#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৩৩_৩৪ (স্পেশাল মোমেন্ট)
“রূপালি আমার মেয়েকে আমি এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছি। সে কোথায় তাকে ডাকো। নিশ্চয়ই তুমি তাকে লুকিয়ে রেখেছো। আমার পরিচয় দিয়েছিলে! তোমার মত নির্লজ্জ মেয়ে দিবে না আমি জানি। কোথায় আমার মেয়ে ডাকো বলছি তাকে রূপালি। আজ আমি নিজেই বলব আমিই তার পিতা শোয়াইব মিলদাজ।”
রূপালি বেগম এই কোন দোটানায় পড়লেন। মেয়ের আসল বাবা তাকে চাইছে। আর তিনি মা হয়ে মেয়েকে সঁপে দেবেন তাও কি-না এই জা’নো’য়া’রের কাছে! কখন না তিনি রগ্নমূর্তি দৃষ্টিতে তাকান শোয়াইব মিলদাজ এর দিকে। সেই পুরনো রগ্নি রূপখানা দেখে শোয়াইব মিলদাজ এর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। তিনি রূপালি বেগম কে টিট্টকারী মে’রে বলেন,
“ওয়াও সেই তেজস্ক্রিয় রূপ আমার রূপালি বেগম সাহেবার। আচ্ছা ভালোই হতো যদি সন্তানের সাথে স্ত্রীকেও ফিরে পাও….।”
“আপনে গলদ জায়গায় হাত মা’রতাচ্ছেন মিয়া।”
গম্ভীর বয়স্ক অনুপাত কণ্ঠস্বর শুনে চমকে যায় শোয়াইব মিলদাজ। তার কাছে কণ্ঠস্বর বড্ড পরিচিত লাগছে। তিনি বিপরীত পাশে মুখ ফেরাতেই থমকে যান। নাছির উদ্দিন গলায় গামছা বেঁধে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় হাতে পলিথিন মোড়ানো জিনিস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মুখ থেকে চিবানো শব্দে পানের পিক ছিটকে এসে পড়ে শোয়াইব মিলদাজ এর গলায়।
“হেই স্টুপিড ওল্ড ম্যান!”
গলায় লেগে যাওয়া পানের দাগ দেখে নাক ছিটকান শোয়াইব মিলদাজ। রুমাল দিয়ে গলা মুছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান। নাছির উদ্দিন বাজারের পলিথিন স্ত্রীর কাছে এগিয়ে দিয়ে আহ্লাদী কণ্ঠে বলেন,
“বউ আজ বড্ড গরম পড়তাছে। আমার লাইগা কোল্ড কফি বানাও। তোমার হাতের খানা পানিও অমৃত উম্মাহ্।”
বুড়ো-বুড়ির আহ্লাদখানা দেখে শোয়াইব মিলদাজ এর মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে। রূপালি বেগম স্বামীর কাছ থেকে মোহনীয় আবদার শুনে ঢোক গিলে ভেতরে চলে যান। নাছির উদ্দিন এবার সটান হয়ে দরজার প্রধান ফটক এ এসে দাঁড়ান। এক কদম পেছিয়ে যান শোয়াইব মিলদাজ। নাছির উদ্দিন তার আপাতমস্তক পরখ করে বলেন,
“ওমন চোখ দিয়া যারে গিলে খাওনের চিন্তা গড়তাচ্ছেন। তা বাদ দেন। ওই আমার একখানা সোহাগী বউ। তোয়ার কুনো দাম নাই তার জীবনত। আর রইল মাইয়ার হতা। সে তোরে দেখিলে জুতা খুইলা পিঠব। তৈ তোয়ার লাই শুভ হইব পালিয়ে যাওন। যোন গা চাই।”
শোয়াইব মিলদাজ এর মুখের আদল অপমানে তিক্ত হয়ে গেল। গরমের কারণে সেই তিক্ততা বেড়ে লাল টমেটোর মত লাগছে। বিনিময়ে তিনি কথা না বাড়িয়ে ফেরত চলে যান। নাছির উদ্দিন এর মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি চলে আসল লোকটার জন্য। ইশ তুই তো জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হারিয়ে’ছিস। তাই আমি সুখী আজ!
বিড়বিড় করে শোয়াইব মিলদাজ এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কথাটুকু আওড়ান তিনি।
____
“দেখো মাস্টার মিয়া তোমারে টাহা দিমু কিন্তু তোমার থেইকা অবশ্য এ নাছিরের মাইয়ারে আমাগো গেরামে পাঠা’ইতে হইব। মনে রাই’খো কোনো গর’বড় না হওন।”
মাস্টার’মশাই টাকার ব্যাগ হাতে নিয়ে বাঁকা হেসে বলেন,
“আরে চিন্তা করিয়েন না মোকতাব মিয়া। আপনার কাজ হয়ে যাবে। আপনি নিশ্চিন্তে গ্রামে গিয়ে অপেক্ষা করেন। পরশু তিনদিনের জন্য নাছির মিয়ার মেয়ে গ্রামে স্টাডির জন্য যাবে।”
মোকতাব মিয়া মুখ বাঁকিয়ে চলে যান। তার মাঝে কোনো গাঁ বিধীন চিন্তা নেই। টাকা দিলো তো কাজ হতেই হবে এই ধারণা পুষে রাখেন তিনি। নিজ পথে বেরিয়ে যান। মাস্টার’মশাই সামসুল আলম নাছির মিয়ার মেয়ের আইডি নং খুঁজে বের করেন। তার বিভাগ অনুযায়ী তিনি তাদের কে ল বিষয়ক অ্যাডভোকেট রীতি পড়ান। তিনি তৎক্ষণাৎ নোবেল বই খুলে সেখানে কোনো থিসিস আছে কি-না পর্যবেক্ষণ করেন। পেয়েও যান বাঁকা হেসে বলেন,
“কাল পরশু শেহরীনা’দের এ থিসিস দিতে হবে।”
___
পরের দিন ফোর্থ পিরিয়ড শেষে আড্ডা করতে গাছতলায় নিচে বসে ফারদিনরা। নেক্সট পিরিয়ড অফ পাওয়ায় গাছতলার নিচেই জমিয়ে আড্ডা দেবে। ইপশিতা আফসোস কণ্ঠস্বরে বলে উঠে।
“শেহু আমাদের ফাইনাল সেমিষ্টার স্টার্ট হবে। আর তুই বিয়েও করবি এই মাসে। মজা করার কোনো পথই রাখ’লি না।”
শেহরীনার মুখখানা চুপসে গেল। সে কী আর জানত তাদের নিশ্চুপ ভার্সিটির অথো’রিটির আকস্মিক পরীক্ষার ঘোষণা দিয়ে উপহার ছুঁড়ে মা’রবে।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তাৎক্ষণিক সময়ে সেখানে উপস্থিত হলো সারোয়ার। সে এসেছিল ফারদিনের সাথে মিট করতে। সবাইকে পেয়ে তার জন্য সুবিধাও হলো বটে। সারোয়ার তাদের চিন্তিত মুখ দেখে অবাক সুরে জিজ্ঞেস করে।
“কী হলো তোরা মুখ লটকি’য়ে রেখেছিস কেনো!”
“কেনো আর আপনি আর শেহরীনা বিয়ের তারিখ ঠিক করলেন ৯ তারিখে। আর ঐ’দিনের পর থেকে পরীক্ষা স্টার্ট।”
সারোয়ার মুখ মলিন করে তাকায়। তার সাধের বিয়ে করা আর হবে না বোঝা যাচ্ছে। অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে বোধ হয় তার বুড়ো হয়ে যেতে হবে। শা’লার বিয়ে সন্নিকটে এলেই দুনিয়ার কাজ কারবার কোথায় থেকে টপকা’য় পড়ে! যতসব উটকো ঝামেলা বটে। সারোয়ার কে ঠোঁট নাড়িয়ে আপনমনে বিড়বিড় করতে দেখে শেহরীনা ঠোঁট কামড়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“আরেকটু নাহয় জ্বলু’ন ব্যারিস্টার সাহেব। বিয়ের জন্য এতটা উতলা হলে মানায় কী! যত দেরি তত মজা।”
“তবে আমি কিন্তু ছাড় দেবো না। অনেক বছরের ক্ষুধার্ত প্রাণী। সুস্বাদু হয়ে এলে আমি হামলে পড়ব আর তার ঠিক তিন মাস পর তুমি ঘর’ঘর বমি করে বেড়াবে বলো রাজি!”
ফট করে উঁচু গলায় হঠাৎ কথাগুলো বলায় শেহরীনা মাথা নামিয়ে লজ্জায় এদিকওদিক তাকায়। বেডায় আগেই ঠিক ছিল নির্লজ্জ হওয়া শিখার পর থেকে ঠোঁট কাটা বাঁশ দিয়েই যাচ্ছে। ইপশিতা হা হয়ে গেল। ফারদিন বুকের উপর হাত চাপড়ে সারোয়ার কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ব্রো ইউ আর গ্রেট! এমন বাজি আমিও লাগতে চাই। এক মাসে বিয়ে করে তিনমাস পর বউয়ের বমি করার সিন দেখা উফ মজাই আলাদা ব্রো!”
ইপশিতার চোখজোড়া ফাটা ফাটা হয়ে গেল। বেচারীর দুটো এ মুহুর্তে ইচ্ছে করছে পোলা দুইটার ঠোঁট সেলাই করে দিতে। কিন্তু তারা নিরুপায়। বিধেয় চুপটি করে প্রিয়’দের বেহায়া’পনা দেখেশুনে গালে হাত দিয়ে রাখল। সারোয়ার ফারদিনদের একপলক দেখে আড়ালে গিয়ে শেহরীনার গালে চুম্বন দিতে নিলো। তখনি কোথার থেকে এক স্যারের উপস্থিতি আকাশ থেকে পড়ল। সারোয়ার বেচারা তৃষ্ণায় মুখটা বাচ্চাদের মত করে শেহরীনার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। স্যার সামসুল আলম এসেছে সবার থিসিস দেওয়ার জন্য। টিমমেট হয়ে কাজ করবে তারা। সারোয়ার দেখে মনে মনে রেগে গেল।
“শা’লার মাস্টার কোনখান রোমান্সের তেরো’টা বাজিয়ে এখন আসছে থিসিস মা’রা’তে। মন তো চাচ্ছে ছাদ থেকে টুপ করে তুলে আছাড় মা’রি। ইয়া আল্লাহ আমার মত শান্ত ছেলের মস্তিষ্ক এই মেয়ে সত্যিই খেয়ে দিলো। কোথায় আগে আমি শান্ত হয়ে ডিসিশন নিতাম সেই আমি এখন অশান্ত হয়ে ঘুরঘুর করছি। ভাবা যায় মেয়েটার শক্তি মানে পাওয়ার অফ ওয়াইফ। এখন থেকেই আমার এ অবস্থা না জানি বিয়ের পর কী হবে।”
সারোয়ার মনের কথা মনেই গেঁথে বুকের উপর হাত গুটিয়ে তাকিয়ে রইল। সামসুল আলম তখনো সারোয়ার কে খেয়াল করেননি। তিনি আপনমনে সবাইকে একেকটা গ্রামের নাম জানিয়ে বলেন,
“আপনারা সবাই সেখানে গিয়ে তদন্ত করে লড়াই করবেন। এক পাক্ষিক আর কোনো কঠিন লড়াই নয়। স্বাভাবিক জমি-জমা নিয়ে। আপনারা নিশ্চয়ই জমি বিষয়ক রীতিনীতি পড়েছেন। ব্যস এটাই এপ্লাই করবেন। রেডি তো আপনারা! আপনাদের টিম’মেটের মধ্যে পাঁচজন করে থাকবেন। কে কার সাথে থাকবেন নিজেরা ডিসাই’ড করতে পারবেন কোনো সমস্যা নেই। পরশু সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে যাবেন। আর রিস্ক থাকলে যাবেন না আমি আপনাদের ক্লাসের বাকি টিচার কে জানিয়ে ক্লাসের এটেন’ডেন্টস সামলে নেবো। ওকে স্টুডে’ন্টস আন্ডারস্ট্যান্ড এভরি’ওয়ান!”
“ইয়েস স্যার!!!”
সবাই চিৎকার করে রাজি হলেও শেহরীনা চিন্তিত হয়ে পড়ে। তার বাবা আদৌ যেতে দেবে কি-না সেই ভয়ে। ইপশিতা বিন্দাস তার মা একটু বকাবকি করতে পারে তবুও তার বাবা সঙ্গ দেবে এই তার জানা। পূর্বেও তেমনটা হয়েছে, ইপশিতার মা মিসেস ইয়াসমিন স্বামীকে মেয়ের অন্য ছেলের সাথে চক্করের কথা জানিয়ে দেন। এতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হোননি ইপশিতার বাবা যুবুন মিয়া। কেননা তাকে ইপশিতা কান্নাকাটি করে বুঝিয়ে দিয়ে ছিল। বিধেয় স্ত্রীর কথায় তিনি সরাসরি মুখের উপর না বলে দেন। এ শুনে ইপশিতার মা হতভম্ব হলেও পরক্ষণে ছেলের পরিবার নিজ থেকে বিয়েতে অমত জানায়। কেনো জানায় তা জানার জন্য জিজ্ঞেস করলে রুফিয়া সাইমুম আমতার সুরে শুধু বলে ছিলেন।
“আসলে আমার ছেলে কে একজন খুব ভালোবাসে আপা। মেয়েটা হুট করে আমার ছেলের বিয়ে শুনে হতদন্ত হয়ে এসে খুব কান্নাকাটি করে। এতে ছেলে দেখে অমত জানালে সুইসাইড করতে অব্দি হাত কাঁপেনি মেয়েটার। বাধ্য হয়ে আমার ছেলে এখন তাকে মান্য করছে। তাদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হবে। আপা আমাকে ক্ষমা করবেন। আপনি আপনার মেয়ের পছন্দকেই প্রাধান্য দিন। স্যাম বাবাকে যে ভালোবেসে আগলে রাখতে পারবে তাকেই আমি বউ বানাতে চেয়ে ছিলাম। আমায় ক্ষমা করে দি’য়েন আপা রাখছি আসসালামুয়ালাইকুম।”
ইপশিতার মা সালামের জবাব রুক্ষ গলায় দিয়ে দমদমে রুমে গিয়ে দরজা আটকে দে’ন। দাম্ভিকতা নিয়ে তিনি এতদিন ভরাই করছিলেন আজ সব বিগড়ে যাওয়ায় তিনি হতাশায় নিমজ্জিত হলেন। ইপশিতার বাবা দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন। ইপশিতা বাড়ি ফিরে এলে ইপশিতার মা স্বেচ্ছায় ছেলের ব্যাপারে জানতে আগ্রহ পোষণ করেন। এতে অবশ্য ইপশিতা ভীষণ অবাক হয়ে ছিল। খোশমেজাজে জানালে তিনি আর দ্বিমত পোষণ করেননি।
“এই মেয়ে কতক্ষণ ধরে ডাকছি কানে কী তুলা দিয়ে রেখেছিস এতো ধ্যানে কোথায় হারিয়ে গেলি!”
শেহরীনার প্রশ্নে ভূত দেখার মত চমকে যায় ইপশিতা।ইপশিতার এই এক বদভ্যাস সজাগ থাকতে ঠিক একটুর জন্য বেখেয়ালে হলে কেউ এসে যদি তাকে নাড়া দেয় অথবা ডেকে উঠে সে ঘাবড়ে যায়। শেহরীনার কথায় দাঁত কেলিয়ে পুরো ঘটনা জানায়। শেহরীনা উৎফুল্ল হয়ে তাকে অভিনন্দন জানাতে জড়িয়ে ধরে। ফারদিন ও শুনে অবাক ইপশিতা তাকেও বলেনি। সবার সামনে ফারদিন ইপশিতাকে কোলে উঠিয়ে ‘ইয়েস ইয়েস ফাইনালি’ বলে ঘুরতে লাগল। ইপশিতা হাঁসফাঁস করে হেসে দেয়। সারোয়ার বিক্ষোভ নিয়ে শেহরীনাকে বলে,
“এ মেয়ে আসো তোমাকে কোলে উঠায়।”
ডিমের মত গোল চোখ করে সারোয়ার এর দিকে তাকায় শেহরীনা। লোকটার কী মস্তিষ্কের নিউরন কাজ করা বন্ধ করে দিলো! ছাত্র সমাবেশের সামনে কী ধরনের পাগলামি কথা বলল। শেহরীনার অদ্ভুত তাকিয়ে থাকা দেখে ‘চ’ উচ্চারণ করে উঠে সারোয়ার। শেহরীনা থতমত খেয়ে বলে,
“আপনি গা’লিও দিতে জানেন। ভাবছিলাম আপনার মত নিশ্চুপ, নিরামিষ পুরুষ এ জগতে নেই। আপনিই এক পিচ। এখন দেখছি আপনি তো সবচেয়ে বড় গুন্ডা বাজ। কেমনে চ দিয়ে উচ্চারণ করলেন!”
“মেয়ে তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে আমার এ অবস্থা। মতি ভ্রষ্ট করে দিয়ে আবার সরল গলায় জিজ্ঞেস করছো আমার নিরামিষ রূপ কোথায় গেল! তাহলে জবাবও হলো তুমি টেনেহিঁচড়ে তাকে ছুঁড়ে মে’রে’ছো নালায়। এখন থেকে যা দেখবে তা হলো হ’ট,প’ট,ন’টি বয়।”
চোখ টিপ মে’রে সরে দাঁড়াল শেহরীনার কাছ থেকে। বেচারি মুখে আর কোনো কথাই আনল না। নাহলে তার গ’জ্জ’ব বেই’জ্জতি হয়ে যাবে।
___
রাতের বারোটায়,
সারোয়ার ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আকাশের ঘন মেঘের মতো ভারাক্রান্ত মন গুলি যদি আন্তরিকতা মাখানো একটুখানি শীতল জলের স্পর্শ পেত তবে সব বিষাদের উপশম হত।
সারোয়ার দিনটুকু হাসিখুশি কাটালেও বাড়ি ফেরে তার নিজেকে পর ছেলে মনে হয়। সে এসে থেকে কারো সাথে দেখা করেনি। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে সারোয়ার পেছন ফেরে তাকায়। নিলীমাকে আসতে দেখে তপ্ত শ্বাস ফেলে পুনরায় আকাশের ঘন কালো মেঘের দিকে দৃষ্টিপাত করে। নিলীমা সারোয়ার কে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে এসে পড়েছে। তার বিশেষ জরুরী কথা অপমান সহকারে শোনার জন্য। একবার সারোয়ার অপমান করেছে এবার তার বেলা, তার দিক উপযুক্ত প্রমাণ আছে। ফলে সে আজ চরম হারে অপমানে মাথা নুইয়ে দেবে সারোয়ার কে। মনের মধ্যে কুবু’দ্ধি এঁটে বাঁকা হেসে সারোয়ার এর পাশ গিয়ে দাঁড়ায়। সারোয়ার খেয়াল করে তার পাশ থেকে দ্বিগুণ দূরে সরে যায়। নিলীমা দেখে রাগে রেলিং চেপে ধরে। তবুও শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে।
“আচ্ছা সারোয়ার আমি শুনলাম আপনি বলে আন্টির নিজ সন্তান নয়।”
সারোয়ার নিশ্চুপ। নিলীমা ভ্রু কুঁচকে পুনরায় বলে,
“না মানে আজ আপনাদের কথা শুনে ছিলাম। আপনি কোনো রিয়েক্ট করেননি। সারাদিন বাসায় ও ছিলেন না। ভাবছিলাম কোনো ক্লাবে গিয়ে মদ গিল’ছেন। কিন্তু আপনার সটান শরীর দেখার পর সেই ধারণা ও ভেঙ্গে গেল।”
লোকটার নিরবতা যেনো নিলীমার রাগে ঘি ঢালছে। সে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
“আপনাকে এত অপমান করার চেষ্টা করছি। কেনো আপনি পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছেন হুম! কানে কী কথা শুনেন না।”
সারোয়ার চটকে তাকায়। নিলীমা দুই কদম পিছিয়ে যায়। এতক্ষণ লোকটা মাথা উপর করে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ তার তাকানোর মাঝে হিতাহিত ভয়ে কেঁপে উঠল। কেননা চোখজোড়া লাল হয়ে পানি ভিড় করছে সারোয়ার এর। মুখে এক রক্তিম আক্রোশ। সেই আক্রোশ জোড়ে যদি তাকে মে’রে দেয়। ভয়ে ঢোক গিলে তৎক্ষণাৎ পালিয়ে যায় ছাদ থেকে। থম মে’রে মাটিতে বসে পড়ে সারোয়ার। তার বাবার কাছ থেকে মায়ের অপছন্দের কারণ জানতে পেরে তার হৃদয় পূর্বেই চুরমার হয়ে গিয়েছে। নিলীমার অপমানে তার মোটেও খারাপ লাগেনি। যতটা লেগেছিল সে সময় বাবা-মায়ের কথোপকথনে।
আগের ঘটনা…..
“বাবা মা যদি আমায় মেনে নিতে না চায় তাহলে সেটাই হোক। আমি তবুও চাইব না আমার কারণে আপনাদের মাঝে কোনো ঝামেলা হোক। আপনারা নিজেদের বোঝেন। আমি বিনিময়ে দূর থেকেই আপনাদের আপন ভাববো। মা আপনার একটাই সন্তান সাজিয়া। আপনি আ’র কখনো আমায় দেখতে পাবেন না। ভেবে ছিলাম আপনি আমায় আপন করেই সেদিন জড়িয়ে ধরে ছিলেন। কিন্তু বুঝতে পারলাম সেটা নিছক অভিনয়। আপনি চিন্তা করবেন না আমি বিয়ের পর অন্যত্রে চলে যাবো। আপনি,বাবা আর সাজিয়া সুখী হয়ে থাকবেন। আমার মত জারজ সন্তানকে যে আপনি লালন পালন করেছেন তার ঋণ শোধ করার সাধ্য আমার নেই। তবুও প্রতিবছর আপনার নামে আপনার ব্যাংকে টাকা জমিয়ে দেবো। মা আপনিই আমার মা ছিলেন, পরেও আর ভবিষ্যতেও থাকবেন।”
সারোয়ার কে জাহানারা পুষ্প চেয়েও আটকাতে পারেননি। মোঃ আবু সিদ্দিক অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পেরে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েন। তার গোছানো সংসারের পুষ্প ফুল’টা কেনো এত অভিমানী হলো! কেনো একটু ত্যাগ স্বীকার করতে পারল না। সারোয়ার স্মৃতি কেটে চোখের সুপ্ত জল মুছে মৃদু হাসল।
‘ইশ তার হবু বউ জানতেও পারবে না তার বর তার জন্য অন্যত্র বাসা ঠিক করেছে।’
____
মঙ্গলবার সকালে….
শেহরীনা তাড়াহুড়ো করছে। রূপালি বেগম মেয়ের মুখে স্যান্ডউইচ দিয়ে দুধ খাইয়ে দিলেন। ইতিমধ্যে খাবার চাবা’তে না পেরে মেয়ের মুখটা ফুলে গেল। শেহরীনা চ’র্বণ করার মাঝে খেয়াল করে সারোয়ার দাঁড়িয়ে আছে। সে আজ মাইক্রো গাড়ি এনেছে। ক্যাম্পিং যাওয়ার অন্যতম যানবাহন মাইক্রো গাড়ি। ফারদিন, ইপশিতা আর জাফরান গাড়ির ভেতরে বসে আছে। তারা ‘আয় আয়’ করে ডাকছে। শেহরীনা বেরিয়ে এসে গাড়ির ভেতর ব্যাগ রাখে। সারোয়ার কে দেখে নাছির উদ্দিন আর রূপালি বেগম বেরিয়ে আসেন। রূপালি বেগম এর হাতে ঠান্ডা রসগোল্লার বক্স। রাতে স্বামীকে দিয়ে এনে রেখেছেন। বাচ্চারা রাস্তার মধ্যে একটু আধটু খাবে। তিনি মিষ্টির সাথে স্প্যাই’সি শর্মাও বানিয়েছেন। বক্স দুটো শেহরীনার কাছে দেন। নাছির উদ্দিন সারোয়ার এর কাঁধে হাত রেখে দুশ্চি’ন্তাহীন কণ্ঠে বলেন,
“বাবা তুই যাচ্ছিস বলেই আমি নিশ্চিন্তে মেয়েকে যেতে দিচ্ছি নাহয় আমি তাকে যেতে দিতাম না। মনে একটা ভয়ভীতি লেগে থাকতো। বুঝতেই পারছো মেয়ে মানুষ।”
সারোয়ার সেই হাতের উপর হাত রেখে ভরসার কণ্ঠে বলে,
“আশ্বাস রাখুন আল্লাহর উপর আর আমার উপর। আমি আপনাকে নিরাশ করব না।”
নাছির উদ্দিন তাদের কে দোয়া পড়ে দেন। সবাই সফর করার জন্য বেরিয়ে পড়েন।
গাড়িতে জাফরান একলা বসে আছে। সে একবার ফারদিনের দিকে আরেকবার সারোয়ার এর দিকে তাকায়। তারা আড়ালে যে প্রেম নামক ট্যা’ম্পু চালাচ্ছে তা দেখাই যাচ্ছে। গলা ঝেড়ে বলে,
“আমাকে কেউ ট্যাব দাও। আমার মত নাদান বাচ্চা তোমাদের প্রেম হজম করতে পারবে না। একে সাথে বউ নেই তারপর তোদের আগাগোড়া প্রেম’পি’রিত দেখা লাগবে তিনদিন। ভাই আমার ধৈর্য কম তাই প্লিজ আমার চোখের সামনে করিস না।”
ফিক করে হেসে দিল তারা। তাদের পাঁচ ঘণ্টার রাস্তায় জ্যাম লাগলেও ছুট’ও পেয়ে ছিল দ্রুত। দুপুরবেলা সারোয়ার একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামিয়ে দেয় । বড়সরো ‘মাইল’গার্ড রেস্টুরেন্ট’ সেখানে গিয়ে ছেলে-মেয়ে ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার টেবিলে বসল। শেহরীনা জার্নি টাইমে তেল-মশলাযুক্ত খাবার খায় না। সে হিসেবে তার মায়ের বক্স’টা খুলে একটা শর্মা খেতে লাগে। অর্ডারে শুধু একটা জুস দেয়। সারোয়ার ও কিছু খেল না। সে এক-দুটো রসগোল্লা খেয়েছে।
দু’ঘণ্টা পরই পৌঁছে যায় তারা তাদের গন্তব্যে…
বেরিয়েছিল সকাল আটটায় পাঁচ ঘণ্টার রাস্তায় একঘণ্টা থেমে ছিল ১২টা’য় তাই একঘণ্টা অতিরিক্ত লেগেছে। ২টা ৪৫ মিনিটে পৌঁছে গেল। রিসোর্ট বুক করেছে সারোয়ার। তাদের রুমে যে যার মত চলে যায়। মেয়েরা এক রুমে, ছেলেরা এক রুমে।
গ্রামের জন্য তারা কালকে সকালে যাবে। আজ রাতটুকু তারা উপভোগ করবে। রিসোর্টের সামনে বিরাট তেঁতুল গাছ, তার সামনে দিয়ে পড়েছে মোহনীয় সমুদ্র সৈকত। পাথর’ভাগের উ’পাংশ। পাথরের উপর বসে তারা ছবি তুলতে পারবে নানান পোজ দিয়ে। সমুদ্রে পা ভেজানোর জন্য অতিরিক্ত কাপড় এনেছে সবাই। ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম করে নেয়।
রাতের আটটায় তারা সমুদ্র উপভোগ করতে বের হয়। সারোয়ার তাদের কে নিয়ে সমুদ্রের কিনারায় রাতের ঝিকিমিকি করে উড়ন্ত পোকা বাসীর স্থানে হাজির করে। সেখানে জোনাকির পোকা উড়ছে। তাদের আলোয় আলোকিত পুরো সমুদ্র সৈকত। হাতে গোনা কয়েক দম্পতি শুয়ে-বসে-খেলছে। রাত্রীবেলা হওয়ায় সারোয়ার সর্তকী’করণে বলে,
“এখন যারা পানিতে নামতে চাও নেমে যাও। কারণ দিনের বেলা পানিতে নামলে সমস্যা হবে। অবশ্য সেটা মেয়েদের, ছেলেদের না।”
শেহরীনা আর ইপশিতা বুঝতে পেরে পাগলামি করতে নেমে যায়। কোমর সমান পানি নিয়ে দু’বান্ধবী খেলা করতে লাগল।অনেকক্ষণ পানিতে খেলা করে তারা নিজেদের ভিজিয়ে ফেলে। শেহরীনা ফারদিন কে দুয়েক নাকা’চুবানি খাওয়ায়। এতে ফারদিন সামনে স্রোত ফেলে শেহরীনাকে ধরতে চাইলে মেয়েটা কৌশলে সাঁতরে অন্যদিকে চলে যায়। ইপশিতাও ফারদিন কে ডুবিয়ে মা’রছে। শেহরীনা খেয়াল করল তার পেছনে স্তম্ভের মত শক্ত দেহধারী পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। সে কেঁপে কেঁপে পিছিয়ে গেল। সারোয়ার তার নজর সরিয়ে ফেলে বৈধ হওয়ার আগ অব্দি সে মেয়েটাকে অপবিত্র করতে চাইছে না। ফারদিন ও নিজেকে সামলে ইপশিতার হাত ধরে তাকে রুমে পাঠিয়ে দেয়। ঠান্ডা পানির স্পর্শে তার ঠোঁটজোড়া গোলাপী হয়ে ফুটে আছে, মুখের আদল পুরোপুরি শ্যামলা’য় আলোচিত হয়ে গেছে। সারোয়ার নিজেকে কষ্টে সামলাতে চেয়েও পারছে না। ‘না পারি কইতে, না পারি সইতে’ এমন অবস্থা হয়েছে সারোয়ার এর। শেহরীনা মাথা নুইয়ে পানির মধ্যেই মাটিতে পা কচলাচ্ছে। সে বুঝে পাচ্ছে না লোকটার সামনে থেকে পালাবে কেমনে! তার সামনে রাস্তা থেকেও অবুঝ হয়ে গেল সে। সারোয়ার মেয়েটার কাঁপানো ঠোঁট’জোড়ার দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ঘোর’ময় কণ্ঠে শুকনো ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে।
“শেহরীনা উইল ইউ কিস মি!”
শেহরীনা শুনে বোকা বনে গেল। আহাম্মক লোকটা বলে কী!
চলবে……
#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৩৫ (আতঙ্কিত সময়)
“শেহরীনা উইল ইউ কিস মি!”
শেহরীনা শুনে বোকা বনে গেল। আহাম্মক লোকটা বলে কী!
সারোয়ার মেয়েটার চাহনি দেখে আড়ালে মিটিমিটি হেসে দুকদম এগিয়ে যায়। মাথাটা খানিক নিচু করে শেহরীনার মুখ বরাবর আগায়। অন্ধকারাচ্ছন্ন সমুদ্রের কিনারায় তারা পানিময় পাথরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পানির জোয়ার এসে তাদের হাঁটু অব্দি ভিজিয়ে দিচ্ছে। স্রোতের প্রবাহে পানি ছিটকে শেহরীনার ঠোঁট ভেদ করে গলায় গড়িয়ে যাচ্ছে। সারোয়ার ঢোক গিলল। নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল। সে তৎক্ষণাৎ আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দূরে সরে যায়। শেহরীনা আকস্মিক ওষ্ঠজোড়ার ছোঁয়া সহ্য করতে না পেরে ধপাস করে পাথরের অপর দিকে বালিময় গর্তে পড়ে যায়। ব্যথায় ‘আহ’ করে উঠে। সারোয়ার বোকা বনে গেল। এই কী হলো! তড়িঘড়ি শেহরীনাকে ধরে পাথরের উপর আস্তে করে উঠে বসায়। তার সামনে দাঁড়িয়ে আতঙ্কিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।
“শেহরীনা আর ইউ ওকে! ব্যথা লেগেছে অথবা কেটেছে!”
মেজাজ তুঙ্গে গেল শেহরীনার। গর্দভ বেটা একে তাকে ‘কিস’ টুকু অনুভব করার সময় দিল না। তার উপর সে ছোঁয়া বুঝে উঠার পূর্বেই ধপাস করে পড়ে গেল। আর এই লোক এসে জিজ্ঞেস করছে সে ব্যথা পেয়েছে কি-না। ভাবা যায় ব্যাপারটা। রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,
“না আমার নানী ব্যথা পেয়েছে আমি তো সুখের ঠেলায় চেঁচিয়েছি।”
সারোয়ার উচ্চ কণ্ঠে হেসে চট করে শেহরীনাকে কোলে উঠিয়ে নিল। থমথমে মুখখানা করে অন্যদিক তাকিয়ে রইল শেহরীনা। সারোয়ার তার নিজ মনে হেসে শেহরীনাকে রুম অব্দি ছেড়ে দেয়। বিছানার নিকট যাওয়ার পূর্বে সারোয়ার বলে,
“তোমার ড্রয়ারে মলম পাবে। আমি রেখেছিলাম। লাগিয়ে নিও।”
শেহরীনা কিছুটি বলল না। দরজা লাগিয়ে দিল। সারোয়ার কিঞ্চিৎ মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করে যদি মেয়েটি দরজা খুলে একবার বিদায় জানায় সেই আক্ষেপে। কিন্তু সময় পার হলো দরজা খোলা হলো না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সারোয়ার চলে যেতে নেয় তখনি কট করে দরজা খুলে যায়। চমকে যায় সারোয়ার। ঘুরে তাকাতেই দেখে বিড়ালের মত চোখজোড়া দিয়ে উঁকি দিয়েছে শেহরীনা। তার তাকানোর মধ্যেই ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দিল। সারোয়ার প্রেমিক পুরুষের মত খুশিতে বুক চাপড়াল।
‘তুমিও প্রেমে পড়তে ভুললে না শেহরীনা।’
সারোয়ার কে উৎফুল্ল দেখে ফারদিন হাসল। সেও তার রুমের দরজার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিল। ফোনে তার মায়ের সাথে কথা বলছিল। কথা শেষ করে রুমের কাছে যেতেই সারোয়ার কে নজরে আসে।
“ব্রো খবর মনে হয় খুব ভালোই রাইট!”
লজ্জায় হাসল সারোয়ার। ফারদিন আর বিরক্ত করল না দুজন মিলে বিছানার ভেতর এসে দেখল জাফরান ঘুমিয়ে আছে। বেচারার বউ ছাড়া সময় কাটছিল না বোঝাই যাচ্ছে। এজন্য সবার আগেই এসে ঘুমিয়ে গেছে। ফারদিন আর সারোয়ার চাপাচাপি করে শুয়ে গেল। কেউ কারো থেকে কম পেশিবহুল নয়। বড়সরো বিছানা হলেও চেপে কষ্ট করে হলেও ঘুমিয়ে যায়।
পরের দিন সকালে সরলপাড়া হক গ্রামের উদ্দেশ্যে নাস্তা করে বের হলো তারা। ফারদিনের কাছে কল এলো। আননোন নাম্বারের কল পেয়ে সে রিসিভ করে।
“আমি খন্দকার মিয়া কইতেছি। আপনাগো কথা আমারে কইছে আপনাগোর মাস্টারে। আপনারা এহন কোথায় আওন!”
ফারদিন বুঝল তাদের ব্যাপারে জানানো হয়েছে। বিধেয় সেও স্বেচ্ছায় বলে,
“জ্বি আমরা গ্রামের ভেতর ঢুকেছি আপনার বাড়ি কোথায়!”
“হ হ আমার বাড়ি প্রাট রাস্তায় আইলে একখান দারোয়ান কে পাইবা তারে গাড়িতে উঠাইলে হইব। ওই তোমাগো আমার বাড়িতে নিয়ে আইবো।”
ফারদিন গ্রাম্য ভাষা বলতে না পারলেও বুঝতে সক্ষম। কল কেটে সারোয়ার কে প্রাট রাস্তায় গাড়ি ঘুরাতে বলে। সারোয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী গিয়ে দেখে সত্যিকার অর্থে একজন লোক দারোয়ান এর পোশাকে দাঁড়িয়ে আছে। তারা আগে উঠানোর পরপর গ্রামের চেয়ারম্যান বাড়িতে চলে আছে। খন্দকার মিয়া অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়ের রূপ-জাল-যৌবন দেখার স্বাদে। গাড়ির থেকে একেক জন বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়ে যায়। ছেলেরা হ্যান্ডশেক করলেও মেয়েরা মুখেই সালাম জানায়। খন্দকার মিয়া কে দেখে সারোয়ার এর তিক্ষ্ম দৃষ্টি গাঢ় হলো। ভদ্রলোকের দৃষ্টিতে তাদের সঙ্গে আসা দুই মেয়ের দিকে পড়ছে। ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু দেখায়। সে গলা ঝেড়ে মেয়েদের মুখোমুখি হয়ে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। যার কারণে খন্দকার মিয়ার দৃষ্টি নড়বড়ে হয়ে গেল। তিনি চোখ পিটপিট করে বলেন,
“ওই আসলে কেডা আইছে আর দেখতে ছিলাম।”
“সেটা আমরা জানি। আপনি আমাদের কে বলুন কোথায় কী রকম সমস্যা হয়েছে। এরা হলো থ্রেট করবে।”
“হই হই আহো আমার লগে। আগে খাওন লাগবে তারপর দেইখা যাবো কী হয়।”
খন্দকার মিয়া বড় আহ্লাদে তাদের আপয়্যন সহিতে গ্রহণ করে ভেতরে নিয়ে যায়। খন্দকার মিয়ার স্ত্রী হলেন স্বামী ভক্ত। স্বামী যা বলবেন তাই হবে। সে মিথ্যা বললে মিথ্যা,সত্য বললে সত্য। অন্ধ ভুক্ত নারী তিনি। স্বামীর সঙ্গে আসা মেহমান দেখে আদর যত্নের কমতি রাখলেন না। খন্দকার মিয়া তার চেয়ারে বসে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়ে কোনটা হতে পারে সেটা ভাবছেন! তাকে মোকতাব মিয়া ছবিও দেখায়নি। সেই কারণে তিনি পদক্ষেপ বাড়াতে পারছেন না। সারোয়ার হুট করে তাকায়। এতে ঘাবড়ে যান খন্দকার মিয়া। সারোয়ার এর নজর এড়ালো না ভদ্রলোকের অগোছালো দৃষ্টিকোণ। তবুও সে হেসে উড়িয়ে দিলো মনের ভ্রম ভেবে। আলতো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।
“আপনাদের বাড়িতে কে কে আছে!”
“ওহ আমি আছি,বউ আছে, দুইডা মাইয়া আছে বিয়াত্তা। তারা তাগো শ্বশুরবাড়িতে আহে। ঘরত আমার ভাইও থাহে। এই আসব এহনি।”
“আরে মিয়া আই আইয়া পড়ছি।”
বয়স্ক কণ্ঠনালীর অন্য পুরুষ কে সারোয়ারদের নজরে পড়ে। মোকতাব মিয়া খন্দকার মিয়ার ভাইয়ের পরিচয়ে এসেছে তার বাড়িতে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই। শেহরীনা কে নজরে পড়ল মোকতাব মিয়ার। তার চোখজোড়া লোভাতুর দৃষ্টিতে জ্বলে উঠল। তিনি ন্যাকা হেসে খন্দকার মিয়ার পাশে বসে যান। দুজনের চোখাচোখি হয়। সারোয়ার জিজ্ঞেস করে।
“আপনিই কী চেয়ারম্যান সাহেবের ভাই!”
“হো হো আমিই তো।”
খন্দকার মিয়াও মাথা নাড়লেন। সারোয়ার আর বাড়তি কথা জিজ্ঞেস করল না। দুপুরের খাবার খেয়ে হল রুমে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো তারা। তাদের জন্য দুজোড়া শীতল পাটি বিছিয়ে দিলেন খন্দকার মিয়ার স্ত্রী।
সারোয়ার অলোক দৃষ্টিতে তার হবু বেগম সাহেবার দিকে তাকিয়ে আছে। শেহরীনা আজ সাদা-নীল রঙের ফ্রক পরেছে। দেখে আবশ্যিক এক দশম না হয় একাদশ শ্রেণীর মেয়ে মনে হচ্ছে। ইপশিতা নিজের পছন্দ মত স্বাভাবিক লং টপস আর জিন্স পরেছে। তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মনোবাসনা প্রখর করছে ফারদিন। দম্পতির মত জোড়া হয়ে বসে আছে তারা। হঠাৎ হল রুমে খন্দকার মিয়া এসে তাদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পা সটান করে নিলেন।
“তৈ এখন কথা হইল। কেস লড়তে হইব দুটা। এক আমার আরেক আমার ভাইয়ার। ভাইয়ার জমিতে দখলদারিত্ব করতে চাইছে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র খুবই লোভী মানুষ। আমার ভাইয়ার জমি বাঁচাওন লাগব আপনাগো। আর আমার লড়াইয়ে হইল আমার বিয়াত্তা মাইয়া বলে এক পোলার লগে ভাগতে চাইছিল এমন মিথ্যে অপবাদ দিয়া আমার মাইয়ারে মা’র’ধর গড়ে থাহে ঐ মাইয়ার শ্বশুরবাড়ির লোক। এহন আমার পক্ষে দুজন আমার ভাইয়ের পক্ষে দুজন লড়তে হইব। আপনেরা ভাইবা দেহেন রাজি কি-না!”
সারোয়ার গার্ডিয়ান হিসেবে এসেছে তাই তার কোনো ভ্যারিয়েশন পড়বে না থিসিস এ। বিধেয় জাফরান আর শেহরীনা মিলে প্রথম টিম হলো। ফারদিন আর ইপশিতা মিলে দ্বিতীয় টিম হলো। তারা তাদের সিলেকশন জানিয়ে দেয়। সারোয়ার নিশ্চুপ। মনে এক আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তার। ভদ্রলোকের দুজনকে তার ষষ্ঠইন্দ্রিয় দ্বারা কু’প্রতাপ সমর্থন করছে। তাদের বলা কথায় কেনো যেনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না সে। তার মনে হচ্ছে কোথাও কোনো গণ্ডগোল আছে নিশ্চয়! যা খালি চোখে প্রতীয়মান হচ্ছে না।
“তৈ আপনেরা আহোন আমার লগে।”
সারোয়ার এর ধ্যান ভাঙ্গল। সে তৎক্ষণাৎ শেহরীনার হাত ধরে। খন্দকার মিয়া দেখেও অদেখা করেন। তিনি কথাটা ফারদিন আর ইপশিতার উদ্দেশ্যে বলেন। তারা সম্মতি নিয়ে উঠে পড়ে। মোকতাব মিয়া অপেক্ষা করছেন। সারোয়ার শেহরীনাকে এককোণে টেনে বলে,
“শেহরীনা আমার মনে হচ্ছে আমাদের যাওয়া উচিৎ।”
“মানে হঠাৎ এমন কেনো বলছেন!”
“এদের হাবভাব আমার পছন্দ হচ্ছে না।”
“আপনার কথা হলে হবে! এগুলো আমার থিসিসের জন্য লাগছে বলেই আসা হলো। আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা কাজ শেষে ফিরে আসব। আপনি অপেক্ষা করবেন।”
শেহরীনা তাড়াহুড়ো করে চলে গেল। সারোয়ার দ্বিরুক্ত করার সুযোগ পেল না। মোকতাব মিয়া স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে জাফরান আর শেহরীনা কে নিয়ে যায়। তবে সারোয়ার ছেলেটাকে আড়ালে পরখ করতে ভুলেননি তিনি। একলা সারোয়ার বসে রইল। তার ভেতর ভেতর অস্থির লাগছে খুব। কু ডাকছে মনে। তার ভাবনার ছেদ ঘটল খন্দকার মিয়ার স্ত্রীর আগমনে। তিনি এসে একটা জুস দেন। জুস হাতে নিয়ে শোকরিয়া জানায় সারোয়ার। গরম মৌসুমে ঠান্ডা জুস পেয়ে না খেয়ে থাকেনি সে। একঢকে পুরো গ্লাস শেষ করে রাখল। খন্দকার মিয়ার স্ত্রী ফিরে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে সারোয়ার এর দিকে তাকান। মূলত তার নজর জুসের দিকে। ছেলেটা জুস খাচ্ছে কি-না তার উপর নজরদারি রাখছেন। সারোয়ার মাথা হেলিয়ে চোখ বুঁজে।
লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কিঞ্চিৎ মুহূর্ত অতিবাহিত হওয়ার পর সারোয়ার চোখে ঝাপসা ঝাপসা দেখে। চোখ কচলে নেয় কিন্তু লাভ হয় না। তার চোখে অজস্র ঘুম হানা দিচ্ছে। চোখের উপর হাত রেখে জেগে থাকার প্রচেষ্টা করে। তবে ঘুমকে দমিয়ে রাখতে না পেরে টেবিলে ‘হেড ডাউন’ করেই ঘুমের জগতে হারিয়ে যায়। খন্দকার মিয়া আড়াল থেকে দৃষ্টিপাত করে ছিলেন। সারোয়ার ঘুমিয়ে পড়তেই তিনি বাঁকা হেসে বেরিয়ে এলেন। তিনি তার দ্বিতীয় কাজও সম্পন্ন করে ফেলছেন।
ফারদিন আর ইপশিতাকেও ঘুমের ঔষধ দিয়ে রুমে বন্দি করে ফেলেছেল ইতিমধ্যে। সারোয়ার ও ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। মোকতাব মিয়া কী তার কাজ করেছে তা জানার প্রেক্ষিতে তিনি ফোন দেন।
মোকতাব মিয়া শেহরীনাকে জুস দিলেন। জাফরান খেয়েছে। শেহরীনা গ্লাস নিয়ে মুখে দিতেই তার কাছে অদ্ভুত এক স্বাদ মুখে লাগল। সে গ্লাসটি ফিরিয়ে দিয়ে বিতৃষ্ণ জোড়ানো কণ্ঠে বলে,
“আঙ্কেল জুসটা ভালো লাগছে না। এত খাবার খেলাম পেট ভরে গিয়েছে।”
মোকতাব মিয়া মনে মনে কুটিল হাসলেন।
‘মেয়ে তুই না খাইলেও কী,খাইলেও কী। ভোগ মেটাতে হবে তো আমাদের। তুই শুধু চিৎ’কার করবি মা***।’
মনের কথা মনে চেপে তিনি জুসের গ্লাস নিয়ে রেখে দেন। এর মাঝে ফোনের শব্দ পেয়ে তিনি ফোন উঠিয়ে অন্যদিকে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলেন,
“চইলা আই মাইয়ার তেজ আছে এরে ধরতে দু’জন লাগবো।”
খন্দকার মিয়া পূর্বেই গাড়ি ঠিক করে রেখেছেন। শেহরীনা কেসের উপর স্টাডি করছে। কিন্তু কেসের উপযুক্ত প্রমাণ পেয়ে সে কিছুটা অবাক। মনে মনে ভাবে,
“এ কী প্রমাণ থেকেও কেনো এরা বলছেন প্রমাণ নেই। এগুলো প্রদর্শন করলেই তারা কেস জিতে যাবে। তবে কেনো ছোট বিষয়ে আমাদের এত দূরে আসতে বললেন স্যার!”
সে ফোন বের করে স্যার কে কল দেবে ভাবল। তখনি কেউ তার মুখে রুমাল চেপে ধরে কেউ। শেহরীনার আতঙ্কে ‘উউউউউউমম উউ’ শব্দ করে উঠে। যার বিন্দুমাত্র রেশ জাফরান এর কান অব্দি পৌঁছায়নি। সে জুস খাওয়ার পরই কেসের রিপোর্ট ঘাঁটার মুহূর্তে ঘুমিয়ে পড়ে। লোকটার হাত ছড়ানোর চেষ্টা করতেই শেহরীনার চোখজোড়া বন্ধ হয়ে আসে। ঝাঁপসা ঝাঁপসা চোখে দুজন ব্যক্তির অবয়ব দেখল। কিন্তু বুঝে উঠতে পারেনি কে তারা!
গভীর এক শ্বাস টেনে নেতিয়ে পড়ল শেহরীনা। হাতের গ্লাভস পরিহিত অবস্থায় মোকতাব মিয়া আর খন্দকার মিয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে বিশ্রী হাসি দিলেন। তারা দুজন মিলে শেহরীনাকে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। শাঁ শাঁ গাড়ির শব্দ করে খন্দকার মিয়া তার বাড়ি হতে অনেকটা দূরে একটা ঘনজঙ্গলে পাহাড়ের কাছাকাছি পুড়ো ভাঙ্গা বাড়িতে এসে গাড়ি থামান। জায়গা উচ্চ বহুল হওয়ায় সহজে শহর অথবা গ্রামে যাওয়া যাবে না। গাড়িতে করে আসতেই প্রায় দুঘণ্টা লেগে গেল। হেঁটে যেতে গেলে চার পাঁচ ঘণ্টা লাগবেই। জায়গাটি চেয়ারম্যানের গোপনস্থল। এই জায়গাটিতে এসে চোখের আড়ালে অসৎরূপী কাণ্ড ঘটান তিনি। দুয়েক নারীর কুমারিত্ব লুটপাট করে জ্যান্ত কবর অব্দি দিয়েছেন। শেহরীনা কে ধরে শক্তপোক্ত এক বিছানার উপর ফেলে দেয় তারা। মোকতাব মিয়া আর খন্দকার মিয়া হাতে হাত মিলিয়ে নেন।
“এইবার হইব ঐ নাছিরের নাশ। খুব তো আমারে আঘাত কইরা কথা কইছিল। তার অহং চুটিয়ে দিমু।”
“হ ঐ নাছিরের দাম আমার থেইকা বেশি। এহনো আমার গেরামের লোক তারে মান্য করে সহায়তা চাই। আর আমারে কই আমি কিয়ের চেয়ারম্যান, কোনো মুরোদ নাই আমার। আজ এই মাইয়ার শরীর দিয়া নাছিরের অহং ভাঙ্গমু।”
“তার আগে আমাগো কাম আছে। এই মাইয়ার কাপড় খুইলা দড়ি দিয়া বাঁধমু নেহ। তহন মজা হইব। দড়ি দিয়া বাঁধা কাম সারমু।”
“কিন্তু এরে বাঁচতে দিমু না। মাইরা নদীতে ফালাই দিমু। কি কস!”
“হক কথা। এরে বাঁচা রাখলে আমাগো মরণ হইতে পারে।”
“হুন না ভাই খালি দড়ি লাগামু! মাইয়ার বুক দেখস না। ডাল ভাঙ্গি আনিস। মে’রে মে’রে লাল করতে হইব তইলে আরো মজা পাওন যাবো।”
“এহন না রাতে আগে আমাগো বাড়িত যাওন লাগবে। তারা জাগি যাবে। আমরা খালি তিনটা ঘণ্টা ঘুমের ঔষধ দিছি।”
“হ হ চল রাতে মদের বোতল নিয়া আসমু নেহ। এহন মাইয়ারে খালি পিষ্টন করমু তুই কি কস! মজা পাবি চল। আগে দড়ি দিয়া বাঁধি।”
শেহরীনাকে বিবস্ত্র করল না। তবে দড়ি হাতে নিয়ে মোকতাব মিয়া শেহরীনার হাতজোড়া বিছানায় বেঁধে দেন। দড়ির আঘাতে শেহরীনার হুঁশ ফিরতেই শুরু করে। তবে ক্লোরোফর্মের ঘ্রাণ বেশি প্রভাব ফেলার কারণে তার হুঁশ পুরোপুরি ফিরেনি। মেয়েকে নেতিয়ে থাকতে দেখে খন্দকার মিয়া শেহরীনার পরিহিত ফ্রকের উপর ফোলা বুকের উপর হাত রাখেন। অচেনা স্পর্শ পেয়ে শরীর রি রি করে উঠল শেহরীনার। মোকতাব মিয়া শেহরীনার পেছন দিকে হাত গলিয়ে দেন। শেহরীনার হুঁশ ফিরে এলো। দুজনের মধ্যে কেউই ঘাবড়ে যায়নি। বরং উৎফুল্ল হয়ে যান তারা। শেহরীনা চিৎকার করে উঠে। কিন্তু তাদের মনে দয়ামায়া থাকে না।
“প্লিজ আপনারা আমার বাবার বয়সী। প্লিজ ছেড়ে দেন আমাকে।”
“বাবার বয়সী হলেও বাবা তো আর না। তোর বাপের লগে শত্রুতামি লুটপাট করার অমূল্য রত্ন হইলি তুই। তোরে এমনিতে তো ভোগ না কইরা যেতে দিমু না।”
“ভাই চল আগে বাড়িত গিয়ে হেতির বন্ধুদের সামাল দেয়। তহন যাইয়া রাতে মজা করমু।”
চলবে……
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)