পরাণ দিয়ে ছুঁই ২ পর্ব-১২+১৩

0
290

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১২
#Jhorna_Islam

দোস্ত প্লিজ দোস্ত বের কর আমায়।

-‘ তুই আগে বল ওখানে গেছিস কি জন্য?
চোখে কি কম দেখিস নাকি মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর কোনটা?

-‘ আরে আমি কি ইচ্ছে করে এখানে এসে আঁটকেছি বলে তোর মনে হয়? আমার কলম পরে গেছে সেটা উঠাতেই তো এসেছিলাম।কে জানতো এমন কিছু ঘটবে? প্লিজ কিছু কর।

-‘তুই আমাকে অনেক জ্বালাস ইসু।

-‘ তোকে জ্বালাবো না তো কাকে জ্বালাবো রে?

নূর ইসরাত কে টান দিয়ে উঠাতে যায় কিন্তু পারে না। উল্টো ব্যাথা পায় ইসরাত। কিছু সময় ভেবে নূর সামনের দুটো বেঞ্চ টেনে ইসরাত যেই তৃতীয় বেঞ্চে বসেছে ঐটার সামনে জায়গা করে দেয়। ইসরাত পরে বেরিয়ে আসে।

বাপরে দোস্ত বাঁচলাম। কে জানতো এমন করে আঁটকে যাবো।

-‘ হয়েছে হয়েছে বুঝে শুনে সব করতে হয় ব’ল’দ একটা।

-‘ ওমাগো কে আমাকে ব’ল’দ বলে।তুমি কি? তুমি বুঝি খুব চা’লাক? বলেই ইসরাত জোরে জোরে হেঁসে উঠে।

নূর ইসরাত কে চাপা ধমক দিয়ে বলে,, তোর এমন বিশ্রি হাসি বন্ধ কর।এটা স্কুল। ক্লাস চলছে সো কিপ কোয়াইট।🤫

ইসরাত নিজের হাসি বন্ধ করে দেয় নূরের কথায়।
তবে যাই বলিস না কেন নূর আমি একটা কথা মনে মনে ভাবলাম জানিস কি?

কি?

ইসসসস দোস্ত তালহা স্যার যদি আমার প্রেমে এমন করে আঁটকে যেতোরে। কি যে ভালো হতো।

-‘ হ্যা গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। সারাক্ষণ তালহা স্যার, তালতা স্যার করা লাগে? আমি বুঝি না স্যারকে কেন এতো বিরক্ত করিস তুই। কচুর ভালোবাসা। স্যার পাত্তা দেয় না তাও পিছন পিছন ঘুরে।

-‘ কচুর ভালোবাসা না কি সেদিন তুমি ও বুঝবে যেদিন সৌন্দর্য স্যারের প্রেমে পিছলে পরবে হুহ।

-‘ সে গুড়ে বালি। এমন কোনোদিন ও হবে না, আমি ঐ ব’জ্জাত ব’দমেজাজী স্যারের প্রেমে কখনো পরবো না।

-‘হুম হুম দেখা যাবে।

-‘ হুম চোখ খুলে রাখিস দেখতে পাবি।

**********
সৌন্দর্য ভার্সিটির কিছু অফিসিয়ালি কাজ শেষ করে মাত্রই বের হয়েছে । খিদে লেগেছে প্রচুর কাজের মাঝে ঢুকলে আর খাওয়ার কথা মনে থাকে না। ঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। এরমধ্যে সৌন্দর্যের ফোনে মেসেজ আসে সৌন্দর্য পকেট থেকে ফোনটা বের করে মেসেজ অপশনে ঢুকে।
মেসেজ পরে আবার ফোন টা পকেটে ঢুকিয়ে বারান্দা দিয়ে হেঁটে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।

দরজায় টো’কা দিয়ে বলে,,”মে আই কামিং স্যার?”

-‘ ইয়েস কাম গম্ভীর কন্ঠে আওয়াজ আসে।

সৌন্দর্য মনে মনে ভাবলো হাওয়া আজ মনে হচ্ছে গরম। কি হয়েছে কে জানে তাছাড়া পিওনের থেকে খবর পেয়েছে নূর কে ডেকে পাঠিয়ে কি যেনো বলেছে। ঐ ‘ব’ল’দ মেয়ে আবার কিছু উল্টো পাল্টা বলেনি তো? কে জানে কি কথা হয়েছে দুইজনের মধ্যে।

-‘কি হলো? সব ভাবনা কি দরজার সামনে দাঁড়িয়েই ভেবে ফেলা হচ্ছে নাকি? (প্রিন্সিপাল স্যার)

সৌন্দর্যের ভাবনার ঘোর কাটে।গলা খে’কাড়ি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।

-‘ বসো। খবরের কাগজে চোখ রেখেই বলেন প্রিন্সিপাল স্যার।

সৌন্দর্য চুপ করে বসে পরে।

-‘ কিছু বলবেন ব- না মানে স্যার?

-‘ না বললে কি ডাকা যাবে না?

-‘ আমি কি তা বলেছি? ভার্সিটিতে তো কোনো কারণ ছাড়া আমাকে ডাকা হয় বলে মনে পরছে না আমার।

-‘ কথায় পারা যাবে না তোমার সাথে।

-‘ দেখতে হবে না আমি কে! ভুলে গেছো নাকি আমি মি.ওয়াহিদ।

-‘ হ্যা জুনিয়র ওয়াহিদ। তা মি. ওয়াহিদ আপনি বোধয় ভুলে গেছেন আপনি মি.ওয়াহিদ হলে আমিও মি.ওয়াহিদ। সিনিয়র ওয়াহিদ।

-‘ ভুলবো কেন? আমার স্মৃতি শক্তি এতো দূর্বল না বুঝলে বড়ো আব্বু? ওপস সরি এখন তো বলা যাবে না বুঝলেন স্যার?

-‘ একটা ভুল হয়ে গেছে। সময় টা দেখে নাও এখন অফ পিরিওড চলছে। সো বড় আব্বু বলতেই পারো।

-‘ ইয়াহ!

-‘ বাই দা ওয়ে তোমার মতো পিওন কিন্তু আমাকেও একটা খবর দিয়েছে। কোথায় পাঠিয়েছো?

-‘ মা কে তার মেয়ের কাছে পাঠিয়েছি।

-‘ এটা একটু জোর জবরদস্তি হয়ে গেলো না? নূর কে ও একটু সময় দেওয়া দরকার আর তাছাড়া আমার কানে কিন্তু আসছে তুমি রু’ডলি বিহেভ করেছো তার সাথে।

-‘ ব’ল’দ টা তোমাকে এটাও বলেছে?

-‘ সৌন্দর্য? চোখ গরম করে বলে মি. রুপম ওয়াহিদ।

-‘ বড় আব্বু তুমি ওর জন্য আমাকে চোখ রাঙাচ্ছো?দিস ইজ নট ফেয়ার। আর আমি ওর সাথে রুড বিহেভ করছি ওর গা’ধামীর জন্যই।এই বয়সে এসেও নিজের ভালো মন্দ আর কথা বলাটা ও মনে হয় ভালো করে শিখেনি। আর ও যেমন মেয়ে নিজে থেকে কিছু করবে বলে তোমার মনে হয়? সারাক্ষণ নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকে তাই যা করার আমাকেই করতে হয় বুঝলে?

-‘ হুম বুঝলাম। তবে বেশি প্রেশার ক্রিয়েট করো না যাতে মেন্টাল ট্রেস পরে।

-‘ আমি এতোটা ও বোকা না বড় আব্বু যাতে করে নিজে নিজের বউকে ট্রেস দিবো মেন্টালি।এমনিতেই বিয়ের বিষয় টা নিয়ে অনেক প্রেশার নিচ্ছে। আই থিংক এবার সবকিছু বলে দেওয়াই ভালো। বিয়ের আগেই বলা উচিৎ ছিলো কিন্তু আংকেলই তো কিছু বলতে দিলো না।

-‘ ওমমম আংকেল?

-‘ শ্বশুর আব্বা। একটু লাজুক ভাব নিয়ে বলে সৌন্দর্য। সৌন্দর্যের কথার ধরণে জোরে হেঁসে উঠে মি.রুপম ওয়াহিদ।

*********
নূরের মায়ের সকাল থেকেই মন খারাপ এসব পরিস্থিতিতে মনে হয় আগে কখনো পরেনি।বাড়ির এমন ঠান্ডা পরিবেশ মোটেও তার কাছে ভালো লাগছে না। নূর আর তার বাবা মনে হয় প্রতিযোগিতায় নেমেছে। না খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করছে আর না কথা বলছে ভালো করে। আজও সেই ভোর বেলা উঠে চলে গেছে অফিসে কাজ আছে বলে।অথচ এতো বছরেও এতো সকালে না খেয়ে বের হতে দেখেনি। কি শুরু করছে এরা বাপ বেটি মিলে।

এই যে একটু আগে কল করলো নূরের বাবাকে বলল খেয়ে নিয়েছে। অথচ নূরের মায়ের কথাটা বিশ্বাস হলো না। কারণ লোকটার শরীর দিন দিন অবনতি হচ্ছে। রাতে ঠিক মতো ঘুমায় ও না সারারাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দেয়। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না উনি।হুট করেই মাথার মধ্যে একটা জিনিস খেলা করে। ফোনটা বিছানা থেকে তুলে কাউকে কল লাগায় নূরের মা।

********

প্রচন্ড গরমে সকলের অবস্থা খারাপ। বাহিরে প্রচন্ড পরিমাণে রোদ, সবকিছু শুকিয়ে যেনো কাঠ হয়ে আছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টির দেখা মিল্লেও গরম কিছুতেই কমছে না। গরম যেনো আরো বাড়িয়ে দিয়ে যায় বৃষ্টি। এই গরমে বাইরে বের হয়ে ও শান্তি নেই। গরমে ঘেমে নেয়ে শরীর একাকার।

বর্তমানে নূর ইসরাত ফাতিহা হেঁটে আর রিকশায় চড়ে ঢাকা শহরের অলিগলি ঘুরে চলেছে। ফাতিহা কিছু টা ক্লান্ত হয়ে গেছে। গরমে খারাপ ও লাগছে কিছু টা শরীর। তবুও কিছু বলছে না ঘুরতে তার অনেক ভালো লাগছে। নূর ফাতিহার দিকে তাকিয়ে দেখে ফাতিহাকে কেমন ক্লান্ত লাগছে।গুলুমুলু গাল দুটো কেমন লাল হয়ে গেছে। অনেক সময় নিয়ে হেঁটেছে নিশ্চয়ই পা দুটি ব্যাথা হয়ে গেছে। নূর একটু নিচু হয়ে ফাতিহার গালে চুমু খেয়ে নেয়, তারপর কোলে তুলে ইসরাত কে বলে,,আশেপাশে কোনো দোকান আছে কিনা দেখার জন্য। আইসক্রিম খাবে সকলেরই গলা শুকিয়ে গিয়েছে।

নূরের কোলে থাকা ফাতিহার ফুলো লাল গাল দুটো দেখে ইসরাত আল্লাদ করে টেনে দিয়ে বলে,,ওরে আমার গুলুমুলু বাচ্চা টা।

ওফফফ মাম্মার ফ্রেন্ড আমি এসব লাইক করি না একদম আমার গালে হাত দিবে না, গাল মুছতে মুছতে বলে ফাতিহা।

এহহ ঢং একদম আমার গালে হাত দিবে না কেনোরে তোর গালে কি স্বর্ন লাগানো আছে নাকি? আর কি ভাব একদম বাপের ফটোকপি।

ইসরাতের এহেম কথা শুনে ফাতিহা নূরের দিকে তাকায়। নূর ইসরাত কে বলে,,ইসরাত কি শুরু করলি আমরা সকলেই খুব ক্লান্ত একটা বসার জায়গা বের কর না।

হুম ঠিক আছে চল বলেই ওরা এদিক ওদিক একটা রেস্টুরেন্ট খুঁজতে থাকে। একটু গিয়ে একটা আইসক্রিম পার্লার পেয়ে যায় ওটাতেই ঢুকে পরে তিনজন।

এইদিকে সৌন্দর্য একের পর এক কল দিয়ে চলেছে নূরের ফোন বারবার বেজে কেটে যাচ্ছে। ড্রাইভার কে কল করে জানতে পেরেছে তারা স্কুল থেকে বের হয়ে গাড়ি না নিয়েই কোথায় গেছে। এইদিকে অনেক বেলা হয়ে যাচ্ছে সেইদিকে কি তাদের খেয়াল নেই? ফোন টা রাখে কেন? এতো কেয়ার লেস মানুষ সৌন্দর্য আর দুটো দেখেনি ইচ্ছে করছে ঠাস করে ফোনটা একটা আছাড় দিতে। ইসরাত কে কল দেয় নূরকে ফোনে না পেয়ে কিন্তু কিসের কি সব এক গোয়ালেরই তো গরু। এই মেয়ে কি করে ফোন ধরবে? আমিও না বলেই সৌন্দর্য একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। পা’গল করে ছাড়বে এই দুই মেয়ে সেটা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। কোনো উপায় না পেয়ে নূরের ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে রওনা দেয় তাদের উদ্দেশ্যে।

নূর,ফাতিহা আর ইসরাত মনের সুখে আইসক্রিম খাচ্ছে। আহ কি শান্তি এই গরমে আইসক্রিমটা কে তাদের অমৃত বলে মনে হচ্ছে।
এই অমৃত কে ব’দ হজম করানোর জন্য যে একজন আসতেছে সেই দিকে তাদের খেয়াল নেই।

#চলবে,,,?

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১৩
#Jhorna_Islam

সৌন্দর্য প্রথমে ভেবেছিলো ইচ্ছে মতো কথা শুনাবে মা মেয়ে কে। কিন্তু তার সব ভাবনা চিন্তায় জল ঢেলে দিয়েছে মা মেয়ে মিলে।এখন মনে হচ্ছে এখানে এই মুহুর্তে না আসলে অনেক সুন্দর দৃশ্য দেখা মিস হয়ে যেতো। চোখ দুটো কেমন মুগ্ধতায় ছেয়ে গেছে।

ফাতিহা নূরের কাধে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। নূর খুব যত্ন সহকারে ফাতিহার মুখে লেগে থাকা আইসক্রিম মুছে দিচ্ছে তাও আবার নিজের গায়ে জড়ানো উড়না দিয়ে। ফাতিহার চোখে মুখে কি সুন্দর প্রশান্তির ছাপ মনে হচ্ছে এই প্রথম মেয়ে টা কে সৌন্দর্য এতো প্রফুল্লিত দেখছে। মায়ের ভালোবাসার আর আদর যত্নের কি কোনো তুলনা হয়? উহুু কিছু দিয়ে হয় না সে যতোই বাবা,দাদা,দাদি আদর ভালোবাসা দেখ না কেনো।সৌন্দর্যের এতো সুন্দর মুমেন্টটা কেন জানি স্মৃতি হিসেবে ক্যামেরা বন্দী করে রাখতে ইচ্ছে হলো।যেই ভাবা সেই কাজ পকেট থেকে ফোন বের করে ফটাফট কয়েকটা ছবি ক্লিক করে নেয় সৌন্দর্য। পকেটে আবার ফোনটা ঢুকিয়ে ঐখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।

নূর কি যেনো বলছে ফাতিহা কে ফাতিহা হেঁসে হেঁসে জবাব দিচ্ছে। মাঝে মাঝে উচ্চ স্বরে ও হাসির শব্দ এসে প্রতিদ্ধনিত হচ্ছে। ব্যাপারটা মোটেও মন্দ লাগছে না সৌন্দর্যের কাছে। কিন্তু বেশি সময় এই সুন্দর অনুভূতি উপভোগ করতে পারলো কই?
নূর যে বারবার ফাতিহার মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে উড়না দিয়ে এতে করে সামনের দিক থেকে নূরের উড়নাটা সরে যায়। জামার গলা টা একটু বড় হওয়ায় সামনের দিকে অনেকটাই দৃশ্যমান। নূরদের টেবিলের সামনেই কয়েকজন ছেলে বসে আছে। এরমধ্যে একজন নূরকে যেনো নিজের দৃষ্টি দিয়েই নিজের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। হাতে তার ফোন হয়তো ছবিও তুলছে।সৌন্দর্য এটা দেখে নিজের মাথায় যেনো রক্ত উঠে যায়। হাতের মুঠি শক্ত করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।

দুইজন বসে খাবার খাচ্ছে আরেকজন খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে হা করে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। এরমধ্যে একজন ওয়াশরুমের কথা বলে উঠে চলে যায়। ছেলেটা চলে গিয়ে যেনো সৌন্দর্য কে জায়গা করে দিলো। সৌন্দর্য গিয়ে যেই ছেলেটা উঠে চলে গেছে ঐ ছেলেটার জায়গায় শব্দ করে বসে পরে। সৌন্দর্য শব্দ করে বসায় যেনো নূরের দিকে তাকিয়ে থাকা ছেলেটা কিছুটা বিরক্ত হলো।চোখ মুখ কোচকে নূরের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,, আহ্ বাশার ডিস্টার্ব করছিস কেন বলতো? শান্তি মতো বসতে পারিস না নাকি? আমার মনোযোগ হটাচ্ছিস কেন?

“দেখতে পাচ্ছিস না এক ফুল পরির সুন্দর রূপ দেখছি?” ছেলেটা বলে।

-‘ ঐ ফুল পরির সুন্দর রূপ দেখার জন্য সৌন্দর্য আছে। তুই কেন অন্যের জিনিসে নজর দিয়ে নিজের চোখ হারাতে চাচ্ছিস বলতো?

ছেলেটা অন্য কারো কন্ঠে এমন হু’মকি মূলক কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।
আপনি কে? আর আমাকে এসব কথা বলছেন কোন সাহসে? আর আমাদের বেঞ্চে কি করছেন আপনি?

সৌন্দর্য ছেলেটার কথায় নিজের হাত দিয়ে ঘাড় ডলতে ডলতে বলে,,প্রথমত আমার সাহস একটু বেশিই।আর দ্বিতীয়ত তুই ভাবতে পারছিস না তোর সাথে কি হতে চলেছে।

পাগল নাকি আপনি? কিসব আবোল তাবোল কথা বলছেন বলুন তো? ছেলেটা একটু রাগ নিয়েই বলে কথাগুলো সৌন্দর্য কে।

কেন আমি কে সেটা তোর জানতে হবে কেন? সৌন্দর্য জিজ্ঞেস করে।

কারণ আমি অচেনা লোকের সাথে এতো কথা বলি না বলেই ছেলেটা গ্লাস নিয়ে পানি খেতে থাকে।

সৌন্দর্য হাসতে হাসতে বলে, অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলিস না,কিন্তু অপরিচিত মেয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে পারিস।অন্যর জিনিসে নজর ও দিতে পারিস তাই না?

সৌন্দর্যের এহেম কথায় ছেলেটার নাকে মুখে পানি উঠে যায়।অনবরত কাশতে থাকে। কিন্তু সৌন্দর্য কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। পারলে যেনো চোখ দিয়েই ভ/স্ব করে দেয়।

ছেলেটা কাশি থামিয়ে আমতা আমতা করতে করতে বলে,,মা-মানে?

‘- মানে জানিস না তাই না? এটা কানের নিচে পরলে জানতে পারবি বলেই ঠাস করে চড় লাগিয়ে দেয় সৌন্দর্য।

ছেলেটা চ’ড় খেয়ে আহাম্মক হয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। পাশের ছেলেটা বলে আরে ভাই হচ্ছে কি? আপনি এভাবে একজন লোককে বিনা কারণে মারতে পারেন না।আমরা কিন্তু থানায় কমপ্লেইন করবো বলে দিলাম।আপনি এভাবে অচেনা লোকের গায়ে কোনো অন্যায় ছাড়া মেরে ভুল করছেন।

সৌন্দর্য গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে তোর থেকে আমি ন্যায় অন্যায় শিখবো না।আর প্লিজ এসব নীতি কথা শুনাতে আসিস না আমাকে।নিজে না খেতে চাইলে চুপ করে বসে থাক।এতক্ষন চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখে যখন কিছু বলিস নি এখনও কিছু বলার দরকার নেই। আমাদের দুইজনের বিষয় টা আমাদের দুইজনকেই সামলাতে দে ব্রো।

ছেলেটা এবার দ’মে যায় সৌন্দর্যের কথায়। এইদিকে ওরা নতুন। সৌন্দর্যের কথা শুনে মনে হলো এইদিকের কোনো প্রভাবশালী লোকই হবে। ছেলেটা মনে মনে চ’ড় খাওয়া ছেলেটা কে কয়েকটা গা/লি দিয়ে নেয়। কতো করে বলেছে নিজের চরিত্র ঠিক কর, এসব ভালো না একবার ধ/রা খেলে জীবন রফাদফা কে শুনে কার কথা। নে এবার বোঝ ভালো করে।

কিরে একটায় হয়েছে নাকি আরো কয়েকটা লাগবে? সৌন্দর্য কুটিল হেসে বলে।

ছেলেটা তার বন্ধুর দিকে তাকাতেই চোখের ইশারায় সৌন্দর্যের কাছে যেনো ক্ষমা চায় দেখিয়ে দেয়। ছেলেটা কি যেনো ভেবে বলে,,সরি বস ভুল হয়ে গেছে। চোখের সামনে সুন্দর কিছু পরলে চোখ তো যাবেই তাই না?

সৌন্দর্য রাগী লুক নিয়ে তাকায়।

ছেলেটা ভয়ে ভয়ে বলে না ইয়ে মানে সরি সরি বলেই বিল টা টেবিলে রেখে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

সৌন্দর্য ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রিলেক্সে বসে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। নূরদের টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে তারা তাদের মতো সময় কাটাচ্ছে।এইদিকে যে এতোকিছু হয়ে গেছে তারা জানতেও পারলো না।

সৌন্দর্য নূর আর ফাতিহার দিকে কিছু সময় নিয়ে তাকিয়ে রয় তারপর গলা খেঁকাড়ি দিয়ে বলে,,আরে এমন ভাবে কেবল সময় উপভোগ করে? আশে পাশে ও তো নজর রাখতে হয় নাকি? কে জানে কখন আশে পাশে ঝড়,তুফান, সাইক্লোন বয়ে যায়।

হুট করে এহেম কথায় নূর ইসরাত ফাতিহা আর আশেপাশের কয়েকজন সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। সৌন্দর্য আশেপাশের লোকদের দিকে তাকিয়ে সৌজন্যে মূলক হেসে বলে সরি গায়েজ ফর ডিস্টার্বিং ইউ ইনজয়। সকলে যে যার মতো আবার ব্যস্ত হয়ে যায়। ফাতিহা সৌন্দর্য কে দেখে খুশিতে হাত তালি দেয়। পরে আইসক্রিম খেয়েছে মাথায় আসতেই নূরের উড়নার নিচে মুখ লুকায়। সৌন্দর্য ফাতিহার কান্ড দেখে ও কিছু বলল না। ঐখান থেকে উঠে এসে নূরের অপর পাশের সিটটায় বসে পরে।

নূর কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। চোখ ঘুরিয়ে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মনের আনন্দে খেয়ে চলেছে। নূরের খুব অস্থির লাগছে।নিজেকে একটু ঠিকঠাক করে বসে। উড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়। এটা দেখে সৌন্দর্য নূরের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,আই ওয়ার্নিং ইউ নূর নেক্সট টাইম যেটা আমার দেখার কথা একমাত্র আমার হক আছে ঐটায় অন্য কেউ ভাগ বসালে বা নজর দিলে,,নূরের চোখে চোখ রেখে বলে আই উইল কি’ল ইউ! বলেই নূরের মুখে ফু দিয়ে দূরে সরে যায়। নূর এমন হুমকি শুনে ফ্রিজ হয়ে বসে রয়। কি করেছে লোকটা এমন কথাই বা কেন বলছে কিছুই মাথায় প্রবেশ করলো না নূরের।

সৌন্দর্য ওয়েটার কে ডেকে বিল পরিশোধ করে ফাতিহা কে কোলে তুলে নেয়। ওদের চোখের ইশারায় আসতে বলে বেরিয়ে যায়।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
সৌন্দর্যের সেই হুমকি মূলক কথা নূরের কানে বার বার এসে যেনো বারি খাচ্ছে। কি এমন করলো সে যে এমন ভাবে কথাগুলো বলল। নূর সারারাত এসব ভেবে ঘুমাতে পারে নি।ইচ্ছে করেছিলো ফোন করে জিজ্ঞেস করতে কেন বলেছে ঐ কথা গুলো। পরোক্ষনে নিজের জড়তার কারণে বলতে পারে নি।সারা রাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে সকালের দিকে নূর ঘুমায়।এরমধ্যে ফোনের বিদঘুটে রিংটোনে আরামের ঘুমের বারোটা বেজে যায়।উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ইসরাত কথার ঝুলি নিয়ে বসে। এখনো বাড়ি থেকে বের কেন হচ্ছে না। ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। কতক্ষন ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। নূর ইসরাতের কথা ঘুমু ঘুমু চোখে শুনে ঘড়ির দিকে তাকায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চোখ চড়ক গাছ। দশ মিনিটের মধ্যে আসছি বলে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পরে নূর।

ইসরাত যখন অপেক্ষা করে হাঁপিয়ে গেছে তখন এসে নূর উপস্থিত হয়।

সরি দোস্ত আজ যে ক্লাস আছে একদম ভুলে গেছি। ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে। কি করবো বল কাল রাতে তো,,, আর কিছু না বলে চুপ হয়ে যায় নূর।

ইসরাত নূরের দিকে তাকিয়ে বলে ঠিক আছে চল যাওয়া যাক।

দুইজন তারাতাড়ি ভার্সিটিতে এসে উপস্থিত হয়। গেইট পেরিয়ে ভিতরে খেয়াল না করে ঢুকতে গিয়ে কিছু একটার সাথে বারি খেয়ে নিচে পরে যায়।

#চলবে,,,,,,