প্রণয়ের সুর পর্ব-২৯+৩০

0
18

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব২৯
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
ঘর থেকে ভাংচুর এর শব্দ শোনা গেলো,শেফালী বেগম ছেলেকে এতো রাগতে কখনো দেখেনি।শান্তশিষ্ট ছেলে তার আজ এরকম পাগ,লামো করছে!
নিজেও জে’দ ধরে উপরে গেলেন না।একটা মেয়ের জন্য আজ ছেলে তার মাকে পর করে দিচ্ছে?তিনিও রুমে গিয়ে বসে রইলেন!

তিশা আর তার মা পড়লেন বিপাকে, তাদের আগেই বুঝা উচিতে ছিলো, মিহিরের অনুমতি না নিয়ে এতোকিছু ঠিক করাটা শেফালী বেগমের বোকামি!তবুও তিনি তা মানতে নারাজ।

হঠাৎই হন্তদন্ত পায়ে বাড়িতে ঢুকলো নিখিল।তাকে দেখে বসার ঘরে বসে থাকা তিশা চিন্তিত কন্ঠে বললো
–,,ভাইয়া কোনো সমস্যা?

নিখিলের কন্ঠ শুনে বেরিয়ে আসে শেফালী বেগম।

নিখিল আত”ঙ্কিত হয়ে বলে –,,আন্টি মিহির কোথায়?পাগ’ল হয়ে গেছে আপনার ছেলে সুইসা”ইড করতে চাচ্ছে।আমার সাথে কথা বললো মাত্র!

শেফালী বেগম চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,মিহির বাবা এমন করিস না বাপ মায়ের উপর রাগ করে এমন কেউ করে।

ছুটে গেলেন ছেলের রুমের বাহিরে দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো।
মিহির কে দেখে কান্না করে দৌড়ে গেলেন শেফালী বেগম।মিহির খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।মেঝেতে র’ক্ত দেখে শেফালী বেগম কান্নায় ভেঙে পড়লেন! তিশা ছুটে গিয়ে মিহিরের হাত ছুঁতে নিলেই মিহির কাঁ’পা কন্ঠে বলে–,,দূরে সর দূরে সর বলছি!আমাকে একদম ছুঁয়ে দিবি না।

নিখিল গিয়ে মিহিরের পাশে বসলো হাতে চাপ দিয়ে রুমাল পেঁচিয়ে ধরলো!মিহির বলে উঠলো–,,দরকার নেই এসবের সর সামনে থেকে কাউকে দরকার নেই আমার।যেখানে আমার মা আমার কথা ভাবে না এরকম জীবন চাই না আমি!বাঁচতে চাই না আমি।
নিখিল রাগী কন্ঠে বললো–,,ছা’গলের মতো কাজ করে বসে আছিস?চল হসপিটালে আন্টি আপনিও চলেন পরে এর ক্লাস নিচ্ছি আমি!

মিহির চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,না তুমি যাবে না আমার সাথে।তুমি তো চাও আমি ম’রে যাই এখন এসব মিথ্যা কান্না দেখাবে না আমাকে!

শেফালী বেগম কান্না করে বললো–,,বাবা তোর সব কথা আমি শুনবো, দেখ কতো র’ক্ত বেরিয়ে গেছে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে!

তিশা বলে উঠলো–,,ভাইয়া তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।আমি এসবের কিছুই জানতাম না তুমি যাকে পছন্দ করো তার সাথেই তোমার বিয়ে হবে মামি না জেনে এরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, তুমি আর না করো না প্লিজ!

নিখিল মিহির কে ধরে নিয়ে গাড়িতে উঠালো পেছনে উঠলেন শেফালী বেগম সাথে তিশা।

কিছুক্ষণের মধ্যে হসপিটালে পৌঁছালো তারা।ডাক্তার এসে শেফালী বেগম কে তার রুমে ডাকলো।

তিনি প্রবেশ করতেই ডাক্তার মেয়েটি থমথমে কন্ঠে বললো–,,আপনি আপনার ছেলে কে মানসিক ভাবে চর্টা’র করছেন?আজকাল কার ছেলে মেয়েদের কে চিনেন না আপনি তার উপর শুনলাম আপনার একমাত্র ছেলে,আদরে বড় করেছেন।এরকম একটা পদক্ষেপ নিলো কেনো হঠাৎ? পরের বার এমন হলে কিন্তু আরো ভয়া”বহ কিছু করতে পারে।

শেফালী বেগম ভয় পেলেন প্রচুর।তিনি ডাক্তার কে আস্বস্ত করলেন এরকম কিছু কখনো ঘটবে না।

মিহির কে পুরো বেড রেস্ট দেওয়া হয়েছে। হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে আসলো নেহা,বৃষ্টি, জেরিন,সাব্বির।

বৃষ্টি কোনো দিক না তাকিয়েই কেবিনে ঢুকে পড়লো।মিহির হাতে তুলে আপেলে কামড় বসিয়েছে মাত্ররো বৃষ্টি এসে তার উপর হাম’লা চালালো এলোপাতাড়ি মারছে আর বলছে –,,কেনো এরকম করেছো তুমি মিহির?যদি বড় কিছু হয়ে যেতো!

মিহির বৃষ্টি কে থামিয়ে দিয়ে বললো–,,আরে কথাটা তো আগে শুনো আমার।

নেহা,জেরিন,সাব্বির মিটমিট করে হাসছে তা দেখে বৃষ্টি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়–,,তোমরা এভাবে হাসছো কেনো?

এবার হু হা করে হেসে দিলো মিহির–,,আরে কিছু হয়নি আমার তোমার শাশুড়ী আম্মাকে একটু টাইট দিতে এটা আমাদের প্ল্যান ছিলো!
মিথ্যা মিথ্যা হাত কা’টার নাটক করেছি! সবাই বলার পর বৃষ্টি রেগে বলে উঠলো–,,আমাকে কেউ জানাবে না কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।যা খুশি হোক আমি আর আসবো না এখানে। তুমি ম’রো বাঁচো আমার কি।

বৃষ্টি রেগে বের হয়ে বাহিরে গিয়ে দাঁড়ায় অভিমানে চোখে জল চিক চিক করে উঠে।শেফালী বেগম বৃষ্টিকে এমন অবস্থায় দেখে ভাবে তার ছেলের জন্যই মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে!
শেফালী বেগম এগিয়ে আসে বৃষ্টির মাথায় হাত রেখে বলে–,,মিহির ঠিক হয়ে যাবে মা!
বৃষ্টি মিহিরের মাকে জড়িয়ে ধরে –,,আন্টি মিহির বলে হু হু করে কেঁদে দেয়!

শেফালী বেগমের সব রাগ জেনো কর্পুরের ন্যায় উবে যায়।মহিলার নয়ন অশ্রুশিক্ত হয়,আগলে নেয় নিজের সাথে নিয়ে গিয়ে বসায় বৃষ্টিকে।
কেবিনের দরজা থেকে উঁকি দিয়ে সব কাহিনি দেখে মিহির, নেহা,জেরিন,সাব্বির কেবিনের সোফায় বসে নিখিল বলে উঠে–,,ড্রামাবাজের দল!

মিহির তাকাতেই বৃষ্টি এক চোখ টিপ মারে শেফালী বেগমের কাঁধ থেকে মাথা তুলে!

যার মানে স্পষ্ট অভিনয় শুধু তুমি একা না আমিও পারি!

সাব্বির মিহির কে টেনে এনে বেডে বসিয়ে দিয়ে বলে
–,,এভাবে নাচানাচি করলে ধরা পড়তে সময় লাগবে না।

তোমরা দুইজন হবু কাপল মিলে অভিনয় করো আমি তোমাদের বিয়ে খাওয়ার প্রস্তুতি নেই।
জেরিন মুখ বাঁকিয়ে বলে–,,শা’লা খাওয়া টা কিছু কমা,না হয় ভুঁড়ি বেড়ে যাবে তোর পরে বউ পাবি না!

–,,চুপ থাক ঘসেটিবেগম। বৃষ্টির পর তোর বিয়ে এখন শুধু খাবো আর খাবো নো থামাথামি!
———-
বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে মিহির কে।শেফালী বেগমের হাতে কিচ্ছুটি মুখে তুলছে না মিহির মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।

ছেলের প্রত্যাখান মেনে নিতে না পেরে বিষন্ন মন নিয়ে রুমে বসে আছেন শেফালী বেগম।তিশা এসে বসলেন পাশে হাতে হাত রেখে বললো–,,মামি তুমি ভাইয়ার কথাটা ভেবে দেখো একবার।ভাইয়া বৃষ্টি আপুকে ভালোবাসে।এখন যদি জোর করে বিয়েটা হয় ও কোনো দিন কি আমরা সুখে থাকবো বলো?উল্টো সবার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।তোমার ইচ্ছেকে সম্মান জানাচ্ছি আমি,কিন্তু ভাইয়াও তো তোমাকে ভালোবাসে বলো, তুমি কি চাও না তোমার ছেলে অখুশি থাকুক?বৃষ্টি আপুকে পছন্দ নয় তোমার বলো?আমি কিচ্ছু মনে করবো না বিশ্বাস করবো উল্টো ওদের বিয়ে হলে আমি বেশি খুশি হবো।মা কথা বলেছে বাবার সাথে বাবাও সব বুঝতে পেরেছে তুমি নিজেকে ছোট ভেবো না আর।বাবা কিচ্ছু মনে করেনি।বরং তুমি ভাইয়ার কথা ভাবো,বৃষ্টি আপু কে দেখেছিলে ওই সময় ভাইয়ার জন্য কি রকম করছিলো?তোমার ছেলে কে ভালো রাখবে ওরা এক সাথে ভালো থাকবে,যদি মাঝখানে আমি চলে আসি তো নিজেকেই বেশি ছোট মনে হবে আমার।তুমি ওদের সম্পর্ক মেনে নাও!

শেফালী বেগম তিশা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,মা তুই বড্ড ভালো রে।আমাকে ভুল বুঝিস না তুই আমি জানতাম না ছেলেটা আমার মনে মনে অন্য কাউকে পছন্দ করে!

–,,আহা!মামি এসব না ভেবে চলো তোমার ছেলের কাছে গিয়ে বলো খুশির খবর টা!

–,,এতো সহজে কেনো বলবো,কিছুদিন একটু শা,স্তি ভোগ করুক আমাকে কষ্ট দেওয়া হাত কা’টা বের করছি আমি।
তিশা বলে উঠলো–,,তোমরা পারোও বটে!

তিশা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো–,,ভালো থেকো ভালোবাসা অন্যের ভালোবাসায়!

————
মিহিরের মা যে রাজি এ খবর ওরা ভালো করেই জানে,তবুও মিহির ও ভান ধরে আছে, যেমন মা তেমনি তার ছেলে।
কেটেছে কয়েকটা সুন্দরতম দিন।
আজ বিকেলে ছাদে আড্ডা দিতে বসেছে সব গুলোতে, ভার্সিটি থেকে ফিরেছে সাব্বির,জেরিন।বৃষ্টি, নেহা পড়া থেকে উঠে এসেছে।দুপুরে ফিরে আর অফিসে যায়নি নিখিল,মিহির।

হাসি আড্ডায় মেতে উঠেছে পরিবেশ।হঠাৎ নিচ থেকে রৌফ ছুটে আসলো।

–,,তোমরা নিচে চলো তাড়াতাড়ি, কারা যেনো এসেছে বাড়িতে বড় মা বলেছে নিচে যেতে।

মুখ চাওয়াচাওয়ি করে নিচে নামলো সবাই।নিখিল, মিহির এগিয়ে গেলো বসার ঘরের দিকে নিরব এসেছে তার পরিবার সহ!অনেক দিন পর বন্ধুকে দেখে দুইজনই খুশি হলো।

ছেলের বন্ধুর বোন শুনে খুশি তে আটখানা হয়ে পড়লেন নিরবের মা আফসানা বেগম।

দোতলার করিডরে চোরের মতো উঁকি মারছে বৃষ্টি, নেহা,জেরিন,সাব্বির।
নিরব কে দেখেই সাব্বির বলে উঠলো–,,যাক অবশেষে তোর প্রফেসর কানা জামাইয়ের আগমন ঘটলো!
যাই কানা দুলাভাই কে একটু চমকে দিয়ে আসি।

জেরিন চিবিয়ে চিবিয়ে বললো–,,বিয়ে হয়নি এখনো সাব্বিরা জামাই জামাই করবি না!

–,,এ্যাহ পিরিত উতলাইয়া পড়ে আমি বললেই দোষ!দেখ আমাকে দেখলেই না শা’লা জেলা”সিতে ফে’টে পড়ে!

নেহা কে ইশারায় নিচে ডাকলেন তাহমিদা বেগম!
নেহা ঘোমটা দিয়ে বউ সেজে হাজির নিচে।জেরিনের সাথে একবার চোখাচোখি হয়ে গেলো নিরবের।সেই যে ভেগেছে জেরিন,আর বৃষ্টি আর রুম থেকে বর হয়নি।

বাড়িতে আজ আছেন শাহআলম চৌধুরী, সাথে সেতারা বেগম সোফায় বসে আছেন নিরবের বাবা মায়ের সাথে টুকটাক কথা হচ্ছে তাদের মধ্যে। নিরব, নিখিল,মিহির আড্ডায় ব্যস্ত!

নেহা কে রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে কতোগুলো বুঝ দিলো তাহমিদা বেগম,হামিদা বেগম বললো–,,সুন্দর করে গিয়ে সালাম দিবি তুই এখন মেয়ে ছাড়াও এ বাড়ির বড় ছেলের বউ!
নেহা হু হু করতে করতে শেষ।সাহারা বলে উঠলো–,,থামো দুজন এবার মেয়েটা কে ছাড়ো, ও কি ছোট বুঝবে না নাকি।নে তো মা ট্রে টা দিয়ে আয়!
হামিদা বেগম বললো–,,খাবার গুলো দিয়ে গিয়ে জেরিন কে তৈরি করবি, উনারা দেখতে এসেছে যে কোনো মুহুর্তে ডাকতে পারে!

নেহা ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো–,,যথা আজ্ঞা মাতৃ বৃন্দ!

নেহা গিয়ে সালাম দিলো সবার উদ্দেশ্য, নিরবের ভাই টা নেহার দিক ড্যাব ড্যাব করে তাকাতেই নিখিল নেহা কে চোখ রাঙানি দিলো যার অর্থ তুই কেনো এসেছিস?রূপ দেখাতে একবার হাতের কাছে পাই বুঝাবো মজা!

সেতারা বেগম উঠে এসে বললো–,,নেহা আমার ছোট ছেলের মেয়ে।সাথে আরো একটা পরিচয় হচ্ছে আমার নিখিল দাদু ভাইয়ের স্ত্রী আমার বড় নাত বউ!

নেহা মৃদু হাসলো,জীবনে এতো অস্বস্তি মনে হয় কোনো দিন হয়নি।মনে হচ্ছে ওকেই দেখতে এসেছে এরা, ভাগ্য ভালো এসব দেখা দেখির প্যারা থেকে বেঁচে গেছে!

নিরবের ভাইয়ের যেনো মুখটা চুপসে গেলো,এইটুকু মেয়েটা ও বিবাহিত!
নিখিল নেহা কে ইশারা করলো–,,যা বলছি!
নেহা যেনো হাঁটছে কম দৌড়াচ্ছে বেশি সিঁড়ি বেয়ে মুহুর্তে ভেনিস হয়ে গেলো।
মিহির নিখিলের কানের কাছে গিয়ে বললো–,,তুই কি জীবনে ভালো হবি না? মেয়েটার দিক এভাবে তাকালি কেনো?

নিখিল দাঁতে দাঁত চেপে নয়ন নামক ছেলেটার দিক তাকিয়ে বললো–,,আমার বউ আমি তাকাবো তাতে তোর কি।যখন নিজের টার দিকে কেউ শকু”নি দৃষ্টি দিবে না তখন বুঝবি!

মিহির ততক্ষনাৎ মোবাইল বের করে বৃষ্টি কে কল লাগালো পর মুহুর্তে কেটে দিয়ে মেসেজ দিলো ভুলে ও ড্রয়িং রুমে আসবে না বলে দিচ্ছি!

হুট করে সাব্বির কোথা থেকে এসে নিরবের উপরের দিকে সোফার কাঁধ ঘেষে বসলো।কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো–,,গুড ইভিনিং প্রফেসর!

নিরব হকচকিয়ে পিছনে তাকাতেই সাব্বির কে চমকে উঠলো –,,তুমি এখানেও!

সেতারা বেগম বলে উঠলো–,,এই কোথা থেকে আসলি তুই?কখন থেকে খুঁজছি তোকে!

নিরব বলে উঠলো–,,আপনাদের ফ্যামিলি মেম্বার নাকি?

সেতারা হেসে বললো–,,হ্যাঁ। আমার মেজো ছেলের পোলা সাব্বির!
সাব্বির দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো–,,সারপ্রাইজ কেমন লাগলো দুলাভাই?

–,তার মানে ওই দিন মজা করছিলে?
সাব্বির হেসে বললো–,,করতেই পারি!একমাত্র দুলাভাই বলে কথা!

সেতারা বেগম বলে উঠলো–,,তোরা কি আগে থেকে চেনাপরিচিত নাকি?

নিরব হেসে বললো–,,হুম দাদি আমার ছাত্র!
———
রৌফ এসে বললো আপু কে নিয়ে যেতে বলেছে তোমাদের ছোট মা!
নেহা বলে উঠলো–,,বৃষ্টি জানটুস নিয়ে যা না তোর ভাই ওখানে গেলে আমাকে কাঁচা গিলে খাবে!

বৃষ্টি মুখ ছোট করে বললো–,,মিহির বলেছে আমি যেনো ভুলে ও পা না বাড়াই!তুই আপুর ভাবি হোস সম্পর্কে তুই নিয়ে যা।
বাধ্য হয়ে নেহা জেরিনের সাথে গেলো।জেরিন গিয়ে সালাম দিলো আফসানা বেগম এসে পাশে বসালেন জেরিন কে।বেচারি তো মাথা তুলতে পারছে না লজ্জায়,নিরব নামে লোকটা যে সত্যি সত্যি আসবে কে জানতো!

বাড়িতে প্রবেশ করলো মাহফুজ চৌধুরী, শহিদুল চৌধুরী! এসেই সোফায় বসে সৌজন্যে মূলক হাসলো কুশল বিনিময় করলো!

মেয়ে যে ছেলে পক্ষের পছন্দ তা তাদের হাসি মুখ দেখেই বুঝে গেছে সবাই।গৃহিণীরা হাতে হাতে রান্না করছে রাতে না খাইয়ে কিভাবে পাঠায় নতুন আত্মীয় হতে যাচ্ছে!

সাব্বির মুখে আপেল পুরতে পুরতে বললো–,,কিরে কানা দুলাভাই কেমন লাগলো?শা’লা কিন্তু মন্দ না কি বলিস?জেরিন টার সাথে মানাবে ভালো,শুধু চশমাটা!

নেহা বলে উঠলো–,,ধুরু বাদ দেও তো চশমায় আর কি যায় আসে?দুলাভাই হিসেবে কেমন আগে টেস্ট নিয়ে দেখতে হবে!আজ তো শুধু দেখতে আসলো!

–,,তা যা বলেছিস প্রফেসরের ভোলাভালা মুখ দেখে গললে চলবে না৷ আজ থেকেই চিরুনি তল্লা’শি শুরু।মিলাও হাত দলে সব গুলাকে একে একে যোগ করতে হবে।ওদের কথার মাঝেই সাহারা বেগম ডাকলেন

–,,নেহা। জেরিন কে নিয়ে যা তো মা।সাব্বির তুই নিরব বাবাকে নিয়ে যা ওরা একটু কথা বলুক নিজেদের মধ্যে!

———-
ছাদের উপর দাড়িয়ে আছে জেরিন,নিরব।ধমকা বাতাসে উড়ে গেলো জেরিনের ঘোমটা।জেরিন আবার আঁচলে টান দিতে নিলেই নিরব বলে উঠলো–,,সমস্যা নেই,আমিই তো স্বাভাবিক হও এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?

জেরিন কিছু বললো না।চুপচাপ ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেলো।
নিরব বলে উঠলো–,,তা মেডাম আমি তো আমার কথা রাখলাম।আপনার পরিবার কিন্তু রাজি,এখন শর্ত মতো আপনারও রাজি হওয়ার কথা ছিলো।
এবার চট করে মাথা তুললো জেরিন। হাতের পৃষ্ঠে হাত ঘঁষেই চলেছে।

এদিকে নেহা সাব্বিরের হাত টেনে বললো–,,ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক না তুমি লম্বু হয়ে আমাদের সামনে দাঁড়াচ্ছো?পিছনে দাঁড়াও কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না!
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,হুম দেখতে দাও আমাদের, তুমি বড় হয়ে ছোট বোনের প্রেম দেখতে পারো না!

সাব্বির বললো–,,চুপ থাক তো দেখতে দে ওই প্রফেসর শা’লা কানা কোন সময় না আমাদের জেরিন বইনকে ঠেলা মেরে ফেলে দেয়, রি”ক্স নেওয়া যাবে না বুঝলি!

ওদের পেছন থেকে কেউ এসে কথা বলতেই ওরা থতমত খেয়ে ফেললো।নয়ন নামক ছেলেটা মানে নিরবের ভাই।দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো–,,কি করছো তোমরা?

সাব্বির বলে উঠলো–,,বন্ধু! আয় আয় তোর ভাইকে পাহারা দিচ্ছিলাম আমরা,একটা মাত্ররো এন্টিক পিস কিনা!

–,,ব্যাটা তুই তো কোনো দিন বললি না জেরিন আপু তোর চাচাতো বোন!আমি ভেবেছি কিনা তোর জিএফ!

সাব্বির মুখ বাঁকিয়ে বললো-,,শা’লা তোর নষ্ট মাথায় যত সব নষ্ট চিন্তা,বন্ধুও তো চিন্তা করতে পারতি, ঘসেটিবেগম বেগম হবে কিনা আমার জিএফ!
নিখিল পেছন থেকে এসে বললো –,,নেহা নিচে আয় কথা আছে!

নেহা মাথা নাড়িয়ে বললো না যাবো না!

নিখিল দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,তুলে দিবো এক আছাড়!

নেহা সুরসুর করে নেমে গেলো।নিখিল নেহা যেতেই মিহির এসে বললো বৃষ্টি তোমাকে চাচী ডাকছে যাও!

বৃষ্টি ও নেমে গেলো পেছনে মিহির!
নয়ন দেখলো পর পর।সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে বললো–,,এটা কি হলো তুই আর আমি ছাড়া সবাই চলে গেলো?

সাব্বির বলে উঠলো–,,সিঙ্গেল তো তাই,একটা জুটিয়ে ফেল দেখবি তুই ও যেতে পারবি!
————
নেহা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে,নিখিল পকেটে হাত রেখে নেহার মুখোমুখি দাড়িয়ে

–,,এই তোর কি কথা কানে যায় না?নয়ন ছেলেটা কিভাবে তাকাচ্ছিলো আর তুই ঘুরে ফিরে ওর সামনে?

–,,আমি ইচ্ছে করে গিয়েছি নাকি?আমরা তো জেরিন আপুকে দেখতে গিয়েছিলাম!

–,,ওরা কথা বলছে আর তোরা আড়ি পাতছিলি?

–,,আপনার কি তাতে?শুনতে পারলাম কই টেনেটুনে নিয়ে আসলেন আপনি একটা করলা রস কষহীন মানুষ!

–,,কি কি আবার বল?আমার মতো একটা জামাই তোর চোখে পড়ে না নেহা?চুমুর অভাবে ভুগছে তোর জামাই আর তুই তাকে ছেড়ে অন্য কাজে ব্যস্ত?

–,,সারাদিন চুমু চুমু করেন কেনো এতো?অসভ্য লোক!
নিখিল নেহা কে এক টানে কোলে উঠিয়ে ফেলে।নেহা চেঁচিয়ে উঠে বলে–,,এই এই এখন যদি পড়ে যেতাম!

—,,বউজান!পাখি আমার না এখন প্রেম প্রেম পাচ্ছে!

–,,মাথা খারা’প বাড়িতে কতো মানুষ যে কোনো মুহুর্তে আমাদের ডাকবে আর আপনার এই সন্ধ্যা বেলা প্রেম প্রেম পাচ্ছে।যা তা ইচ্ছে!

—,,একটা চুমু জান প্লিজ প্লিজ!

–,, না মানে না!
নেহার বারণ আবার শুনবে নিখিল,এ যেনো কোনো দিন হওয়ার নয়।টানা দশ মিনিট নেহার ঠোঁটে আধিপত্য চালিয়ে ছেড়েছে নিখিল!
নেহা যাওয়ার আগে নিখিলের চুল টেনে এলোমেলো করে দিয়ে দৌড় লাগিয়েছে। নিখিল বলে উঠলো–,,রাতে তো আবার আসবি আমার কাছে তখন এর শোধ তুলবো আমি!
———
বৃষ্টি, সাব্বির, জেরিন সিঁড়ির পাশে এক কোনায় বসে।
বড়দের মাঝে এতোক্ষণ সলাপরামর্শ চললো।সবার মুখ হাসিখুশি!মিষ্টি খাওয়া দেখেই বুঝলো ওদের কপালে কানা দুলাভাই ফিক্সড হলো!

জেরিনের মতামত নিতে গিয়েছিলো তিন মা!জেরিন বলেছে তোমাদের ইচ্ছেই আমার ইচ্ছে, নিজের কোনো পছন্দ নেই!
সাহারা বললো–,,নিরব কে কেমন লাগে মা?পছন্দ হয়েছে?শুনলাম তোদের ভার্সিটির প্রেফেসর তোকে আগে থেকে পছন্দ করতো?

জেরিন লজ্জায় আড়ষ্ট হচ্ছে,নিরব কে খারাপ লাগে এমন তো নয়।কি করে মিথ্যা বলবে ছেলেটার মাঝে খারাপ কিছু তো চোখে পড়লো না!

জেরিন মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই তিন জা তে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।
জেরিন কে আবার নিচে নিয়ে আসা হলো রাতের খাবারের আগে আংটি বদল হবে!

জেরিন নিরব পাশাপাশি বসেছে,এদিকে জহুরি চোখে তাকিয়ে চার ভাই বোন।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে নিরব কে।রৌফ বললো–,,দুলাভাই কে কিন্তু আমার বেশ মনে ধরেছে!

সাব্বির ভোঁতা মুখে বললো–,,কানার তো কানাকে মনে ধরবেই!
নেহা বলে উঠলো–,,তোমরা দূরে গিয়ে ঝ’গড়া করো মনোযোগ দিয়ে দেখতে দাও তো ভাই!

জেরিনের হাতে নিরব জ্বল মলে আংটি টা পড়িয়ে দিলো!জেরিন ও পড়ালো নিরবের হাতে এভাবে সম্পন্ন হলো তাদের বিয়ের পাকা কথা বলা বলি!মাস খানেক পরই বিয়ে।
খাবার টেবিলে মেহমান সহ পরিবারের সবাই জমজমাট হয়ে উঠলো সব কিছু।

এদিকে জেরিন কে চেপে ধরেছে সব গুলোতে!
সাব্বির বলে উঠলো–,,এই তোরা সাক্ষী না বল ঘসেটিবেগম ওইদিন বললো–,,বিয়ে করবেই না, বাপুরে বাপু আজ দেখো লজ্জায় চিত পটাং হয়ে যাচ্ছিলো! যাক এবার শান্তি, তুই গেলে আমার পথ ক্লিয়ার।এই নেহা বৃষ্টি তোদের কোনো বান্ধবী থাকলে নাম্বার দে প্রেম একটা আমার ও করতে হবে!
চলবে?

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৩০
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
মিহির তুই কি আমার কথা কানে তুলবি না?আর কতোদিন এরিয়ে চলবি আমাকে?আমি আমার ভুল মেনেছি বললাম তো বৃষ্টির সাথেই তোর বিয়ের কথা বলবো শাহআলম ভাইয়ের সাথে তোর বাবা আর আমি যাবো!তুই এবার জে’দ কমা বাপ।

মিহিরের বাবা সফিক সাহেব চুপচাপ দাঁড়িয়ে বউ ছেলের এই কাহিনি তিনি গত কয়েকদিন ধরে দেখছেন।তাকে তো কেউ পাত্তাই দেয় না বাড়িতে।এদিকে বউ যেমন হয়েছে ছেলেটাও তেমন ঘাড়ত্যাড়া, তিনি হতাশা মিশ্রিত শ্বাস ছাড়লেন।

মিহির মুখ ঘুরিয়ে বললো–,,যতদিন বিয়ে না দিচ্ছো ততোদিন তোমাকে বিশ্বাস করবো না আমি।বিয়ে করেই এই অনশন থামাবো আমি!

শেফালী বেগম রেগে এসে মিহিরের হাত চেপে ধরলো

–,,চল আজই তোর বিয়ে দিয়ে থামবো আমি।দেখি তোর জে’দ বেশি নাকি আমার!

সফিক সাহেবের মুখ হা হয়ে গেলো,এতোদিন তো ছেলেটা বিয়ে বিয়ে করে মাথা খাচ্ছি’লো এখন তার গিন্নি টাও বেকেছে, আজ যে কি হবে!

মিহিরের মুখে রাজ্য জয়ের হাসি তবে তা চেপে রেখেছে।শেফালী বেগম রেগেছে মানে তার বিয়ে হবেই!অসহায় সফিক সাহেব ছুটলেন ছেলে আর স্ত্রীর পেছনে।

সকাল সকাল হন্তদন্ত হয়ে শেফালী বেগম মিহিরের হাত ধরে ঢুকতে দেখে পর পর সবাই সদর দরজায় তাকায় পেছনে সফিক রহমান।ভদ্রলোক কাজের মানুষ কাজ ছাড়া কিছুই যেনো বুঝে না,সময় হয়েই উঠে না প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলার এই মাঝেমধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হয়!আজ তাকেও আসতে দেখে সবাই অবাক হয়।
অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি সবাই সোফায় বসে শাহআলম চৌধুরী, মাহফুজ চৌধুরী, শহিদুল চৌধুরী।

টেবিলে খাবার খাওয়ায় মনোযোগী বৃষ্টি, রৌফ,সেতারা বেগম,নেহা,সাব্বির!
নিখিল নামছিলো সিঁড়ি বেয়ে।ভাজির বাটি এনে টেবিলে রাখলো তাহমিদা।মিহিরের মা ভিতরে ঢুকেই বললো

–,,ভাই সকাল সকাল না এসে আর উপায় ছিলো না!

শেফালী বেগমের কথা শেষ হওয়ার আগেই সফিক রহমান এসে সোফায় বসে পড়লো। মাথায় হাত দিয়ে বললো–,,শহিদুল ভাই আমাকে তোদের বাসায় রেখে দে,এই মা ছেলের যন্ত্র”ণায় বাসায় থাকতে পারছি না আমি!
শাহআলম চৌধুরী বললো–,,কি হয়েছে সফিক খুলে বলো!

সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে এদিকে তাকিয়ে, রান্না ঘর থেকে বের হলেন হামিদা বেগম,পেছনে সাহারা।

সবার কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে।শেফালী বেগম রেগে বলেন–,,আমার দোষ টা কোথায়?তোমার ছেলে যে নির্লজ্জের মতো বিয়ে করবো বিয়ে করবো করছে তার বেলা?সব দোষ নন্দ ঘোষ!

মাহফুজ চৌধুরী বলে উঠলো–,,বিয়ের বয়স হয়েছে ছেলের একটা বিয়ে করিয়ে দেন ভাবী!

–,,তার জন্যই এসেছি ভাই!আমার সুপুত্রের পছন্দের মেয়ে তো আপনাদের বাড়িতেই আছে।যাকে বিয়ে করবে বলে আমার ছেলে খাওয়া নাওয়া বাদ দিয়ে আমার বিরু”দ্ধে বিক্ষো’ভ জারি করেছে!

ভ্রু কুঁচকে তাকালো তিন ভাই।নিখিল এসে সোফায় বসতে বসতে বললো–,,অবশেষে তুই বিয়ে করতে আসতে পারলি!

সাব্বির তো খাবার টেবিলে বৃষ্টির দিক তাকিয়ে বললো–,,আজকে মনে হয় দুপুরে জমপেশ খাবার দাবারের আয়োজন হবে!তোর বিয়েটাও হচ্ছে,আহ্ জীবন আমি একাই সিঙ্গেল রয়ে গেলাম।

বৃষ্টি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।

নিখিলের দিকে তাকিয়ে আছে তার বাবা চাচারা।
শাহআলম চৌধুরী বলে উঠলো–,,তুই জানতি নাকি?আমাদের বাড়িতে কোন মেয়ে আছে যাকে মিহিরের পছন্দ!

নিখিল গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো–,,তোমার মেয়ে!

হামিদা বেগম,তাহমিদা,সাহারা টেবিলের কোনে দাড়িয়ে শুধু দেখছেন।তিন জায়ের মুখে হাসি।এবার কর্তাদের ভাবভঙ্গি দেখার পালা!

—,,আমার মেয়ে মানে তো বৃষ্টি!জেরিনের তো চার দিন আগেই বিয়ে ঠিক হলো।

মিহির পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।আজ তার কিছু বলার নেই শুধু কবুল ছাড়া!

শাহআলম চৌধুরী সহ বাকি দুই ভাই কি বলবেন বুঝতে পারলো না।
সেতারা বেগম এসে বসলেন সোফায়।তিনি বলে উঠলেন–,,আমার নাতনিরে তোর কাছে কেন বিয়া দিমুরে ছোকরা?কি আছে তোর আমার নাতিরে দেওয়ার মতো?

–,,এক বুক পরিমাণ ভালোবাসা দাদী!

বৃষ্টি বেচারি খুক খুক করে কেশে উঠলো।নেহা পানি এগিয়ে দিলো তাকে।জেরিনের ফোন বেজে উঠলো এর মধ্যে।যা দেখে বিরক্তি নিয়ে তাকালো নেহা, বৃষ্টি। সাব্বির বরাবরের মতোই স্বাভাবিক। জেরিন খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়লো এটা যেনো এখন রোজকার রুটিন হয়ে গেছে তার।

শেফালী বেগম রেগে মিহিরের কান টেনে ধরে বললো–,,নির্লজ্জ দেখেছি তোর মতো দেখিনি।

–,,যাই বলো মা।আজ বিয়ে না করে যাবো না আমি!

শাহআলম চৌধুরী মুখ কঠিন করে বললো–,,বললেই বিয়ে হয়ে যায় নাকি?আমার মেয়ের মতামত জানতে হবে না আমার?

–,,আপনার মেয়ে আমাকে ভালোবাসে শ্বশুর আব্বা।বিশ্বাস না হলে এখানেই তো আছে জিজ্ঞেস করুন।

–,,তাই নাকি?যদি মিথ্যা হয় তো এখনই বের হবে বাড়ি থেকে!

–,,যদি রাজি হয় তো এখনই বিয়ে দিতে হবে!

কপালে ভাজ পড়লো শাহআলম চৌধুরীর তিনি নিজেও জানেন মিহির বৃষ্টির মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে তাই বলে কি হুট করে বিয়ে হয়?বড় মেয়েটার বিয়ে ঠিক হলো এর মধ্যে কি ভাবে ছোট মেয়ের বিয়ে দিবেন তিনি?আত্মীয় স্বজনদের বলার ও তো একটা ব্যপার আছে!

শহিদুল চৌধুরী হাসলেন মনে মনে। তারা বাপ ছেলে মিলে ওনাকেও এই পরিস্থিতিতে ফেলেছিলো এবার বুঝুক কেমন লাগে। এবার তো তিনি আ”গুনে ঘি ঢালবেনই !শহিদুল বলে উঠলো–,,সমস্যা কি?তা বৃষ্টি মা তুই মিহির কে পছন্দ করিস?বিয়ে করবি এখন?

বৃষ্টি লজ্জায় আশেপাশে তাকালো।হামিদা বেগম এসে পাশে দাঁড়ালো কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো–,,লজ্জা পাচ্ছিস কেনো?ভালোবাসা বা পছন্দ করাটা তো দোষের কিছু নেই।যা বলার সত্যি সত্যি বলে দে!

নেহা এক হাত ধরলো তার।

শাহআলম চৌধুরী ভাইয়ের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালেন।শহিদুল চৌধুরী ভাইয়ের চাহনি উপেক্ষা করে বললো–,,ভাইজান তোমার কি মিহির কে পছন্দ নয়?পাত্র হিসেবে কোন দিক দিয়ে খারাপ বলো?মেয়ে তো একদিন বিয়ে দিবেই আজ হোক বা কাল।তবে এখন হলে সমস্যা কোথায়?

শাহআলম চৌধুরী বলে উঠলো–,,তাই বলে এখন?মিহির আর বৃষ্টি দুজন দুজনকে পছন্দ করে এটা আমিও জানি।বিয়েতে কোনো অমত নেই আমার!

সফিক রহমান বলে উঠলো–,,তাহলে আর না করবেন না ভাই। এদের জ্বালা”য় বাড়িতে টিকতে পারছি না আমি।আমি শান্তি প্রিয় মানুষ।

শাহআলম বললেন–,,জেরিনের বিয়েটা আগে হোক পরে না হয়!

কথা কেঁড়ে নিয়ে শহিদুল চৌধুরী বলে উঠলো–,, কি বলছেন ভাইজান?নেহা আর নিখিলের বিয়েটা ও তো জানানো হয়নি কাউকে।নিখিল,আর মিহিরের বিয়ে পরে একসাথে দিয়ে দিবো, একবারে রিসিপশন টা ও হয়ে যাবে। জেরিনের বিয়েতে ও সমস্যা হবে না।

নিখিল ঠোঁট কামড়ে হাসলো তার শ্বশুর ঠিক সুযোগ মতো ভাইকে প্যাঁচে ফেলে দিলো।
——–
শাহআলম চৌধুরী কে তখনই রাজি করানো হলো।সব যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো সবার!

বৃষ্টি কে শাড়ি পড়াতে নিয়ে গেলো বৃষ্টি সাহারা বেগম সাথে জেরিন।মিহির পারলে এক কাপড়েই বিয়ে সারতো!

জেরিনের ফোন আবার বেজে উঠায় নেহা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,উফ জেরিন আপু নিরব ভাইয়ার কি কোনো কাজ নেই?সারাদিন এতো কি কথা বলো বুঝি না তোমার বোনের বিয়ে বলে দিলেই পারো!

জেরিন বলে উঠলো–,,তুই বুঝবি না।কথা বলে আসি আমি।
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,আপু তখনও তুমি ছিলে না এখনও থাকবে না?বিয়ে করছো দেখে কি ভাই বোন সবাইকে ভুলে যাবে?

জেরিন যেনো শুনেও শুনলো না।মেয়েটা চারদিনেই কেমন বদলে গেছে, সারাদিন শুধু নিরব আর নিরব করে!

কাজি সাহেব কে ডাকা হলো।পরিবারের সবাই বসার ঘরে উপস্থিত। বৃষ্টি কে নিয়ে আসলো নেহা এনে মিহিরের পাশে বসালো বৃষ্টি লজ্জায় চোখ তুলেও তাকাচ্ছে না।

বিয়ে পড়ানো শুরু করলো কাজি সাহেব।তিন কবুল বলে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো বৃষ্টি, মিহির!

নাটকীয় ভঙ্গিমায় শেষ হলো এক অদ্ভুত বিয়ে!

খুশিতে চোখ ভিজে উঠলো হামিদা বেগমের।অবশেষে মেয়েটা সুখি হবে, মিহির যে বৃষ্টি কে ভালো রাখবে তা সবারই জানা।জেরিন টা ভালো থাকলেই তিনি যেনো দায় মুক্ত হবেন!সন্তানদের সুখই যেনো সব বাবা মায়ের একমাত্র আশা।

আজ আর কাজে যাওয়া হলো না কারো।দুপুরে খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই।হাসি আড্ডায় কেটে যাচ্ছে যেনো সময়, যদি সময় টা এখানেই থমকে যেতো, তবে কতোই না ভালো হতো।
————
মিহির বৃষ্টি দাড়িয়ে আছে পাশাপাশি, বৃষ্টির রুমের বারান্দায়, আজ হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নামলো ধরনীর বুকে।
শীতলতায় সিক্ত হলো পরিবেশ।পূর্ণতা পেলো ভালোবাসা, এক নতুন শুরুয় যেনো প্রশান্তিতে পূর্ণ হলো দুটি মন দুটি স্বত্তা!

বারান্দার গ্রিল বেধ করে ফোঁটা ফোঁটা মুক্তোর দানার মতো জল এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে বারান্দায় অবস্থানরত এক নব দম্পতিকে।

রাতের আকাশে আজ তিমিরে ডাকা মেঘ।মিহির, বৃষ্টি দুজনই নিশ্চুপ যেনো আজ তাদের কথারা কোথাও ছুটে পালিয়েছে!

মিহির হঠাৎ এসে বৃষ্টির হাত টেনে ধরলো বৃষ্টি এখনো যেনো লজ্জায় চোখ মেলে তাকাতে পারছে না!মিহির কে দেখে আজ এতো লজ্জা কেনো লাগছে তার?

–,,তাকাও আমার দিকে দেখো তোমার স্বামী রূপী মিহির কে, আজ তোমার প্রেমিক নয় প্রেয়সী তোমার স্বামী তোমার সামনে দাঁড়িয়ে!

বৃষ্টির হার্টবিট যেনো ক্রমশ বাড়ছে।এলোমেলো অজানা অনুভূতিতে নেচে উঠছে মন!

মিহির বৃষ্টির কপালে দীর্ঘ চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরলো, কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো–,,অবশেষে তুমি আমার মেঘবালিকা!পুরোটাই আমার শুধুই মিহিরের, আজ আমি কতোটা খুশি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না!

কথা বলবে না আমার সাথে?

–,,ভালোবাসি মিহির, তোমাকে ভীষণ বেশি ভালোবাসি!

–,,হবে কি আমার সম্পূর্ণ ভাবে?পুরোপুরি আমার হবে বৃষ্টি?হবে মিহিরের অর্ধাঙ্গিনি!

বৃষ্টি যেনো লজ্জায় আরো আড়ষ্ট হলো মিহিরকে জড়িয়ে ধরেই বুকে মাথাটা আরো কিছুটা জড়িয়ে নিলো!

মিহির বলে উঠলো–,,বাবাহ্ কি লজ্জা আমার জানপাখিটার!পেয়ে কি গেছি আমি আমার অনুমতি?

বৃষ্টি মুখ উঠিয়ে এবার বললো–,,উফ!মিহির তুমি কি শুরু করেছো আজ?পর পর শুধু লজ্জায় ফেলছো আমায়!

মিহির দুকদম এগিয়ে এসে বললো–,,তাই আমি লজ্জায় ফেলছি?তবে চলো এখনই সব লজ্জা যত্ন সহকারে আদরে আদরে ভুলিয়ে দেই!দেখবে সব লজ্জা পালিয়ে যাবে আমার ভালোবাসার ছোঁয়ায়।

বৃষ্টি অন্য দিক মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াতেই মিহির বৃষ্টি কে কোলে তুলে নিলো।বৃষ্টি লজ্জায় মুখ লুকালো মিহিরের বুকে!

–,,আকাশের বৃষ্টিতে মন ভিজছে না জান। আমার যে আমার ব্যক্তিগত মেঘ কে লাগবে জান! যার প্রেম বারিধারায় ভিজবে আমার মন মরুভূমি।

মিহিরের বুকে আলতো চাপড় দিয়ে বৃষ্টি বললো–,,ধুর মিহির চুপ করো!

মিহির কন্ঠে আদর মিশিয়ে বললো–,,লাভ ইউ জান!
————-
ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি,নেহা,সাব্বির এখন পড়ন্ত বিকেল।

হঠাৎ বিয়ে হওয়ায় মিহির অফিসে বৃষ্টি বৃষ্টিদের বাড়িতে, এতে অবশ্য মিহিরের কোনো সমস্যা নেই,তার বিয়ে হয়েছে এতটুকুতেই সে মহা খুশি।বউ এবার শ্বশুর বাড়িতে রেখে দিলেও সে বিরো”ধীতা করবে না!

নেহা মুখ ছোট করে বলে উঠলো–,,তোমরা কি কিছু বলবে না?জেরিন আপুর তো আমাদের জন্য সময়ই হচ্ছে না।বুঝি না ভাই বিয়ে তো আমিও করেছি কই সবাই কে তো ভুলে যাইনি!বৃষ্টি ও তো এতোদিন মিহির ভাইয়ের সাথে কথা বলতো কই বৃষ্টি তো আমাদের ভুলে যায়নি!আর সাব্বির ভাইয়া তুমি কিভাবে এতো শান্ত হয়ে গেলে বলোতো?

আমরা কতোদিন আড্ডা দেই না।আপু ভার্সিটি তে যায় আসার পর এক মিনিট ও আমাদের কাছে আসে না, মনে হচ্ছে নিরব ভাইয়া চায়ই না আমাদের সাথে জেরিন আপু মিশুক কথা বলুক,বিয়ে ঠিক হতে না হতেই কেমন পর করে দিলো আমাদের বিয়ের পর তো চিনবেই না!

অভিমানে টইটম্বুর হলো নেহার মন।বৃষ্টির মন ও খারাপ বিয়ের সময় ও তার বড় বোন তাকে ছেড়ে নিরব নামক মানুষটার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত ছিলো!কি অদ্ভুত না তাদের সম্পর্কের সমীকরণ একটা নতুন মানুষের আগমণে এভাবে বদলে গেলো?আসলে জেরিনই চায় না তাদের সাথে মিশতে, নয়তো অন্য কেউ কখনো কাউকে এতোটা বদলে দিতে পারে না।

নেহা আবার বললো–,,তোমার তো বেশি কষ্ট পাওয়ার কথা সাব্বির ভাইয়া!

সাব্বির এবার মুখ খুললো–,,কেনো কষ্ট পেতে যাবো?

–,,তুমি আর আপু ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছে।তোমরা একে অপরের সবচেয়ে ভালো বন্ধু, তোমার সাথেই তো আপুর বন্ডিং সবচেয়ে ভালো ছিলো।হঠাৎ করে যদি ওই মানুষ টা তোমাকে এরিয়ে চলে তবে কি তোমার কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক না?

সাব্বির হেসে বললো–,,তোরা দুজন ছোট তো তাই মেনে নিতে পারছিস না।আরে বোকা বিয়ে হলে কি মেয়েরা বাড়িতে থাকবে নাকি?বিয়ের পর মেয়েদের স্বামীই তার সব কিছু হয়।শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে তো নিরবের সাথেই থাকবে,ওর সাথে সম্পর্ক যত ভালো হবে ততো ভালো!আর আমার খারাপ লাগবে কেনো?বন্ধুরা কি চিরকাল পাশে থাকে নাকি?বিয়ে হলে অন্যের বাড়িতে যাবে,সংসার সামলাবে এটাই তো নিয়ম, নতুন পরিবার সব কিছু মিলিয়ে সময় হয়ে উঠে কোথায় বল।

নেহা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,এসব লজিক দিবে না তুমি আমাকে ভাইয়া।বিয়ে তো আমিও করেছি কই নিখিল তো আমাতে তোমাদের থেকে দূরে সরায়নি। আর মা,মেজো মা,বড় মা কি তাদের পরিবার কে ভুলে গেছে রোজ বিকেলে দেখো না কতো কথা বলে ঘন্টার পর ঘন্টা!

এর মধ্যেই মিহিরের আগমন ঘটলো নেহা বলে উঠলো–,,মিহির ভাইয়া তুমি বলো তুমি কি বৃষ্টি কে আমাদের সাথে আর মিশতে দিবে না?আলাদা করে দিবে?এমন কোনো আইন জারি করবে যেখানে লিখা থাকবে বৃষ্টি তুমি শুধু আমার সাথে কথা বলবে,বাকি সবাই তোমার পর!

মিহির চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকালো–,,শালিকা চে’তে আছো কেনো?কি হয়েছে?

বৃষ্টি বললো আমি বলছি দাঁড়াও—,,,ওইদিন আমরা বাসা থেকে বের হয়েছিলাম প্রতিদিন তো সাব্বির ভাইয়া আর আপু এক সাথেই ভার্সিটি যায় হয় গাড়িতে নয়তো রিকশায়।
ওইদিন নিরব ভাইয়া আসে আপুকে নিতে, এতেও আমাদের কারোর সমস্যা ছিলো না।কিন্তু কি করলো আপু একবার বললো ও না আমাদের কেমন মুখের উপর অপমান করে চলে গেলো।এবার সারাদিন ফোন কথা বলে তাতেও সমস্যা নেই তাই বলে কি পরিবার ভুলে যাবে নাকি?আমাদের বিয়ের দিন ও আপু নিরব কে নিয়ে ব্যস্ত ছিলো।বড় বোন হিসেবে কি উচিত ছিলো না আমার পাশে থাকার?

তার উপর নিরব ভাইয়ার কথায় সাব্বির ভাইয়া কে ইগনোর করছে আপু,বুঝলাম বিয়ে করবে তাই বলে কি এতোদিনের ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করে দিবে কোনো মানুষের এক কথায়!
বিশ্বাস ভালো অন্ধ বিশ্বাস মোটেও ভালো না!

মিহির মনোযোগ সহকারে সব শুনলো।সাব্বির বলে উঠলো –,,মিহির ভাইয়া তুমি এদের কথায় কান দিয়ো না তো।জেরিন এখন একটু ব্যস্ত নতুন নতুন সম্পর্ক এখন একটু প্রেম করবে না তো কবে করবে বলো।আর এতোদিন আমাদের সাথে ছিলো হঠাৎ করে পরিবর্তন এই দুই গা”ধী মেনে নিতে পারছে না!

মিহির শ্বাস ছেড়ে বললো–,, বুঝলাম! এখন শোন তোরা ও তো জেরিনের সাথে গিয়ে কথা বলছিস না।তোরা গিয়ে ওকে চেপে ধর তাহলেই তো হয়।বিয়ের আগেই কিন্তু পাবি এখনই কথা বলে নে পরের বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে পরে কিন্তু আফসোস করতে হবে!

ঠিক আছে আজ রাতেই আমরা আপু কে চেপে ধরছি, নিরব ভাইয়াকে ও একটা শা’স্তি দিতে হবে!

সাব্বির বলে উঠলো–,,তোদের কি আমাকে চোখে পড়ে না আড্ডা দেওয়ার জন্য, ওই ঘসেটিবেগম কে খুঁজিস কেন ওটা কে চশমাওয়ালা কে দান করে দিয়েছি আমরা!
ওর সময় হলে আসবে না হয় আমরাই আড্ডা দিবো, আর তোরা এখন পড়া বাদ দিয়ে ঘুরছিস কেনো?আমি ভাইয়ার কাছে বিচার লাগাবো তোদের নামে!

নেহা বলে উঠলো–,,তুমি তো মিরজাফর গীরি করছো তার বেলা।হুহ্! কেউ পছন্দ করো না আমাদের থাকো তোমরা চলে যাচ্ছি আমি।

সাব্বির বললো–,,রাগ করিস না নেহা বইন তোকে আটানা দামের লজেন্স দিবো!
—————
জেরিনের রুমে রাতে খাবার খাওয়ার পরই হাম’লা চালিয়েছে নেহা,বৃষ্টি, সাব্বির আর রৌফ।

বৃষ্টি গিয়ে পাশে বসে বললো–,,এই যে মহারানী আপনার রাজ্য চালানো শেষ হলে আমাদের সাথে কি একটু কথা বলার সময় হবে?নাকি শুধু হবু দুলাভাই কে নিয়েই থাকবেন?

জেরিন বললো–,,তা কখন বললাম?

–,,কাজ তো তেমনই করছো তুমি।এই তো আবার ফোনটা বেজে উঠলো বলে!

কথা টা বলা শেষ হতে না হতেই নিরবের নামটা স্ক্রিনে ভেসে উঠলো।

সাব্বির বলে উঠলো–,,তুই কি রসকষহীন রে জেরিন বইন, নিক নেইমটা ও ঠিক ঠাক দিতে পারলি না।কানা দিতি সেই হইতো!

জেরিন চোখ পাকিয়ে তাকালো –,,কানা হতে যাবে কেনো?মাথা ব্যাথা তাই চশমা পড়ে।

–,,ওরে আল্লাহ মাথায় ও সমস্যা? তাই তো বলি শিক্ষক কেমনে হইলো!পাবনার টিকিট তো এখন দুইটা কাটতে হবে তোদের বাচ্চা হলে তখন তো আরো বাড়বে!

জেরিন ফোনটা ধরার আগেই খপ করে তা নিয়ে নিলো নেহা।

বৃষ্টি বলে উঠলো–,,তুমি একা কেনো কথা বলবে আমরা তো শালিকা আমাদের ও একটু কথা বলার সুযোগ দাও!

ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিলো নেহা।সাব্বির, বৃষ্টি, রৌফ কান পাতলো।
জেরিন বলছে ফোন দে আমার কাছে উল্টো পাল্টা কিছু বলবি না!

সাব্বির সুর তুললো–,,ওরে কি প্রেম কি প্রেম!দুইদিনের বৈরাগী ভাতে রে কয় অন্ন!চুপ থাক ছেম’রি আগে আমরা দেখি দুলাভাই দশে কতো পেলো, সে পর্যন্ত তুই কোনায় গিয়ে বস!

নেহা বললো–,,তা দুলাভাই কি সব কাজ ছেড়ে আমার বোনের পিছনে পড়েছেন নাকি?পরে দেখা যাবে চাকরি হাওয়া হয়ে যাবে পরে আমার বোনকে চালাবেন কি করে?

–,,কাজ করে কি হবে আর শালিকা তোমার বোন কে পটাতেই তো মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে!

বৃষ্টি বলে উঠলো–,,তাই বুঝি না পটাতেই রাত দিন সকাল বিকাল কথা বলছেন?না জানি পটাতে পারলে কি করেন!সেসব দেখার জন্য আদো বেঁচে থাকবো তো?

সাব্বির বলে উঠলো–,,প্রফেসর তো না হওয়া বউ কে চোখে হারাচ্ছে।আমার ভাই বিয়ে করা বউকেও এতো চোখে হারায় না!ভাগ্য ভালো বোন আমি সিঙ্গেল।

তা দুলাভাই পটানোর লিস্টে কি আমাদের জেরিন একাই নাকি?লিস্ট অনেক লম্বা?

নেহা বললো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ এসব চশমা ওলা লোকেরা দেখতে সাধু, কিন্তু আসলে এরা গভীর জলের মাছ।একজন তো না এদের ডজন খানা প্রেমিকা থাকে!
কিরে বৃষ্টি ঠিক বলছি তো নাকি?আমাদের স্কুলের এক টিচার কিন্তু এরকম ছিলো!তা দুলাভাই দেখতে শুনতে তো মাশাআল্লাহ অন্য কোথাও চক্ক”র টক্ক”র আছে নাকি?

আমরা কিন্তু মোটেও সহজ সরল শালিকা না,গোয়েন্দা হতে বেশি সময় নিবো না!

ওপাশ থেকে কোনো কথা আসলো না।উল্টো জেরিন রেগে গেলো,এসেই ফোন টেনে নিয়ে বললো–,,তোরা যেমন ফালতু চিন্তা ভাবনাও ফালতু!কার সাথে কাকে তুলনা দিচ্ছিস?কোথায় নিরব কোথায় তোদের সে টিচার।মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়ে তুই এতো নাক গলাস কেনো নেহা?তোর মতো তো আর সবাই উড়নচণ্ডী স্বভাবের না! আমার ফোন ধরবি না আর। নিরব ঠিকই বলে তোদের থেকে দূরে থাকাই ভালো, তোদের মাথা ভর্তি শুধু ব’দ বুদ্ধি!

অবাক হয়ে তাকালো ওরা চারজন রৌফ তো ভুত দেখার মতো চমকালো জেরিন আপু এরকম ভাবে কথা বলছে কেনো?সাব্বির যেনো চেনা পরিচিত জেরিন কে আজ চিনতে পারলো না এ মেয়েটা বড্ড অচেনা!

নেহা অবাক নেত্রে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ ছোট করে বললো–,,স্যরি আর এমন ভুল হবে না!

বলেই নেহা এক ছুটে বেরিয়ে গেলো।বাহিরেই দাঁড়িয়ে ছিলো নিখিল,নেহা যেনো নিখিল কে দেখলোই না মেয়েটা প্রাণ পণে ছুটতে ব্যস্ত!

বৃষ্টি বলে উঠলো–,,আমরা শুধু একটু মজা করছিলাম আপু,নেহা একা না তুমি ওকে এভাবে বলতে পারলে?

জেরিন করুন চোখে তাকালো –,,আসলে আমি ওভাবে বলতে চাইনি!

সাব্বির বলে উঠলো–,,নিরব স্যার বলেছে আমাদের থেকে দূরে থাকতে?তুই নিজেও কি তাই চাস জেরিন?নিজেকে প্রশ্ন কর ভুলে যাবি না দিন শেষে পরিবারই পাশে থাকে।মরিচীকার পেছনে এতোটাও ছুটিস না যাতে পরে আর ফেরার পথই না থাকে!
আমি অন্তত এর পর থেকে তোর বিষয়ে কোনো কথা বলতে আসবো না।তুই কয়েকদিনেই ভুলে গেছিস নেহা তোকে কতোটা ভালোবাসে, ও আমাদের সবার আদরের নেহা কতো দ্রুত অভিমান করে নিশ্চই তোর অজানা নয়!নিজের মতো থাকতে চাওয়াটা দোষের না আমরা আর তোকে বিরক্ত করবো না!

বৃষ্টি বললো–,,তুমি বললে নিরব ভাইয়ার কাছে মাফ চেয়ে নিবো আমরা।বিরক্ত করার জন্য স্যরি।

বলেই তিন জন বেরিয়ে গেলো।জেরিন ধ’প করে বিছানায় বসে পড়লো।কি করে ফেললো এটা!
———–
এতোক্ষণ ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভাই বোনদের সম্পর্কে ফাটল ধরা খুব উপভোগ করলো একজন

বি’কট হাসি দিয়ে বলে উঠলো–,,চৌধুরী পরিবার কে ঠিক এভাবেই ধ্বং”স করবো আমি।এদের সব হাসি কেঁড়ে নিবো!এমন জায়গায় এনে দাঁড় করাবো যেখানে থাকবে শুধু হাহাকার।
যেভাবে আমার মা, আমার শান্তি,আমার ছোটবেলা আমার সুখ শান্তি কেঁড়ে নিয়েছে ওই শাহআলম চৌধুরী ঠিক সেভাবেই তার মেয়ের শান্তি কেঁড়ে নিবো আমি!

যুবকটির বিপরীতে বসে অন্য একজন মনে মনে বলে উঠলো–,,তুই আমার হাতের গড়ে তোলা এক কাঠ পুঁতল তোকে যেভাবে নাচাবো তুই সেভাবে নাচতেই বাঁধ্য ঘূনাক্ষরেও টের পাবি না তুই নিজের হাতে নিজের পরিবার কে ধ্বং”স করার খেলায় মেতেছিস!
——
নেহা বিছানায় গিয়েই ধ’প করে শুয়ে পড়লো।কাঁথা মুড়ি দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো এর মধ্যেই নিখিল রুমে আসলো।

দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে বসলো নেহার মুখের দিকটায় টেনে সরাতে চাইলো কাঁথা কিন্তু কাজ হলো না।নিখিল লাইট অফ করে নেহার পাশে শুয়ে পড়লো বালিশে হেলান দিয়ে কাঁথার ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে নেহাকে টেনে বের করলো!

কন্ঠে আদর মিশিয়ে ডাকলো–,,কি হয়েছে পাখি মন খারাপ?আমাকে বলো জান কি হয়েছে?কার কথায় এতো কষ্ট লাগলো!

নেহা নিখিলের বুকে গিয়ে পড়লো,জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো এবার।থামার নাম নেই,নেহা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে জেরিন বড় বোনের মতো ভালোবাসতো তাকে কোনো দিন একটা টোকা ও দেয়নি আজ এতো রেগে কথা বললো।

নিখিল নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো, চুমু দিয়ে বললো–,,এভাবে কাঁদছিস কেনো?তোকে কাঁদতে দেখলে তো আমার কষ্ট হয় জান।আর কাঁদবি না বলছি আমি।
জেরিন কে আমি বকা দিয়ে দিবো।
নেহা কান্নাভেজা কন্ঠে বললো–,,না!আপু কষ্ট পাবে।

–,,আচ্ছা!তো কি করতে হবে এখন মহারানীর মন ভালো করতে?জান অন্য কিছু আশা করিস না তোর জামাই ভালোবাসা ছাড়া কিন্তু কিছু দিতে পারে না!

নেহা নিখিলের কাছ থেকে দূরে গিয়ে বসলো মুখ ঘুরিয়ে বললো–, আপনি একটা খারা’প লোক!

নিখিল এগিয়ে এসে বললো–,,তা তো জানি মিসেস চৌধুরী!
নেহাকে সুরসুরি দেওয়া শুরু করলো নিখিল।নেহা হো হো করে হেসে উঠলো। হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করছে আর বলছে–,, থামুন বলছি। না হয় আমি আপনাকে কাম’রে দিবো!

নিখিল বলে উঠলো–,,তোর দাঁত ভেঙ্গে যাবে, এসব নরম দাঁত দিয়ে কাউকে কাম’রানোর আশা বাদ দে তো!

নেহা নাকের ডগায় রাগ নিয়ে গিয়ে বললো–,,থাকবো না আমি আপনার সাথে, গেলাম!

,,,বউ জান আমাকে রেখে যেও না!
নিখিল নেহা কে টেনে কোমর জড়িয়ে বসালো কোলে।

–,,রেগে টমেটো হয়ে যাস কেনো কথায় কথায়।এবার হাসি দে তো হাসি দে, বউয়ের এমন কার্টুন মার্কা মুখ দেখতে চাই না আমি!

–,,কি আমি কার্টুন?
নেহা নিখিল কে এলোপাতাড়ি মার’তে লাগলো এক পর্যায়ে চিৎপটাং হয়ে পড়ে গেলো বিছানায়।এবার দুজনই একসাথে হেসে উঠলো, চারদেয়ালে জমা হলো তাদের সুখের আরেকটুকরো সময়,সুন্দর স্মৃতির আরো একটা পাতা মুড়িয়ে রচিত হলো ভালোবাসার এক টুকরো মুহুর্ত!
চলবে,,,,,,,