প্রণয় পর্ব-৩৯+৪০

0
349

#প্রণয়
#পর্বঃ৩৯
#তানিশা সুলতানা

সূচককের দানবের মতো শরীরের ভর তানহার মতো চুনোপুঁটি সয্য করে গেছে। তার ফল। এখন অসুস্থ হয়ে গেছে তানহার। শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসে গেছে।
সূচক নিজের কপালে নিজেই দুই চারটা চর মারে। আরও একটু সময় নেওয়া প্রয়োজন ছিলো সূচকের। এখন করবে কি?
ঘুম নেই সূচকের চোখে। সারা রাত জলে পট্টি দিয়ে গেছেন তানহার মাথায়। তবুও শরীরের তাপমাত্রা কমাতে পারে নি।

ফজরের আজান দিয়ে দিয়েছে। তানহা বেঘোরে ঘুমচ্ছে। বা জ্বরের ঘোরে হুশ হারিয়ে ফেলেছে। মোটা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে সূচক। তবুও মেয়েটার ঠান্ডা কমছে না। একটু পর পরই কেঁপে কেঁপে উঠছে। সূচকের নামাজ পড়তে হবে। তানহাকেও গোসল করানো প্রয়োজন। এই জ্বরের মধ্যেও গোসল করানো কি ঠিক হবে?
তাছাড়াও তো উপায় নেই।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শার্ট পড়ে নেয় সূচক। তানহা মাথা ঢেকে ঘুমচ্ছে। সূচক মাথার ওপর থেকে কম্বল সরিয়ে তানহার কপালে হাত রাখে। নাহহ একটুও কমে নি শরীরের তাপ।

“ওই ফকিন্নি ওঠ। গোসল করতে হবে।

তানহার মুখে ছোট ছোট করে থাপ্পড় দিয়ে বলে সূচক।

“ঘুমতে দিন না প্লিজ।

তানহা নরে চরে ঘুমের ঘোরেই বলে। সূচক মুচকি হাসে। একে সারা রাত ডাকলেও উঠবে না জানা আছে সূচকের।
গায়ের ওপর থেকে কম্বল সরিয়ে পাজা করে কোলে তুলে নেয় সূচক। তানহা চোখ মুখ কুঁচকে পিটপিট করে তাকায় সূচকের দিকে। এই মুহুর্তে ভীষণ বিরক্ত এই লোকটার প্রতি। এতো জ্বালাচ্ছে কেনো? সমস্যা কি এনার?

ওয়াশরুমে নিয়ে নামিয়ে দেয় সূচক। তানহা দেয়াল ধরে দাঁড়ায়। মাথা ঝিমঝিম করছে। সারা শরীর ব্যাথা হয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটাও পাচ্ছে না।জ্বরের মধ্যে কেউ গোছল করে।

সূচক বালতি ভরে দিয়ে জামাকাপড় আনতে যায়। তানহা চোখ বন্ধ করেই দাঁড়িয়ে আছে।

“দুই মিনিটে গোসল শেষ করবি।

বলেই সূচক চলে যায়। তানহা কোনো রকমে দুই মগ পানি গায়ে ঢেলে জামাকাপড় পড়ে নেয়।
নভেম্বর মাস। ঠান্ডা পড়ে গেছে। এই ঠান্ডায় গোসল করা যায়? তাও আবার জ্বরের মধ্যে? এই লোকটা মা*রা*র প্লান করছে নিশ্চিয়।

সূচক দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। তানহা দরজায় হাত দেওয়ার সাথে সাথে কোলে তুলে নেয় সূচক। তানহা প্রথমে চমকে ওঠে। পরে মুখ বাঁ কায়।
খাটে তানহাকে বসিয়ে দিয়ে সূচক ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। তানহা আবারও কোম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। জ্বরটা মনে হচ্ছে বেরেই চলেছে।

সূচক গোসল সেরে নামাজ পড়ে নেয়। তারপর মাথা থেকে টুপি খুলে তানহার পাশে গিয়ে বসে৷ গায়ে হাত দিয়ে চমকে ওঠে। তাপমাত্রা আরও বেরে গেছে।
দ্রুত রুম থেকে বের হয় সূচক৷ কেউ এখনো ওঠে নি। এই বাড়ির কেউ নামাজ পড়ে না? না কি? সূচক বিরক্ত হয়।
কিচেনে চলে যায়। ফ্রিজ খুলে দেখে বিরিয়ানি রাখা আছে। কিছুটা বিরিয়ানি গরম করে প্লেটে নিয়ে রুমে চলে যায়। তানহাকে না ঢেকে আস্তে করে আধশোয়া করে দেয়। তারপর একটু খানি বিরিয়ানি মুখে পুরে দেয়।
ঘুমের ঘোরেই চিবতে থাকে তানহা। কিছুটা খায়িয়ে ঔষধ খায়িয়ে আবার শুয়িয়ে দেয় সূচক।

নিজেও তানহাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। পর পর কপালে কতোগুলো চুমু খায়। আস্ত একটা ভালোবাসার বস্তা এই মেয়েটা।

🥀🥀
সবার আগে ঘুম থেকে উঠে পড়ে ইমন। বাবাকে কল করে বলে দিয়েছে আটটার মধ্যে এই বাড়িতে চলে আসতে। একদম দেরি সয্য হচ্ছে না ওর।

এমনিতেই বিয়ের চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না। এ কোন জ্বালা? আচ্ছা তোহা ঘুমচ্ছে কি করে? ওর তো ঘুম হারাম হওয়ার কথা?
ওই মেয়েটা আস্ত একটা ঘুমের বস্তা। বিয়ে করবে দুজন অথচ একজনের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বিয়েটা হোক তারপর এর শোধ তুলবে ইমন।

বিছানায় গোল হয়ে বসে ভাবে ইমন। পাশে তাকিয়ে দেখে তাহের নাক ঢেকে ঘুমচ্ছে। সারা রাতই নাক ডেকেছে। মানে এই লোকটার সাথে তানহার মা ঘুমায় কি করে ভেবে পায় না ইমন?
অবশ্য এতোগুলো দিন এক সাথে আছে অব্ভাস হয়ে গেছে।
ইমন নাক ডাকলে নিশ্চয় তোহা জুতো পেটা করে রুম থেকে বের করে দেবে? আচ্ছা তোহা নাক ডাকলে ইমন কি করবে? সেটা না হয় পরেই ভাবা যাবে।

মুচকি হাসে ইমন। আগে কতোই না অন্যায় করেছে ইমন। তোহার সাথে রিলেশনশিপ এ থাকার পরেও অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করেছে। ভেবেছিলো তোহা তো আছেই। কিন্তু যখন দেখলো ইমন ছাড়াও তোহা ভালো থাকতে পারে তখনই ইমন নিজের ভুল বুঝতে পারলো।

হাই তুলতে তুলতে রুম থেকে বের হয় ইমন। মাকে দেখে সকাল বেলা পুরো বাড়ি ঝাড়ু দিয়ে। এটা না কি করতে হবে।

টিভির পেছনে ঝাঁড়ু দেখতে পায় ইমন। এক গাল হেসে ঝাঁড়ু হাতে নেয়। প্রথমে কিচেন ঝাড়ু দেয়। তারপর সবার রুমের সামনে ঝাঁড়ু দেয়। এখন বসার ঘরে ঝাঁড়ু দেবে। কেউ তো দরজা খোলে নি তাহলে সবার রুমও ঝাড়ু দিয়ে দিতো।

“এ কি কি করছো বাবা তুমি?

সাদিয়া বেগম দ্রুত ইমনের হাত থেকে ঝাঁড়ু নিয়ে বলে। উনি ফ্রেশ হয়ে কিচেনে যাচ্ছিলো রান্না বসাতে তখনই দেখতে পায় ইমন ঝাঁড়ু দিচ্ছে।

” শাশুড়ী মা আপনাদের ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছি।

এক গাল হেসে বলে ইমন। তোহাও উঠে পড়েছে। সকালে ঝাঁড়ু দেওয়ার দায়িত্বটা তানহার। ও যেহেতু বাড়িতে নেই তখন তো তোহাকেই করছে হবে। তাই উঠে চলে এসেছে।

ইমন আর মাকে কথা বলতে দেখে তোহা দাঁতে দাঁত চেপে এগিয়ে আসে।

“এই বাঁদরটা যাই নি এখনো?

তোহা মায়ের হাত থেকে ঝাঁড়ু নিয়ে বলে।

” স্বামীকে বাঁদর বলতে নেই। ও গো হ্যাঁ গো বলতে হয়।

ইমন গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলে।

“মা ওকে বের হতে বলবে তুমি?

দাঁত কটমট করে বলে তোহা।

” এই দাঁতের ওপর জোর খাটাচ্ছো কেনো? এই বয়সে দাঁত ভেঙে গেলে আমার ফিউচার বেবিরা তোমাকে মা না বলে নানি বলে ডাকবে। তখন কি ভালো লাগবে বলো?

তোহা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সাদিয়া বেগম হতাম। এখনকার ছেলেরা এতো নিলজ্জ কেনো? নিজের ছেলের একটা নিলজ্জ। বাবা কাকা মানে না। এখন আবার মেয়ের জামাই ও একই ধাঁচের। কোথায় যাবে উনি?

আঁচলে মুখ ঢেকে চলে যায় কিচেনে। তোহা ঝাঁড়ু দিয়ে পায়ে দুটো বাড়ি দেয়ে ঝাঁড়ু দেওয়া শুরু করে দেয়।

“এই তুমি ব্রাশ করো নি কেনো?

ইমন বলে ওঠে। তোহা চোখ পাকিয়ে তাকায়।

“আমার বাবা এসব পছন্দ করে না। আমি তো আগে ব্রাশ না করেই ব্রেকফাস্ট করতাম। তখন বাবা কি যে মাইর দিতো। বলার বাহিরে। তুমিও কি তাই করো? এখন করছো করো।বিয়ের পর কিন্তু করা যাবে না।
বাবা বকা দেবে।

ইনোসেন্ট ফেস করে বলে ইমন।

” আর একটা কথা বললেও তোকে আমি ঝাড়ু পেটা করে বাড়ি ছাড়া করবো। শা*লা হনুমান

ঝাঁড়ু নিয়ে তাড়া করে তোহা। ইমন এক দৌড়ে চলে যায় কিচেনে।
তোহা নিজের চুল নিজে খামচে ধরে। এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লো?

🥀🥀

নয়টায় ঘুম ভেঙে যায় তানহার। নরে চরে বুঝতে পারে সূচকের শক্ত বাঁধনে বন্ধি ও। মুচকি হাসে তানহা। শরীরটা আগের চেয়ে অনেকটা ভালো লাগছে। পিটপিট করে চোখ খুলে সূচকের দিকে তাকায়। বেচারা বিভোর হয়ে ঘুমচ্ছে। হয়ত সারা রাত ঘুমায় নি তাই। আজকে কি লোকটা কোচিং এ যাবে না?

রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় কুঁকড়ে যায় তানহা। গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে যায়।

“এই যে ফকিন্নির জামাই ওঠেন। সকাল হয়ে গেছে।

তানহা মুচকি হেসে সূচকের চুলে হাত বুলিয়ে বলে। সূচক চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসে। আরও একটু শক্ত করল জড়িয়ে ধরে তানহাকে। মুখ গুঁজে তানহার গলায়। তানহা চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে হাসে।

” কথা শিখে গেছিস?

গলায় নাক ঘসে বলে সূচক। তানহা বুঝতে পারে লোকটা ভারি অসব্ভ্য হয়ে গেছে।
তানহা চিমটি কাটে সূচকের হাতে। আলগা হয়ে যায় হাত। এই ফাঁকে লাভ দিয়ে উঠে পড়ে তানহা। একদম বিছানার নিচে গিয়ে দাঁড়ায়।
সূচক পুরো পুরি চোখ খুলে চোখ ছোটছোট করে তাকায় তানহার দিকে।

“কি হলো এটা?

ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে সূচক।

” রোমান্টিক হতে বলেছিলাম আপনাকে। আর আপনি অসব্ভ্য হয়ে গেলেন। ইটস নট ফেয়ার ফকিন্নির জামাই।

হাতের কাছে থাকা কোলবালিশ সূচকের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে তানহা। সূচক কোলবালিশ ক্যাচ ধরে শব্দ করে হেসে ওঠে।

“ফকিন্নি একদম যাবি না। ঘুমবো আমি।

সূচক হাসতে হাসতেই বলে।

” ঢং দেখে বাঁচি না। জলদি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমাকে স্কুল যেতে হবে।

মুখ বাঁকিয়ে চলে যায় তানহা। সূচক আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।

চলবে

#প্রণয়
#পর্বঃ৪০
#তানিশা সুলতানা

“শাশুড়ি মা আমি আটা মেখে দেই?

পেছন থেকে বলে ইমন। চমকে ওঠে সাদিয়া বেগম। আসলে উনি ইমনের কথা ভাবছিলো আর আটা ঢালছিলো

” একি ভয় পেলেন কেনো? এখুনি ছুঁয়ে দিন আমায়। নাহলে পি*ত্তি গ*লে যাওয়ার সম্ভবনা থাকবে।

চোখ বড়বড় করে হাত এগিয়ে দিয়ে বলে ইমন। সাদিয়া বেগম কাচুমাচু হয়ে হাত ছুঁয়ে দেয়। এক গাল হাসে ইমন।

“তাহলে আমি আটা মাখি আর আপনি আলু কেটে ফেলেন।

সাদিয়া বেগমের হাত থেকে আটার প্যাকেট নিয়ে বলে ইমন।

” ততোমাকে কিছুই করতে হবে না। তুমি যাও দাঁত ব্রাশ করে বসে থাকো।

আবার ইমনের হাত থেকে ময়দার প্যাকেট সাদিয়া বেগম নিয়ে বলে।
ইমন মুখ গোমড়া করে ফেলে।

“আপনি ইমপ্রেস হতে চাইছেন না। তাই না? তার জন্যই আমাকে করতে দিচ্ছেন না।

মোড়া টেনে বসে দুই গালে হাত দিয়ে মুখ গোমড়া করে বলে ইমন। সাদিয়া বেগম পড়ে যায় বেজায় বিপদে। এখন এই পাগলকে বলবে কি?

” আরে সেরকমটা না। বাড়ির জামাই দিয়ে কেউ কাজ করায় না কি? তাই তো করতে দিচ্ছি না।

ইমনের মাথায় হাত বুলিয়ে এক গাল হেসে বলে সাদিয়া বেগম। ইমনের খুশি আর দেখে কে? এক লাফে উঠে দাঁড়ায়। সাদিয়া বেগমের দুই হাত ধরে দুই চারবার ঘুরে। সাদিয়া বেগমের মাথা ঘুরছে। ইমন হাত ছাড়তেই মাথা ধরে ইমনের মোড়ায় বসে পড়ে।

“আমি আপনার মেয়েকে পাঠাচ্ছি।

বলেই ইমন এক দৌড়ে চলে যায়। তোহা উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখছিলো ইমন কি করছে?
ইমন আচমকা বের হতেই তোহা সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এদিক ওদিকে তাকিয়ে হাতের ঝাঁড়ু একপাশে রাখে তারাহুরো করে।

” জলদি যাও
শাশুড়ীর সাথে রান্না করো গিয়ে।

ইমন চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলে।

“আপনার কথায়?

চোখ বড়বড় করে বলে তোহা।

” ইয়েস মেরি জান
আমার কথায়।

“জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেন।

মুখ বাঁকিয়ে বলে তোহা।

” তুমি এখন না গেলে আমি তোমাকে কিস করবো। ভালো লাগবে সেটা তোমার?

ইমন বাঁকা হেসে বলে। তোহা দাঁতে দাঁত চেপে কটমট চোখে তাকায় তোহা।

‘এভাবে রাগতে নেই জান। খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।

তোহার নাক টেনে দিয়ে বলে ইমন।
তোহা এক লাফে খানিকটা দুরে সরে যায়। ইমন মুচকি হাসে।

“ইডিয়েট

তোহা কিচেনে যেতে নেয়।

” দাঁত ব্রাশ করে তারপর যাও।

ইমন পেছন থেকে বলে। তোহা ইমনের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে রুমে চলে যায়।

🥀🥀
তানহা নানুর সাথে বসে গল্প করছে। বিয়েটা কিভাবে করে এই গল্প। সৈকত নানুর কোলে মাথা রেখে শুনছে। তমা বেগম আর সৈকতের মা রান্না করছে। আজকেই সবাই চলে যাবে।
তুহিন স্কুলে গেছে সাথে করে তাজকে নিয়ে গেছে। তাজ স্কুল শেষ করে বাসায় যাবে।

“তানহা রুমে আয়।

সূচক রুম থেকে গলা ছেড়ে ডাকে তানহাকে। তানহা আমকে ওঠে। লজ্জাও পায়। এভাবে কেউ ডাকে?

‘যাহহহ তোর বর তোকে ডাকছে।

সৈকত তাচ্ছিল্য হেসে বলে। সাথে সাথে আবারও সূচকের ডাক।

” তানহা ছেলেটা ডাকছে যাচ্ছিস না কেনো?

রান্না ঘরে থেকে তমা বেগম চেঁচিয়ে বলে। নানু মিটমিট করে হাসছে।
আবারও সূচকের ডাক ভেসে আসে। মানে এক মিনিটে কেউ তিনবার ডাকে? তানহা ফোঁস করে শ্বাস টেনে উঠে দাঁড়ায়।
“এই লোকটা আমাকে পাগল করে দেবে।

বিরবির করতে করতে রুমে চলে যায় তানহা।

সূচক ফ্রেশ হয়ে একদম তৈরি হয়ে গেছে যাওয়ার জন্য। এখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে।

” ডাকছেন কেনো?

বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে বলে তানহা।

“রেডি হয়ে নে। আমার সাথেই বাসায় যাবি তুই।

আয়নার মধ্য দিয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে বলে সূচক।

” মায়ের সাথে যেতাম।
মুখ কালো করে বলে তানহা।

“আমার সাথেই যাবি। জলদি
কড়া গলায় বলে সূচক। তানহা জামাকাপড় নিয়ে রুম থেকে বের হতে নেয়।

” কোথায় যাচ্ছিস?

সূচক জুতোর ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলে।

“চেঞ্জ করতে।

” এখানেই কর।

তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায়। ফিতা বাঁধা শেষ করে সূচক পূর্ন দৃষ্টিতে তাকায় তানহার দিকে।

“এভাবে তাকানোর কি হলো? এখানেই চেঞ্জ করতে হবে।

তানহা এবার রেগে যাচ্ছে। এই লোকটার বুদ্ধি একটুও নেই। সারাক্ষণ শুধু অর্ডার আর অর্ডার। ইহহহ যেনো বিয়ে করে মাথা কিনে নিয়েছে।

” কি হলো?

সূচক ধমক দিয়ে বলে। তানহা গাল ফুলায়।

“এই যে জামাই। ধমক দিলে গোপনে ডিভোর্স দিয়ে দেবো বলে দিলাম।

নাক ফুলিয়ে বলে তানহা। সূচক মুচকি হাসে।

“আর?

তানহার দিকে এক পা এক পা এগিয়ে আসতে আসতে বলে।

” আআআর কি? ডিভোর্স দিবো। তারপর অন্য কাউকে বিয়ে করবো। যে ধমক দিবো না।

আমতা আমতা করে বলতে বলতে পিছিয়ে যেতে থাকে তানহা। সূচক সরু চোখে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে।

“এএএগোচ্ছেন কেনো?

দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে তানহার। আর পিয়ানোর জায়গা নেই। এবার?
সূচক এগিয়ে এসে তানহার মুখোমুখি দাঁড়ায়। এক হাত তানহার মাথার ওপর দিয়ে দেয়ালে রাখে।

” রাতের কথা ভুলে গেছিস?

নরম গলায় বলে সূচক। তানহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। দুই হাতে জামা মুঠো করে ধরে।

“কি রে বল?

তানহার মুখের একদম কাছাকাছি নিজের মুখটা এনে ফিসফিস করে বলে সূচক। নাকের সাথে ঠোঁট ছুঁয়ে যাচ্ছে। তানহার হাত পা কাঁপতে শুরু করে। দাঁত দিয়ে নিজের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে।

” আমি যা বলবো তাই করতে হবে।

নাকে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে সূচক। তানহা উপর নিচ মাথা নারায়। সূচক মুচকি হেসে দুই হাত তানহার দুই গালে দিয়ে মুখটা উঁচু করে ধরে।

“আআমি অসুস্থ।

তানহা তারাহুরো করে বলে।

” তো?

তানহা পিটপিট করে এক পলক তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। এই মুহুর্তে এই লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস নেই তানহার।
সূচক তানহার উওরের অপেক্ষায় কয়েক সেকেন্ড থেকে চট করে তানহার ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা আকড়ে ধরে।

একটু পরে ছেড়ে দেয়। তানহা যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। সূচক তানহার গলায় মুখ ডুবিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস টানে। গলা থেকে মুখ উঠিয়ে তানহার মুখের দিকে তাকাতেই তানহা দুই হাতে মুখ ছাপিয়ে ধরে নিজের আর অনবরত চোখ বড়বড় করে মাথা নারাতে থাকে।
সূচক বিরক্ত হয়।

“ইডিয়েট
কিসটাও করতে জানে না।

ছেড়ে দেয় তানহাকে। তানহা এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। লোকটা দিন দিন মারাক্তক লেভেলের অসব্ভ হয়ে যাচ্ছে।

🥀🥀
বসার ঘরে টান টান উত্তেজনা। মুখোমুখি বসে আছে তমাল আর আনোয়ার। আনোয়ারের পাশে তার স্ত্রী আর মেয়ে বসে আছে। ইমন দাঁড়িয়ে আছে বাবুকে কোলে নিয়ে
আরেক পাশে বসে আছে তমাল আর তাহের। সাদিয়া বেগম ওনাদের সামনে চা রেখে নিজেও স্বামীর পাশে বসে।

“ও বাবা শুরু করো না। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।

তোহা আর ইভা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুনছে। ইরা থ মেরে বসে আছে।

” তা বলছিলাম

আনোয়ার কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলতে যায়।

“আমি খুব ভালো ছেলে। বাবার একদম বাধ্য। বাবা যা বলে তাই করি। পড়ালেখায়ও ভালো। খালি একবার ফেল করছিলাম। দেখতেও একদম হিরোদের মতো আমি। আমার সাথে আপনার মেয়েকে দারুণ মানাবে। একদম লাইলি মজনু।
এবার আপনারা বলুন কবে বিয়ের ডেট ফিক্সড করবে। আমার কিন্তু খুব তাড়া। কোলবালিশ ছিঁড়ে গেছে। বাবা বলে দিয়েছে নতুন কোলবালিশ বানিয়ে দেবে না।

ইমন এক নাগারে কথাগুলো বলে। তোহার ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে ঢুকে পড়তে। উপস্থিত সবাই থমথমে খেয়ে যায়।
কারো মুখে কোনো কথা নেই।

” ওহহহ হো বাবা তো আমার কোলবালিশ থুক্কু বউকেই দেখলো না।
তোহা তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছো কেনো? জলদি যাও শাড়ি পড়ে তৈরি হয়ে এসো। বাবা দেখবে তোমায়।

তোহা চমকে ওঠে। সবাই তাকায় দরজার দিকে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তোহার। এভাবে বলতে হয়? চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। ইরিন এক গাল হেসে উঠে দাঁড়ায়।

“আমি সাহায্য করে আসছি তোহাকে।

ইরিন যেতে নেয়।

” আপু সুন্দর করে সাজাবি।
ইমন মুচকি হেসে বলে।
ইরিন ও একটু হেসে চলে যায়।

ইরিন সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় তোমাকে। নীল রংয়ের শাড়ি পড়িয়েছে। একদম অন্য রকম লাগছে তোহাকে। লজ্জায় ইরিনের সাথে কথাও বলতে পারছে না তোহা। ইরা বসেই আসে। ইভা সাহায্য করছে ইরিনকে।

ওদিকে ওনাদের খাওয়া দাওয়া শেষ। ইমন কাউকে কথা বলতে দিচ্ছে না। নিজেই বলে যাচ্ছে। আনোয়ার সাহেবের লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। ওনার ছেলে যে এতোটা বিয়ে পাগল হয়ে গেছে ভাবতেই পারছে না।

অবশেষে ঠিক হয় সূচক আসলে আজকেই আংটি পড়ানো হবে। আর খুব দ্রুত এদের চার হাত এক করে দেওয়া হবে।

চলবে