প্রণয়ের সুর পর্ব-২২

0
17

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব২২
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
ছেলেরা ভাবার জন্য সময় দিয়েছে মাত্ররো একমিনিট যার মধ্যে বাকি আর কয়েক সেকেন্ড মাত্ররো গান টুকটাক সবাই গাইতে পারে কিন্তু সম্পূর্ণ গান গাইতে হবে শর্তটাই ঝ”মেলার সৃষ্টি করলো!
আইরিন মুখ তেঁতো করে ওর ফ্রেন্ড কে বলে উঠে
—,,এই পুষ্প সারাদিন গান গেয়ে মাথার খে’য়ে ফেলিস এখন একটা গান গাইতে পারিস না?আজ হারলে তোর গান গাওয়া জন্মের মতো বন্ধ বলে রাখলাম!

পুষ্প কয়েকবার আওতায় তুমছে তুমছে,,,!
জেরিন বলে উঠে –,,রাখ তোর তুমছে এই বৃষ্টি গান গা!

বৃষ্টি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।অপর দিকে আইরিনের কাজিন সামির বলে উঠলো আর মাত্ররো দশ সেকেন্ড এক,দুই,তিন,,,!

সামিরের কাউন্ট করার মাঝেই একটা সুরেলা কন্ঠ শোনা গেলো মুহুর্তেই সবার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে!

নেহা গেয়ে উঠেছে—-,,

তুমি বৃষ্টি চেয়েছো বলে
কতো মেঘের ভেঙ্গেছি মন
আমি নিজের বলতে
তোমায় চেয়েছি
তুমি যাওনি কিছুই বলে
আজও পাল্টে ফেলিনি মন
শুধু নিজের বলতে
তোমায় চেয়েছি
তুমি জানতেই পারো না
তোমায় কতো ভালোবেসেছি!

নেহার কে গান গাইতে দেখে চোখ ইয়া বড় বড় করে তাকিয়ে আছে জেরিন আর সাব্বির,এ মেয়েকে এ পর্যন্ত গান গাইতে শুনেনি।কন্ঠ টাও তো সুন্দর এদিকে নিখিল ছাদের দরজায় এসে যেনো ধাক্কা খেয়েছে তার বউটা গানও গাইতে পারে?নিখিল এক ধ্যানে গান শোনায় মগ্ন। পেছন থেকে রোহান নিখিল কে ঠেলা মারে
–,,কিরে ব্যাটা যাচ্ছিস না কেনো?

নিখিল হ্যাঁ বলে উঠে!পরেই আলতো হেসে সামনের সারিতে গিয়ে বসে পড়ে, গান গাওয়ার পুরো সময় সে শুধু আজ বউকে দেখবে।
নিখিল কে দেখেই সামনের পেছনের বেশ কয়েকটা মেয়ে নড়েচড়ে বসলো।বিয়ে বাড়িতে সুদর্শন পুরুষ মানেই তাকে পটাতে সব গুলো মিলে প্রতিযোগীতা করে,কারো না কারো ঝোলায় তো ঠিক উঠবে এই অমূল্য রতন! একটা মেয়ে নিখিলের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে কারন তার ঠিক সামনেই নিখিল বসেছে,কিন্তু মেয়েটার ইমোশনে পানি ঢেলে নিখিল হাতের ইশারায় তাকে সামনে থেকে সরে যেতে বললো।
মেয়েটা কিছু না বুঝে বাধ্য মেয়ের মতো উঠে গেলো।মেয়েটার ঠিক পেছনে নেহা!

জেরিন, বৃষ্টি নিজের ভাইকে দেখে হাসলো, নিখিল গালে হাত দিয়ে নেহার দিকে এক মনে তাকিয়ে রইলো আশেপাশের সবার দৃষ্টি তখন তার উপর,ছেলেটা সবার সামনে একটা মেয়ের দিক কোনো ভাবনা চিন্তা ছাড়াই এভাবে তাকিয়ে আছে?কে কি ভাববে এটা চিন্তা করবে না?টয়া,রূপা বিষয়টা বেশ লক্ষ্য করেছে আর রাগে ফুসছে!
নেহার কন্ঠ আবার শোনা গেলো

“তুমি শান্ত তবুও কি চেঁচিয়ে
এ মন ভাঙতো?
ভোর হবে ঠিকই রাত জানতো
যতটুকু জড়িয়ে থাকা যায়।
তুমি হাসলে
নাকি ফের পেছন থেকে ডাকলে?
বরাবর দোটানাতে থাকলে
কীভাবে আজীবন বাঁচা যায়?
তুমি অন্য ঘরেই থেকো
আমার নামে রাগ জমিয়ে রেখো
আমি সবটুকু দোষ তোমায় দিয়েছি
তুমি জানতেই পারো না
তোমায় কতো ভালোবেসেছি!
তুমি জানতেই পারো না
তোমায় কতো ভালোবেসেছি!

গান গাওয়ার পুরোটা সময় নেহা চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো!হুট করেই এতো তালির শব্দ শুনতে পেয়ে হকচকিয়ে গেলো,চোখ জোরা খুলে সামনে তাকাতেই যেনো হার্টবিট থেমে গেলো।
কয়েক বার চোখের পাতা বন্ধ করে খুলেছে,দিন দুপুরে কি নেহা স্বপ্ন দেখছে?নাকি নিখিল সত্যি এসেছে!
নেহা হতভম্ব ভাব দেখে নিখিল ঠোঁট কামড়ে হাসে।

এর মধ্যেই মেয়েরা সবাই চেঁচিয়ে উঠে–,,ইয়ে আমরা জিতে গেছি!

ছেলেরা বলে উঠে–,,হুহ্! পরের বার দেখে নিবো।

নিখিল হাস্যউজ্জ্বল কন্ঠে বলে উঠে–,,আমার বিপরীত পক্ষে মিসেস চৌধুরী থাকলে আমি সব সময়ই হারতে রাজি!

রোহান,শুভ চোখ বড় বড় করে তাকায়–,,এই তুই কোন জীবনে হেরেছিস?তোর তো হেরে যাওয়া পছন্দ না!

নিখিলের ভাবলেশহীন কন্ঠ–,,আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে আমি আজ কেনো আমৃত্যু সব ক্ষেত্রে হারতে রাজি!আর আমি এ ও জানি আমি না চাইলেও হারবো বার বার হেরে যাবো নক্ষত্রের প্রেমে!

নেহার ভালোলাগা এবার অভিমানে পরিবর্তন হলো,অনুরাগে মুখ কালো হয়ে গেলো!এতো দিন পর এসে ভালোবাসা জাহির করা হচ্ছে।লাগবে না এমন ভালোবাসা।
নেহা চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো,নিখিলের মুখে অন্য একজনকে ভালোবাসার কথা শুনে মেয়েগুলোর মন নিঃশব্দে ভাঙলো!
নেহা কিছু দূর যাওয়ার পরই হাতে টান পড়লো, নেহা এবার তাকালো প্রশ্ন কাতর চোখে। কি করতে চাইছে নিখিল, সবার সামনে হাত কেনো ধরেছে,নেহা একবার সবার দিকে তাকালো সবাই তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে আর নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করছে।
রোহান শুভ এর কাঁধ চেপে ধরে বললো–,,শা’লা আমি তো ভেবেছিলাম ওই সময় মজা করছে এখন তো দেখি মা’মলা সিরিয়াস, নেহার প্রতি নিখিল একবারে ম’রছে।দেখলিনা গান গাইছিলো সময় কেমনে তাকিয়ে ছিলো মেয়েটার দিক যেনো কতো বছর দেখে না!মানলাম ভালোবাসে তাই বলে সবার সামনে তাকিয়ে থাকা লাগবে,এ ছেলে সব দিক দিয়েই এমন তাড় ছিঁড়া!

শুভ মুখ চেপে ধরে বলে–,,চুপ কর না হয় তোকে উগান্ডা পাঠাইয়া দিবো!ব্যাটা মাই’রে টানে তোমারে।নিজে যখন প্রেমে পড়বা তখন বুঝবা নে।

নেহা চাপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে –,,কি করছেন?হাত ছাড়ুন সবাই তাকিয়ে আছে।

–,,চোখ আছে তাকাবেই!তুই তো আর জামাইয়ের দিকে তাকাস না তাই অন্য মেয়েরা তাকাচ্ছে।তুই কি চাস বাকি সবাই চোখ দিয়ে গি’লে খেয়ে ফেলুক তোর জামাইকে!

—,,আপনার উপর নজর যে দিবো তার চয়েজ খারাপ!কোন মেয়ে আপনার সাথে ভুলেও প্রেম করতে রাজি হবে না!

–,,বলছিস? দাঁড়া এখনই একবার পরীক্ষা করে নেই।

নিখিল এক হাতে চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললো।
এই যে বোনেরা!তোমাদের মধ্যে কেউ কি এই অধমের সাথে প্রেম করতে চাও?

নেহা বুকে দু হাত ভাজ করে দাড়িয়ে, সাব্বির এবার জেরিনের পাশে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো
–,,জেরিন বইন তোর ভাই কি এই ভরা মজলিসে মাই’র খাইতে চাইতাছে?না মানে নেহার যা মার’পিট করার রেকর্ড কখন জানি কার মাথা ফাটি’য়ে দেয়,এমনিতেই তো অনেক রেগে আছে তোর ভাইয়ের উপর!

চাপা গুঞ্জন ছেলেগুলা তো নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছে, সবাই জানে নিখিলের প্রেমে মেয়েরা প্রথম দেখাতেই পরে যায় এখানে তো নিখিল নিজে থেকে অফার করছে।না জানি কতো মেয়ে আসে, মেয়েদের দলে কম করেও দশ বারোজন আছে,ছলেরাও কম না।
অনেকে এ সব কিছু নিরব দর্শকের মতো দেখছে।

কোনো মেয়ে না আসলেও রূপা মেয়েটা এগিয়ে আসলো,নিখিল ভ্রু কুঁচকালো কেঁচো খুড়ঁতে তো কাল নাগিনী বের হলো,এ জন্যই মেজো মামি এতো তেল দিচ্ছিলো!
নিখিল রূপার দিকে হাত বাড়ানোর আগেই নেহা নিখিলের কলার চেপে ধরলো রাগে একদম ফে’টে পড়ছে যেনো।রাগে ফর্সা গাল নাক লাল হয়ে এসেছে

রাগে তিড়বিড় করে কাঁপছে নেহা–,,কয়টা মেয়ে লাগে তোর!

সাব্বির চোখ ছোট ছোট করে বললো–,, নেহা বইন রেগে গেছে চল থামাই!সবাই তাকিয়ে আছে।

নেহা হুট করেই নিখিলের কলার ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে এক প্রকার দৌড়ে চলে যায়!

নিখিল সরু চোখে নেহার দিকে তাকিয়ে থাকে।নিখিল শার্টের কলার ঠিক করে অতি গম্ভীর কন্ঠ চোখ মুখ শক্ত করে বলে—,,সবার উদ্দেশ্য কিছু কথা!

ছেলেদের মধ্যে কেউ নেহাকে নিয়ে মনের ভিতর তিল পরিমাণ ও অন্য চিন্তা আনলে,যদি আমি জানতে পারি তো আস্ত রাখবো না!
মেয়েদের মধ্যে সবাই সাবধান আগের বার কেউ একজন বোকামী করেছিলো এবার যেনো ভুলেও যেনো ওইরকম ভুল কেউ না করে, তবে মে’রে পুঁতে রাখবো, কারো হিং”সার ফলে যদি আমার নেহার গায়ে একটা আঁচড় ও লাগে বেশি ভালো হবে না।বিয়ে খেতে এসেছো মজা করবে কিন্তু বারাবাড়ি যেনো কেউই না করে। এতটুকু বলে রাখলাম!

রোহান এগিয়ে এসে বললো–,,তুই তো পুরো পাগ’ল প্রেমিক হয়ে গেছিস!

নিখিল থমথমে মুখে সেখান থেকে চলে যায়।
সাব্বির জেরিন আর বৃষ্টি কে বলে তোরা অপেক্ষা কর আগু’নে ঘি ঢেলে আসি।

বৃষ্টি বিরস মুখে বলে–,,যেও না ভাইয়া থাপ্পড় ও দিতে পারে।
–,,একটা থাপ্পড় কোনো ব্যাপার না।

জেরিন, বৃষ্টি পিছু পিছু নামলো।টয়া রাগে টইটম্বুর, নিখিল তাকে অপমান করে গেলো সবার সামনে?নেহা কে ভালোবাসা না দেখবো এই ভালোবাসা কতো দিন থাকে!রূপা মেয়েটা একটা গা’ধা এটাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
ওরা চলে যেতেই সব কাজিন রা মিলে নিখিলের প্রেম নিয়ে হাসি আড্ডায় মেতে উঠলো ওর বন্ধুরা তো বেশির ভাগ অবাকই হয়েছে এ ছেলের তাহলে বাড়ির ভিতর প্রেম চলতো,তাই বাহিরে কোথাও কোনো দিন তাকায়নি।কি ভাব দেখো পিউর সিঙ্গেল!

সাব্বির নিখিলের পথ আগলে দাঁড়িয়েছে কিছুটা বিরক্তি চোখে মুখে ফুটিয়ে বললো–,,ভাইয়া সবার সামনে এগুলা করে তুমি কি প্রমান করতে চাইলে?উল্টো সবাই ভাববে তোমার আর নেহার মধ্যে উল্টো পাল্টা কিছু আছে, এতোই যখন সমস্যা বলে দিলেই পারতে নেহা তোমার বউ!তুমি আসলে নেহাকে ভালোই বাসো না।ওইদিন তোমাকে বললাম নেহা অসুস্থ তুমি মেসেজ দেখেও আসোনি!

–,,তোরা মজা করে কতো কিছুই বলবি তাই শুনতে হবে আমায়?

–,,নেহার অসুস্থতা নিয়ে আমরা মজা করবো?এই তোমার ধারনা।ওইদিন যদি নেহার সত্যি কিছু হয়ে যেতো তখন পরে এসে কি তুমি আফসোস করতে? লোক দেখানো সহমর্মিতা দেখাতে?এখন তো মনে হচ্ছে নেহা ওই দিন ম,,,!

সাব্বির আর কিছু বলার আগেই নিখিল সাব্বির কে এক চ’ড় বসিয়েছে।সাব্বির জানতো এমন কিছু হবে থাপ্প’ড় খেয়ে এখন ওর হাসি পাচ্ছে, অনেক কষ্টে হাসি দমিয়ে বললো–,,আমাকে মে’রেই কি সত্যি চাপা দিতে পারবে তুমি?তুমি সিলেট গিয়ে তো অন্য মেয়ের সাথে ছবি দাও ওই মেয়ে তোমার কাঁধে হাত রেখে দাড়ায় তার অশ্লী”ল কমেন্টে তুমি লাভ রিয়েক্ট দেও?এগুলা যদি নেহা করতো তুমি মানতে পারতে?তুমি নেহাকে শুধু একা ভালোবাসো নাকি?তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসে তোমায় নেহা এই সামান্য বিষয় টা তুমি বুঝতে পারোনি?মেয়েটার সাথে তোমাকে দেখেই নেহা অসুস্থ হয়ে গেছিলো,আর তুমি কিনা মনে করেছো আমি মজা করেছি?নেহা জানেও না আমরা তোমাকে জানিয়েছি!মেয়েটাকে তুমি শুধু কষ্ট দিতে পারো তোমার ভালোবাসায় কষ্ট ছাড়া কিছু নেই।চার বছর ধরে শুধু কষ্টই দিচ্ছো তুমি নেহাকে!
নিখিল দুকদম পিছিয়ে গেলো কাঁপা কন্ঠে বললো
–,,চা,,র বছর!নেহা আমাকে ভালোবাসে? আমি ভেবেছি,,,!

–,,তুমি ভাবতেই থাকো, ভালোবাসা হারিয়ে যেতে সময় নিবে না।
সাব্বির হনহন করে চলে গেলো। জেরিন,বৃষ্টি পিলারের পিছনে লুকিয়ে দেখছিলো,সাব্বির গিয়ে কলার ঝাকিয়ে ভাব নিয়ে বললো–,,কেমন দিলাম!
জেরিন আঙুল গোল করে বলে–,,সুপার!
–,,চল এবার ওদের রুমে উঁকি মারি দেখতে হবে না কি কি করে!
বৃষ্টি মুখ বাঁকিয়ে বলে–,,তুমি কি ভালো হবে না।আজকে ওদের কে একা ছেড়ে দাও পরেরে বার আমরা বাম হাত ঢুকাবো।
সাব্বির বলে উঠলো–,,মিহির ভাই কে ফোন লাগা উনাকে চাচ্চু হওয়ার সুখবর টা দেই!

জেরিন ভ্রু কুঁচকে বললো–,,কে প্রেগন্যন্ট?তুই!তোর বেবি হচ্ছে?

সাব্বির জোরে বলে উঠে–,,আসতাগফিরুল্লাহ!নাউজুবিল্লাহ! এসব কি নষ্ট কথাবার্তা আমি পিউর সিঙ্গেল!

–,,তার মানে বিবাহিত হইলে তুই গর্ভবতী হইতি?

বৃষ্টি চোখ ছোট ছোট করে বলে–,,ছি!ছি সাব্বির ভাইয়া তোমাকে ছেলে মনে করছিলাম।এখন তো দেখি তুমি মেয়ে আমাদের সাব্বিরি বইন!
জেরিন,বৃষ্টি হু হা করে হেসে দিলো।সাব্বির ওদের পিছনে দৌড় লাগালো।
——————-
নেহা রুমে ঢুকে লাগেজ গুছালো, থাকবে না এখানে এখই চলে যাবে,অসভ্য লোক সিলেটে গিয়ে এক মেয়ে এখানে আবার আরেকটা প্রেম করতে চায়।তাহলে বিয়ে করতে কে বলেছিলো?কেউ নিয়ে না গেলে একা একা চলে যাবে।
নেহা রুমে বাহিরে গিয়ে তাহমিদা বেগম কে খুঁজে বের করলো–,,আঁচল ধরে ঘুরছে আর বলছে আমি বাড়ি যাবো মা!এখানে থাকবো না।

তাহমিদা রেগে বললো–,,তখন এসেছিলি কেনো?
–,,কে জানতো এখানে ই’ন্দুর টা চলে আসবে!
আমি যাবো দিয়ে আসতে বলো কাউকে না হয় কিন্তু একা চলে যাবো!

–,,দিন দিন কি বাচ্চামো করছিস নেহা।যা তো জ্বালা’স না কাজ করছি!

পেছন থেকে নিখিল বলে উঠলো –,,আয় তোকে আমি নিয়ে দিয়ে আসছি!
–,,যার তার সাহায্য নেই না আমি!

তাহমিদা নিখিল কে দেখে বললো–,,কখন এসেছিস বাবা?
–,,রাতে ছোট মা!তুমি কাজে যাও তোমার মেয়ে কে আমি বাড়ি যাওয়াচ্ছি!

নেহা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো,নিখিল নেহার হাত চেপে ধরে বললো চল।
নেহা হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো–,,না!

নিখিল নেহাকে টেনে দুতলায় আনলো রুমে এনে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো!
নেহা একবার নিখিল কে দেখে আবার অন্য পাশে ফিরে গেলো!

নিখিলের কাঠকাঠ কন্ঠ –,,আজ তোকে দিনের বেলা তাঁরা দেখাবো আমি!
নেহা নিশ্চুপ। নিখিল নেহার হাত টেনে নিজের কাছে আনলো,থুতনি চেপে ধরে মুখ উঁচু করলো।

–,,আমার দিকে তাকাবি না?আমার এতোই ঘৃ”ণা করিস যে মুখ দেখতে চাস না!
নেহা চোখ খুলে ফেললো,নিখিল হাসলো।নেহার কোমর জড়িয়ে ধরে বললো–,,ভালোবাসি বউ!

নেহার জামা ছাড়িয়ে কোমরে নিখিল হাত রাখতেই নেহা ছিটকে সরে পড়লো!

নিখিল যেনো নাছোড়বান্দা। নেহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো চুলে মুখ ডুবিয়ে নেশা”তুর কন্ঠে বললো
–,,ভালোবাসিস এই কথাটা বলতে পারিস না?আমি কি তোকে খে’য়ে ফেলতাম নাকি বললে!
এতো ভালোবাসা জমিয়ে আর কতোদিন রাখবি নেহা?আমাকে আমার ভাগের ভালোবাসা দিবি না?আমার অধিকার আমাকে দিতেই হবে নেহা!

নেহার এবার কান্না পেয়ে যাচ্ছে,ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
নিখিল নেহার ঘাড়ে মুখ গুঁজে ফিসফিস কন্ঠে বললো
—,,কাঁদবি না কাঁদলে গুনে গুনে একশোটা চুমু খাবো তোর ঠোঁটে!

নেহা এবার সত্যি সত্যি কেঁদে ফেললো!নিখিল আবার বললো–,,আমার ঠোঁটের ছোঁয়া এতো পছন্দ আপনার মিসেস চৌধুরী?

নেহা নিখিলের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো।নিখিল নেহাকে উল্টো ঘুরিয়ে মুখোমুখি করলো
–,,কথা দিয়েছি রাখতে তো হবেই।
নেহা দু হাত দিয়ে নিজের ঠোঁট আড়াল করে ফেলে
নিখিল এক টানে নেহার জামার চেইন খুলে ফেলে, নেহা তবুও মুখ থেকে হাত সরায়নি।
নেহার হাতের দিকে অংশ উন্মুক্ত হতেই কাঁধে ঠোঁট ছোঁয়ালো নিখিল নেহা এবার কাঁপছে, পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছে এবার না চাইতেও ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে নিলো,নিখিল কে বাঁধা দিতে যাওয়ার আগে নিখিল নেহার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো,পর পর কয়েকবার চুমু খেলো,নেহা অনুভূতির জালে ফেঁসে যাচ্ছে,অনুভূতি সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে,মানুষ যতই শক্ত রাখুক নিজেকে ভালোবাসার মানুষের কাছে এসে বরাবরের মতোই দুর্বল হয়ে পড়ে!
নিখিল কিছু সময় পর থেমে বললো–,,তুই গুনতে থাক আমি চুমু দিতে থাকি একশোর বেশিএ দিতে পারি চুমু দিতে আমি কোনো কৃপণতা করবো সা প্রমিজ জান!

তুই এই পর্যন্ত এই সুন্দর জামাই টাকে একটা চুমুও দিলি না। কিভাবে নেহা তুই মেয়ে হয়ে এতো নিখুঁত ভাবে ভালোবাসা আড়াল করলি?এর শাস্তি তোকে আমি আজ শোধে আসলে দিবে।
আগে বলিস নাই মানলাম বিয়ের পর কেনো বললি না!
নেহার যেনো গলা শুকিয়ে আসছে,নিখিল কে না থামাতে না পারলে আজ নেহা কে শেষ করে ফেলবে এই লোক!
নেহা কাঁপা কন্ঠে বললো –,,আ…মি আপনাকে ভালো…বাসি ন,,!
নেহা না উচ্চারণ করার আগেই নিখিল আবার চুমু বসালো এবার কামড় সহ দিচ্ছে।
–,,মিথ্যা বলবি আর চুমু দশটা করে বাড়বে!
নেহা অতিষ্ঠ নিখিলের অবাধ্যতায়।নেহার ঠোঁটের বেহাল দশা, তবুও থামাথামি নেই নিখিলের।
অবশেষে থেমে নেহার লাল হয়ে উঠা ঠোঁটে হাত ছুঁইয়ে বললো–,,এবার তো আরো নে”শা ধরে যাচ্ছে আমার!

তোর ঠোঁটের স্বাদ অমৃত!এই সুধা যত পান করি ততো তৃষ্ণা বাড়ে জান আমার কোনো দোষ নেই!

নেহা আবার ঠোঁট বাড়াতেই নেহা কাতর কন্ঠে বলে–,,আর না প্লিজ!

—,,এখন তো মাত্ররো শুরু,তুই আমার ভিতরে লুকিয়ে রাখা ভয়ং”কর প্রেমিক সত্তা কে জাগিয়ে দিয়েছিস আজ তোকে ছাড়বো না।
নিখিল মেহমেত চৌধুরী কে ভালোবেসেছিস তার ভালো”বাসার টর্চার সহ্য করবি না এ কেমন করে হয় নেহা!

—,,লাগবে না ভালোবাসা!

–,,একটা শর্ত দেই তোকে,আগে বল আমার ছোঁয়াতে তোর কিছু যায় আসে না?

—,,না!
—,,ওকে!আমি তোকে ছুঁয়ে দিবো যদি তুই নিজ থেকে আমাকে আঁকড়ে না ধরিস তো আমি তোকে ছেড়ে দিবো।যদি ভুল ক্রমেও ধরে ফেলিস নেহা তো আজ পুরপুরি তুই আমার!শর্ত দিচ্ছি এটা তোকে না চাইলেও মানতে হবে,পনেরো দিন পর বউ কে দেখছি আমি।ভিতরে ভিতরে ম’রে যাচ্ছি আজকে দূরে যেতে দিবো না!
নেহা নাকের ডগায় রাগ নিয়ে বললো—,,আপনার গায়ে অন্য মেয়ের ছোঁয়া লেগে আছে,অন্যের মুখ দেওয়া খাবার খাই না আমি!

নিখিল হেঁচকা টান মারলো নেহাকে। আমি জুটা খাবার?

–,,হুম!ওই মেয়েটা আপনার কাঁধ ছুঁয়েছে! তার মানে আপনি জুটা,আপনাকে ছুঁয়ে ও দেখবে না আমি।

—,,তুই ছুঁয়ে দিবি সাথে তোর ঘাড়।ওই মেয়েটা হঠাৎ করে এসেই ওইরকম ভাবে ছবিটা তুলেছে, আর ছবিটাও আমি পোস্ট করিনি।বিশ্বাস কর!

—,,মোটেও বিশ্বাস করবো না,সরুন।যান ওই মেয়ের কাছে!

—-,,এতো বেশি জেলাসি? হায়!
নেহা দুহাতে কলার চেপে ধরে বলে–,,জেলাসি টেলাসি বুঝি না,যেই আসবে আপনার আশেপাশে তাকেই খু’ন করে ফেলবো আমি!আমার মানে আমারই,এখন আপনি আমার না হলেও কিছু যায় আসে না।অন্য কারো হতে পারবেন না।দরকার পড়লে আপনাকেও মে’রে ফেলবো আমি!

নেহার কোমর জড়িয়ে নিখিল বলে–,,তোর প্রেমে তো রোজ ম’রি।আজকে তোকে মা’রবো আমার ভালোবাসায়!

নেহা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুমে থেকে বের হতে যায়।
নেহা কে ঠেলে বিছানায় ফেলে দেয়।
নিজে নেহার উপর নিজের সম্পুর্ন ভার ছেড়ে দিয়ে বলে –,,এবার কোথায় পালাবি?আজ যদি তোর অভিমান না ভাঙাতে পারি তো আমার নাম নিখিল না!
নেহার কপালে চুমু দিয়ে বললো–,,ভালোবাসি!
গালে চুমু দিয়ে বললো ভালোবাসি।চোখের চুমু দিয়ে বললো ভালোবাসি।থুতনি, ঠোঁটে চুমু দিচ্ছে আর বলছে ভালোবাসি।গলায়, ঘাড়ে, কাঁধে চুমু দিচ্ছে আর বলছে ভালোবাসি!নেহা শরীর মন জুড়ে খেলে গেলো ভালোলাগার শিহরণ, নিখিলের পাগলা’মিতে অতিষ্ঠ ওর প্রেমিকা সত্ত্বা বেড়িয়ে আসতে চাইল, খোলস ছেড়ে।নেহার এবার হাসি পাচ্ছে এই ছেলেটা আজ তাকে একদম মে’রে ফেলবে মনে হচ্ছে!
নেহা সহ্য করতে না পরে নিখিলের শার্ট আঁকড়ে ধরে।নিখিল ততক্ষণাৎ থেমে যায়।
নেহার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে–,,অভিমান কমেছে আপনার? অভিমানীনি!ভালোবাসি তো পাখি,এবারের মতো ক্ষমা করে দিন বউজান এই নির্বোধ স্বামীকে।

নেহার চোখ জলে চিক চিক করে উঠলো।নিখিল নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো–,,লাভ ইউ!
কানের লতিতে চুমু দিয়ে বলে শর্ত অনুযায়ী তুই আজকে সম্পুর্ন আমার নেহা এবার অনুমতি দে।মৌনতা সম্মতির লক্ষ্মণ এসবে আমি বিশ্বাস করি না মুখে বল!

নিখিল নেহার গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে বললো–,,কিরে কতো সময় নিবি?আমার কিন্তু তর সইছে না!বল বল বল।একটা কামড় ও দিয়ে ফেললো নিখিল,নেহা নিখিলের পিঠে আলতো চাপড় মেরে বললো–,,অসহ্য লোক, এতো অধৈর্য কেনো আপনি।নির্লজ্জ একটা আমি কিছু বলতে পারবো না!

—,,বলতে হবে যতক্ষণ না বলবি ততক্ষণ এভাবেই থাকবো কামড়ে দিবো তোকে!

নেহা কিছুক্ষণ চুপ রইলো,নিখিলের গলা জড়িয়ে চোখে চোখ রাখলো ধীর শীতল কন্ঠে বললো–,,আজ এখন থেকে,আমি পুরো সম্মতির সাথে নিজেকে পুরোপুরি আপনার কাছে সপে দিলাম!আমার উপর সম্পূর্ণ অধিকার শুধু আপনার।আমি পুরোপুরি আমার অপ্রিয়,নির্লজ্জ,নির্দয়,রাগী,গম্ভীর, কাটখোট্টা জামাইয়ের!
নিখিল নেহাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।চুলের উপর চুমু খেয়ে বললো,নেহা তোর মাঝে এতো প্রশান্তি কেনো?জানিস আমি কতো কতো খুশি। আমার কেমন সুখ সুখ লাগছে!

নেহা হাসফাস করে বললো–,,এই এই মে’রে ফেলবেন নাকি। এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরে?
নিখিল নেহার ঠোঁটের উপর আঙুল চেপে ধরে বলে
–,,চুপ!এখন আমি ভালোবাসবো, আদর করবো আমার সফট রেশমের মতো বউ কে তুই কোনো কথা বলবি না।তোর বকবক পরে শুনবো!
নেহা খিলখিল করে হেসে ফেললো!মুগ্ধ নয়নে দেখলো নিখিল, অতঃপর ডুব দিলো তার অধিক সাধনার বস্তুতে।ভালোবাসায় ভরে উঠলো মুহুর্ত!বাতাসে বাতাসে প্রজাপতির ফিসফিসানি অবশেষে বাজলো দুটি হৃদয়ে প্রণয়ের সুর!ছড়িয়ে পড়লো অনুভূতির মাদ’কতা চারদেয়ালের অন্তরালে।পর পর মেতে উঠলো সময়েরা সুন্দর এক পূর্ণতার স্বাক্ষী হতে!
——————
দুপুর গড়িয়েছে নেহাকে খুঁজছে জেরিন,বৃষ্টি, সাব্বির।
বৃষ্টি তো সাব্বির কে বার বার বলছে—,,তোমার জন্য আজকে আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধুর জান না কব’জ করে ফেলে ভাইয়া!কোথায় চলে গেছে দুজন ভাইয়ার ওতো দেখা নেই।

জেরিন বললো–,,আয় মাকে জিজ্ঞেস করি।
হামিদা বেগম কে সব আন্টির মাঝখান থেকে টেনে আনলো দুই বোন মিলে–,,তোমার ছেলেকে দেখেছো?আর নেহাকে?
হামিদা বেগম রেগে বললো–,,এই কথা জিজ্ঞেস করতে টেনেটুনে আনবি।সব সময় দুষ্টামি যা তো আমি দেখিনি।

সাব্বির তাহমিদা বেগম কে জিজ্ঞেস করলো–,,ছোট মা তোমার মেয়ে আর মেয়ের জামাই কে দেখেছো?

–,,আছে হয়তো কোথাও নেহাকে তো কখন নিখিল সাথে করে নিয়ে গেছে!

সাব্বির মনে মনে বললো–,,আল্লাহ নেহা বইনটাকে ভাইয়া তুলে আছাড় যাতে না মারে!
তিন জন মিলে বাহিরে চলে গেলো যদি খুঁজে পাওয়া যায়।
টয়া রূপা আইরিন ওদের কথা শুনলো।আইরিন টয়ার কাঁধে হাত রেখে বললো–,,বুঝলি টয়া নিখিল ভাইয়া নিশ্চিত নেহা কে বাহিরে কোথাও ডেটে গেছে,ভাইয়া সত্যি অনেক ভালোবাসে নেহাকে।টয়া হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো কতো যে ভালোবাসে এটা টয়ার থেকে ভালো কে জানে এখনো থাপ্প’ড়ের শব্দ কানে বাজে তার।
——–
এই নেহা তুই কি বসেই থাকবি চল চল একসাথে গোসল করি পানির অপরচয় কম হবে!

নেহা রাগে বালিশ ছুঁড়ে মারে নিখিলের উপর!নিখিল হেসে ওয়াশরুমে চলে যায়।নেহা লাগেজ থেকে কাপড় বের করতে করতে বলে–,,অসহ্য একটা।
নেহার চোখ পড়লো শপিং ব্যাগের উপর,এগুলা কই থেকে আসলো,তাও ওর লাগেজে কে রাখলো?
নিখিল আনেনি তো?নেহা যে শপিং করতে যায়নি এ কথা তো নিখিল জানতো,তাই নিয়ে এসেছে নেহা মুচকি হাসলো,তার পরও একটু ভাব দেখাতে হবে এই ছেলেকে না হয় আরো মাথায় চড়ে বসবে।

উঠোনের চারপাশে গাছে ভর্তি ছায়ায় ঘেরা বাড়িটা।নেহা চুল ছেড়ে দিয়ে হাঁটছে বাতাসে শুকিয়ে যাবে!
সামনে হঠাৎ আসে টয়া নেহার মেজাজ হয় খারাপ।

টয়া বুকে দুহাত গুঁজে বলে উঠে–,,বিয়ের আগেই ফিজি”ক্যাল রিলেশনশিপে চলে গেছো তোমরা প্রেম তো দেখছি মাখো মাখো!হাও চিপ ইউ আর!নেহা তোমাকে তো ওইরকম মেয়ে মনে ই হয়নি!

কথাটা বলতে দেরি নেহা চ’ড় মারতে দেরি করেনি!
–,,আর একটা উল্টো পাল্টা কথা বলবি তো তোর জি’ব টেনে ছিঁড়ে ফেলবো আমি!

–,,সত্যি কথা বললেই গায়ে লাগে তাই না!

–,,আমার যা খুশি আমি করবো তাতে তোর এতো জ্বল”ছে কেনো?নিখিল কে না পেয়ে এখন কষ্টে পাবনা চলে গিয়েছিলি এখন এসে যা তা বকছিস তাই তো?
ফ্রিতে একটা টিপস দেই কোনো একটা বাঁদর দেখে তার গলায় ঝুলে পড়!
নিখিলের থেকে গুনে গুনে একশো হাত দূরে থাকবি!না হয় হাত পা ভেঙে রাস্তার মোড়ে ফেলে আসবো,আমি ভদ্র সহজ সরল আছি ওরকমই থাকতে দে না হয় ফল ভালো হবে না!
(রিচেক করা হয়নি ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)
চলবে?