#পদ্ম_ফুলের_অভিমান(পর্ব 16)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
মা তোমার ছেলে কেনো বুঝলো না আমার মনের কথা,
ফুপি যেনো কেঁদে বলছে আমার ছেলেটা আমাকে একটাবার বলে গেলো না,
হটাৎ আমার মনে পরলো, নিলয় ভাইয়ার ফ্লাইট তো রাত আটটায়,এখন সময় সাড়ে চারটার মতো বাজে, এখান থেকে এয়ারপোর্ট এ যেতে সময় লাগবে তিনঘন্টার মতো মানে আমার যেতে যেতে সাড়ে সাতটার মতো বাজবে। তাই আর দেরি না করে ফুপিকে বললাম বাবাকে ফোন দাও আমরা এক্ষুনি এয়ারপোর্ট এ যাবো,নিলয় ভাইয়ার ফ্লাইট আরো দেরি আছে। ফুপি ও সাথে সাথে চোখঁ মুছে বলল, হ্যাঁ মা তাই চল,আমার ছেলেটা আমার থেকে দূরে যাক আমি তা চাই না। ওর বাবা তো বলে,এখন আমার বয়স হয়ে গেছে নিলয় যদি ব্যাবসায় বসতো তাহলে আমাকে এখন আর এসব মাথায় নিতে হতো না,ছেলেও আমার কাছে থাকতো,,দারা এক্ষুনি আমি নিলয়ের বাবার কাছে ফোন দিচ্ছি।
এই মুহুর্তে বাড়িতে কোনো গাড়ি ও নেই, আমি বার বার ফোনের ওপর ফোন দিয়ে যাচ্ছি নিলয় ভাইয়াকে, এছাড়াও আমার কাছে যার যার নম্বর ছিলো সবাইকে বলে দিয়েছি নিলয় ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ হলে যেনো বলে একটিবার আমার সাথে কথা বলার জন্য, কিন্তু যেই ফোন দিচ্ছে ফোন বন্ধ পাচ্ছে, ফুপি নিলয় ভাইয়ার আব্বুকে ফোন দিচ্ছে এই মুহুর্তে উনিও বাড়িতে চলে এসেছে।উনি জানতো নিলয় ভাইয়া রাতে যাবে, এই সময় এসে উনি সহ সাথে করে এয়ারপোর্ট এ রেখে আসবে, এদিকে তুমুল বেগে বাতাস শুরু হয়েছে, ফুপা যখন এসেছে তখন এই গাড়ি নিয়েই বেরিয়ে পরলাম তিনজন,
বাতাস আর সাথে বৃষ্টি গাড়ি নিয়ে এগনোও যাচ্ছে না, গাছের ডাল ভেঙ্গে পরতেছে এইভাবে তো আর এগনো যায় না, আজকেই এই অসময়ে বৃষ্টি বাতাস হতে হয়,থেমে থেমে প্রায় এক ঘন্টার পথ অতিক্রম করার পর বাতাস কিছুটা কমে গেছে,হালকা বৃষ্টি পরছে,এখন ছয়টার মতো বাজে, ড্রাইভার যতো দ্রুত সম্ভব গাড়ি চালাচ্ছে।
এদিকে এয়ারপোর্ট এ একা একা বসে নিলয় ভাবতেছে,
পদ্ম তো আমাকে ভালোবেসেছে তাহলেও একটাবার কেনো বলতে পারলো না নিলয় ভাইয়া তুমি থেকে যাও,আচ্ছা ও এখন কি করতেছে,ম্যাসেস টা হয়তো এতোক্ষনে পেয়েছে। কিন্তু ঝড় এর মধ্যে তো ফোন এ নেটওয়ার্ক ও ছিলো না,আদৌ কি গিয়েছে ম্যাসেস,, মনটা কেমন খচখচ করছে,বাড়িতে একবার ফোন এ কথা বলে নেই, সবাই হয়তো খুব চিন্তা করছে,,এই সব মনে মনে ভেবে নিলয় নিজের ফোনটা অন করে। ফোন অন করতেই একের পর এক ম্যাসেস একের পর এক কল আসতে শুরু করে। নিজের বাবার নম্বর এ লাষ্ট কল দেখে যেই কল ব্যাক করতে যাবে তখনি আবার কল আসে,
-হ্যালো আব্বু,,
-নিলয় তুমি কোথায় এখন
-আব্বু আমি এয়ারপোর্ট এ, কিন্তু তোমরা কোথায়, পদ্ম এস এম এস দিয়েছে তোমরা নাকি এয়ারপোর্ট এ আসতেছো
আব্বু থমথমে গলায় বললেন, তোমাকে আটকানোর আগে মানুষের জীবন বাঁচানো ফরজ।তাই আমরা এখন হসপিটালে যাচ্ছি, তোমার কমনসেন্স এর বড়ই অভাব আছে মনে হয়, আমরা না হয় বাদ গেলাম, যে মেয়েটা তোমার জন্য এতোটা পাগলামি করছে তাকে একা ফেলে কিভাবে চলে যাচ্ছো তুমি, এখানে কি তোমার চাকরির অভাব হবে, আমাদের কি কোনো কিছু কম আছে যে আমেরিকা গিয়ে চাকরি করতে হবে। মানলাম তুমি ওখানে চাকরি করেছো, এখানে এসে আমাদের ব্যাবসাও সামলাবে না,কিন্তু তোমার তো ওখানকার সার্টিফিকেট আছে,চাইলে তুমি এখানেও বড় কোনো কম্পানিতে ঢুকতে পারবে। তোমাকে এতোদিন কিছু বলি নি এজন্য যে তুমি বড় হয়েছো, নিজের ভালোটা বুঝতে শিখেছো, কিন্তু এখন এই মেয়েটা যে তোমাকে সকাল থেকে হাজারবার কল করে যাচ্ছিলো তার কথা একবারো ভাবলে না তুমি, ও না হয় বলে নি থাকতে, তুমি তো থেকে যেতে পারতে, আমাদের কি আর কোনো সন্তান আছে যে আমরা সেইটা দিয়ে তোমার অভাব পুরন করবো বা নিজেকে সান্তনা দেবো, আমাদের তো একটাই সন্তান তুমি, তোমাকে দুরে রেখে কি আমরা ভালো থাকি নাকি। সেসব তুমি কখনোই বুঝবে না।
একবারো না থেমে একের পর এক কথাগুলো বলে গেলো আব্বু, আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না, আব্বু আগে তো কখনো আমার সাথে এমনভাবে কথা বলে নি। আর কার কি হয়েছে যে আব্বু এয়ারপোর্ট এ আসা বাদ দিয়ে হসপিটালে যাচ্ছে,
তাই জিজ্ঞেস করলাম,
-আব্বু কার কি হয়েছে, হসপিটালে কেনো যাচ্ছো,
-পদ্ম এ*ক্সি*ডে*ন্ট করেছে,,
পদ্ম এ*ক্সি*ডে*ন্ট করেছে কথাটা কর্নপাত হতেই হাত থেকে ফোন টা পরে গেলো, বসা থেকে দাড়িয়ে গেলাম,ব্যাগ টা ঘারে নিয়ে ফোনটা তুলে এক দৌড়ে এয়ারপোর্ট থেকে দৌড়ে চলে আসলাম বাহিরে,এখন আমার মনে হচ্ছে যে আমার পদ্মের এ*ক্সি*ডে*ন্টের জন্য আমি দায়ী, আমার উচিৎ হয় নি পদ্মকে একা ছাড়া, আমি না পদ্মকে কথা দিয়েছিলাম ওকে কোনো প্রকার কষ্ট পেতে দেবো না,তাহলে কেনো এমন করলাম আমি, আসলে সব ভালোবাসায় বুঝি অভিমান থাকেই, আমাকে পদ্ম একবারো থাকতে বলে নি আমি এজন্য অভিমান করেছিলাম যে কেনো বললো না, কিন্তু আমি তো ওকে কষ্ট দিতে চাই নি, আমি বুঝতে পারি নি পদ্ম এমন পাগলামি করবে আমার জন্য, দৌড়ে দৌড়ে অনেক দুর চলে এসেছি, চারপাশের মানুষ শুধু তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তারপর মনে পরলো কোন হসপিটালে আছে সেটা তো জানি না, কি হয়েছে, কতটা ক্ষতি হয়েছে আমার পদ্মর। ফোনটা বের করে আব্বুর নম্বর এ কল দিতেই আব্বু
রিসিভ করলো,
আব্বু তোমরা কোন হাসপাতালে আছো,আর পদ্মর কি খুব ক্ষতি হয়েছে,
এখনো কিছু বলে নি ডাক্তার, মাথায় আঘাত পেয়ে ঙ্গান হারিয়েছে, আর র*ক্ত পরেছে প্রচুর। তুমি সাবধানে এসো তারপর হাসপাতালের নাম বলে আব্বু ফোন কেটে দেয়।
কি করবো,কোনদিকে যাবো মাথা কাজ করছে না,না জানি আমার পদ্মের শরীর থেকে কতো র*ক্ত ঝরেছে।
ওখান থেকেই একটা বাইক ভাড়া নিয়ে প্রায় চল্লিশ মিনিট পর আব্বুর দেওয়া ঠিকানায় পৌছে গেলাম এর মধ্যে প্রায় দশবার কল দিয়েছি আব্বুকে, আটবারের বার আব্বু যেই বলেছে,
আল্লাহ ভরসা পাশে থেকে আম্মুর কা*ন্নার আওয়াজ কানে এসেছে তারপর থেকে আমার কলি*জার পানি শুকিয়ে গেছে, এই বুঝি আমি আমার পদ্মকে হারিয়ে ফেললাম, পদ্মর মুখটা বারবার চোখেঁর সামনে ভাসছে,
বাইক থেকে নেমে ওয়ালেট পুরোটাই বাইকওয়ালা কে দিয়ে চলে আসলাম অপারেশন থিয়েটারের সামনে, এসে দেখি আব্বু কপালে হাত দিয়ে বসে আছে আম্মু পাশে বসে কান্না করছে,
আমি গিয়ে আসতে করে ডেকে উঠলাম আম্মু,
আমার ডাক শুনে আম্মু আব্বু দুজনেই তাকালো আমার দিকে,
আমি আম্মুর দিকে এগিয়ে গিয়ে দুই হাটু গেড়ে বসে আম্মুকে বললাম, আম্মু কিভাবে হলো এসব,আমার পদ্মের এ*ক্সি*ডে*ন্ট কিভাবে হলো আম্মু,,
আসুন জেনে নেই কি হয়েছেলো তখন,,
পদ্ম- ড্রাইভার চাচা আরো জোড়ে গাড়ি চালান, না হলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আটটা পার হয়ে যাবে
কিছুক্ষণ চালানোর পর ড্রাইভার বলে ওঠে সামনে তো গাছ পরেছে মা এখন কিভাবে যাবো,গাছ সরানোর চেষ্টা চলতেছে,
গাছ পরেছে শুনেই পদ্মের মনে হয় এখানে দাড়িয়ে সময় নষ্ট করলে একদম চলবে না,
তাই পদ্ম গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলে , গাছ সরানো হয়ে গেলে আপনারা আসুন আমি ঐদিক থেকে অন্য গাড়িতে যাচ্ছি,পেছন থেকে ফুপা ফুপি ডেকে যাচ্ছে কিন্তু একদম সময় নষ্ট করা যাবে না, একটু সামনে এসে দেখি রাস্তার বিপরিত পার্শে কিছু গাড়ি দাড় করিয়ে রাখা, কোনোকিছু না ভেবে এদিক ওদিক না দেখে রাস্তা পার হতে গিয়ে কোনো কিছু বোঝার আগে একটা বাইক এসে ধা*ক্কা দিয়ে দেয় আর ছিটকে রাস্তার একপার্শে পরে যাই, কি হলো,এমভাবে মাথাটা ভাড় হয়ে আসলো যে কয়েকবার চেষ্টা করেও মাথাটা তুলতে পারলাম না, হাত পা ও যেনো নিস্তেজ হয়ে গেলো আর নড়াতেই পারছি না, চোখঁদুটো কেমন যেনো ঝাপসা হয়ে আসছে, হালকা হালকা দেখতে পাচ্ছি ফুপা আর ফুপি দৌড়ে আসছে আমার দিকে, তখনি মনে হয় নিলয় ভাইয়াকে বুঝি শেষ দেখাটাও দেখতে পারবো না আর, শেষবারের মতো বলা হলো না, নিলয় ভাইয়া এই পদ্ম_ফুলের_অভিমান তুমিও বুঝলে না। বুঝলে না আমার ভালোবাসাটা, তোমাকে যে আজো বলা হলো না ভালোবাসি। তারপর চোখঁদুটা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেলো।
,,
ঘটনাটি শোনার পর মনে হচ্ছিলো যেনো সবকিছু আমার চোখেঁর সামনেই ঘটছে,
এর মধ্যে ডাক্তার এসে এমন একটা কথা বলে গেলো যে তা শুনে নিলয় আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।
আম্মু আমার পদ্মকে এনে দাও আম্মু, আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না, আমি কথা দিচ্ছি আমি কখনো অভিমান করে দুরে সরে যাবো না আম্মু তবুও ওকে এনে দাও আমার কাছে, আমার পদ্মকে এনে দাও আম্মুউউ, আমার পদ্ম, পদ্ম একবার ফিরে আয় পদ্ম,আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না,
সব আমার দোষ আম্মু, আমি যদি আজকে না যেতাম তাহলে এসব কিছুই হতো না, আমার পদ্ম এতোক্ষন আমার কাছে থাকতো, কিন্তু আমি বুঝি নি আম্মু আমার পদ্ম আমাকে এতোটা ভালোবেসেছে আর আমি ওকে রেখে চলে যাচ্ছিলাম। আমাকে শা*স্তি দাও আম্মু। না হলে আমার পদ্মকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
নিলয়ের আম্মু যেনো এ এক অন্য নিলয়কে দেখছে, নিজের ছেলেকে এভাবে কাঁদতে কখনো দেখে নি, আজ যেনো ছোট বাচ্চাদের মতো হাত পা ছাড়িয়ে কাঁদছে,,
চলবে,,