প্রিয় রোদ্দুর পর্ব-২৪+২৫

0
302

#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:২৪

-“এই অতসী!কথা বলো?”

আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।উনি আমার মুখের সামনে মুখ রেখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন।এখনো হাঁপাচ্ছেন।এদিকে আমার লজ্জায় গাল হয়ে যাচ্ছে। আমি চাপা হেসে চোখ অন্যদিকে ঘুরালাম।উনি আমার গালে হাত দিয়ে ফিসফিস করে বললেন,

-“ভুলেও চেষ্টা করবে না দ্বীপকে বিয়ে করার।”

আমি নিজের হাত দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে নিম্ন স্বরে বললাম,

-“করবই তো।আপনি এমন করলেন কেন আমার সাথে।”

-“কি করলাম?”

-“এইযে!”(ঠোঁট দেখিয়ে)

-“ওয়াও গ্রেট না?করে ভালো লাগছে।আবার করব?”

-“কিহ!আপনার একটুও অপরাধ বোধ নেই?এখন আমাকে কে বিয়ে করবে?”

-“কেন আমি!”(চোখ টিপে)

আমি হা হয়ে গেলাম।রোদ্দুর স্যার আমাকে প্রপোজ করলো।আবার কিসও করলো।এখন বিয়ের প্রপোজাল দিচ্ছে।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।উনি আমার চুলে হাত বুলিয়ে বললেন,

-“তোমার জেদে এই অবস্থা! ”

-“আমার দোষ দিবেন না।আমি জানি আপনি ওই জোনাকিকে বিয়ে করবেন।”

বলেই অন্যদিকে তাকালাম।উনি নিঃশব্দে হাসলেন।তারপর আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

-“পুরোটাই নাটক ছিলো!”

আমি তৎক্ষনাৎ ওনার দিকে তাকালাম। আশ্চর্য হয়ে বললাম,

-“মানে!”

-“তোমাকে প্রথম আমি দেখি আমাদের ভার্সিটিরই সামনে।জানি না কেন গেছিলে।প্রথম দিন তোমাকে দেখেই থমকে গেছিলাম।তুমি একটা ছেলের সাথে ঝগড়া করছিলে।টিনাকে উল্টাপাল্টা মেসেজ দেয়ার জন্য। আর সেদিনই আমার চোখজোড়া আটকে গেছিলো তোমার কথা বলার স্টাইল,তোমার চোখজোড়া আর সেই চলমান ঠোট দেখে।এত কথা বলতে পারো তুমি!আমি শুধু ভাবছিলাম,মেয়েটা এত কথা কন বলছে!গনপিটুনি খাওয়ালেই তো হয়ে যায়।সেদিন আমি তোমাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম।এরপর বিষয়টাকে তেমন পাত্তা না দিলেও আমি কোনোভাবেই তোমাকে ভুলতে পারছিলাম না।আমার স্বপ্নের মাঝে চলে আসতে।যেমন এখন আমি আসি তোমার স্বপ্নে।জায়গায় জায়গায় তোমাকে কল্পনা করতে পারতাম।এরপর তোমাকে আমি অনেক খুঁজি। খুঁজতে খুঁজতে তোমাদের কলেজে পড়ুয়া এক ছোট ভাই থেকে জানতে পারি যে তুমি সেই কলেজে পড়ো। আর এটাও জানতে পারি যে তোমার টিচার লাগবে।তারপর আমি কোনোমতে তোমার বাসার এড্রেস নিই।আর তোমার আব্বুর সাথে কথা বলে তোমাকে পড়ানো শুরু করি।দুইটা বছর ধরে পড়াচ্ছি তোমায়। কিন্তু তোমার বাচ্চামো আমার কাছে এখনো নতুন লাগে।নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম তোমায়।তোমার সব কথা আমার ঘিরে থাকুক!এটাই চাইতাম।কিন্তু তুমি তো আমার সাথে কথাই বলতে না।তাই তোমার সাথে রুডলি বিহেভ করতে লাগলাম।যেন তুমি আমার সাথে ভালো করে কথা এটলিস্ট বলো।কারণ তোমার চুপ থাকাটা আমি মানতে পারছিলাম না।আমাকে শুধুৃমাত্র একটা টিচার হিসাবে দেখা আমার ভালো লাগছিল না।হয়ে উঠলাম তোমার রাগী রোদ্দুর স্যার।আর সেই থেকে তুমি আমাকে নিয়েই কথা বলতে টিনার সাথে।বাসার সবার সাথে।রোদ্দুর স্যার এমন,আমাকে বকে হেনতেন!”

বলেই থামলেন উনি।পাশ থেকে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলেন।আমি চোখের পাতা বারকয়েক ফেললাম।কিছু বলার আগেই উনি আবার বলতে লাগলেন,

-“শ্রেয়ার জন্মদিনের পর তোমাকে এতটা হাসিখুশি দেখে ভাবলাম অতসীটা সবসময় আমাকে দেখে সিটিয়ে থাকে।ওকে একটু সময় দেয়া উচিত।
তোমার প্রতি ধীরে ধীরে এফেক্টেড হতে লাগলাম আমি।তোমার প্রতি নেশা ধরে যাচ্ছিলো।ভাবতে লাগলাম,আমি ভুল করেছি অতসীকে আমার প্রতি ঘায়েল করে।কারণ আমি তো ওর থেকেও বেশি ঘায়েল হয়ে যাচ্ছি।তোমার জন্মদিনের দিন আমি সিদ্ধান্ত নিই তোমার বাসায় প্রপোজাল দিবো।ঠিক তখনই দাদীর সাথে কথা হয় আমার।”

জন্মদিনের দিন রোদ্দুর স্যারকে নিয়ে একটা ঘরে যান দাদী।রোদ্দুর স্যার তখন অবাক হয়ে বলতে লাগে,

-“আপনি আমাকে এখানে আনলেন কেন দাদী?কিছু বলবেন?”

-“তোমার অনুভূতি সম্পর্কে আমি জানি রোদ্দুর।”

রোদ্দুর স্যার সেদিন অপ্রস্তুত হয়ে বললেন,

-“মানে!”

-“আমি জানি যে তুমি অতসীকে ভালোবাসো।আমার চোখ এড়ায়নি। আমি সবই লক্ষ্য করেছি।”

-“হ্যা আমি ভালোবাসি।আমার বলতে কোনো ভয় নেই।”

-“তোমার ভালোবাসাকে আমি সম্মান জানাচ্ছি। কিন্তু রোদ্দুর, আমার মেয়েও কিন্তু অতসীকে পছন্দ করে রেখেছে নিজের ছেলের বউ করবে বলে।”

-“মানে!ওনার ছেলেও আছে?”(অবাক হয়ে)

-“হ্যা।বিদেশে আছে এখন।কয়েকদিন পর দেশে ফিরলে অবশ্যই প্রস্তাব আসবে।তখন অতসী পড়ে যাবে দোটানায়।ও হয়ত পরিবারের চাপে বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে।আমি একা কিছুই সামাল দিতে পারব না।”

-“তাহলে এখন কি করব?অতসীকে গিয়ে আমি সব বলবো..”

-“না।ওকে এখন সব বলে দিলে ও বিষয়টা নিতে পারবে না।ওর পড়াশোনার ক্ষতি হবে।আর তাছাড়া ওর মনের মধ্যে কি আছে সেটা তোমাকে বের করে আনতে হবে রোদ্দুর।ও যদি না করে দেয় তোমাকে?”

-“কিভাবে বের করব?”

-“ও তোমাকে আদৌ ভালোবাসে কিনা সেটা তোমাকে বের করতে হবে।ওর মনের কথাটাকে তোমার টেনেহিঁচড়ে বের করে আনতে হবে।যেন ও নিজে স্বীকার করে যে ও তোমাকে ভালোবাসে।এমনিতে ও স্বীকার করবে না।তোমাকে বের করতে হবে।তুমি আজকের পর থেকে ওর সাথে তেমন কথা বলবে না।”

-“কিহহ!অসম্ভব! ”

-“আল্লাহ রে!এত ভালোবাসো তুমি।”

-“ওর সাথে কথা না বলে আমি থাকতেই পারব না।”

-“তাহলে শোনো….”

আর তারপর থেকে দাদীর প্ল্যান মোতাবেক সব করে রোদ্দুর।কিন্তু দ্বীপ এত জলদী এসে সবকিছু পাল্টে দিলো।
বলেই থামলো রোদ্দুর স্যার।
আমি জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে রাগী গলায় বললাম,

-“এটা কোনো টেকনিক হলো মনের কথা বের করার?”

-“তুমি এমনিতে স্বীকার করতে না তোতাপাখি। সো এটাই অবলম্বন করতে হলো।”

-“আমি আপনাকে ভালোবাসলে তো স্বীকার করবো।আমি ভালোবাসি না আপনাকে।”
(অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে)

উনি হাত দিয়ে আমার গাল চেপে ধরে মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,

-“তুমি এখনো নিজের মনের কথা বলছো না।”

-“বললামই তো।”

-” কি?”

-“আমি দ্বীপকে ভালোবাসি।”(লাজুক লাজুক ভঙ্গিতে)

রোদ্দুর স্যার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন।শক্ত গলায় বললেন,

-“এটা ছাড়া কথা নাই?”

-“আপনিও তো জোনাকি কে বিয়ে করবেন বলেছেন।আমি কিছু বলেছি?”

-“তাতে তোমার কি হ্যা!ভালো হয়েছে। তুমি করলে আমিও করবো যাও।”

-“হ্যা করবই তো।”

-“আমিও করবই তো।”

আমি ওনার দিকে আবারো জিভ বের করে ভেঙালাম।উনি রাগী গলায় বললেন,

-“দেখো,আমি কিন্তু এখনো তোমার রাগী স্যারই আছি।আমার রাগ সম্পর্কে তোমার ধারণা আছে নিশ্চয়ই। আমাকে রাগিও না।”

-“আমার সাহস সম্পর্কেও নিশ্চয়ই আপনার ধারণা আছে।আমাকে রাগ দেখাবেন না।”

-“অতসী!”

-“জোনাকিকে বিয়ে করার কথা বলে এখানে নাটক করা হচ্ছে! ”

উনি রেগে আমার গাল চেপে ধরে বললেন

-“বারবার একই কথা।রাউন্ড এন্ড রাউন্ড!
শোনো এসব নাটক ছিলো বললাম না?আমি আম্মুকে এসব বলতে বলেছিলাম যেন তুমি সবার সামনে রেগে গিয়ে আমাকে মনের কথা জানিয়ে দাও।কিন্তু নাহ!তুমি ড্যাঙ ড্যাঙ করে বাইরে চলে গেলে।এদিকে আমি তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে অস্থির।এক্সিডেন্ট হওয়ার পর আমি তোমাকে নিয়ে আর রিস্ক নিতে চাইনি।তুমি একটা সাইকো।কি না কি করে বসো!তাই তোমাকে আমিই সব বলব বলে ঠিক করলাম।কিন্তু এসে শুনি আপনি তো দ্বীপকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

-“আর মেসেজ দেয়াটা?”

-“কোনটা?ওহ বুঝেছি।ওটা একটা ডেয়ার ছিলো জোনাকির। সেটাই ও করেছে।”

-“ফুচকা খেতেও দেখেছিলাম।”(আড়চোখে তাকিয়ে)

-“তোমার জন্য বার্থডে গিফট কিনতে গেছিলাম।আমি তো এসব চিনি না তাই আর ও নিজের পেমেন্ট হিসাবে আমাকে ফুচকা খেতে বললো।তাই একটা খেয়েছিলাম।”

-“ভালো করেছেন ”

-“এতেই মহারাণী ফুলে বোম!কিন্তু এই প্ল্যানে জোনাকিও আমাকে অনেক হেল্প করেছে।বাসায় আমি যে পরিমাণে পাগলামী করেছিলাম।তাছাড়া তোমাকে জ্বালানোও এত সহজ নয়।যদি বুঝে দাও!”

ওহ এই কাহিনী!ইচ্ছে করে আমাকে জ্বালানো!
দেখাচ্ছি মজা!আমি হাতে হাত ভাজ করে বললাম,

-“সরুন তো।আমার এসব ভালো লাগছে না।আমি ঘুমাবো।”

-“ঘুমাবে মানে!”(ভ্রু কুঁচকে)

-“আপনি যান তো মশাই।এমনিতেই আমাকে কিসটিস করে একদম সব নষ্ট করে দিলো।এবার আমাকে কে বিয়ে করবে।নেহাতই দ্বীপ ভালো ছেলে।”

রোদ্দুর স্যার কিছু না বলে চেয়ারে একটা লাত্থি দিয়ে চলে গেলেন।আমি কেঁপে উঠলাম।রেগেমেগে অস্থির হয়ে বের হয়ে চলে গেলো।পাগল লোক একটা।
আমি তো প্রতিশোধ নিবোই। আমাকে হেনস্তা করা বের করছি!বাজে লোক একটা!
কিন্তু উনি যে আমাকে এতটা ভালোবাসেন,কখনো বুঝতে পারিনি তো।দ্বীপ,তুই ঠিকই বলেছিলি রে।ইউ আর দা বেস্ট বেস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড।
ভেবেই হাসলাম আমি।

চলবে….

#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:২৫

হাসাপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছি আজ দুইদিন হচ্ছে। মাথায় বেন্ডেজ খোলা হয়েছে। তবে পা ঠিক হতে সময় লাগবে।এদিকে পরীক্ষাও এগিয়ে আসছে।সব মিলিয়ে ভীষণভাবে চিন্তায় আছি আমি।এরমধ্যে আন্টিও একবার দেখা করে গেছেন আমার সাথে।উনি আমাকে ইচ্ছে করে কষ্ট দিতে চাননি।হয়ত রোদ্দুর স্যারের জন্য তাকে এমনটা করতে হয়েছে।তাছাড়া ওনাকে আমার বেশ পছন্দ!চমৎকার একজন মানুষ।কিন্তু এত সুন্দর,গোছানো একজন মানুষের ছেলে এমন রাক্ষস কিভাবে হয় সেটাই আমার মাথায় আসে না। বিছানায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলাম।ঠিক এমন সময় দরজা খুলে ঢুকলেন রোদ্দুর স্যার।দরজায় আওয়াজ শুনে আমি সেদিকে তাকালাম।উনি এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,

-“কি করছো?”

আমি ওনার কথার জবাব না দিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছি।উনি এমন ভাবে ঢুকলেন যেন ওনার রুম,ওনার বাসা।নিজ ইচ্ছেমত এসে আমার একপাশে বসেও গেলেন।আমি তখনো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।উনি আমার সামনে হাত দিয়ে তুড়ি বাজিয়ে বললেন,

-“কি হলো?”

আমার হুশ এলো।একবর নিচের দিকে তাকিয়ে আবারো ওনার দিকে তাকালাম। তারপর বললাম,

-“কিছু না।”

উনি আমার হাত থেকে বইটা নিয়ে বললেন,

-“কি পড়ছো?”

তারপর বইটা উল্টেপাল্টে দেখে রেখে দিলেন।আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন,

-“শরীর কেমন?”

আমি ওনার হাত আমার মাথা থেকে সরিয়ে বললাম,

-“আমার কি জ্বর নাকি যে আপনি মাথায় হাত দিচ্ছেন।”

উনি হাসলেন।আমি সেদিকে তাকিয়ে গাল ফুলালাম।উনি গাল টেনে বললেন,

-“এমনি দিলাম।”

উনি নিজেই গিয়ে আমার টেবিল থেকে বই খাতা এনে পাশে বসে বললেন,

-“চলো পড়া স্টার্ট করি।”

আমি মনে হয় আকাশ থেকে পড়লাম।অবাক হয়ে বললাম,

-“কিসের পড়া!”

উনি বই খুলতে খুলতে বললেন,

-“কিসের পড়া মানে!তোমার সামনে এইচএসসি।”

-“স্যার আমি অসুস্থ ব্যক্তি।আর আমি আপনার কাছে পড়ব না বলেছি না?”

-“বাব্বাহ।শুয়ে শুয়ে পড়বে তাও অসুস্থতা। গিলিয়ে দিচ্ছি বলতে গেলে।আর তুমি পড়বে না মানে?সব ফাঁকিবাজির ধান্দা।”

কি আশ্চর্য! পড়ব না বলে অপমান করলাম তাও এই লোক আজ আমাকে বকছে না কেন!
এত উন্নতি!কুচ তো গড়বড় হেয়!
আমি যখন ওনার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি ঠিক সেসময় উনি বলতে লাগলেন,

-“এভাবে তাকিয়ো না ত!”

-“কেন?”

-“পুরো পেত্নী লাগে।”

-“আপনি নিজে যে ভূত সেটা বলেন।”

-“আই নো।”

-“আপনি ভূত,আপনার বউ জোনাকি পেত্নী।”(মুখ ভেংচি কেটে)

-“এখানে জোনাকি কে টানছো কেন?”

-“কেন? গায়ে লাগলো নাকি?”

-” লাগারই কথা।”

আমি আর কিছু বললাম না।বাজে লোক একটা!
এত প্রেম উতলিয়ে উঠছে তাহলে সেদিন কেন আই লাভ ইউ বললি!
আমার মনের প্রশ্ন টা মনেই রইলো।উনি হঠাৎ বলে উঠলেন,

-“জোনাকি বিবাহিত!”

আমার চোখগুলো মার্বেল আকার ধারণ করলো।

-“মানেহ!”

-“হুমম।ও বিবাহিত। ও আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে না বরং বিদেশে থাকে। দেশে এসেছে এক মাস হলো।আবার চলে যাবে ওর হাসবেন্ড আসলে।”

-“আপনি একটা মিথ্যুক।”

-“এটা সত্যি কথা।”

-“আপনি এতদিন এত এত মিথ্যা কথা বলেছেন।আপনার উপর ঠাডা পড়বো!”

-“তুমি না পড়লেই হলো।”(মুচকি হেসে)

-“এটা মোটেও ঠিক না।আর তাছাড়া আপনি এখনও যে সত্যি বলছেন এর কি গ্যারান্টি আছে?কেউ বাপের বাড়ি এক মাস থাকে?”

-“আরেহ না।ও তো বিয়ে খেতে এসেছে! ”

-“বিয়ে!কার বিয়ে?”

-“তোমার আর আমার।”(হেসে)

-“কি বলছেন টা কি!আপনাকে আমি বিয়ে করব না।”

-“না করো।”

-“করবো নাই তো।”

-” বললাম তো।করো না।আমার অনেক অপশন আছে।”

-“আমার এত এটিটিউড ওয়ালা মানুষ একদম পছন্দ না।”

-“তোমার জন্যই আমাকে এত বড় নাটক করতে হলো।আর তুমি নাছোড়বান্দা।এখনো মুখ ফুটে কিছু বলছো না।”

-“ওমনি সব দোষ আমার হয়ে গেলো।আর আপনি এই ছোট্ট কথাটা বলানোর জন্য এতকিছু করলেন।আমার কেন যেন এটা হজম হচ্ছে না।”

উনি হঠাৎ আনমনে বলে উঠলেন,

-“আমাকে করতে হলো।তোমার ফুপিই তো..”

বলেই আটকে গেলেন।আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

-“কি বলছিলেন?”

-“না কিছু না।”

-“কিছু তো একটা বলছিলেন।আপনার আমার সাথে এমন বিহেভিয়ারের কারণ কি?”

-“বললাম তো,তোমার থেকে সত্যিটা জানার ছিল।”

-“আপনি কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন!(সন্দেহের চোখে)

-“আরেহ না।কাকে বাঁচাব। কিসব বলছো!””

-“ফুপির কথা কেন উঠলো?”

-“বেশি কথা বলো না তো।আর তুমিই তো সব কিছুর জন্য দায়ী।”

-“আমি কি করলাম!”(অবাক হয়ে)

-“তোমারই দোষ।তুমি এখনো পাকামো করছো।”

আমি রেগে বোম হয়ে বললাম,

-“ভালো হয়েছে। আমি দ্বীপকে বিয়ে করব।”

-“ওকে।”

-“কিরে ভাই!এত জলদী ওকে বলে দিলো!”(মনে মনে)

উনি নিজের মত খাতায় লিখছেন।আমি হালকা কেশে বললাম,

-“করবো করবো।আপনি আপনার জোনাকি কে নিয়ে আসবেন।”

-“আবার একই কথা!”(দাঁতে দাঁত চেপে)

যাহ বাবা!রেগে গেলো!

-“এ..এমনি ব..বললাম আরকি।”(জোরপূর্বক হেসে)

-“তুমি দ্বীপকে বিয়ে করবে?”

-“হ্যা!”

উনি আমার দিকে ঝুঁকলেন। আমি পিছিয়ে গেলাম।উনি আরো এগিয়ে এলেন।এবার পুরো বিছানার সাথে লেগে গেলাম।আমতা আমতা করে বললাম,

-“ক..কি ক..করছেন!”

উনি আমার মুখে ফু দিয়ে চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে বললেন,

-“তুমি দ্বীপকে বিয়ে করবে,আর আমি তোমাকে।ব্যস হয়ে গেলো।”

আমি ওনার বুকে হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললাম,

-“সরুন তো সরুন।”

উনি সরে গেলেন।হো হো করে হেসে উঠলেন।আমি ওনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। উনি হাসতে হাসতে বললেন,

-“কি?কি দেখছো?”

আমি দ্রুত চোখ নামিয়ে বললাম,

-“না কিছু না।”

-শোনো?”

-“জ্বী?”

-“সেদিনের জন্য সরি।”

-“কোনদিন?”

-“সেদিন তোমর পারমিশন ছাড়া আর বিয়ে ছাড়া তোমাকে এভাবে কিস করা আমার উচিত হয়নি।আমি আসলেই দুঃখিত।আসলে আমার মাথা ঠিক ছিল না।রাগ উঠে গেছিল।সরি অতসী।”

আমি কিছু বলতে যাব তার আগে দ্বীপ ঘরে এলো একটা ট্রে নিয়ে।স্যারের সামনে চা দিয়ে আমার পাশে বসলো।ট্রে থেকে খাবার নিয়ে বললো,

-“এবার আপনার খাওয়ার সময়।”

-“একটু পরে খাবো।এখন রাখ।”

-“এখনই খেতে বলেছে মামী।”

-“আরে পরে খেয়ে নিবো।”

-“পা টা ঠিক হতে হবে না?খেতে হবে।ওষুধ খাবি তো।”

বলেই চামচ দিয়ে আমার দিকে খাবার এগিয়ে দিলো। আমি হাত দিয়ে সরিয়ে বললাম,

-“ভালো লাগছে না রে এখন।”

দ্বীপ হাজার চেষ্টা করেও না পেরে বললো,

-“তোর সাথে আমি পারব না।অসভ্য বেয়াদব শয়তান মেয়ে একটা।”

-“তুই তুই।”

-” কি আমি?”

-“সবগুলো গালি তুই নিজেই।”

রোদ্দুর স্যার হঠাৎ উঠে এলেন এপাশে।দ্বীপের হাত থেকে স্যুপের বাটিটা নিয়ে মুচকি হেসে বললেন,

-“দ্বীপ,তুমি কি জানো যে লোহা লোহাকে কাটে।”

-“হু জানি তো।”

-“ঠিক তেমনই কিছু কিছু ঘাড়ত্যাড়া কে খাওয়ানোর জন্য অন্যান্য পদ্ধতি এপ্লাই করতে হয়।”

দ্বীপ হাতে হাত ভাজ কর বললো,

-“তাই নাকি। ”

-“হ্যা।তুমি দেখতে চাও?”(হেসে)

-“একদম।”

দ্বীপ হেসে সায় জানালো।এদিকে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবছি যে হচ্ছে টা কি!
উনি স্যুপের বাটিটা টি-টেবিলের ওপর রাখলেন।চামচে করে স্যুপ নিয়ে আমার গাল চেপে ধরে মুখের ভিতর দিয়ে দিলেন।
আমার এমন রাগ হলো যে ফেলে দিতে নিলাম।উনি হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে বললেন,

-“গিলো।খাবার নষ্ট করতে হয় না।”

চাপে পড়ে গিলতেই হলো।দ্বীপ হাসতে হাসতে বললো,

-“তোর মুখটা দেখ!পুরো প্যাচার মত লাগছে।”

আমি মুখ ফুলিয়ে বসে আছি।রোদ্দুর স্যার আমাকে এভাবে করেই পুরো খাবারটা খাইয়ে দিলেন।তারপর ওষুধ দিতে দিতে বললেন,

-“তুমি কি সারাজীবন ল্যাংড়া হয়ে থাকতে চাও?এভাবে তোমাকে কে বিয়ে করবে পরে?ভেবে দেখেছ?”

-“এই আপনি আমাকে ল্যাংড়া কেন বললেন?আর আমাকে বিয়ে করার মত অনেকেই আছে ওকে।দ্বীপ করবে।কিরে করবি না?”

দ্বীপ হাসতে হাসতে বললো,

-“আমি নেই। কোনো রাক্ষসী কে বিয়ে করতে পারব না আমি।”

আমাদের কথা শুনে রোদ্দুর স্যার হাসছেন।উনি বলতে লাগলেন,

-“দেখলে?আমি একা নই,দ্বীপও জানে যে তুমি কি!”

আমি রেগে দ্বীপকে কিছু বলতে যাব তার আগেই দরজা থেকে কেউ বলে উঠলো,

-“আসলে যারা নিজেরা মেছো ভূত হয় তারা অন্যকে রাক্ষসী বলে।”

আমি কৌতূহল নিয়ে তাকালাম দরজার দিকে।সাথে স্যার আর দ্বীপও।দিয়া নামক মিষ্টি মেয়েটিকে দেখতে পেলাম।
দিয়া মুচকি হেসে বললো,

-“আসতে পারি?”

-“হ্যা অবশ্যই!”

মেয়েটা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

-“কি?কথাটা ঠিক বলিনি?”

আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই দ্বীপ বলে উঠলো,

-“একদমই ঠিক বলেননি।আসলে যারা নিজেরা রাক্ষসী তারা মানুষকে মেছো ভূত বলে।”

-“এক্সকিউজ মি!আপনি আপুকে জিজ্ঞেস করেন।আপুও এটাই বলবে।তাই না আপু?”

বলে ও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে গেলো।দ্বীপের রাগ হলো।তবুও প্রকাশ করলো না।ভ্রু কুঁচকে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,

-“অসহ্যকর!”

রোদ্দুর স্যার আমার মাথার ভেজা চুলগুলো খুলে দিয়ে বললেন,

-“চুলগুলো ভেজা তাহলে বেঁধে রাখছ কেন?”

-“গরম লাগে!”

-“লাগুক।”

উনি চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে দিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-“তুই আমার সাথে যাবি তো?”

-“হ্যা ভাইয়া।তার আগে একটু কথা বলি আপুর সাথে।”

দ্বীপ বিরবির করে বললো,

-“কি এমন কথা বলবে!যত্তসব ঢং।”

দ্বীপের কথাটা একটু জোরেই শোনা গেলো।আমি মুখ টিপে হাসলাম।দিয়া বলতে লাগলো,

-“কি বললেন আপনি?”

-“কি বলেছি?”(ভ্রু কুঁচকে)

-“আপনি ঢং বললেন কেন?”

-“আপনি যেচে ঝগড়া করছেন।”

এভাবেই কুরুক্ষেত্র লেগে যাচ্ছে। আমি উপায়ন্তর না পেয়ে স্যারকে চিমটি কেটে বললাম,

-“থামান না!”

-“আরে দাঁড়াও।একটু লাইভ ঝগড়া দেখি।”

-“রাখুন তো!আমি ওয়াশরুম যাব।থামান ওদের।”

-“তুমি ওায়াশরুমে যাবে এতে ওদের কি!”

-“এতকিছু না বলে ওদের থামান আর আম্মুকে ডাক দিন,আমি ওয়াশরুম যাব।”

-“তো যাও না!”

কেমন শয়তান!আমি ওনাকে জোরে চিমটি দিয়ে আমার পায়ের দিকে ইশারা করলাম।দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

-“মজা নিচ্ছেন?”

উনি মাথা চুলকে বললেন,

-“ওপস সরি!”

বলেই উনি আচমকা আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমি অবাক হয়ে বললাম,

-“কি করছেন টা কি!”

এমতাবস্থায় দ্বীপ আর দিয়ার ঝগড়াও থেমে গেলো।ওরা ঝগড়া বাদ দিয়ে মোবাইল নিয়ে ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো তা দেখে আমি বললাম,

-“এসব কি করছিস!বন্ধ কর।আর আপনি নামান আমাকে।সবাই কি ভাববে!”

উনি কোনো তোয়াক্কা না করে আমাকে ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে আমার ভয়ে অবস্থা শেষ।সাথে পরম লজ্জায় চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলছি।সেই স্বপ্ন টার কথা মনে পড়ছে!তারমানে আসলেই ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়!
পরমুহূর্তেই সেই প্রথম স্বপ্ন টার কথা মনে পড়লো।
ছি ছি!তারমানে ওটাও সত্যি হবে।তাও এই রাক্ষস টার সাথে!পোড়া কপাল আমার!

চলবে…