প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-০৭

0
108

#প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
#পর্বসংখ্যা_৭
#আহিয়া_শিকদার

(অনুমতি ব্যতিত কপি করা নিষেধ)
______________

একটি নতুন দিনের সূচনা। রংপুরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীণ বরণ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্র হাতে নিয়ে বসে আছে ফাহিম। চোখ তার আটকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামের দিকে। যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা ,”বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়”।

” কি দেখেছিস ওভাবে ফাহিম?”

আরহামের কথার জবাবে হাতে থাকা আমন্ত্রণ পত্রটি বাড়িয়ে দেয় তার সামনে। আরহাম প্রসনসূচক দৃষ্টিতে তাকায় ফাহিমের দিকে। ফাহিম আরহামের দৃষ্টি বুঝতে পেরে বলে উঠে,

” ভাই, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নবীণ বরণ অনুষ্ঠানে আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। যেহেতু আপনি এখানকার বর্তমান মন্ত্রী। তাছাড়া ,,,”

থেমে যায় ফাহিম। আরহাম ভ্রু কুচকে ফেলে।

” তাছাড়া কি?”

” আর কিছুনা ভাই।”

আমতা আমতা করে বলে ফাহিম। তার কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে কিছু লুকালো। আরহাম কিছুক্ষণ সেকেন্ড তার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। ফাহিমকে সে বিশ্বাস করে। ফাহিম নিশ্চই এমন কিছু করবে না যার দ্বারা সে আরহামের সামনে খারাপ প্রমাণিত হবে। তাই আরহাম আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। ফাহিমকে জানিয়ে দেয় সে যাবে।

______________

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে অদিতির সাথে বসে আছে শুভ্রা। মুখে যেনো অমাবস্যা নেমেছে। শুভ্র মুখশ্রী কেমন যেনো অন্ধকার অন্ধকার দেখা যাচ্ছে। অদিতি জানে কেনো তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী এভাবে বসে আছে। তাই সেও শুভ্রার সাথে চুপ চাপ বসে আছে।

” আমি কি খুব খারাপ অদি ?”

কন্ঠে ঝরে পড়ছে কষ্ট। অদিতি অবাক হয়ে যায় শুভ্রার এমন প্রশ্নে। শুভ্রার মুখে এমন কথা সে মোটেও আশা করেনি।

” তুই কেনো খারাপ হতে যাবি শুভ্রা? তুই খারাপ কে বলল তোকে ?”

” তাহলে যাকে ভালবাসি সে কেনো আমার সাথে কথা বলে না? আমার সামান্য কথায় কেনো রেগে যায়?”

অদিতি এবার বুঝতে পারে শুভ্রার কথার মানে। শুভ্রাযে মন্ত্রী আরহাম শিকদারের বিষয়ে কতোটা পাগল সে ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না।

” তোর মন্ত্রী মশাই কিছু বলেছে নাকি?”

” হুম”

রাতের সব ঘটনা খুলে বলে অদিতিকে। অদিতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ্রার কথা শুনে।

” শুভ্রা, আরহাম শিকদার মন্ত্রী মানুষ। সব সময় নানান বিষয়ে চাপের উপর থাকে। হতে পারে কোনো বিষয় নিয়ে রেগে ছিল আর তুই কল করায় তোর উপর রাগ ঝেড়ে দিয়েছে।আর উনি কিভাবে বুঝবেন তোর মন খারাপের কথা। তুই ওনাকে ভালোবাসিস উনিতো ভালোবাসেন না।”

শুভ্রা মনোযোগ দিয়ে শোনে অদিতির কথা।সে ভাবে হয়তো অদিতি যা বলছে সেটা সঠিক। পরমুহুর্তে অদিতির শেষ কথাটা তার কানে বাজতে শুরু করে, ” তুই ওনাকে ভালোবাসিস উনিতো তোকে ভালোবাসেন না”

বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করে শুভ্রা। সত্যিই তো তার মন্ত্রী মশাই তাকে ভালোবাসে না। কিন্তু মানতে এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? তার মন্ত্রী মশাই তো তাকে চিনতোও না।সেদিন সেই দুর্ঘটনা না ঘটলে হয়তো জানতেও পারতো না ফাহিমের চাচাতো বোন সে।

অদিতি শুভ্রার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলে উঠে,

” তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে শুভ্রা”

শুভ্রার ভিতরে কোনো আগ্রহ দেখতে পেলো না অদিতি।
কিন্তু সে জানে এখন যে কথাটা বলবে তাতে করে নিশ্চিত শুভ্রা আনন্দে লাফিয়ে উঠবে।
অদিতি বলতে যাবে তার আগেই শুভ্রার চোখ কেউ দেখে ফেলে হাত দিয়ে। শুভ্রা ছটফট করতে শুরু করে। অদিতি প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও মেয়েটিকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠে। ইশারায় অদিতিকে চুপ করতে বলে মেয়েটি। কন্ঠে যথাসম্ভব পরিবর্তন এনে কথা বলে সে।

” বলুন তো আমি কে মিস খান?

মেয়েটির হাতের স্পর্শ চিনতে ভুল করেনি শুভ্রা। কন্ঠস্বর শুনে একদম নিশ্চিত হয়ে যায় মেয়েটি কে।ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।

” রাইমা”

শুভ্রার চোখ ছেড়ে দেয় রাইমা। মুখ ফুলিয়ে বসে পড়ে শুভ্রার পাশে। এই মেয়ে সব সময় তাকে চিনতে পারে। হেসে উঠে অদিতি আর শুভ্রা। কিন্তু শুভ্রা বুঝতে পারছে না রাইমা তার ভার্সিটিতে কি করছে? রাইমা শুভ্রার অবস্থা বুঝতে পেরে মুচকি হাসে।

“তুই আর অদিতি তো এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিস। আমার তো গাজীপুরে থাকি তাই বাবা মা ওখানেই আমাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল। ওখানে ভালো লাগছিল না। পরে তোকে যখন দেখতে গিয়েছিলাম হাসপাতালে তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম তোর অবস্থা দেখে। বাবা মাকে অনেক বুঝাই আমি তোদের সাথে পড়তে চাই। যেহেতু নানুভাইদের বাসা এখানে তাই তারা রাজি হয়ে যায়। এখন থেকে এখানেই থাকবো।”

লাফিয়ে উঠে শুভ্রা। রাইমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুরতে শুরু করে।

” তার মানে তুই আমাদের সাথে এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিস?”

রাইমা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। শুভ্রার খুশি আর দেখে কে।কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়ে অদিতিকে জিজ্ঞেস করে,

” তুই না কিসের সারপ্রাইজ এর কথা বলছিলি?”

” রাইমার কথাই বলতাম তোকে”

“তার মানে তুই সব জানতিস?”

শুভ্রা বুঝতে পারে অদিতি সব জানতো। তাই মুখ ফুলিয়ে বসে পড়ে ও। রাইমা আর অদিতি একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে রাগ ভাঙাতে শুরু করে তাদের প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর। দিনটা তাদের এভাবেই খুনসুটির মধ্যে কেটে যায়। এর মধ্যেই তাদের জানানো হয়েছে দুদিন পর তাদের নবীণ বরণ করা হবে।
__________

একটি আলিশান ডুপ্লিেক্স বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে রেজাউল চৌধুরী। চারিদিক ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে সে প্রবেশ করে বাড়িটির ভিতরে। বাড়ির ভিতরের অবস্থা দেখে খারাপ লাগে তার। তবুও কিছু করার নেই।
ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় জায়গায় দেশি বিদেশি নেশাদ্রব্য দিয়ে ভর্তি।
রেজাউল চৌধুরী এগিয়ে যান একটি ঘরের দিকে। ঘরের দরজা খোলা থাকায় ভিতরের কিছুটা দৃশ্য তার নজরে পড়ে যায়। তাড়াতাড়ি মাথা ঘুরিয়ে সে চলে আসে ড্রয়িং রুমে। মুখে ফুটে উঠেছে স্পষ্ট রাগ। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।

প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তার সামনে উপস্থিত হয় একজন সুঠামদেহী যুবক। এসেই রেজাউল চৌধুরীর পাশে সোফায় শরীর এলিয়ে দিয়ে বসে পড়ে।
তাদের সামনে দিয়ে আধুনিক পোশাক পরিহিত একজন মেয়ে বেরিয়ে যায় বাড়ির বাইরের দিকে।

রেজাউল চৌধুরী চুপচাপ সব দেখে যান। তার তো কিছু করার নেই। নিজেকে শান্ত করে কিছুসময় যুবকটির সাথে কথা বলে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যান তিনি বাড়িটি থেকে।
তার এমন অবস্থা দেখে হাসে যুবকটি।

____________

আরিফা তালুকদার দুদিন আগে এসেছিন শিকদার বাড়ি। মেয়ের জোরাজুরিতে এখানেই মেয়েকে রাখতে হচ্ছে তাকে।
আজকে চলে যাবেন তারা। ড্রয়িং রুমে আসাদ শিকদার আর আরহাম বাদে সকলেই আছেন।

” ভাবি, মেয়েটাকে রেখে যাচ্ছি। দেখলে না কি জেদ ধরে বসেছিল। চিন্তা হচ্ছে, একটা মাত্র মেয়ে। বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগবে।”

” চিন্তা করতে হবে না আরিফা। রাইমা এখানে ভালো থাকবে। বাড়িতে আমি আর বাবা শুধু থাকি। আসাদ আর আরহাম তো সারাদিন কাজে বাইরে থাকে। রাইমা থাকলে আমারও একজন কথা বলার মানুষ থাকবে। তাছাড়া তোমার ছেলে আরিফ আর বৌমা তো আছেই। সব থেকে বড় কথা তোমার দুজন সাথী আছে। আমার তো তাও নেই।”

কিছুটা হতাশার সাথে বললেন নীলিমা শিকদার। তার ছেলের থেকে চার বছরের ছোট আরিফের দুইটা বাচ্চা। অথচো তার ছেলে কিনা এখনো বিয়েই করে নি।
আরিফা তালুকদার কিছুটা হেসে উঠেন। আরো কিছু সময় কথা বলে তাদের সাথে। রাইমাকে কিছু উপদেশ দেন আরিফা তালুকদার।
অতঃপর রেজোয়ান তালুকদার আর তিনি বেরিয়ে পড়েন নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। অনেকটা পথ যেতে হবে তাদের।

_______________

ক্লাস না করেই চলে এসেছে শুভ্রারা। বান্ধবীদের বিদায় দিয়ে সে চলে এসেছে পার্টি অফিসের সামনে।
হাত ঘড়িতে একবার সময় দেখে নেয় শুভ্রা। আর ঠিক ছয় মিনিট পর তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটি বের হবে ভিতর থেকে সে ভালো করেই জানে। কারণ তার মন্ত্রী মশাই সময় সচেতন মানুষ।
ফাহিমের কাছ থেকে খবর পেয়েছে সে। মন্ত্রী মশাই আর ফাহিম বের হবে কিছু সময়ের মধ্যে। মন্ত্রী মশাইয়ের গাড়ির সামনে দাড়িয়ে পরে শুভ্রা। গার্ডরা আটকাতে চাইলে ফাহিমের সাথে কথা বলিয়ে দিলো।

আরহাম বের হচ্ছে বাইরে। তার পিছনেই ফাহিম দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে আসছে। শুভ্রা যে এখানে আছে সে জানায়নি আরহামকে। তাইতো ভয়ে এমন করছে।

নিজের গাড়ির কাছে কোনো মেয়েকে উল্টো ফিরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় আরহাম। মেয়েরা তার আশেপাশে থাকুক মোটেও পছন্দ নয় তার।ফাহিমের দিকে তাকায় সে। ফাহিম কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। আরহাম এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে। গার্ড তো অনুমতি না নিয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দিবে না। তাহলে এই মেয়ে কে? গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় সে। মেয়েটির থেকে তার দুরত্ব কয়েকহাত।
মেয়েটির উদ্দেশ্যে কিছু বলার আগেই তার দিকে ফেরে মেয়েটি। অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় আরহাম। বিশ্বাস করতে পারছে না অসভ্য মেয়েটি এখানে। রাতে ঘটনা কেন্দ্র করে হলেও তো তার থেকে দূরে থাকার কথা এই মেয়ের।
পরক্ষণে আবার মনে হয় এই নির্লজ্জ মেয়ের দ্বারা সবই সম্ভব। নাহলে রাতে খারাপ ব্যবহার করলো তবুও তার সামনে উপস্থিত হয়েছে।

আরহামের ভাবনার মাঝেই শুভ্রা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিলো আরহামকে। বরাবরের মতই আজও শুভ্র রংয়ের পাঞ্জাবি তার মন্ত্রী মশাইয়ের শরীরে। চুল গুলোর দিকে নজর দেয় শুভ্রা। পিছনে ঝুঁটি করে রাখা। কয়েকটা চুল অবশ্য মুখের সামেন। কপালের ঠিক বা পাশের কালো তিলটা শুভ্র মুখশ্রীকে যেনো আরো সুন্দর করে তুলেছে।

” এই মেয়ে এখানে কি করছো তুমি?তোমাকে বলেছিনা আমার আশে পাশেও আসবে না?আর তোমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিলো কে?”

ধ্যান ভাঙ্গে শুভ্রার। কিছুটা ভাব নিয়ে সে বলে,

” প্রথমত আমি এখানে এসেছি ভাইয়ার জন্য। আর যেহেতু আপনি ভাইয়ার সাথে আছেন তাই আপনার আশে পাশে আসতেই হলো। না হলে আমার কোনো ইচ্ছা নেই আপনার মুখ দেখার। আর ভাইয়ার কথা বলাতে আমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিয়েছে।”

হতভম্ব হয়ে যায় আরহাম আর ফাহিম। তারা বিশ্বাস করতে পারছে না শুভ্রা এসব বলল। ফাহিম বড় বড় চোখ করে তাকালো শুভ্রার দিকে।

আরহামের মুখে প্রকাশ পেলো রাগের আভা। এই মেয়ে তার জন্য আসে নি?আবার তার নাকি মুখ দেখার ইচ্ছে নেই? সুদর্শন মন্ত্রী আরহাম শিকদারকে কেউ এভাবে বললো। তাছাড়া কিছুদিন আগেই না সকলের সামনে প্রেম নিবেদন করলো। আবার সেদিন রাতেও কল করে একই কথা বলেছিল।তাহলে এখন এমন ব্যবহার।

বিশ্বজয়ের হাসি দিলো শুভ্রা। মুখে মাস্ক থাকার কারণে কেউ দেখতে পেলো না সেই হাসি। প্রতিশোধ নিলো সে। তার উপর রাতে রাগ ঝেরেছিল। ‘এখন কেমন লাগে দেখুন মন্ত্রী মশাই। এই শুভ্রার সাথে রাগ দেখানো’

” ভাইয়া , তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে তাই ভাবলাম তোমাকে দেখে যাই। এখন দেখা শেষ আমি যাচ্ছি।”

বলেই এক সেকেন্ড ও দাড়ালো না শুভ্রা। সামনে রাখা বেনী পিছনে দিয়ে দ্রুতবেগে বেরিয়ে গেলো। বাইরে ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলে উঠে পড়ল গাড়িতে। এখানে থাকলে এখন নিশ্চিত মন্ত্রী মশাইয়ের ঝাড়ি শুনতে হতো।

এদিকে আরহাম আর ফাহিম ক্যাবলাকান্তের মতো দাড়িয়ে আছে। এতো দ্রুত সব ঘটে গেলো।

আরহাম তো রাগে ফুঁসছে। এই মেয়ে চলে না গেলে হয়তো কিছু একটা করে ফেলত আরহাম।

______

চলবে,,,,,