প্রণয়ের আসক্তি পর্ব-৩০

0
650

#প্রণয়ের_আসক্তি
৩০.
#WriterঃMousumi_Akter

প্রতিটা এয়ারপোর্টে পাহারা বসানো হয়েছে,প্রত্যেক কে চেক করা হচ্ছে যে কোনো ফ্লাইট এ মেধা বিদেশ চলে যেতে পারে।আজ ছয় দিন হয়ে গিয়েছে আজ বা কাল নিশ্চয়ই কিশোরগঞ্জের সেই হসপিটালে মৃথিলাকে আনা হবে।নিরব ছদ্মবেশে অপেক্ষা করছে মৃথিলার।

নিরবের ফোনে মিসেস শিরিনার ফোন এসছে।এতদিনে নিরব মিসেস শিরিনার ফোন রিসিভ করে নি।মুনতাহার কাছে মিসেস শিরিনা শুনেছে যে মৃথিলা মারা গিয়েছে।মিসেস শিরিনা জানেনা মৃথিলা ই তার নাতনী।ছেলে হারিয়ে এই শেষ বয়সে নাতনি পেয়েও হারানোর সংবাদ নিরব দিতে পারে নি।

মাগরিবের সময় হয়ে এসেছে বাইরে আজান দিচ্ছে।সবাই তখন নামাজের জন্য বাইরে যাচ্ছে।ঠিক তখন ই ডাঃহাসান মাহমুদের রুমে প্রবেশ করে বোরকা পরা একটি মেয়ে মেয়েটি প্রায় অচেতন হয়েই আছে।অন্য একজনের কাঁধে মাথা ভর করে রুমে প্রবেশ করলো।ডাঃহাসান মাহমুদ বললেন,রুগি কে বেডে সুইয়ে বাইরে যান। বোরকা পরা মেয়েটিকে বেডে সুইয়ে বাইরে চলে গেলো আরেকজন বোরকা পরা মহিলা।পর্দার আড়ালে নিরব অপেক্ষা করছিলো।আজ সারাদিন যত গুলো রুগি এসছে সবাইকে চেক করেছে নিরব।বেডে সুইয়ে দেওয়া মেয়েটির চোখ দেখেই নিরব মুখোশ সরিয়ে দেখতে পায় মৃথিলাকে।মৃথিলাকে এইভাবে পাওয়া মানে নিরবের জীবনের সব থেকে বড় ভাগ্য,এটা হয়তো কপালে লেখাই ছিলো,কপালের জোর না থাকলে পাওয়া সম্ভব ছিলো না।মৃথিলা কে দেখেই নিরবের আনন্দ অশ্রু হলো অশ্রসিক্ত হয়ে উঠলো চোখ,ভেতর টা নাড়া দিয়ে উঠলো আনন্দ আর বেদনা দুটোর সংমিশ্রনে।,আনন্দে নিরবের হাত পা কাঁপছে।মৃথিলার কপালে চুমু দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।মৃথিলা ও অনুভব করতে পারলো সে তার নিরবের বুকে মাথা রেখেছে।মৃথিলা আস্তে করে চোখ খুলে নিরব কে জড়িয়ে ধরে বললো,এটা কি সত্যি আপনি নাকি আমার প্রতি মুহুর্তে হতাস স্বপ্ন।নিরব কাঁন্না ভেজা কন্ঠে বললো,এটা আমি জান পাখি তোমার স্বপ্ন নয়।আমি কখনোই আর তোমার স্বপ্নতে আসবো না।আমি সত্য সত্যই থাকবো জানপাখি।আই এম সরি তোমাকে আমি রক্ষা করতে পারি নি।আমাকে ক্ষমা করো জানপাখি।মৃথিলা ক্লান্তি মাখা কন্ঠে বলছে নিরবের বুকে মাথা রেখে আমায় আর একা ছেড়ে যাবেন না তো।ওরা খুব খারাপ। নিরব মৃথিলার সমস্ত শরীর দেখে শিউরে উঠলো।এত বাজে ভাবে আহত করেছে মেধা মৃথিলাকে।নিরব মৃথিলাকে বুকের সাথে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলো।মৃথিলাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েও শান্তি মিলছে না নিরবের।চাতক পাখির মতো দুজন দুজন কে খুজে চলেছে এতদিন।নিরম অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলো মিথুকে।মৃথিলাকে বুকে জড়িয়ে সমস্ত কষ্ট হালকা করে নিলো।হারানোর যন্ত্রণা বুঝেছে দুজন ই।আজকে প্রকৃতি ও প্রাণ ফিরে পেয়েছে তাদের মিলিত হতে দেখে।

বাইরেই মেধে অপেক্ষা করছে বোরকা পরে।বাইরে থেকে রিফাত আর সুপ্তি মেধাকে ধরে ফেললো।মেধার পালানোর মতো আর কোনো জায়গা ছিলো না।সুপ্তি মেধার গালে অগনিত থাপ্পড় মারলো।কতটা কষ্ট তুই মৃথিলাকে দিয়েছিস অতটায় পাবি তুই। মেধা ভয়ে চমকে গেলো এইভাবে ধরা পড়বে বুঝতেই পারে নি সে।
মেধাকে নিয়ে আটকে রাখা হলো একটা অন্ধকার ঘরে।যেখানে দিন আর রাত বোঝার উপায় নেই।অন্ধকার কুঠুরিতে প্রচন্ড মশার কামড়ের মাঝে মেধা কে বেধে রাখা হলো।

মৃথিলার অবস্থা অনেক খারাপ।মৃথিলার সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হলো সাথে নিরবের পরম যত্ন আর ভালবাসায় অনেক টায় সুস্থ হয়ে উঠলো মৃথিলা।নিরব আজ মৃথিলাকে বাসায় নিয়ে এলো।হসপিটাল থেকেই নিরব তার প্রিয় রং এর শাড়িতে সাজালো মৃথিলাকে।মৃথিলার শরীর অনেক দূর্বল এখনো।ডাক্তার বলেছে বাসায় রেখে সেবা যত্ন করলেই সুস্থ হয়ে উঠবে।

রিফাত, সুপ্তি,এবং নিরব আজ সেই অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করেছে।মেধাকে বেঁধে রাখা হয়েছে সেই ঘরে।সুপ্তি মেধার চুলের মুঠি ধরে বললো বল কাদের সাহায্য নিয়ে এত কিছু করেছিস তুই।মেধা ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো।সুপ্তি মেধার গালে আরো কয়েক টা থাপ্পড় কষে দিলো।নিরব সুপ্তি কে বললো ওভাবে হবে না সুপ্তি আমি দেখছি।নিরব একটা বেত বের করে সুপ্তিকে রক্তাক্ত না হওয়া পর্যন্ত পিটালো।প্রতিটা আঘাত করার সময় নিরবের মনে পড়েছে মৃথিলাকে আঘাত করার কথা।মেধা রক্তাক্ত হয়ে গেলে সুপ্তি ঝাল আর লবন লাগিয়ে দিলো মেধার সমস্ত শরীরে।মেধা যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে।মেধা ছট ফট করতে করতে বললো তোমার হাতে মরলেও শান্তি।নিরব মেধার গালে জোরে থাপ্পড় মেরে বললো, সমুদ্রে কাকে কেটে ফেলেছিস বল।না হলে এক্ষুণি তোকে কেটে ফেলবো।রহিম চাচার সাথে তুই জড়িত সেটা আমি ভাল ভাবেই জেনে গিয়েছি।অপরাধী যতই চালাক হোক ধরা তাকে পড়তেই হয়।মেধা এমনিতেও তোর হাতে সময় নেই।তাই মৃত্যুর আগে সমস্ত অপরাধ স্বীকার করাই উত্তম হবে।মেধা ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে বললো কাকে কেটেছি জানিনা। মধ্যরাতে একটা মহিলা ওখানে ঘুরতে এসছিলো আমি তার ই গলা কেটে ভাসিয়ে দিয়েছি।আমি তাকে এক কোপে গলা কেটেছি,সমস্ত শরীর কেটে ভাষিয়ে দিয়েছি।আমি চিনি না সে কে ছিলো?আমার ইচ্ছা ছিলো মৃথিলাকে মেরে ফেলার।কিন্তু পরে ভেবেছি একবারে মেরে ফেললে ওর কষ্ট কম হবে।তাই আমি মৃথিলাকে আবার বাঁচানোর চেষ্টা করলাম।আমি ওর চিকিৎসা করিয়েছি আবার অত্যাচার করেছি।আমি চেয়েছি মৃথিলা কষ্ট পাক। অনেক কষ্ট পাক।আমার ভাল লাগছিলো ওর কষ্ট দেখে।

রিফাত বললো, ও একটা সাইকো।

এই আমি সাইকো না নিরব।রহিম চাচার সাথে অসংখ্য মেয়ে আমি সাথে থেকে পাচার করেছি।আমার এই হাতে অনেক মেয়ে পাচার হয়েছে।মৃথিলাকে অনেক বার পাচার করতে চেয়েছি কিন্তু কে যেনো ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।কে বাঁচিয়েছে আমি বুঝতে পারিনি কখনো।নিরবের নজরে আমি পড়ে গিয়েছিলাম।নিরব অনেক ইনটেলিজেন্ট।আমাকে খুজে পেয়ে গিয়েছিলো।সেদিন ওই বাসে নিরব ক্রিমিনাল খুজতে উঠেছিলো।সেই ক্রিমিনাল আমি ই ছিলাম।কিন্তু আমি ছলনার সাহায্য নিরবের সহানুভূতির পাত্রী হয়েছিলাম।মৃথিলার সাথে যে অন্যায় গুলো হতো ওই কাহিনী বলে নিরবের মন গলিয়ে ফেলেছিলাম।আমি ভেবেছিলাম নিরবের সাথে ভালবাসার অভিনয় করে নিরব কে মেরে ফেলবো।যেমন রহিম চাচা মৃথিলার বাবা আহনাফ কে মেরেছিলো।কিন্তু নিরব তুমি এমন একটা ছেলে আমি অভিনয় করতে গিয়ে তোমাকে ভীষণ ভালবেসে ফেলেছিলাম।আর সেই ভালবাসা আমার ভেতরে প্রতিহিংসা সৃষ্টি করে।মিথুকে আমি কোনদিন ই ভালবাসি নি।ভীষণ ভাল বোনের অভিনয় করেছি কিন্তু বোকা মিথু বুঝতেই পারে নি।নিরব আমি আমার সব অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছি।এর বেশী আর কিছুই করি নি আমি।

মেধা কত বড় ট্রাপে ফেলতে চেয়েছিলো নিরব কে।ভেবেই নিরব শিউরে উঠলো।

–নিরব বুকে হাত বেঁধে কপাল কুচকে প্রশ্ন করলো,তোর মা বাবা জানে এসব?

–না উনারা এসবের কিছুই জানেন না।

–মৃথিলাকে কেনো তুই পাচার করতে চাইতি।

–রহিম চাচার মৃথিলার বাবার প্রতি রাগ ছিলো,তাই চাচা আর আমি মিলে চাইতাম।কিন্তু আমার বাবা কোনো ভাবে যেনো মৃথিলাকে বাঁচিয়ে নিতো।আড়ালে কে যেনো অন্য ভাবে মৃথিলাকে সাহায্য করতো।

–মৃথিলাকে যে সাহায্য করতো সে আর কেউ নয় রহিমা চাচা ই ছিলো।

–হোয়াট! রহিম চাচা কেনো সাহায্য করবে?উনি ই তো চাইতেন ওর ক্ষতি।

–রহিম চাচা চাইতেন,তবুও উনার জবানদন্দীতে খানিক অস্পষ্টতা থেকে গিয়েছে।আমি নিজে দেখেছি মৃথিলাকে সাহায্য করতে আবার উনি ই বললেন যে,মৃথিলার সাথে এমন করে শান্তি পেতেন উনি।টোটাল ই সাইকো ছিলো।

মেধাকে আবার ও বেঁধে রেখে গেলো নিরব।

দোকান থেকে অনেক গুলো ফুল কিনে বাসায় প্রবেশ করলো নিরব।কলিং বেল চাপতেই মৃথিলা দরজা খুলে দিলো।মৃথিলার চোখে মুখে হাসি, আজ বেশ স্নিগ্ধ লাগছে মৃথিলা কে।নিরব মৃথিলার হাতে ফুল গুলো দিয়ে বললো শুভ দুপুর বউ পাখিটা।মৃথিলা ফুল গুলো নিয়ে রেখে দিয়ে নিরব কে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরলো।নিরব মৃথিলাকে দুই হাতে আলিঙ্গন করে বললো,তুমি আমার কাছে থাকলে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারি আমি।

–মৃথিলা নিরবের বুকে কান পেতে বললো,আপনার মনের কথা কিন্তু আমি শুনতে পাচ্ছি।

–তাই কি বলোতো?

–এই বুকে কান পেতে শুনলাম,এতদিন তুমি ছাড়া ভাল ছিলাম না জানপাখি।

–নিরব মৃথিলার গালে চুমু দিয়ে বললো,তবে এখন অনেক ভাল আছি।এইযে তুমি পাশে আছো তাই।

–আমার জন্য আপনার জীবনে কত অশান্তি।

–তুমি মানেই শান্তির নীড়।কখনো ভুল কথা বলবে না তো।

–আপনি আমাকে অনেক ভালবাসেন তো তাই মেনে নিতে চাইছেন না আমি মানেই অশান্তি।

–পাগলি তুমি?

–হুম আপনার পাগলি।

–এইবার বলো আমায় কি ক্ষমা করেছো তুমি?..

–কিসের জন্য?

–আমি তোমার দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে পারি নি তার জন্য।নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হয় আমার।আমার জন পাখিটা কত কষ্ট পেয়েছে।

–আপনি যে সেদিন থেকে আজ ও কষ্ট পেয়ে যাচ্ছেন।আমি তো সব ভুলে গিয়েছি মিষ্টার।

–কিন্তু আমি ভুলতে পারবো না জানপাখি।প্রতিটা মুহুর্তে মনে পড়ে আমার।তোমার জন্য ভীষণ কষ্ট হয়।

–প্লিজ শান্ত হন।আমি আছি তো।এবার থেকে সব ভালো হবে আমাদের।আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো আমার।

–বলো কি কথা।

–আপু আমাকে যেখানে রেখেছিলো সেখানে দুজন মানুষ ও ছিলো।জানেন তারাও খুব কষ্ট পাচ্ছে।

চলবে,,,