প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-১৫

0
92

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যাঃ ১৫
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

_____________

ছাদ থেকে বাড়ির বাগান স্পষ্ট দেখা যায়। শুভ্রা আর আরহাম তাকিয়ে আছে বাগানের দিকে।সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। বাগানের ঠিক মাঝ বরাবর ফাহিম আর রাইমা দাড়িয়ে আছে। রাইমা গালে হাত। ফাহিম থাপ্পর মেরেছে তাকে।এতটুকুই দেখেছে আরহাম আর শুভ্রা।

শুভ্রা পাশে তাকাতেই দেখে আরহাম নেই। আবার সামনের দিকে তাকাতেই দেখে আরহাম যাচ্ছে বাগানের দিকে। সেও আর কিছু না ভেবেই দুই হাতে শাড়ি ধরে দৌড়ে ছাদ থেকে নামতে শুরু করে। তার ভয় হচ্ছে আরহাম ফাহিমকে যদি কিছু করে বসে।তার ভাইয়েরা তার জীবনের এক অংশ।

ড্রইং রুমে দুই পরিবারের সকলে গল্পে মেতে উঠেছে। আরহাম আর শুভ্রাকে এভাবে বের হতে দেখে তারা কিছুটা ভয় পায়। তারা ভাবছে হয়তো আরহাম আর শুভ্রার ঝগড়া হয়েছে তাই আরহামের পিছনে শুভ্রা দৌড়াচ্ছে। তারাও তাদের পিছনে যেতে শুরু করে।

শুভ্রা বাড়ির মেইন দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়। যাতে করে কেউ বাইরে বের হতে না পারে। ফাহিম আর রাইমার সম্পর্ক সামনে আনতে চাইছে না ও।

“মেরে ফেলবো। আরেকবার শুধু অন্য ছেলেদের নাম নেও। একদম ঠোঁট কেটে রেখে দিবো তোমার। খুব শান্তি পাও আমাকে জ্বালিয়ে তাই না।আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয় না।”

ফাহিমের চোখে পানি ছলছল করছে। আরেকটু হলে হয়তো গড়িয়ে পড়বে। রাইমা গালে হাত দিয়ে ফাহিমের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে। বড় ভুল করে ফেলেছে সে।

আরহাম বাগানের কাছেই চলে এসেছে কিন্তু রাইমার সাথে ফাহিমকে দেখে থেমে যায় সে। ছাদ থেকে বুঝতে পারেনি রাইমার সাথে ফাহিম ছিল।তার বোনকে কেউ থাপ্পর মেরেছে ভেবেই তার রাগ উঠেছিল। কিন্তু এখানে এসে যখন রাইমার সাথে ফাহিমকে দেখলো তখন আর কিছু বললো না। শান্ত হয়ে আবার বাড়ির মধ্যে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। সাথে সাথেই কোনো কিছু তার বুকের সাথে বারি খেলো।

শুভ্রা দৌড়াচ্ছিলো আরহামের পিছনে। কিন্তু হঠাৎ আরহাম ঘুরে আসাতে নিজেকে ব্যালেন্স করতে না পেরে আরহামের বুকের সাথে বারি খায়। দুজনেই হালকা আর্তনাদ করে উঠে।
আরহাম দু হাতে ধরে ফেলে শুভ্রাকে যেনো পরে না যায় শুভ্রা।

ফাহিম আর রাইমা চমকে যায় কারোর কণ্ঠস্বরে। দুজনের মুখেই ভয় ভর করেছে।
শুভ্রা আর আরহামের উল্টোপিঠে তারা হওয়ায় প্রথমে দেখতে পায়নি তাদের।পিছনে ফিরে তাদের ওভাবে দেখে দুজনই আশ্চর্য হয়। উল্টোদিকে হওয়ার কারণে দেখে মনে হচ্ছে শুভ্রা আর আরহাম একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।

ফাহিমের ফোনের শব্দে আরহাম আর শুভ্রা একেঅপরের থেকে সরে যায়। ফাহিম আর রাইমা তাদের দেখে মিটিমিটি হাসছে। আরহাম মুখটা গম্ভীর করার চেষ্টা করছে।

“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো তোরা। নিজের বিয়ে করা বউকেই তো ধরেছি। এমন ভাবে দেখছিস যেনো অন্যকারো বউকে ধরেছি।”

কাশি উঠে যায় তাদের। মন্ত্রী আরহাম শিকদারের ঠোঁট কাটা কথা মোটেও হজম হলো না তাদের।
কেউ কিছু বলার আগেই ফাহিমের ফোন আবারও বেজে উঠে। ফারহাদের নাম্বার থেকে কল আসছে।

“ভাই, কোথায় আছিস তাড়াতাড়ি আয়। বোনি কোথায় যেনো চলে গেছে। বাড়ির দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি আয় ভাই। দরজা খুলে দে। নাহলে ভেঙে ফেলবো কিন্তু।”

ফারহাদের গলা কাপছে। সে মোটেও এই বিয়েতে রাজি ছিল না। বোনের সুরক্ষার কথা ভেবে রাজি হয়েছে। এখন তার মনে হচ্ছে সে রাজি হয়ে ভুল করেছে।রিমন আর রাহাত শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে। খান বাড়ির সকলের চোখে মুখে একপ্রকার আতঙ্ক ফুটে উঠেছে। আনোয়ারা খান এতটুকু সময়ের মধ্যে কেঁদে কেটে একাকার করে ফেলেছেন।পুরোনো কিছু স্মৃতি বারবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তাদের।আরহামের পরিবার বুঝতে পারছে না তাদের এতো ভয়ের কারণ। তারা শুধু দেখে যাচ্ছে সব কিছু। আরহামের উপর প্রচণ্ড ক্ষেপেছেন তারা।

ফাহিম কিছু বুঝতে পারছে না। ফোনের ওপাশ থেকে বাড়ির সকলের চিৎকার শুনতে পাচ্ছে সে।বুঝতে পারছে খারাপ কিছু হয়েছে। কিন্তু শুভ্রার কথা কেনো বললো? শুভ্রা তো তার সামনে। কিন্তু ফারহাদের শেষ কথা গুলো ভালোভাবে মনে করতেই সব কিছু বুঝতে পারে সে। তার চোখ মুখের রঙও বদলাতে শুরু করলো। শুভ্রা এগিয়ে আসে ফাহিমের দিকে।

” ভাইয়া কি হয়েছে তোমার?”

ফাহিম শক্ত করে শুভ্রার দুইহাত চেপে ধরে। হালকা ব্যাথা পায় শুভ্রা। চিৎকার করে উঠে ফাহিম।

“কি করেছিস এটা তুই? কেনো আবার পুরোনো স্মৃতি মনে করালি কেনো, কেনো? আবার হারিয়ে যেতে চাইছিস তুই?উত্তর দে।”

আরহাম আর রাইমা হতবাক। ফাহিমকে এই রূপে মোটেও মানতে পারছে না তারা। সব সময়ের হাসি খুশি শান্ত ছেলেটা কেমন পাগলামি করছে।

শুভ্রার চোখ টলমল করছে। কি করেছে সে যার জন্য তার সাথে এভাবে কথা বলছে? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ফাহিমকে।

“কি করেছি আমি ভাইয়া?”

“বাড়ির দরজা ওভাবে লাগিয়ে এসেছিস কেনো?”

শুভ্রা আর কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করলো না। ফাহিমের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে যতো দ্রুত পারছে বাড়ির দরজার দিকে দৌড়াচ্ছে। ভিতরে কি অবস্থা ভেবেই কেঁপে উঠছে বারবার সে।

রিমনরা আবার দরজা ধাক্কাতে যাবে তার আগেই খুলে যায় দরজা। শুভ্রা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে। তিন ভাই মিলে শুভ্রাকে পারলে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে এমন অবস্থা তাদের। আরেকটু হলেই তো কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছিল তাদের।

” কি, কি হয়েছে তোর বোনি? ওভাবে বেরিয়ে গিয়েছিলি কেনো? বল তোর ভাইয়াদের। নাকি আবারো পুরোনো কিছুর পুনরাবৃত্তি করতে চেয়েছিলি?”

এবার কেঁদে ফেলে শুভ্রা। সামান্য দরজা বন্ধ করায় যে এমন কিছু হবে কল্পনাও করেনি সে।

_________

মধ্যরাতে ছাদে বসে আছে শুভ্রা। চোখমুখ ফুলে গেছে। অনেক কষ্টে সন্ধ্যার ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে তাকে।তার ভাইয়েরা তো আরহামকেই দোষারোপ করছিল। কিন্তু পরে ফাহিম তাদের মিথ্যে বলে সামলিয়েছে।
আকাশ মেঘলা হওয়ায় চাঁদ, তারা দেখা যাচ্ছে না। শুভ্রার চোখ থেকে এখনো পানি পড়ছে।বিয়ে নিয়ে কতই না খুশি ছিল সে। কিন্তু পুরোনো কিছু বিষাক্ত স্মৃতি থাকতে দিলো না তাকে খুশি। তার সাথে সাথেই পরিবারের সকলের খুশি কেড়ে নিলো।

“বাবা- মা দেখছো, তোমরা শুভ্রার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও এই মানুষগুলো করেনি। তোমরাতো নির্দ্বিধায় শুভ্রাকে ছেড়ে চলে গেছো কিন্তু এই মানুষ গুলো তাদের জান প্রাণ দিয়ে আগলে রাখছে শুভ্রাকে। আজকে দেখলে সামান্য একটা ঘটনায় তাদের অবস্থা কি হয়েছিলো?আমার চার ভাইয়ের রাজ্যের প্রিন্সেস আমি। আমাকে হারানোর ভয় আজকে তাদের চোখে মুখে কিভাবে ফুটে উঠেছে দেখলে তোমরা? আচ্ছা আমি যদি কোনোদিন তাদের থেকে সত্যি সত্যি হারিয়ে যাই তাহলে তাদের কি হবে?মৃত্যুকে ভয় পাই আমি। নিজের জন্য নয় আমাকে ভালোবাসে সেই মানুষগুলোর জন্য। বাঁচতে চাই আমি। তাদের মাঝে থাকতে চাই। তোমাদের মেয়ে আজকে আরো একটা নতুন পরিবার পেয়েছে। নিজের শখের পুরুষটাকে সম্পূর্ণ নিজের করে পেয়েছে।”

আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে শুভ্রা। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরেই যাচ্ছে। ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ওর চার ভাই। তাদের চোখেও পানি।

_________

আরহামের পরিবার কিছু না বুঝলেও এতটুকু আন্দাজ করতে পেরেছে নিশ্চই কোনো কিছু নিয়ে তাদের মধ্যে ভয় আছে। তারা আর কিছু জানতে চায়নি। যেহেতু ঘরোয়াভাবে বিয়েটা হয়েছে তাই আগামী শুক্রবার বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করেছেন দুই পরিবার। এতো তাড়াতাড়ি শুভ্রার পরিবারের কেউ প্রথমে রাজি হয়নি।বড় দুই শিল্পপতি পরিবারের ছেলে মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান এতো কম সময়ে কিভাবে করবেন। তাছাড়া মন্ত্রী আরহাম শিকদারের বিয়ে। জাঁকজমকের সাথে করতে হবে। এর জন্য সময় দরকার। কিন্তু তাদের এসব যুক্তি আরহামকে বোঝাতে পারেনি। সে তার সিদ্ধান্তে অটল। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই সামনের শুক্রবার বিয়ে রাখা হয়েছে।
শুভ্রাকে এখনি নিয়ে যায়নি তারা। একদম শুক্রবার নিয়ে যাবে।

________
চলবে