প্রিয় বিকালফুল পর্ব-১৬

0
55

#প্রিয়_বিকালফুল(১৬)
#তানিয়া_মাহি(নীরু)

গাড়ি চলছে নিজ গতিতে। অনেকটা পথ পেরিয়ে একটা ছোট মহল্লার মধ্য দিয়ে চলছে। উৎস গাড়ি ড্রাইভ করছে। নিতু পাশের সিটে চুপচাপ বসে আছে। কিছুক্ষণ পরপর শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে তেরছাভাবে নিতুকে দেখছে উৎস। মাঝেমধ্যে নিতুও অসহায়ের মতো উৎসকে দেখছে। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই নিতু আর চুপচাপ বসে থাকতে পারল না। মৃদু গলায় বলে উঠল,

“আমাকে প্রয়োজনে এখানেই নামিয়ে দিয়ে যান। ওই বাড়িতে আমি যেতে চাই না। আমি দম বন্ধ হয়ে মা*রা যাব। আমাকে রাস্তার এই পাশেই নামিয়ে দিয়ে ফিরে আন আপনি।”

উৎস সামনের দিকে নজর স্থীর রেখে জবাবে বলল,
“আমি তোমাকে ঠিকানাহীনভাবে যেখানে সেখানে ছেড়ে দিতে পারি না। বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি। কোন বিপদ হলে আমি আছি। আর তাছাড়া আমাদের এই সম্পর্কটা আগপিছ ভেঙেই যেত তুমি আগে আগে বিচ্ছেদ চেয়ে ভালো করেছ। আমরা কেউই অনুভূতির মায়াজালে আটকালাম না। একজন আরেকজনকে ছেড়ে থাকতে পারব। মানুষ হারানোর শোকে বুক ভারি হবে না, দমও বন্ধ হয়ে আসবে না।”

নিতু গোমড়া মুখে বলল,“আমি যা চাইব তা-ই দেবেন নাকি? আপনাকেও তো চেয়েছি, কই দিলেন না তো? ভুলের জন্য হাজার বার মাফ চেয়েছি কই মাফ করলেন না তো?”

নিতু দম নিয়ে ফের বলল,“ভুলে বিচ্ছেদ চেয়েছিলাম, দিলেন মৃত্যু।”
“চরিত্রের দিকে আঙুল উঠানোর মানে যদি জানতে তাহলে বুঝতে পারতে আমি তোমার জন্য সেদিনই মারা গিয়েছি।”

নিতু কিছু বলল না। নিজের একটা ভুলের জন্য বারবার মাফ চাইতে ইচ্ছে করে না তার। একটা মানুষ এত কঠোর কীভাবে হতে পারে ভেবেই অবাক হচ্ছে সে। এত করে মাফ চাওয়ার পরও মন গললো না? একটাবারের জন্য মাফ করল না?

নিতুর চিনিয়ে দেওয়া পথ ধরে গাড়ি এসে থামল নিতুর সেই চিরচেনা বাড়ির সামনে। বাড়ির আশেপাশের সবকিছু যেন ঠিক আগের মতোই আছে। বাড়ির খয়েরী রঙের গেইটটাও টিকে আছে। গেইটের পাশের দোকানটা শুধু আকারে আয়তনে একটু বড় হয়েছে তাছাড়া বাকিসব পূর্বের মতোই রয়ে গেছে।

নিতু তখনও গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎই হর্ণ বেজে উঠল গাড়িতে। নিতু চমকে উঠতেই উৎস বলে উঠল,

“স্যরি। এসো নেমে এসো এবার।”

নিতু উৎসের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। কোন কথা খুঁজে পেল না সে। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে গাড়ি থেকে নেমে ত্রস্ত পায়ে বাড়ির দিকে চলে গেল। উৎস নিতুর ব্যাগটা নিয়ে তাকে অনুসরণ করল।

মা, মেয়ে পাশাপাশি বসে আছে। বাড়িতে এই একটা প্রাণ বিনা আর একটি কাক, পক্ষিও দেখতে পায়নি উৎস। নিতু মাকে দেখার পর থেকে কেঁদেই চলেছে। এ পর্যায়ে কান্না থেমে গেলেও কিছুক্ষণ পরপর ফুঁপিয়ে উঁঠছে। নিতুর মা, মেয়েকে সামলে জামাতার জন্য নাশতার ব্যবস্থা করে ফিরলেন। উৎসকে নাশতার জন্য বলতেই উৎস বলে উঠল,

“আমার এখন বাড়ি ফিরতে হবে, আন্টি। এগুলো নিতুকে খেতে দিন। ওর ভালো ভালো খাবারের প্রয়োজন আছে। মায়ের হাতের খাবারে যদি একটু সুবুদ্ধি হয়!”

নিতু কান্না থামিয়ে উৎসের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চাইল। এই লোকটা এত কষ্ট দিল, বাড়িতে অবধি রেখে যাচ্ছে, সম্পর্ক ভাঙবে বলেছে এখন আবার এমন খুঁচিয়ে কথা বলতেও ছাড়ছে না!

নিতু উৎসের কথায় তাল দিয়ে চোখ মুছে এদিক ওদিক চাইল। মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“তোমার অমানুষ, কু*ত্তার বাচ্চা জামাই কই? আমারে নিশ্চয়ই এখন ধরে মানুষের ঘরে পাঠানো হবে? এত সুন্দর চেহারা বে*শ্যা কি আর পাওয়া যাবে? আমার দেমাগি বর তো আমাকে আর আমার শরীরকে দান করেই যাচ্ছে। রাস্তা পরিষ্কার।”

উৎস নিতুর কথার মানে পুরোটা বুঝতে না পেরে নিতুর আম্মা নুরজাহান বেগমের দিকে তাকালো। নুরজাহান বেগম ধমকের স্বরে বলে উঠলেন,

“নিতু, উনি তোমার বাবা হন। কী সব উল্টাপাল্টা কথা বলছ?”
“উল্টাপাল্টা কথা!? এ বাড়িতে আসার আগে আমার মৃত্যু হলে আমি বেঁচে যেতাম। এই দুনিয়ার সবাই বেঁচে যেত নিতু না থাকলে। তুমিও বাঁচতে আর আমার বরও।”

উৎস উৎসাহ নিয়ে বলল,“আমি আপনাদের কথাবার্তা কিছুই বুঝতে পারছি না। কী হচ্ছে এখানে?”

নুরজাহান বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,“তুমি চিন্তা কোরো না। ওর বাবা এক সপ্তাহে আর বাড়ি ফিরবে না। দুই সপ্তাহের জন্য চট্টগ্রাম গেছে।”

মা-মেয়ের মান অভিমান বেশ কিছুক্ষণ চলল। উৎস বেশ কিছু সময় কাটিয়ে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে উঁঠে দাঁড়াল। নুরজাহান বেগম নিতুকে বললেন,

“জামাইকে এগিয়ে দিয়ে এসো।”

নিতু উঁঠে দাঁড়াল। উৎসকে একবার দেখে পুনরায় মায়ের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,

“তাকেই এগিয়ে দেওয়া যায়, যে আমাকেও এগিয়ে নিত।”

নিতু প্রস্থান করল। উৎস মৃদু হাসল। নিতুকে যখন আর দেখা গেল না তখন সে চুপিসারে বলে উঠল,

“আন্টি ওকে চোখে চোখে রাখবেন। রাতে প্রয়োজনে ওর সাথেই ঘুমাবেন। আঙ্কেল আসলে বা কোন ধরণের বিপদ ঘটলে অবশ্যই আমাকে কল দিবেন। আমি ওকে বিপদে ফেলতে এখানে নিয়ে আসিনি। ওকে যত্নে রাখবেন।”

নুরজাহান বেগম মৃদু হেসে শুধালেন,“আমার মেয়েকে খুব ভালোবাসো, বাবা?”

উৎস কিছুক্ষণ চুপ রইল। উত্তর নেই তার কাছে। কখনো মনে হয় নিতু তার অভ্যেস হয়ে গেছে, তাকে ছেড়ে থাকা সম্ভব না আবার কখনো নিতুর অশ্লী*ল ইঙ্গিতপূর্ণ কথায় ভেতরটা জ্ব*লে যায়। তবুও মেয়েটার খারাপ সে চাইতে পারে না। মাঝে মাঝে আগলে রাখতে ইচ্ছে করে কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় টিকবে তো সবকিছু?

উৎসকে চুপ থাকতে দেখে নুরজাহান বেগম আবার শুধালেন,“কী ভাবছো?”

উৎস থেমে থেমে বলল,“জানি না, হয়তো ভালোবাসি আবার হয়তো না। আমি আসলে বুঝে উঠতে পারি না।”

কথাটা বলেই উৎস বাড়ির গেইটের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করল। নুরজাহান বেগম তার পিছন পিছন অগ্রসর হলো। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগ মুহূর্তে বলে উঠল,

“আপনি প্লিজ আমার কথাটা মাথায় রাখবেন। আপনার কথা ভেবেই আমি এত বড় রিস্ক নিয়েছি। ওর যেন কোন ক্ষতি না হয়। ও এখন আপনার দায়িত্ব।”

নুরজাহান বেগম উৎসকে আশ্বস্ত করে বললেন,“আমি তো ওর মা। তুমি একদম চিন্তা করো না। অন্যরকম কিছু হওয়ার আশঙ্কা হলে আমি জানাব।”

“আসছি।” কথাটা বলেই বেরিয়ে গেল উৎস।
_____

উৎস যাওয়ার পর থেকে জানালার পাশে মন খারাপ করে বসে আছে। মাঝেমাঝে এখানে ওখানে শব্দ হলেই চমকে উঠছে সে। যেন মৃত্যুপুরীতে প্রতিটা নিঃশ্বাসের শব্দ জোরালো হয়ে উঠেছে। শব্দ তীব্র হলেই যেন নির্ঘাত মৃত্যু।

উৎস যাওয়ার পর থেকেই সে একই জায়গায় বসে আছে। নুরজাহান বেগম কিছু সময় পরপর মেয়েকে উঁকি দিয়ে দেখছেন আর কাজ করছেন। কতগুলো দিন পর মেয়েটাকে আজ কাছে পেয়েছেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকেই মেয়েটার সাথে দূরত্ব তার ক্রমেই বেড়েছে।

মেয়েকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে হাতের কাজ শেষ করে নিজেই মেয়ের কাছে এগিয়ে এলেন। আলগোছে বসলেন পাশে৷ নিতু আনমনে বসে কিছু একটা ভাবছিল। বাহুতে স্পর্শ পেতেই ছিঁটকে গেল সে। নুরজাহান বেগম হতাশ হলেন।

“তুমি এমন ভয়ে ভয়ে কেন থাকো সব সময়?”

নিতু গম্ভীর হলো। সূচালো গলায় জবাব দিল,
“কেন ভয় পাই তোমার স্বামীর বাড়িতে সেটা যদি তুমি জেনেও না জানার মতো থাকো তাহলে তো আমার কিছু বলার নেই।”
“উনি তোমার বাবা হোন।”
“ কারেকশন করে নাও। বাবা নয় সৎ বাবা। সৎ বাবাও তো ভালো হয়৷ উনাকে নিজের পরিচয়ে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে আমার। উনি শুধুই তোমার স্বামী।”

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নুরজাহান বেগম। মলিনমুখে বললেন,“তুমি ছোটবেলা থেকে তাকে অপছন্দ করো অথচ সে তোমাকে সবসময় আমাদের সাথেই রাখতে চেয়েছে, তোমাকে ভালোবাসেন নিজের মেয়ের মতো আর তুমি সবসময় কেমন গা ছাড়া ভাবে থাকো, দূরত্ব রেখে চলো। এতগুলো বছর বাহিরে ছিলে তুমি। নিজের ক্যারিয়ার গড়েছ। তুমি বাড়িতে একটা টাকা দিয়েছ কখনো? সে তবুও এসব কিছু বলে না। সে চায় তুমি আমাদের সাথে ভালো সম্পর্কে থাকো।”

নিতু সহসা বলে উঠল,“আমার বাবা আমার জন্য টাকা রেখে গিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে আমি বিদেশ গিয়েছি, থেকেছি, পড়েছি। তোমাকে তোমার স্বামী ধরে রেখেছে শুধুমাত্র আমার জন্য। যে কয়েকবার দেশে এসেছি সেই কয়েকবারই উনি আমাকে দেশে রেখে দিতে চেয়েছেন। তাছাড়া আর কী কী হয়েছে আমার সাথে সবই তুমি জানো। নোংরা মানুষ উনি। ঘৃণা করি আমি তাকে। আমার শৈশব নষ্ট করেছে। আমি তোমাকে সবটা বলেছি। তুমি তার প্রেমে এতটাই অন্ধ যে এতগুলো বছর পরও আমাকে বিশ্বাস করো না। তোমার মতো মা কারও না হোক। ওই লোকটার মতো তুমিও আমার খারাপ জীবনের জন্য দায়ী। উৎস আমার ওপর রাগ করে আছে। উনি আর যা-ই হোক তোমার মতো না। আমি যদি আমার কালো অতীত উনাকে বলতাম তাহলে উনি আমাকে এখানে অন্তত রেখে যেত না। আমিই চাইনি সিমপ্যাথি নিয়ে উনার লাইফে থাকতে। আমি এখানে প্রতিটা সেকেন্ডে অনিরাপত্তায় ভুগছি। আমি এখানে কিছুতেই থাকতে পারব না। যে লোক আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে তার বাড়িতেই আমি কীভাবে থাকতে পারি?”

নুরজাহান বেগম করুণস্বরে বললেন,“তুমি তোমার বাবাকে অপছন্দ করো বিধায় একটা মনগড়া গল্প মনের মধ্যে পুষে বড় হয়েছ। সেটা থেকে তুমি বের হতে পারোনি।”

নিতুর চোখ ছলছল করে উঠল,
“তুমি বারবার ভুল করো উনি তোমার বর, আমার বাবা নন। তুমি এখনো বিশ্বাস করো যে, তোমার বর আমাকে মেয়ের মতো ভালোবাসে, কাছে রাখতে চায় তাই উনি আমাকে বিদেশে থাকতে দিতে চায় না? তুমি এখনো চোখে কালো কাপড় বেঁধে বসে আছ, মা। আমার তোমার কাছে এলেই নিজেকে খুব অসহায় লাগে। একটা লোকের জন্য তুমি আমাকে এখনো অবিশ্বাস করো। নিজের পেটের মেয়েকে বিশ্বাস করে উঠতে পারলে না। ওই লোকটা কি জঘন্য সেটা আমি জানি৷ তোমার চোখের সামনে যেদিন আমার বড় কোন ক্ষ*তি হবে সেদিন তুমি বুঝবে।”

নুরজাহান বেগম কিছু বলবেন তখনই নিতু হাত দিয়ে ইশারায় দরজা দেখিয়ে বলল,“যাও তো এখান থেকে। কাউকে, কারো কথা সহ্য হচ্ছে না আমার। নিজেকেই অসহ্য লাগছে। উৎসকে আমি কিছুতেই আর মাফ করব না। সেও বুঝবে মাফ না পেলে ঠিজ কেমন লাগে।”

নুরজাহান বেগম নিতুর মাথায় সস্নেহে হাত রাখতেই সরে বসল নিতু। নুরজাহান বেগম মাথা নামিয়ে বললেন,

“তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল, মা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলিস। এত দূরত্ব দেখিয়েছিস যে আমি আর সাহসই করে উঠতে পারিনি যোগাযোগ করার। এবার তোকে দেখার, একটু স্পর্শ করার, বুকে জড়িয়ে নেওয়ার লোভ কিছুতেই যাচ্ছিল না। তুই যদি সত্যিও হয়ে থাকিস তবে বলব তোর ভয় নেই। এখন এ বাড়িতে আমি আর তুই ছাড়া কেউ নেই। তোর বাবা আসার আগে নাহয় চলে যাস। একটু তো মায়ের মনটাকে শান্ত করতে দে।”

নিতু কিছু বলল না। অভিমানে মাথা ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। মেয়ের নিরবতা অনেককিছু বুঝিয়ে দিল নুরজাহান বেগমকে। কিছুক্ষণ মেয়েকে এলোমেলো অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখে ধীরপায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। নিতু বুঝল মায়ের মনের অবস্থা। কী-ই বা করবে সে? বয়স তো তারও কম হলো না। এতগুলো বছরেও কি মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারল না? কোন মেয়ে নিজের সৎবাবাকে শুধুমাত্র অপছন্দের জন্য নিজেকে জড়িয়ে মিথ্যে বলবে? অন্যের সাথে নিজের সম্মান যাবে সেটা কি সে ভাববে না? নিতু বুঝে উঠতে পারে না, এই লোকটা তার মাকে কী এমন জাদু করে রেখেছে যে কোন কথাই সেদিকে যেতে দেয় না!
_____

উৎস সারাদিন বাসায় থাকতে পারেনি। ফরিনা বেগম প্রশ্নের ওপর শুধু প্রশ্ন করেই গিয়েছে। কিছু না বলতে পারায় এক পর্যায়ে ফরিনা বেগম উৎসর সাথে অসম্ভব খারাপ ব্যবহার করেছেন৷ অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে যাওয়ায় প্রেশারও বেড়ে গিয়েছে। ডাক্তার ডাকতে হয়েছিল। বাড়িতে নতুন আসা মেয়েটা ফরিনা বেগমের দেখাশোনা করছে।

সারাদিন পর উৎস নিজের রুমে দ্বিতীয়বারের মতো এলো। সকালে বের হওয়ার সময় রুমটা যে অবস্থায় পড়ে ছিল ঠিক ওভাবেই আছে। ক্লান্ত লাগছে শরীরটা। সারাদিন এখানে ওখানে যাওয়া, মাকে নিয়ে কম বিপদ তো হলো না সব মিলিয়ে শরীর আর সায় দিচ্ছে না। সোজা গিয়ে ডিভানে শরীর এলিয়ে দিল সে। সাথে সাথে চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে এলো।

বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা। মৃদু হাওয়া বইছে বাহিরে। হঠাৎ এক ঝটকায় জানালা শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেল। চমকে উঠল উৎস। বুঝল মাথাটা খুব ব্যথা করছে। চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে কপাল ডলে বলে উঠল,

“নিতু, এক কাপ চা দাও তো। মাথাটা খুব ধরেছে।”

কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থেকেই অপেক্ষা করল উৎস। কারও কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ খুলে এদিক ওদিক চাইলো। পরক্ষণেই মনে পড়ল সকালের কথা। বিরক্তিতে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল সে।

প্যান্টের পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠল। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল উৎস। পকেট থেকে ফোন বের করেই দেখল নিতুর মা নুরজাহান বেগম কল করেছেন। উৎস কোনকিছু না ভেবে কল রিসিভ করল। ওপাশ থেকে ভীতসন্ত্রস্ত গলায় ফিসফিস করে কেউ বলে উঠল,

“বাবা, দয়া করে তাড়াতাড়ি এসো। বড় বিপদে আছি। মেয়েটাকে বাঁচাও। ওর বাবা ওকে নিয়ে….”

কথা শেষ করতে পারল না বেচারি। কল কেটে গেল। উৎস পুনরায় বারবার কল করার চেষ্টা করল কিছুতেই কিছু হলো না। ফোন বন্ধ। উপায় না পেয়ে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে বেরিয়ে গেল সে। মনে মনে ভাবল, “নিতুর কোন বিপদ হলো না তো?”

#চলবে……