প্রিয় সুখ পর্ব-২৫

0
34

প্রিয় সুখ-২৫
___________________
কাঁটা চামচরে টং টং শব্দ আসছে। কেবিনে একটি গোল দেয়াল ঘড়ি। দুটি বিছানা। বাকি সব টেবিল। পিছনের দিকে একটি বড় জানালা আছে। বাহিরের দৃশ্য সুন্দর। ঢাকা শহরের বিশাল বিশাল দালান। ঘেষাঘেষি হয়ে দাঁড়িয়ে। লাল, সাদা নীল রঙ্গে আবৃত। এই রুমটির রঙ্গ সাদা। ঔষুধের গন্ধ বাতাসে উড়ছে। চোখ খুলে নিজেকে নীহারিকা আবিষ্কার করল একটি বেডে। শব্দের সন্ধান করতে চারপাশে চোখ বুলাল। ঘুম এখনও হালকা হয়নি। চোখ খুলতে কষ্ট। ভারী ভারী মাথা। একটু দূরে পাশের বেডে কেউ বসে খাবার খাচ্ছে। আরও ভালো করে লক্ষ্য করতেই নীহারিকার সব ক্লান্তি ছুঁটে পালাল। বিমুগ্ধ নামের এই প্রানী জীবনেও পরিবর্তন হবে না। জীবনেও না। বিছানায় পা ঝুলিয়ে সে খাবারে পূর্ণ মনোযোগী। সামনে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত টেবিল। সবুজ আর্মি ডিজাইনের নিচ চাপানো প্যান্ট। তার উপরে কালো হাফ হাতা গেঞ্জি। হাত ভর্তি কালো ব্রেসলেট। গলায় ঝুলছে লকেট। চুলগুলো ছোট করে কাঁটা। এত পরিপাটি কখন হলো? কি খাচ্ছে এই মানুষ? তাও হসপিটালে? নীহারিকা চোখ ঘুরিয়ে অবাক হয়ে গেল। মিতু আপু বিছানার অপর পাশে বসে খাচ্ছে। সে হাতে খাচ্ছে। এই খারাপ মানুষের মত চামচের ঘর্ষণে অন্যের ঘুম নষ্ট করছে না। মা কোথায়? নীহারিকা নিচের দিকে তাকিয়ে দেখল তার মা জননী তাকে দেখছেন। অপলক সেই দৃষ্টি। এত আগ্রহের সাথে তাকে দেখার কারণ কি হতে পারে ভাবতে ভাবতে নীহারিকার ঘটনাগুলো মনে পড়ে গেল। হ্যাঁ সে তো অসুস্থ। মা যে এখনও আহাজারি শুরু করেনি সেটাই অনেক। উঠে বসতে নিল নীহারিকা। মা এখনও তীর্যক চোখে তাকিয়ে আছেন। যেন অসুস্থ সে ইচ্ছে করে হয়েছে। আফিয়া বিলকিস মেয়েকে উঠতে দেখে এবার নড়েচড়ে বসলেন। উঠতে সাহায্য করলেন। চোখ মুখ অন্ধকার তার। নীহারিকার মনে পড়ল দাদামশায়ের কথা। উত্তেজিত হয়ে সে জিজ্ঞেস করল,’ দাদামশায়ের কি অবস্থা এখন?’ একটা প্রশ্ন কাল হয়ে দাঁড়াল এই শান্ত সময়টিকে অশান্ত করে তোলার জন্য। আফিয়া বিলকিস চোখ মুখ কঠিন করে সেই রকম ঝাড়তে শুরু করলেন। বিমুগ্ধর খাবার খাওয়ার মনোযোগ নষ্ট। সে চোখ উপরে তুলে তাকাল। কি হচ্ছে বুঝতে চাইছে। ধরতে পারছে না। আফিয়া বিলকিস এবার চিৎকার দিয়ে নীহারিকাকে বকছেন। তার অনিয়মিত অগোছালো জীবন নিয়ে তিনি প্রচন্ড বিরক্ত। সব দোষ তার। যেন অসুখ আসেনি স্বয়ং মৃত্যু এসেছে। বিমুগ্ধর খাওয়া আর হলো না। এসব দেখে সে এদম উঠে পড়ল। হালকা হাসার চেষ্টা করে বলল,’ খালামনি আমি খাবার নিয়ে আসছি।’ আফিয়া একনজর তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন,’ যাও আব্বু।’ ইশ কত সুন্দর ব্যবহার। গা জ্বলে উঠল নীহারিকার। আবার মনোযোগ দিল মায়ের কথায়। বিমুগ্ধ দ্রুত বের হয়ে এসে হাফ ছাড়ল। বিড়বিড় করে বলল,’ ও মাই গড।’ এই জন্যেই নীহারিকা তার মাকে মোটামোটি ভয় পায়। বিমুগ্ধ এমন ভাবে চিন্তা করল যেন সে নোট বুকে লিখে রাখছে। নীহারিকাকে চিনার চেষ্টা মাত্র। এই মেয়েকে না চিনে তো উপায় নেই। তার জীবনে একটি অপশন অবশিষ্ট রয়েছে। রাগেশ্বরী, রাগেশ্বরী, শুধু রাগেশ্বরী। সারা রাত ঘুম হয়নি। সকালে উঠে বাসায় গিয়েছিল সে। ফ্রেশ হয়ে সবার জন্য নিজে খাবার তৈরি করেছে। বাহিরের খাবার তেমন পছন্দ না তার। ডান পাশ থেকে জুতোর আওয়াজ আসছে। বিমুগ্ধ কাত হয়ে দেখল। সাথে সাথে চোখ মুখের রঙ্গ পরিবর্তন হয়ে গম্ভীর হয়ে গেল। রাগী গম্ভীর এই মানুষটিকে এখন কেউ দেখলে বলতে পারবে না এই মানুষ হাসতে জানে। জাওয়াদের হাতে প্যাকেট। গায়ে সাদা শার্ট। কালো প্যান্ট। চুল সেট করে পিছনে দেওয়া। বিমুগ্ধ ভ্রু কুঁচকাল। হাতের সিলভার রঙ্গা ঘড়ির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। দরজা থেকে আর সরে গেল না। তার ফোন বাজচ্ছে। খবর নেই। মনোযোগ মিশিয়ে জাওয়াদকে দেখছে। মাঝ পথে এসে দু’ জনের চোখাচোখি হয়ে গেল। জাওয়াদ রাগল না। বিনীত ভাবে হাসল। তাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে সে খুশি। মন ভালো। বিমুগ্ধের কাছে এসে বলল,’ হেই ব্রো খবর কি?’ বিমুগ্ধ কোন জবাব দিল না। এখনও তাকিয়ে। চোখের দিকে চোখ। কপালে ভাঁজ। জাওয়াদ বিরক্ত হলো না। হাত দিয়ে পিঠ চাপড়ে বলল,’ মনে হচ্ছে ক্লান্ত তুমি। চলো এক সাথে ব্রেকফাস্ট করি। আমি নীহারিকার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।’ নীহারিকা! বিমুগ্ধের সমস্যাটা ঠিক এই স্থানে। তাছাড়া এই মানুষের সাথে তার তেমন ঝামেলা নেই। আগেও ছিল না। দু’ জনেই এক হসপিটালে রোগী দেখেছিল কয়েক বছর। বিমুগ্ধ জীবনেও জাওয়াদের সাথে ব্রেকফাস্ট করার কথা চিন্তাও করতে পারে না। কিন্তু এই সময় সে বলল,’ ঠিক আছে।’ আর কিছু না। সে চুপ করে আবার ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইল। নীহারিকা এখন যথেষ্ট সুস্থ। ওড়না জড়িয়ে সে মায়ের সাথে এক চাদরের নিচে বসে আছে। জাওয়াদকে দেখে মনে মনে বিরক্ত হলো। একজনকে সহ্য হচ্ছে না আর একজন হাজির। মিতু আপু খুশিতে গদগদ। জাওয়াদকে বরাবরই পছন্দ তার। কি সুন্দর ছেলে। ইশ। বিস্ময় কর। বিমুগ্ধের পাশ ঘেষে তিনি দাড়িয়ে পড়লেন। এই ব্যক্তি যে তাযিন ভাই সেটা ভুলে গেলেন। মিতু আপুর কাজ গুলো উদ্ভট। ফিসফিস করে তিনি আতিশয্যে রুদ্ধ কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,’ জাওয়াদ দেখতে অনেক সুন্দর না?’ বিমুগ্ধ সরু চোখে ফিরে তাকাল নিজের বাম দিকে। মিতু আপুর কথায় তার ঠিক কেমন প্রতিক্রিয়া বুঝা যাচ্ছে না। মিতু আপু কথার ঝুড়ি বন্ধ করলেন না। কন্ঠ আরও নিচু করে বললেন,’ নীহারিকার সাথে বিয়ে হলে কেমন হবে? বিয়ে তো হয়েই যেত। এই গর্দভ পালিয়ে গেল বলে আর হলো না। তা না হলে এদের কত সুন্দর সুন্দর ছেলে মেয়ে হয়ে যেত এই কয়েক বছরে তার কোন ইয়াত্তা নেই।’ বিমুগ্ধের দিকে তিনি এখনও তাকাননি। জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে আছেন। আফিয়া বিলকিস জাওয়াদকে দেখে মায়া মায়া গলায় বললেন,’ তুমি কেন এত কষ্ট করতে গেলে বাবা? সেই কাল থেকে রেস্ট নেওয়ার সময় পাওনি। এখন আবার খাবার নিয়ে আসতে গেলে কেন? তাযিন খাবার বাসা থেকে নিয়ে এসেছে।’ তাযিন আনজুমকে খাবার নিয়ে আসতে বলেছিল রুমে। সে এসে হাজির। জাওয়াদ মোলায়েম হেসে নীহারিকার সামনে টেবিল টেনে দিল। চেয়ার টেনে নিজে বসতে বসতে বলল,’ পেশেন্ট সবার আগে। এটাই ডাক্তারির মূলমন্ত্র আন্টি। তাযিনের খাবার আপনারা খেয়ে নিন। নীহারিকা আমার খাবার খেলেই হবে।’ বলতে বলতে তাকাল নীহারিকার দিকে। সে পূর্বেই ভ্রু কুঁচকেছে। আজব লোক। নীহারিকা জীবনে এমন মানুষ দেখেনি। আসলে সে এসব কোন মানুষই জীবনে দ্বিতীয় দেখেনি। না বিমুগ্ধের মত মানুষ না জাওয়াদের মত। এদের আসল মতলব কি? চাইছে কি তার কাছে? একজন মিথ্যা বলে বলে মাথা খারাপ করে দিয়েছে। আর একজন পিছনে ঘুরতে ঘুরতে পাগল করে দিচ্ছে। নীহারিকার মনে হলো সে মহা সমস্যার সমুদ্রে ভাসছে। এই মুহূর্তে তার বিমুগ্ধ জাওয়াদ দু’ জনকেই অসহ্য লাগছে। শান্ত চোখ তার। চুপ করে আছে। কিছু বলছে না। তার এই তুমুল নিরবতা সদ্য জন্মানো ব্যাকুল প্রেমিকের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। গভীর সেই আহত স্থান। মিতু আপুর চোখ চকচক করছে। ইশ কি ভালোবাসা। দেখলে শুধু দেখতে ইচ্ছে করে। জাওয়াদ হচ্ছে রেজাল্টের মত। তার সব এ প্লাস। শুধু জটিল নীহারিকায় ফেল। সে শুনেছে বিদেশি মানুষের মাথায় অনেক বুদ্ধি হয়। তাহলে তো বিমুগ্ধও অনেক জ্ঞানী। ওর থেকে একটু ধারণা নিলে কেমন হয়? এরা আবার প্রেম ট্রেমে অনেক এগিয়ে। বোনের ভালোর জন্য ভাই হয়ে নিশ্চুয়ই এটুকু করবে সে। নেহাত প্রিয়মের জাওয়াদকে অপছন্দ। তা না হলে তার সাথে পরামর্শ করা যেত। নীহারিকার দিকে বিমুগ্ধের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। জাওয়াদ খাবার টেবিলের উপরে রাখতে রাখতে বলল,’ তুমি তো নিজের পছন্দের কথা কখনো বলনি তাই আমি নিজের পছন্দের খাবার নিয়ে এসেছি। আন্টি বলেছে তুমি প্রায় সব খাবার খাও।’ জাওয়াদ যত্ন করে খাবার প্লেট সাজালো। আফিয়ার চোখ আনন্দে মুখরীত। এই ছেলেই হবে তার মেয়ের জামাই। আর কেউ নয়। তিনি ডিসিশন নিয়ে নিয়েছেন। মেয়ে রাজি হোক বা না হোক এই ছেলেকে তিনি নিজের মেয়ে জামাই করবেন। মিতু আপু বিমুগ্ধকে একটি টুল টেনে দিয়ে বললেন,’ বসুন ভাইয়া।’ বিমুগ্ধও বসল। আজ সে দেখবে। দর্শকের মত। কিছু করবে না। বলবেও না। জাওয়াদকে সে পর্যবেক্ষণ করে বুঝার চেষ্টা করছে। সে ঠিক কেমন মানুষ? মুলত মন বুঝার প্রয়াস। আফিয়া বিলকিসের হঠাৎ বুবুর কথা মনে পড়ে গেল। তিনি মিতু আপুকে নীহারিকার পাশে বসিয়ে দিয়ে বললেন,’ তুই এখানে থাক মিতু। আমি বুবুর সাথে দেখা করে আসি। প্রিয়ম এখনই চলে আসবে। আনজুম মা তুমিও থাকো। তোমার আঙ্কেল একটু ব্যাংকে গিয়েছেন। ফিরে আসবে দ্রুত।’ বিমুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বললেন,’ তুমি তো নাস্তাটা ঠিক করে করনি আব্বু। নাস্তা শেষ করে যাবে। আমি জানি আমার চিৎকার চেঁচামেচিতে তুমি বিরক্ত হয়ে চলে গিয়েছ। ওই মেয়েকে একটু বকা লাগে। খুব খারাপ তো তাই। তুমি কিন্তু খেয়ে যাবে আব্বু।’ বিমুগ্ধের ছোট করে কাঁটা চুলে হাত বলিয়ে দিলেন তিনি। ছেলেটি তার বোনের ছেলে। খুব আদর করতে ইচ্ছে করে। জড়িয়ে ধরতেও মন চায়। কিন্তু ছেলেটা এত গম্ভীর। কথাই বলে না। তাই চেয়েও ওতো গভীর হতে পারেন না। আর বড়ও হয়েগেছে। এদের আচরণ কালচার কিছুর সাথে মিল খায় না তাদের। তবুও তিনি আরও একবার হাত বুলিয়ে দিলেন। সাধারণত নাগাল পাওয়া যায় না। বাচ্চাটা। মিতু আপু চট করে নীহারিকার পাশ থেকে উঠে বিমুগ্ধের পাশে বসলেন। যা দেখে ভ্রু বাঁকিয়ে নিল নীহারিকা। মিতু আপু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার ভঙ্গিতে কন্ঠে নিন্মতা মিশিয়ে বললেন,’ তাযিন ভাই আপনাকে একটা কথা বলি?’ বিমুগ্ধ তাকাল না। এই মেয়েটা বেহুদা কথা বলে অনেক। জাওয়াদের কল আসায় সে একটু ব্যস্ত। কিন্তু নজর বন্দি নীহারিকায়। শক্ত চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে নীহারিকা। তবুও আজ পাত্তা দিল না। এক চুলও ছাড় নয় যেন। জাওয়াদও তাকিয়ে আছে বিমুগ্ধও তাকিয়ে আছে। চরম অসহ্য অনুভূতি। মিতু আপুর কপাল খারাপ। তিনি বলতে ব্যস্ত,’ ত বলছিলাম যে আপনি কখনো প্রেম করেছেন?’
বিমুগ্ধ এবার বলল,’ গার্লফ্রেন্ড আছে অনেক।’
‘ অনেক?’ হতভম্ভ মিতু আপু।
‘ হুম অনেক।’ বিমুগ্ধ চোখ গরম হচ্ছে। একটু একটু করে। মিতু আপু তুমুল আগ্রহের সাথে চেপে বসে বললেন,’ মোট কতজন?’
বিমুগ্ধ মিতু আপুর কাজে বিরক্ত হয়ে সরে বসে বলল,’ কখনো গুনে দেখিনি।’
‘ নাউজুবিল্লাহ। আপনি তো চরম অসভ্য ভাইয়া।’ মুখ ফসকে বের হয়ে গিয়েছে। বিমুগ্ধ চোখ উঠাল। মিতু আপু জিভ কামড়ে বললেন,’ স্যরি আমি মজা করছিলাম।’
‘ আপনি মোটেও মজা করছিলেন না। এরপরে জিজ্ঞেস করবেন এতজনের সাথে কিভাবে সম্ভব? পরের প্রশ্ন আমার তো একজনের সাথে বিয়ে ঠিক এখন এত গার্লফ্রেন্ড কিভাবে? এরপরে বলবেন জাওয়াদ আর নীহারিকার প্রেম করিয়ে দিতে। সাহায্য চাইবেন। মুভির মত আমাকে দু’জন মানুষের মাঝে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পাঠাবেন। আপনি আমাকে চরম বিরক্ত করছেন মিতুয়া। আমি রেগে গেলে মানুষের গাল লাল করে দি। তখন মেয়ে ছেলে হিসেবে রাখি না। আপনি যে আমার সম্পর্কে খালাত বোন সেটাও ভুলে যাব। তাই চুপ।’ বিমুগ্ধ চুপ করে নীহারিকার দিকে তাকাল। মিতু আপু একদম স্তব্ধ। সত্যি সে এই প্রশ্ন গুলোই করত। তাযিন ভাই! সব জানল কিভাবে? ভয়ে তিনি চুপ হয়ে হা করে তাকিয়ে রইলেন। বেশ ভয় পেয়েছে বুঝা যাচ্ছে। জাওয়াদ এবার বলল.’ খাওয়া শুরু করছ না কেন? তোমার যে এত শরীর খারাপ আমাকে জানাওনি কেন? সত্যি তুমি চরম বেখেয়ালি মেয়ে। আর খাবার শোধ করছি। দু’ দিন আগে রাতে তুমি আমাকে সন্ধ্যার বিরিয়ানি খাইয়ে ছিলে মনে নেই? সেটাই শোধন করছি। এবার তো খাওয়া যাবে?’
বিমুগ্ধের চোখ হঠাৎ করে আগুনের লাভার মত জ্বলে উঠল। পরশ্রীকাতরতা না কি রাগ বুঝা গেল না। কিন্তু শরীর প্রচন্ড জ্বলছে তার। উঠে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ হাটল সে। বিছানায় বসল। মিতু আপু এখন হা করে গিলছে তাকে। তার চলন বলন লক্ষ্য করে তিনি চমকিত। জাওয়াদের আচরনে স্পষ্ট অধিকারবোধ। আনজুম নিজের দাভাইকে দেখে বিচলিত হয়ে নীহারিকার পাশে বসে বলল,’ তুমি চাইলে এগুলোও খেতে পার।’ সে নিজের হাতের খাবার গুলো টেবিলে পরিবেশন করে দিল। একটি খাবার দেখিয়ে বলল,’ এটির নাম তিরামিসু। এটি ইতালিয়ান ডেজার্ট। খাবার শেষে তুমি অবশ্যয় খাবে। দাভাই অসাধাণ তৈরি করে। যাস্ট পাগল করা।’ মিতু আপু তাল মিলিয়ে বলল,’ সত্যি নীহু তাযিন ভাইয়ের হাতে জাদু আছে জাদু। আমিও খেয়েছি। চিকেন ক্যাসেরোল, কাং পাও চিকেন। মুখে লেগে আছে এখনও। তুই তো জানিস আমি চিকেন পছন্দ করি না। তবুও দুইটা চিকেন রেসিপি খাওয়া শেষ। তুইও খা। ভালো লাগবে।’ নীহারিকা খাবার গুলো দেখে সত্যি লোভাতুর হয়ে পড়ল। দেখতেই এত সুন্দর বলার বাহিরে। খাবার খুব সুন্দর সাজাতে পারে মানুষটা। এসব কখন তৈরি করেছে? এত খাবার তৈরি করতে তার দিন লেগে যাওয়ার কথা। সত্যি সে একজন ভালো কুকার। আড়চোখে একবার তাকাল সে বিমুগ্ধের দিকে। তার দৃষ্টি এদিকে নিবন্ধিত। চোখে চোখ পড়তে নীহারিকা চাপা বিস্মৃত। চোখ এতো টকটকে লাল হয়ে আছে কেন? প্রিয়ম চলে এসেছে। তার হাতেও খাবার। আজকে খাবারের বন্যা বয়ে যাবে মনে হচ্ছে। নীহারিকা এত সময় পরে মুখ খুলল। আর প্রথম বাক্য ছিল,’ প্রিয়ম খাবার দে তো।’ সাথে সাথে উপস্থিত সবাই অবাক। আনজুম আর জাওয়াদের মুখটা হা হয়ে গেল। মিতু আপু কিছুই বুঝল না। তিনি বিমুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছেন। সে নিশ্চিত এই তাযিন ভাইয়ের সাথে নীহারিকার কোন একটি ঝামেলা আছে। নীহারিকাকে ধরতে হবে। প্রিয়ম এত খাবার দেখে চোখমুখে বিতৃষ্ণার ছাপ তুলে ধরেছে। বিমুগ্ধের দিকে একবার তাকাতেই কালকের জমে থাকা সব রাগ যেন গায়ে এসে ভর করছে। তাই চুপ চাপ সবার খাবার সরিয়ে নিয়ে নিজের নিয়ে আসা পরোটা ভাজি বিছিয়ে দিতে দিতে বলল,’ তোর মত বেয়াদপের জন্য আজকে আমার কত কষ্ট করতে হয়েছে জানিস?’ নীহারিকা হাত ধুয়ে বলল,’ কি কষ্ট? তোকে তো ফিট লাগছে।’
‘ আমি বরাবরই ফিট। তুই জানিস তোর কি রোগ হয়েছে?’ প্রিয়ম জাওয়াদকে পারলে ঠেলে সরিয়ে দেয়। কিন্তু তা করা অভদ্রতা হবে। বেচারা তাদের জন্য অনেক করেছে। প্রিয়ম পাশের টুলে বসল। নীহারিকা খাচ্ছে। প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলল,’ কি হয়েছে রে? আর আমার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এসেছিস? ভার্সিটি যেতে হবে পরীক্ষা আছে। দাদামশায়ের অপারেশনের আগে চলে আসব।’
‘ তোর এ্যাজমা হয়েছে।’ প্যাকেট থেকে ইনহেলার খুলে নীহারিকার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আফসোস করে বলল,’তুই কাল মরতে মরতে বেঁচে গেলি। ক্যান বইন? মরতে পারলি না? তোর রুমটা দখল করার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আমার।’
ধপ করে রেগে গেল নীহারিকা। কি বজ্জাত ভাই পেয়েছে সে। তার মৃত্যু কামনা করে? কনুই দিয়ে ধাক্কা মারল সে। রাগে গজগজ করে বলল,’ তোকে বাসায় গিয়ে দেখছি। আমার রুমে আজকে থেকে তোর ঢুকা নিষেধ। কিছুতে যদি হাত লাগিয়েছিস খুন করে দিব বেয়াদপ।’ প্রিয়ম হাসল। সে মজা পাচ্ছে। দীর্ঘ একদিন পরে তার বোনকে রেগে ঝগড়া করতে দেখে অনুভূতি ফুরফুরে। সে তো ভয় পেয়ে গিয়েছিল রাতের ঘটনায়। প্রিয় মানুষ গুলো অসুস্থ হলে অসহ্য অনুভূতিতে দম বন্ধ হয়ে আসে। ঘোরতর ঝগড়া বাধিয়ে দিল সে। নীহারিকা তেজি চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। দু’ জনের কাণ্ড দেখে মিতু আপু বিরক্ত হয়ে চুপ চুপ করল কিছুক্ষণ। তবে আনজুম বেশ মজা পাচ্ছে। তারা তেমন ঝগড়াঝাটি দেখে না। আসলে সব সময় তার দাভাই এদিকে সেদিক থাকে। এক সাথে থাকা হয় না তেমন। ছোট থেকেই আলাদা আলাদা। তারা কখনো পরিবার নিয়ে এক সাথে এভাবে মজা হুল্লোর করে না। বাবা ব্যস্ত মা ব্যস্ত দাভাইও ব্যস্ত। ফলে তাকেও ব্যস্ত থাকতে হয়েছে জীবনের বেশিরভাগ সময়। এসব খুনসুটির অধ্যায় তাদের জীবনে নেই।
অপমানে জাওয়াদের মুখ থমথম করছে। কিন্তু একটি সস্তির বিষয় বস্তু রয়েছে। বিমুগ্ধও যে তার মত অপমানিত হয়েছে ভেবে ভালো লাগছে। কাল থেকে এখন পর্যন্ত বিমুগ্ধকে তার ভালো লাগছে না। কিছুতেই না। দৃষ্টি ঘুরিয়ে বিমুগ্ধর দিকে চোখ রাখল। সে খুব শান্ত স্বাভাবিক হয়ে বসে আছে। মানুষ এত অপমানিত হয়ে এত শান্ত হয়ে কিভাবে বসে থাকতে পারে ভেবে পাচ্ছে না জাওয়াদ। তার তো রাগে সব ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করছে। নীহারিকার উপরে তার অভিমান জমে গেল। ঠিক আছে তাকে পাত্তা দেয় না। কিন্তু এভাবে অপমান করবে? তার খাবার খেলে কি হয়ে যেত? বরাবরের মত নিজেকে দমিয়ে নিল সে। নীহারিকা তার জীবনে স্বপ্নের মত। ঠিক স্বপ্নের মতই সুন্দর অনুভূতি কাজ করে এই রাগী মেয়েটার প্রতি। নীহারিকা মৃদু হেসে বলল,’ স্যরি ডাঃ আপনার খাবার খাওয়ার মত জায়গা তো নেই। তবে এটা তোলা রইল আমি কোন একদিন খেয়ে নিব।’ এই অল্প কথায় জাওয়াদ অত্যধিক খুশি হয়ে গেল। সব অভিমান রাগ মুহূর্তে উবে গেল। গায়েব হয়ে গেল। চাপা হাসল সে। তার মুগ্ধ করা হাসি। নীহারিকার মনে হচ্ছে সে ভুল করে ফেলেছে। তার মোটেও জাওয়াদের সাথে এত সুন্দর করে কথা বলা উচিৎ হয়নি। জাওয়াদের অনুভূতিগুলো না বুঝলেও সে জানে। এসব অনুভূতি সম্পূর্ণ মানুষকে একটু জায়গা দিলে এরা নিজের দুনিয়া জুড়ে শুধু তাকে নিয়ে ভাবে। তাই মুলত সে একটু এড়িয়ে চলে। বাবা বলে ছেলেদের কখনো হেসে সুযোগ দিতে নেই। এদের দিকে তাকাতে হবে কাঠকাঠ চোখে। কথাটা মনে পড়তেই নীহারিকা চোখমুখ কঠিন করে ফেলল। অথচ তার একটি মুচকি হাসি বিষ ছড়িয়ে দিয়ে গেল। ভয়ংকর বিষ। বিমুগ্ধ সব দেখছিল। আজ তার শুধু দেখার কথা ছিল। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না। উঠে এসে সে শান্ত শীতল চোখে নীহারিকার দিকে তাকাল। এই চোখের দৃষ্টি বরফ করে দেওয়ার মত। পাশের ড্রায়ার যুক্ত টেবিলের উপর থেকে নিজের তৈরি করা, যত্ন করা, ভালোবাসা মাখানো খাবার গুলো তুলে নিয়ে এক বিভৎস কান্ড ঘটাল। পা দিয়ে বিছানার নিচ থেকে ডাস্টবিন বের করে সব খাবার তার মাঝে ঠেলে দিল। সম্পূর্ণ কাজের সময় সে নীহারিকার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল। চোয়াল শক্ত কাঠ হয়ে আছে। চোখ লাল। নির্ঘুমন্ত মুখশ্রী বিভাবসু রূপী। বিদেশি শরীরটায় বাংলাদেশি রোদ মিশে মুখের রঙ্গ পুরিয়ে দিয়েছে কিছুটা। জানালা ভেদ করে রোদ এসে পড়ছে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ ললাটে। বিমুগ্ধর সাথে নীহারিকার বহু বার দেখা হয়েছে। একটি মানুষের মাঝে যে অনেক রূপ থাকে তা বিমুগ্ধকে দেখে নীহারিকা উপলব্ধি করেছে। প্রতিটি মানুষের মাঝে, শান্ত, চঞ্চল, রাগী, হাস্যউজ্জ্বল, ভয়ংকর সব সত্তা থাকে। তা কখনো কেউ নিজের মাঝে প্রয়োজনীয় রূপ হিসেবে প্রকাশ করে না। সব কিছুকে একটি, একজন, একান্ত, নিজেকে মনে করে। অথচ যখন মানুষ রেগে যায় এক রকম থাকে। শান্ত হলে আর এক রকম। রূপ সব সময় এক রকম থাকে না। মানুষ একুই হলেও তাদের আচরণ ভিন্ন। বিমুগ্ধ তার সকল চরিত্র, সত্তা, গুণ, দোষকে প্রচন্ড নজরদারিতে রাখে। গুরুত্বদেয়। এবং সব সময় সবগুলোকেই আলাদা সত্তা বলে এসেছে। আব্বির মত হয়েছে সে। আব্বি সব সময় নিজেকে খুব গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে। নিজের প্রয়োজনীয়তা সকলের কাছে প্রয়োজনীয় করে তুলতে বলেন। সে আব্বির মত নয়। আম্মির মত সাধারণ। কিন্তু তার দাভাই আব্বির প্রতিছবি। অসাধারণ তার ব্যক্তিত্ব। কখন কি করবে কেউ আগে থেকে বলতে পারবে না। তার মন আব্বিও পড়তে পারে না। সব কিছু ঠিক আছে। এমন একজন দাভাইকে পছন্দ তার। যদিও অনেকের কাছে উদ্ভট, পাগলাটে, বিস্মৃত ব্যক্তি দাভাই। সব একদিকে কিন্তু এই যে নতুন করে কিছু রূপ সে দেখছে তা তাকে চমকের সাথে ভীতিপ্রদ করে তুলছে। দাভাইয়ের অকম্মৎ কাজ আজ তার চিন্তাধারাকে বক্র করে দিচ্ছে। এত সিরিয়াস? কখন থেকে? দাভাই তো কখনো কোন মানুষকে নিয়ে এত সিরিয়াস ছিল না? আব্বিকে বাদে সে কোন বিষয় নিয়ে এমন ক্ষিপ্রতা দেখায়নি। আজ কি এমন হলো? সামান্য বিষয়ে সে এতটা হিংস্র হয়ে গেল কেন? অপ্রতিরোধ্য তুফান বয়ে চলেছে তার চোখেমুখে। রাগ, প্রতিহিংসা, আক্রোশ, বিক্ষিপ্ত কোন কিছু বাদ নেই। অস্তিত্বে মিশে যাচ্ছে সব। এত এত ডেসপারেট, বেপরোয়া তার দাভাই! এতটা উদগ্রীব হয়ে যাওয়া তো উচিৎ নয়। মাথা কাত করে বিমুগ্ধ নীহারিকার দিকে শীতল অক্ষিতে দৃষ্টি রাখল শেষ বার। কথা না বলে, কিছু না করে ভীষণ নিষ্ঠুর, জঘন্য, দুর্দান্ত বিশ্রী কর্মটি করে ফেলেছে। আজকের জন্য এনাফ। নীহারিকাকে সে দেখে নিবে। চরম ভাবে দেখে নিবে। কাঁদিয়ে ছাড়বে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল বিমুগ্ধ। কেন এত তীব্র অস্থিরতা জানে না সে। কিন্তু তার এই মুহূর্তে নীহারিকাকে কাঁদিয়ে ছাড়তে ইচ্ছে করছে। প্রচন্ড রকমের কান্না। সুন্দর করে বিমুগ্ধ চোখে ঠোঁটে হাসল। অসাড় হয়ে খাবারের দিকে তাকিয়ে নীহারিকা। সে জানে খাবারের জন্য নয় হেসে কথা বলার ফলস্বরূপ প্রতিক্রিয়া এটি। প্রিয়মও বেশ হতচকিত হয়েছে। মিতু আপু আরে আরে করে থেমে গিয়েছিল। জাওয়াদ বিমুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল তার প্রতিপক্ষ মারাত্নক কেউ। সমস্ত ঘটনা এত দ্রুততার সাথে ঘটে গেল কেউ কুল খুঁজে পেল না। অতিশয় আকুল চোখ সবার। বিমুগ্ধ চলে গেছে অনেক আগে। অথচ তার ঘটিয়ে যাওয়া কাজ রটিয়ে গেল সকলের মনে মনে। এক একজনের চিন্তা এক এক রকম। প্রিয়ম বিড়বিড় করে বলল,’ তাযিন ভাই আস্ত বদমেজাজি।’
___________________
নীহারিকার পরীক্ষা খুব খারাপ হয়েছে। মনে হচ্ছে ফেল নিশ্চিত। অব্য তার মাঝে খারাপ কোন প্রতিক্রিয়া নেই। স্বাভাবিক সে। যেন পরীক্ষা ফেল করার জিনিস। সেও করবে। এত এত মনখারাপ করার কি আছে? প্রিয়ম নীহারিকাকে আর মাকে নিয়ে সোজা হসপিটালে এসেছে। দাদামশায়কে রক্ত দিতে হবে। তার রক্ত এ পজেটিভ। রক্তের প্রয়োজন চার ব্যাগ। মিতু আপু দিবে এক ব্যাগ। প্রিয়ম তার এক বন্ধুকে আসতে বলেছে। আরও এক ব্যাগের প্রয়োজন। নীহারিকার রক্ত ও ন্যাগেটিভ। তার খুব দুঃখ হচ্ছে। নিজে দিতে পারবে না বলে। মিতু আপুর কি হবে সেটা ভেবেই হাসি পাচ্ছে। ইনজেকশন, সুই এসবে তার প্রচণ্ড ভীতি। তার উপরে রক্ত! এক এক ফোটা রক্তের জন্য তিনি কত যে কান্না করবে তা বলার বাহিরে। নিশ্চুয়ই কান্না জুড়ে দিয়েছেন। কিন্তু মনটা খুব ভালো। মা নিষেধ করার পরেও বলেছিল,’ দেখ খালামনি আমার রক্ত অনেক শক্তিশালী। বুড়ো লাফিয়ে উঠবে। টগবগে যুবকের মত।’ চিন্তা হচ্ছে আর এক ব্যাগের জন্য। হসপিটালে এসে নীহারিকা দেখল বাবা নিজের ভাইকে লুকিয়ে দেখছে। আবার তার ভাইও তাকে লুকিয়ে দেখছে। এদের মাঝে না কি ঘৃণায় ভরা সম্পূর্ক! শামা খালামনি আর আনজুম না কি বিমুগ্ধের বাসায়। গুলশানে একটি ফ্ল্যাট আছে তার। শুনা কথা। অবিশ্বাস্য হলেও করতে হচ্ছে। এসব মিতু আপুর নেওয়া খবর। তিনি খুব উত্তেজিত তাদের ব্যাপারে। গুষ্ঠি শুদ্ধ বের করে ছাড়বেন। বিমুগ্ধের কয়টা গার্লফ্রেন্ড আছে সেই খবরও নেওয়ার চেষ্টায় আছেন। আনজুমকে জিজ্ঞেসও করেছে। উত্তরে সে বলেছে দাভাইয়ের কোন গার্লফ্রেন্ডকে আজ পর্যন্ত কেউই দেখেনি। নীহারিকাকে পাওয়া মাত্র মিতু আপু গোপনীয়তা বজায় রেখে বলল,’ তুই জানিস ওই তাযিন ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড কে?’ চমকে উঠে নীহারিকা বলল,’ আমি কিভাবে জানব?’
‘ খবরদার মিথ্যা বলবি না। ওই বুড়ারে কিন্তু রক্ত দিব না। আমার রক্তের অনেক দাম।’
‘ কি আশ্চর্য তুই আমাকে ব্ল্যাক মেইল করছিস?’ চোখ বড় হয়ে গেছে নীহারিকার।
‘ হ্যা করছি। বল এবার এই তাযিন ভাইকে তুই কবে থেকে চিনিস?’ মিহি কন্ঠ মিতু আপুর। খুব সাবধানি তিনি। থমথমে মুখে চুপ করে রইল নীহারিকা। কিছু বলছে না। মিতু আপু ছাড়ার মানুষ নয়। এটাই সুযোগ।
‘ কি বলছিস না কেন? আমি কিন্তু মজা করছি না। সিরিয়াসলি ওই বুড়োরে রক্ত দিব না। বজ্জাত বুড়ো আমারে ঝাড়ছিল বুলি নাই।’
‘ আল্লাহ আপু তুই পাগল? এসব কি শুরু করলি বল তো?’
‘ আজব আমি কিছু করলেই পাগল? দুনিয়া শুদ্ধ মানুষ আমার পিছনে পড়ে থাকলে তারা ভালো না? বলবি তুই?’
চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে মিতু আপু। নীহারিকাও রাগ দেখাতে চাইল। কিন্তু রাগ আসছে না ভিতর থেকে। তাই হেসে বলল,’ বলব পরে।’
‘ না এখনই।’ নাছোড়বান্দা কন্ঠ মিতু আপুর। তাতে বেশি পাত্তা না দিয়ে নীহারিকা মিতু আপুকেই ফাসিয়ে দিল,’তুই কেন পালালি সেটা বল? শাহিন ভাইয়া কোথায়? কেন করলি এসব? বল বল?’ ভ্রু নাচাতে লাগল নীহারিকা। থতমত খেয়ে কেশে উঠল মিতু আপু। পরক্ষণেই মনে পড়ল মানুষ জাতী স্বার্থপর। তাই তিনি নির্মল হাসি হেসে বললেন,’ তোমার দাদামশায়কে কিন্তু আমি সত্যি রক্ত দিচ্ছি না বনু।’ নীহারিকা জানে এই কাজ মিতু আপু মরে গেলেও করবেন না। তিনি এসব করতে পারেন না। তবুও কেন যেন অজানা কারনে সে আনমনে বলল,’ বিমুগ্ধদের কথা বলেছিলাম না তোকে? ট্রেনে দেখা হয়েছিল এক ছেলের সাথে? নানুবাড়িতে তাযিন ভাইকে দেখে আমি গলা ফাঁটাচ্ছিলাম চিনতে পারছেন বলে বলে? তাযিন নামক বেয়াদপটাই বিমুগ্ধ। যার সাথে আমার দুই বছর আগে দেখা হয়েছিল? পালিয়ে যাওয়ার সময় তার সাথে দেখা। একটি রাত আমি তার সাথে হেঁটে, বাসে চড়ে কাটিয়েছি। ঢাকা পর্যন্ত আমাকে সে নিরাপদে নামিয়ে দিয়েছিল। একহাজার তিনশত ষাট টাকা এখনও পাবে সে।’ হঠাৎ হাসল নীহারিকা। মিতু আপুর বিণৎ অদ্ভুত দৃষ্টি। এই হাসি, এই চোখের ভাষা তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারেন। হৃদয় প্রাঙ্গণে ঝড় উঠেছে। তিনি একদম সিরিয়াস এখন। এত সময়ের মজা, আনন্দ, রশিকতা সব উড়ে গেল ফিনাইলের গন্ধের সাথে। কর্তব্য স্থির করতে অক্ষম তিনি। গাঢ় চোখে তাকিয়ে তিনি নীহারিকার চোখে রাগ মিশ্রিত, ঠোঁটে একটুকরো হাসি দেখতে পাচ্ছেন। কন্ঠ আরও ক্ষীণ করে বললেন,’ তুই কি উনাকে পছন্দ করিস?’ আতঙ্কে আতঁকে উঠল নীহারিকা। তার মুখের রং লাল হয়ে গেল। সাথে রাগ বাড়ছে ক্রমান্বয়ে। নিষ্কম্প স্থির চোখ নিচের দিকে। রোম রোমে কাঁপন ধরনোর মত একটি অনুভূতি তাকে আকড়ে ধরতে চেয়েও ধরল না। সম্বিৎ ফিরে পেতেই হাসল সে। উন্মুক্ত কন্ঠে বলল,’ তুই তো জানিস আমি মিথ্যা তেমন বলতে পছন্দ করি না। হ্যাঁ পছন্দ করতাম।’
‘ করতি? এখন করিস না?’ উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো মিতু আপু। চোখ বুজে কি যেন ভেবে বেশ রেগে গেল নীহারিকা। রাগমিশ্রিত কঠিন গলায় বলল,’ না। উনাকে দেখলে রাগ উঠে আমার। ওই ব্যক্তির নাম নিবি না আমার সামনে। যা রক্ত দিতে যা।’ মিতু আপু রোবটের মত উঠে দাড়ালেন। নীহারিকা কাউকে পছন্দ করতো! এই বাক্যটিই যথেষ্ট আশ্চর্য্য করার জন্য। নীহারিকা? হাসলেন মিতু আপু। একটা সাংঘাতিক মতের পরিবর্তন ঘাটালেন তিনি। মনে মনে ভাবলেন এই তাযিন ভাই কি এমন করে নীহারিকাকে এতটা রাগিয়ে দিল? ইচ্ছে করছে হাড় বজ্জাতকে একটি চড় মারতে। অদৃশ্য পরিবেশ বিশুদ্ধ হাসল। বিমুগ্ধের কপাল জুড়ে জীবনের সবচেয়ে দানবীয় চড়গুলো লেখা আছে। সত্যি কি ভারি দুষ্প্রাপ্য চড় পড়বে তার শক্ত কপোলে?
হয় তো। মিতু আপু খুব ক্ষেপেছে। তাযিন ভাই নিশ্চয়ই এমন কিছু করেছে যার ফলে নীহারিকা এতটা রেগে আছে। নীহারিকার চোখে রাগ ছিল না কি ঘৃণা তিনি ধরতে পারলেন না। তবে যা ছিল বেশ ভয়ংকর ছিল। এমন জিনিস নীহারিকার চোখে কখনো দেখননি তিনি। তাযিন ভাইকে একটা দুর্দান্ত গালি দিয়ে প্রিয়মের সাথে সাথে রুমে প্রবেশ করলেন।
_______________
এক ব্যাগ রক্তের অভাব পড়েছে যেন পৃথিবীর বুকে। প্রিয়ম হতাশাগ্রস্ত হয়ে তার সকল বন্ধু বান্ধবকে ফোন করেছে। সবাই মোটামুটি চিন্তিত। নীহারিকার তেমন বন্ধুবান্ধব না থাকায় সে কিছু করতে পারছে না। বাবাও তার বিভিন্ন কলিগ, বন্ধুবান্ধকে ফোন করছে। সবাই এক প্রকার দুশ্চিন্তার পুকুরে হাবুডুবু খাচ্ছে। রক্তের যে অভাব এমন নয়। যাদের পাওয়া যাচ্ছে তারা বেশ দুরে। আসতে সময় লাগবে। কেউ কেউ রোগে আক্রান্ত। নীহারিকা কিছুক্ষণ পাইচারী করে সিটে বসে পড়ল। তার সাগরিকার কথা মনে পড়েছে। মেয়েটির নাম্বার তার ফোনে আছে। জোর করে সেভ করে দিয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়? নীহারিকা ফোন দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। সাগরিকা আকাশ থেকে পড়ল। হতবুদ্ধির ন্যায় সেও চুপ। কয়েক মিনিট পরে বলল,’ নীহু তোর কি হইছে বল তো? ফোন করলি কেন? তুই তো জীবনেও ফোন করার মত মেয়ে না। কি খবর দোস্ত?’ নীহারিকা নিজের উদ্ভট আচরনের জন্য খুবই লজ্জিত অনুভব করছে। সে কখনো কেন মানুষের সাথে ভালো আচরণ করে না সে জানে না। নিজেকে তার চরম লেভেলের অসভ্যের খেতাব দিতে ইচ্ছে করছে। এই পর্যন্ত সে সাগরিকার সাথে কথা বলেনি। ভার্সিটিতে দেখা হলে উল্টো পথ ধরেছে। আজ এভাবে প্রয়োজনের কথা বলতে তার অতিব লজ্জায় মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। অথচ প্রিয় মানুষ গুলো গুরুত্বপূর্ণ হয় খুব। তাদের জন্য সব করা যায়। রিনঝিনে কন্ঠে নীহারিকা বলল,’ তোর রক্ত না এ পজেটিভ? আমি তোর আইডিতে দেখেছি।’
‘ হ্যাঁ। কেন কিছু হয়েছে তোর?’ সাগরিকা একপ্রকার চিৎকার করে উঠল। তাকে বেশ উদগ্রীব দেখাচ্ছে। নীহারিকার মনে হলো এই মেয়ে তার ছিড়া। আবার এসব চিন্তার জন্য নিজের প্রতি রাগান্বিত হয়ে পড়ল। কেশে একটু শান্ত হয়ে বলল,’ সাগরিকা তুই কি একব্যাগ রক্ত দিতে পারবি? আমার দাদামশায় খুব অসুস্থ।’
‘ অবশ্যয় পারব। তুই ঠিকানা ফোনে পাঠা। আমি আসছি। নো চিন্তা দোস্ত। আসতাছি। এমন করে বলতাছস যেন আমার বয়ফ্রেন্ড চাইতাছস। নাটক বন্ধ কর রাগীরানী।’ নীহারিকা হেসে ফেলল। হালকা শব্দ হলো সেই হাসিতে। সাগরিকা একটা পাগল। সে ঠিকানা পাঠিয়ে দিতেই সাগরিকা আবার কল করল,’ দেখ হালকা দেরি হতে পারে। সময় আছে তো হাতে?’ একটু চিন্তা করে নীহারিকা বলল,’ তুই দ্রুত আসার চেষ্টা কর। এত হিসেব করতে পারব না এখন।’
ফোন ব্যাগে রেখে নীহারিকা মাথায় হাত দিয়ে ঝুঁকে বসল। নাকে একটি ঘ্রাণ আসছে। খুব নিকট থেকে। পরিচিত খুশবু। যেন কত চিনা তার। কোথায় এই ঘ্রাণের সাথে পরিচিত হয়েছে সেটা নীহারিকার মনে পড়ছে না। তবে এক স্থানে নয় বিভিন্ন স্থানে সে এর শিকার হয়েছে। পাগল করা একটি সৌরভ। নীহারিকা চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে আশ্চর্য হয়ে গেল। বিমুগ্ধ তার ডান পাশে বসে আছে তার দিকে তাকিয়ে। চেয়ারে হেলান দিয়ে সে মোহিত চোখে চেয়ে আছে। এই চাহনির কারণ কি? নীহারিকা কটমট চোখে চাইল। বিমুগ্ধ অসাধারণ হাসল। কিঞ্চিত বিরক্তি ঠোঁটে ফুঁটিয়ে বলল,’ চিন্তিত তোমাকে, অনেক সুন্দর লাগে রাগেশ্বরী।’
আবার নতুন নাম? নীহারিকা নিজেকে শান্ত করতে নিঃশ্বাস ছাড়ল। উত্তেজিত তার জন্য ভালো নয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ সে। বিমুগ্ধ মাথা নিচু করে নীহারিকাকে দেখার চেষ্টা করে আদেশের সুরে বলল,’ আমি অসুস্থ হলে তুমি এভাবে চিন্তা করবে। একদম কেঁদে কেঁটে টিপিক্যাল বাঙ্গালীদের মতো।’
নীহারিকা বিহ্বল নজরে তাকাল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে সে বলল,’ আমি আপনার জন্য কেঁদে কেঁটে চিন্তা করব?’ তারপর হেসে ফেলল। হাসির সাথে চোখে পানি জমে যাচ্ছে। বিমুগ্ধ চিৎ হয়ে চেয়ারের গায়ে হেলে পড়ল।
‘ অবশ্যই করবে। বাংলাদেশের মেয়ে না তুমি?’
‘ বাংলাদেশের মেয়ে হয়েছি তো কি হয়েছে? যার তার জন্য কাঁদব না কি? মেয়েদের চোখের পানি সস্তা নয়।’ কন্ঠে শান্ত। মুখে রাগ। বিমুগ্ধ ফিচেল হেসে বলল,’ সব মেয়েকে কাঁদতে বললাম কোথায়? আমি তো শুধু তোমাকে কাঁদতে বলেছি। কান্না সস্তা হয় না। কান্নার কারণ সস্তা হয়। তুমি যে কারণে কান্না করবে সেটির উপরে নির্ভর করবে সস্তা, দামির ব্যাপার। নিজের মানুষের জন্য কান্না করা, চিন্তা করা নৈতিক দায়িত্ব মাই ডিয়ার রাগেশ্বরী। বিমুগ্ধের জন্য তোমার ব্যাকুলতা দেখার আকুল প্রত্যাশা আমার।’ বিমুগ্ধ অধর বাঁকিয়ে নীহারিকাকে দেখছে নির্নিমেষ। আশেপাশের অল্পসংখ্যক মানুষ তাদের দিকে কোণা চোখে তাকিয়ে আছে। বিষয়টি অস্বস্তি কর। কিন্তু নীহারিকার তা অতিসাধারণ মনে হচ্ছে। আজকের পরীক্ষায় ফেল হওয়ার আশঙ্কার মতই সহজ। মাথা ঝাকিয়ে সোজা হয়ে বসল নীহারিকা। মানুষটার থেকে দূরে থাকবে। অনেক দূরে। যতটা দূরে থাকলে ছায়ার সাথেও দেখা হবে না ঠিক কতটা। গাম্ভীর্যপূর্ণ গলায় বিমুগ্ধ বলল,’ অসম্ভব। একদম অসম্ভব।’
‘ কি?’ ভ্রু কুঁচকে নিল নীহারিকা। বিমুগ্ধ কিছুই বলল না। একটু মৌন থেকে বলল,’ আমার রক্ত এ পজেটিভ।’
‘ ত।’ বলতে বলতে নীহারিকা স্তব্ধ হয়ে গেল। আঁখি রাখল আঁখিতে। মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য হয়ে উঠল মুহূর্তে। বাকরূদ্ধ অধর। স্তম্ভিত কন্ঠে বেশ অনেকক্ষণ পরে সে বলল,’ সিরিয়াসলি?’ বিমুগ্ধ আগের মত গম্ভীর। মুখ শক্ত করে সে উত্তর প্রদান করল যা নীহারিকার শরীরে উত্তাপের জন্ম দিল। রাগে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল সে। ছিন্নভিন্ন মানুষ্যত্ববোধ। হাত পা একদম নিথর হয়ে এসেছে। আশপাশের মানুষের কথা, আলাপ, আলোচনা তার কর্ণ স্পর্শ করছে না। দেহের রক্ত চলাচলের শব্দও যেন কানে বাজচ্ছে। উচ্ছ্রিত উত্তাপ নিয়ে সে বলল,’ আর আপনি বসে আছেন? এত সময়ের সবার চিন্তায় আপনার কিছু যায় আসে না? উনি না আপনার দাদা? আপনি কিভাবে এমন করতে পারেন? কিভাবে? রক্তের কত প্রয়োজন আপনি জানেন না? অথচ আপনি চুপ করে আছেন? দাদামশায়ের কত কষ্ট হচ্ছে? এত এত স্বার্থপর আপনি?’ নীহারিকার চোখে এবার রাগ নেই। ক্রোধ নেই। আছে হতাশা, কষ্ট, প্রচন্ড কষ্ট। সুন্দর চোখ জোড়া ছলছল করছে। বিমুগ্ধের চোখে মুখে ক্লেশের রেশ মাত্র অনুপস্থিত। আরাম করে সে বসে আছে। নীহারিকার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
‘ ইয়েস ইউ আর রাইট। আমি প্রচন্ড স্বার্থপর মানুষ। তুমি ভালো করে চিনো আমাকে।’
‘ স্বার্থপর মানুষ গুলো জীবনে একা থাকে অসভ্য লোক।’ বিমুগ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,’ সত্যি! বিস্ময়কর ব্যাপার। আমি তো দেখছি উল্টো। তোমার দাদামশায়ের কাছে তো আপনজনেরা ভনভন করছে। নাতিনাতনি আহাজারি করছে।’
‘ আমার দাদামশয়া স্বার্থপর নয়। আপনাকে আমার অসহ্য লাগছে। চোখের সামনে থেকে যান। না। আগে রক্ত দিয়ে তারপর যাবেন। যান রক্ত দিন।’ আদেশের সুর নীহারিকার কন্ঠে। বিমুগ্ধ পায়ের উপরে পা চাপিয়ে বলল,’আমি কেন তাকে রক্ত দিব? এখানে আসার ইচ্ছে আমার মোটেও ছিল না। আব্বি নিয়ে এসেছে। তাকে আমার একদম পছন্দ না।’ বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে নীহারিকা বলল,’ আপনার কোন মানুষগুলোকে পছন্দ বলবেন? আমার বাবাকে পছন্দ না তার বাবাকে পছন্দ না আপনি কি জানেন আপনাকে মানুষের কতটা অপছন্দ?’
‘ কতটা?’ আগ্রহের সাথে জানতে চাইল বিমুগ্ধ।
‘ যতটা অপছন্দ হলে ঘৃণা কাজ করে ঠিক ততটা। অসভ্য ইতর প্রকৃতির লোক।’
‘ আমারও ঠিক তাকে এমনই মনে হয়। প্রচন্ড ঘৃণা কাজ করে। তুমি দিচ্ছ না কেন এত ভালো যখন বাসো?’
‘ কারণ আমার রক্ত মিলছে না। মিললে আমার সব রক্ত তাকে দিয়ে দিতাম।’ বিমুগ্ধ মুখ দিয়ে চুক চুক শব্দ করল। নীহারিকার চোখ জ্বলছে। বিমুগ্ধ তা লক্ষ্য করে শব্দ আরও কিছুক্ষণ করে বলল,’ কারণ তুমি তাকে ভালোবাসো। তার সাথে তোমার স্মৃতি আছে। সে তোমাকে আদর করতো। নিজের সাথে খাইয়ে দিতো। খেলতো। তোমাকে কোলে নিতো। তোমার কপালে চুম্বন একেছে। তোমাকে গল্প শুনিয়েছে। তোমাকে ছোট থেকে এতো এতো ভালোবাসা দিয়েছে যে তুমি তাকে প্রানের চেয়েও বেশি ভালোবাসো। আমাকে সে কি দিয়েছে? আমি কেন তার জন্য রক্ত দিয়ে নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলব। যদি মরে টরে যাই।’ ভয় পাওয়ার মত অভিনয় করল বিমুগ্ধ। অবাক হয়ে গেল নীহারিকা।
‘ এক ব্যাগ রক্ত দিলে আপনি মরে যাবেন?’
‘ যেতেও তো পারি। তোমার স্বার্থপর দাদুর জন্য আমার মত পৃথিবীর উজ্জ্বল তারকা, একজন ব্রিলিয়ান্ট, চৌকশ, অতি স্টাইলিশ ছেলে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে তা তো হয় না বলো। তার থেকে বুড়ো মরা ভালো। কি বলো?’
এভাবে নিজের দাদামশায়ের মৃত্যু কামনা দেখে নীহারিকার চোখ ভার হয়ে আসল। ভরে আসল নয়ন। সে যে কোন সময় অনেক বছর পরে মনের অজান্তে কেঁদে ফেলেছে সে নিজেও জানে না। বিমুগ্ধের আক্ষেপ ভরা, পরিবারের মানুষের ভালোবাসা না পাওয়ার প্রশ্ন গুলো শুনেই সে কেঁদে ফেলেছিল। বেশ অনেক্ষণ পরে তার উপলব্ধি হলো সে কাঁদছে। চোখে হাত দিয়ে মূক হয়ে রইল। হাতের পানির দিকে নিমেষহারা দৃষ্টি তার। বিস্ময়ে তার মুখটা হা করে দিয়ে বিমুগ্ধ ঠোঁটে সেই দীর্ঘ সুন্দর হাসি হেসে বলল,’ এখন একদম পারফেক্ট দেখাচ্ছে। তোমাকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে আমার রাগেশ্বরী। কাঁদলে যে তোমাকে রূপেরস্বর্গ লাগে আমি তো প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।’ বিমুগ্ধ নীহারিকার শরীর হিম করে দিয়ে তার গাল থেকে কয়েক বিন্দু পানি জোগাড় করে জমিয়ে তার কালো টির্শাট ভিঁজিয়ে দিলো। নীহারিকার সর্বাঙ্গ ভূমিকম্পের ন্যায় কম্পিত। চোখ কটর থেকে বেরিয়ে আসবে প্রায়। রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাগের পরিবর্তে এক শীতল, আকর্ষণীয়, হৃদয় আকৃষ্ট অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল। গাল লাল টকটকে রক্তজবা। নাক গাল জ্বলে যাচ্ছে। বিমুগ্ধ এমন একটা নীহারিকাকে দেখে বুকে হাত দিয়ে কয়েক সেকেন্ড দম বন্ধ করে রইল। বুকের শব্দ তুমুল হারে বৃদ্ধিমান। শ্বাস যখন সে ছেড়ে দিল মনে হলো এই মেয়েটি তাকে দম বন্ধ করে খুন করবে। বিমুগ্ধ বুকে তীব্র ভাবে কয়েকটি কিল বসিয়ে লম্বা শ্বাস ফেলল। নীহারিকা তখন ফাঁটা চোখে তাকিয়ে। বিমুগ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। ব্যঙ্গার্থ স্বরে বলে উঠল,’ যাই তোমার বুড়ো দাদামশায়কে এ যাত্রায় সাহায্য করি। এত কাঁদতে হবে না। প্রতিশোধ পূর্ণ। এবার তুমি হাসতে পারও।’ অর্ধেক থেকে ফিরে এসে বিমুগ্ধ থম মেরে গৌঢ় মুখ গম্ভীর করে বলল,’ রক্ত দিয়ে যদি পৃথিবীর অস্থির মানুষটার কিছু হয় তাহলে তোমার জীবনও অস্থির হয়ে যাবে। দোয়া করো। বুড়োর জন্য নয় আমার জন্য। তাকে মনে হয় আল্লাহ এই যাত্রায় ছেড়ে দিবে। এমন মানুষকে কে নিতে চায়। স্বার্থপর বুড়ো।’
‘ এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে কেউ মরে যায় না অসভ্য লোক। নীহারিকা মৃদু চেঁচিয়ে বলল। বিমুগ্ধ গটগট করে চলে গেল রক্ত দিতে। নীহারিকা নিজের বেগতিক অনুভূতিকে ঠেলে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কি ভয়ংকর আল্লাহ! নিজের গালে হাত দিয়ে দম নিচ্ছে। মারাত্নক ঘটনা। গাল এত গরম কেন? ওহ নীহারিকা ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেল। চোখের পানি মুখে সে তিক্ত মেজাজের সাথে সুপ্ত অনুভূতি নিয়ে বসে আছে। সে জানতেও পারলো না বিমুগ্ধ কিভাবে প্রতিশোধ নিল। কিসের প্রতিশোধ নিল? বিমুগ্ধের করা মনে মনে শপথটা তার চোখ এড়িয়ে গেল।
নীহারিকার চোখের আড়াল হতেই একটি চেয়ারে বসে পড়ল বিমুগ্ধ। রক্ত তো সে আগেই দিয়ে এসেছে। এত সময়ের সব শুধু শুধু করেছে। বুকে মালিশ করতে করতে ভ্রু উল্টে বিড়বিড় করছে সে,’ এই মেয়ে তার দেহ, মন, প্রান, আত্না, অস্তিত্ব সব কিছুর খুন করবে। খুনি একটা।’
____________________
দাদামশায় সত্যি সত্যি বেঁচে গেলেন। তার অপারেশন ভালো হয়েছে। জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লেগেছে ঠিকই। তবে তিনি ভালো আছেন। সাগরিকার রক্তের প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু তাকে দেখে নীহারিকার মনে হলো এই মেয়েটি সত্যি তার প্রিয় কেউ হওয়ার যোগ্য।
রাত দশটা ছুঁই ছুঁই করছে। দাদামশায়ের হাতে তার দুই ছেলে। মেয়েটি মাত্র এসে পৌছেছে। অনেক দূর থেকে তিনি ছুটে এসেছেন বাবার কথা শুনে। সঙ্গে তার তিন কন্যা দুই পুত্র। মিতু আপুর চক্ষুবিষ রাবেয়া ফুফুর তিন মেয়ে। যদি খুন করার পরে কোন শাস্তি না থাকত মিতু আপু এদের নিজের হাতে খুন করত। এর অবশ্য একটি মজার ঘটনা আছে। এই মুহূর্তে মিতু আপু সেই জঘন্য ঘটনাটি মনে করতে চাইছেন না। তিনি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন। নীহারিকা একটু দূরে দাড়িয়ে আছে। দাদামশায় এই সিরিয়াস মুহূর্তে ছেলেকে দেখে আত্নহারা হয়ে পড়লেন। ভুলে গেলেন সব দুঃখ কষ্ট। নবীন সাহেবকে বললেন,’ তুই এখন থেকে আমার সাথে থাকবি বাবা।’ তিনি প্রচন্ড গম্ভীর হয়ে বললেন,’ অসম্ভব। আমি শুধু আপনাকে দেখতে এসেছি। আর কিছুই নয়।’ বুঝা যাচ্ছে পুরোনো রাগ এখনও চাঙ্গা। কি এমন হয়েছিল? কৌতুহলে ফেঁটে পড়ছে নীহারিকা। জানালার বাহিরে বিমুগ্ধের দিকে চোখ গিয়ে তো তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। মিতু আপু কেন এদের অপছন্দ করে বেশ বুঝতে পারছে সে। জাওয়াদের চরম শত্রুদের মধ্যে তার এক ফুফাত বোন যুক্ত। এদের কর্মগুলোই এমন। বিমুগ্ধের আশেপাশে ভনভন করছে। যদিও বিমুগ্ধের গুরুগম্ভীর মুড চলছে। তাযিন রোল প্লে করছে সে। নীহারিকা লক্ষ্য করল বিমুগ্ধ সারা দিন তাযিনের মতই থাকে। মানে রেগে রেগে, গম্ভীর হয়ে। শুধু নীহারিকাকে পেলেই হয়। অসহ্য। তখন যত সব গা জ্বালানো কথা বার্তা বলে বেড়ায়। বাকি সবার সাথে তো অন্যরকম। এই যেমন যে কোন সময় তার ফুফুর তিন কন্যা ঝাড়ি খাবে। নিশ্চয়ই খাবে। মিতু আপু ফিস ফিস করে এটাই তাকে বলল। তার বেশ মজা লাগছে। দাদামশায় তার নাতিনাতনিকে দেখে আবেগে ভেসে যাচ্ছেন যেন। তবে তা প্রকাশ করতে পারছেন না। বেশি উত্তেজিত হওয়া উচিৎ হয়। এতো মানুষকে তো কখনো এলাউ করেই না। জাওয়াদ পরেছে মহা বিপদে। কারও কথা সে ফেলে দিতে পারছে না। নীহারিকা যখন অনুরোধের সুরে বসেছিল তার তো তখন জান বের হয়ে যাচ্ছিল। না আসতে দেয় কিভাবে? নীহারিকা তখনও দাদামশায়ের কাছে যায়নি। তার আগে বিমুগ্ধ আর আনজুম আপুকে তিনি প্রচন্ড আদর ভালোবাসা নয়নে দেখে অনুরোধ করে বললেন,’ তোকে থাকতে হবে না বউমা আর আমার নাতিনাতনি থাকবে।’ যাদের কোন খবর ছিলো না? মৃত প্রায় জানত। তাদের জন্য এত ভালোবাসা? কাহিনী কি? নীহারিকা জানালার বাহিরে তাকিয়ে দেখল শামা খালামনি কাঁদছে। আশ্চর্য! কাঁদার কি আছে? এতেও নারাজ নবীন মশায়। রাজিই নয়। নীহারিকা দাদুর সাথে কথা বলে বাহিরে চলে আসল। এর মাঝে চরম একটি ঘটনা যে ঘটে গেছে তা সে জানে না। বিমুগ্ধ তার আব্বিকে বলে দিয়েছে সে এবং আনজুম কিছুদিন দাদার বাড়িতে থাকতে চায়। বিমুগ্ধ তো ঢাকায় থাকে। আনজুমও তার সাথে থাকবে কয়েকদিন। তার আব্বি আম্মি সিলেট চলে যাবেন। এই কথা যখন নীহারিকার কানে গেল মাথা আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বহু কষ্টে বিমুগ্ধকে একা পেয়ে বলল,’ আপনি আমাদের বাড়িতে ভুলেও আসবেন না।’
‘ কেন?’ বিমুগ্ধের বাঁকা চোখের প্রশ্ন। নীহারিকা চারপাশে চোরা নজরে তাকিয়ে বলল,’ আসবেন না মানে আসবেন না। দেখা করার হলে মাঝে মাঝে করে যাবেন একদম থাকতে আসবেন না।’
‘ তুমি এতো হিংসুটে? ও মাই গড? আই ক্যান্ট আই ক্যান্ট বিলিভ!’ বিমুগ্ধ দেয়ালের সাথে চেপে গেল একটু অভিনয় করে। নীহারিকা সত্যি জেলাস। বিমুগ্ধকে সবাই এত এত ভালোবাসা দিচ্ছে তার সহ্যের বাহিরে হয়ে যাচ্ছে। মিতু আপুও এখন বিমুগ্ধের আশেপাশে ঘুরছে। আরে আজব তো সব এমন হয়ে যাচ্ছে কেন? বিমুগ্ধ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকতে চাইছে। অথচ এই বান্দা না কি তার ঘরে থাকে? এটা কখনো মানা যায় না। কখনো না। ঘাড়ত্যাড়ার মত নীহারিকা বলল,’ আপনি নিজের বাসায় থাকুন। ভালো মানুষের মত।’
‘ কিন্তু আমি তো ভালো মানুষ নই।’
‘ হয়ে যান। ভালো হতে পয়সা লাগে না।’
‘ আমি তো হতে চাই না।’
‘ আরে ঝগড়া করছেন কেন? দেখুন ভাইয়া আপনি আমাদের বাসায় থাকতে পারবেন না। আপনার আব্বির ভাষ্যমতে ওটা সস্তা অনেক।’
‘ ভাইয়া! ভাইয়া! এবার তো আমি যাবই।
তুমি শুধু দেখ রাগেশ্বরী। তোমার কি হাল করি। জাওয়াদকে তুমি বিরিয়ানি খাইয়েছ কেন?’ বিমুগ্ধ গরম চোখ। নীহারিকা গলা ঠিক করে বলল,’ সে আমার কারণে না খেয়ে ছিল। আর এখানে জাওয়াদ আসছে কোথা থেকে?’
‘ তোমার কারণে না খেয়ে থাকবে কেন? আসছে। তুমি নিয়ে আসছ। আমি তোমাকে আগেই বলেছি দূরে থাকতে। আমার কথা শুনোনি কেন? সে তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসতে শুরু করেছে। সুযোগ তুমি দিয়েছ। তোমাকে এর চরম মূল্যদিতে হবে।’ বিমুগ্ধ হঠাৎ করে এমন মাত্রা অতিরিক্ত রেগে যাবে ভাবতে পারেনি নীহারিকা। একটু দমে গেল সে। কিন্তু কঠিন চোখ। বিমুগ্ধ পিছনে ঘুরে দাড়িয়ে রইল কিছু সময়। তারপর ঘুরে বলল,’ আমি তো যেতে চাইছি না দাদামশায় নিয়ে যেতে চাইছে। ভাগ্য। ডেস্টেনি। আমি ইচ্ছে করে তোমার সাথে কখনো দেখা করতে যাব না রাগেশ্বরী। ভাগ্যের উপরে তো আমার হাত নেই।’ বিমুগ্ধ দু’ হাত উপরে তুলে নিয়েছে। নীহারিকার চোখে অবাকতা খেলা করছে। বিমুগ্ধ এমন একরোখা, জিদ্দি, সে ভাবতে পারেনি। জাওয়াদের ব্যাপারে বিমুগ্ধ সিরিয়াস ছিল? সে তো ভেবেছে বিমুগ্ধ বুঝি আবার কোন মজা করছে। নীহারিকার মাথার রগ দপদপ করে উঠল বিমুগ্ধের রক্ত লাল চেহারা দেখে। সে বার বার মুখে হাত বুলাচ্ছে। চোখ সরাল না নীহারিকা। চার পাঁচ দিন পরে এই লোক তাদের বাড়িতে থাকবে? নীহারিকা বেশি ভাবতে পারছে না। আজকে তাকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে না জানি এবার মেরে টেরে ফেলে না কি। ভয়ংকর ব্যক্তি!
‘ আপনার যা খুশি করুন। আমার থেকে দূরে থাকবেন আপনিও। দু’ জনকেই অসহ্য লাগছে।’ নীহারিকা বিরক্ত মুখে জায়গা ত্যাগ করেছে। বিমুগ্ধর উপহাস নজর। মনে মনে সে ভাবছে নীহারিকাকে একটু জব্দ করলে কেমন হয়? তারপর হেসে ফেলল। চরম হাসি। অনেক সময় ধরে এমন হাসি সে হাসে না। মুখে বলল,’কেমন হবে রাগেশ্বরী আর বিমুগ্ধ এক ছাদের নিচে থাকলে? ‘ আনজুম উত্তর দিয়ে বলল,’ একদম ভালো হবে না দাভাই। একদম না।’ বোনের দিকে তাকিয়ে বিমুগ্ধ চিন্তামুক্ত সুরে বলল,’ হবে। তোর দাভাইয়ের জন্য অসহ্য রকমের ভালো হবে।’ আনজুম হাসল। দাভাইয়ের ভালো হলে তো জগৎ হাজির। মেয়েটি তার দাভাইকে এভাবে শেষ করবে কল্পনাতীত ছিল। ভালো হবে না খারাপ সে জানে না তবে তার জীবনের কি হবে? মাথা ঝারল আনজুম। দেখা যাবে কি হবে। আগে দাভাই।
‘ তোর তো অবস্থা খারাপরে দাভাই। অসুস্থ মানুষ মনে হচ্ছে।’
‘ অসুস্থ ত তো বটেই। রাগেশ্বরীর অসুখে ধরেছে। তোর দাভাইয়ের কিছুই কাজ করছে না। না মন, না প্রাণ, না অস্তিত্ব। কি হবে বল তো?’ বিমুগ্ধ বোনকে এক হাতে জড়িয়ে হাঁটতে লাগল। আনজুম গাল ভর্তি হেসে বলল,’কি আর হবে খুন হবি। তোকে তো এমনেই সে খুন করবে ওমনেও করবে। তারচেয়ে বরং ভালোবাসার কাছে খুন হয়ে যা। হৃদয় শীতল করার মত ভালোবাসায় এক, দুবার খুন হলে কিছু হয় না। প্রশান্তি মিলে মেরি দাভাই।’ বিমুগ্ধ বোনের কপালের চুল সরিয়ে দিলো। গম্ভীর মুখে একটু হাসল। মনে মনে বিড়বিড় করল আনজুমের কিছু বাক্যংশ,’ এক’ বার দু’ বার খুন হলে তো কিছুই হয় না। কিন্তু হাজার হাজার বার হলে কি বেঁচে থাকা সম্ভব?’
কঠিন প্রশ্ন। বড়ো কঠিন প্রশ্ন। উত্তর নেই।রাগেশ্বরীর কাছে আছে উত্তর?
______________
চলবে………….
ভুলত্রুটি আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি দিয়ে দেখবেন। নিশ্চুয়ই ক্ষমা একটি সুন্দর গুন।
@হাফসা_আলম