পরিযায়ী জীবন পর্ব-০৫

0
16

#পরিযায়ী_জীবন (পর্ব – ৫)

মেহরাব সকালে নাশতা করে বের হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখে সবার মধ্যে কেমন একটা অস্থির ভাব। ফাতেমা দ্রুত হাতের কাজ গুছিয়ে নিচ্ছিল। দুই বোনের জামাই পাঞ্জাবি পরে তৈরি হয়ে খেলা দেখছে। তাদের পাশেই ফারজানা আয়রাকে কমলা খাওয়ানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু মুখে দিতেই সে ঠোঁট গোল করে ফু করে বার বার ফেলে দিচ্ছে। তার ফর্সা টমেটোর মত গোল মুখটা কমলার রসে মাখামাখি হয়ে নিজেই কমলা সুন্দরী হয়ে বসে আছে। সেটা দেখে ফারাবি আর ফাইয়াজ হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। ওদের হাসি দেখে আয়রাও খিলখিল করে হাসছে। ফারজানা পড়েছে মহা বিপদে, সে কাউকেই থামাতে পাড়ছে না। এদের কান্ড দেখে পাশে বসে আম্মাও হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। মেহরাবের মনেহল, এটাই মনেহয় বেহেশতী সুখ! সে ফারজানার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল-

-বাহ্ ক্ষুদে বাহিনী খুব আনন্দে আছে মনে হচ্ছে?

ফারাবি আর ফাইয়াজ “মামা…” বলে চিৎকার করে দৌড়ে মামার গায়ে এসে ঝাপিয়ে পড়ল। ফারজানা বলল -দেখ সবকটা কেমন দুষ্টু হয়েছে! সব মামার মত হয়েছে।

-তোরা শিখিয়ে পড়িয়ে বড় করছিস আর দুষ্টুমীর বেলায় সব দোষ মামার?

-নয়ত কী? এগুলোর একটাকেও দেখেছিস যে তুই বাড়ি থাকলে অন্য কোথাও থাকে? ওইযে দেখ দুটো অলরেডি তোর গায়ে বাদরের মত ঝুলে আছে। তারপর আয়রাকে দেখিয়ে বলল- এটাকেও দেখ তোর কাছে যাবার জন্য কেমন করছে।

মেহরাব হাসতে হাসতে বলল- “ওরা জানে ভালোবাসা কোথায় পাওয়া যায়” তারপর আয়রাকে কোলে নিয়ে বলল- “তাই না মামা? মামা ভাগনে যেখানে আনন্দ তো সেখানেই।”

সাজেদা ওদের সবাইকে দেখছিল আর ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছিল। কী সুন্দর পরিবার তার। যে ছেলের বুকে এত ভালোবাসা তাকে কেমন করে কেউ অপছন্দ করতে পারে? আজ বিজরী তার পুত্রবধূ হলে পরিবারটা পরিপূর্ণ হয়ে যেত। তার বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো… তারপর ভাবল এখনও তো সব ফুরিয়ে যায়নি… সে ছেলেকে ডেকে বলল-

-তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে আসো। আমাদের দেরি হয়ে যাইতেছে।

মেহরাব অবাক হয়ে বলল- আমরা কোথাও যাচ্ছি নাকি?

-আমাদের দাওয়াত আছে রাতে। দাওয়াতে তাড়াতাড়ি যাইতে হয়। দেরি করিস না, জলদি কর।

-কোথায় দাওয়াত?

ফারাবি আর ফাইয়াজ একসাথে চেঁচিয়ে উঠল, “বিজরী আন্টির বাসায়”।

বিজরীদের বাড়ি! মেহরাবের সপ্রতিভ মুখখানা কেমন থেমে গেল। তাকে দেখে ফারজানা বলল-

-কিরে এমন ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেলি কেন? তোর জন্যই দাওয়াত দিয়েছে নইলে ওই নাকের ডগায় রাগ পুষে রাখা মানুষটা কাউকে পাত্তা দেয় নাকি? তাছাড়া বিজরী এখন আর আগের মত এবাড়ি আসে না। হাসিখুশি মেয়েটা কেমন চুপ হয়ে গেছে। এই বিচ্ছুগুলোর জন্য আমিও যেতে পারিনা। সেদিন ও এসেছিল বাবুকে দেখতে কিন্তু বসলই না। দেখেই চলে গেল। আমরা গেলে ওর ভালো লাগবে।

-আমি বাইরে থেকে এসেছি টায়ার্ড। তোরা যা তাহলে।

-“তোরা যা” মানে কী? বললাম না দাওয়াতটা তোর কারণে দিয়েছে? আর দাওয়াত খেতে যাবার জন্য তোকে হেঁটে হেঁটে সাহারা মরুভূমি পাড়ি দিতে হবে নাকি যে টায়ার্ড দেখাচ্ছিস?

সাজেদা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলল- আমরা সবাই রেডি হয়ে তোমার জন্যই অপেক্ষা করতেছিলাম। তুমি যেহেতু যাবা না তাহলে বিজরীর বাবাকে ফোন করে বলে দেই আমরা যেতে পারব না। তারপর বড় মেয়েকে ডেকে বললেন- “ফাতেমা কই গেলি? ভাত বসা, রাতের খাওয়ার ব্যবস্থা কর।” ফাতেমা মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল-

-আম্মা তুমি তোমার ছেলের কথাটাই শুনলা! ওদিকে ওরা যে, এতক্ষণে এতগুলো মানুষের খাবারের আয়োজন করে বসে আছে তার কিছু না? বাড়ি এসে দাওয়াত দিয়ে গেল তার সম্মানটা দেখবে না?

-এতসব দেখে আমার কী দরকার? আমার যাওয়ার ইচ্ছা নাই, আমি দু:খ পোষা মানুষ, আমার কাছে আমার ইচ্ছাই সব। এত কথা না বলে যা রান্না বসা।

মায়ের কথায় ছেলেমেয়েরা সবাই বুঝল কী বোঝাতে চাচ্ছেন তিনি। ফারজানা আর ফাতেমা আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করল না। সজীব তখন বলল-

-আম্মা, জাকারিয়া আংকেল আমার কারণে তোমাকে কত অপমান করেছেন সেসব ভুলে গেল?

-সব কিছু তো আর ভুলে যাওয়া যায় না। সময়ে অনেক কথার ব্যথা সাইরাও যায়। আমি সব ভুইলা গেছি তা না কিন্তু একটা মানুষ যখন নিজের সব ভুল বুঝতে পারে নিজে থিকা আগায় আইসা মাপ চায় তখন তারে মাপ কইরা দেওয়াটাই মানুষের কাজ। যাকগা, তুমি তো আর যাইতেছ না শুধু শুধু কথা বাড়ায় লাভ কী? যাও, ঘরে যাও। ভাইসাবের কাছে আমি মাপ চেয়ে নিব।

-তোমার মত এত সহজেই যদি সবাই সব বুঝে যেত… আংকেলের উপর আমার কোনো রাগ নেই। মুরুব্বি মানুষ… ভুল হয়ে গেছে। আসলে তার মুখোমুখি হতে আমার অস্বস্তি লাগে।

-ও… সেইটাই তো। ঠিক আছে থাক তাইলে। আমি ভাইসাবকে বলি যে, সজীবের তো অস্বস্তি লাগে, আমরা যাব না। ফাতেমা ভাত বসাইলি না?

মেহরাব করুণ মুখ করে বলল- আম্মা সিরিয়াল দেখে দেখে তুমি একেবারে নাটুকে হয়ে গেছ। বুবুকে রান্না বসাতে হবে না। তোমরা আগাও আমি চেঞ্জ করে আসছি।

সাজেদা মুচকি হেসে সবাইকে তাগাদা দিলেন যাবার জন্য। মেহরাব তার ঘরে গিয়ে দেখল বিছানার উপর একটা শুভ্র সাদা পাঞ্জাবি রাখা। ফারাবি আর ফাইয়াজও এই একই পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে বুঝল এটা তার ছোট আপারই কাজ। সে ফ্রেস হয়ে পাঞ্জাবি পরে বের হল। বাসা থেকে বের হতেই তার মনেহল, দাওয়াতে কী খালি হাতে যাবে? কিন্তু সে কথা বলতেও পারছিল না। বললেই দেখা যাবে তার বোন দুটো এটা নিয়ে ইয়ার্কি করা শুরু করে দিয়েছে। বোনগুলো বড় হওয়ায় কী যে বিপদ হয়েছে ওর। ছোট হলে কিলিয়ে ভর্তা বানিয়ে বক্সে ভরে রাখতে পারত। সে তখন সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল-

-কিছু রেখে যাচ্ছি নাকি? ইয়ে…হাত কেমন খালি খালি মনে হচ্ছে না?

ভাইয়ের কথার মানে খুব সহজেই ফারজানা ধরে ফেলল। সে সাথে সাথে শব্দ করে হেসে উঠল। ফারজানার হাজবেন্ড বলে উঠল-

-শালাবাবু, খালি হাত নিয়ে চিন্তা করছ ওদিকে যে একজন মানুষ সাথে নেই সেটা দেখছ না?

মেহরাব খেয়াল করল তাদের সাথে সাগর ভাই নেই। বলল- দুলাভাই কোথায়?

-তোমার হাত যেন খালি খালি না লাগে সেই ব্যবস্থা করতে গেছে।

-ওহ… দুলাভাই কেন গেল? আম্মা তুমি আমাকে বলতে পারলে না?

-তুই তো যেতেই চাইছিলি না তোকে কী বলব?

মেহরাব আর কথা বাড়াল না। কিছু বললেই দেখা যাবে সবাই সেটা নিয়ে হাসাহাসি শুরু করেছে। কী অদ্ভুত, এদের কথা বার্তায় নিজেকে কেমন জামাই জামাই লাগছে! তার উপর পরে এসেছে পাঞ্জাবি যেন শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে। ধুর…

***
ড্রইংরুমে বিজরীর বাবার সাথে মেহরাবের দুই বোন জামাই চাকরি, দেশ, রাজনীতি নিয়ে জমিয়ে গল্প করছে। মেহরাব শুধু হু হা করে তাদের সাথে তাল মেলাচ্ছে। বাকিরা সব ভেতরে বিজরীর ঘরে গিয়ে গল্প করছে। ফারাবি আর ফাইয়াজ সারা বাড়ি ছোটাছুটি করে যাচ্ছে। মেহরাব উসখুস করছে, আধ ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে তারা এসেছে অথচ এখনো বিজরী একবারও এ ঘরে আসেনি। তার বোন জামাইরা ব্যাপারটা খেয়াল করল। কিন্তু আংকেলের সামনে কিছু বলতেও পারছিল না তাই সাগর ফাতেমাকে ম্যাসেজ পাঠায়, “তোমরা ভেতরে বসে এত কিসের গল্প করছ? এদিকে শালা বেচারা ঈদের চাঁদ দেখার অপেক্ষায় শহিদ হয়ে যাচ্ছে।”

ফাতেমা ম্যাসেজ দেখে মুচকি হেসে বিজরীকে বলে- আমাদের খেতে দিয়ে দে। সজীব সারাদিন বাইরে ছিল, কী খেয়েছে না খেয়েছে কিছুই জানি না।

-সব টেবিলেই দেয়া আছে বুবু, তোমরা যাও। বিজরীর মা তখন বললেন-

-আমি তাহলে আগে ওদের সবাইকে খেতে দিয়ে দেই। একসাথে তো জায়গা হবে না সবার, আমরা মেয়েরা নাহয় পরেই বসি?

সাজেদা তাকে সায় জানালেন। ফাতেমা এগিয়ে গেল আন্টির পেছন পেছন।

মেহরাব ভেবেছিল খাবার টেবিলে অন্তত বিজরীর সাথে দেখা হবে কিন্তু তখনও সে এলো না! খাওয়ার এক পর্যায়ে জাকারিয়া সাহেব স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

-কী ব্যাপার বিজরীকে সরষে ইলিশ করতে বলেছিলাম মাছটা ভাজা কেন?

-ওর শরীরটা ভালো লাগছিল না বলে রান্না করতে পারেনি। তাই ইলিশ ভেজে দিয়েছি।

-নবাবি সেমাইটা কী করতে পেরেছে?

-না। ওদের তো পায়েস অনেক পছন্দ তাই পায়েস করেছি।

জাকারিয়া সাহেব আর কিছু বললেন না চুপচাপ খেয়ে নিলেন। সবাই বুঝল ব্যাপারটা তার পছন্দ হয়নি। বিজরীর হাতের সরষে ইলিশ আর নবাবি সেমাই দুটোই তার খুব পছন্দের। তিনি চেয়েছিলেন বিজরী এটা করুক।

সবাই খুব তৃপ্তি নিয়ে খেলেও জাকারিয়া সাহেব তৃপ্তি পেলেন না। বিজরী কী এখনও বাবার উপর অভিমান জমিয়ে রেখেছে? মেয়েটা তাকে কিছুই বলে না। ওর এই মৌনতা তাকে ভেতর থেকে টুকরো করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত…

খাওয়া শেষে ড্রইংরুমে একা বসে মেহরাব ভাবছিল, বিজরীর এই তীব্র অভিমানটা কার উপর? নিজের বাবার উপর? তার নিজের উপর? না কি আমার উপর? সে তখন পকেট থেকে র‍্যাপিং করা ছোট্ট একটা বক্স বের করল। দেশে আসবার সময় আয়রার জন্য কিছু কিনতে গিয়ে ডায়মন্ডের একটা লকেট তার খুব পছন্দ হয়ে যায়। যেটা হাতে নিতেই তার মানসপটে বিজরীর মুখটা ভেসে ওঠে! কী মনে করে সে কিনেও ফেলে। ভাবে, যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে এটা ওকে দেবে। আজ আসবার সময় পকেটে করে নিয়ে এসেছে কিন্তু কীভাবে দেবে এটা? আর তখনই ফারাবি আর ফাইয়াজ দৌড়ে এসে মামার হাতে বক্সটা দেখে চিৎকার করে বলতে থাকে-

-মামা এটা কী? এটা কার জন্য এনেছ? কী আছে এটায়?

মেহরাব অপ্রস্তুত হয়ে যায়। এরা চিৎকার করে এত প্রশ্ন করছে কেউ দেখে ফেললে শুনে ফেললে পুরো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। সে তাড়াতাড়ি বক্সটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে বলল- কোথায় কী? কিছু না। তোরা না ওদিকে খেলছিলি? এখানে কী? যা ভাগ এখান থেকে?

দুজনেই তখন আরও জোরে চিৎকার করতে থাকে- “মা দেখে যাও মামা আমাদের দেখতে দেয় না। পকেটে লুকিয়ে রাখছে গিফটটা। আমাদের বলছে, যা ভাগ”

ফারাবি আর ফাইয়াজের চিৎকার শুনে ফাতেমা এঘরে এসে বলে- কী হয়েছে? কী দিচ্ছে না মামা?

-মামা গিফট লুকিয়ে রেখে দিয়েছে আমাদের দেখতে দিচ্ছে না। আমরা তো নিব না, নষ্ট করব না। তাও দেখতে দিচ্ছে না। বিজরী আন্টির বাসাটাই ভালো না।

ফাতেমা বুঝে ফেলল পুরো ব্যাপারটা। সে মুচকি হেসে বলল- বিজরী আন্টির বাসা আবার কী করল? ভালো না কেন?

-বুবু তুই ওদের কথায় কান দিস না তো। তোর ছেলে দুটো খুব পাজি হয়ে যাচ্ছে। কানে ধরে মামাবাড়ি দেখিয়ে দেয়া দরকার।

-আমার ছেলেরা কী হচ্ছে সে বিষয়ে পরে আসছি তার আগে বল তুই কী লুকিয়ে রেখেছিস?

-কী লুকাব? কিচ্ছু না। তারপর দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল- এই তোদের না বললাম, ওদিকে গিয়ে খেল, যা?

দুজন একসাথে চিৎকার করে বলল- আমরা যাব না। আগে ওই বক্সটা দেখব।

ফাতেমাও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে বলল- আমিও দেখব। বলেই সে ভাইয়ের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল। বক্সটা বের করে এনে বলল- কী এনেছিস বিজরীর জন্য?

“বিজরীর জন্য আবার কী আনব?” বলে মেহরাব উঠে যাচ্ছিল। ফাতেমা বলল- কোথায় যাচ্ছিস?

-বাসায় যাচ্ছি খাওয়া তো শেষ।

-আমাদের তো খাওয়া শেষ হয়নি।

-তোরা খাওয়া শেষ করে আয়। আমি অযথা বসে থেকে কী করব?

-যার জন্য এটা আনলি তাকে না দিয়েই চলে যাবি?

-কার জন্য এনেছি?

-কার জন্য এনেছি মানে কী? এটা আগে বিজরীকে দিবি তারপর যাবি।

-“ওটা তোর ছেলের বউদের জন্য এনেছিলাম, রেখে দে তুই” বলে মেহরাব আর না দাঁড়িয়ে চলে যায়।

ফারাবি ফাইয়াজ তখন বলতে থাকে- মা, আমাদের বউ কোথায়? এটা বউকে কেন দিব? আমরা কেন নিব না?

প্রশ্ন শুনে ফাতেমা রাগ হবে না কি হাসবে বুঝতে পারছে না। বলল-“বউ কোথায়”? বউ কী জিনিস চিনিস? বউ হচ্ছে বটগাছের ভূত। দেখলেই ঘাড় মটকে দেয়। দেখবি?

ফারাবি তখন ফাইয়াজকে বলল- দেখলি? মামা এটা ভূতের জন্য এনেছে। মামাকে আমরা এত্ত ভালোবাসি আর মামা আমাদের জন্য ভূত আনতে চায়! এইজন্যই বলেছি বিজরী আন্টির বাসা ভালো না। বলে দুজন সেখান থেকে চলে গেল। ফাতেমা তখন বক্সটা নিজের কাছে রেখে খেতে চলে গেল। সবাই খাওয়া শেষ করে ড্রইংরুমে গল্প করতে বসলে ফাতেমা তখন বিজরীকে নিয়ে তার ঘরে গিয়ে বক্সটা হাতে দিয়ে বলে- এটা তোর জন্য।

-কী এটা?

-ভালোবাসা।

-মানে?

-মানে কেউ একজন মনে করে এটা তোর জন্য এনেছে। পকেটে করে বাড়ি অব্দিও নিয়ে এসেছে অথচ দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না।

বিজরী বক্সটা তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলল- আমি এটা নিতে পারব না।

-নিতে পারবি না সেটা সজীবকেই বলে দিস। বলে সে ওটা টেবিলের উপর রেখে চলে আসে। এর কিছুক্ষণ পর সবাই চলে যায়।

রাতের নিস্তব্ধতায় বসে বিজরী বক্সটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে- এটা মেহরাব তার কথা ভেবে এনেছে! এতে ওর হাতের ছোঁয়া, অনুভূতি, মায়া, ভালোবাসা সবই তো জড়িয়ে আছে তাহলে! বহুদিন পর তার মনের গভীর থেকে তীব্র কষ্টটা কান্না হয়ে উঠে এলো। সে কাঁদতে থাকে… আজ ৯দিন হয়ে গেল মেহরাব দেশে এসেছে। একটাবার কাছ থেকে দুজনার দেখাও হল না! ওকে কাছ থেকে দেখতে, ওর একটা কথা শুনতে যে ব্যাকুলতা তার ভেতর মেহরাবেরও কী তাই হয়? তার কী জানতে ইচ্ছে হয় বিজরী কেমন আছে? যাকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছে তাকে ছাড়া বিজরীর কেমন দমবন্ধ লাগে সেটা জানতে ইচ্ছে করে না?

চলবে…