প্রিয় আসক্তি পর্ব-১২

0
285

#প্রিয়_আসক্তি 🔥
তিতলী
পর্ব,,,,১২

❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️

বিয়ে বাড়ি মুহুর্তেই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। কিছু কিছু মানুষ ফিসফিস করছে। কেউ কেউ বুঝেই উঠতে পারছে না কি হলো। রিয়ার মা এদিকে বিলাপ করে কান্না শুরু করেছে। রিয়ার বাবাও চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

বিভোর বুঝতেই পারছে কাজটা নাহিদ চৌধুরীর। কিন্তু বাইরে থেকে কেউ যে ভেতরে প্রবেশ করেনি সেই বেপারে নিশ্চিত বিভোর। তবে কি বাড়ির ভেতরেই কারো হাত আছে নাহিদের সাথে। কিছু ভাবতে পারছে না সে। এতদিন,এতো অপেক্ষার পর আজ সে তার প্রিয়কে নিজের নামে করে নিবে বলে কতোটা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছিলো। অথচ মুহুর্তেই এমন কিছু ঘটে গেলো যে সব আনন্দে পানি পড়লো। তবে রিয়ার জায়গায় যে প্রিয়তার থাকার কথা ছিলো বিভোর পিয়ুস সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে।

পিয়ুস এগিয়ে এসে বলে,,,

:-এখন কি করবি বিভোর? নাহিদের সম্ভব্য সব জায়গায় আমাদের লোক লাগিয়ে খোঁজ নিয়েছি। রিয়াকে সেসব জায়গায় কোথাও নিয়ে যায়নি।

:-বুঝতে পারছি না কি করা উচিত আমার। আগের বার না হয় প্রিয়তার হাতের ব্রেসলেটের জন্য ওকে সহজে ট্রেস করতে পেরেছিলাম কিন্তু রিয়ার কাছে তো তেমন কিছু নেই।

বিভোরের বাবা সহ উপস্থিত সকলে বিভোরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক বুঝতে পারলো না কেউ বিভোর কি বললো। সাজিদ খান ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,,

:- আব্বু তুই কিসের কথা বলছিস?? ব্রেসলেট মানে??

:-আসলে বাবা নাহিদ চৌধুরী যে আমাদের পরিবার বা কাছের মানুষদেরকে টার্গেট করতে পারে সেই বিষয়ে আমার আর পিয়ুসের আগেই ধারনা ছিলো। সেখানে আমাদের দুজন অফিসের জন্য বাইরে যাওয়া ছাড়াও প্রিয় আর বিভাকে কলেজের জন্য বাইরে বেরোতে হয়,এই জন্যই ওদের দুজনের বিপদে পড়ার চান্স ছিলো বেশি। এই জন্যই আমরা প্রিয়র একটা ব্রেসলেট আর বিভার গলার চেইনের লকেটে একটা ট্রান্সমিটার ডিভাইসের চিপ লাগিয়ে দেয়। যাতে ওরা কখনো বিপদে পড়লেও আমরা ওদেরকে সহজে ট্রেস করতে পারি।
বিভোরের কথা শুনে বিভা অবাক হয়ে নিজের গলার দিকে তাকায়। হাত দিয়ে লকেটটা ছুঁয়ে দেখে। এটায় সেদিন পিয়ুস ওকে প্রথমবারের মতো উপহার দিয়েছিলো। কিন্তু সেটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও জানতোই না। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই দৌড়ে যায় ভাইয়ের কাছে।

বিভা ছুটে গিয়ে বিভোরের হাত ধরে বলে,,,

:-ভাইয়া তুমি কি বলছো,,মানে প্রিয়তা আপুর হাতে যে ব্রেসলেট টা ছিলো সেটায় মাইক্রো চিপ আছে??
বিভোর মাথা নাড়ায়। বিভা উত্তেজিত হয়ে বলে,,,

:- তাহলে দেরি করছো কেনো?? ওইটা এখনই ট্রেস করো ভাইয়া। ওই ব্রেসলেট টা রিয়া আপুর হাতেই আছে।

বিভার কথা শুনে সবাই যেনো একটু আশার আলো দেখতে পেলো। বিভোর অবাক হয়ে বিভার দিকে তাকিয়ে বলে,,

:- কি বলছিস তুই?? ওইটা রিয়ার হাতে কি করে গেলো??

বিভা আমতা আমতা করে বললো,,

:- আসলে প্রিয়তাপু খুলতে চায়নি। আসলে আমিই তখন জোর করাতে আপু কিছুক্ষণের জন্য ব্রেসলেট টা রিয়া আপুর হাতে পরাতে দিয়েছিলো। আমরা যে দু জন কনে সাজিয়েছিলাম তাই রিয়া আপু্য হাতে প্রিয়তাপুর ব্রেসলেট দেখে যেনো তোমরা কনফিউজড হয়ে যাও সেই জন্যই পরিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু সেটা এভাবে কাজে দেবে কে জানতো।

বিভার কথা শুনে বিভোর দেরি করেনা। দ্রুত ল্যাপটপ অন করে। লোকেশন ট্র্যাক করার পর যা দেখে তাতে রীতিমতো অবাক বিভোর আর পিয়ুস। একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এখন বিভোর বুঝতে পারে ঘর শত্রু বিভীষণ টা কে,, আসেপাশে চোখ বুলিয়ে তাকে কোথাও দেখতে পায়না। মানে সে আগেই সটকে পড়েছে। কিন্তু এখন সেসব ভাবলে চলবে না। আগে রিয়াকে সহি সালামতে রেসকিউ করতে হবে।
বিভোর পিয়ুসকে দ্রুত গাড়ি বের করতে বলে। আবির এগিয়ে এসে বলে,,,

:- আমিও যাবো চল।

তারপর তিনজন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রিয়তা আর বিভা সবাইকে সামলায়। প্রিয়তার বুকের ভেতরে কাঁপছে। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করছে যেনো তার জন্য প্রানাধিক প্রিয় বান্ধবীটার যেনো কোন ক্ষতি না হয়। সুস্থ স্বাভাবিক ভাবেই যেনো ফিরিয়ে আনতে পারে রিয়াকে।

________

পিট পিট করে চোখ খুলতেই একটা ভাঙাচোরা স্টোর রুমে নিজেকে আবিষ্কার করে রিয়া। চেয়ারের সাথে হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে।গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ হয়ে আছে। কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে গলা ভেজানোর বৃথা চেষ্টা করে সে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কয়েকবার মাথা ঝাড়া দিয়ে ভালো করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে সে একচুয়ালি কোথায়।

আস্তে আস্তে সবকিছু মনে পড়ে,,সে তো প্রিয়তার রুমে বসে ছিলো ডুপলিকেট বউ সেজে। তারপর প্রিয়তা ওয়াশরুমে গেলো। কিছুক্ষণ পরেই কেউ পেছন থেকে কেউ মুখ চেপে ধরলো। তারপর….তারপর আর কিছু মনে করতে পারে না রিয়া। মনে মনে ভাবে,,,

:- আবে তেরি তো ওয়াট লাগ গেয় রিয়া। তু কিডন্যাপ হো গেয়া।

চোখ বড় বড় করে চারদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে এটা কোথায়। কিন্তু কিছুই চেনে না সে। হঠাত কিছু মনে হতেই ভয়ে শিউরে উঠলো রিয়া। এরা আবার কিছু করেনি তো তার সাথে!!! নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সব কিছু ঠিক ঠাক আছে। কালকের বউ এর সাজে আছে এখনো।

রিয়া বাইরে কারো চিল্লানোর আওয়াজ শুনে কান সজাগ করে শুনতে থাকে। কেউ যেনো কাউকে ধমকাচ্ছে।

:- স্টুপিড কোথাকার। তুলে আনার সময় মুখ দেখে নিতে পারোনি?? এক জনের জায়গায় আরেকজন কে তুলে এনেছো!!

:- সরি স্যার। একচুয়ালি চারদিকে এতো মানুষ ছিলো যে মুখ দেখার সময় পায়নি। আমি ভেবেছিলাম যে ওইটাই প্রিয়তা।

এদিকে রিয়া বুঝতে পারে আসলে এরা প্রিয়তাকে কিডন্যাপ করতে গিয়ে তাকে গালতি সে তাকে তুলে এনেছে।

:- ওত তেরি,,,,তার মানে এরা গালতি সে মিসটেক করেছে। এরা আসলে প্রিয়ু কে,,,,আবে তেরি তো,,,এতো বড় সাহস!!!

নাহিদ চৌধুরী মিশকাকে আরো কিছু বলতে নিবে তার আগেই রিয়ার চিৎকার শুনতে পাই,,,

রুম থেকে চিৎকার করে বলছে রিয়া,,,

:- আবে কোন স্টুপিড গাধার বাচ্চা কিডন্যাপ করেছে আমাকে?? এখনো ঠিকঠাক করে কিডন্যাপও করতে পারিস না। আবার আমার হাত বেঁধে রেখেছিস।

রিয়ার কথা শুনে নাহিদ চৌধুরীর রাগ আরো তরতর করে বেড়ে যায়। মিশকার ভুলের জন্য একটা পুঁচকে মেয়ে তাকে স্টুপিড বলছে বেপারটা ঠিক হজম হয় না তার। নাহিদ চৌধুরী সোজা রুমে ঢুকে রিয়ার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়।

:- তোর এতো বড় সাহস। আমাকে স্টুপিড গাধা বলিস।

রিয়া দমে না গিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,,,

:- তো গাধা কে গাধা নয়তো কি বলো!! একে তো ভুল করে তুলে এনেছেন তার উপর দড়ই দিয়ে বেঁধে রেখেছেন।

:- তুই কী ভাবছিস ভুল করে তুলে এনেছি বলে তোকে ছেড়ে দেবো?? ওই বিভোর খানকে কি করে প্যাচে ফেলতে হয় এই নাহিদ চৌধুরী খুব ভালো করে জানে। নিজের জান বাঁচাতে চাস তো চুপচাপ বসে থাক।

রিয়া আরো কিছু বলতে নিবে তার আগেই হন্তদন্ত হয়ে আসে মিশকা। ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,,

:- সর্বনাশ হয়ে গেছে। বাইরে পুলিশ চারদিকে ঘেরাও করেছে। ওরা আমাকে সন্দেহ করলো কি করে। এবার কে বাঁচাবে আমাদের??

এমনিতেই মেজাজ খারাপ ছিলো নাহিদ চৌধুরীর। আরো একবার বিভোরের কাছে হারতে চলেছে জেনে একদম হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো সে। মুহুর্তেই রাগের চোটে পকেট থেকে রিভলবার বের করে মিশকার মাথা এফোড় ওফওড় করে দিলো।
চোখের সামনে মিশকাকে মেরে ফেলতে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছে রিয়া। রিয়ার রক্তে মারাত্মক ফোবিয়া আছে। একবিন্দু রক্ত দেখতে পারেনা সে। সেখানে মিশকার শরীর থেকে রক্তের ফোয়ারা ছিটিয়ে পড়তে দেখে থরথর করে কাঁপতে থাকে। পেটের ভেতর সবকিছু কেমন দলা পাকিয়ে আসে।
নাহিদ চৌধুরী রিভালবারটা ঘুরিয়ে রিয়ার দিকে তাক করে। শুট করতেই নিবে তখনই বিভোর দরজার কাছ থেকে নাহিদের হাতের কব্জিতে শুট করে। নাহিদের হাত থেকে রিভলবার ছিটকে পড়ে যায়। দুজন পুলিশ এসে নাহিদকে এরেস্ট করে নেয়। আর কয়েকজন এসে মিশকার ডেডবডি তুলে নিয়ে যায়।

আবির দৌড়ে এসে রিয়ার হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকে।থরথর করে কাঁপছে রিয়া। বিড়বিড় করে বলছে,, রক্ত,, রক্ত….
আবির আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

:- রিয়া টিয়া পাখি কিছু হয়নি। সব ঠিক আছে দেখো। কিছু হয়নি।
আবিরের একটা কথাও হয়তো রিয়ার কানে পৌঁছায়নি। সে যেনো কোন এক ঘোরের মধ্যে আছে। বিড়বিড় করতে করতেই আবিরের বুকেই ঢলে পড়ে রিয়া।

কিছুক্ষণ পরে হসপিটাল থেকে প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট নিয়ে জ্ঞান ফিরে আসে রিয়ার। তখন থেকে তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে আবির, বিভোর,আর পিয়ুস।
কিন্তু রিয়ার মুখে কোন কথা নেই। আবিরের খুব কষ্ট হচ্ছে। সারাদিন তোতা পাখির মতো বকবক করতে থাকা মেয়েটার এমন নিশ্চুপ থাকাটা যে তাকে ভিন্ন যন্ত্রনা দিচ্ছে। সেটা কি সে বুঝতে পারছে না?? আবির ব্যাথাতুর নয়নে তাকিয়ে থাকে প্রেয়সীর মলিন মুখের দিকে।

এতক্ষণে রিয়া চোখ তুলে তাকায় বিভোরের দিকে। আস্তে আস্তে বলে,,

:- জিজু আমাদের তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরতে হবে। প্রিয়ু নিশ্চয় বউ সাজে বসে আছে আপনার অপেক্ষায়। আমার জন্য আপনাদের এতো দিনের স্বপ্নটা সত্যি হতে হতেও বাঁধা হয়ে আছে।
বিভোর রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,,

:- তুই ওতো ভাবিসনা। বিয়ে একটু দেরীতে হলেও সমস্যা নেই। তোকে আগে সুস্থ হতে হবে। আমি বাড়িতে ফোন করে বলে দিয়েছি। চিন্তা করিস না।

:- আমি একদম ঠিক আছি জিজু। আমি এক্ষুনি বাড়ি ফিরে যাবো।
রিয়ার জোরাজুরিতে হসপিটাল থেকে ডিসচার্চ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হয় বিভোররা।

_______
বিয়ে বাড়িতে এক দিকে রিয়ার ফিরে আসাতে সবাই খুব খুশি। অন্যদিকে কিছু কুটনি টাইপের লোকেদের কথায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে রিয়া, প্রিয়তা,আর বিভোরের পরিবার।

একজন মুখ বেঁকিয়ে বলেন,,

:- এরকম রূপসী একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে কি এমনি এমনি ছেড়ে দিয়েছে নাকি!! আমরা যেনো কিছু বুঝিনা।

আরেকজন বলে,,

:- আহারে বেচারির কি দোষ!! বান্ধবীর বিয়েতে মজা করতে গিয়ে বিপদে পড়ে নিজের সবটা খুইয়ে বসেছে। মায়া হয় মেয়েটাকে দেখলেই।

আবার আরেকজন বলে,,

:- এসব কথা কি লুকানো থাকে নাকি!! সব জানাজানি হলে মেয়েটার বিয়েও তো দিতে পারবে না। এরকম ধর্ষিতা একটা মেয়েকে কেই বা বিয়ে করবে।

সবাই যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে এসব শুনে। বিভোর পিয়ুস সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করে এমন কিছুই হয়নি। কিন্তু তারা বিশ্বাস করেনা। চারদিকে নানা ধরনের কু কথা বলতে থাকে।
প্রিয়তা রিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। রিয়া যেনো বোবা হয়ে গেছে এদের কথা শুনে। কতো ছোট আর কুটিল মন হলে মানুষ না জেনে একটা মেয়েকে এভাবে বলতে পারে। থরথর করে কাঁপছে রিয়া। দুচোখে পানি ভেসে যাচ্ছে। কি মনে করে করুন চোখে আবিরের দিকে তাকায় রিয়া। দেখে আবির এক কোনে মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।

এদিকে আবিরের মাথা গরম হয়ে আছে। রাগে ঘাড়ের রগ ফুলে আছে। রাগে শরীর কাঁপতে থাকে আবিরের। নিজের প্রেয়সীর নামে আর একটা বাজে কথা শুনলে সে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না।

রিয়ার মা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। রিয়ার বাবাও নিজের একমাত্র প্রান প্রিয় মেয়ে, তার রাজকন্যার চরিত্রে কালিলেপন করতে যেন মুছড়ে পড়েছেন ।তিনি কিছুতেই সহ্য করতে পারছেন না তার ফুলের মত মেয়েটার চরিত্রে সবাই এভাবে আঙুল তুলছে। বুকে ব্যথাই চাপ বাড়তে থাকে। তিনি বুক ধরে সোফায় বসে পড়েন। সাজিদ খান ,আনোয়ার হোসেন এগিয়ে এগিয়ে আগলে ধরেন রিয়ার বাবাকে। রিয়া দৌড়ে এসে বাবাকে ঝাপটে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,,

:- বাবা কি হয়েছে তোমার ??কি হলো তোমার?? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বাবা?? বাবা বিশ্বাস করো আমার সাথে এরকম কিছুই হয়নি। এরা না জেনে এসব বলছে বাবা। বাবা তুমি বিশ্বাস করোনা তোমার মেয়েকে??

একজন মহিলা এগিয়ে এসে বলে ,,,

:-এখন বাবাকে অসুস্থ হতে দেখে মিথ্যা বলছো মেয়ে!! তোমার আলু খালু অবস্থায় প্রমাণ করে তোমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু হয়েছে। আমরা কি সাধে এসব কথা বলছি?? আমাদের চুল কি হাওয়াই পেকেছে ??

এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না আবীর। এগিয়ে এসে হুংকার দিয়ে বলে,,

:- এনাফ ইজ এনাফ !!!অনেকক্ষণ ধরে আপনাদের বাজে কথা সহ্য করছি!! আমরা তিনজন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা গিয়ে পরিবেশ সবকিছু দেখেছি।আপনারা ভুলভাল কথা বলে একটা নিষ্পাপ মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলবেন এই অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে?? এখানে আত্মীয়তা রক্ষা করতে এসেছেন চুপচাপ খাওয়া-দাওয়া করে চলে যাবেন। আর একটা বাজে কথাও যেন আপনাদের মুখে না শুনি!!

আবিরের কথায় সেই মহিলার গায়ে লাগে। নিজেকে অপমানিত বোধ করেন। সেই মহিলাও জেদ ধরে বলেন,,

:- তোমার এতো গায়ে লাগছে কেন ছেলে?? তুমি আবার ওর নাগর-টাগর হও নাকি??

:- দেখুন একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না!!

আরেকজন মহিলা এগিয়ে এসে বলেন,,,

:- আমাদের না হয় ধমকে চুপ করিয়ে দিবে। কিন্তু সবার মুখটা চুপ করাতে পারবে না।সবাইকে তো আর বিশ্বাস করাতে পারবেনা যে ওর সাথে কিছু হয়নি। এই মেয়েকে এখন বিয়ে দেবে কি করে ??কে করবে এই মেয়েকে বিয়ে??

আবির আর সহ্য করতে না পেরে চেচিয়ে বলে,,,

:- আমি করবো বিয়ে ।আপনার কোন সমস্যা ??এই বিয়ে বাড়িতেই একসাথে দুটো বিয়ে হবে। আজ এবং এক্ষুনি!!

আবিরের কথা শুনে সবাই বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে

আবিরের বের বাবা-মা কেউ নেই। আবীর একা একাই থাকে। কয়েক বছর আগেই আবিরের বাবা-মা মারা গেছে। আবিরের কোন ভাই বোন না থাকাই ওর আগে পিছে কেউ নেই।আবির যথেষ্ট ভালো ছেলে। একজন বড় হার্ট সার্জন। বিভোর আর পিয়ুসের বাবা-মা আবিরকে যথার্থ ভালোবাসে। নিজের ছেলের মত ট্রিট করে ।তারা জানে আবির খুব ভালো ছেলে।
আবির এগিয়ে গিয়ে রিয়ার বাবার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে।রিয়ার বাবার দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,,

:- আঙ্কেল আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে আমি এই মুহূর্তে রিয়াকে বিয়ে করতে চাই। আমার সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে সাজিদ আঙ্কেল এবং আনোয়ার আঙ্কেলকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। তারা আমাকে ছোট থেকেই দেখছে।
রিয়াকে আমি খুব ভালো রাখবো ।ওকে কখনোই কষ্ট পেতে দেবো না ।আপনার হাত ছুঁয়ে য়ে কথা দিচ্ছি।

আবিরের কথায় রিয়াও যেন চূড়ান্ত অবাক হয়েছে ।যে ছেলেটা তাকে সহ্য করতে পারেনা সে নাকি তাকে বিয়ে করবে। আবার এতগুলো মানুষের সামনে রিয়ার ঢাল হয়ে দাঁড়ালো। রিয়া বুঝতে পারছে না আবির এমন কেন করছে!!

আবিরের কথায় রিয়ার বাবা-মা ও যেন স্বস্তি পায়। কেউ কোনো আপত্তি করে না। সবাই নিজেদেরকে ধাতস্থ করে একসাথে দুটো বিয়ের আয়োজনে লেগে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে বাড়িটা আবার রমরমে হয়ে ওঠে। যারা এতক্ষণ কুটিল কথাবার্তা বলছিলো তারা মুখে ঝামা ঘষা মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

___________

বহু ঝড় ঝাপটার পর এতক্ষণে নির্বিঘ্নে দু জোড়া কপত কপোতি একে অপরের নামে বাঁধা পড়লো।
যেহেতু বিভোরের বাড়িতেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে তায় প্রিয়তাকে আর বিদায় নিতে হয়না। তবে পিয়ুস তার বাবা মা কে নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে। বিয়ের দিন মেয়ের শশুর বাড়িতে থাকাটা শোভনীয় নয়। নিয়ম বলেও তো একটা বেপার আছে। তাই তারা আর থাকে না।
তবে আবির রিয়াকে নিয়ে ওর নিজের বাসায় ফিরে যায়। বিভোরের পরিবার প্রথমে যেতে দিতে চাইনি কিন্তু আবির চায় সে তার নতুন জীবন টা তার নিজ বাসায় থেকে শুরু করুক তার প্রেয়সিকে নিয়ে।

To be continue,,,,,,,