প্রণয়ের সুর পর্ব-৩৫

0
21

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৩৫
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সাব্বির বাড়ি ফিরেনি,কোথায় গিয়েছে সেটাও কেউ জেরিন কে বলছে না।জেরিনের মনটা ভীষণ রকম খা’রাপ,সাব্বির কে এতোগুলো কল করেছে কিন্তু ছেলেটা ভাব নিয়ে ফোন রিসিভ করলো না।মন খারা’প নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিলো তখনই শুনতে পেলো হামিদা বেগম সাহারা বেগম কে বলছে

–,,জেরিন কে বিয়ে করে অযথা মাঝখান থেকে সাব্বিরের জীবনটা ন’ষ্ট হলো রে সাহারা।ছেলেটা আমাদের কতো ভালো ও একটা ভালো মেয়েকেই তো জীবন সঙ্গী রূপে আশা করবে,আমরা ও করছিলাম।নিজের মেয়ে হোক জেরিন ও যদি অন্য কোথাও বিয়ে করতো জানি কোনো অভিযোগ আমরা পেতাম না।কিন্তু ওর ব্যবহার দেখছিস দিন দিন কেমন হচ্ছে সাব্বির কে একটু সম্মান পর্যন্ত করে না,ছেলেটা ওর মতো ওকে থাকতে দিয়েছে সব কিছু ওর মন মতো করার অধিকার দিয়েছে,নিজের কথা একবার ও ভাবলো না আর ও কি করলো স্বার্থপ’রের মতো ছেলেটা অপমান করে দিলো!জেরিনের ওইদিন বিয়ে না হলে আহামরি তো কিছু হতো না পরিবারের সম্মান সম্মান করে ওদের দুজনের জীবনই কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো!সাব্বির আর ওর ডিভোর্স হয়ে যাক দুজন নিজেদের মতো থাকুক তাও এভাবে একে অপরকে অপমান অপ’দস্ত না করুক!সাব্বিরের জন্য ভালো মেয়ে খুঁজে এনে দিবো আমি তোকে সাহারা!

জেরিন কথা গুলো শুনেই কেঁদে দিলো এমনিতেই মন খারাপ ছিলো তার উপর নিজের মায়ের কথা গুলো একদম সহ্য করতে পারলো না যেনো,দৌড়ে চলে গেলো নিজের রুমে!

হামিদা বেগমের কথা শুনে সাহারা হেসে বললো–,,আহা আপা তুমি কবে থেকে বাচ্চাদের কথা কানে নিচ্ছো বলো তো?ওই গা’ধা দুটোকে চিনো না তুমি, এই আবার দেখবে এদের মিলমিশ হয়ে যাবে,সাব্বিরের জন্য জেরিনের থেকে ভালো মেয়ে কোথায় পাবে বলো,আমার ছেলে যা তেঁদড় দেখতেই সহজ সরল সারাদিন কি মেয়েটাকে কম জ্বা’লায় বলো?এরকম করলে অন্য কেউ সহ্য করতে পারবে?দুইদিন না হতেই অন্য মেয়েরা পালাবে।এসব ডিভোর্সের কথা বলো না তো,দেখবে এবার এদের সম্পর্ক টা জোরা লাগবে,দুইটার মধ্যে এতো টান মায়া তবুও বুঝতে পারে না।সম্পর্কটা আসলে কেমন ওইটাই বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে এদের সময় দেও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে!
নেহা, বৃষ্টি কে দেখলাম কি জানি বলে সাব্বির কে কয়েকদিনের জন্য ট্যুরে পাঠিয়ে দিয়েছে, একটু দূরে থাকুক না দেখবে এই পা’গলের কেমন বেহাল দশা হয়।প্যাচে না পড়লে সোজা হওয়ার মানুষ নাকি?তুমি এতো কিছু ভেবো না তো সব ঠিক হয়ে যাবে।

হামিদা বেগম হতাশ শ্বাস ছেড়ে বললো–,,তাই যেনো হয়!

জেরিন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে সন্ধ্যায়।রাতের খাবার খেতে ডাকতে এসেছিলো নেহা।জেরিনের সারা শব্দ নেই আওয়াজ শুনে বৃষ্টি এসে বললো–,,কিরে আপু কি দরজা খুলছে না?

নেহা মাথা নেড়ে না বুঝালো।বৃষ্টি বলে উঠলো–,,যাক ডোজ কাজে দিয়েছে একটু কষ্ট পেতে দে, মর্ম বুঝতে না পারলে মানুষ হিরাকেও পায়ে ঠেলে!

নেহা বলে উঠলো
–,,ভাইয়া তো যেতেই চায় নি,কতো ছল করে পাঠাতে হলো,সে তো জেরিন বলতে অ’জ্ঞান জেরিন কে কষ্ট দিতে পারবে না,কিন্তু যখন জিজ্ঞেস করলাম জেরিন আপু কে ভালোবাসো?তখন বললো কি নাউজুবিল্লাহ নাউজুবিল্লাহ!এগুলো কেমন ন’ষ্ট কথাবার্তা নেহা বইন!বিরক্তিকর এরা কবে বুঝবে বলতো যে এরা দুজন দুজন কে ভালোবাসে।

–,,বুঝবে বুঝবে, কিন্তু স্বীকার করবে কিনা সন্দেহ ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না!

নেহা আবার বললো–,,তা যাই হোক ভাইয়া যদি জানে না জেরিন আপু কেঁদে কেটে নদী বানিয়ে ফেলেছে,দৌড়াতে দৌড়াতে চলে আসবে, ওফ আমার ভাইটা এতো নরম মনের হইলো কেমনে!আর তোর ভাইটা একটা দজ্জা’ল।

পেছন থেকে নিখিল বলে উঠলো–,,কি বললি তুই?আমি দজ্জা’ল?দজ্জা’লের মতো কি করেছি তোর সাথে?
বৃষ্টি মানে মানে কেটে পড়লো,নেহা আমতা আমতা করতে করতে বললো–,,ক…..ই কিছু নাতো!

নেহা পেছাতে পেছাতে দেয়ালের সাথে মিশে গেলো নিখিল গিয়ে দুহাত বুকে গুঁজে ওর সামনে দাড়ালো।নেহা ফিচলে হেসে বললো–,,বড় মা ডেকেছে তো আমাকে।

–,,তো যা আমি ধরে রেখেছি তোকে?

–,,সরুন!সামনে একটা বড় সড় খা”ম্বা দাঁড়িয়ে থাকলে যাবো কি করো?

নিখিল চোখ ছোট ছোট করে রয়েসয়ে বললো–,,আমি খাম্বা? কিন্তু আপনার তো আবার এই দজ্জা’ল খা’ম্বা কে ছাড়া চলে না মেডাম!

নেহা মিন মিন করে বললো–,,আপনাকে ছাড়াও চলে আমার!

নিখিল মুখটা গম্ভীর করে বললো–,,ঠিক আছে।দেখবো কতোদিন চলতে পারিস!

নিখিল দ্রুত পায়ে হেটে চলে গেলো।নেহা পেছনে গেলো খাবার টেবিলে বসলো, নিখিল গিয়ে এমন একটা চেয়ারে বসলো যার পাশে কোনো খালি নেই।নেহা দেখলো কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে,মজা করে একটা কথা ও বলা যায় না এই লোককে, ভাবে একদম মাটিতে পা পড়ছে না।নেহা চেয়ার টেনে শব্দ করে বসে পড়লো,খাওয়া শেষে নিখিল আগে আগে উঠে গেলো।নেহা গেলো আরো কিছুক্ষণ পর।

নেহা গিয়ে দেখলো নিখিল ভিতর থেকে দরজা লক করে দিয়েছে এবার রাগে নাক মুখ লাল হয়ে আসলো নেহার।দরজায় একটা ধাক্কা দিয়ে বললো–,,দরজা খুলুন বলছি,একদম ঢং করবেন না আমার সাথে!

নিখিল মনে হয় কানে তুলো দিয়েছে সে খুললো না।নেহাও দমে যাওয়ার পাত্রী নয় দরজার সামনে ঠেস দিয়ে মেজেতে বসে পড়লো।মোবাইল টাও ভিতরে, বসে বসে যে ফোন চালাবে তাও কোনো উপায় নেই!

দরজা ধাক্কা দেওয়া বন্ধ হওয়ায় নিখিলও কিছুটা অবাক হলো, ভাবলো চলে গেছে হয়তো যা ঘুম কাতুরে নিশ্চিত গিয়ে ঘুম দিবে।
নেহা একটু পর বললো–,,দরজা না খোলা পর্যন্ত কিন্তু আমি এখানেই বসে থাকবো বলে দিলাম।ঘুম পাচ্ছে আমার দরজাটা খুলুন পরে যত ইচ্ছে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকুন!

নিখিল কোনো জবাব দিলো না।নেহা দু হাঁটু ভাজ করে মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলো।রাত প্রায় একটা নিখিল ভেবেই নিয়েছে তার বউ নিজের ঘরে গিয়ে শান্তি তে ঘুম দিচ্ছে।দরজাটা টেনে খুলতেই কিছু একটা ধাপ করে পড়লো।নিখিল আবছা অন্ধকারে তাকিয়ে চমকে উঠলো নেহা দরজার সামনেই বসে ছিলো হয়তো চোখ লেগে গেছে,তাই দরজা খোলায় টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেছে!

নিখিল অস্ফুটস্বরে আর্ত”নাদ করে বললো–,,তুই এখনো এখানে বসে?কোথাও লাগেনি তো দেখি দেখা!

নেহা আচমকা প্রশ্ন করলো–,, এখন কয়টা বাজে?

–,,রাত একটা!

নেহা পড়ে যাওয়াতে কনুইতে একটু ব্যাথা পেয়েছে তবুও ওসব তোয়াক্কা না করে উঠে দাড়িয়ে বললো–,,আপনি তিন ঘন্টা আমাকে অপেক্ষা করিয়েছেন,এর শা’স্তি স্বরূপ আমি তিন দিন আপনার থেকে দূরে থাকবো,তখন দেখবো কার কাকে ছাড়া চলে না!
নেহা রাগে ফুঁসছে, গটগট করে হেঁটে নিজের রুমে চলে যাচ্ছে নেহা,নিখিল তব্দা খেয়ে গিয়েছিলো নেহার কথা শুনে।
যতক্ষণে হুঁশ ফিরলো দৌড় লাগালো নেহার পেছনে মৃদু সুরে বললো–,,বউ না ভালো আমার ভুল হয়ে গেছে জান।আর জীবনেও এই ভুল হবে না,আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না,আমি মানছি আমার তোকে ছাড়া চলে না,নেহা দরজা আটকে দিবে সেই মুহুর্তে নিখিল হাত দিয়ে দিলো দরজার ফাঁকে নেহা তার পর ও দরজা ঠাস করে লাগিয়ে দিলো, নিখিল আ…শব্দ করে উঠলো!
সাথে সাথে দরজা খুললো নেহা,নিখিল হাত চেপে ধরে দাড়িয়ে নেহা তাকে ভিতরে এনে বসালো কঠিন কন্ঠে বললো— হাত দেখি!

নিখিলের চোখ হাসছে,তার তো কিছু হয়নি নেহা কে দিয়ে দরজা খোলানোর জন্য এরকম টা করেছে!

নিখিল হাত বাড়িয়ে দিতেই নেহা রাগে চোখ গরম করে তাকালো।নিখিল নেহার রাগে কাঁপতে থাকা নাকের ডগায় টোকা মারলো,এতো আরো তেতে উঠলো নেহা।

নিখিল চট করে নেহার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো,পেটে মুখ গুঁজে দিয়ে নাক ঘষতে ঘষতে বললো– এভাবে রাগ করে চলে গেলে আমার কি হবে?তুমি ছাড়া আমি এক দন্ড ও চলতে পারি না তুমি জানো না।আমার তো ঘুম থেকে উঠে তোমাকে নিজের বুকে না দেখলে পাগ’ল পা’গল লাগে,রাতে তোমাকে বুকে না নিলে ঘুম হয় না আমার!

–,,তাই তো তখন ডাকার পরও দরজা খুলেননি!আপনার বুকে ঘুমাই তো তাই আপনি ইচ্ছে করে দূরে সরিয়ে দেন যাতে আমি কষ্ট পাই, ইচ্ছে করে দুর্বল জায়’গায় আঘা”ত করেন!

নিখিল দু হাতে নেহার কোমর জড়িয়ে ধরে, পেটের উপর একটা কাম’র বসিয়ে দেয়।নেহা ধাম করে একটা কি’ল বসায় নিখিলের পিঠের উপর।মুখে বলে–,,একটা নির্দ’য় অসভ্য লোক!

নিখিল পর পর কয়েকটা চুমু দেয়।নেহা ঠেলে সরাতে চায় নিখিল কে।নিখিল ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে –,,ঘুমাতে দে নেহা।

নেহা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,আর আমি কি করবো?

–,,স্বামী সেবা করো জান,মাথা টিপে দাও মাথায় হাত বুলিয়ে দাও!

–,,অসহ্য!

–,,কিছু করার নেই সহ্য করতে হবে আমৃত্যু!
———-
জেরিন বেচারি ভার্সিটি যাচ্ছে আর ফিরে আসছে,তিন বেলা খেয়ে রুমে বসে থাকছে,নেহা বৃষ্টি বাড়ির কারোর সাথেই কথা বলছে না।জেরিন সাব্বির কে ফোন দেওয়া বন্ধ করে একটা ছোট মেসেজ দিয়েছে শুধু
–,,সাব্বির শুধু একবার তুই সামনে আয় আমার,এমন মা’র মার’বো না পরে আর কোনো দিন দূরে যাওয়ার সাহস হবে না তোর!আমাকে ছেড়ে যাওয়ার শা’স্তি তোকে পেতেই হবে।

মেসেজ দেখে সাব্বির কতোক্ষণ হেসেছে,তার মানে মহারানী তার কথা একটু হলেও ভাবে।সাব্বির দূরে যাওয়ায় কষ্ট হয়!

জেরিনের রাত দিন যেনো কাটছে না,সাব্বিরের থেকে এই প্রথম তার এতোদিনের দূরত্ব ছোট থেকে আজ অব্দি বেড়াতে গেলেও একসাথে গিয়েছে।সারাদিন ঝগ’ড়া করেছে,কথা বলা বন্ধ করেছে, আবার মিলেও গেছে পরের দিন কিন্তু এখন?সময়টা বি’ষাক্ত লাগছে জেরিনের কাছে।দ’ম বন্ধ হয়ে আসছে যেনো,বাড়ির সবার মাঝেও নিজেকে চরম শূন্য মনে হচ্ছে।পুরো বাড়ি জুড়ে শুধু নিজের আর সাব্বিরের সব পুরনো স্মৃতি ভেসে বেড়াচ্ছে, এই তো সাব্বিরের সাথে তার খাবার টেবিলে খাবার নিয়ে ঝগ’ড়া,সোফায় বসা নিয়ে ঝ’গড়া।সবচেয়ে বেশি মিস করছে সাব্বিরের কোলে মাথা দিয়ে ঘুমানোটা।

ছেলেটা এই কয়েকটা মাসে যেনো আরো বেশি নিজের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে জেরিন কে।জেরিনের কি যেনো হয় কে জানে কোনো এক অদৃশ্য বাঁধনে এসে সাব্বিরের রুমে ঘুমাতো,ছেলেটার সাথে ঝ’গড়া না করলে ওকে না জ্বা’লাতে পারলে যেনো দিনটা কে দিনই মনে হতো না!
জেরিন প্রতিদিন কতোবার যে মনে মনে বলে সাব্বির চলে আয় প্লিজ,তোকে না দেখে থাকতে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ইয়ার!

কষ্টে বুকের ভেতরটা কেমন খাঁ খাঁ করছে।ছেলেটার কি একবারও মনে পড়ে না তার কথা?এতোটাই চোখের কা’টা হয়ে গিয়েছিলো?একটা কথার এতো বড় শা’স্তি দিচ্ছে তাকে!অভিমানে টইটম্বুর হলো মন অশ্রুতে ভিজলো চোখের কোন।
———-
জেরিনের এরকম চুপসে যাওয়াটা কারোই নজরে এরালো না,হামিদা বেগম কিছু বলতে গিয়েও বললো না।তবে মেয়ের ফোলা চোখ উদাসীন চাহনি তাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে,সাব্বির টা যে কবে আসবে কে জানে?

শহিদুল চৌধুরী হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো–,,জেরিন?তোর কি হয়েছে মা?এরকম মন মরা দেখাচ্ছে কেনো?সাব্বির কোথায়, না বলে কোথায় ঘুরতে গিয়েছে!

জেরিন যেনো কিছু শুনতেই পায়নি।আবার ডাকাতে জেরিন হকচকিয়ে তাকালো অস্পষ্ট সুরে বললো–,,জ্বী ছোট আব্বু!

–,,সাব্বির কোথায় তোকে বলে যায় নি?

জেরিন কি উত্তর দিবে বুঝে পেলো না
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো–,,না!

কারো বুঝতে বাকি রইলো না দুইটার মধ্যে কিছু একটা হয়েছে,তাই একজন এরকম মরা’র মতো হয়ে আছে আরেকজন লাপাত্তা!

সেতারা বেগম বললেন জেরিন বইন আমার ঘরে একটু আয় তো।জেরিনের খাওয়া শেষ সে হাত ধুয়ে পেছনে গেলো!

জেরিন গিয়ে খাটে বসে পড়লো সেতারা বেগম কাছে গিয়ে বসে মাথায় হাত রেখে বললো–,,ঝগ’ড়া করেছিস?

জেরিন সেতারা বেগম কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো, দরজার বাহিরেই দাড়িয়ে আছে হামিদা বেগম,সাথে নেহা বৃষ্টি!

জেরিন হেঁচকি তুলছে আর বলছে–,,তোমার নাতি কতো খারা’প দেখেছো দাদী একটা বার ফোনও রিসিভ করলো না।রাগ করে চলে গেছে,আমি কি এতোই খারা’প নাকি আমার সাথে থাকলে ওকে খে’য়ে ফেলতাম নাকি বলো!আমার কি কষ্ট হয় না নাকি?একা সব কষ্ট তো শুধু ওর।একবার আসুক দেখবে এর সাথে আমি আর জীবনেও কথা বলবো না।ওর উঁচু নাক নিয়ে বসে থাকুক!পনেরো দিন ধরে যখন আসেনি আর আসা লাগবে না।

সেতারা বেগম মুচকি হাসলেন,মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো–,,এতো মায়া মোহাব্বত হইলে ঝ’গড়া করিস কেনো?দূরে থাকতে যখন পারবি না তখন যাওয়ার কি দরকার!

–,,তোমার নাতি তো বেঁচে গেছে দূরে গিয়ে ওর তো আমার কথা একটু ও মনে পড়ে না।যদি এতোই শান্তিতে থাকে আমার মুখ না দেখে, আমিও আর যাবো না সামনে!
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

বৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে বললো–,,বুঝলে তো ভাইয়া অবস্থা! বেজায় গরম তোমাকে তান্দুরি চিকেনের মতো রান্না করে ফেললেও আমরা অবাক হবো না।

সাব্বির বলে উঠলো–,,ঘসেটিবেগম তো আমাকে হুম”কি মূলক মেসেজও পাঠিয়েছে।

–,,ভালো করেছে তুমি না আসলে সেখানে বসে থাকো তোমাকে বললাম সাতদিন আর তুমি তো এককাঠি উপরে পনেরো দিন ধরে হাওয়া খাচ্ছো!

–,,তুই বুঝবি না। বলে ফোন কেটে দিলো।

সেদিন আর ভার্সিটি গেলো না জেরিন,মন মেজাজ তার বিক্ষি’প্ত!
——–
অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে নিখিল তার মধ্যে বিদেশি নাম্বার থেকে কল আসতেই চমকে উঠলো রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে বিচলিত কন্ঠে কেউ বললো–,,নিখিল কে জানি সাহিল কে ভুল ঔষধ দিয়েছে! সে এখন পুরোপুরি কোমা”য় চলে গেছে।কতো দিনে জ্ঞান ফিরবে তা জানাতে পারেনি ডক্টর!এবার কি হবে?

নিখিল হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো–,,ইলিয়াস খান কি করে জানলো সাহিল ওখানে আছে!তুই ওকে বাসায় সিফট কর,কড়া সিকিউরিটি দিবি,কাক পক্ষীও যেনো সাহিলের খবর না জানে!বাড়িতেই নার্স ডক্টর সব কিছুর ব্যবস্থা কর ওর ঠিক হতে যত দিনই লাগুক ওকে সুস্থ চাই আমার!

–,,ওকে!
———-
নেহা,বৃষ্টি, জেরিন আজ একসাথে এসেছে,জেরিনের মন খারাপ তাই ওরাও এসেছে সাথে বাহানা দিয়েছে জেরিনের ভার্সিটি ঘুরে দেখবে!
জেরিন বাধ্য হয়ে ওদের কে ঘুরিয়ে দেখালো।পরে ক্লাস করতে চলে গেলো।বৃষ্টি, নেহা রিকশা ডেকে উঠে পড়লো দুজন মিলে বলছে, একটু বারাবাড়ি হয়ে গেলো না তো আবার!কাছে আসার বদলে যদি দুজন আরো দূরে চলে যায় তখন?

ভার্সিটি শেষ করেছে দেরিতে আজ,তপ্ত দুপুর বিকেল নামলো বলে,রাস্তার ধারে ফুটপাত হাঁটছে জেরিন।হাঁটছে যদি রিকশা পায় তো নিবে।

হঠাৎ কোথা থেকে সেই পরিচিত কন্ঠ ভেসে আসলো।চশমা ঠেলে লোকটি এগিয়ে আসলো সামনে, রাস্তাটা শুনশান! লোকটির নামের মতো আজ রাস্তাটাও কেমন নিরবতায় ছেয়ে আছে।অদৃশ্য ভয়েরা ভর করলো জেরিন কে।কি করবে বুঝতে পারলো না,দৌড়ে কি পালিয়ে যাওয়া উচিত তার এখন?নাকি লোকটার কথা শোনা উচিত!
ততক্ষণে নিরব সামনে এসে একটা হাসি দিলো।জেরিনের মন তিক্ততায় বিষি’য়ে উঠলো,একটা নি”কৃষ্ট কী’ট ছাড়া অন্য কিছুই মনে হলো না তাকে এই মুহুর্তে!

নিরব হেসে বললো–,,কেমন আছো জেরিন?

জেরিনের ভয়ে কাঁপছে, নার্ভাস”নেস জেনো বেড়েই চলেছে!মাথা ঘুরছে তার এই খারা”প লোকটার সামনা এভাবে করতে হবে বুঝতেই পারেনি,আত্মীয়দের কূ”ট উক্তি বা’জে কথা,অপমান গুলো যেনো কানে বাজছে, সেদিনও এতোটা বিচলিত হয়নি জেরিন!মনে হচ্ছে যে কোনো মুহুর্তে জ্ঞান হারাবে সে।তবুও মনে আশং”কা জন্মাচ্ছে যদি এই লোক তার সাথে কিছু করে তখন!

নিরব জেরিন কে ভয় পেতে দেখে হেসে বললো–,,ভয় পাচ্ছো বুঝি?জেরিনের হাত ধরার জন্য উদ্যোগ নিতেই।

একটা শক্তপোক্ত হাত জেরিন কে টেনে দুকদম পিছিয়ে আনলো,কাঁধে হাত রাখতেই জেরিন চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো–,,সাব্বির!
জেরিনের কাঁধে হাত রেখেই সাব্বির বললো–,,হেই প্রফেসার!
চলবে…