহেদি লাগানো, রেডি করিয়ে দেওয়া এগুলো কোথায় শিখেছেন বলুন তো?
আব্রাহাম;; শিখি নি, শেখার প্রয়োজন পরে নি। কারণ নিজের কাছে এত্তো মূল্যবান একজন মেয়ে রয়েছে। You are really very precious to me 💞✨…
আইরাত হেসে দেয়। এভাবেই সময় টুকু কেটে যায়। বাড়িতে সবাই আছে। আর সবাইকে নিয়েই আজ বাড়ি টা যেনো পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। একটা সময় কাজিকে ডাকা হয়, সবাই নিচে বসে আছে। আব্রাহামও সেখানেই। আব্রাহাম একটা গ্রে আর হুয়াইট কালারের কম্বিনেশনে শেরওয়ানি পরেছে। সোফাতে বসে বসে ফোন ঘাটছে। আইরাতও নেমে আসে। পরনে হালকা মিষ্টি & সাদা কালারের মিক্স লেহেঙ্গা। আইরাত এসে সোজা আব্রাহামের পাশে বসে পরে। আব্রাহাম দুই গালে হাত রেখে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
আইরাত;; এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
আব্রাহাম;;
আইরাত হেসে অন্য দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; এই যে কন্যা, আর কতো বার ঘায়েল করবে? আর কতো মারবে আর কতো?
আইরাত;; যতদিন আছি মেরেই যাবো।
তাদের কথা বলার মাঝেই কাজি আসে। এসে তাদের সামনে বসে। কাজি আব্রাহাম কে কবুর বলতে বলে। আব্রাহাম সাথে সাথে ফট করে কবুল বলে দেয়। আইরাত কে বললে আইরাতও বলে।
আইরাত;; কবুল, কবুল, কবুল।
আইরাতের কবুল বলতেই সবাই একসাথে বেশ চিল্লিয়ে ওঠে “কাবুল হ্যা” এই বলে। আব্রাহাম আইরাতের ঠিক সামনে একটা সুন্দর আয়না রেখে দেওয়া হয়। তার দিকে আইরাত তাকায়, আয়নাতে আব্রাহাম কে দেখা যাচ্ছে। আইরাত সাথে সাথে একটা চোখ মেরে দেয়। আব্রাহাম হেসে দেয় সাথে আইরাতও।
আব্রাহাম-আইরাতের বিয়ে টা কিন্তু হলো কিছুটা বিকেল বিকেল এমন দিকে। তাই আব্রাহাম-আইরাত চেঞ্জ করে এসে আবার সবার সাথে হলরুমে বসে আড্ডা দিতে লাগে। বেশ মজা হয়। এবার যেনো ফ্যামিলি টা একদম খুশিতে ভরা লাগছে। একটা সময় সবাই বিদায় নিয়ে চলে যায়। এখনো বিকেল পুরো পুরি ভাবে কাটে নি। সময় টা সন্ধ্যে আর বিকেলের মাঝামাঝি। বাইরে মেঘ সাজ করে এসেছে। মেঘলা ভাব। আইরাত এসে রুমের বড়ো থাই গ্লাস টা সরিয়ে দেয়। তখনই বিকট শব্দ করে বিদুৎ গর্জে ওঠে আর দুই-এক বিন্দু বৃষ্টি ফোটা আইরাতের মুখের ওপরে পরে। স্নিগ্ধ-শীতল বাতাস গায়ে এসে দোলা দিয়ে যাচ্ছে,, বাতাসে আইরাতের চুল গুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ নিজের কোমড়ে কারো হাতের স্পর্শ পায়। আইরাত কিছু বলে না কেননা এই স্পর্শ টা তার খুবই চেনা। স্পর্শ টা আইরাতের আব্রাহামের। আব্রাহাম আইরাতকে জড়িয়ে ধরে তার কাধে নিজের থুতা রেখে দেয়। ওমনি বাইরে ঝিরিঝিরি শব্দে বৃষ্টি নেমে পরে।
আইরাত;; পরিবেশ টা ভারি সুন্দর না?!
আব্রাহাম;; আমার কাছে কি আর ওগুলো দেখার টাইম আছে তোমাকে রেখে।
আইরাত;; বাব্বাহ।
আব্রাহাম খানিক আইরাতকে ছেড়ে দিয়ে দূরে পরে। তারপর আবার আইরাতের কাছে গিয়ে তার দিকে একটা গরম চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়।
আইরাত;; ওয়াও, আমি আরো আপনাকে বলতে চাচ্ছি যে কফি বানিয়ে আনবো নাকি? বাই দি ওয়ে আপনি আজ কফি বাদ দিয়ে চা কেনো?
আব্রাহাম;; “চা” মানেই ভালোবাসা। এটার কোন তুলনা হয় না। আর বৃষ্টির দিনে তো কোন কথাই নেই।
আইরাত;; ওয়াহহ, আমার ডায়লগ আমাকেই।
আব্রাহাম;; বউ তো আমারই তাই না।
আইরাত;; হুমম।
তখনই ধুপ করে ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়৷ আইরাত অবাক কেননা এভাবে ইলেক্ট্রিসিটি যাওয়ার কোন কারণই নেই। আর আব্রাহামের বাসায় তো নয় ই। অন্যান্য দিন হলে হয়তো আইরাত রাগ করতো কিন্তু আজ আর রাগ নেই বরং কারেন্ট চলে যাওয়াতে ভালোই লাগছে। আইরাত এইসবই ভাবছিলো তখনই আব্রাহাম একটা মোটা মোম জ্বালিয়ে দেয়। আবছা আঁধার রুমে মোমের আলো টা জ্বল জ্বল করছে। আব্রাহাম আরো দ্রুত আলো জ্বালিয়ে দেয় কেননা সে জানে যে আইরাত ভয় পায়। আইরাত ঘুড়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আইরাত গিয়ে আস্তে করে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। বাইরে থেকে এক দমকা বাতাস এসে মোমবাতি কে নিভিয়ে দিতে চাইলে আব্রাহাম একপাশ দিয়ে হাত দিয়ে আগলে ধরে। তারই আরেক পাশে আইরাত ধরে। দুজনের হাতের আড়ালে যেনো বাতি টা আরো স্পষ্ট ভাবে জ্বলে উঠে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আইরাত এক নয়নে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। মোমের আলোতে আইরাতের মুখ খানা যেনো আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেছে। অপরুপা লাগছে আইরাতকে,, মুখের যে এক মাধুর্যতা রয়েছে তা ফুটে ওঠেছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায় তখনই আরো একবার মেঘ জোরে ডেকে ওঠে। আব্রাহাম মোম টাকে কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখে এসে পরে। নিজের গিটার টা নিয়ে সোজা করিডরে চলে যায়। এখানের পরিবেশ টা আরো গাঢ় ভাবে মন কেড়ে নেওয়ার মতো। বৃষ্টির ছিটেফোঁটা এসে হালকা ভেজা ভেজা ভাব। আবছা অন্ধকার তার মাঝেই বিদুৎ চমকের আলো। পরিবেশ টা দুর্দান্ত। আব্রাহাম গিয়ে করিডরের থাই গ্লাস টা সরিয়ে দিয়ে তার পাশেই বসে পরে গিটার নিয়ে।
আব্রাহাম;; জানপাখি!
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; এদিকে এসো।
আইরাত আব্রাহামের কাছে চলে যায়। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের সামনে বসিয়ে দেয়। অর্থাৎ আইরাতের পিঠ টা আব্রাহামের বুকের সাথে লেগে আছে। আব্রাহাম তার গিটার টা আইরাতের কাছে দিয়ে নিজে আইরাতের পেছন দিয়ে গিটার টা ধরে। অর্থাৎ আইরাত কে সাথে নিয়ে সে গিটারে সুর তুলেছে। নিজের বাম হাত টা আইরাতের হাতের ওপর রেখে দেয় আর নিজের মুখ টা আইরাতের ঘাড়ে। আইরাতের হাতের ওপরে নিজের হাত দিয়ে ধরেই গিটারে সুর তুলে আব্রাহাম……….
~`~ Dua bhi lge na mujhey
Dawa bhi lge na mujhey
Jabse dil ko mere
Tu laga hai ❤️..
-*Neend raaton ki meri
Chahat baaton ki meri
Chain ko bhi mere
Tune yu thaga hai“~
–Jab saansey bharu mai,
Band aankhey kru mai
Najar tu yaar aaya 🥀
`••Dil ko kraar aaya
Tujhpe hai pyaar aaya
Pehli pehli bar aaya
Oo yaara~~ 🤎🦋
`••Dil ko kraar aaya
Tujhpe hai pyaar aaya
Pehli pehli bar aaya
Oo yaara~~
Oooo..Oooo..Oooo..Oooo..
“Har roj puchey ye hawaye,
Hum to bata ke haarey
Kyun jikr tera krte he
Humse taare….
“..Har roj puchey ye hawaye,
Hum to bata ke haarey
Kyun jikr tera krte he
Humse taare.,.,.,
~•Ab kissey hai tere
In hoton pe mere
Izhaar aaya yaara ~“ 🌹✨
Abraham & Airat Together;;
`~•Dil ko kraar aaya
Tujhpe hai pyaar aaya
Pehli pehli bar aaya
Oo yaara*~
`~•Dil ko kraar aaya
Tujhpe hai pyaar aaya
Pehli pehli bar aaya
Oo yaara*~ ❤️🥀
”Oooo..Oooo..Oooo..Oooo…..
শেষ হতেই আব্রাহাম গিটার টা রেখে দিয়ে আইরাত কে নিজের দুই হাত দিয়ে পেছন থেকে একেবারে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। আইরাত খিলখিল করে হেসে দেয়। এভাবে কিছুক্ষন বসে থেকে আইরাত খেয়াল করে দেখে যে রাত হয়েছে গেছে। তখন ইলেক্ট্রিসিটিও এসে পরে। আইরাত হুট করেই আব্রাহামের দিকে ঘুড়ে বলে ওঠে……
আইরাত;; আব্রাহাম, আজ না আমাদের বিয়ের রাত।
আব্রাহাম;; ওহহ হো হ্যাঁ আজ তো বাসর রাত।
আইরাত;; হ্যাঁ আ…..
আব্রাহাম;; ওয়েট,
আইরাত;; কোথায় যাচ্ছেন?
আব্রাহাম;; আসছি জাস্ট গিভ মি 2 মিনিট’স।
এই বলেই আব্রাহাম চলে গেলো। আর আইরাত বসে রইলো সেখানেই। আব্রাহাম গিয়েই সবার আগে তার কালেকশনে যে সব এলকোহলের বোতল ছিলো বা যাই ছিলো সব, সব এক এক করে সরিয়ে ফেলে। কারণ আইরাত তাদের প্রথম বারের বিয়ের রাতে যা করেছিলো ইয়া আল্লাহ। আব্রাহাম তা পূনরায় দেখতে চায় না। ঘাট হয়েছে তার আর না। বউ এর এমন রুপ আর দেখতে চায় না। কিছুক্ষন পর আব্রাহাম এসে পরে।
আইরাত;; কোথায় গিয়েছিলেন?
আব্রাহাম;; খুব বেশি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করতে।
আইরাত;; এমন কি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ?
আব্রাহাম;; তা তোমার না জানলেও চলবে।
আইরাত;; আচ্ছা শুনুন, আমার কিছু দেওয়ার আছে আপনাকে।
আব্রাহাম;; তো দাও।
আইরাত;; এই ধরুন।
আইরাত আব্রাহামের হাতে একটা লম্বাচওড়া কাগজ দিয়ে দেয়। আব্রাহাম কাগজ টা মেলতেই তা গড়িয়ে নিচে পরে যায়। মানে আইরাত তাকে এমন বড়ো একটা কাগজ দিয়েছে যা বলার বাইরে। বাজারের লিস্টও হয়তো এত্তো বড়ো হয় না।
আব্রাহাম;; এটা কি?
আইরাত;; পরে দেখুন, পরে দেখুন।
আব্রাহাম সবার ওপরে দেখে লিখা “‘কন্ডিশন’স” অর্থাৎ শর্ত।
আব্রাহাম;; কন্ডিশন!
আইরাত;; হ্যাঁ এগুলো আমার কিছু আবদার যা আপনাকে পূরণ করতেই হবে।
আব্রাহাম পড়তে শুরু করে দেয়। তো আইরাতের শর্ত হচ্ছে….
1. সকালে প্রতিদিন মর্নিং কিস দিতে হবে।
2. ব্রেকফাস্ট আব্রাহাম-আইরাত একই প্লেটে খাবে।
3. অফিসে বা কনসার্টে যেখানেই যাক আইরাত কে আদর করে তারপর যেতে হবে।
4. দিনে কমপক্ষে ৭-৮ বার ফোন করতে হবে।
5. বাসায় আসার সময় হাতে অবশ্যই, অবশ্যই চকোলেট আর ফুল থাকতে হবে তাও এত্তোগুলো।
6. যথেষ্ট সময় দিতে হবে।
7. হুটহাট করেই ঘুড়তে নিয়ে যেতে হবে তা বাইকে হোক বা গাড়িতে হোক বা হুড তোলা রিকশায়।
8. মাঝে মাঝে এই বৃষ্টিভেজা দিনে তারা দুজন মিলে বৃষ্টিবিলাশ করবে আর তার সঙ্গী হয়ে ওঠবে গরম ধোঁয়া উঠানো চা।
9. এক সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার লাল গোলাপ বা বেলী ফুল দিয়ে সিরিয়াস ভাবে প্রপোজ করতে হবে।
10. তার চাচি-চাচ্চুর কবর দেখতে নিয়ে যেতে হবে।
11. বেশির ভাগ সময় আইরাতের সাথে চিপকে থাকতে হবে লাইক আঠা।
12. আইরাত যা যা খেতে চায় সব দিতে হবে কোন রোক টোক করবে না।
13. আইরাতের মুড অফ থাকলে অবশ্যই গান গেয়ে তা ঠিক করতে হবে।
14. তারা হবে আনকোমন কাপল। এলকোহল বা সিগারেট সব একসাথে খাবে। মানে ভাবতেই অবাক লাগে আর হাসিও পায়। জামাই-বউ নাকি একসাথে এগুলো খাবে। বাট খাবে।
15. ম্যাচিং শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে ঘুড়তে বের হতে হবে।
16. তারা অনেক Cuddle করবে, পিলো ফাইট, একসাথে বসে পপকর্ন খাওয়া আর কার্টুন দেখা, সব।
17. আইরাতকে রেডি করিয়ে দিতে হবে।
18. তারা প্রেম করবে। লাইক গার্লফ্রেন্ড & বয়ফ্রেন্ড।
19. কোন কাজ করার না থাকলে রুমের দরজা জানালা সব লক করে ধুমিয়ে গান ছেড়ে নাচবে।
20. মাঝেই মাঝেই তার পছন্দের ফুলের গাজরা এনে মাথার পেছনে গুজে দিতে হবে।
21. আইরাতকে কপালে চুমু দিতে হবে বেশি বেশি।
22. তাকে অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক বেশির থেকেও অনেক বেশিই ভালোবাসতে হবে।
শেষ হলো আইরাতের কন্ডিশন”স। এগুলো পরে আব্রাহাম লাইক 🤨🤨।
আব্রাহাম;; এগুলো তোমার কন্ডিশন ছিলো?
আইরাত;; আবার জিগায়। তবে আরো একটা আছে।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; এত্তো বেশি হ্যান্ডসাম হওয়া চলবে না নয়তো সবাই তাকিয়ে থাকে।
আব্রাহাম লেটার টা রেখে দিয়ে আইরাতের হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে আনে। নিজের দুইহাত আইরাতের কোমড়ে পেচিয়ে বলে ওঠে।
আব্রাহাম;; এগুলো আমাকে না বললেও আমি নিজেই করতাম। মানে এগুলো আবার বলতে হয়। ওইযে তুমি যেভাবে বলো “আবার জিগায়”। আমি এর থেকে বেশিই করবো।
আইরাত;; হুমমম।
আব্রাহাম;; চলো একটা গেম খেলি।
আইরাত;; কি? ট্রুথ & ডেয়ার।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ
আইরাত;; ওকে। ট্রুথ নিলে তো সত্যি ই আর ডেয়ার কি হবে?
আব্রাহাম;; নিজেকে শুট করতে হবে।
আইরাত;; আর ইউ কিডিং উইথ মি আব্রাহাম?
আব্রাহাম;; কেনো বাসর রাতে বউ মাতলামি করতে পারলে জামাই ডেয়ার দিতে পারে না।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা,, এই কথা। ওকে ফাইন।
আব্রাহাম আর আইরাত দুই পাশে বসে পরে। তাদের মাঝখানে একটা ছোট্ট টেবিল আছে আব্রাহাম সেখানে একটা স্যাম্পেনের খালি কাচের বোতল রেখে দিয়েছে। সেটা ঘুড়াবে যার দিকে পরবে সেই। প্রথমেই আব্রাহামের দিকে পরলো।
আইরাত;; ইইইইইইইই পরেছে। বলুন ট্রুথ নাকি ডেয়ার?
আব্রাহাম;; ট্রুথ।
আইরাত;; ওকে তো, জীবনে কখনো মানে একটু খানি হলেও কি কারো ওপর ক্রাশ খেয়েছেন মানে স্কুলে বা কলেজ লাইফে মানে একটু হলেও কি কখনো কাউকে ভালো লেগেছিলো?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ
আইরাত;; কি 😧
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমার প্রথম ভালোবাসা ছিলো তো।
আইরাত;; আব্রাহাম 😒
আব্রাহাম;; কুসুম নাম ছিলো ওর।
আইরাত;; হুয়াট? কিন্তু এটা তো আম্মুর নাম।
আব্রাহাম;; আমার প্রথম ভালোবাসা বা ভালোলাগা সবটাই আমার ” মা” ছিলো।
আইরাত;; হারামিইইইইইইইইই।
আইরাত উঠে গিয়ে ঠাস ঠুস হাতে যত কুলায় সব আব্রাহামের ওপর ঝাড়তে লাগে। আব্রাহাম হো হো করে হেসে দেয়। আইরাতের দুই বাহু আটকিয়ে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। আব্রাহাম খেয়াল করে দেখে আইরাতের চোখের কিণারে হাল্কা পানি জমে গিয়েছে।
আব্রাহাম;; আরে মেয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসি। তবে জন্মের পর থেকে আমার প্রথম ভালোবাসা ছিলো আমার মা। না অন্য কোন মেয়ে তোমার আগে ছিলো আর না হবে। তুমিই প্রথম আর তুমিই শেষ।
আইরাত;; এমন ফাইজলামি আবার করলে আমি তোর মাথা ফাটাই দিমু।
আব্রাহাম;; পরে জামাই পাবা কোথায়?
আইরাত;; আরেকটা বি….
আব্রাহাম;; এইইইই মেয়ে।
আইরাত;; 😁😁
এবার আবার কাচের বোতল টা ঘুড়ালো। ঘুড়তে ঘুড়তে আইরাতের দিকে পরে।
আব্রাহাম;; কি নিবে বলো!
আইরাত;; ডেয়ার।
আব্রাহাম;; যাও শুট করো।
আইরাত;; আপনি না বলেন ভালোবাসবেনও আপনি আর মারবেনও আপনিই। তাহলে ধরুন।
আব্রাহাম;; না এখন তুমিই শুট করো।
আইরাত চোখ বন্ধ করে ট্রিগারে চাপ দেয়। কিন্তু যা হলো তাতে আব্রাহামের হাসি যেনো ফেটে পরলো। রিভলবার টা নকল। আর তা থেকে সাদা সাদা সাবানের বেলুন বের হচ্ছে। বাচ্চারা যা দিয়ে খেলে আর কি। আইরাত যতোই চাপ দিচ্ছে ততোই বেলুন বের হচ্ছে।
আব্রাহাম;; হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা।
আইরাত;; গাজাব বেইজ্জাতি হ্যা 🙂
অবশেষে রাত বেশ ভারি হয়ে গেলো। আইরাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল বাধছিলো তখনই আব্রাহাম এসে আইরাতের চুলে হাত দেয়। সে নিজেই আইরাতের চুল গুলো বেধে দেয়। বাধা শেষ হলে আইরাতের কানের পাশে নিজের মুখ নিয়ে আলতো করে বলে ওঠে….
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; প্রথম দিন তো একরাতের বউ হওয়ার অফার করেছিলাম রাজি হলে না এর জন্য সারাজীবনের জন্যই বউ বানিয়ে নিলাম।
আইরাত;; 😅
আব্রাহাম আইরাতকে ফট করেই নিজের কোলে তুলে নেয়। আইরাত প্রথমে অবাক হলেও আব্রাহাম তাকে চুপ করিয়ে দেয়। আব্রাহাম গিয়ে আইরাত কে সোজা বিছানার ওপরে ফেলে দেয়। ধীরে ধীরে আইরাতের দিকে এগিয়ে আসে।
আইরাত;; আব্রাহ…..
আব্রাহাম;; হুশশশশ বেবিগার্ল, আমি আমার বিয়ের সেই প্রথম রাত টা তোমার পাগলামির জন্য নষ্ট করেছিলাম কিন্তু আজ আমি আর পারবো না। আজ তোমাকে আমার লাগবে। আই নিড ইউ & আই ওয়ান্ট ইউ।
আইরাত আর কিছু বলে না। আব্রাহাম আইরাতের হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে ঠোঁট জোড়া নিজের করে নেয়। পরক্ষণেই আবার আইরাতের ঘাড়ে নিজের মুখ ডুবায়। সেই রাত টা তারা দুইজন দুজনাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে নিলো।
।
পরেরদিন সকালে~~
আইরাত ঘুম থেকে ওঠে আড়মোড়া ভাঙছে। তখনই আইরাত সামনে তাকিয়ে দেখে খুব সুন্দর করে লিখা
“” Happy 3rd Marriage Anniversary “”
আইরাত দেখে অবাক। আইরাতের মনেই ছিলো না প্রায় আজকের দিন টা। আর মনে না থাকার আরো একটা কারণ হচ্ছে যে গতকাল আবার আব্রাহাম-আইরাত বিয়ে করেছে। তার মানে তারা যখন একদম প্রথম বিয়ে করেছে এটা তখনের মানে আজকের দিন টাই। আইরাত উঠে গিয়ে ফুলানো বেলুন দিয়ে সুন্দর করে লিখা টার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আইরাত একগাল হেসে দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই আব্রাহাম এসে পেছন থেকে আইরাতকে জড়িয়ে ধরে তার কানে নিজের ঠোঁট লাগিয়ে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; Happy 3rd marriage anniversary Babygirl…
আইরাত;; আপনার মনে ছিলো?
আব্রাহাম;; আরে তো মনে থাকবে না।
আইরাত;; কি মজার ব্যাপার তাই না। গতকালই আমাদের বিয়ে হলো আর আজই কিনা এনিভার্সারি।
আব্রাহাম;; আরে কাল তো তুমি বলেছো তাই। নয়তো আমরা আমাদের একদম প্রথম বিয়ের এনিভার্সারি সেলিব্রেইট করবো ওকে?
আইরাত;; ওকে। তবে আপনি তো আমাদের সেকেন্ড এনিভার্সারি তে ছিলেন না।
আব্রাহাম;; এখন তো আছি।
আইরাত;; হ্যাঁ।
তখনই আইরাতের ডাক পরে তার দাদির কাছ থেকে। আইরাত দ্রুত নিচে চলে যায়। তবে আইরাত এই যে গেলো নিচে ইলার কাছে আর আইরাতের খবর নেই। আব্রাহাম কিছু কাজ করছিলো। কিন্তু প্রায় ঘন্টা খানিক হয়ে যাবে আইরাত নেই। এটা মনে পরতেই আব্রাহাম দ্রুত নিচে চলে যায়। আইরাত কে খুঁজছে। রান্নাঘরের দিকে যেতেই আব্রাহামের চোখ কপালে। আইরাত একদম শাড়ি পরে শাড়ির আচল টা কোন রকমে কোমড়ে গুজে চুল গুলো খোপা করে রান্না করছে। ইলা হয়তো পরিয়ে দিয়েছে তা। আব্রাহাম রান্নাঘরের কিনারে এসে দুইহাত ভাজ করে আইরাত কে দেখছে। আর আইরাত এতোই কাজে ব্যাস্ত যে সে আব্রাহাম কে খেয়ালই করে নি। আব্রাহাম আইরাত কে আপাদমস্তক দেখতে লাগে। আইরাত একটা এশ কালারের শাড়ি পরে আছে। আচল কোমড়ে কিছুটা গুজে দেওয়াতে কোমড়ের বেশ খানিক অংশ দেখা যাচ্ছে। চুল গুলো সামনে কিছুটা বের হয়ে আছে। গরমে ঘেমে গেছে। ফর্সা মুখে ঘাম কিছুটা মুক্তোর মতো জ্বলজ্বল করছে। মাঝে মাঝে বেশ বিরক্ত হয়ে আইরাত তার হাতের উল্টো পাশ দিয়ে কপাল মুছছে আর চুল গুলো পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। ওদিকে আব্রাহাম যেনো নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে আইরাতের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। কোমড়ে শীতল স্পর্শ পেয়ে আইরাত চমকে যায়। আব্রাহাম আইরাতকে নিজের বুকের সাথে ঠেকিয়ে শাড়ির আচল টা আরো ভালোভাবে তার কোমড়ে গুজে দেয়। তারপর আইরাতের কানের লতিতে একটা চুমু একে দেয়।
আইরাত;; আব্রাহাম যান এখান থেকে। কাজ করতে দিন।
আব্রাহাম;; তুমি এই অবস্থায় কেনো যদিও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। তবে এই হালে কেনো এই গরমে?
আব্রাহামের এই কথা বলতেই আইরাত ঘুড়ে তার হাতে একটা বড়ো পাত্র নিয়ে আব্রাহামের দিকে ধরে। আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে তাতে গরম ধোঁয়া ওঠানো বিরিয়ানি।
আইরাত;; না বেশি ভালো, না বেশি খারাপ। ওইতো ওই আগের মতো। আপনি যেভাবে পছন্দ করেন আমার হাতের।
আব্রাহাম;; বিরিয়ানি দিলে তাই আর কিছু বললাম না থাক। নয়তো এখন তোমার বারো টা বাজাতাম।
আইরাত;; হুম হয়েছে যান।
আব্রাহাম;; তুমি আমার আগের বের হও রান্নাঘর থেকে।
আইরাত;; আরে ক…..
আব্রাহাম;; আইরাত যাও।
আইরাত;; না না যাচ্ছি।
আইরাত সুরসুর করে বের হয়ে পরে রান্নাঘর থেকে। তারপর সবাই একসাথে বসে। অনেক আনন্দ, খুশির ভেতর দিয়েই কেটে যায় সময় টা। এইতো এভাবেই চলেছে আব্রাহাম-আইরাতের জীবন। আব্রাহাম যেনো আইরাতকে নিজের চোখে হারায়। আইরাত রোজ অফিসে যায়, আব্রাহামও আবার তার অফিস সামলাচ্ছে সাথে নিজের দ্বিতীয় ক্যারিয়ারও। অর্থাৎ এখন অফিসের বস দুইজন। কাজ অনেক কিন্তু যাই করুক না কেনো রাত দিন ২৪ ঘন্টাই তারা একসাথে থাকে। অফিসেও একসাথেই আর বাড়িতেও। তাদের যেনো কোনকিছুর কমতি নেই। ভালোবাসা কাকে বলে কেউ এদের কাছ থেকে শিখুক। অনেকেই বলেই এই অত্যাধুনিক জেনারেশনে নাকি ভালোবাসা নিতান্তই ঠুনকো। কিন্তু আব্রাহাম-আইরাত এই ধারণা কে একদম ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। আইরাতের আব্রাহাম & আব্রাহামের আইরাত।
একদিন বিকেল বেলার, গোধূলির লগ্নে আব্রাহাম-আইরাত বাগানের দোলনাতে বসে ছিলো। আইরাত বসে আছে তবে তার কোলে আব্রাহাম মাথা রেখে শুয়ে আছে। আকাশ টা লাল-কমলা রঙে রঙ্গিন। পাখিরা তাদের কিচিরমিচির ডাক তুলে তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। মন-মাতানো হাওয়া বইছে চারিদিকে। তার ওপর বাগানের সব ফুলের এক মাতোয়ারা সুগন্ধি মিশে আছে। এই মনোমুগ্ধকর বেলায়
আব্রাহাম-আইরাতের নেশাক্ত ভালোবাসা যেনো নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে। আব্রাহাম উঠে বসে পরে। আইরাতের ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে দেয়। তারপরেই আইরাতকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে আইরাতও জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম তার এক হাত আইরাতের কোমড়ে আরেক হাত দিয়ে মাথার পেছনে চুলের মাঝে মিশিয়ে দিয়ে রেখেছে।
আইরাত;; আব্রাহাম জামাইজান!!
আব্রাহাম;; হুমমম বেবিগার্ল ।
আইরাত;; ভালোবাসি।
আব্রাহাম;; ভালোবাসি অনেক বেশি ❤️।
এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের মাথার ওপরে একটা চুমু দিয়ে দেয়। তারা দুজন হয়ে রইলো একে ওপরের জন্ম-জন্মান্তরের চিরসাথী হয়ে। পরিপূর্ণতা পেলো আব্রাহাম-আইরাতের নেশাক্ত ভালোবাসা ✨।
..
..
..
..
..
..
~সমাপ্ত~
।
{ দেখতে দেখতেই গল্পটা শেষ হয়ে গেলো। জানি না সবার কেমন লেগেছে বা আমি সবার মন মতো গল্পটাকে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি কিনা। তবে এই “আব্রাহাম-আইরাত” আমার জন্য খুবই স্পেশাল। জানি গল্পের চরিত্র মাত্র, তবে এদের সাথে আমার Emotional attachment রয়েছে। হ্যাপি রিডিং 🥰}