প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-১৩

0
103

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখাঃ ১৩
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

( দয়া করে এই পর্বটা এখনি কপি করবেন না কারণ আমি পর্বটা হয়তো এডিট করতে পারি)

____________

ছুটির পর ভার্সিটির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রা।রাইমা কাজের কথা বলে চলে গেছে। এতে করে শুভ্রা কিছুটা অবাক হয়েছে।পড়ে ভাবলো হয়তো সকালের ঘটনার কারণে খারাপ লাগছে তাই তাড়াতাড়ি চলে গেলো। ভার্সিটি এখনো পুরোপুরি খালি হয়নি। কয়েকজন শুধু বেরিয়েছে।
অদিতির বাইরে আসার অপেক্ষা করছে শুভ্রা। অদিতি গেছে ওয়াশরুমে। আদিত্য আজকে আসেনি ভার্সিটিতে। তাই অদিতিকে বাড়িতে নামিয়ে দিতে চেয়েছে শুভ্রা।

“এখানে দাড়িয়ে যে?”

আরাজ এর কথায় শুভ্রা পেছন ফেরে। এই লোকটা কাল অব্দি ছিল তার প্রতিবেশী আর এখন তার ভার্সিটির শিক্ষক। শুভ্রা ভদ্রতার সহিত মুখে হালকা হাসি ফুটিয়ে জবাব দেয়।

” স্যার, আমার বান্ধবী অদিতি এখনো ভিতরে। তাই এখানে দাড়িয়ে।”

” আচ্ছা”

বলেই চলে গেলেন আরাজ। শুভ্রা তার যাওয়ার দিকে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকে। লোকটাকে দেখে কখনো বা শিক্ষক মনে হয় কখনোবা ২৫ বছরের যুবক। চোখে সবসময় মোটা ফ্রেমের একটা চশমা পরে। সুদর্শন দেখতে।

” শুভ্রা, তোর মন্ত্রী মশাইয়ের থেকে সুন্দর আর কেউ নেই।অন্য কোনো ছেলের দিকে একদম তাকাবি না। হোক না সেটা প্রতিবেশী বা শিক্ষক। তোর মন্ত্রী মশাই দুনিয়ার সব থেকে সুদর্শন মানুষ।”

নিজের মাথায় হালকা মেরে বলে শুভ্রা। নিজের এমন কাজে নিজেই আবার হেসে ফেলে। ভাবনার রাজ্যে নিজের প্রিয় মন্ত্রী মশাইকে নিয়ে ডুব দেয়।
অদিতি এসে শুভ্রাকে একা একা হাসতে দেখে কিছুটা অবাক হয়। শুভ্রাকে দুই তিনবার ডাকার পর ও যখন শুভ্রা সাড়া দেয় না তখন কিছুটা ঝাকায় শুভ্রাকে।

” ওই আবার নিশ্চই তোর প্রিয় মন্ত্রী মশাইয়ের ভাবনায় ডুব দিয়েছিলি? এতো বার ডাকলাম তবুও কোনো সাড়া নেই তোর।”

শুভ্রা অদিতির পিঠে একটা কিল বসায়। অদিতি কিছুটা আর্তনাদ করে উঠে।

” দিলিতো ভেঙে। তোরা সকলেই আমার ভালোবাসার শত্রু। যখনি দেখবি আমার প্রিয় মন্ত্রী মশাইকে নিয়ে কিছু একটা ভাবছি তখনি বাগড়া দিতে হবে তোদের। বাস্তবে তো আর পাইনা ওনাকে তাই কল্পনাতেই একটা ছোট্ট সংসার সাজিয়েছি। কিন্তু তোদের তো আমার সুখ সহ্য হয়না।”

গটগট পায়ে গাড়িতে গিয়ে বসে শুভ্রা। অদিতিও শুভ্রার পাশে গিয়ে ধপাস করে বসে পড়ে। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফেলে শুভ্রা।

” আরে রাগ করছিস কেনো? তুই তো আমার ডাক শুনছিলি না তাই ঝাকা দিয়েছি। রাগ করিস না শুভ্রা। আজকে না তোর,,,”

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই নিজের জিভ কামড়ে ধরে অদিতি। এমন প্রতিক্রিয়া করছে যেনো এখনি কোনো বিস্ফোরণ ঘটাতে যাচ্ছিল ও।
শুভ্রা সন্দেহভাজন দৃষ্টিতে তাকায় অদিতির দিকে।

” আজকে আমার কি অদিতি। কথা শেষ না করে থেমে গেলি কেনো?”

” আরে তেমন কিছু না।”

আমতা আমতা করছে অদিতি। শুভ্রা বেশ ভালই বুঝতে পারছে অদিতি কিছু লুকাচ্ছে তার থেকে। এমন কি আজকে রাইমাকে দেখেও তার এমনটাই মনে হয়েছে।

__________

শুভ্রার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে মাহিদ। তার ঠোঁটের কোণায় খেলা করছে অদ্ভুত হাসি।শুভ্রার থাপ্পর দেওয়া জায়গায় আলতো করে হাত বুলায় সে।
হঠাৎ হাতে থাকা ফোনে কিছু একটা দেখে ঠোঁটের কোণে থাকা হাসি আরো বেশি প্রসারিত হয়। ফোন পকেটে রেখে গাড়ির চাবী হাতের আঙ্গুলে ঘুরাতে ঘুরাতে গাড়ির কাছে চলে যায় সে। সাথে নিচু স্বরে গানও চালিয়ে যাচ্ছে।

ভার্সিটির ছেলে মেয়েরা অবাক হয়ে দেখছে মাহিদকে।এই ছেলের সাথে কেউ উচু কন্ঠে কথা বললে তার অবস্থা খারাপ করে ছাড়ে।সেই ছেলেকে আজকে একটা মেয়ে থাপ্পর মেরেছে তবুও কতো সুন্দর স্বাভাবিক ভাবেই চলছে সে। যেনো কিছুই হয়নি।

গাড়ির কাছে এসে হাসপাতালে ফোন করে মাহিদ। সামিরদের ভর্তি করানো হয়েছে কাছেই একটা হাসপাতালে। ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে সে। কিছু সময় প আবার হাসপাতালে যেতে হবে তাকে।

____________

একটা খুনের কেসের ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে ফারহাদ। সে পেশায় একজন সিআইডি অফিসার।

” স্যার, আপনি প্রায় সময় এই বন্ধ হয়ে যাওয়া কেসটা নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু কোনো সমাধান আজ পর্যন্ত পেলেন না।”

ফারহাদ কোনো জবাব দেয় না রহিতের কথায়। সে একমনে কাজ করে যাচ্ছে। হতাশ হয় রহিত। এর আগেও যতবার এই বিষয়ে সে জিজ্ঞেস করেছে ততবারই ওপর পাশ থেকে কোনো জবাব পায় নি।

হঠাৎ ফারহাদের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ঠোঁটে ভেসে উঠে বিজয়ের হাসির রেখা।
রহিতের দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দেয় ফারহাদ। রহিত কাগজটা ভালোভাবে দেখে। তার মুখেও স্পষ্ট হাসি ফুটে উঠেছে। সে তাকায় ফারহাদের দিকে। তার স্যারের দীর্ঘ কয়েক বছরের পরিশ্রমের ফল পেতে চলেছে।

” কি করতে হবে জানোই তো।”

“জি,স্যার। আমি আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না স্যার আমি ঠিক কতটা আনন্দিত।”

“এখনি আনন্দ করার কিছুই হয়নি রহিত। যেদিন সব কিছুর গোড়ায় পৌঁছাতে পারবো সেদিনই হবে আসল আনন্দ। এখন তো সবেমাত্র সামান্য কিছু পেয়েছি।”

“আপনার বিশ্বাস আজকে আপনাকে এতদূর নিয়ে এলো স্যার”

ফ্যাকাশে হাসে ফারহাদ। তার ভিতরে কি চলছে হয়তো সে বাইরে প্রকাশ করতে পারছে না। কিন্তু মুখে হাসি ধরেই রেখেছে।

“আচ্ছা যাই হোক। এখন আমাকে যেতে হবে। আজকে স্পেশাল একটা দিন।”

রহিতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় ফারহাদ। আগেই সে ছুটি নিয়ে নিয়েছে। তার যেমন আজকে খুশি খুশি লাগছে তেমন অপ্রিয় কিছু সত্যির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে।

___________

ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসে শুভ্রা। সেই হাসি মুগ্ধতা ছড়াতে পারলো না । সেই হাসিতে নেই কোনো আনন্দের ছিটে ফোঁটা। আছে শুধু একরাশ বেদনা।
পাশে বসে থাকা অদিতি লক্ষ্য করছে শুভ্রার গতিবিধি। হঠাৎ জড়িয়ে ধরে সে শুভ্রাকে। শুভ্রা মোটেও এতে অবাক হয়না। এমনকি ফোনের থেকে নজরও সরায় না।

“শোন না”

অদিতির আল্লাদি কন্ঠে এবার তাকায় শুভ্রা। কপাল কুঁচকে যায়।

“কি?”

” চল আজকে তোদের বাসা যাবো। আমার বাসায় মা বাবা নেই। ওনারা পিসির কাছে গেছে। দাদাভাই হয়তো কোথাও গেছে। দেখলি না ভার্সিটিতে আসলো। এখন আমি একা কি করে থাকবো। তার চেয়ে ভালো তোর বাসা যাই। ওখান থেকে দাদাভাইকে ডাকবো দাদাভাই এসে নিয়ে যাবে।”

শুভ্রা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। অদিতি বিশ্বজয়ের একটা হাসি দেয়। সে জানতো শুভ্রা বারণ করবে না কিন্তু যদি প্রশ্ন করে। এটা ভেবেই এতো সময় চুপচাপ বসে ছিল।

কাউকে মেসেজ এ কিছু জানিয়ে আবারও চুপচাপ বসে পড়ে অদিতি। আজকে মোটেও সে বেশি কথা বলবে না।

এমনিতেই তার মুখ পাতলা। কখন কি বলে দেয়। সেটা যদি হয় কোনো সিক্রেট কথা। গরগর করে সব প্রচার করে ফেলে।

ফোনের স্ক্রিনে হঠাৎ ছোটো ভাইয়া নামটা ভেসে উঠতে অবাক হয় শুভ্রা। এই সময় তাকে কেনো কল করছে।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ফাহিমের ব্যস্ত কন্ঠ শুনতে পায় শুভ্রা।

” বোনি, কোথায় তুই?”

” আমিতো গাড়িতে। বাসায় আসছি।”

” ওহ্ আচ্ছা আয়।”

শুভ্রা আরো কিছু বলার আগেই কল কেটে যায়। বিরক্ত শুভ্রা। আজকে সকলের কি হয়েছে কে জানে। অদ্ভুত আচরণ করছে সবাই।

______________

খান বাড়িতে গাড়ি এসে থামতেই নেমে পরে শুভ্রা আর অদিতি। ড্রাইভার চলে যায় গাড়ি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে।
বাইরে দাঁড়ানো দুটো গাড়ি নজরে আসে শুভ্রার। এগুলো তো খান বাড়ির কারোর নয় শুভ্রা জানে। তাহলে কি কোনো অথিতি এসেছে বাড়িতে। ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে যেতে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ থেমে যায়। শুভ্রার থেমে যাওয়ায় অদিতিও থেমে যায়। শুভ্রা ভালো ভাবে দেখে গাড়ি দুটোকে। এর মধ্যে একটা গাড়ি তার অতি পরিচিত। মনে করার চেষ্টা করছে গাড়িটা কার। হ্যাঁ এই গাড়িটা তো তার মন্ত্রী মশাইয়ের। কিন্তু এখানে কি করছে। আরো কিছু ভাবার আগেই বাড়ির ভিতর থেকে ফাহিম বের হয়। শুভ্রার কাছে এসে দাঁড়ায়।

” বোনি, বাইরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? চল ভিতরে।”

” ভাইয়া, মন্ত্রী মশাইয়ের গাড়ি এখানে কি করছ?”

” আরে আমি নিয়ে এসেছি। বাসায় আসা দরকার ছিল তাই ভাইয়ের গাড়িটাই সামনে ছিল নিয়ে এসেছি। এখন চল তো।”

” আরে দাড়াও আরেকটা গাড়ি কার?”

” এতো প্রশ্ন করিস কেনো বোনি। চল তো।”

শুভ্রাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ দেয়না ফাহিম। ভিতরের দিকে যেতে শুরু করে। শুভ্রা আর কি করবে। অগত্যা সেও অদিতিকে নিয়ে যেতে শুরু করে।

দরজার ঠিক সামনে আসতেই চেনা পরিচিত একটা গন্ধ নাকে আসে শুভ্রার। চোখ বন্ধ করে ঝরে নিশ্বাস নেয়। তার কি আজকাল নাকে কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি? এই গন্ধ এখানে পাওয়া তো অসম্ভব। আর কোনো কিছুকে পাত্তা না দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে শুভ্রা। মুখটা আপনা আপনি হা হয়ে যায়। পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখার মতো চেয়ে আছে সে।
নাহ্ এটা কোনো ভাবেই সত্যি হতে পারে না। চোখ বন্ধ করে ফেলে শুভ্রা।

কয়েক সেকেন্ড পর উচ্চস্বরে হাসির শব্দ শুনে চোখ খুলে তাকায় । নাহ্ কোনো পরিবর্তন দেখা গেলো না তার সামনের দৃশ্যের। তার মানে সত্যি সবটা। চিৎকার করতে নেয় শুভ্রা। অদিতি তাড়াতাড়ি করে হাত দিয়ে শুভ্রার মুখ চেপে ধরে।

_________

চলবে,,,,