প্রণয়ের সুর পর্ব-০৪

0
15

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৪
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু

বৃষ্টি, জেরিন মিলে একটু পর পর নেহাকে লজ্জায় ফেলছে।এই দুই ননদ যে তাকে আজ লজ্জায় পিষে ফেলার পায়তারা করছে বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি নেহার।কি বিপদ এদের ভাই এক নির্লজ্জ, আর এরা তো আরো বেশি, মনে মনে দুইবার ভেংচি কাটলো নেহা সবার সামনে ভালো সাজার ধান্দা এদের ভাইয়ের! মানুষটার আসলেই পেটে পেটে সব শয় তানি বুদ্ধিতে ভরা, সবাই কে দেখাতে হবে না বউ নিয়ে কতো সুখে আছে,ভিতরের খবর তো শুধু জানে নেহা। এবার বিরক্ত লাগলো ওর উঠে চলে গেলো বর্ষার রুম থেকে, ওরা তো সত্যি না জেনে এমন করছে যখন সত্যি টা জানতে পারবে তখন নিজের ভাইকে কি বলবে জেরিন আপু?এতো এতো ভাইয়ের প্রশংসা তখন মুখে রুচবে তো!বর্ষা অবশ্য তেমন ঘাটেনি তাকে, নেহার নাড়িনক্ষত্র সবই তো মেয়েটার জানা।
যেহেতু কলেজে ক্লাস হয়না তেমন বাড়িতে বসে পড়বে ভেবেছে বর্ষা-নেহা যতই দুষ্টুমি করুক পড়াশোনাতে মোটামুটি ভালোই দুজন।

নেহা রুমে এসে বসলো জানালার পাশে,রুমে আসলো বর্ষা

,,জানিস কিছু?

নেহা ভ্রুযুগল বাঁকালো কিঞ্চিৎ ইশারায় জানতে চাইলো কি?

,,টয়া আপু আসবে আজ!
বর্ষা কথাটা বলে চুপসে গেলো যেনো বড়সড় একটা বো’মা ফাটার অপেক্ষায় আছে।কিন্তু না নেহা প্রতিক্রিয়া করলো না তেমন।ছোট করে বললো

,,ওহ! ভালো তো, তোর খালাতো বোন তার নিজের খালার বাসায় আসতেই পারে!

,,কাল তো খুব হম্বিতম্বি করছিলি, আমার ভাই যদি তোর না হয় তো অন্য কারো হতে দিবি না।দরকার পড়লে ওই সব গুলো মেয়েকে তুই গু ম করে দিবি।যদি সে আমার ভাই না হতো আর পরিবারের মানুষ তাকে ভালো না বাসতো তো তুই আগে আমার ভাইকে মার তি পরে নিজেকে!
এখন যে একটা সুপার গ্লু টাইপ, আমার ভাইয়ের সাথে সারাক্ষণ চিপকা চিপকি করা মেয়ে আসতেছে,কি করে থামাবি টয়া আপুকে?

,,থামাবো না!

,,হেয়ালি করবি না নেহা,তোর নিরব কথাবার্তা আমার সব সময়ের মতোই পছন্দ না।

,,কোন মানুষকে জোর করে আটকে রাখা যায় না বৃষ্টি।আর না নিজের করে পাওয়া যায়!
তোর ভাই যদি সত্যি আমার হতো তো আমি টয়া আপুকে কোনো সুযোগই দিতাম না।কিন্তু তোর ভাই তো আমার না অন্য কারো!
যতই নিজেকে বুঝ দেওয়ার জন্য রাগ দেখাই না কেনো,দিন শেষে আমিও বিশ্বাস করি জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না।কারো গুরুত্ব, সময়,মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় না!
টয়া আপু যথেষ্ট ভালো মানুষ আমি এটাও জানি তিনি নিখিল ভাইকে পছন্দ করেন,পছন্দের মানুষের কাছে অপর ব্যক্তি কিছুটা ছেবলামি করেই থাকে এতে তাকে খা রাপ বলার মতো রাইট আমাদের নেই।

,,বড়দের মতো কথা বলছিস যে?কি হয়েছে বল আমাকে? মন খারাপ তোর?

,,পড়তে বসা উচিত আমাদের!

,,কথা এড়িয়ে যাবি না।আমি জানি টয়া আপুকে তুই সহ্য করতে পারিস না, কিন্তু কি আর করার কেউ আসতে চাইলে তো তাকে মুখের উপর না করা যায় না।
আমি বলি কি টয়া আপু বেশি বাড়াবাড়ি করার আগেই তুই বলে দিবি যে নিখিল ভাইয়া তোর হাসবেন্ড, দেখবি আর কোনো নাটক করবে না এই মেয়ে।যখন দেখো ভাইয়ার গলায় ঝুলে পড়ে,বিরক্তিকর মেয়ে মানুষ!

,,যে বিয়ে করেছে সেই তো বিয়ের কথা কাউকে জানাতে চায় না।আমি বাবা আগ বাড়িয়ে বলে চ*ড় খেতে চাই না।
——–
দুপুরের আগেই টয়া এসে হাজির হয়েছে বাড়িতে।বৃষ্টি আর নেহা পড়তে বসায় তাদের কে ডাকতে মানা করে দেয় হামিদা বেগম।
হামিদা বেগমের বোনের মেয়ে আসায় বাড়িতে আয়োজনের কমতি নেই,একটা মানুষ এতো খেতে পারবে না জেনেও টেবিল ভর্তি করে ফেলেছে তিন জা মিলে।সেতারা বেগমও বেশ খুশি। টয়া মেয়েটার রূপের সাথে গুনটাও নজরকাড়া মেয়েটা রান্নার হাত অসাধারণ তেমন কিছু রান্না করে না খাওয়ালে ও একবার পায়েস করে খাইয়ে ছিলো সেতারা বেগম কে তার পর থেকেই নিজের তিন নাতনি কে তিনি তিন বেলা উঠতে বসতে বলতেন টয়াকে দেখে কিছু শিখ!
টয়া ভার্সিটি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বয়স একুশের কোটায়। মেয়েটা যে সেতারা বেগমকে পুরোপুরি বশ করেছে তার আর সবার জানতে বাকি নেই।
টয়ার ও কি বুদ্ধি কম, যেখানে সেতারা বেগমের চোখের মনি নিখিল মেহমেত চৌধুরী তাকে পেতে হলে তো একটু আকটু তেল বাজি সে করতেই পারে অনায়াসে!

টয়া এসেই প্রথমে ঢুকলো সেতারা বেগমের ঘরে।হেসে গিয়ে বললো

,,কেমন আছো নানু তোমাকে দেখতে চলে আসলাম আবারও!ভার্সিটি তে কিছুদিন ছুটি পেয়েছি ভাবলাম তোমাকে এসে একটু দেখে যাই।

সেতারা হাসলেন
,,তা ভালো করেছিস বোন।এবার যা গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নে এতোটা পথ এসে নিশ্চয়ই তুই ক্লান্ত?

টয়া বাধ্য মেয়ের মতো বের হয়ে গেলো। গেস্ট রুমটা নিচ তলায় তবুও টয়া সেখানে থাকবে না সে তার খালামনি কে ঠিক বুঝিয়ে জেরিনের রুমে থাকার বন্দবস্ত করে ফেলেছে,করবেই না কেনো জেরিনের ঠিক সামনের রুমটা নিখিলের, দরজা থেকেই রুমের ভিতরের বেশির ভাগ অংশ দৃশ্যমান হয়।নিখিলকে সকাল সন্ধ্যা দেখার লোভ টা কিছুতেই দমাতে পারে নি টয়া।
বর্ষা আর নেহার রুম শেয়ার করার অভ্যাস নেই, যদি তারা তুই বান্ধবী এক সাথে থাকার হয় তো তা ভিন্ন কথা।

দুপুরে বাসায় আসে না নিখিল,অফিসেই খাবার খায়।কিন্তু আজ সে অনেকটা দৌড়ের উপরই যেনো এসেছে অফিস থেকে।শাহআলম চৌধুরী আসেন রোজই,তার বাকি দুই ভাই আবার কাজের পোকা যেমন হয়েছে তার ছেলেটা।
টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিল তাহমিদা,হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছে সাহারা,তাহমিদা নিখিল কে দেখে হেসে বললো

,,কিরে নিখিল আজ যে দুপুরে বাড়িতে আসলি?তা ভালোই করেছিস যা ফ্রেশ হয়ে আয় একসাথে খাবি সবাই।
নিখিল কিছু বললো না তার অশান্ত চোখ অন্য কিছু দেখার আশায় ব্যস্ত।
নিখিল সিঁড়ি বেয়ে উঠলো উপরে, নেহার রুম থেকে কিছুটা শব্দ ভেসে আসছে নিখিল দাড়ায় দরজায়

নেহা বর্ষার সাথে এক প্রকার হাতাহাতি করছে,বৃষ্টি হাসছে আর বলছে
,,ভালোই হয়েছে, তোর আর লিখার ঝামেলা নেই বরং এক কাজ কর গিয়ে ঘুমা সারাদিন। পরীক্ষায় তোর খাতাটা একটা টুয়ের বাচ্চা দিয়ে লিখিয়ে নিস।

নেহা রেগে বলছে
,,মজা নিবি না বৃষ্টি। তুই বের হ আমার রুম থেকে সামনে আসবি না দুই দিন।

,,দুই মিনিট হলেও কথাটা রাখতে পারি আমি।
বলেই হু হা করে হাসলো,নেহা মনোযোগ দিলো টেস্ট পেপারের উপর, লিখতে পারছে না দেখে বাংলা আর জীববিজ্ঞানের এমসিকিউ সলভ করছে সে।সেই থেকে বৃষ্টি পদার্থের অংক করছে আর মাঝেমধ্যে নেহাকে খোঁচা মারছে।

নেহা বৃষ্টি একসাথে বাহিরে তাকায় শব্দ শুনে
টয়া আর একটুর জন্য নিখিলের উপর পড়েনি।টয়া কে দৌড়ে আসতে দেখেই নিখিল দু পা পিছিয়ে গিয়েছিলো।টয়ার মুখটা খুশিতে জ্বলজ্বল করছে,মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে,রসিয়ে রসিয়ে নিখিলের উদ্দেশ্য বললো

,,কেমন আছেন নিখিল!

নিখিল ভ্রু জোড়া বাঁকালো।একটা রাম ধমক মেরে বললো

,,নিখিল কেমন কথা টয়া?আমি তোমার থেকে বয়সে বড়,বড়দের কে কেউ নাম ধরে ডাকে নূন্যতম কমনসেন্স নেই তোমার!
নিখিল ভাইয়া ডাকবে! বুঝেছো?

টয়ার ফানুসের মতো ফুলা মুখটায় কেউ যেনো আলপিনের বড়সড় খোঁচা টা মে রেছে।ভোতা মুখে টয়া উপর নিচ মাথা নাড়লো।নেহার রুমের দরজা টা হাট করে খোলা দুজনই সব ঘটনা দেখলো পুরোপুরি, বৃষ্টি মুখ চেপে হাসা শুরু করে দিয়েছে।
কিন্তু নেহা?সে তো রাগে দুঃখে নিখিলের দিকে তাকিয়ে আছে।সারাজীবন তো বাড়িতে আসে না আজকে টয়া আসায় দুপুরে বাড়িতে চলে এসেছে?কাজ প্রেমি মানুষের কাজ থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই টয়া!অভিমানী কিশোরী মনে যেনো ঢুকে পড়লো তীক্ষ্ণ সরু যন্ত্র*ণার তীর।নেহা এতোক্ষণ নিখিলের দিকে তাকিয়ে থাকলেও এবার চোখ ফিরিয়ে নিলো বইয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়ার ভান করলো।
চোখের জল এতো অবাধ্য কেনো,যে মানুষের কাছে তার উপস্থিতি অস্তিত্বের কোনো মূল্য নেই, সে মানুষটা কি দিবে চোখের জল বা অনুভূতির মূল্য?
তবু কেনো বেহায়া মন বার বার অনুরাগী হয়,কোথাও না কোথাও ছোট ছোট আশার কিরন দেখায়।
মাথা নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে বইয়ের উপরই শুয়ে পড়লো নেহা।বৃষ্টি এবার দৃষ্টি রাখলো নেহার নেতিয়ে পড়া মুখের দিকে।

নিখিল তাকালো সামনের দিকে নেহা কে শুয়ে থাকতে দেখে বললো

,,এই তোদের পড়াশোনা? দুইজন দুই রুমে পড়তে বসবি কাল থেকে, আসার পর তো দেখলাম পড়িস কম গল্প করিস বেশি।
আর বৃষ্টি ওই অসলটার আবার কি হয়েছে?এরকম ঝিমানি মুরগীর মতো বই খাতার উপর শুয়ে পড়েছে কেনো?খাটে কি জায়গার অভাব পড়েছে নাকি?
খাবার খেয়ে ঔষধ খেতে বল।ম রার মতো পড়ে থাকলেও ওর এসব নাটক দেখতে কেউ আসবে না!

নেহা চট করে মাথা উঠিয়ে ফেলে, কি বললো লোকটা সে নাটক করে!নেহা মাথা ঘুরিয়ে দেখার আগেই রাগে গট গট করতে করতে নিখিল সেখান থেকে চলে যায়।

বৃষ্টি থতমত খায় ভাইয়ের রাগ দেখে,হঠাৎ রেগে গেলো কেনো?
নেহার চোখ লাল হয়ে গেছে,কান্না আটকে রেখেছে মেয়েটা যার ফলস্বরূপ চোখে ফুটে উঠেছে তার ছাপ।

নিখিল রুমে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে মিহির এসে হাজির,বৃষ্টি রুম থেকে বের হয়েই মিহিরের সাথে খেয়েছে এক ধাক্কা। বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো

,,চোখের মাথা খেয়ে কে হাঁটা চলা শুরু করে দিয়েছে বাড়িতে?

মিহির পকেটে হাত গুঁজে বলে উঠে

,,আপনার জামাই,যাকে আপনি গত বিশ ঘন্টা ধরে ব্লক লিস্টে রেখে নিদারুণ যন্ত্র*ণা দিচ্ছেন!

বৃষ্টি মিহির কে দেখে যেনো আরো রাগলো,পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই মিহির হাত চেপে ধরলো

,,আমার উপর রাগ দেখাচ্ছো কেনো মেঘবালিকা?

,,ছি!ছি! কি বলছেন মিহির ভাইয়া আমার মতো নির্বোধ কিশোরী কি করে আপনার উপর রাগ দেখাবে?তার কি এতো সাধ্য আছে নাকি,সে তো অতি সাধারণ একটা মেয়ে মাত্ররো!

,,হোক অতিসাধারণ, কিন্তু আমার কাছে সে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান, সবার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

,,আমাকে এতো গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে কে বলেছে আপনাকে ভাইয়া?

,,বার বার ভাইয়া ডেকে এই অধম প্রেমিকের আর জ্বা’লা বাড়িয়ে দিও না জান।

,,আজকে থেকে আপনি আর ফেইসবুকে ছবি আপলোড করবেন না, খবরদার!

,,তুমি বললে ফোন চালানো ছেড়ে দিবো।

,,নাটক কম করেন তো, ছবি আপলোড দেন সাথে আবার মেয়েদের কমেন্টে গিয়ে লাভ ইমুজিযুক্ত রিপ্লাই। মে’রে রেখে দিবো আমি আপনাকে!
বৃষ্টি কিছুটা এগিয়ে এসে মিহিরের কলার আলতো হাতে চেপে ধরে বলে

,,শুনুন মিস্টার মাইতুল মিহির আহমেদ,যদি আর কোনো দিন অন্য কোনো মেয়ের ছায়ার পাশেও আমি আপনাকে দেখি তো একদম খু*ন করে ফেলবো।আপনি আমার মানে আমারই বুঝছেন?

মিহির হাসলো, এই ছোট তরুনী যে তাকে পুরো দমে হেলিয়ে ফেলতে সক্ষম তা তার জানা আছে।ঠিকই ব্লক করে তাকে টেনে নিজের বাড়ির এনে হাজির করেছে।সে ও কি না এসে পারবে, প্রেমিকের মন যে অশান্ত হাওয়ার ন্যায়, শান্ত হওয়ার জন্য তো বৃষ্টির দেখা পেতেই হয়।

তাহমিদা বেগমের কন্ঠ শুনেই বৃষ্টি ফট করে মিহির কে ছেড়ে কেটে পড়েছে।তাহমিদা এসে মিহির কে দেখে হেসে বললো

,,মিহির যে, তা বাপ আজ সূর্য কোন দিকে উঠলো তরা দুই মানিক রতন বাড়িতে পায়ের ধুলো দিলি।

,,আর বলো না তো চাচী তোমার ছেলেটা পুরো বেখেয়ালি, অফিস থেকে আসবে একবার জানাবে না আমাকে,ফাইল গুলোও কোথায় রেখে এসেছে কে জানে,তার উপর মহাশয় ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে।তাই আমাকে আসতে হলো

,,এসে ভালোই করেছিস,না খেয়ে এক পা বাড়ির বাহিরে রাখবি না বলে গেলাম!
—–
নিখিল শাওয়ার নিয়ে এসে খাটে বসলো,টয়াকে দেখে তার বিরক্তির পরিমাণ বেড়েছে,এখন তাকে বউ ছাড়া থাকতে হবে ভেবেই ধ ম বন্ধ হয়ে আসছে।এই মেয়ে এমনিতেউ পালাই পালাই করে এখন তো ভুলেও আসবে না। আবার যদি নিখিল মুখ দিয়ে একবার বলে যে যতদিন টয়া থাকবে ততদিন রুমে আসবি না ভুলেও।কোন দিকে সামলাবে বুঝতে পারছে না নিখিল রাগে নিজের চুল টেনে ধরলো।

মিহির নিবে তাও অনুমতি, দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকে পড়লো,এসেই সটান হয়ে শুয়ে পড়লো খাটে।
নিখিল চোখ বন্ধ করে রেখেই বললো

,,তুই ও এসেছিস দেখছি,আবার লেগেছিস আমার বোনটার সাথে?

,,আমি কিছু করিনি আপনার মহান বোন, নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে আমাকে।

,,আমার সহজসরল বোনটা তোর মতো গাধার প্রেমে কিভাবে পড়লো বুঝে আসে না আমার।

,,তোর এতো বুঝে লাভ নাই।এখন বল অফিস থেকে চলে আসলি কেনো?তুই কি কাল রাতে ঘুমাস নাই?চোখ লাল হয়ে আছে কেনো?কি নিয়ে চিন্তিত এতো?

,,প্রশ্ন আর কয়েকটা কর একসাথে কম হয়ে গেলো না।
দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললো নিখিল।
মিহির মেকি হাসলো
,,তুই একটা একটা করে জবাব দে তাহলেই তো হয়।

,,বউ পাহারা দিয়েছি রাতে তাই ঘুমাইনি।আর কিছু জানার আছে তোর?

,,হুম।পরের প্রশ্নের উত্তর টাও দিয়ে ফেল ফটাফট।

,,আ’পদ টা এসে হাজির,এখন বউটাকে না দেখে রাতে ঘুমাতে হবে।

,,কেনো তোর ওই তালতো বোনকে বলে দিলেই হয় তুই বিবাহিত সব কাহিনি শেষ।

,,পুরো গুষ্টি শুদ্ধো মানুষ কে জানিয়ে দিবে এই মেয়ে।তুই তো জানোসই এখন কেনো বিয়ের বিষয় টা লুকিয়ে রেখেছি আমি!

,,তাহলে তুই সিঙ্গেল ম র শা’লা।নেহাকে বলে দিচ্ছিস না কেনো মনের কথা?

,,সময় হয়নি এখনো!

,,তোমার সময় হতে হতে আবার না তোমার বউ অন্য কাউকে মন দিয়ে বসে।তখন আম ছালা তোর দুটোই যাবে!

,,ওর হাত পা ভেঙ্গে রেখে দিবো আমি,চোখ উপরে ফেলবো অন্য কোনো ছেলের দিকে তাকালে!অন্য কারো যাতে হতে না পারে তার জন্যই তো বিয়ে করেছি এতো তাড়াতাড়ি।

,,শুধু হাড়িতে তুমি চাল,ডাল দিয়ে বসিয়ে রাখলেই তো খিচুড়ি হয়ে যাবে না।প্রেম ভালোবাসা ছাড়া তোর বিয়ে টিকবে কিনা সন্দেহ। মেয়ে মানুষের সন্দেহের মাত্রা কিন্তু অতিরিক্ত লেভেলের,আর জেলা’সির কথা কিই বা বলবো।
তোর বোন দিনে ছয়বার এইসব নিয়ে থ্রে*ট দেয় আমায়।এবার দেখ তোকে আর টয়া ফয়া কে নিয়ে না আবার নেহার মনে সন্দেহ ঢুকে, পরে দেখা যাবে তোর থেকে আরো দূরে চলে গেলো নেহা!

,,এসব আজাইরা চিন্তা বাদ দিবি তুই মিহির!
খেতে চাইলে আয় না হয় ঘুমা।

কথাটা বলেই নিখিল বেরিয়ে গেলো রুম থেকে,খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই।নিখিলের পাশে কোথা থেকে উড়ে এসে বসলো টয়া।জেরিন,বৃষ্টি একবার চোখ চাওয়াচাওয়ি করলো।টয়া কে সবাই বোন হিসাবে পছন্দ করে কিন্তু এর এই বেহা য়া স্বভাব কারো পছন্দ না।

সাব্বির তো গুন গুন করে বলা শুরু করেছে।
,,নেহা এসে দেখবে আর জ্ব লবে রে,তার ডেসিং,হ্যান্ডসাম জামাইয়ের পাশে আরেক পে ত্নী এসে বসে পড়েছে।

জেরিন চেয়ারের পেছন থেকে সাব্বিরের পিঠে একটা ধুম করে কি ল বসিয়েছে।সাব্বির ব্যাথায় মুখ ফুলিয়ে বললো
,,বড় বইন হইয়া ছোট ভাইরে মারোস তোর হাত কাঁপে না জেরিন,একবার যা শ্বশুর বাড়ি আর তোকে আনবো না আমরা।

টয়া কে দেখে রীতিমতো রাগ বাড়ছে নিখিলের নেহার উপরও রাগ উঠেছে তার মেয়েটা সবার শেষে কেনো আসবে,আগে আসতে পারে না একটু,তাহলে তো এই ঠ্যাটা টা কে সহ্য করতে হয় না তার।
টয়া বত্রিশ কপাটি বের করে নিখিল কে জিজ্ঞেস করছে

,,আচ্ছা নিখিল ভাই আপনার কোন খাবার বেশি পছন্দ? আসলে আমি রান্না শিখছি তো আপনাকে রেঁধে খাওয়াতাম আর কি!

মিহির তো বেশ মজা পাচ্ছে এবার বুঝুক নিখিল,মিহির সুর টেনে বললো

,,ওমা তাই নাকি টয়া,তা আমরা ও তো আছি আমাদের কেও তো খাওয়াতে পারো চাইলে।শুধু নিখিলকে অফার টা দিতে চাইছো যে?

নিখিল কটমট চোখে তাকায় মিহিরের দিকে মিহির দেখেও না দেখার ভান করে।
টয়া না মানে করে বলে

,,সবাইকেই খাওয়াবো ভাইয়া।

তাহমিদা রান্নাঘর থেকে ডাকলেন বৃষ্টি কে বৃষ্টি উঠে যেতেই সাব্বির ফিসফিস করে বললো
,,আহ্! জেরিন যেদিন টয়া জানবে না ভাইয়া আমার কিউট সিউট নেহা বোনটিকে মন দিয়ে বসে আছে সেদিন দেখবি মেয়েটা কষ্টে বে হুঁশ হয়ে পড়ে থাকবে ডাস্টবিনের কোনায়!

মিহির কথাটি শুনে এসে বৃষ্টির চেয়ারে বসে বললো
,,এই সাব্বির তুই জানলি কি করে নিখিল নেহাকে মন দিয়েছে!
মিহিরের ভ্রু কুঁচকানো দেখে সাব্বির জেরিনের দিকে তাকায়। জেরিন হেসে বলে ওই না মানে আমরা সেদিন

,,কি কি বল জেরিন?

জেরিন ফাঁকা ঢোক গিলে সব বলে দিলো মিহির সর্তক চোখে আশেপাশে দেখে বললো নেহা কে কি বলে দিয়েছিস তরা দুইটায়।
,,না না ভাইয়া শুধু আমি আর জেরিন জানি।
সাব্বিরের কথায় মিহির তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।বৃষ্টি জানলে নেহাও জানবে, দুইটার একটায় ও জানে না শান্তি।

বৃষ্টি এসে মিহির কে নিজের চেয়ারে দেখে চোখ রাঙালো,মিহির উঠে গিয়ে আগের জায়গায় বসলো।

সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ই নেহা স্পষ্ট দেখেছে নিখিল আর টয়া হেসে হেসে কথা বলছে,পাশাপাশি বসে।নেহার মনটা হঠাৎই আষাঢ়ের মেঘে ছেয়ে গেলো।মিনিট দুয়েক সে তাকিয়ে থাকলো টয়া আর নিখিলের দিকে নিখিলের পাশে কি টয়াকে বেশি মানায়?
কথাটা নিজের কানের বেশ কয়েকবার বাজলো নিখিলের পাশে টয়া কে বেশি মানায়!

নেহা ধীর পায়ে হেঁটে আসলো টেবিলের সামনে,তাহমিদা মেয়ে কে দেখেই বললো
,,বস খাইয়ে দিচ্ছি আমি।
নেহার অভিমানী মন মায়ের কথা শুনতে নারাজ,সকালে তো সবার সামনে বললো নিজে পারলে খা না হয় না খেয়ে থাক এখন এতো দরদ দেখাতে হবে কেনো?নেহা টেবিল থেকে একটা প্লেট উল্টে তাতে এক চামচ পোলাও নিলো,সব গুলো পদ দেখলো, যেটা হাতে না ছুঁয়ে খাওয়া যাবে ওরকম দেখতে শুধু ডিমের কোরমা টাই নজরে পড়লো,প্লেটে একটু তুলে নিয়ে রান্না ঘরে গেলো সে,তাহমিদা একবার দেখলো মেয়েকে।নেহা একটা চামচ হাতে নিয়ে ফিরলো, প্লেট টা হাতে নিয়ে রুমের দিকে যেতে লাগলো।
এখানে বসলে ওর গলা দিয়ে খাবার নামবে না আজ নিখিল টয়াকে এক সাথে দেখার মতো মনমানসিকতা এখন অন্তত নেই নেহার।

পেছন রাশভারি কন্ঠে নিখিল বলে উঠলো

,,টেবিলে বসে খা নেহা!
নেহা শুনলো না, থামলো না পর্যন্ত আপন মনে হেঁটে উঠে গেলো সিঁড়িতে।
নিখিল রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো,মেয়েটার ত্যা ড়ামি এবার সীমা ছাড়াচ্ছে।নিখিল আবার চেঁচিয়ে বললো

,,ছোট মা তোমার মেয়ে দিন দিন চরম বেয়াদ’ব আর অবাধ্য হচ্ছে।বড়দের কথা অমান্য করে কোন সাহসে?ওকে সাবধান করে দাও এর পরিনাম কিন্তু বেশি ভালো হবে না বলে দিলাম।
নেহা শেষ সিঁড়ি তে উঠলো কথাটা পুরোটা শুনেও থামেনি, রুমে ঢুকে শব্দ করে দরজা আটকে দিয়েছে।

নিখিল টেবিল ছেড়ে উঠার পূর্বেই তাহমিদা এসে বললেন
,,না খেয়ে উঠবি না নিখিল!একটা পা’গলের উপর রাগ দেখিয়ে তুই কেনো না খেয়ে থাকবি।বেশি তে’জ দেখাতে কে বলেছে ওকে।যেহেতু নিজের টা নিজে করতে পারবে তখন আমাদেরও উচিত ওকে নিয়ে না ভাবা।ছোট বাচ্চা না ও যথেষ্ট বড় হয়েছে।ওর এসব আচরণ মেনে নিবে না কেউ আজ আসুক ওর বাবা, একদম সোজা করার ব্যবস্থা করছি আমি!

সবাই খাওয়ায় মন দিলো।এখন কিছু বলে লাভ নেই মহল গরম।
নেহা কোনো রকম খেয়ে চুপচাপ লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে,প্লেট রাখতেও নিচে যায়নি।

নিখিল কিছুক্ষণ পরই উপরে আসলো নেহার রুম লক করা দেখেই মেজাজ বিগ ড়ে গেলো ওর।মিহির পেছনে এসে দাড়ালো
,,মিহির ওকে দরজা টা খুলতে বল একবার।চ*ড় মেরে ঠিক করে দিবো বেয়া’দব আমাকে তে*জ দেখায়।

মিহির বিরক্তি নিয়ে বললো
,,একদম ঠিক করেছে ওর জায়গায় আমি থাকলে আরো বেশি কিছু করতাম।এই নিখিল একটা কথা বলতে আমাকে,তুই কি একটু ভালো করে কথা বলতে পারিস না ওর সাথে?তখন ওরকম ষাঁ ড়ের মতো ডাকছিলি কেনো আবার কি করলি চাচীর কাছে মেয়েটাকে বকাও খাওয়ালি।এরকম করতে থাকলে না দেখবি একদিন ঠিকই নেহা তোকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিবে।
নিখিল রাগে তড়তড় করে কাঁপছে চোখ মুখ লাল হয়ে এসেছে।
,,আর কোনো দিন যদি এই কথা মুখেও আনিস বেশি ভালো হবে না মিহির!

,,তাহলে ওর সাথে ভালো আচরণ কর মিষ্টি করে কথা বলতে শিখ।

টয়া হেলেদুলে চলে এসেছে নিখিল মিহিরের কাছে পেছনে বৃষ্টি, জেরিন,সাব্বির আর রৌফ।

টয়া বললো
,,নিখিল ভাই চলুন না আমরা সবাই মিলে এখন গল্প করি।
মিহির মনে মনে বললো
,,এই মেয়ের মুখটা কি কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে পারে না নাকি!
নিখিল রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো,মিহিরের উদ্দেশ্য বললো
,,আমি এখন অফিস যাবো,তুই ও যাবি অপেক্ষা কর আমি আসছি।
মিহির অবাক হয়ে বললো তুই তো বলেছিলি আজ আর যাবি না তাহলে এখন।নিখিল কোনো উত্তর দিলো না।
বৃষ্টি নেহার রুম লক করা দেখে চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে বসলো।
জেরিন রুমে যাওয়ার সময় টয়াকে বললো তুই দাড়িয়ে আছিস কেনো রুমে চল।
——-
সন্ধ্যায় ঘুম ভেঙ্গেছে নেহার দুপুরে ঔষধ খেতে ভুলে গেছে সে,হাত ব্যাথায় টনটন করছে এখন।মনে মনে একবার প্রমিজ ও করেছে আর কারো উপর রাগ দেখিয়ে হাত কা টার মতো ভুল করবে না।

রাতে পড়া শেষ করে সোফায় এসে হাত পা ছড়িয়ে টিভি দেখতে বসেছে নেহা,থ্রি লার মুভি দেখছে, রহস্যে টান টান মুহুর্ত।কে আসলো কে গেলো এতো কিছু দেখার দরকার নেই ওর।সোফার পাশের টেবিলে একটা ডার্ক চকলেট রাখলো কেউ,টেবিলটা সামনেই ছিলো কাগজের খচখচে শব্দে না চাইতেও নেহার মনোযোগ সেদিকে গেলো।
প্রায় সময়ই নেহার জন্য চকলেট আনে শাহআলম চৌধুরী, নেহা ভেবেছে আজও তাই,সামনে থাকা ব্যাক্তিকে না দেখেই হাত বাড়িয়ে চকলেট টা যেই না নিতে যাবে,কেউ এসে ছো মেরে চকলেট টা নিয়ে নিলো,নেহার চরম পর্যায়ে রাগ লাগলো তার চকলেটে হাত দেওয়ার সাহস আজ অব্দি কেউ করেনি।
মুখ উঠিয়ে কড়া ভাষায় কিছু বলতে যাবে, নিখিল আর টয়া কে দেখে থেমে গেলো নেহা।
টয়া হাতে চকলেট টা নিয়ে বললো

,,ওয়াও চকলেট!নিখিল ভাই এটা কার জন্য এনেছেন?

নিখিল নিজেও অবাক টয়া যে হঠাৎ এভাবে এসে হাজির হবে ভাবতেও পারেনি। সে তো নিজেই এখনও বুঝে উঠতে পারেনি কি হলো।

নেহা ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বললো
,,তোমার জন্যই এনেছে টয়া আপু।
এমনিতেও যার তার দেওয়া চকলেট আমি নেই না!কথাটা বলেই শব্দ করে পা ফেলে সেখান থেকে চলে গেলো নেহা।

নিখিলের কানে প্রতিধ্বনিত্ব হচ্ছে নেহার বলা শেষ কথাটা যার তার সাথে তুলনা করলো তাকে মেয়েটা!

চলবে?