#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
অক্ষরের কেবিনে এসে অক্ষর ও ডাক্তার কেয়াকে দেখে মধুজা ভ্রু কুচকে চোখে তাকায়। অক্ষর কেয়াকে সামলিয়ে তাকে ঠিকভাবে দাড় করিয়ে বলে,
‘সাবধানে চলাচল করুন ডাক্তার কেয়া।’
‘থ্যাংকস। আমি তাহলে এখন যাই।’
অক্ষরের কেবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মধুজাকে দেখে কেয়া। মধুজা অদ্ভুত ভাবে কেয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল। কেয়া মধুজাকে জিজ্ঞেস করে,
‘কি চাই আপনার?’
‘আমি নিজের বরের সাথে দেখা করতে এসেছি।’
‘আপনার হাসবেন্ড কে?’
এবার অক্ষরও দরজার দিকে তাকায়। মধুজাকে দেখে বলে,
‘হানি তুমি এসেছ আমার কেবিনে। এসো ভিতরে এসো।’
মধুজা দাত কটমট করে বলে,
‘হ্যা, এসেছি জন্যই তো এত কিছু দেখতে পারলাম। পা’গলা ডাক্তারের চরিত্রকে ফুলের মতো পবিত্র ভেবেছিলাম। এখন তো দেখছি এই ফুলে সব ধরনের মশা মাছি বসে তা দেয়।’
কেয়া বলে,
‘তাহলে কি ইনি আপনার স্ত্রী?’
অক্ষর সম্মতি জানায়।
‘জ্বি, সি ইজ মাই ওয়াইফ। মিট উইথ হার।’
কেয়া মধুজার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,
‘হ্যালো মাই নেম ইজ কেয়া।’
মধুজা হাত গুটিয়ে নিয়ে বলে,
‘আপনি তো ডাক্তার। আপনার হাতে বিভিন্ন ধরনের জামস লেগে থাকতে পারে। সো আমি হ্যান্ডশেক করতে পারব না। আমার নাম মধুজা। আমি ডাক্তার অক্ষর চৌধুরীর স্ত্রী। এছাড়াও আমার একটা পরিচয় আছে। আমি একজন জার্নালিস্ট।’
কেয়া অপমানিত বোধ করে। তাই আর কিছু না বলে চলে যায়। অক্ষর মধুজাকে বলে,
‘এটা কিরকম ব্যবহার হানি? এমনি তো আর আমি বলি না তোমার নামের সাথে তোমার ব্যবহার যায় না। তোমার নাম অনুযায়ী তোমার ব্যবহার হওয়া উচিৎ মধুর মতো মিষ্টি। বাট তোমার ব্যবহার তো দেখি নিমের মতো,,,’
মধুজা বড় বড় চোখ করে অক্ষরের দিকে তাকায়। অক্ষর মধুজার এরকম তাকানো দেখে বলে,
‘এভাবে দেখছ কেন আমাকে? তোমার চোখ দেখে আমার মনে আমাকে গি’লেই খেয়ে নিবে।’
মধুজা আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। বলেই দেয়,
‘আমার ব্যাপারে নাক না গলিয়ে আপনি নিজেকে আগে সামলান। ডক্টর কেয়ার সাথে এত চিপকে ছিলেন কেন? আপনার ক্যারেক্টার এত লুজ আমি ভাবতেও পারিনি।’
মধুজার কথা শুনে অক্ষর না হেসে থাকতে পারে না।
‘আমি কিসের যেন পো’ড়া পো’ড়া গন্ধ পাচ্ছি। আর ইউ জেলাস?’
‘আমার কি ঠেকা পড়েছে জেলাস হওয়ার। আমি চললাম। আপনার বিপদ আপনি সামলান। আমি আপনার টেনশনে নিজের কাজ ফেলে আসলাম আর আপনি,,,’
‘ওয়ান মিনিট,, ওয়ান মিনিট। বিপদ মানে? আর তুমি কিসের জন্য এসেছ এখানে?’
মধুজা মনে মনে বলে,
‘আমার পাগলা ডাক্তারকে এখন কিছু জানতে দিলে চলবে না। ব্যাপারটাকে চেপে যেতে হবে না।’
অক্ষর মধুজার দিকে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষায় ছিলনা। মধুজা ‘কিছুনা’ বলেই নিজের মতো চলে যায়। অক্ষর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সেদিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমার সাথে থাকতে থাকতে হানিও কি পাগল হয়ে গেল? কখন কি করে তার কোন ঠিক নেই।’
২৫.
মধুজা একটি চিঠি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। এই চিঠিটা আজ কেউ তাকে দিয়েছে। চিঠিতে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দেওয়া আছে। চিঠিতে লেখা,
‘আমি তোমার স্বামীকে শে’ষ করে দিবো। পারলে বাচাও তাকে।’
এই চিঠিটা দেখেই ভয়ে নিজের সব কাজ ফেলে একপ্রকার দৌড়ে অক্ষরের হাসপাতালে চলে গিয়েছিল মধুজা। তারপর গিয়ে যা দেখল তাতে তার মন মেজাজ পুরো খারাপ হয়ে যায়। ডাক্তার কেয়াকে তার একদম ভালো লাগে নি। অক্ষরের সাথে কেয়াকে দেখে মধুজার ইচ্ছা করছিল কেয়াকে ভ’র্তা করে খেতে।
মধুজা বুঝতে পারছিল না তার এত রাগ কেন হচ্ছে। যাতে এসব ভাবনা আর না আসে তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য কম্পিউটারে কিছু টাইপ করছিল মধুজা। আচমকা লাবিব দৌড়ে এসে তাকে বলে,
‘কোথায় ছিলা তুমি? চলো আমাদের এক্ষুনি যেতে হবে।’
মধুজা কম্পিউটার থেকে মুখ তুলে বলে,
‘কোথায় যাব?’
‘বসুন্ধরা এলাকায় একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগেছে। আমাদের সেখানে যেতে হবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য। ‘
মধুজা দ্রুত লাবিবকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বসুন্ধরার উদ্দ্যেশ্যে।
দাউদাউ করে জ্ব’লছে আগুন। একটি আবাসিক ভবনে লা’গা এই আগুন অনেক ভয়ংকর অবস্থার তৈরি করেছে। অনেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও অসংখ্য মানুষ ভেতরে আটকা পড়ে আছে। মূলত ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। মধুজা ঘটনাস্থলে এসে হতবাক হয়ে যায়।
ছোটবেলা থেকে এমনিতেই তার আগুন দেখলেই ভয় লাগে। তার উপর যখন নিজের চোখের সামনে এত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেখছে তখন ভয়ে তার হাত পা রীতিমতো কাপতে শুরু করে। মধুজা দেখতে পায় অনেক মানুষ ছাদে উঠে গেছে, তারা সাহায্য চাচ্ছে। হয়তো তাদের জন্য হেলিকপ্টার পাঠানো হতে পারে। তবে অনেক মানুষ আছে যারা ছাদ পর্যন্ত উঠতে পারে নি। তারা ভবনের বিভিন্ন জানাল থেকে হাত নাড়াচ্ছে। কেউ কেউ লা’ফ দিয়ে বাচার প্রচেষ্টা করছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ভীষণ ভয়াবহ!
২৬.
মধুজা ও লাবিব ইতিমধ্যে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলেছে। ভবনের দ্বিতীয় তলার এক বাসিন্দার ভাষ্যমতে,
‘দুপুরে ভাত খেয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ করে বিকট শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। তারপর তৃতীয় তলা থেকে ধোয়া উঠতে দেখতে পাই। আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ি। আগুন কিভাবে লেগেছে সে ব্যাপারে কোন আন্দাজ করতে পারছি না। তবে আমার মনে হয় এসি বিস্ফোরণ থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটতে পারে।’
ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটা ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা করে চলেছে। পুলিশ বাহিনীও উপস্থিত হয়েছে। আগুন ইতিমধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়েছে। হেলিকপ্টারের সাহায্যে ছাদে থাকা কিছু মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আবার অনেকে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। চার থেকে পাচ জনকে গুরুতর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা অগ্নিদগ্ধ ৪ টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল।
মধুজা আচমকা দেখতে পায় একটি ছোট বাচ্চা একা দাড়িয়ে কাদছে। মধুজা বাচ্চাটির কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে,
‘তুমি কাদছ কেন?’
বাচ্চা মেয়েটির বয়স আনুমানিক ৫ কি ৬ হবে। মেয়েটি কাদতে কাদতে বলে,
‘আমার মা ভিতরে আছে। আব্বু আমাকে বাইরে রেখে আবার ভিতরে গিয়েছিল আম্মুকে আনার জন্য। কিন্তু এখনো ফিরে আসেনি।’
মধুজার খুব খারাপ লাগে ছোট মেয়েটির জন্য। হয়তোবা আজ এই অগ্নিকাণ্ড এই বাচ্চা মেয়েটিকে অনাথ করে দিবে। মধুজার মনে পড়ে যায় নিজের মায়ের মৃত্যুর পর কতটা অসহায় ছিল সে। মধুজা চায় না সেরকম পরিস্থিতি আর কারো হোক। কিন্তু সে না চাইলেও অনেকের ভাগ্যেই দূর্দিন নেমে আসে। মধুজা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নেয়। পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে বাচ্চাটিকে হস্তান্তর করে।
একপর্যায়ে লাবিব এসে মধুজাকে বলে,
‘একটু পিছনের দিকে চলো। ঐদিক থেকেও ছবি তুলব।’
‘তুমি ক্যামেরা নিয়ে যাও। আমি যাচ্ছি।’
লাবিব যেতে শুরু করে। মধুজাও লাবিবের পিছনে যায়। একসময় তারা পেছনে পৌছে যায়। সেখান থেকে ছবি তুলতে থাকে। আচমকা পেছন দিকে জোরে একটা বিস্ফোরণ হয়। লাবিব ও মধুজা দূরে ছিটকে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨