পারলে ঠেকাও পর্ব-২৮

0
297

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ২৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মধুজা ও অক্ষর দুজনে মিলে মিলন হাসানকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে। এখন অনেকটাই সুস্থ তিনি তাই হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়েছেন।

মধুজা দুপুরে খাবার ও ওষুধ নিয়ে তার বাবার কাছে যায়। গিয়ে বলতে থাকে,
‘আব্বু এখন তুমি বুঝতে পারছ তো জীবনে কেন একজন মানুষের প্রয়োজন। আমার তো বিয়ে হয়েছে। আমি সবসময় তোমার খেয়াল রাখতে পারব না।’

মধুজার কথা মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে মিলন হাসান বলেন,
‘কোন ব্যাপার না। আমি একটা লোক রেখে দিবো। সে আমার সবকিছু দেখবে।’

মধুজা এবার অনেক বেশি বিরক্ত হয়ে যায়। মিলন হাসানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আব্বু তুমি কেন বুঝতে পারছ না আমি কি বলতে চাইছি।’

‘আমি খুব ভালো করেই জানি তুই কি বলতে চাস। আমার বিয়ের ব্যাপারে তো? এই ব্যাপারে আমি আগে যা বলেছিলাম এখনো ঠিক তাই বলব। আমার মনে আগেও তোর আম্মু ছিল, এখনো সে আছে। আমি অন্য কাউকে তোর আম্মুর যায়গা দিতে পারব না।’

‘আম্মুর যায়গা আমি কাউকে দিতে বলছি না। আমি জানি আম্মু তোমার মনের ঠিক কতোটা জায়গাজুড়ে আছে। আমি তো শুধু তোমার জীবনটা গুছিয়ে দিতে চাইছি আব্বু।’

‘মধুজা এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তুই ভুলে যাসনা আমি তোর বাবা। আমি তোকে জন্ম দিয়েছি তুই আমাকে জন্ম দিস নি। তাই আমি তোর কথা শুনতে বাধ্য হই।’

‘ঠিক আছে। তুমি তোমার জেদ নিয়েই থাকো। আমি আর আসব না।’

বলেই মধুজা দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অক্ষর বাইরেই দাড়িয়ে ছিল। মধুজাকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে অক্ষর তাকে থামিয়ে দেয়।
‘ছেলে মানুষি কেন করছ হানি? দেখ তোমার বাবার শরীর ভালো নেই। এই সময় তাকে কোন কিছু নিয়ে জোরাজুরি করলে তার ফল হিতে বিপরীত হতে পারে। তোমার উচিৎ ওনাকে ভালো করে বোঝানো। তা না করে তুমি উলটে জেদ দেখাচ্ছ।’

‘কি করব আমি পাগলা ডাক্তার? আব্বু আমার কোন কথা শুনতে চায়না।’

‘আচ্ছা দাড়াও আমি এই ব্যাপারে ভেবে দেখব। আমি প্রয়োজনে রাহেলা ম্যামের সাথেও এই ব্যাপারে কথা বলব। তোমার বাবাকেও আমি বোঝাবো। তুমি হাইপার হয়ো না। আমার খুব জরুরি একটা অপারেশন আছে আমাকে এক্ষুনি হসপিটালে যেতে হবে। তুমি যাও তোমারও জরুরি কাজ থাকতে পারে।’

‘ও হ্যা, আজ তো একজন হেভিওয়েট নেতার ইন্টারভিউ নেওয়ার ছিল। আমি যাচ্ছি কেমন। বাই।’

৫৫.
আরহা নিজের ঘরে বসে ছিল। আজ তাকে দেখতে আসবে। এই নিয়ে আরহার মন একটুও ভালো নেই। সে তো বর্ণকে পছন্দ করে। অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা ভাবতেও পারে না। কিন্তু সে এখন করবে তো করবে কি? আরহার বাবা আমিনুল হক তার কোন কথা শুনতে চায়না। আরহার মায়ের সাথে অনেক আগেই আরহার বাবার ডিভোর্স হয়ে গেছে। আরহার মা নতুন করে ঘর বেধেছে অন্য কারো সাথে।

তখন থেকে আমিনুল হক একা হাতে আরহাকে মানুষ করেছে। নিজের মেয়েকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। তার কিছু হয়ে গেলে আরহাকে কে দেখবে এই চিন্তায় আরহার জন্য পাত্র দেখা শুরু করে দিয়েছেন।

আমিনুল হক আজ তার বোন আমিনা খাতুনকে ডেকেছেন। আমিনা খাতুন সকাল থেকে বিভিন্ন রান্নাবান্না করছেন। আরহাকে সাজিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও আমিনুল হক আমিনা খাতুনকে দিয়েছেন।

আমিনা খাতুনই আরহার জন্য ছেলে দেখেছে। ছেলেটা আমিনার ছেলের বউয়েরই আপন ভাই। ছেলে সরকারি চাকরি করে, তাই আমিনুল হক বিয়ের জন্য এক বারেই রাজি হয়ে গেছেন।

আমিনা খাতুন আরহার ঘরে এসে বলে,
‘এভাবে মুখ কালো করে বসে আছিস কেন? আয় তোকে সাজিয়ে দেই। শাড়ি পড়তে পারিস তো নাকি? যদি নাও পারিস তবুও পড়তে হবে। এখন থেকে শাড়ি পড়া শিখে নে।’

‘আমি শাড়ি পড়তে পারি ফুফু।’

‘তাহলে তো ভালোই। শোন আমি তোর নিজের ফুফু। তোর ভালোই চাই। যেই ছেলে দেখেছি না একদম হিরের টুকরো ছেলে। বিয়েটা হয়ে যাক দেখবি আমার প্রশংসা করে বলবি যে ফুফু আমার জন্য একদম ঠিক ছেলে দেখেছে।’

আরহা তার ফুফুর সামনে হাসলেও মনে মনে হাজারটা গালি দিল। আমিনা খাতুন আরহাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে দেন।

আরহাকে বসিয়ে রেখে চলে যান। আরহা শুধু ভাবছে বিয়েটা কিভাবে বাতিল করবে। আচমকা তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। আরহা সাথে সাথে ফোন করে বর্ণকে। বর্ণ ফোনটা রিসিভ করামাত্রই আরহা বলে ওঠে,
‘আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসুন আমার বাড়িতে। আপনার তো অনেক সেবাযত্ন করলাম এই ক’দিন এবার আমার একটু উপকার করে দিয়ে যান। আমি বাড়ির ঠিকানা ম্যাসেজ করে পাঠাচ্ছি।’

বর্ণ বলে ওঠে,
‘আপনি আমার ফোন নম্বর পেলেন কোথা থেকে?’

‘আপনি যখন অসুস্থ ছিলেন তখন একদিন আপনার ফোন থেকে নিজের নাম্বার ডায়েল করে কল করেছিলাম। তারপর কল আসামাত্রই আমি আপনার নাম্বার সেভ করে রাখি।’

‘কি সাংঘাতিক!’
‘হুম। এখন আর বেশি কথা না বলে চলে আসুন।’

‘যদি না যাই?’

‘আপনি আসবেন। আমার বিশ্বাস আপনি আসবেন।’

কথাটা বলেই আরহা ফোন কে’টে দেয়। তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরছে।

৫৬.
ছেলেপক্ষের সামনে বসে আছে আরহা। ছেলের পরিবার এক এক করে বিভিন্ন প্রশ্ন করে যাচ্ছে আর আরহা মেকি হেসে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। আরহা খেয়াল করেছে যেই ছেলেটা তাকে দেখতে এসেছে তখন থেকে হা করে তাকিয়ে আছে আরহার দিকে। আরহার ভীষণ অস্বস্তি হতে লাগে। সে বারবার নিজের ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছিল। কারণ সে বর্ণকে ম্যাসেজ করেছিল তার বাড়ির বাইরে এসে যেন ম্যাসেজ করে।

আচমকা আরহার ফোনে ম্যাসেজের রিংটোন আসে। আরহার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এরমধ্যে আমিনা খাতুন বলেন,
‘আমাদের সব কথাবার্তা তো হয়ে গেছে। এখন ছেলে-মেয়ে নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলুক।’

আরহা এতক্ষণ ধরে এই সুযোগটারই অপেক্ষায় ছিল। আমিনা খাতুনের কথার সূত্র ধরেই আরহা বলে,
‘চলুন আমরা ছাদে গিয়ে কথা বলি।’

পরিবারের সবার সম্মতি নিয়ে ছেলেটাকে নিয়ে ছাদে চলে যায় আরহা। ছাদে গিয়ে ছেলেটা বিভিন্ন ধরনের আলাপ করছিল। আরহা ছাদ থেকে বর্ণকে দেখতে পায়। সিএনজি নিয়ে এসেছে বর্ণ। আরহা ছেলেটাকে বলে,
‘আসলে আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল, একটু এদিকে আসুন।’

ছেলেটি খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
‘হ্যা বলুন।’

আরহা ছেলেটিকে বর্ণর দিকে ইশারা করে বলে,
‘ঐ যে ছেলেটাকে দেখতে পারছেন ও আমার বিএফ। আমাদের অনেক দিনের সম্পর্ক। আমার বাবা কিছুতেই আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছে না। তাই আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ওর যায়গা অন্য কাউকে দিতে পারবো না। তাই আপনাকে অনুরোধ করছি প্লিজ আপনার ফ্যামিলিকে নিয়ে ফিরে যান।’

আরহার কথা শুনে ছেলেটার মুখ চুপসে যায়। আরহাকে বেশ পছন্দ হয়েছিল ছেলেটার। তাই এরকম ভাবে প্রত্যাখান মেনে নিতে পারল না।

‘আপনি যে সত্য বলছেন তার প্রমাণ কি? বিয়ে ভাঙ্গার জন্য মিথ্যাও তো বলতে পারেন।’

‘ও আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না। দাড়ান দেখাচ্ছি।’

বলেই আরহা বর্ণর নাম ধরে ডাকে। বর্ণ আরহার দিকে তাকাতেই আরহা বলে ওঠে,
‘বেবি তুমি আমাকে এখান থেকে বিয়ে যাও। বাবা যে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। চলো আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি।’

আরহার কথা শুনে বর্ণর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। বর্ণর মতো একই অবস্থা ছেলেটার। ছেলেটি আর এক মুহুর্ত নষ্ট না করে নিচে নেমে যায়। আরহা বুঝতে পারে কাজ হয়েছে। চিৎকার করে বর্ণকে থ্যাংকিউ বলে।

ছেলেটি নিচে এসে তার পরিবারের সবাইকে বলে,
‘চলো এখান থেকে। আমি এই মেয়েকে বিয়ে করবো না।’

আমিনুল হক বলেন,
‘কেন বাবা? কি সমস্যা?’

‘আপনার মেয়ে অন্য কারো সাথে প্রেম করছে আর আপনি তাকে আমার গলায় ঝুলাতে চাইছেন।’

‘আমার মেয়ে প্রেম করছে!’

‘এত অবাক হচ্ছেন কেন? আপনি বরং আপনার মেয়ের পছন্দের ছেলের সাথেই বিয়ে দিন আমরা আসছি।’

এই বলে ছেলেটি তার পুরো পরিবারকে নিয়ে চলে যায়। আমিনা খাতুনও তাদের বোঝানোর জন্য পিছুপিছু যায়। আরহা সিড়ি থেকে নেমে হাসতে থাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨