#প্রানেশা
#পর্ব_৪
#জান্নাত_সুলতানা
লতিফ মেম্বার বরাবরই ভালো লোক।কোনো খারাপ রেকর্ড ওনার নামে নেই আর না পরিবার নিয়ে কোনো রেকর্ড আছে। কিন্তু এই এক ছেলে কে নিয়ে গ্রামের সবার অভিযোগ আছে।
ময়নাল হওয়ার পর কোনো কারণ বশত ওনার স্ত্রী আর বাচ্চা নিতে পারেন নি।
আর সেই সুবাদে ছেলে কে ভীষণ আদরযত্নে বড় করেছে। তবে আদর বেশি দিতে গিয়ে হয়তো সুশিক্ষা দিতে পারে নি।
ছেলে তাদের বিগড়ে গিয়েছে।এখন যদি কোনো নারীর কারণে সেই বিগড়ে যাওয়া ছেলে ভালো হবে এমন আশ্বাস দেওয়া হয় তাহলে কোনো মা বাবা সেই সুযোগ হাত ছাড়া করবে না।
তেমন লতিফ মেম্বারও করে নি। চেয়ারম্যান এর কথা অনুযায়ী কাজে লেগে পড়েছে।
রিয়াজ মাহমুদ কে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছে।অবশ্যই বেশি জোর রিয়াজ মাহমুদ কে করতে হয় নি।খুব সহজেই তিনি রাজি হয়েছে তার কারণ লতিফ মেম্বার ভাবে হয়তো তার ভালো ব্যবহার আর জাত বংশ পরিচয়ের কারণেই রাজি হয়েছে। কিন্তু আসলেই ওনার ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল আর এটা হয়তো লতিফ মেম্বার খুব শীগগির জেনে যাবে।
দুপুর দুইটার বেশি সময় বাজে এখন।মাত্রই লতিফ মেম্বার নিজের খুব কাছের তিনজন পুরুষ আর ছেলে,সাথে আজগর শিকদার কে নিয়ে এসে উপস্থিত হলো রাশিদের বাড়িতে।
খাওয়াদাওয়া শেষ তাঁরা সবাই মিলে মেয়ে কে আনার জন্য বলে।
রিয়াজ মাহমুদ রিহান কে বলে রাশি কে নিয়ে আসার জন্য।
রিহান মুচকি হেঁসে চলে গেলো বোনের রুমে।
ফিরে এলো মিনিট পাঁচ মিনিট এর মাথায়। কিন্তু ওদের দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলো।
রাহনুমা বেগম রান্না ঘরে কিছু মহিলা কে নিয়ে কাজ করছিল।
কিন্তু বসার ঘরে ছেলে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে অবাক হয়ে এগিয়ে এসে বলল
-“এসব কি রিহান?
বোন কে বোরকা কেন পড়িয়েছো?”
পরপরই রাশির দিকে তাকিয়ে বলল
-“এসব কি?
আমি যে শাড়ী টা রুমে রেখে এসছি ওটা পড়ে রেডি হয়ে এসো।”
রিহান মাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে।বোনের হাত টেনে ধরে বসার ঘর পেড়িয়ে বারান্দায় এসে উঠানের রাস্তার দিকে তাকি অনাকাঙ্খিত নামে ডেকে উঠলো
-“সমুদ্র?”
পরপরই কয়েকটা ডাক দিলো কিন্তু কোনো জবাব এলো না। এর মধ্যে সবাই বসার ঘর ছেড়ে বারান্দায় জড়ো করলো।
আজগর শিকদার রাগান্বিত কণ্ঠে বলল
-“কি শুরু করেছো?
সমুদ্র কোথা থেকে আসবে এখানে!ও ঢাকা গিয়েছে কাল।
আর তোমার এমন ব্যবহার এর মানে কি?”
রিহান যেনো শুনলই না আজগর শিকদার এর কথা এমন একটা ভাব করে।
বরং বোনের হাত যেভাবে ধরে ছিল সেভাবেই নিয়ে এগিয়ে যেতে হাতে টান অনুভব করে। রাশি নিজোও অবাক হয়ে নিজের বা হাতের দিকে দৃষ্টি দিতে দেখলো ময়নাল রাশির হাত টা টেনে ধরে আছে।
রিহান রক্তচক্ষু তাকালো ময়নালের দিকে।এই ছেলে কে সে কোনো কালেই পছন্দ করে না।কাপুরুষ এর থেকে কম নয় এই ছেলে।মেয়ে একা পেলেই নিজের আসল রূপ দেখায়।
শুধু সময়ের অপেক্ষা করে এতো দিন কিছু বলে নি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গিয়েছে।
কিন্তু আজ আর নয়।
সপাটে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো ময়নালের চোয়ালে।
ময়নাল তৎক্ষনাৎ রাশির হাত ছেড়ে দিয়ে মাথা এক পাশে ঝুঁকে পড়ে।আজগর শিকদার সহ সবাই বিস্ফোরণ নয়নে তাকিয়ে রইলো রিহানের দিকে।
রিহান নিজের ডান হাত টা উঁচু করে বোন কে বাম বাহুতে আগলে নিয়ে তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে শাসানোর স্বরে বলল
-“আমার বোনের দিকে আর একবার চোখ তুলে তাকালে তোর চোখ আমি উপড়ে ফেলবো।”
-“এসব কি রিয়াজ?
আমাদের ডেকে এনে অপমান করছো তুমি।”
-“আপনাদের ডেকে এনেছে?
না-কি আপনার সেধে সেধে এসেছেন?”
লতিফ মেম্বার এর কথা গুলো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠনে দাঁড়িয়ে কথা গুলো সমুদ্র বলে উঠলো।
সাথে মিরাও রয়েছে।
সমুদ্র এগিয়ে এসে আজগর শিকদার এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল
-“আপনার সম্মান খুব প্রখর তাইনা?
আচ্ছা,আমি দেখব আজ তাহলে সেটা।”
কথা টা শেষ করে সমুদ্র রাশির হাত টা ধরে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ হতেই রিহান আদেশের স্বরে বলে উঠলো
-“ভালোবেসে হিরো নয় ভিলেন হবে দরকার পড়লে।
আমার মতো হিরো হয়ে ভালোবাসা ত্যাগ করো না। ভিলেন হয়ে ভালোবাসা জয় করে নাও।”
সমুদ্র মুচকি হেঁসে চলে গেলো। সে কোনো দিন হিরো হতে চায়ও না।ভিলেন হতে চায়।আর ভিলেন হারাতে শিখে না হয় মারতে শিখে নয় মরতে।
সমুদ্রর সাথে অনেক গুলো ছেলে রয়েছে তাঁরা সবাই বাইক নিয়ে সমুদ্রের পেছন পেছন গেলো।
আজগর শিকদার চুপ করে রইলো এখন চাইলেও আর কিছু করতে পারবে না কিন্তু তার নাতি কি করতে চাচ্ছে?
আর মেয়ে টাকে নিয়ে কোথায় গেলো?
——
-“স্যার,ছোট স্যার রাশি ম্যাডাম কে তুলে নিয়ে বাগান বাড়িতে চলে গেছে!”
-“ড্রাইভার কে এক্ষুনি গাড়ি বেড় করতে বলো রহমত।”
রহমত আলী নিজের চোখের চশমা টা ঠেলে, বাম হাতের বগলের তলায় ব্যাগ টা
ডান হাতে ধরে রেখে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো।
ড্রাইভার গাড়ি বেড় করলে আজগর শিকদার এসে গাড়িতে বসলেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।
সামিরা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে দিকে তাকিয়ে রইলো।
কি হয়েছে? সমুদ্র তো ঢাকা তাহলে রহমত আলী কি বলল?
সামিরা বেগম কথা গুলো ভাবছিল মেইন দরজায় দাঁড়িয়ে। বাড়িতে দুইটা কাজের লোক রয়েছে। সারাহ ঘুমিয়ে আছে।তিনি কিছু ভেবে রুমে এসে কাউ কে কল দিলো।
——-
-“এখন তোমার ইচ্ছে।
আমাদের বিয়ে দিয়ে আমার ভালোবাসা এক করে দিবে নাকি নিজের সম্মান হারাবে!”
সমুদ্র কফির মগে কফি নিতে নিতে বলল।
আজগর শিকদার ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসা একটু আগেই তাঁরা এখানে এসে পৌঁছেছে। রাশি কে দেখতে পাচ্ছে না হয়তো ভেতের ঘরে রেখেছে। আজগর শিকদার মনে মনে রাশি কে বাজে মেয়ের উপাধি দিলেন।
কেমন মেয়ে একটা ছেলের সাথে একা একটা বাড়িতে বিয়ের আগেই।ছিঃ বাজে ব্যাপার। আর নাতিকেও মনে মনে বাহবা দিলো।নাতির বুদ্ধি সাথে সাহস দেখে।ভাবা যায় মেয়ে কে সবার সামনে দিয়ে কি সুন্দর তুলে নিয়ে এলো।এখন আর কোনো উপায়ও নেই।কিন্তু তিনি এতো সহজে হার মানার পাত্র নয়।
তাই তিনি মনের কথা মনে রেখে নাতির কথার বিপরীতে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল
-“হুমকি দিচ্ছো দাদু ভাই?”
-“উঁহু, একদম না।
আমি তো শুধু জানালাম।”
সমুদ্র কফি নিয়ে এসে দাদার বরাবর চেয়ার টায় বসে হেয়ালি স্বরে বলে উঠলো।
আজগর শিকদার মনে মনে তব্দা খেলো।
নাতি তাঁর কথা পাত্তা দিচ্ছে না। আর কাজের কথায় না আসলে যে পাত্তা দিবেও না ঠিক বুঝতে পারলো।
গলা খাঁকড়িয়ে পাশে দাঁড়ানো রহমত আলীর দিকে এক তাকালো।
পরপরই দৃষ্টি ঘুরিয়ে নাতির দিকে তাকিয়ে আবার প্রশ্ন করলো
-“ওই মেয়ের মধ্যে এমন কি আছে যে তুমি ওকে ছাড়া বিয়ে করবে না?”
-“তুমি একবার আমার চোখ দিয়ে দেখো।
ভালোবাসি আমি ওকে।”
সমুদ্রের সোজাসাপটা জবাব।
আজগর শিকদার কেশে উঠলো।রহমত আলী চশমা ঠেলে দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরাল।
আজগর শিকদার সে দিক হতে চোখ সরিয়ে নিলো।সমুদ্রের দিকে ফের তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলো
-“মেয়ে টা কোথায়?”
-“রুমে।”
কথা টা বলেই সমুদ্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। শার্ট এর হাতা ফোল্ড করতে করতে ডাইনিং ছেড়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ হতেই আজগর শিকদার নরম স্বরে বলল
-“বাড়ি পাঠাও মেয়ে টাকে।
আর রহমত ওর বাবা কে খবর জানিয়ে দাও।
রাতেই যাচ্ছি আমরা বিয়ের সব ব্যবস্থা যেনো হয়ে যায়।”
সমুদ্র সশব্দে বাঁকা হাসলো।
এই লোক নিজের সম্পদের আর নিজের সম্মান কে ভীষণ বড় করে দেখে । নিজের সম্মান হারানোর ভয়।
সমুদ্র নিশ্চিত ছিল এমন কিছু না করলে আজগর শিকদার কিছুতেই কিছু হতে দিত না।
তাই তো এমনটা করতে হলো।জেদে সত্যি যেমন মানুষ কে ধ্বংস করে তেমন কখনো কখনো সফল হতেও সাহায্য করে।
#চলবে….