পরাণ দিয়ে ছুঁই ২ পর্ব-২০+২১

0
321

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ২০
#Jhorna_Islam

নূর সৌন্দর্যের কথায় ভরসা খুঁজে পেলো।মনটা একবার বলছে কিছু হবে না তোর বাবার তো আরেকবার অন্য কথা বলে। কাল সারা রাত গল্প করেই কাটিয়ে দিয়েছে। কথা বলার সময় ও বুকের ভিতর টা বারবার মোচড় দিচ্ছিলো।

নূরের বাবা কে আগামী কালকের মাঝেই অপারেশন করানো হবে।তাই আজই হাসপাতালে এডমিট করানো হয়েছে। ডাক্তাররা সব রকমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।নূরের মা সেই যে নামাজের রুমে বসে আছেন আর উঠছেনই না। এতক্ষন সব সৌন্দর্য সামলালেও এখন তার বড় আব্বু মি.রূপম ওয়াহিদ সব ফর্মালিটিস পূরণ করছে। সৌন্দর্য এখন নূর কে সময় দিচ্ছে মেয়েটা বাইরে থেকে শক্ত দেখালেও ভিতর থেকে একেবারে ভেঙে পরেছে। সৌন্দর্য নূরের চোখ দেখেই ভিতরের অবস্থা কিছু হলেও বুঝতে পেরেছে।

পরের দিন নূরের বাবা কে যখন তৈরি করা হয়েছে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার জন্য তখন একে একে সকলকেই ডাক দেওয়া হয় উনার সাথে দেখা করার জন্য। নূরের মা আর তূর এক সাথে যায়।নূর কিছুতেই সাহস পাচ্ছে না যাওয়ার। নূরের বাবা শুধু নূর কে না নূরের সাথে সৌন্দর্য কে ও দেখা করার কথা বলেছে।নূর একই ভাবে বসে আছে কিছুতেই জোর পাচ্ছে না বাবার সামনে যাওয়ার।

সৌন্দর্য এসে নূরের সামনে দাঁড়ায়। নূর চোখ তুলে সৌন্দর্যের দিকে তাকাতেই সৌন্দর্য চোখের ইশারায় উঠতে বলে। কিন্তু নূর কিছুতেই উঠবেনা সে মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানায়।যাবে না সে তার এতো সাহস নেই।
‘– নূর কি হচ্ছে কি উঠো সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। (সৌন্দর্য)

নূর উত্তর দেয় না কোনো।

–‘ আমি কি বলছি শুনতে পারছো না তুমি নূর?

— স-্যার প্লিজ স্যার না।আমি পারবো না। আমি যেতে চাই না স্যার। আমি সাহস পাচ্ছি না যাওয়ার। আমি ঐখানে গেলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না। বাবা মানসিক ভাবে আরো ভেঙে পরবে।

— কিছু হবে না পরাণ উঠো বলেই সৌন্দর্য নিজেই নূরের হাত ধরে টেনে তুলে।
নূর ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।ক্যাবিনে ঢুকে দেখে বাবা তার দরজার দিকেই তাকিয়ে আছে। যেনো এতোক্ষন তাদের অপেক্ষাতেই ছিলো। নূর গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে বাবার পাশে বসে। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সৌন্দর্য একটা চেয়ার টান দিয়ে তাদের কাছাকাছি ই বসে।

–‘ আম্মাজান?

ইসসস এই ডাক শুনলে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। বুকের ভিতর যেনো হাতুড়ি পিটাচ্ছে আর বলছে তুই হয়তো আর এই ডাক শুনতে পাবি না। কেন এমন হচ্ছে? এমন না হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? সব ঠিক ছিলো ভালোই তো ছিলো। হুট করে একটা ঝড় এসে সব এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে।

— হু বাবা বলো। বলেই ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকানোর চেষ্টা চালায় নূর।নূরের বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,এভাবে ভেঙে পরতে হয় না মা। ভাগ্যে যা আছে তা তো আর আমরা বদলাতে পারবো না। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে আর মানিয়ে ও নিতে হবে। আমি জানি তুই পারবি তোকে যে পারতেই হবে। আমার অবর্তমানে তোকেই তো তূর আর তোর মায়ের দায়িত্ব নিতে হবে তাই না?

নূর বাবা বলেই চোখের পানি ছেড়ে শব্দ করে কেঁদে দেয়। নূরের বাবার ও চোখ দিয়ে পানি পরছে। সৌন্দর্য ওদের বাবা মেয়ের দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারে না তার চোখ দুটো ভীষণ জ্বালাপোড়া করছে। চোখ দুটো বুঝি আজ তার সাথে বে’ঈমানী করতে চাইছে। কিন্তু সে সৌন্দর্য কিছুতেই চোখের পানি কে জিততে দেওয়া যাবে না। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে আগের মতো স্বাভাবিক আর ক:ঠোর করে নেয়। নূরের বাবা মেয়েকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। আরো নানা ধরনের কথা চলে দুইজনের মাঝে কিন্তু নূর বেশি কথা বলতে পারে না কান্নারত গলায় শুধু হুু,হা করে উত্তর দেয়।

নূরের বাবা নূরের সাথে কথা শেষ করে এবার সৌন্দর্যের দিকে তাকায়।,,, সৌন্দর্য বাবা?

–” হুু, আ ইয়ে মানে বাবা,,হুম বাবা বলুন শুনছি।

— এইদিকে আসো বলে অন্য পাশে বসার জন্য একটু সরে জায়গা করে দেয়। সৌন্দর্য না করে না চুপচাপ গিয়ে বসে পরে।

নূরের বাবা সৌন্দর্যের হাত নিয়ে ধরা গলায় বলে,,,আমার এই অবুঝ রত্নটি তোমার হাতে তুলে দিলাম বাবা।তুমি তার যত্ন নিও ও ঠিক ভাবে মূল্যায়ন করো।আমার মেয়ে টা বড্ড সহজ সরল তুমি ওকে ভুল বুঝো না কখনো।সব সময় সুখে দুঃখে পাশে থেকো। দেখে রেখো ওদের একটু বাবা।

সৌন্দর্য নূরের বাবার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠে,,, এসব আপনি কি বলছেন বাবা? কিছু হবে না আপনার। জাস্ট একটা ছোট্ট অপারেশন হবে তারপর আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন। আপনাকে সুস্থ হতেই হবে নূর,তূর আর মায়ের জন্য। আমার জন্য ও আপনাকে সুস্থ হতে হবে। ওদের দেখে রাখার এতো বড় দায়িত্ব আমার উপর দিয়ে আপনি কিছুতেই চলে যেতে পারেন না।

এসব বললে তো আর হবে না বাবা।(নূরের বাবা)

আপনি মনোবল কেন হারাচ্ছেন বাবা? আমাদের সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও নিজের মনোবল হারাবেন না। কিছু হবে না আপনার। (সৌন্দর্য)

এরমধ্যে নার্স এসে জানায় বেশি সময় যেনো আর নষ্ট না করা হয়। নূর কিছু সময় বাবা কে জরিয়ে ধরে রাখে। এতক্ষন আসতে চায় না আর এখন যেতে চায় না। সৌন্দর্য এবারও জোর করে নিয়ে যায় নূর কে। আর এতো কান্না করার জন্য বাইরে নিয়ে গিয়ে চাপা একটা ধমক দেয়।এমনিতে করে, কিন্তু বাবার সামনে কেন করতে গেলো? বাবা তো এমনিতেই মনের দিক থেকে দূর্বল হয়ে আছে।
নূর আর কথা বলে নাই।

*************
ইসরাত হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। নূরের কাছে আরো আগেই যাওয়া দরকার ছিলো। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে যেতে দেরি হয়ে গেছে। এইদিকে জ্যামে আঁটকে আছে। রাগ উঠে যাচ্ছে ইসরাতের।একেইতো দেরি করে যাচ্ছে আবার এই জ্যামে আরো দেরি করে দিচ্ছে। বাইরের দিকে তাকাতেই ইসরাতের চোখ আটকে যায়।এটা সে কাকে দেখছে? তালহা স্যার নাকি অন্য কেউ? উহু অন্য কেউ হতেই পারে না। ইসরাত কখনো তালহা স্যার কে চিনতে ভুল করবে না। এটা তালহা স্যারই। গাড়ি চালক কে টাকা দিয়ে তারাতাড়ি করে নেমে যায় ইসরাত। পিছনে গিয়ে বসে বলে তারাতাড়ি চলুন স্যার এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।

তালহা ৪২০ ভোল্টের ঝটকা খেয়ে বসে আছে। হুট করে কি হচ্ছে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
মানে? এই তুমি এখানে কোথা থেকে এসেছো? খারাপ মাথা আরো খারাপ হয়ে গেছে তোমার তাই না? নামো বলছি বাইক থেকে এখনই নামবে।কি হলো নামছো না কেনো?

“কেন নামবো? আপনার আর আমার গন্তব্য তো একি।তাহলে একই পথের পথিক না হয়ে ভিন্ন পথের পথিক হবো কেন বলুন তো?”

— মানে?

— উফফ এইখান দিয়ে তো জায়গা আছে তাহলে বাইক চালাচ্ছেন না কেনো? চালান, আপনিতো হাসপাতালেই যাচ্ছেন নূরের বাবার যে অপারেশন হচ্ছে ঐখানে। কি ঐখানে যাচ্ছেন না?

— হ্যা কিন্তু তুমি জানলে কি করে? জানার তো কথা না।আর না জেনে এতো শিউর হয়ে বলছো কি করে?

— এটা হচ্ছে ম্যাজিক।ম্যাজিক দিয়ে জেনেছি।কিন্তু একটাই আফসোস আপনার মন টা ম্যাজিক করে পেলাম না শেষের কথাটা বিরবির করে বলে ইসরাত যা তালহার কান অবধি পৌঁছায় নি।

তালহা বেশি কথা বাড়ায় না এখন তারাতাড়ি হাসপাতালে যাওয়া দরকার। ওদের পাশে থাকা দরকার। ইসরাত আবার তালহা কে ধরে বসে নি পিছনে ধরে রেখেছে। তালহা বাইক চালু করতে করতে বলে,, এমনিতেই একটা পরিবারের দুঃসময় যাচ্ছে তুমি কি চাও আরো বিপদ ঘটুক?

ইসরাত কিছু না বুঝে জিজ্ঞেস করে,,, কি বলবেন সোজাসাপটা বললেই পারেন।

আমাকে ধরে বসো।আমি হসপিটালে যাচ্ছি পুলিশ স্টেশনে যেতে চাই না। ইসরাত বেশ খুশি হয়ে যায়। তালহার কাঁধে হাত রাখতে গিয়ে বুঝলো হাতটা কাঁপছে। বুকে ফু দিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতটা তালহার কাঁধে রাখে। তালহা লুকিং গ্লাসে সবই লক্ষ করেছে। মুচকি হেসে বাইক চালাতে থাকে।

বাইক চালাতে চালাতে হুট করেই তালহা বলে উঠে,, বায় দা ওয়ে,, বিয়ে পা’গল মেয়ে বিয়ে করবে না বলে নে’কা কান্না করছে এটা ভাবা যায়?

তালহা ঐদিনের জন্য যে খোঁচা দিয়ে কথা বলছে সেটা বুঝতে একটুও ভুল করলো না । কটমট করে তাকিয়ে তালহার কাঁধে রাখা হাতটা দিয়ে খা’বলে ধরে কাঁধ। বড় বড় নখ গুলো শার্টের উপর দিয়েই চা’মড়া মনে হয় ভে’দ করে ফেলছে। তালহা চোখ মুখ কোচকে বাইক ব্রেক করে। ধমক দিয়ে বলে,,এখনই তুমি বাইক থেকে নেমে যাও তোমাকে আমি নিবো না।

ইসরাত শুকনো ঢুক গিলে কয়েকবার সরি বলে।ভুল হয়ে গেছে আর এমন করবে না। এবারের মতো যেনো নিয়ে চলে।

তালহা আর কিছু না বলে বাইক চালাতে থাকে।

************
ঘন্টা দুয়েকের বেশি হয়ে গেছে নূরের বাবা কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষ ভীত মনে আল্লাহ কে ডেকে চলেছে, সব যেনো ঠিক থাকে। সকলের মনেই ভয় ঢুকে গেছে। নূর অপারেশন থিয়েটারের সামনে একবার গিয়ে আবার এসে পরেছে। বেঞ্চে না বসে নিচে বসে আছে। সকলের মাথায়ই টেনশন তাই কেউ কিছু বলছে না। নূরের পাশেই ইসরাত আর তূর বসে আছে। নূর ইসরাতের কাধে মাথা দিয়ে এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে।

দেখতে দেখতে আরো অনেক সময় কেটে যাচ্ছে। যতো সময় কাটছে ততো সৌন্দর্যের ভিতর ও কেন যেনো ভয় ঢুকে যাচ্ছে। সবার দিকে একবার তাকিয়ে সৌন্দর্য একটু একা থাকার প্রয়োজন মনে করলো।যাওয়ার আগে একবার নূরের দিকে তাকায় আর ভাবে এই মেয়ে কে কি করে সামলাবে সে? যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়। আবার নিজে নিজেই বলে,,এসব আমি কি ভাবছি কিছু হবে না।
সৌন্দর্যের পিছনে পিছনে তালহা ও যায়।

দুইজন নূরের বাবা কে নিয়েই কথা বলতে থাকে। আজ তালহার কাছে মনে হলো সৌন্দর্য নিজেই মনে বল পাচ্ছে না ভেঙে পরছে।তাই সৌন্দর্য কে বলছে সে যেনো ভেঙে না পরে তাহলে নূরের পরিবার আর নূর কে কি করে সামলাবে।

সৌন্দর্য তালহা কে কিছু বলার আগেই শুনতে পায়,,,, স্যা-স্যার….

সৌন্দর্য তালহা দুইজন ই ঘুরে তাকায়।তাকিয়ে দেখে নূর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।

নূর কি হয়েছে? (তালহা)

নূর তালহার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় না। দৌড়ে সৌন্দর্যের সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছু বলার আগেই সৌন্দর্যের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে হু হু করে কেঁদে উঠে।
সৌন্দর্য শুকনো ঢুক গিলে তালহার দিকে তাকিয়ে নূরের মাথায় নিজের কাঁপতে থাকা হাতটা রাখে।

গলা দিয়ে যেনো কথা বের হচ্ছে না। অনেক কষ্টে মুখ দিয়ে বের করে,,,

প-প-পরাণ?

#চলবে?

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ২১
#Jhorna_Islam

নূর শক্ত করে ঝাপটে ধরে সৌন্দর্যের বুক ভাসাচ্ছে চোখের পানি দিয়ে। সৌন্দর্য হ্যাং হয়ে আছে। কিছু বলার যেনো ভাষা হারিয়ে ফেলছে সে।তালহা ও কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। নূরকে জিজ্ঞেস করে ও কোনো উত্তর পায় না, তাই সে ঐখানেই চলে যায় আসল ঘটনা জানার জন্য। এখন এই দিকে শুধু সৌন্দর্য আর নূর। সৌন্দর্য নিজেকে সামলে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,,,পরাণ,, এভাবে কেন কান্না করছো? প্লিজ শান্ত হও একটু।অসুস্থ হয়ে যাবা তো এতো কান্না করলে।
দেখো বা-বাবা,,,, সৌন্দর্য আর কিছু বলতে পারে না কিই বা বলবে।কি বলে এই মেয়ে টা কে সে স্বান্তনা দিবে। সৌন্দর্য কে অবাক করে দিয়ে এতোসময় ধরে কান্নারত নূর খুশিতে আত্নহারা হয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,,, স-স্যার আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না, কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না স্যার বাবা ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

–‘ মানে?.

-অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে স্যার। বলতে বলতেই নূরের চোখ মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

সৌন্দর্য নূরের কথায় স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। বুক থেকে যেনো পাথর নেমে গেছে।
সৌন্দর্যের খুব ইচ্ছে করছিল বলতে আরেকটু হলে তো আমার অবস্থা খারাপ করে দিচ্ছিলে তুমি মেয়ে। কিন্তু বলল না মেয়েটা নিজের খুশি কনট্রোল করতে না পেরে কেঁদে দিয়েছে। দুঃখ পেলে শুধু মানুষ কান্না করে না মাঝে মাঝে অতি সুখে অপ্রত্তাশিত কিছু পেয়ে গেলেও চোখ দিয়ে খুশির অশ্রু ঝরে।সৌন্দর্য কিছুক্ষন নূর কে সময় দিলো নিজেকে সামলে নিতে।তারপর দুইজনই ওদের কাছে যায়।সৌন্দর্য গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে। জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে।জ্ঞান ফিরলেই নূরের বাবা কে ক্যাবিনে দেওয়া হবে।

সৌন্দর্যের বড় আব্বু ভার্সিটিতে জরুরি কাজ থাকায় চলে যায় সৌন্দর্যের উপর সব দায়িত্ব দিয়ে। তালহা আর ইসরাত এখনও যায়নি।মাগরিবের নামাজের আজান দিয়ে দিয়েছে, তাই নূরের মা নামাজ পরতে যায়। সৌন্দর্য আর নূর তার বাবার বিষয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলছে। ইসরাতের একটা কল আসায় একটু নিরিবিলি জায়গায় যায় কথা বলার জন্য। তূর একটা বেঞ্চে বসে আছে। তূর কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে তালহা এগিয়ে গিয়ে তূরের পাশে একটু ফাঁকা জায়গা রেখে বসে।
তালহা যে পাশে এসে বসেছে সেই দিকে মেয়েটার খেয়াল নেই, কি যেনো এক মনে ভেবে চলেছে।

— ছুটো মানুষের এতো কি ভাবনা শুনি? মাথা তো ব্লা/স্ট হয়ে যাবে। (তালহা)

— তূর এইদিক ওইদিকে তাকিয়ে বলে,,, কে ছোট মানুষ?

— এইদিক ওইদিকে তাকানোর কি আছে? এই যে আমার পাশেইতো বসে আছে ছোট মানুষ টা।

— এএএ আমি মোটেও ছোট মানুষ না।অলরেডি এইটিন হয়ে গেছে আমার। (তূর)

— ওরে বাবা তাই নাকি?

— হুম তাই।

তা এতো ভাবনা কিসের? সবকিছু তো ঠিক হয়ে গেছে। তোমার বাবা ও ঠিক হয়ে যাবে কিছুদিনের মাঝে।

হুম কিন্তু তাও কেন জানি আমার খুব টেনশন হচ্ছে।

— কি নিয়ে বলোতো?

জানিনা শুধু জানি টেনশন হচ্ছে। মাথা দিয়ে মনে হচ্ছে ধোঁয়া বের হচ্ছে। দেখুন বলেই তালহার হাতটা নিয়ে নিজের মাথার তালুতে রাখে তূর। সত্যিই মাথার তালু খুব গরম হয়ে আছে। তালহা মাথায় হাত রেখেই বলে সত্যি গরম হয়ে আছে। মজা করে বলে,,,খুব চা খেতে ইচ্ছে করছিল এখানে ক্যাটলি রাখলে তো চা হয়ে যেতো। তালহার কথায় তূর খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। যাও যাও তারাতাড়ি মাথায় পানি দাও নয়তো গরমে সব চুল পেকে যাবে।পরে এইটিন থেকে এইটি দেখা যাবে বলে তালহা নিজেও হেসে দেয়। কথার তালে তূরের মাথা থেকে হাত সরানোর কথা ভুলে যায়।ঠিক সেই মুহূর্তে ইসরাত ফোনে কথা বলা শেষ করে আসে। সামনের দিকে চোখ যেতেই থমকে যায়। তালহা কে তূরের মাথায় হাত দিতে দেখে আর ওদের এভাবে হাসাহাসি করতে দেখে না চাইতেও বুকের ভিতর সু’চালো কিছুর আ:ঘাত যেনো এসে লাগে। পরোক্ষনে নিজেকে সামলে নিজের এসব ভুল ধারণা মনে আসায় মন কে এক ধমক দিয়ে নিজেও ওদের সাথে কথা বলায় জয়েন হয়।

*******
নূরের বাবা আজ নিয়ে হাসপাতালে আছে চতুর্থ দিন।প্রথম দুই দিন সৌন্দর্য ছিলো সাথে। তার ভার্সিটিতে কিছু জরুরি কাজ থাকায় দিনের বেলা থাকতে পারে না তবে রাতে ঠিকই এসে হাজির হয়।তূর চলে গেছে ইসরাতের সাথে কারণ তার কয়েকদিন পর এক্সাম তবে বিকেলের দিকে এসে দেখা করে যায়। এখন আপাতত দিনের বেলা নূর আর নূরের মা ই থাকে। তবে সৌন্দর্য বলে গেছে জরুরি প্রয়োজন পরলে যেনো তাকে জানায়। আজ নূরের একটা ইম্পরটেন্ট ক্লাস থাকায় যেতেই হবে। চাইছিল ইসরাত কে দিয়ে কাজ সেরে ফেলতে কিন্তু হবে না তাকে যেতেই হবে। তাই নূরের মা আজ তার বাবার কাছে একাই থাকবে।নূরের বাবা এখন কিছু টা সুস্থ আছে তাই চিন্তা নেই। নূরের মা ই জোর করে মেয়ে কে পাঠিয়েছে নয়তো তার বাবা জানতে পারলে রাগ করবে।

নূর চলে যাওয়ার পর নূরের মা একা একা বসে আছে তার বাবার কাছে। তিনি এখন ঔষধ খেয়ে ঘুমোচ্ছে। এক ঘন্টা পর একটা ঔষধ আছে নূর বলে গিয়েছিল। কিন্তু প্রেপসিকশন দেখিয়ে বলে গিয়েছিল ঐসময় ভালো করে এটা খেয়াল না করায় বিপাকে পরে যান তিনি। এখানকার লিখা কিছুই বুঝতে পারছেন না। বুঝতে পারছেন ভুল হয়ে গেছে। এসব ঔষধ খাওয়ানো নূর ই দেখাশোনা করতো তাই তিনি এইদিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি। নূর বলার সময় ও ভেবেছে লিখা আছেই ঐখানে দেখেই খাওয়াতে পারবে।কিন্তু এখন ঝামেলা হয়ে গেলো কি করবে বুঝতে পারছে না। নূর কে যে একটা ফোন দিবে তার ও উপায় নেই মেয়েটার ফোন হাত থেকে পরে কাজ করছে না। ফোনটা ঠিক করাতে হবে। নূরের মা নূরের বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে তাই একটা নার্স বা ডাক্তার কে দেখিয়ে আনলে ভালো হয় বলে উঠে দাঁড়ায়। ক্যাবিন থেকে বের হতে গিয়ে উল্টো দিক থেকে হুট করে আসা কারো সাথে ধাক্কা খায়।ধাক্কা খেয়ে প্রেপসিকশন টা পরে যায়। নূরের মা নিজেকে সামলে ঐটা উঠাতে যাবে এমন সময় শুনতে পায়,,,,,,

” সরি আসলে আমি খেয়াল করিনি।এইদিক টা খালি ছিল তাই তারাতাড়ি যেতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আপনি যে হুট করে বেরিয়ে আসবেন বুঝতে পারি নি। কথা শেষ করে আবার বলে উঠে,, আরে আন্টি আপনি এখানে?

নূরের মা চোখ তুলে তাকাতেই বলে,,, আমাকে চিনতে পাচ্ছেন না? আরে ঐদিন যে আংকেল কে নিয়ে আপনাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম।

চিনতে পেরেছি বাবা। কেমন আছো তুমি?

–‘ আমিতো ভালো আছি কিন্তু আপনি এখানে যে? কারো কিছু হয়েছে?

–‘ হুম বাবা তোমার আংকেল এখানে ভর্তি।তারপর সব খুলে বলে,, এটাও বলে কোন ঔষধ টা খাওয়াতে হবে সেটা জানতে যাচ্ছে। ছেলেটা প্রেপসিকশন তুলে চোখ বুলিয়ে বলে আসুন আমি দেখিয়ে দিচ্ছি আর আংকেল কে ও একটু দেখে যাই।নূরের মা আর মানা করে না ভালোই হয়েছে নয়তো ঐদিকটায় যেতে যেতে উনি উঠে পরলে না দেখতে পেয়ে টেনশন করতো।

*************
মাস খানেক হয়ে গেছে নূরের বাবা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। সকলের জীবন ই আগের মতো চলছে।নূর আর সৌন্দর্যের জীবনে অবশ্য সামান্য কিছু টা পরিবর্তন এসেছে। এখন প্রতি রাতে মিনিট দশেকের মতো কথা হয় একে অপরের সাথে। তবে বেশির ভাগ সময় পড়াশোনা নিয়েই আলাপ আলোচনা চলে বেশি। মাঝে মাঝে যখন সৌন্দর্য কল না দেয় তাহলে নূর ভিতরে ভিতরে ছটফট করতে থাকে। বার বার ফোন চেক করে নিজে দিতে পারে না জড়তার কারণে। তবে সৌন্দর্য যখন কল দেয় মনটা আনন্দে নেচে উঠে। এই সাধারণ কথা বার্তা গুলোও খুব ভালো লাগে।

এরমধ্যে হুট করেই সৌন্দর্য ফাতিহা কে নিয়ে এসে হাজির। নূর কে কিছু না বলে সোজা নূরের বাবা মায়ের কাছে যায়। সেখানে অবশ্য নূর কে ও ডাকা হয়। নূর দুরু দুরু বুকে গিয়ে হাজির হয়।মনে প্রশ্ন টা ঘুরপাক খায় কি বলতে এসেছে লোকটা। আর কাল তো কতো কথা হলো কই কিছু তো তাকে বলল না।

ফাতিহা দৌড়ে এসে নূরের কোলে উঠে বসে। সৌন্দর্য একবার নূরের দিকে তাকিয়ে নূরের বাবা মা কে বলে,,,,বাবা এন্ড মা আসলে আমি কিছু বলতে চাই। এটা আমার আবদার ও বলতে পারেন।

নূরের বাবা বলে,,,এতো ফরমালিটির কি আছে বাবা বলে ফেলো কি বলবে।বাবা মা কে বলতে এতো সংকোচ কিসের?

সৌন্দর্য হাসার চেষ্টা করে বলে আসলে দুইদিন বাদে ফাতিহার স্কুল থেকে পিকনিকের আয়োজন করেছে একটা। তো সেখানে গার্ডিয়ানদের ও সাথে যেতে হবে। এখন ফাতিহা বায়না ধরেছে সেখানে নূর কে ও সাথে নিয়ে যাওয়ার। একদিন হলে সমস্যা ছিলো না কিন্তু সেখানে দুই দিন থাকা লাগবে তাই আর কি।

সৌন্দর্যের কথা শুনে নূরের বাবার মুখটা কিরকম গম্ভীর হয়ে যায়। সৌন্দর্য ভেবেই নেয় হয়তো অনুমতি দিবে না কিন্তু সৌন্দর্য কে অবাক করে দিয়ে তিনি বলেন,,নিয়ে যাও ফাতিহার সাথে তার মাম্মা যাবে না এইটা হয় নাকি?
এই কথা শুনে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় ফাতিহা। নূরের কোল থেকে নেমে দৌড়ে নূরের বাবার গলা জরিয়ে ধরে বলে,,,ইয়েএএএ থ্যাংক ইউ নানা ভাই।

সৌন্দর্য চোখ ঘুরিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে দেখে নূর আগে থেকেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। দুইজনের ই চোখে চোখ পরে কিছু সময় তাকিয়ে রয়।নূর বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারে না ঐ চোখের দিকে তারাতাড়ি ঐখান থেকে কেটে পরে।

*********
সেই রাত ৭ টায় সৌন্দর্য নূরদের বাড়িতে হানা দিয়ে নূর কে নিয়ে এসেছে। রাতে বের হয়েছে রাত ৮ টায় সকলে ফাতিহাদের স্কুলের সামনে থেকে রওনা দিবে।সৌন্দর্য যথা সময়ে সেখানে উপস্থিত হয়। গাড়ির ব্যবস্থা আছে তবুও যার যার নিজস্ব গাড়ি আছে তারা তাদের গাড়ি নিয়ে ও যেতে পারবে। সবকিছু রেডি এখন শুধু রওনা দেওয়ার পালা।এরমধ্যে চারজন দাঁড়িয়ে আছে সাথে ফাতিহার ফ্রেন্ড ও।সৌন্দর্য জিজ্ঞেস করলে বলে ওদের গাড়ি আসতেছে তেল ভরতে গেছে, ওরা একসাথেই যাবে। ফাতিহা শুনে বলে,,,মি. ওয়াহিদ ওদের কে সাথে নিয়ে নাও আমাদের।

ওদের জায়গা হবে না মাম আমাদের সাথে। (সৌন্দর্য)

ফাতিহা গাড়ির পিছনে তাকিয়ে বলে,,আমি তোমার কোলে বসলেও হবে না?

উহুু!(সৌন্দর্য)

মাম্মা তোমার কোলে বসলেও কি হবে না? (ফাতিহা)

সৌন্দর্য নূরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,, হলেও হতে পারে। জিজ্ঞেস করো তোমার মাম্মা কে বসবে কি না আমার কোলে।

নূর লজ্জা পেয়ে যায়। তারাতাড়ি বাইরের দিকে মুখ দিয়ে তাকিয়ে থাকে। ফাতিহা ডাকলেও সারা দেয় না। কিছু সময় পর নিজেই মুচকি হাসে। গাড়ির ভিতর আবছা আলোয় সেটা সৌন্দর্যের চোখ এড়ায় না।

#চলবে?,,,,,,