প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-০৮

0
99

#প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
#পর্বসংখ্যা_৮
#আহিয়া_শিকদার

( অনুমতি ব্যতিত কপি করা নিষেধ)

________

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর –
২০০৮ সালের ১২ই অক্টোবর রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম দেওয়া হয়,”বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর”। উত্তরবঙ্গের বাতিঘর হিসেবে অভিদিত করা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়েটিকে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টির উদ্ভোধন করেন।ঢাকা,কুড়িগ্রাম মহাসড়কের পাশে রংপুরের পার্কের এলাকায় প্রায় ৭৫ একর জায়গা জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় টি অবস্থিত। রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কার্মাইকেল কলেজ এবং ক্যাডেট কলেজের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। যা কিনা রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় আট হাজার। ছেলেদের জন্য দুটি আবাসিক হল এবং মেয়েদের জন্য রয়েছে একটি।তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাফেটেরিয়া শিক্ষার্থীদের নিকট সাচ্ছন্দমূলক একটি জায়গা।পূর্বের মরুভূমির ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে প্রায় ৪০০ বৃক্ষের সমাহারে একখণ্ড সবুজ আয়তন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিতরেই রয়েছে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।

_______________

ভার্সিটির প্রায় সকল শিক্ষার্থী অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে মন্ত্রী আরহাম শিকদারের জন্য। সুন্দর এবং পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে ভার্সিটি।

তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পর পর চারটা গাড়ি এসে থামে তাদের সামনে। যার মধ্যে একটিতে অবস্থান মন্ত্রী আরহাম শিকদারের।

মুহূর্তের মধ্যেই গাড়ি গুলো থেকে নেমে পড়ে কালো পোশাকে আবৃত গার্ডরা। ঘিরে ফেলে মন্ত্রী আরহাম শিকদারের গাড়ি।

সকলের সামনে দৃশ্যমান হয় তাদের অপেক্ষাকৃত কাঙ্ক্ষিত মানুষটি। চুলের মধ্যে হালকা করে হাত বুলিয়ে নেমে পরে গাড়ি থেকে আরহাম। শুভ্র রঙে অমায়িক সুন্দর লাগছে তাকে। ব্যাস এতটুকুই যথেষ্ট ছিল মেয়েদেরকে আকৃষ্ট করতে। ফাহিম এসে দাঁড়ায় আরহামের ডানদিকে।কিছু সংখ্যক মেয়ে ফাহিমের দিকেও ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

ফাহিম একবার আরহামের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার সামনে তাদের থেকে দুরত্বে অবস্থানরত মেয়েদের দিকে। যারা কিনা হা করে তাকিয়ে আছে। হালকা হাসে ফাহিম মেয়েদের অবস্থা দেখে।

আরহামের দিকে যে এতো গুলো মেয়ে তাকিয়ে আছে তার সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে আছে নিজ গম্ভীর্যতায়।
বেশ কিছু সময় নিয়ে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানো হয়।
অতপরঃ শুরু হয় কাঙ্ক্ষিত অনুষ্ঠানটি। আরহাম এর বক্তব্য মেয়েরা হা হয়ে শুনছিল। কি সুন্দর গুছিয়ে বললো সব কিছু।

__________

স্টেজে শুভ্র শাড়ি পরিহিত শুভ্রাকে দেখে অবাক হয় আরহাম।এই মেয়ে এই ভার্সিটিতে পরে নাকি? যদি পড়েও তাহলে এতক্ষণ কেনো নজরে এলো না?

” ফাহিম মেয়েটা এখানে কি করছে?”

ফাহিম জানতো আরহাম তাকে ঠিক এই প্রশ্নটাই করবে। কিন্তু শুভ্রার স্টেজে থাকার বিষয়টা সেও বুঝতে পারছে না।

” ভাই, বোনি এই ভার্সিটিতেই ভর্তি হয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।”

ভ্রু কুচকে যায় আরহামের। তার থেকে গুণে গুণে ১২ বছরের ছোট এই মেয়ে। শাড়ি পরিহিতা এই মেয়েকে দেখে তো মনে হয় না। তার থেকেও বড় কথা, এই মেয়ে কিনা তার থেকে ১২ বছরের বড় একজনকে ওভাবে সকলের সামনে ভালোবাসি বলেছিল। সেদিনের কথা মনে পরতেই অদ্ভুত এক অনুভূতি হয় আরহামের ভিতর।

তাছাড়া প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট হলে স্টেজে কি করছে এই মেয়ে? নবীনদের বরণের উদ্দেশ্যে তো পুরোনো শিক্ষার্থীদের এসব অনুষ্ঠান সামলানো কথা?

আরকিছু ভাবার আগেই শুভ্রার পাশে একজন ছেলেকে দাঁড়াতে দেখে আরহাম। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রা আর ছেলেটি।

আরহাম নিজের মধ্যে এই মুহূর্তে রাগ অনুভব করছে। কিন্তু বুঝতে পারছে না হঠাৎ এমন রেগে যাওয়ার কারণ। ফাহিম আরহামের অবস্থা দেখে মুচকি হাসে।

শুভ্রা একবার আড়চোখে তাকায় আরহামের দিকে। কি সুন্দর লাগছে তার মন্ত্রী মশাইকে। সে জানে তার মন্ত্রী মশাই শুভ্র পাঞ্জাবি পড়বে তাইতো সে মন্ত্রী মশাইয়ের সাথে মিলিয়ে শুভ্র রংয়ের শাড়ি পরেছে।

শুভ্রার চোখে স্পষ্ট খেলা করছে কোনো শয়তানি কিছু। এবার সে তাকায় তার সামনে থাকা ছেলেটির দিকে। চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করে। ছেলেটিও বুঝতে পেরে আরেকটু এগিয়ে আশে শুভ্রার দিকে। এখন তাদের মধ্যেকার দুরত্ব মাত্র এক হাত পরিমাণ। শুভ্রার মুখে ফুটে উঠে শয়তানি হাসি। এমন ভাব করছে যেনো সে মন্ত্রী মশাইকে দেখেই নি।অতঃপর তারা এক সঙ্গে গান গাওয়ায় মনোনিবেশ করে।

হঠাৎ সুমধুর নারী কন্ঠ কর্ণগোচর হতেই ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে আহাম। এতক্ষণ যাবত কি সব উদ্ভট ভাবনা ভাবছিল। নারী কণ্ঠটির অধিকারীকে খুজতে গিয়ে আবিষ্কার করে শুভ্রাকে। মুগ্ধ হয় সে। বিষাদ ভরা মন কিছু সময়ের মধ্যেই ছেয়ে যায় মুগ্ধতায়। কিন্তু সাথে ছেলেটার যুগল গান শুনে বিরক্ত হয় সে।
এখনতো আরহাম নিজেই নিজের উপর বিরক্ত হচ্ছে। তার কেনো এতোবার মুড সুয়িং হচ্ছে।
গান শেষ হলে কড়া হাত তালিতে মেতে উঠে সকলে। বাহবা দিচ্ছে সকলে তাদের যুগল গানে।

সকলেই মুগ্ধতার সহিত শুনেছে শুভ্রা আর আদিত্যর যুগল গান। এই ভার্সিটিতে অনেকটা জনপ্রিয় আদিত্য তার কণ্ঠস্বরের জন্য। অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সে। আজকে তার সাথে একটি মেয়ের গান গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে মেয়েটি আসতে পারে নি।বিষয়টা জানার পর অদিতি শুভ্রার কথা জানায় তার ভাইকে। সাথে শোনায় শুভ্রার গানের কিছু রেকর্ডিং। সকলে মিলে রাজি করায় শুভ্রাকে।
শুভ্রা কিছুতেই রাজি ছিল না গান গাইতে। কিন্তু পরে কি যেনো ভেবে রাজি হয়ে যায়।

______

গান শেষে শুভ্রা আর আদিত্য নেমে পড়ে স্টেজ থেকে। রাইমা আর অদিতি ঝাঁপিয়ে পড়ে শুভ্রার উপর। শুভ্রা তাল সামলাতে না ওরে ঠাস করে নিচে পড়ে যায়। সাথে রাইমা আর অদিতি। সকলেই অবাক চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

সব থেকে বেশি অবাক তো ফাহিম হয়েছে। রাইমাকে সে মোটেও এখানে আশা করেনি। তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার সামনে রাইমা।

” ছাগলের দল, ওঠ আমার উপর থেকে। আল্লাহ গো,আলু ভর্তা করে ফেললো আমাকে। ওই ওঠ, তাড়াতাড়ি ওঠ।”

শুভ্রার কথা শুনে দুজনেই দাঁত কেলিয়ে উঠে পড়ে।

” আরে আমাকে তোল, কোমরটা মনে হয় ভেঙে ফেলেছিস।”

উচ্চস্বরে হেসে উঠে সকলে। শুভ্রা অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে সকলের দিকে। আড়চোখে মন্ত্রী মশাইয়ের দিকে তাকায় একবার। যে কিনা তার দিকেই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। ইশ কি লজ্জা কি লজ্জা। এভাবে সকলের সামনে পড়ে গেলো। তার মন্ত্রী মশাই এখন তাকে নিয়ে কি ভাববে। অদিতি টেনে তুলে তাকে।

রাইমার নজর পড়ে ফাহিমের দিকে। নিজের দিকে ফাহিমকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিভ দিয়ে ভেংচি কাটে। মুখ বাঁকিয়ে চলে যায় অন্যদিকে।
ফাহিম থতমত খেয়ে যায়। কিন্তু পরক্ষণেই কিছু একটা ভাবতেই মন খুশিতে ভরে উঠে।

” ভাই, রাইমা ম্যাম এখানে কি করছে?”

” এখানেই ও ভর্তি হয়েছে। ফুপিমা বললো এখানে ভর্তি করিয়ে দিতে। ও নাকি এখানেই পড়তে চায়। প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। ”

” ওহ্ আচ্ছা”

” কিন্তু ওই অসভ্য মেয়েটার সাথে কি করছে ও?”

ফাহিম অদ্ভুত ভাবে তাকায় আরহামের দিকে। তার সামনেই কিনা তার বোনকে অসভ্য বলছে। মন্ত্রী হয়েছে জন্যে কি যা ইচ্ছা তাই বলবে।

” ভাই যাকে অসভ্য বলছেন সে আমার বোন।”

” তো”

আরহামের ভাবলেশহীন কথায় বিরক্ত হয় ফাহিম। ইচ্ছাতো করছে এখনি মুখের উপর কয়েকটা কতা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু সে সাধ্য কি আর তার আছে। তবুও মনে মনে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দেয়।

“আসছে আমার বোনকে অসভ্য বলতে। নিজের বোন যে অসভ্য তার কোনো খোঁজ নেই। একদিন গুণে গুণে সব কথার শোধ তুলবো হুহ।”

________________

ভার্সিটির সকল কিছু শেষে এবার বিদায়ের পালা আরহামের। সকলেই নানা কথা বলছে তার সাথে।
কিন্তু আরহাম কেমন থমথমে হয়ে আছে। তার মনে বার বার একটা কথাই উকি দিচ্ছে,
“মেয়েটা আজকে আমার দিকে একবারও তাকায় নি। এই মন্ত্রী আরহাম শিকদারকে ভাব দেখাচ্ছে? কি ভাবে নিজেকে। আরহামের হাঁটুর বয়সী একটা মেয়ে তার আবার ভাব দেখো। আরে নাহ , শুধু ১২ বছরের ছোট মাত্র”।

সব কিছু কেমন যেনো লাগছে তার। ওই মেয়েকে নিয়ে ওসব কেনো ভাবছে। বার বার নিজেকে বুঝাচ্ছে যেনো মেয়েটিকে নিয়ে না ভাবে। কিন্তু ওইযে বেহায়া মন, যা বারণ করি তা নিয়েই পড়ে থাকে।

____________

গাড়িতে উঠার সময় আরহাম দেখতে পায় শুভ্রাকে। আদিত্যর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। পাশেই অদিতি আর রাইমা আছে।
কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের নজর ঘুরিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে আরহাম। নিজের কাছে নিজেকেই অপরিচিত মনে হচ্ছে তার। যে আরহাম শিকদার নারীদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। কোনো নারীর দিকে ভালোভাবে তাকায় না পর্যন্ত সে কিনা একটা মেয়েকে এভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

আরহামের গাড়ি চোখের আড়াল হতেই উচ্চস্বরে হেসে উঠে শুভ্রা। হঠাৎ তাকে এভাবে হাসতে দেখে হকচকিয়ে যায় রাইমারা।

” ওই, এভাবে হাসছিস কেনো?”

নিজের হাসি কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে শুভ্রা। রাইমা আর অদিতির দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই তারাও হেসে ফেলে। আদিত্য ক্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। তাকে ওভাবে তাকাতে দেখে আরেকদফা হেসে ফেলে ওরা।

” আদিত্য দা, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”

” আমি কি করলাম আমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছো?”

” তেমন কিছুনা , এমনিতেই বলতে ইচ্ছা করলো।”

আদিত্যের মাথার উপর দিয়ে চলে যায় শুভ্রার কথা।
অতঃপর সকলে চলে যায় নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

তারা সেই স্থান ত্যাগ করতেই গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে একজন যুবক। শুভ্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে সে। মুখে বিরাজ করছে রহস্যময় হাসি।

” অবশেষে তোমাকে খুঁজে পেলাম। এবার কোথায় পালাবে। একবার তো হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলে কিন্তু এবার?”

বলতে বলতেই বিশ্রীভাবে হেসে উঠে। ভার্সিটি প্রায় ফাঁকা হওয়ার কারণে কেউ দেখতে পেলো না যুবকটির হাসি।

_____________

চলবে,,,,