প্রণয়ের সুর পর্ব-৩৭

0
17

#প্রণয়ের_সুর
#পর্ব৩৭
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
বউজান!আমার কথাটা শোনো প্লিজ।আমি জানতাম না সাহিল আসবে।

নেহা যেনো এই কথায় আরো বেশি বিরক্ত হলো,মেজাজ এমনিতেই তার তুঙ্গে তার উপর নিখিল আবার ন্যাকা সাজছে!রাগে হিসহিসিয়ে বললো

–,,সারপ্রাইজের নাম করে নিজের বউকে নিলা’মে তুলছিলেন আপনি?আমাকে এখন আর ভালো লাগে না?যার জন্য অন্য পুরুষ কে দিয়ে দিতে চাচ্ছেন!

নিখিল রাগ ভাঙ্গাতে এসে নিজে এখন রেগে গেলো চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,নেহা মুখে যা আসবে তাই বলবি এখন?কি সব বলছিস!

নেহা মুখ ঘুরিয়ে নিলো,নিখিল এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো–,,কথা বলবি না আমার সাথে?

নেহা নাকের ডগায় রাগ নিয়ে বসে আছে কথা বলবে না আজ!নিখিল ঘাড়ে আলতো করে চুমু খেলো,নেহাকে সামনের দিক ঘুরিয়ে বললো–,,দেখি দেখি চাঁদ মুখটা,ইশ!রেগে থাকলে তো তোমাকে একদম রেড ভেলভেট কেকের মতো লাগে জান!

–,,একদম এসব বলে আমাকে পটানোর চেষ্টা করবেন না।আপনার কোনো কথাই শুনবো না আমি।

–,,শুনবি তো আমার কথাটা পরে না হয় এভাবে ঝ’গড়া করিস।

নেহা নিখিলের কলার চেপে ধরে বললো–,,আমি ঝ’গড়া করি তাই না?সাহস বেড়ে গেছে না তোমার,পেয়ে গেছেন তো এখন তো আমাকে ঝগ’ড়ুটে মনে হবেই,অপছন্দ হবেই।সাহিল কে নিজের বউ দেওয়ার এতো তাড়া,এতো কষ্ট করার কি দরকার আমি নিজে থেকেই চলে যাচ্ছি!

নিখিল আচমকা নেহা কে কোলে তুলে নিলো।নেহা নিখিলের গলা জড়িয়ে ধরতে গিয়ে ধরতে পারলো না নিখিল সেকেন্ডের মধ্যেই নেহাকে খাটে উপর এক প্রকার ছুঁ’ড়ে মার’লো,নেহা উঠে বসতে যাবে তার পূর্বেই নিখিল হাত দিয়ে ঠেলে নেহাকে আবার খাটে ফেললো,নেহা কটমট দৃষ্টিতে তাকালো।

নিখিল গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,আমার সব কথা শেষ না হওয়ার আগে একটা কথাও বলবি না!

–,,একশো বার বলবো,মুখ কি শুধু আপনার একারই আছে নাকি!

নিখিল এবার রেগে ধাম করে এক কা”মর বসিয়ে দিলো নেহার গলায়।নেহা দাঁতে দাঁত বললো–,,এই রা”ক্ষস মার্কা ভুত কবে থেকে নিজের মধ্যে ইন্সটল করলেন।দাঁত কিন্তু আমারও আছে বলে দিলাম!

নিখিল এবার গলায় চুমু দিলো এক হাতে নেহার ঠোঁটে আঙুল রেখে বললো–,,নিজ থেকে চুপ করবি নাকি আমাকে করাতে হবে।যদি আমি একবার চুপ করাতে যাই তো পুরোদস্তর নিজেকে আমাকে এখন দেওয়া লাগবে তোর!এবার ভেবে দেখ চুপ থাকবি নাকি জামাইয়ের আদর নিবি।

নেহা কান চেপে ধরলো নিজের কপাল করে অসভ্য,মুখে লাগামহীন এক জামাই পেয়েছে যখন তখন আজে’বাজে কথা শুরু করে।

নেহা কে চুপ থাকতে দেখে নিখিল হাসে,নেহার ঘাড়ে মুখ গুঁজেই ধীর কন্ঠে বলে—,,যার থেকে বাঁচানোর জন্য তোকে সবার থেকে লুকিয়ে নিজের করলাম।নিজের বুকের ভিতর আড়াল করে রাখলাম তুই ভাবলি কি করে সেই মানুষটার কাছে তোকে আমি তুলে দিবো!এমন জঘ”ন্য কথা মনে আসার আগেই আমার মৃত্যু হোক।আমি বেঁচে থাকতে তোকে অন্যের ছায়া তলেও তো সহ্য করতে পারবো না ভাবলি কি করে আমি নিজের কলি’জা কে’টে অন্যকে দিয়ে দিবো!এই তোর বিশ্বাস নেহা!

নেহা নিখিল কে দু হাতে জড়িয়ে ধরে বললো–,,আমার দোষ দিচ্ছেন কেনো?ওই সাহিল নামক লোকটা রিসোর্টে আমার হাত ধরেছিলো,ওইদিন ভার্সিটির সামনে কি সব কথা বললো,একে আমার মোটেও পছন্দ না,আর আপনি বললেন সেজেগুজে রেডি হবি,যখন ড্রয়িং রুমে গেলাম ভেবেছি আপনি এসেছেন।গিয়ে দেখি ওই ছেলেটা আবার কিভাবে তাকিয়ে ছিলো!আপনি এসেও হেসে হেসে কথা বলছেন, আমি তো মনে করেছি সাহিলের সামনে নেওয়ার জন্য আমাকে সাজতে বলেছেন!

—,,এতো অবুঝ কেনো তুই নেহা!

–,,আপনাদের এই বিয়ে লুকানোর ব্যাপারটার জন্যই এতো কিছু হলো।সরুন তো বিয়ে করেছে বলতে পারে না আবার আদিখ্যেতা!

–,,কয়েকদিনের ভিতরেই সবাইকে জানাবো সব।

—,,সরুন তো আপনাকে আমার এখন একদম ভাললাগছে না।মন টা খারাপ করে দিছেন আপনি আমার!

নিখিল উঠে বসে বললো–,,চল!

–,,আপনার সাথে যাবো না।

–,,তুলে দিবো এক আছাড়!

–,,এই ভুল ভুলেও করবেন না!

—,,তুই একটা যা তা হয়ে গেছিস নেহা,সাহস টাও বেড়েছে মুখে মুখে ত’র্ক শুধু।

–,,তাহলে কথা না বললেই তো পারেন।

নেহার চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে নিখিল বাঁকা হাসলো,নেহার হাত টেনে নিচে নামালো।শাড়িটা সুন্দর করে ঠিক করে দিয়ে, এক হাতের মুঠোয় নিলো নেহার হাত।নেহা কিছু বললো না,বলেও লাভ হবে না,এই ছেলে নিজের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারো কথাই শুনে না!

নিখিল নেহাকে টেনে নিয়ে আসলো ছাদে।রাত প্রায় নয়টা বাজছে ঘড়িতে।ছাদে এসেই দরজাটা লক করে দিলো নিখিল।

নেহা একটা ভেংচি কেটে অন্য পাশে সরে গিয়ে দাঁড়ালো।নিখিল পেছন থেকে নেহার চোখ চেপে ধরলো

–,,কি সমস্যা চোখ চেপে ধরলেন কোনো?

নিখিল জবাব দিলো না নেহাকে টেনে নিয়ে আসলো ছাদের অপর পাশে।

চোখ থেকে হাত সরিয়ে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে নিখিল বললো–,,সারপ্রাইজ বউ!

নেহা চোখ বড় বড় করে তাকালো,একটা ছোট টেবিলে খাবার যার মাঝে ফুলের পাপড়ি দিয়ে ছোট ছোট করে লিখা-,,বউয়ের জন্য নিজ হাতে রান্না করেছি,এখন যেনো মহারাণী একটু খেয়ে খাবার গুলো সাথে যিনি রান্না করেছেন তাহার জীবন ও ধন্য করেন!

নেহা অবিশ্বাস্য সুরে বলে–,,আপনি কখন রান্না করলেন?দেখলাম না তো!

–,,দেখবেন কি করে আপনার তো রাগের উপর আবার নাকটাও খাঁড়া, নাকের জন্য তো আবার চোখে দেখেন না!

নেহা নাক মুখ কুঁচকে ফেললো–,,আপনি আমাকে অপ,,,,,,

নিখিল তার আগেই নেহার ঠোঁটে আলতো চুমু দিলো,কানের কাছে ফিসফিস করে বললো–,,কথা বলার জন্য সারা রাত পরে আছে মেডাম এখন চলুন খাবেন!

নেহা আর কথা বলতে পারলো না,ছেলেটা একদম অসহ্য রকমের হুটহাট কোন মানুষ চুমু দেয়?মানে কোনো কথা,এ যেনো আভাস ছাড়াই সুভাস ছড়িয়ে পড়ে!

নিখিল নেহার হাত টেনে নিজের পাশে বসালো মেঝেতে।নেহার সামনে প্লেট রেখে এক এক করে খাবার গুলো প্লেটে তুলে দিচ্ছে নিখিল।

নিখিল মিষ্টি করে হেসে আদুরে গলায় বললো–,,এবার খাও!

নেহা দুহাত দিয়ে নিখিলের কোমর জড়িয়ে বললো–,,খাইয়ে দেও প্রিয় স্বামী!

–,,এ্যাহ সখ কতো,নিজে খা!ঢং করা হচ্ছে।
নেহা হেসে বললো–,,হুম হচ্ছে আমার একমাত্র সখের জামাই তার হাতে আমি খাবো না তো কে খাবে?

–,,নেহা তুই দিন দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছিস?যখন আমাদের বেবিরা আসবে তখন ওরা কনফিউজড হয়ে যাবে তোকে মা বলবে নাকি তাদের সহপাঠী!

নেহা আপ্লূত হয়ে বললো–,,কি কিউট হবে না ব্যপারটা আপনার কাঁধে উঠে দুজনই বসে থাকবো,আর আপনাকে জ্বালা’তে জ্বালা’তে অতি”ষ্ঠ করে ফেলবো!

নিখিল তাকিয়ে আছে নেহার দিকে,মুখে খাবার তুলে দিয়ে বললো–,,আচ্ছা ঠিক আছে,তোর জন্য সব কিছুর অনুমতি দিয়ে রাখলাম, যা খুশি করিস!

নেহা হেসে বললো–,,এর পর থেকে আমি আর রান্না করবো না বুঝেছেন,আপনার রান্না তো মাশাআল্লাহ, বড় মায়ের মাস্টার পিস ছেলে।আমার সুপার ডেসিং, কিউটিপাই জামাই!আমার গুলুমুলু তুলতুলে কিউট বেবির আব্বু।

নিখিল চোখ বড় বড় করে তাকালো,এগুলো কি প্রশংসা ছিলো নাকি অন্য কিছু!নিখিল নেহার মাথায় আলতো করে মে’রে বললো–,,বুদ্দু কোথাকার বেবিটা আমদানি করলি কোথা থেকে!

নেহা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,আমদানি হয়নি, হবে তো, তখনকার কথা বললাম!

নিখিল আর কি বলবে এই মেয়েকে,আজ’গুবি যত চিন্তা।তার পরও নিখিল শ্রেষ্ঠ শ্রোতার ভূমিকা পালন করে,মেয়েটার খুশিই তো তার মাঝে নিহিত তবে কি করে পারবে এই মানুষটাকে কষ্ট দিতে যাকে কষ্ট পেতে দেখলাে নিখিলের নিজের ভিতরটাই ধুমরে মুচড়ে উঠে!
———-
শুক্রবার দিন টা মানেই বিশেষ,পরিবারের মানুষের মিলনায়তন।আজ সকাল সকাল এসেছে শেফালী বেগম সেই থেকে মিহিরের নামে বিচার দিচ্ছে বৃষ্টি! মিহির বেচারা ছোট মুখ করে বসে আজকে মা তার হাড় গোর ভাঙ্গবে।কি একখানা বউ জুটিয়েছে তার মা বাবা কে পুরো নিজের দলে নিয়ে নিয়েছে,এমন মনে হয় বৃষ্টি ও বাড়ির মেয়ে মিহির মেয়ের জামাই সে ঘর জামাই থাকে, যার ফলে শ্বশুর শাশুড়ী মিলে তাকে উল্টো ঝুলিয়ে রাখে!

শেফালী বেগম অভিযোগ শুনেই ছেলের কান টেনে ধরলো,মিহির গাল ফুলিয়ে বললো–,,মা, তোমার বউ মা সব বানিয়ে বানিয়ে বলেছে,আমি কখন এসব করলাম!

বৃষ্টি মিটি মিটি হাসছে,আর বলছে বেশ হয়েছে।আর লাগতে আসবে আমার সাথে?

শেফালী বেগম বললো–,,আমার মেয়ের পেছনে যদি লাগতে দেখেছি না আর তোকে বাড়ি ছাড়া করবো।
মিহিরের বাবা সদর দরজায় দিয়ে আসতে আসতে বললো–,,চিন্তা করবি না মা,এটাকে আমি ত্যাজ্য করবো,একটা ছা’গল হয়েছে!

মিহির অভিমানী সুরে বললো–,,বাবা আমার একটা নূন্যতম মান সম্মান আছে!

–,,ওরে কি আমার সম্মানী ব্যক্তি!

শাহআলম চৌধুরী এসে বসলেন,পর পর আসলেন বাকিরা,পরিবারের সবাই মিলে আড্ডায় মেতে উঠলো!


সাব্বির বসে আছে সোফায়,বিকালে ভাই বোনেরা মিলে নাস্তা করছিলো।নেহা,বৃষ্টি, রৌফ মিলে ভেবে নিলো সাব্বিরের সাথে একটা প্র্যাং’ক করবে!জেরিন সাব্বির আজকে আবার লেগেছিলো তার পর থেকে দুজন দুজনার মুখ দেখা বন্ধ দিয়েছে যদিও জানে এটা বেশিক্ষণ টিকবে না।

বড়রা আর কি বলবে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে নাকি অবনতি কিছুই বুঝছে না!কিন্তু ছোটরা তো জানে যতই লেগে থাকুক রাতের বেলা দুনিয়া উল্টে গেলেও এরা এক সাথে থাকবে,কোথাও গেলে এক সাথে যাবে,মুখ লটকিয়ে রাখলেও এক জন অন্য জনকে এসএমএস করে বলবে খেয়ে নে,মুখে কথা বলা বন্ধ করলেও ভারচুয়াল ভাবে ঠিকই কথা বলে এদের লজিক সাধারণ মানুষের বোধগম্য হবে না।

বৃষ্টি নেহা সিরিয়াস ভাবে এসে বললো–,,সাব্বির ভাইয়া তুমি বসে এখানে খাচ্ছো?জেরিন আপু তোমার সাথে রাগ করে দরজা আটকে দিয়েছে,রেগে বলেছে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেলবে।চলো তাড়াতাড়ি!

সাব্বির বিরক্তি নিয়ে বললো–,,যা মন চায় করুক ঘসেটিবেগম। আমাকে টানবি না।

রৌফ বলে উঠলো–,,ভাইয়া বিশ্বাস করছো না কেনো, যদি আপুর সত্যি সত্যি কিছু হয়ে যায়!

হামিদা বেগম,সাহারা বেগম,তাহমিদা বেগম ছুটে আসলেন,নেহা, বৃষ্টি রৌফ মিলে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো কিন্তু এই মুহুর্তে তো প্ল্যান টা বাদ দেওয়া যাবে না।হুট করে উপর থেকে কিছু পড়ার শব্দ হলো।

সাব্বিরের হাত থেকে খাবার পড়ে গেলো,এতোক্ষন সে চুপচাপ থাকলেও এবার তার ভিতরে অস্থি”রতা শুরু হয়েছে।
সাব্বির বলে উঠলো–,,আমার একটা মাত্র বউ।

এক দৌড় লাগালো এগারো ধাপের সিঁড়ি সে তিন লাফে পাড় করেছে।নেহা বৃষ্টি ঠোঁট চেপে হাসছে,সাব্বিরের পেছন পেছনে ছুট লাগালো বাকিরা।

দরজা বন্ধ দেখে যেনো আরো পাগ’ল প্রায় অবস্থা হলো সাব্বিরের।জোরে জোরে ধাক্কা দিতে লাগলো

–,,জেরিন ওই জেরিন দরজা খোল বলছি,কি হয়েছে তোর,প্লিজ দরজা খোল আমাকে দরকার পড়লে একদিন টানা মারি’স তাও নিজের কিছু করিস না।দরজা টা খোল না হয় ভে’ঙ্গে ফেলবো আমি।

জেরিন সবে বিছানায় শুয়ে ছিলো,চোখটা লাগতে না লাগতেই সাব্বিরের কন্ঠে শুনে বেজায় বিরক্ত হলো।
ওড়না টা গায়ে চাপিয়ে এসে দরজা খুলে যেই না কিছু ক’ড়া কথা শুনাবে ভাবলো সাব্বির এসে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো জেরিন কে!

বেচারী জেরিন কিছুই যেনো বুঝে উঠতে পারলো না!হঠাৎ এসে সাব্বির জড়িয়ে ধরায় দুকদম পিছিয়ে গেলো!দরজার বাহিরে এসে ততক্ষণে দাড়ালো বাকিরা।

সাব্বির জেরিনের মুখ, হাত চেক করে বললো–,,তুই ঠিক আছিস তো?কি করছিলি এসব?আমার উপর রাগ করে ঘুমের ঔষধ খাবি এটা কিভাবে চিন্তা করলি তুই?তুই জানিস না তুই ছাড়া আমি এতিম!

জেরিন হা হয়ে তাকিয়ে কি সব বলছে এ ছেলে! জেরিন বলে উঠলো–,,কি বলোছ এগুলা?বাবা মা ছাড়া মানুষ এতিম হয় তুই কেন হবি!

–,,তুই বুঝবি না আমি হই!

সাব্বির পারলে এবার কেঁদে দেয়।জেরিন নেহা,বৃষ্টি দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসতে দেখে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?

ওরা কিছু বললো না!সাব্বির এক অবিশ্বাস্য কান্ড ঘটিয়ে বসলো,জেরিনের মুখ জুড়ে অগুনিত চুমু দিতে লাগলো।

সাহারা বেগম খেঁকিয়ে উঠে বললো–,,এই ছাগ’ল আমরা তো এখানে আছে!

সাব্বির ভেবেছে নেহা, বৃষ্টি তাই বললো–,,তোরা চোখ বন্ধ রাখ!

নেহা,বৃষ্টি এবার হো হো করে হেসে বললো–,,আমরা না তে বড় মা,মেজো মা আর তোমার ছোট মা!

জেরিন তব্দা খেয়ে গেছে,এই ছেলেরে জি’ন ভুতে আছড় করলো নাকি,কি শুরু করেছে তার উপর মায়েদের সামনে লজ্জায় হাস”ফাঁস করে উঠলো। সাব্বির মাথা চুলকে মিন মিন করে বললো–,,তুই লজ্জা পাচ্ছিস কেনো ঘসেটিবেগম বেগম,শুধু তো কয়েকটা চুমুই দিয়েছি।জেরিন এক ছুটে বারান্দায় পালালো।এই বাড়ি ভর্তি সব গুলার মাথায় সি’ট আছে কখন কি করে কি বলে হুঁ”শ নেই!

তিন মা কখনই বিদায় নিয়েছে ছোটদের দুষ্টুমি তে নিজেরা ফেঁ’সে গিয়ে লজ্জায় পড়তে হলো।

বৃষ্টি, নেহা বলে উঠলো–,,ভাইয়া কে জানি বলে ছিলো ধুর এসব ঘসেটিবেগম কে, কে ভালোবাসতে যাবে!আমার রুচিতে ভাটা পড়েনি,এখন তো দেখলাম মানুষ জন লোক সম্মুখে চুমু টুমুও দেয়!

জেরিন তো বারান্দা থেকে বো’মা হয়ে বের হয়েছে।এসেই বলে উঠলো–,,সাব্বিরা তুই এসব কি করলি?

–,,স্যরি ঘসেটিবেগম আমি ফিলিং সামথিং সামথিং!

রৌফ বলে উঠলো–,,ছি ছি ব্রো তুমি ইংরেজি তে পাশ কেমনে করছিলা!

সাব্বির চোখ মুখ কুঁচকে বললো–,,চুপ থাক তো বিদ্যাসাগর!

জেরিন হতাশ কন্ঠে বললো–,, সাব্বির ভাই আমার, এসব লাল পানি খাইয়া বেহুঁ”শ হওয়া লোকের মতো কি সব সামথিং সামথিং শুরু করলি,এসব বন্ধ কর আর নাটক করিস না তোরা আমার সাথে!

সাব্বির মাথায় হাত দিয়ে বললো–,,ঘসেটিবেগম! আমি তোর বাচ্চার বাপ হতে চেয়েছিলাম,আর তুই কিনা মামা বানাইয়া দিলি!এ কেমন বিচার তোর।

এবার না হেসে পারলো না জেরিন।হাসতে হাসতে বললো–,,শা’লা এখনো নিজেই ডায়পার পড়ে ঘুরে আবার আসছে বাচ্চার বাপ হতে!

সাব্বির চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,নাউজুবিল্লাহ! তুই আমার বন্ধু মানুষ হয়ে সব গুলা পিচ্ছির সামনে আমার ইজ্জতের ফালুদা বানাইয়া দিলি,তোর সাথে আর কথা নাই!

নেহা,বৃষ্টি বেরিয়ে গিয়ে বললো–,,তোমরা যা খুশি করো আমরা গেলাম!

ওরা বের হতেই, জেরিন দরজা চাপিয়ে কোমরে হাত রেখে বললো–,,ওরা না হয় মজা করছিলো, তুই কি থেকে কি করলি!

সাব্বির জেরিন কে এক টানে নিজের কোলে বসিয়ে বললো–,,তোর কাছে মজা মনে হয়,আমার তো জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো!মনে হচ্ছিলো এই বুঝি তোকে হারিয়ে ফেললাম!তোকে হারিয়ে ফেললে আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো নিঃসন্দেহে!

জেরিনের শান্ত চাহনি,ছেলেটা সব কিছুর কেমন সহজ সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে দেয় জেরিন মাঝেমধ্যে ভাবে সে কতোটা কপাল করে এমন জীবনসঙ্গী পেয়েছে,হয়তো সম্পর্ক টা এখনো পরিপূর্ণ হয়নি তাদের তাতে কি,সব কিছুরই নির্দিষ্ট সময় সীমা আছে যা যখন আসার আসবে, ওদের মধ্যেকার যে সুদৃঢ় বন্ধন আছে,একে অপরের প্রতি বিশ্বাস আছে সম্মান আছে।তা দিয়েই হয়তো যুগের পর যুগ কাটিয়ে দেওয়া যাবে!

সাব্বির জেরিনের হাত আঁকড়ে ধরে বললো–,,একটা কথা বলবো তোকে এখন,একদম ঢেঁড়স মার্কা রিয়েকশন দিবি না আগে ভাগে বলে দিচ্ছি!

জেরিন মিটি মিটি হেসে বললো–,,প্রোপোজ করবি তাই তো!

–,,তুই জানলি কি করে?

–,,তোর মতো হাঁদা যে বিগত দুই সপ্তাহ ধরে বলার চেষ্টা করছে সেটা যদি আমি বুঝতেই না পারি তো কিভাবে হবে,তোকে খুব ভালো করে চিনি আমি,বুঝলি!

–,,তাহলে একসেপ্ট কর!

–,,প্রোপাজাল দিলি কখন?সর তো সামনে থেকে তোর ফিলিংস তোর পকেটে রাখ!

–,,এটা একদম ঠিক না ঘসেটিবেগম, আমরা প্রমিজ করেছিলাম, আমাদের মধ্যে যখন সেটা তোর হোক বা আমার যারই আগে অনুভূতি আসবে সেই বলবে,কিন্তু তুই তো বলবি না বলে পণ করেছিস তাই আমি বলছি!

–,,তোর প্রতি আমার কোনো ফিলিংস নাই যা ভাগ!

–,,সত্যি!

জেরিন মুচকি মুচকি হাসলো।সাব্বির বলে উঠলো–,,একটা চা’টি মেরে তোর হাড়ির মতো মাথাটা ফাটি’য়ে দিবো ব’দ মহিলা!তোমার ভালোবাসা লাগবে না আমার,আমার টা দিয়েই হবে।

জেরিন এবার হো হো করে হেসে উঠলো। সাব্বির বালিশ ছুঁড়ে মারলো তবুও জেরিন থামলো না,উল্টো দুজন মিলে পুরো ঘরময় দৌড়াতে লাগলো!
——-
প্রচুর পরিমাণ ড্রিং’স করেছে সাহিল,এসে দাঁড়িয়েছে চৌধুরী বাড়ির সামনে,সে আজ ব্যর্থ তার মামা ও হেরে গেছে চৌধুরীদের কাছে,নিজের সব রাগ, ঘৃ”ণা সব উগরে দিবে আজ,হেলেদুলে এসে হাজির হলো সদর দরজার বাহিরে, রাত প্রায় বারোটার কাটা ছুঁই ছুঁই। বাড়ির সবাই তখন ঘুমে,দারোয়ান ও ঘুমিয়ে পড়েছিলো।আজ নিজেকে কিছুতেই শান্ত রাখতে পারছে না সাহিল!ইলিয়াস খান তার মামা তাকে জীবনে একটা ক”টূ কথাও শুনায়নি, তবে আজ!নেহা কে টার্গে”ট করেছিলো শুধু চৌধুরী বাড়ির সম্মান ন’ষ্ট করতে, জেরিন কে দিয়ে হয়নি, তাই সে আবার নেহার সাথে নিজের বিয়ের সম্বন্ধো নিয়ে এসেছিলো,সাহিল নেহাকে পছন্দ করতো,ভেবেছিলো বিয়ে করে পরিবার থেকে পৃথক তরে দিবে এতে পরিবারের সবাই কষ্টে থাকবে,সে নেহার কোনো ক্ষ!তি চায়নি।ভালোবাসা নামক জিনিস টা চোখের কা’টা হয়ে গেছে সাহিলের,তার মা ভালোবাসার জন্য নিজের জীবন দিলো,সে দিকে সে কখনো পা বাড়াবে না।আজ তার মামা পথের ভিখারি নিঃস্ব মানুষ, তার এ অবস্থা পিছনে যে নিখিল দায়ী তা বুঝতে বাকি নেই তার।আজ সব কিছুর হিসাব নিবে সব কিছুর!

সদর দরজায় এলোপাতাড়ি ধাক্কা দিচ্ছে সাহিল,লা’থি, ঘু’ষি কিছুই বাদ রাখেনি যেনো।দারোয়ান ছুটে আসলো থামানোর চেষ্টা করলো,তবে এই তাগড়া যুবকের সাথে পেরে উঠলো না।শব্দ আর শাহআলম চৌধুরীর নামে কিছু কানে আসতেই,একে একে সবাই বেরিয়ে আসলো যে যার রুম থেকে!

জেরিন ঘুমে চোখে দেখছে না,তার পর ও বাহিরে কি হচ্ছে দেখতে হবে তাকে তাই সাব্বিরের সাথে জোর করে এসেছে, তবে নিচে এসেও সাব্বিরের হাত জড়িয়ে ধরে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছে।
সদর দরজা খুলে দিতেই সাহিল নিখিল কে ঠেলে ভিতরে আসলো,ঢলে পড়ে যাওয়ার আগেই নিখিল তাকে আগলে নিলো।আশেপাশে নিকট প্রতিবেশি বলতে মিহির রা!মিহিরের বাবা মা সহ মিহির রাতে এসে হাজির!
সাহিল প্রলাপ বকছে!যা শুনে সবার মুখ হা হয়ে গেলো,শাহআলম চৌধুরী যেনো আকাশ থেকে পড়লেন!

–,,ওই শাহআলম তুই একটা খারা”প লোক তোর জন্য আমি বাবা মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত!তোর জন্য আমার মা না ফেরার দেশে চলে গেছে!তুই তাকে বিয়ে করে যথাযথ সম্মান দেসনি,আমাকে সন্তান হিসেবে মেনে নিলি না,কি দোষ ছিলো আমার, আমার মায়ের?কেনো কেনো?তোমাকে ভালোবাসাটাই কি আমার মায়ের অপরাধ ছিলো?বলছো না কেনো, ওই শাহআলম বলছেন না কেনো আপনি?আপনি তো সুখে আছেন কেনো আমার শৈশব কৈশোর, আজ অব্দি পুরোটা জীবন এভাবে ধ্বং”স করে দিয়েছেন?বলুন!আমি জানতে চাই শুনতে চাই আমার অপ”রাধ কি কেনো আমার জীবনটা স্বাভাবিক হলো না,কেনো আজ আমি এতো অবহেলিত!

হামিদা বেগম স্বামীর পানে চাইলেন,তিনি স্বামী কে অবিশ্বাস করেনি তবে অভিমান জমলো মনে কেনো এই ছেলেটি বা তার সম্পর্কে কিছু বললো না,ঘটনা টা অন্য ও হতে পারে জানার তো অধিকার ছিলো হামিদা বেগমের!তিনি বসার ঘর ছাড়লেন,সেতারা বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসলেন,ওই অপয়া মেয়েটা নিজে তো মর’লো কার না কার ঘাড়ে’র ভো’জা তার ছেলের নাম করে রেখে গেলো,এবার বড় বউটাকে কি ভাবে সামলাবেন, তারা সবাই তো এ নির্ম’ম সত্যির চাক্ষুষ প্রমান কিন্তু এদের কি করে বিশ্বাস করাবেন?কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক,কোনো প্রমানই তো নেই তাদের কাছে!

জেরিনের ঘুম তো ছুটলোই সে আকষ্মিক ঘটনায় কথা বলতে ভুলে গেছে।বাকিদের ও একই অবস্থা!

সাহিল বক বক করতে করতে জ্ঞান হারালো,নিখিল মিহির,সাব্বির কে ডেকে বললো–,,গেস্ট রুমে নিয়ে যেতে সাহিল কে।সেতারা বেগম তেতে উঠলো–,, এসব আবর্জ’না কে বাহিরে ফেলে দিয়ে আয় দাদু ভাই কেনো আ”পদ ঘরে তুলছিস!

নিখিল সেতারা বেগমের কথায় কান দিলো না।সে ছুটলো নিজের মায়ের ঘরের দিকে।

কিছুক্ষণ পর নিখিলের সাথে বেরিয়ে আসলো হামিদা বেগম।কি থেকে কি হলো কেউই কিছু বললো না হামিদা বেগম দৌড়ে ঢুকলেন গেস্ট রুমে,সাহিলের দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠলেন তিনি।নিখিল কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,বলনা নিখিল!ও সত্যি আমার সন্তান? আমার কলি’জার টুকরা?

সাহিলের কাছে গিয়ে তার মুখে হাত বুলিয়ে হামিদা বেগম বলে উঠলো–,,এতো দেরি করলি কেন বাবা?এই মায়ের কাছে আসতে?কতো হতভাগ্য মা আমি তোকে জন্ম দিয়েও দেখার সৌভাগ্য হলো না,ছোট থাকতে কোলে নিতে পারলাম না,ফিরলি তো মায়ের বুকে কিন্তু সময় নিয়ে নিলি প্রায় আটাশ টা বছর!

চলবে,,,,