#পান_পাতার_বৌ
দ্বাদশ_পর্ব
~মিহি
“বাদাম দুধ খেয়েও ঘুম ধরেনি? এ কেমন কথা শর্বরী? তোমার শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে মা?” সালমা খানম শর্বরীর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন।
-“ডাক্তারের কাছে যাবো একবার মা। সীমান্ত এখনো টের পায়নি। ওকে চিন্তায় ফেলতে চাচ্ছি না আর।”
-“আচ্ছা চলো আমি যাবো তোমার সাথে। এত দুশ্চিন্তা করতে হবে না। আমার মেয়েটা এত কষ্ট পাচ্ছে সে বলেনি কেন আগে? তুমি এক্ষুনি তৈরি হয়ে নাও। আমার পরিচিত একটা ডাক্তার আপা আছে, এই পাঁচ বাড়ি পরেই বাসা। চলো তোমাকে নিয়ে যাই।”
-“মা, আমি যে ডাক্তার দেখিয়েছি, তার কাছে গেলেই হতো না?”
-“ওনার কাছে গিয়ে তো কোনো লাভ হয়নি। এবার বরং আমার চেনা ডাক্তারের কাছে চলো। দেখবে দু’মিনিটে তোমার অসুখ একদম সারিয়ে দিবে। অনেক ভালো ডাক্তার মেয়েটা।”
শর্বরী আর কিছু বলতে পারলো না পাছে যদি লোকে শাশুড়ির সাথে ঝগড়া করে বলে খেপায়! শর্বরী ঘরে ফিরে হিজাব বাঁধতে শুরু করলো। সীমান্তকে জানাবে কি একবার? থাক, বোধহয় ব্যস্ত এখন! শর্বরীর মাথায় চিন্তা আরেকটা ঘুরছে। তার মায়ের ব্যাপারটা। এখন অবধি সেসব জানা হলো না। বাড়ির পাশে ঐ তুরফার বাড়ি। ওদের পরিবারের কাছে কিছু জানতে চাওয়া মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা। দীর্ঘশ্বাস ফেলল শর্বরী। চিন্তা শেষ হবে কবে?
_______
-“সীমান্ত এসেছো? কেইস সলভড?”
-“তা বলতে পারেন ইরতাজ সাহেব, কেইসের বৃত্তান্তই শোনাতে এলাম। তার আগে কিছু প্রশ্ন করতাম।”
-“হ্যাঁ বলো।”
-“আপনি কি দেখে ইরিনার সাথে আদনানের বিয়ে দিয়েছিলেন?”
-“আদনান ভদ্র ছিল, আচার ব্যবহার ভালো লেগেছিল। তাছাড়া ইরিনারও পছন্দ ছিল ওকে।”
-“আপনি কি আদনানের পরিবারের উপর কোনোরকম চাপ প্রয়োগ করেছিলেন এ বিয়েটার জন্য? বা আর্থিক লেনদেনের ব্যাপার ছিল কিছু?”
ইরতাজ সাহেব এ মুহূর্তে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন। সামনে থাকা গ্লাস থেকে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলেন।
-“হ্যাঁ। আমি আদনানের পরিবারকে বারো লাখ টাকা দিয়েছিলাম এ বিয়ের জন্য।”
-“আদনান রাজি ছিল না বিয়েতে?”
-“রাজি না হওয়ার তো কিছু নেই তবে ও যেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে না পড়ে তাই উপহারস্বরূপ টাকাটা…”
-“জামাই কিনেছেন মেয়ের জন্য! খোঁজ নিয়েছিলেন ভালোমতো?”
-“কী বলতে চাও স্পষ্ট করে বলো। এসবের সাথে আদনানের মৃত্যুর সম্পর্ক কোথায়? বিয়ের ঘটনা নিয়ে কেন পড়েছো তুমি?”
-“আচ্ছা ঠিক আছে। আদনানকে আপনার মেয়ে মারেনি। যে মেরেছে, তাকে বাঁচাতেই আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কেস ক্লোজড! উঠি আমি।”
-“ফাজলামি করতেছো?”
ইরতাজ সাহেব রেগে গেলেন। হাতে থাকা কাঁচের গ্লাসটা দূরে ছুঁড়ে মারলেন তিনি। মেঝেতে পড়ে তা কয়েক টুকরো হয়ে গেল। সীমান্তর মধ্যে বিশেষ কোনো ভাবান্তর ঘটলো না তবে ইরতাজ সাহেব রাগে কাঁপছেন।
-“শান্ত হন ইরতাজ সাহেব। মূল ঘটনা জানতে হলে সব শুনতে হবে। বসুন আর মাথা ঠাণ্ডা করুন।”
-“আপনার মেয়ের শেষ ইচ্ছে ছিল আদনানের খুনী যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে। আপনি কি মেয়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করবেন?”
-“সীমান্ত, কথা ঘুরিও না। কী ঘটেছে আমাকে বলো।”
-“আদনান আসমা নামের এক অল্পবয়সী গ্রাম্য মেয়ের প্রেমে পড়ে। এই প্রেমটা ঘটে বিয়ের কয়েক দিন আগেই। সেজন্য সে বিয়েতে হ্যাঁ না কিছু বলেনি। অথচ আপনি টাকা দিয়ে তার পরিবারকে কিনে ফেললেন! আসমাকে গ্রামে বিয়ে করে রেখে শহরে এসে নিজের বিয়ের কাহিনী জানলো আদনান। সে ভয় পেলেও পরিবার থেকে টাকার লোভের শিক্ষা কম পায়নি। টাকা থাকলে সব হবে বুঝতে পারলো সে। ইরিনাকে বিয়ে করে ফেললো আর ক’দিন বাদে আসমাকে ফ্ল্যাটে নিয়ে আসলো।”
-“আদনান!”
-“এখনো তো গল্প বাকি, শুনুন আগে। আসমা এসেছিল সংসার করতে অথচ এসে দেখল সে কাজের মেয়ে পরিচয়ে সতীনের ঘর করতে এসেছে। ঐ মেয়েটা গরিব বলে নিজের অনুভূতিগুলো কবর দিল আপনার মেয়ের জন্য! তারপর কী হলো জানেন? আপনার ভদ্র জামাই ইরিনার কাছে ভিজে বেড়াল হলেও আসমার কাছে বাঘ হয়ে উঠতো! শারীরিক নির্যাতন করে গেছে অবিরত। ইরিনাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে রেখে রাতের পর রাত পাশবিক নির্যাতন চলতো। লোকের সামনে বোন অথচ আড়ালে কী করতো তা আর কে দেখেছে? একদিন হঠাৎ ইরিনা আসমার শারীরিক পরিবর্তন খেয়াল করলো, বিবাহিত মহিলার মতো গঠন। সন্দেহ তার তখনি হলো আর সে সন্দেহের সুযোগ নিল আদনান। ঘুমের ওষুধের পরিবর্তে ড্রাগ দিতে শুরু করলো এখন। ইরিনা হ্যালুশিনেট করতে লাগলো। শেষমেশ আদনানের উপর হামলা করে বসলো। হামলার পর অনেক চেঁচামেচি করলেও শেষমেশ সে অনুতপ্ত হয়েছিল কেননা সে আদনানকে ভালোবাসতো। আদনানকে দেখতেই সে লুকিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল।”
-“আমার মেয়েটার উপর ঐ আদনান এত অত্যাচার করছে!”
-“আগে শুনুন ইরতাজ সাহেব। তো এবার খুনের ঘটনা। খুন আসমা করেছে। চাকুর আঘাত, বিষ উভয়টাই তার কাজ। আসমা আসলে হাসপাতাল আদনানকে জানাতে গিয়েছিল সে মা হতে চলেছে। আদনানের শরীরে তখন টাকার নেশা, ইরিনাকে তো সে ফেলে দিতে পারবে না। আসমাকে পতিতালয়ে চলে যেতে বলে এমনকি তার চরিত্র নিয়েও কথা বলে। রাগ হয় আসমার, পরিকল্পনা সে করেই এসেছিল। বিষটা আদনানকে খাওয়ায় তবে রাগ দমে না তার। ছুরির অজস্র কোপে আদনানের ছিন্নভিন্ন লাশের রক্তে যখন সে রঞ্জিত তখন ইরিনা আসে। এ বিভৎস দৃশ্য দেখে সে কেঁপে ওঠে। আদনানকে তো সে একটু হলেও ভালোবেসেছিল। কিন্তু আসমার কথা শোনার পর সে আরো ভেঙে পড়ে। ভুল মানুষকে ভালোবাসার যন্ত্রণা সে নিতে পারছিল না। আসমাকে বাঁচাতে সে নিজের মৃত্যুকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নেয়।”
-“এসব কথা তুমি কি করে জানলে? আসমা বলেছে?”
-“হুম। ইরিনার লেখা একটা চিঠি ছিল ওর কাছে, ঐদিন হাসপাতালে লিখেছিল। আপনি যদি কখনো আসমাকে খুঁজতে যান তবে যেন চিঠিটা দেখেন।”
-“কোথায় সে চিঠি?”
সীমান্ত চিঠিটা বাড়িয়ে দেয়। ইরতাজ সাহেবের চোখ ছলছল করছে।সে ঝাপসা চোখেই তিনি চিঠিটা পড়তে শুরু করেন,
“বাবা,
তুমি তোমার মেয়ের জন্য একটা ছেলে বেছেছিলে। সেটা ছিল তোমাকে ভুল। সে ভুলের মাশুলে দুটো জীবন ইতোমধ্যে শেষ। যার কাছ থেকে চিঠিটা পেয়েছো, সে তোমার আরেক মেয়ে বাবা। তাকে যত্নে রেখো। তার অসুবিধা যেন না হয়। আমার শেষ ইচ্ছে বাবা, রাখবে না তুমি? ও নিজে থেকে তোমার কাছে কখনো যাবে না হয়তো তবে তুমি আড়াল থেকে হলেও ওর খেয়াল রেখো বাবা। ওর অনাগত সন্তানের দায়িত্ব নিজের নাতি-নাতনির মতো করে নিও। তোমার মেয়ে তার ভুলের জন্য আরেকটা ভুল করতে যাচ্ছে বাবা। আই এম স্যরি!
-ইরিনা…”
ইরতাজ সাহেব কেঁদে ফেললেন। নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ-অভিমানে মেঝেতে বসে পড়লেন তিনি। সীমান্ত সান্ত্বনার ভাষা বোঝেনা, সান্ত্বনা দিতেও পারেনা তবে ইরতাজ সাহেবের জন্য খারাপ লাগছে তার। ইরিনার জন্যও অনেকটা খারাপ লাগছে। বাবা-মা মেয়ের ভালো চান কিন্তু সে ভালো তাদের জন্য কতটুকু ভালো হয় তা তো পরিস্থিতি বলে দেয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সীমান্ত।
_______________
“এই মেয়েটার সাথে সীমান্ত পড়তো। সীমান্তকে বিয়েও করতে চেয়েছিল মেয়েটা।” কথাগুলো শুনে শর্বরীর প্রচণ্ড খারাপ লাগে। এ কথা কি তাকে না জানালে চলতো না?
চলবে…
#পান_পাতার_বৌ
ত্রয়োদশ_পর্ব
~মিহি
“এই মেয়েটার সাথে সীমান্ত পড়তো। সীমান্তকে বিয়েও করতে চেয়েছিল মেয়েটা।” কথাগুলো শুনে শর্বরীর প্রচণ্ড খারাপ লাগে। এ কথা কি তাকে না জানালে চলতো না? ভদ্রমহিলাটির পরিচয় শর্বরী জানেনা। তার শাশুড়ি ডাক্তারের সাথে কথা বলতে ভেতরে গিয়েছে। হুট করে এ মহিলা পাশে বসে আজগুবি গল্প জুড়ে দিয়েছে।
-“আপনি আমাকে এসব কেন বলছেন? আমি কি জানতে চেয়েছি?”
-“নাহ, বলে রাখলাম। বিয়ের পর পুরুষ মানুষের মন উশখুশ করে কিনা, সামলে রেখো বরকে।”
-“আমার বরকে আমি সামলেই রাখবো,আপনার চিন্তা করতে হবে না।”
-“বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না? মুখে মুখে তর্ক করো! অসভ্য জাত কোথাকার!”
-“স্বামী আমার, সংসার আমার। জ্বলে আপনার! কারণ কি? আমার স্বামী আমাকে পছন্দ করেছে বলেই বিয়ে করেছে।”
-“তা তো করবেই। রূপ দেহ দিয়ে কালা যাদু তো আর সবাই পারে না।”
-“আপনি পারেন? না পারলে শিখে নেন নাহলে আবার আপনার স্বামী কে জানে উশখুশ করতে করতে কোথায়…”
মহিলা এবার রক্তচক্ষু মেলে তাকালো তবে শর্বরী মুখ টিপে হাসলো। জব্দ হওয়া মুখটা দেখতে দারুণ লাগছে তার। ভেতর থেকে ডাক পড়লো শর্বরীর। বাইরে আর কথা না বাড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো সে।সাদা এপ্রোন পড়া এক পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর বয়সী মহিলা বসে আছে। শর্বরী গিয়ে তার সামনাসামনি বসলো।
-“তুমিই শর্বরী? ভারি মিষ্টি মেয়ে তো তুমি! আমি তিথি।”
-“ধন্যবাদ।”
-“তোমার স্লিপ ওয়াকিং এর প্রবলেম কতদিনের?”
-“ছোটবেলা থেকেই। তবে টেনশনে থাকলেই সমস্যাটা বেশি হয়, তাছাড়া আমি ভালোই থাকি।”
-“আপনার আগের ওষুধগুলো আপনার শরীরের সাথে রেসপন্ড করছে না তাই এমন অসুবিধে হচ্ছে। আমি নতুন ওষুধ লিখে দিচ্ছি আর একটা এডভাইস। আপনারা বেবী নেওয়ার ট্রাই করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সী টাইমে এ ধরনের প্রবলেমগুলো সেরে যায়।”
শর্বরী লজ্জায় মাথা নিচু করে কোনোরকম মাথা নাড়লো। তিথির দিকে তাকানোর সাহস তার হলো না। সমস্ত রাস্তাও সে মাথা নিচু করেই চললো।
-“শর্বরীমা, তোমাদের বাচ্চাকাচ্চা নেওয়ার ব্যাপারে বলার অধিকার আমার নাই তবে আমারো মনে হয় বাচ্চা তাড়াতাড়ি নিলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।”
শর্বরী কিছু বলতে পারে না। এসব কথা সীমান্তকে কী করে বলবে সে ভাবতেই লজ্জায় গায়ে কাঁটা দিয়ে আসে তার।
___________
সীমান্ত ফিরলো রাত করে। শর্বরী ঘুমোয়নি তখনো। সীমান্ত ফিরেই লক্ষ করলো শর্বরীর মুখে অন্যরকম জ্যোতি। ইউনিফর্ম না খুলেই স্ত্রীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো সে।
-“কী ব্যাপার বিবিসাহেবা? এত প্রফুল্ল দেখাচ্ছে যে আপনাকে?”
-“ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছে …”
-“কী বলেছে?”
-“বলেছে আমাদের তাড়াহুড়ো বেবী নিতে, তাহলে আমার সমস্যা সেরে যাবে।”
-“কোন হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলে? বাচ্চা নেওয়ার পরামর্শ দিল! বাহ!”
-“সমস্যা কী আপনার? বাবা হওয়ার বয়স হয়নি?”
-“তোমার ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষার দেড় মাস আছে, হুশ জ্ঞান খেয়ে ফেলছো? পড়াশোনা শেষ করো আগে। লাস্ট সেমিস্টারে এসে গিভ আপ করো না।”
-“এত নিরামিষ কথাবার্তা পুলিশের পক্ষেই বলা সম্ভব। যান তো গেস্টরুমে যান, এ ঘরে ঘুমোনোর দরকার নাই আপনার।”
-“নিজেই বাচ্চাদের মতো করো আর বাচ্চার মা হতে চাও কোন সাহসে?”
শর্বরী আর কথা বললো না। রোবটের মতো দাঁড়িয়ে রইল। সীমান্ত ভেবেছিল সামান্য মান অভিমান বোধহয়। সে আর তেমন জোর করেনি তবে এ মান কমলো না। গুণে গুণে তিন দিন পেরোলেও শর্বরীর রাগ আগের মতোই। এমনকি রাতে সীমান্তকেও ঘুমোতে দেয়না সে। সারারাত লাইট জ্বালিয়ে রাখে। সীমান্ত কী করবে বুঝে উঠতে পারেনা। ডাক্তারটাকে পেলে এনকাউন্টার করে ফেলতো সে নিশ্চিত। তিনদিনের মাথায় সীমান্তর মন খারাপ হয়ে আসলো। একটামাত্র বউ তার আর সেও কিনা কথা বলে না! সকালে থানার জন্য বেরোনোর আগে নানান ছুঁতোয় শর্বরীর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে সে। এমন সময় বাইরে থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা গেল। সীমান্ত দৌড়ে বাইরে গেল। শর্বরীও পিছু পিছু গেল। সেদিনের ঐ মহিলাটিকে চেঁচাতে দেখে খানিকটা রাগ হলো শর্বরীর। এই মহিলা চেঁচাতে চেঁচাতে শর্বরীর বাড়ি অবধি চলে এসেছে!
-“সালমা! এসব কেমন কারবার? তোমার ছেলের বউ আমাকে যা নয় তাই বলে অপমান করছে আমি কিছু কই নাই কিন্তু রাত বিরাতে ঘুমের ঘোরে পাগলের মতো হাঁটতে হাঁটতে আমার বাড়িতে গিয়ে সে কী করছে জানো?”
-“ঠাণ্ডা হন ভাবী। ঠাণ্ডা মাথায় বলেন কী হয়েছে।”
-“তোমার এই বৌ কাল রাতে আমার বাড়িতে গিয়ে আমার বাড়ির সামনের সবগুলো টব আমার দরজায় ছুঁড়ে ছুঁড়ে ভাঙছে। এমনকি বাইরে যে নেমপ্লেট ছিল এটাতেও কালি মাখায়ে আসছে। এসব কোনো সভ্য মানুষের কাজ?”
শর্বরীর এবার টনক নড়লো। ঘুমের ঘোরে? সে তো ঘুমোয়-ই নি রাতে। এসব আবার কিভাবে করবে? মহিলার চাল ঠিকই মাথায় ঢুকলো শর্বরীর। সেদিনের অপমানের বদলা নিতে এসেছে। শর্বরী কিছু বলার আগেই সীমান্ত এগিয়ে গেল।
-“চাচী আপনি দেখেছেন শর্বরীকে এসব করতে?”
-“হ! নিজ চোখে দেখছি।”
-“আটকাননি কেন?”
-“ভ..ভয়ে! আমাকেও যদি মেরে ফেলতো!”
-“চাচী, আপনাদের দরজা তো কাঠের, চারপাশে সামনের দিকে কোনো জানালা নাই। তাহলে আপনি কিভাবে শর্বরীকে দরজায় টব ভাঙতে দেখলেন?”
-“আমার মুখের কথা কি বিশ্বাস হয় না? পুলিশ হইছো বলে বউয়ের দোষ তো দেখবাই না। আমার লোকসান দিবা না কইলেই হয়।”
-“আপনি প্রমাণ করুন তাহলেই তো হয়।”
-“আমি নিজ মুখে বলতেছি তো। তোমার বউ ছাড়া আর কার ঘুমের ব্যারাম আছে? চেহারা সুরত দেইখা তো বিয়ে করছো, জানো না নাকি বৌয়ের অসুখের কথা?”
-“শোনেন চাচী, শর্বরী আর আমি কাল সারারাত জেগেছিলাম। অযথা একটা নাটক সাজাইতে এসে মানহানির মামলা খেতে চান? আপনাকে যদি আর কখনো এসব উল্টোপাল্টা কথা বলতে দেখছি, তারপর দেখিয়েন আপনার কী হয়!”
এবার মহিলা একটু দমে শর্বরীর দিকে তাকালেন। শর্বরী সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মুখ ভেংচি কাটলো। তাতে যেন আরো মুখে ছাই পড়লো মহিলার। রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল সে। সীমান্ত ঘরে ফিরলো। হলে কেবল দাঁড়িয়ে রইল শর্বরী ও সালমা খানম। সালমা খানম এগিয়ে এলেন।
-“মা আজ নাহয় কিছু হয়নি কিন্তু কাল যে হবে না তার নিশ্চয়তা কী? তোমরা বরং একটা বাচ্চা নাও!”
-“মা আপনার ছেলে চাচ্ছে না, ও চাচ্ছে আমি আগে পরীক্ষা দিই তারপর।”
-“বাচ্চা হলে পড়া যায় না? কী অদ্ভুত যুক্তি তোমাদের। শেষে আবার তিথির মতো যেন না হয় দেখো!”
-“তিথি? ঐ ডাক্তার ম্যামটা?”
-“হুম। সীমান্তর সাথে ভালোই প্রেম ছিল কিন্তু মেয়ে মা হতে পারবে না। জানার পর সীমান্ত ওকে ছেড়ে দিল। কী আর করার, ভাগ্য সবই। তাছাড়া ঐ মেয়ে তো আর তোমার মতো অত সুন্দরী ছিল না। সুন্দর হলে হয়তো সীমান্ত এত সহজে ছাড়তো না।”
শর্বরীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো আরেকবার। এসব হচ্ছেটা কী তার সাথে? সীমান্ত আর তিথি? এসব কেন সীমান্ত তাকে বলেনি? কেন লুকিয়ে গেল সবটা?
চলবে…