প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-০৭

0
183

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৭

আজ শুক্রবার। কড়া রোদে নাজেহাল মানুষ। সকাল ৯ টা বাজে। অরিন সকাল সকাল তৈরি হয়ে নিলো কোচিং সেন্টারের উদ্দেশ্যে বেরোনোর জন্য। আজ সেখানে তার ডিউটি আছে পরীক্ষার হলে। দশম শ্রেনীর গনিত পরীক্ষা। দ্রুত কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে না খেয়েই বেরিয়ে পরলো সে। সাড়ে নয়টা থেকে পরীক্ষা শুরু। যেতেও দশ পনেরো মিনিট লাগবে। তাই আর খাওয়া হলো না এখন। অরিন সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে রিকশার অপেক্ষায় দাঁড়ালো। সাধারণত সে রিকশায় খুব বেশি যাওয়া আসা করে না তবে আজ প্রচন্ড দেরি হয়েছে। হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়।

কোনো মতে রিকশা ডেকে উঠে পরলো তাতে। রিকশা চালক দ্রুত চালিয়ে পৌঁছে দিলো তার গন্তব্যে। ভাড়া মিটিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে অফিস রুমে পৌঁছালো। ঘড়িতে ঠিক নয়টা বেজে পনেরো মিনিট। অরিন অফিস-রুমে থেকে খাতা আর প্রশ্নপত্র নিয়ে চলে আসলো ক্লাস রুমে। অনেক বড় ক্লাস রুম। তার সাথে জাহিনের ও একই রুমে ডিউটি পরেছে। জাহিন অরিনকে দেখে দ্রুত কাছে আসলো তার। প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে বলল,,

“আজ দেরি হলো যে তোমার?”

অরিন খাতা গোছাতে গোছাতে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,,
“তেমন কিছু যা। আজ ঘুম ভাঙতে একটু দেরি হয়েছে”

এরপর কথা হলো না দু’জনের মাঝে। সময় হলো অরিন এবং জাহিন মিলে শিক্ষার্থীদের খাতা ও প্রশ্নপত্র দিয়ে দিলো। কক্ষে মোট চল্লিশ জন ছাত্র ছাত্রী আছে। তবে কোনো শব্দ হচ্ছে না। কারণ এখানে প্রতিটা শিক্ষার্থী নিজেদের মতো করে লিখছে। জাহিন আজ সুযোগ পেয়েছে প্রিয়তমাকে মন ভরে দেখার। সে গার্ড কম অরিনকে দেখছে বেশি। অরিন ব্যাপারটা বুঝলেও কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া করলো না। কি বলবে! একজন মানুষ তাকে ভালোবাসতে পারে, ভালোবাসা পাপ নয়। ভালোবাসা এক অদ্ভুত অনুভূতি।

যা কখনো কাউকে বলে বোঝানো যায় না। সেও তো পুড়ছে এই দহনে। কি করবে সে! তবে সে ভেবেছে যদি তাকে ধূসর নিজের অনুভূতির কথা জানায় তবে সেও না হয় সুযোগ দিলো তাকে। ভাগ্যে যা আছে হবে। তাই বলে কি নিজেকে একটু সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। হ্যাঁ উচিত, প্রেম না হয় সেও একটু করলো। ক্ষতি কি তাতে। আকাশ কুসুম ভাবনার মাঝে পরীক্ষা শেষ হলো। শিক্ষার্থীরা একে একে বের হলো সবাই। অরিন ও জাহিন খাতাপত্র গুছিয়ে নেয়। অরিন বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায়, তখন পেছন থেকে জাহিন বলে উঠে,,

“অরিন তুমি কি আমায় আজ একটু সাহায্য করতে পারবে?”

“কি ব্যাপারে?”

জাহিন ইতস্তত করতে করতে বলল,
“আসলে আম্মার জন্য একটা শাড়ি কিনবো তবে আমি তো ছেলে মানুষ অতো শত বুঝি না। তুমি যদি একটু সাহায্য করতে খুব উপকার হতো”

অরিন বেশ কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর উত্তর দিলো,,“ আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি কি এখন যাবেন না কি বিকালে?”

“না না এখনই যাবো।”

“আচ্ছা তাহলে আগে এখানকার কাজগুলো সেরে নেই তারপর না হয় যাবো।”

দু’জন আর কথা বাড়ালো না। যে যার যার মতো কোচিং-এর বাকি কাজগুলো সেরে নিলো। অতঃপর দু’জন কোচিং সেন্টার থেকে বের হয়ে এক সঙ্গে হাঁটতে শুরু করলো। অরিন ও কথা বলছে না আর না কথা বলছে জাহিন। জাহিন কিছুটা আগে হাঁটছে আর অরিন পেছনে। মার্কেটে এসে দু’জন একটা দোকানে ঢুকলো। অনেক খোঁজা খুঁজির পর একটা শাড়ি পছন্দ করলো অরিন। জাহিন শাড়িটা কিনে নিলো। এরপর আরেকটা দোকানে ঢুকে বোনের জন্য দু জোড়া চুড়ি নিলো। দু’জন এক সঙ্গে মার্কেট থেকে বের হলো। জাহিন অরিনকে একটা রিকশায় তুলে দিলো। ভাড়া সেই দিয়েছে কারণ অরিনকে নিয়ে সে এসেছে। অরিন যদিও নিষেধ করেছিলো সে শুনেনি তবে।

অদূরে দাঁড়িয়ে কেউ একজন এই দৃশ্যটি দেখে নিলো। আঁখি জোড়ায় রাগ স্পষ্ট। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে চোখ বুঝে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো সে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার বৃথা চেষ্টা চালালো সে। পুরুষটি নিজেকে শান্ত করতে বাইকে চড়ে বসলো। এখন প্রথমে নিজেকে শান্ত করতে হবে। অতঃপর কিছু একটা করবে। প্রিয় নারীকে অন্য কারো সাথে সহ্য করা দুষ্কর। ধূসর প্রচন্ড গতিতে বাইক চালাচ্ছে।

“ তোমার মৃত্যু আমি সহ্য করে নিবো, তবে তোমাকে অন্য কারো হতে দেখার ধৈর্য বা শক্তি কোনোটাই নেই আমার। তোমায় অন্য কারো সাথে দেখার আগে মৃত্যু হোক আমার”

জাহিন রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটালো। রিকশা থেকে নেমে নিজেদের আধাপাকা বাড়িটাতে প্রবেশ করলো। বাবা একজন ছোট খাটো ব্যবসায়ী। মা বোন বাবাকে নিয়েই জাহিনের পরিবার। মোটামুটি একটা সুখী পরিবার। জাহিন শপিং ব্যাগ নিয়ে মায়ের হাতে দিয়ে বললো,,

“আম্মা এটা তোমার জন্য। ইদে পারলে পড়ো।”

জাহিনের আম্মু সৃজনী রহমান শাড়িটা হাতে নিলেন। খুলে দেখলেন ছেলের দেওয়া প্রথম উপহার। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়িটা শরীরের উপর দিয়ে দেখছেন। এতো খুশি মনে হয় সে আগে হয়নি কখনো। ছেলের দেওয়া উপহার পেলে বোধ হয় এমন আনন্দ লাগে। আনন্দে আটখানা সৃজনী রহমান। জাহিন মাকে খুশি হতে দেখে ভীষণ খুশি হলো। আর বাবার জন্য আগে থেকে কিনে আনা পাঞ্জাবিটাও দিবে সে। আর বোনকে চুড়িগুলো দিবে। জাহিনের একটু খারাপ লাগলো জায়রাকে বেশি কিছু দিতে পারছে না বলে।

জায়রা নিজের রুম থেকে আসতেই জাহিন দু জোড়া চুড়ি বের করলো। বোনকে পাশে ডেকে চুড়ি জোড়া এগিয়ে দিয়ে বলল,,
“জায়রা এই দু সেট চুড়ি তোর। বুঝিসই তো ভাইয়ের অতো ক্ষমতা নেই তোকে হাজার হাজার টাকার জামা কিনে দেওয়ার। কষ্ট পাস না”

জায়রা ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,“ভাইয়া আমার হাজার হাজার টাকার জামার প্রয়োজন নেই। এই যে তুমি ভালোবেসে আমার জন্য আমার পছন্দের দু ডজন চুড়ি এনেছো আমি এতেই আমি খুশি। আমার আর কিছু লাগবে না”

জাহিন খুশি হলো বোনের বুঝদারতা দেখে। কতো বড় হয়ে গিয়েছে তার বোনটা। বাবা ও কিছুক্ষণ পর আসবে তখন না হয় দিয়ে দিবে বাবার জন্য আনা উপহারটা। রোজা শুরু বারো তারিখ থেকে। আজ আট তারিখ। গত মাসের বেতন পেয়েছে কিছুদিন আগে তাই এখন বোন বাবা মায়ের জন্য সামান্য কিছু কিনলো। সামর্থ্য হলে এর থেকেও ভালো কিছু দিবে। এখন যা সামর্থ্য তার ভেতরেই দেওয়ার চেষ্টা করেছে। জাহিন মা বোনের সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে আসলো।

বুক পকেট থেকে অরিনের এক খানা পুরোনো ছবি বের করলো। খুব কষ্ট করে জোগার করেছে ছবি খানা। আজ তার খুব ইচ্ছে করছিলো অরিনকে এক ডজন চুড়ি কিনে দিতে। তবে তা সম্ভব নয়। অরিন কোনো দিনও নিতো না। তা সে খুব ভালো করেই জানে। জাহিন নিজের বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলো আজকের ঘটনাটা। আজ প্রিয় মানুষটির সাথে কিছু মুহুর্ত হলেও কাটাতে পেরেছে এই অনেক। আর কিছু লাগবে না তার। সে অরিনকে সুখী দেখতে চায়। অরিন সুখী হলেই সে খুশি।

“তোমারে আমি ভালোবাসছি পাওয়ার লাইগা না, আমি জানি তোমারে আমি পাইবো না। তবে আজীবন নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাইসা যাবো তোমারে। সুখী থাইকো প্রানপ্রিয়া”

গভীর রাত। বাইরে পূর্নিমার চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় আলোকিত চারপাশ। অরিন নিজের রুমে বসে বসে পড়ছে। কিছুদিন পর পরীক্ষা। সে কিছুই পড়েনি সারা বছর। এখন সব শেষ করতে হলে পড়তে হবে। পাশে রাখদ মুঠোফোনটি শব্দ করে বেজে উঠলো। অরিন হুট করে এমন হওয়ায় আতঙ্কিত হলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে মুঠোফোনটি তুললো। শেষে ৩০ দেখে বুঝে ফেললো নাম্বারটি কার হতে পারে। মস্তিষ্ক বললো না তুলতে তবে মনের সাথে যুদ্ধ করে পারলো না। রিসিভ করে কানে ধরলো। অপাশ থেকে ভেসে আসলো কাঙ্ক্ষিত পুরুষের রাগ মিশ্রিত কন্ঠ স্বর।

“নিবেদিতা তোমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। পাঁচ মিনিটের মাঝে ছাঁদে আসবে। যদি না আসো তবে আমি আসবো নিচে। এবার ভাবো কি করবে তুমি”

ধূসর কল কাটলো। অরিন হতভম্ব, হতবিহ্বল হয়ে বসে রইলো। মুঠো ফোনটি এখনো কানে। ধূসর যা বললো তা কি সত্য। তার হুশ ফিরলো। দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। এখন না গেলে এই ছেলে নির্ঘাত বাড়িতে চলে আসবে। তার থেকে বরং ছাদে যাওয়াটাই ভালো মনে করলো অরিন। ছাদের উদ্দেশ্য রওনা হলো। পা কাঁপছে। ছেলেটা কি করে বসে কে জানে! এতো রাতেই বা কেনো আসলো। মাথা ভর্তি চিন্তা নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে।

#চলবে~