প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-৩০

0
102

#প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
#পর্বসংখ্যা_৩০ (প্রথম অংশ)
#আহিয়া_শিকদার

শুভ্রার এক এক হাত নিজের দুই হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে আরহাম।পেরিয়েছে কয়েকঘন্টা।কেবিনে সিফট করা হয়েছে শুভ্রাকে।ডাক্তারের বলা কথাগুলো কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে বার বার আরহামের।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যতবার ডাক্তারের বলা কথাগুলো মনে পড়ছে।তাহলে কি ডাক্তারের বলা কথাগুলো সত্যি হবে? ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলো কিন্তু শুভ্রার তো জ্ঞান ফিরল না। সত্যিই কি তাহলে কোমায় চলে যাবে শুভ্রা?

“আমরা দুঃখিত মিস্টার শিকদার। আমরা যথা সাধ্য চেষ্টা করেছি।কিন্তু মিসেস শিকদার বাজে ভাবে মাথায় চোট পেয়েছে।ক্ষত বেশ গভীর। ওনার কোমায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৫%।বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে।আমাদের আর কিছুই করার নেয়।সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া করুন যেনো কোনো মিরাকেল ঘটে।”

ডাক্তারের কথাগুলো নিস্তব্ধ পরিবেশকে আরো নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল।তবে আশার আলো জাগিয়েছিল শুভ্রার ভাইদের মনে।উন্মাদের মতো তারা এক অপরকে জড়িয়ে ধরেছিল।
ভাবতে ভাবতেই শুভ্রার হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ে আরহাম।ক্লান্ত শরীরটা মুহূর্তেই নেতিয়ে পড়লো। চোখ জোড়া খুলে রাখা দায় হয়ে পড়লো।

ডাক্তার যখন দুঃখিত বলেছিল তখন রিমন শার্টের কলার চেপে ধরার কারণে পুরো কথা শেষ করতে পারেন নি তিনি।পরবর্তীতে রিমনকে শান্ত করে পুরো কথা শেষ করেন।

সিঁড়ি থেকে পরার কারণে বাজে ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয় শুভ্রা। যার ফলস্বরূপ এই অবস্থা।

______________

রাইমার জ্ঞান ফেরার পর শুভ্রার অবস্থার কথা শুনে পাগলের মতো আচরণ করেছে।বার বার বির বির করছে তার জন্যই শুভ্রার এমন হয়েছে।নীলিমা শিকদার তাকে বুঝিয়েছেন তার জন্য এমন হয়নি।কিন্তু সে বুঝতে নারাজ।হাসাপাতালে কাউকে থাকতে দেয়নি আরহাম।এমনকি শুভ্রার ভাইদের ও বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।অবাক করা বিষয় ছিল তাদের কলিজার বোনের এই অবস্থা কিন্তু তারা শান্ত। আরহামের এক কথায় তারা বাড়ি চলে এসেছে।খান বাড়িতে তারা ছাড়া কেউ জানেনা শুভ্রার কি হয়েছে।কাউকে জানায়নি।

শুভ্রার দেওয়া পেনড্রাইভ আজকে আরো একবার দেখতে বসেছে ফারহাদ।সাথে ফাহিমরাও আছে।সেদিন ফুচকার দোকানে ফারহাদকে পেনড্রাইভটি যখন দেয় তখন বলেছিল যেনো পরে দেখে।তাই আর আগে দেখা হয়নি।গতকাল দেখার পর সিরাজুল সাহেবকে শাস্তি দিয়েছে। ফারহাদের মনে হচ্ছে কোনো কিছু এড়িয়ে যাচ্ছে ভিডিওতে।তাই আবারো দেখতে বসেছে। ফারহাদের ভাবনা সত্যি হলো।অবাক হয়ে নিজে দেখলো এবং ভাইদের দেখালো।হতভম্ব সবাই।

“আমরা এত বড় ভুল কিভাবে করলাম ভাইয়া?আমাদের চোখের সামনে ঘুরছে অথচো আমার ধরতেই পারলাম না।”

রিমনের কথায় ফারহাদ তাকালো তার দিকে।একে একে তিন ভাইয়ের দিকে তাকালো।সবার মুখেই স্পষ্ট বোনের জন্য ব্যাথা দেখতে পেলো।

“আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ভাইয়া।নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করতে ইচ্ছে করছে।বিপদ থেকে বাঁচাতে গিয়ে কিভাবে আমরা বোনিকে আরো বেশি বিপদে ফেলে দিয়েছিলাম।ভাবতেই বুকের ভিতর রক্তক্ষরণ হচ্ছে ভাইয়া।সহ্য করতে পারছি না আমি।”

________________________

মাঝে কেটেছে কয়েকটা দিন।সবাই সবার দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক হয়েছে।শুধু স্বাভাবিক হতে পারে নি রাইমা আর ফারহাদরা।তারা যেন এখনো সেদিনটাতেই আটকে আছে। ফাহিমের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে রাইমা কিন্তু বলতে পারেনি।সেদিনের পর থেকে রাইমা এড়িয়ে চলে ফাহিম।সমস্ত হাসি খুশি কেরে নিয়েছে শুভ্রার কোমায় চলে যাওয়া।উন্মাদ করে তুলেছিল ফারহাদদের।শুধু স্বাভাবিক ছিল আরহাম।তার বিশ্বাস শুভ্রা আবারো আগের মত হবে।প্রতিটা মুহূর্ত শুভ্রার সাথে থেকেছে সে।এক মুহূর্তের জন্যও একা ছাড়েনি।শুধুমাত্র যখন ফারহাদরা থাকতো তখন কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকতো।খান আর শিকদার দুই পরিবার হাসপাতালে উপস্থিত। আরহাম কোনোভাবেই আর হাসপাতালে রাখতে চায়না শুভ্রাকে।এর অবশ্য কারণ আছে।গতকাল রাতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা পেরিয়ে শুভ্রার কেবিনে প্রবেশ করেছিল কেউ। আরহাম বাইরে ছিল সে সময়।ঠিক সময় আরহামের উপস্থিতি বাঁচিয়ে নিয়েছে শুভ্রাকে।লোকটিকে ধরতে পারেনি।এতো নিরাপত্তার মাঝেও যেখানে শুভ্রাকে মারার চেষ্টা করতে পারে কেউ সেখানে শুভ্রাকে রাখতে নারাজ আরহাম।

বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে শুভ্রাকে।আগে থেকেই সকল ব্যবস্থা করা ছিল।শুভ্রার পাশে বসে আরহাম।বাকিরা চলে যায় নিজ নিজ কাজে।

রাতে শুভ্রার কাছে রাইমা আর নীলিমা শিকদারকে রেখে বেরিয়েছে আরহাম।উদ্দেশ্য পুরোনো গোডাউন।সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে ফারহাদরা চার ভাই।শুভ্রার অতীত সম্পর্কে জানলেও সবকিছু জানেনা আরহাম।যেনো পদে পদে শুভ্রার এতো বিপদ সেটা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে সে। বেশ কিছু সময় গাড়ি চালিয়ে এসে পরলো গোডাউনে।ভিতরে প্রবেশ কর ফাহিমদের দেখতে পেলো।তাদের অবস্থা সোচনীয় বললেই চলে।এই কয়েকদিনে বোনের অসুস্থতা যেনো তাদের কেও অসুস্থ করে তুলেছে।

_________________

ইশতিয়াক খানের তিন ছেলের মধ্যে শুভ্রার বাবা মিস্টার শাহাদত খান সবার ছোট।ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়া।কিন্তু বাবা দাদার ব্যবসা থাকার কারণে ইশতিয়াক খান তাতে বাধা প্রদান করেছিলেন।পুলিশের পেশা টাকে তিনি বিপদ হিসেবে দেখতেন।যদি ছোটো ছেলের কোনো বিপদ হয় সেই ভয়ে শাহাদত খানকে সব সময় পুলিশের যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতেন।একরোখা এবং যেদি সভাবের ছিলেন তিনি শাহাদত খান।যার কারণে নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে কাউকে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেন নি।পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি পুলিশে যোগদান করেন।ছেলের এমন সিদ্ধান্তে অসম্ভব পরিমাণে রেগে গিয়েছিলেন ইশতিয়াক খান।শাহাদত খানের প্রিয় বন্ধু ছিল রেজাউল চৌধুরী আর আজমল শিকদার।শাহাদত খানের পুলিশ হওয়ার বিপক্ষে বরাবরই ছিলেন রেজাউল চৌধুরী।নানান কারণে ফাটল তৈরি হয় দুই বন্ধুর সম্পর্কে। আজমল শিকদারের সাথেও ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব ভেঙে যায়।বাবার সাথেও দুরত্ব তৈরি হয় তার।পরবর্তীতে গাজীপুরে নিজস্ব বাড়িতে চলে যান।সেখানেই নিজের স্বপ্ন পূরণ করেন তিনি।মমতা বেগমের সাথে কয়েক বছরের প্রণয়ের বিয়ে তার।কলেজ জীবন থেকে একে অপরকে ভালোবাসতেন তারা।বিয়েটা সাদা মাটা ভাবেই হয়েছিল।ইশতিয়াক খান বাদে বাকি সবাই উপস্থিত ছিল।শিকদার বাড়ি থেকে আজমল শিকদার ছিলেন স্ত্রী সহ।শাহাদত খান ছিলেন বাড়ির বাচ্চাদের হিরো। ফারহাদরা কখনোই তার পিছু ছাড়ত না।কাকাই বলতে পাগল ছিল তারা।তবে ইশতিয়াক খানের সাথে দুরত্ব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি।শুভ্রার আগমন শেষ করে দিয়েছিল ইশতিয়াক খান আর শাহাদত খানের মধ্যেকার সকল দুরত্ব।শুভ্রাকে কোলে নিয়ে ইশতিয়াক খান বলেছিলেন,

“খান বাড়ির একমাত্র মেয়ে শুভ্রা ইবনাত খান।চার ভাইয়ের একমাত্র বোন।তাকে আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি আমি।কেউ যদি সাথে যেতে চায় যেতে পারে।আমার কোনো আপত্তি নেই।আমার নাতনী আমার সাথে গেলেই হবে।”

খুশিতে চক চক কর উঠেছিল শাহাদত খানের চোখ।কয়েক ফোঁটা পানি গরিয়েও পড়েছিলো।স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন ইশতিয়াক খান তাকে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বলেছে।

শুভ্রার ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে যখন ফারহাদের আঙুল চেপে ধরলো তখন অবাক হয়েছিল সে।বাচ্চাদের থেকে দুরত্ব বজায় রাখতো ফারহাদ।কিন্তু শুভ্রার থেকে পারেনি।কোলে নিয়েছিল।তখন থেকেই ধীরে ধীরে চার ভাইয়ের চোখের মণি হয়ে উঠে শুভ্রা।বাড়িতে আনা হয় তাদের।শাহাদত খানের ফেরার আনন্দে পুরো বাড়ি উল্লাসে মেতে উঠে।তার কিছুদিন পর আবারো নিজে কাজে যোগদান করেন শাহাদত খান।স্ত্রী সন্তানকে রংপুরে রেখে গাজীপুরে নিজের কাজে মগ্ন হয়ে যান।মাঝে মাঝে চলে আসতেন তিনি দেখতে।এর মাঝেই শুভ্রা বড় হয়ে উঠে সকলের ভালোবাসায়।বিশেষ করে চার ভাইকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না।

চলবে,,

#প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
#পর্বসংখ্যা_৩০(শেষ অংশ)
#আহিয়া_শিকদার

শুভ্রার যখন ১৫ বছর বয়স,হঠাৎ শাহাদত খান শুভ্রাকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নিজের কাছে। গাজিপুরেই থাকতেন তিনি।তার এমন হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে পুরো খান পরিবার রুষ্ঠ হন তার উপর।খান বংশের একমাত্র মেয়ে হিসেবে শুভ্রাকে অসম্ভব ভালোবাসেন পরিবারের প্রতিটা সদস্য।নিজেদের থেকে শুভ্রাকে আলাদা করতে নারাজ তারা।বিশেষ করে শুভ্রার চার ভাই কোনমতেই নিজেদের বোনকে নিয়ে যেতে দেবেনা। ধীরে ধীরে সবাই পরিবর্তন লক্ষ্য করে শুভ্রার ভিতর।তাদের চোখের সামনেই অবনতি হতে শুরু করে শুভ্রার শরীরের।বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সবাই বুঝতে পারে শুভ্রা ড্রাগ অ্যাডিক্টেড।মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যেনো সকলের। ফারহাদরা পাগল প্রায় হয়ে যায় বোনের চিন্তায়।দিনে দিনে উন্মাদের ন্যায় আচরণ করা শুরু করে শুভ্রা।ঘরে রীতিমতো আটকে রাখা হয় তাকে।

একসময় শাহাদত খান আর মেয়ের অবস্থা সহ্য করতে না পেরে গাজীপুরে নিজের কাছে নিয়ে যায়। শুভ্রার অবস্থা দেখে কোনোরূপ বিচলিত হন নি তিনি।যেনো জানতেন এটা হওয়ার ই ছিল।তার এহেন আচরণে খান পরিবারের সকলে তাকে নানান প্রশ্ন করে।কিন্তু কোনো রূপ জবাব তিনি দেন নি।শুভ্রাকে নিজের কাছে নিয়ে যান।এবার আর বাধা প্রদান করেনি খান পরিবার।তারা বুঝতে পেরেছিল শুভ্রার বিপদ এখানে।

গাজীপুরে নিয়ে যাওয়ার পর পুরোদমে শুভ্রার চিকিৎসা শুরু করা হয়। ফারহাদরা বছরের প্রায় অর্ধেক সময় সেখানেই থাকতো।কিছুতেই তারা একা ছাড়েনি শুভ্রাকে। সেখানকার বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয় তাকে।শুভ্রার প্রতিবেশী ছিল রাইমা।তাছাড়া একই বিদ্যালয়ে পড়ার কারণে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে তাদের মধ্যে।একই সাথে অদিতির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো শুভ্রা।ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠে শুভ্রা।তখনো ও অব্দি শুভ্রা ড্রাগ অ্যাডিক্টেড কিভাবে হলো কেউ জানত না।এমনকি শাহাদত খান একজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও কখনও খোঁজ করেন নি।এটা সব সময় ভাবাতো ফারহাদকে।ছোটো থেকেই কাকাইয়ের মতো পুলিশ হতে চাইতো সে।তাই পুলিশদের মত সন্দেহ ছিল তার মনে।কেটে যায় দুটো বছর।ফাহিমের সাথে ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে রাইমার। আরহাম প্রায় রাইমাদের বাড়িতে যেতো।সব সময় লুকিয়ে দেখতো শুভ্রা।তখন থেকেই ভালোবাসে শুভ্রা আরহামকে। বেশ সুখেই কাটছিল তাদের দিন গুলো। শুভ্রাও ড্রাগের নেশা থেকে মুক্ত পায়।খান বাড়িতে আবারো ফেরার কথা ছিল শুভ্রার।তাই খান বাড়ির প্রায় সকলে তাকে আনতে গিয়েছিল কিন্তু ,,,,

থেমে যায় ফারহাদ। পরের কথাগুলো আর বলতে পারছে না।ভেতরেই যেনো দলা পাকিয়ে গেছে কথাগুলো। ফারহাদের অবস্থা বুঝতে পেরে পানি এগিয়ে দেয় শুভ।শুভ্রা তাকে নিজের ভাইদের মতই দেখে।ভালো সম্পর্ক আছে তার শুভ্রার সাথে।তাছাড়া নিজের ভালোবাসার মানুষ অদিতির প্রিয় বান্ধবী তার সাথে ভালো পরিচিতি।অদিতির থেকে সব কিছু শুনেছে সে।তাই শুভ্রার বিষয়ে কোনো কিছুই অজানা নয় তার।

আরহাম গভীর মনোযোগে ফারহাদের কথা শুনছিল।এসব সে জানে।কিন্তু এর পরের ঘটনা গুলো অজানা তার।শুভ্রা যে তাকে লুকিয়ে দেখতো সেটা অজানা নয় তার।মনে পড়ে শুভ্রা তাকে কিভাবে দেখতো।মুচকি হাসে আরহাম।শুভ্রা যতোটা না তাকে দেখেছে আরহাম তার থেকেও বেশি দেখেছে শুভ্রাকে।

রাইমাদের বাসায় আরহামের জন্য নির্দিষ্ট একটি ঘর বরাদ্দ আছে। সে গেলেই সেই ঘরে থাকে।যদিও বা রাত থাকা হয়না।ব্যস্ততার কারণে দিনে যায় দিনেই আসে।বছর পাঁচ আগে গিয়েছিল।শুক্রবার থাকায় রাইমা বাসায় ছিল।তখন সবে মাত্র ক্লাস এইটে পড়ে রাইমা।বাগানে একটি মেয়ের সাথে বসে কি জানি করছিল। আরহাম বাড়ির গেট দিয়ে প্রবেশ করার পথে বাগানে দেখতে পায় রাইমাকে।সব কাজিনরা তাকে ভয় পেলেও রাইমা কিছুটা কম ভয় পেতো।যার কারণে আরহাম গেলেই তার সাথে অনেকটা আঠার মতো চিপকে থাকতো। আরহাম হাসি মুখে এগিয়ে যাচ্ছে বাগানের দিকে।কিন্তু কিছুটা গিয়েই থেমে যায় সে।দেখতে পায় কালো রঙের লম্বা জামায় একজনকে। উচ্চস্বরে হাসির আওয়াজ শুনতে পায়। উল্টো দিকে ঘুরে থাকায় মুখ দেখতে পায়না।লম্বা চুলগুলো বিনুনি করে রেখেছে।পাশেই রাইমাকে বসে থাকতে দেখে।

কিছু সময় সেখানেই দাড়িয়ে থাকে।মেয়েটির মুখ দেখার খুব ইচ্ছে করছে তার।তার ইচ্ছে পূরণ করার জন্যই হয়তো মেয়েটি ফিরে তাকায় তার দিকে।চোখের নিচে কালো দাগ পড়া মেয়েটিকে দেখে বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করে আরহাম।তৎক্ষণাৎ ডান হাত চলে যায় বুকের বাম পাশে।
২৬ বছরের জীবনে প্রথম কাউকে দেখে এরকম অনুভূতি হলো তার।ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো রাইমাদের দিকে।
আরহামকে দেখে চটজলদি উঠে দাড়ালো রাইমা।দৌড়ে চলে গেলো আরহামের কাছে।

“বড় ভাইয়া তুমি? কখন এলে? আমাকে ডাকোনি কেনো?”

আরহামের কানে কথাগুলো পৌঁছলো কিনা কে জানে। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটির পানে। রাইমা ভাইয়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়।মুচকি হেসে বলে,

“ও শুভ্রা।আমার প্রতিবেশী।আর আমরা একই ক্লাসে পড়ি।”

হুস ফিরল আরহামের।অবাক হয়ে তাকালো রাইমার পানে।রাইমার ক্লাসে পরে মানে?তার মানে মেয়েটি তার থেকে ১২ বছরের ছোট।নিজেকে নিজেই থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে হলো আরহামের।

শুভ্রা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আরহামের দিকে।এবার তাকালো রাইমার দিকে।চোখের নিচে কালি পরে গেছে।দুর্বল লাগছে তাকে।

“আরহাম।আমার বড় ভাইয়া।আমার বড় মামার ছেলে।যার কথা তোকে বলেছিলাম।মনে আছে?”

হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায় শুভ্রা।তার মানে তার মনে আছে। আরহামকে বাড়ির ভিতরে যেতে বলে শুভ্রাকে সাথে নিয়ে শুভ্রাদের বাড়ির দিকে হাটা ধরে রাইমা।এক হাত দিয়ে শুভ্রাকে ধরে রেখেছে।যেনো ছেড়ে দিলেই পরে যাবে। আরহাম অবাক হয়ে তাকিয়েই থাকে।মেয়েটাকে এভাবে কেনো নিয়ে যাচ্ছে?প্রশ্ন জাগে তার মনে। বেশ কিছুক্ষণ পর রাইমা আসে। আরহামকে সেখানেই দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় তার।

“তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো ভাইয়া?চলো বাসার ভিতরে চলো।”

“মেয়েটাকে এভাবে নিয়ে গেলি কেনো? আর মেয়েটাকে দেখে কেমন জানি অসুস্থ মনে হলো।”

“ড্রাগ অ্যাডিক্টেড ও।”

রাইমার কথা শুনে হতভম্ব হলো আরহাম।মনে হাজারো প্রশ্ন জাগলেও কিছু বললো না।চুপচাপ চলে গেলো ভিতরে।শুভ্রার প্রতি সূক্ষ্ম ভালোলাগা তৈরি হয়েছিল তার মনে।তবে এই ভালো লাগা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছিল। আরহাম যখন বুঝতে পারে তখন নিজেকেই নিজের কাছে অপরাধী মনে হয়েছিল।তার থেকে অতো ছোট বাচ্চা একটা মেয়েকে কিভাবে সে ভালবাসতে পারে?অনুভূতি যেনো আরো জোরালো না হয় সেজন্য রাইমাদের বাসায় যাওয়া বন্ধ করেছিল সে।কিন্তু বেহায়া মন তাকে বাধ্য করেছিল আবারো যেতে। শুভ্রা যে তাকে লুকিয়ে দেখতো সেটা জানতো সে।বয়সের ব্যবধানের কারণে কখনো অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ পায়নি সে।

ফারহাদের ডাকে অতীত থেকে বের হয় আরহাম।অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে অতীতেই মগ্ন হয়ে গিয়েছিল বুঝতেই পারেনি। ফারহাদের দিকে মনোযোগ দেয় সে।
ফারহাদ ধীরে সুস্থে আবারো বলতে শুরু করে,

চলবে,,,