#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি
অক্ষর বর্ণের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘তুই আবার ভার্সিটিতে মা’রামারি করেছিস। যার ফলে তোর হাতে চো’ট লেগেছে। তোকে না আমি বলেছিলাম আর এসব মা’রামারিতে থাকবি না। একবার জেলে গিয়ে কি তোর শখ মিটেনি নাকি? আবার যেতে চাস?’
অনীল চৌধুরী রেগে যান বর্ণর উপর। মমতা চৌধুরীও গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকান। বর্ণ সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আমার কোন দো’ষ নেই। ওরা নিজেরা অকারণে আমার উপর হা’মলা করেছিল। আমি কি চুপ করে থাকব?’
অনীল চৌধুরী রাগান্বিত কন্ঠে বলেন,
‘এক হাতে তালি বাজে না বর্ণ। আমাকে এসব বোঝাতে আসিস না। আমার চুল হাওয়ায় পাকে নি। আমি ঠিক জানি এসব রাজনীতির কারণে হয়েছে। তোকে কতবার বলেছি এসব ছাত্র রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আয়। তুই আমার কোন কথা কানে তুলিস নি। ছাত্র জীবন হলো জ্ঞান অর্জনের সময়। আর তুই এই সময়ে রাজনীতিতে ব্যস্ত।’
কথাটা আফসোসের সাথে বলে নিজের রুমে চলে যান অনীল চৌধুরী। মমতা চৌধুরী কোন কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে যান। বর্ণ খাওয়া ছেড়ে উঠে যেতে চাইলে অক্ষর ধমক দিয়ে বলে,
‘খাওয়া শেষ না করে উঠবি না।’
বর্ণ খেতে থাকে। অক্ষরের কিছু একটা মনে পড়তেই সে বর্ণকে জিজ্ঞেস করে,
‘আচ্ছা গতকাল রাতে তুই কি মধুজার সাথে মিলে আমায় ঘরে নিয়ে এসেছিলি?’
‘হুম। আমি কাল রাতে বাগানে সি’গারেট খাচ্ছিলাম। তখন ভাবি এসে ডাকল। তোমাকে অজ্ঞান দেখে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।’
‘তোকে কতবার বলেছি না সি’গারেট খাওয়া বাদ দে। তুই শুনিস না। হোয়াট এভার, এখন তুই বল যে কাল রাতে তুই কি কিছু দেখেছিলি?’
বর্ণ নিজের পকেট থেকে একটা কানের দুল বের করে বলে,
‘হ্যা এই আংটিটা কুড়িয়ে পেয়েছিলাম ওখানে।’
অক্ষর আংটিগা হাতে নিয়ে বলে,
‘এটাতো মেয়েদের আংটি। কোথায় যেন দেখেছি।’
অক্ষর আংটিটা নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। বর্ণ খাওয়া শেষ করে উঠে যায়। অক্ষর রুম গিয়ে দেখে মধুজা খাচ্ছে। সে জিজ্ঞেস করে,
‘তোমার খাওয়া হয়নি এখনো?’
‘না। একটু আগেই রাওনাফ খাবার দিয়ে গেলো।’
‘রাওনাফের পরীক্ষা চলছে এখনো?’
‘হুম।’
‘তাই এত ব্যস্ত থাকে। আজকাল তো ওর দেখাই পাওয়া যায়না। আচ্ছা তুমি খাওয়া শেষ করো আমি বেলকনিতে আছি।’
৩১.
মধুজা ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল। অক্ষর রুমে আসামাত্রই সে ফোন রেখে দেয়। অক্ষরের সন্দেহ হলেও সে এই বিষয় নিয়ে কিছু বলে না। রুমে এসে অক্ষর বিছানায় শুয়ে পড়ে। কাউকে একটা ফোন করে বলে,
‘তোমাকে যার খোজ নিতে বলেছিলাম নিয়েছ? মনিরা তাবাসসুম নামের সাংবাদিকের সব ডিটেইলস আমার চাই। এট এনি কোস্ট।’
বিপরীত দিক থেকে উত্তর আসে,
‘জ্বি, আমি চেষ্টা করছি স্যার। খুব শীঘ্রই আপনাকে তার ছবি, ঠিকানা জোগাড় করে দেব।’
‘গুড।’
ফোন রেখে দিয়ে মধুজার দিকে তাকায় অক্ষর। মধুজার মধ্যে কোন হেলদোল নেই। আপনমনে টেবিলে বসে কম্পিউটারে কি যেন করছে। অক্ষর মধুজার কাছে যায়। মধুজা কম্পিউটারে এত মগ্ন ছিল যে সে ব্যাপারটা খেয়াল করে না। অক্ষর মধুজার নরম মোলায়েম গালে চুমু খায়। মধুজা ভ্যাবাচেকা খেয়ে উঠে দাড়ায়। মধুজার মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়। অক্ষরকে কিছু কথা শোনাতে গিয়েও আর শোনায় না। কম্পিউটারের সংযোগ বিছিন্ন করে ছাদে চলে যায়।
মধুজার মুড হঠাৎ হঠাৎ এরকম পরিবর্তন হতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে অক্ষর। বলে,
‘কি যে হয়েছে হানির! কখনো কাছে আসে, কখনো দূরে যায়। মেয়েদের মন বোঝা এত কঠিন কেন?’
মধুজা ছাদে এসে বলছিল,
‘আপনার সব অপরাধ আমি সামনে আনব মিস্টার অক্ষর চৌধুরী। আপনি অর্গান ট্রাফিকিং এর মতো একটা জঘন্য কাজের সাথে জড়িত। রোগীদের মিথ্যা অসুখের কথা বলে অপারেশনের নামে তাদের হার্ট, কিডনি, লিভার সব বের করে নিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। না জানি আপনার জন্য কত মায়ের বুক খালি হয়েছে, কত অসহায় মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করে ঠকে গেছে, কেউ অকালে মৃত্যুবরণ করেছে, তো কেউ আবার বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে। আর আপনি কিনা এত সুখে থাকবেন। সেটা আর হবে না। আপনার সুখে থাকার দিন শেষ।’
‘কার সুখে থাকার দিন শেষ হওয়ার কথা বলছ তুমি?’
আচমকা কারো কন্ঠস্বর শুনে পিছনে ফিরে তাকায় মধুজা। মমতা চৌধুরীকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলাতে নিয়ে বলে,
‘তেমন কিছু না। একটা নাটকের সংলাপ পড়ছিলাম।’
‘ওহ তুমি নাটকও দেখ?’
‘জ্বি, আমি মঞ্চনাটকের অনেক বড় ফ্যান। আগে তো প্রতি সপ্তাহেই নাটক দেখতে জেতাম। এখন ব্যস্ততার জন্য যাওয়া হয়না।’
‘আচ্ছা। তো যেটা বলতে এসেছিলাম, তুমি তৈরি হয়ে নাও। তোমার শ্বশুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তোমাকে আর অক্ষরকে কিছুদিনের জন্য বাইরে ঘুরতে পাঠাবে। এখানে যা হচ্ছে, অক্ষরের বিরুদ্ধে এখনই তদন্ত শুরু হয়েছে। আপাতত তাকে কিছুদিনের জন্য হসপিটাল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অক্ষরের মন মেজাজ একদম ভালো নেই। এই সময় তোমরা যদি ঘুরে এসো তাহলে মন মেজাজ ভালো হবে। তাই এখন তোমরা সিলেট থেকে ঘুরে এসো দুই তিনদিনের জন্য।’
মধুজা মাথা নাড়ায়। মমতা চৌধুরী ছাদ থেকে নিচে চলে যান।
৩২.
মধুজা ও অক্ষর সিলেট যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। যদিও পুলিশ থেকে নির্দেশ আসে অক্ষর যাতে এখন শহর ছেড়ে কোথাও না যায় কিন্তু অনীল চৌধুরী তার এক বন্ধু যিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার সাথে কথা বলে ব্যাপারটা ম্যানেজ করে নিয়েছে৷ যার ফলে অক্ষর এখন দেশ ত্যাগ করতে পারবে না, তবে শহর ত্যাগ করতে পারবে।
মধুজা পুরো ব্যাপারটা খেয়াল করেছে। মধুজা তার লক্ষ্যে এখনো স্থির। তাই সে ভেবে নিয়েছে অক্ষর বা সে কেউ সিলেটে যাবে না। কিন্তু সরাসরি না করে দিতে পারছিল না। বললেও হয়তো কেউ শুনবে না৷ তাই মনে মনে একটা ফন্দি করে নেয় মধুজা।
অক্ষর ব্যাগপত্র গুছিয়ে মধুজাকে বলে,
‘চলো এখন আমরা বেরিয়ে যাই।’
‘হ্যা চলুন।’
অক্ষর ব্যাগপত্র নিয়ে সিড়ি বেয়ে নামছিল। মধুজা পিছনে পিছনে আসছিল। সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে একটু এগিয়ে যেতেই পেছনে কোন কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে পিছনে ফিরে তাকায় অক্ষর। তাকিয়ে দেখতে পায় মধুজা সিড়ির থেকে পড়ে গেছে। অক্ষর দৌড়ে এসে মধুজাকে পাজাকোলা করে তুলে নেয়।
মধুজার পায়ে অনেক বেশি আঘাত লেগেছে। তাই সে পায়ে হাত দিয়ে কান্না করতে থাকে। অক্ষর মধুজাকে বলে,
‘কিছু হবে না তোমার। আমি আছি তো।’
ততক্ষণে বর্ণ,মমতা চৌধুরী, অনীল চৌধুরী সবাই সেখানে এসে উপস্থিত হয়৷ মমতা চৌধুরী জানতে চান,
‘কি হয়েছে?’
অক্ষর উত্তর দেয়,
‘মধুজা সিড়ি থেকে পড়ে গেছে। মনে হয় পায়ে অনেক আঘাত পেয়েছে। আমি ওকে ঘরে নিয়ে যাচ্ছি, এই অবস্থায় আর সিলেট যাওয়া সম্ভব না।’
‘হ্যা, তাই কর। ওকে সাবধানে নিয়ে যা। তুই তো ডাক্তার তাই ওর খেয়াল রাখতে পারবি।’
অক্ষর মধুজাকে নিয়ে রুমে আসে। তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘তোমার কি খুব বেশি ব্যাথা করছে?’
‘অনেক বেশি।’
‘আচ্ছা তুমি পড়ে গেলে কিভাবে হানি? এত বড় মেয়ে সাবধানে চলতে পারো না? তোমার মধ্যে দেখছি একটুও সাবধানতা নেই। এত অসাবধানে চললে ভালো সাংবাদিক কিভাবে হবে?’
‘আমি অবশ্যই একজন ভালো সাংবাদিক হবো।’
‘সাংবাদিক কেমন হবে জানি না। তবে হ্যা, অনেক ভালো অভিনেত্রী হতে পারো।’
‘মা,,,মানে? কি বলছেন আপনি এসব?’
অক্ষর আচমকা মধুজার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
‘মানে কত সুন্দর করে সিড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করলে মনিরা তাবাসসুম মধুজা। মাই ডিয়ার হানি।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨,