প্রিয়অপ্রিয়ের সংসার পর্ব-৬২ এবং শেষ পর্ব

0
32

#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#অন্তিম_পর্ব (তুমি-আমি-আরেকবার🔥)

“সারোয়ার বাবা এখন তোমার হাতেই সিদ্ধান্ত। আজকে একটা ফয়সালা হয়েই যাক। হয় তালাক হোক এই মেয়ের নাহয় সংসার। তুমি এই নোংরা চ’রিত্রহীন মেয়েটা কে বউ হিসেবে রাখতে চাও না বের করে দিতে চাও। এর জায়গা এ বাড়িতে থাকার অর্থ হলো বাড়িটা নরক হয়ে যাওয়া।”

শেহরীনা বিকৃত মনে কাঁদছে। তার পরণের জামা এলোমেলো। পাশেই একটা নেশাগ্রস্ত যুবক টলছে। সারোয়ার অবিশ্বাস্য নজরে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। কারো কথাও সে শুনছে না। সচল পায়ে হেঁটে স্ত্রীর দিকে এগিয়ে গেল। যা দেখে তার চাচী মিশকিতা যেনো আগুনের মত জ্বলে উঠলেন। তৎক্ষণাৎ দুজনের মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে সারোয়ার কে আঁকড়ে কেঁদে উঠেন।

“আমার মেয়েটা তোমাকে কত পছন্দ করতো। আর তুমি তাকে ফেলে এই নোংরা মেয়েকে নিয়ে দীর্ঘ তিনটে বছর সংসার ও সাজিয়েছো। কী লাভ হলো হুম! সংসারে খুশি নিয়ে কোনো সন্তান আদৌ এসেছে কী!”

সারোয়ার এর কান জ্বালাপালা করে উঠল। তিনি নিজের চাচীর দিকে সুপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“রাসূল(সা.) এর আর্দশ হলো স্ত্রীর দোষ যাচাই করে তবেই শাস্তি প্রদান করা অন্যথায় গাঁয়ে হাত তোলা গুনাহ।”

মিসেস মিশকিতা তীব্র ক্ষোভে সরে দাঁড়ান। ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলেন,

বাবা তুমি আবেগ দিয়ে ভাবছো‌। একটু বিবেক দিয়ে ভেবে দেখো। দেখবে সত্য এটাই মেয়েটা নোংরামি করেছে।”

“নাআআ আমাকে বিশ্বাস করুন। আমি কিছু জানি না। আমার সাথে এ লোকটা কেমনে আসল কিছুই জানি না কী সত্যি!”

শেহরীনা কান্নার কারণে কথাও বলতে পারছে না। সারোয়ার তার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে টেনে রুমে নিয়ে গেল। যা দেখে হতভম্ব হয়ে যান মিসেস মিশকিতা। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটাও যেনো ফিলে চমকে গেল। সারোয়ার শেহরীনা কে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দিলো। মিসেস মিশকিতা রাগান্বিত হয়ে যুবকটা কে শাঁসাল‌।

“কোনো গড়বড় করে থাকলে তোকে একটাকাও দেবো না বলে দিলাম।”

“আরে মেম সাব টাকার জন্যেই তো ঐ অবলা মেয়েরে ধরছি। কিন্তু ঐ মেয়েই দেখুন না গাঁয়ে মুখে খামচি মেরে অবস্থা কাহিল করে দিলো।”

“এই চুপ এটা আমার বোনের বাড়ি। চিল্লিয়ে বললে তারা শুনে ফেলবে‌।”

“শোনার বাকি রেখেছেন কিছু আপনি চাচী!”

চমকে যায় দুজনে।‌ তারা এত জলদি ধরা খেয়ে যাবেন ভাবতে পারেননি। মিসেস মিশকিতা আমতা আমতা করতে চাইলে বোনের কণ্ঠস্বর শুনে থমকে যান। জাহানারা পুষ্প রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছেন মিশকিতার দিকে। সম্পর্কে বোনই লাগে তার। সেই ক্ষেত্রে তার বোন যে পিঠপিছে তার ছেলের সংসার ভাঙ্গার পরিকল্পনা করে রেখেছেন যা কল্পনায়ও আনেননি তিনি। মিসেস মিশকিতা বুঝেছেন তিনি পথ হারিয়ে ফেলেছেন। বিধেয় উত্তপ্ত হয়ে ফোঁসছেন। জাহানারা পুষ্প এসে মিশকিতার হাত টেনে শক্ত কণ্ঠে ধমকে উঠেন।

“তোকে আমি নিজের বোন ভেবে এসেছি ছোট থেকে। আর তুই আমার বোন হয়ে আমার ছেলে কে বেঘর করতে চাইছিস কেনো করছিস তেমনটা হুম!”

“চাচীমা আপনাকে আমি মায়ের মতই দেখি। আপনি আমার বিদেশে যাবার সুযোগ ধরে আমার বউকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)দিনকে দিন এই বদমাইশ এর সাথে লেলিয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই কু’ত্তার বাচ্চা কখন থেকে চলছে এসব বল!”

যুবকটাকে ধরে সারোয়ার এলোথেরাপি মা’রতে লাগল। বেচারার নাকমুখ ফেটে র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে।‌ কেউ থামাচ্ছে না। মিসেস মিশকিতা কে নিরব দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে যুবকটার মাথা গরম হয়ে গেল। সারোয়ার এর মাইর থেকে বাঁচতে তার পায়ের উপর পড়ে গেল। পা জোড়া ধরে কান্না করে বলতে লাগে।

“সাহেব মাফ কইরা দেন। ম্যাম কে বদনাম করার জন্য এই বাড়ি থেকে বের করার জন্য টাকা দিছিল ঐ মহিলা। ম্যাম নাকি তার মেয়েকে খাইয়া ফেলছে তাই। আমার কোনো দোষ নাই সাহেব। ঘরে বউ-বাচ্চাদের জন্য টাকার লোভ সামলাতে পারি নাই।”

সারোয়ার তাকে ছেড়ে মিসেস মিশকিতার দিকে এগিয়ে গেল। তিনি নির্লিপ্ত যেনো এমন কাজ করতে তার মনে বাঁধেনি। সারোয়ার তার সামনে হাতজোড় করে বিনতির কণ্ঠে বলে,

“চাচীমা আপনাকে আমি অনেক সম্মান করি। আজকের এ কাজের জন্য সেই সম্মানটুকু ও শেষ হয়ে গেল। মন থেকে মাফ করে দিন আমাদের। আপনার মেয়ে মারা যাওয়ার পেছনে আমি অথবা আমার বউ কোনো ভাবেও সামিল নয়। সেই নিজেই নিজের মরণকে আগলে নিয়ে ছিল। আপনি নিজ চোখে দেখেছেন আমাদের কাতর হয়ে, শোক পেতে। আমরা জা’নোয়ার অথবা অমানুষ নয় যে কারো মৃত্যুতে খুশি বণ্টন করব। দয়া করে আপনার মেয়ের মরণের দায়ভার আমাদের কে দেবেন না।”

শেহরীনা মাথা নিচু করে আছে। তার উপর যে তার চাচী শ্বাশুড়ি এতটা বিকৃত মনোভাবনা পোষণ করে রেখেছেন। জানতে পেরে তার নিজের হৃদয় বিখণ্ডিত হয়ে পড়েছে। দৌড়ে রুমে চলে গেল সে। সারোয়ার দেখে তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজের মায়ের দিকে তাকাল। মোঃ আবু সিদ্দিক ম্লান চোখে তাকিয়ে নিজ রুমে ফিরে যান। মিসেস মিশকিতার স্বামী স্ত্রীর কাণ্ডে রেগে রুমে চলে যান। মিসেস মিশকিতারও স্বামীর পিছু পিছু যান। জাহানারা পুষ্প স্বামীর সঙ্গে বাহির থেকে ক্লান্ত হয়ে আসায় ম্লান কণ্ঠে সারোয়ার কে বলে,

“বেটা তুই এই ছেলেকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বিদায় করে বউমার কাছে যাহ্। তার কাছে সবার চেয়েও বেশি এখন তোকে প্রয়োজন।”

সারোয়ার সম্মতি দিয়ে ছেলেটার কলার ধরে দাঁড় করাল। তার হাতে এক হাজার টাকার চকচকে তিনটে নোট ধরিয়ে বলে,

“অন্যায় করেছিস তাও রেহাই দিচ্ছি তোর বউ বাচ্চাদের কথা ভেবে। এরপর যদি কখনো চোখের সামনে নজরে আছিস সোজা হাজত বাস করবি।”

হ্যাংলা পাতলা যুবকটি ভয়ে টাকাগুলো নিয়ে বেরিয়ে গেল। সারোয়ার নির্মল পায়ে রুমে গিয়ে দেখল। বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে তার কৃষ্ণ বউ। ইশ! কী নিদারুণ দৃশ্য এটি! সারোয়ার দরজার সামনে থেকে সরে রান্নাঘরে গেল। কাজের বুয়া খাবারগুলো ঢেকে রাখছে। বাড়ির পরিবেশ উষ্ণ হওয়ায় বেচারী খাবারের কথা কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারল না ভয়-ভীতির কারণে। হঠাৎ বড় স্যার কে রান্নাঘরে দেখে তিনি তড়িঘড়ি মাথায় ঘোমটা টেনে বলেন,

“সাহেব কিছু লাগব আপনার!”

“খালা খাবারে যা আছে একটু বাটিতে সাজিয়ে দাও। সবাই ঘুম থেকে উঠে খাবে।”

কাজের বুয়া তার বড় স্যারের কথামত বাটি সাজিয়ে দিলো। সারোয়ার রুমে এসে দরজা আটকে শেহরীনার পাশ ঘেঁষে বলে,

“খুব খিদে পেয়েছে। কেউ যদি আমাকে খাইয়ে দেয় তাহলে খুব উপকৃত হবে। এখন ম্যাডাম ফ্রি কি-না সেটা একমাত্র মিসেস এডভোকেট শেহরীনা সিদ্দিক বলতে পারবেন।”

শেহরীনা গমগমে মুখ করে উঠে বসে তাকাল। তার ফোলা চোখ খানা দেখে সারোয়ার এর ভীষণ কষ্ট লাগল। তার মুখে ভাতের লোকমা খাইয়ে দিতে দিতে বলে,

“তুমি নিজে এখন এডভোকেট এর জন্য পড়াশুনা করছো। তোমার হওয়া উচিৎ সন্দেহপ্রবণ এবং চাতুর। সেই তুমি ফ্যাঁস ফ্যাঁস করে কেঁদে আমার ইজ্জত ডুবালে হয়!”

“আমার মাথায় তখন সংসার বাঁচানোটা মূল হয়ে গেছিল। তাই…।”

“তাই তুমি গবেট সাংসারিক মহিলাদের মত ফ্যাঁস ফ্যাঁস করে কাঁদছিলে! এ কেমন বেহুদা কথা বললে গো কৃষ্ণ বউ। তাহলে তো আমার নামে কোনো নালিশ আসলে আমারো গলা ফাটিয়ে কান্না করা দরকার।”

“ধ্যাঁত মশকারা মারছেন কেনো! দেখছেন আমি কেঁদেছি তাও।”

“তাও কী গবেট একটা! নাও নিজে খেয়ে আমায় খাইয়ে দাও। এমনিতে তোমার কান্না দেখে আমার কাছে পাওয়ার লোভ বেড়েছে।”

শেহরীনার মুখে হাসি ফুটল। সে ভাতের বাটি নিয়ে তরকারি মেখে স্বামীর মুখে লোকমা তুলে দিলো। আকস্মিক তার চাচী শ্বাশুড়ির ‘সন্তান দিতে না পারার’ কথাটা যেনো মস্তিষ্কে হরবড়ে চলে আসল। ম্লান চাহনি নিয়ে সারোয়ার কে খাইয়ে দিতে দিতে বলে,

“আমি যদি আপনা কে বাবা হওয়ার সুখ দিতে না পারি…।”

“চুপ আরেকটা ফালতু কথা বলবে। সোজা কোলে নিয়ে জানালার বাহিরে নালায় ছুঁড়ে মা’রব। মেজাজটা হাই ভোল্টেজ এর মত গরম করে দিও না প্লিজ!”

শেহরীনার মুখখানা এটুকুন হয়ে গেল। খাওয়ানো শেষে দুজনে হাত-মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়ল। শেহরীনা কান্নার কারণে অতিশয় ঘুমিয়ে যায়। সারোয়ার তার চুলে বিলি কাটছে। দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের তিনটা বছর পার হয়ে গেল। ‘হ্যাঁ তার কৃষ্ণবউ এখনো গর্ভবতী হয়নি। নানান কটুক্তি কথা সহ্য করেও মেয়েটা যে আমার সংসার এই অনেক! একজন স্বামী হিসেবে আমার প্রাপ্য সুখ শেহরীনা আমায় দিচ্ছে। সেখানে সন্তান-সন্ততি দেওয়া হলো রবের হুকুম!’ সারোয়ার তার আপন ভাবনায় ও একমত। ভেবে নিলো একবার শেহরীনা কে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবে। ভাবনায় অটুট থেকে সেও চোখ বুজল।

___
কানাডায় এখন দুপুর ১:৩০ বাজছে। রুফিয়া সাইমুম মুখে আঁচল গুঁজে কাঁদছেন। ইদরিব সাবেক ফোনের মধ্যেই চিৎকার চেঁচামেচি করছেন। এ যেনো বিরাট অশুভ ঘটনার দৃশ্য। রুমে তনুদি অবহেলিত বিধ্বস্ত হয়ে হাঁটুর মধ্যে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদছে। তার জীবনটা বুঝি নাশ হয়ে গেল। কবে, কখন, কী হলো কিছুই তার মস্তিষ্কে নতুবা স্মরণেই নেই। কায়েসাম বাড়িতে নেই। কোথায় বেরিয়েছে কেউ জানে না!
রুফিয়া সাইমুম কান্নারত চেহারা নিয়ে ছেলের রুমে আসলেন। তনুদি কে দেখতে কোনো নির্যাতিত নিপীড়িত নারীর থেকে কম লাগছে না। এই সরল মুখখানার এ কী অবস্থা! তার অগোচরে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটবে আগে জানতে পারলে কখনোই তিনি মেয়েটা কে একাকী বাড়িতে ফেলে হাসপাতালে যেতেন না‌।
‘মা’। সরল ডাক তনুদির কণ্ঠস্বর হতে বেরিয়ে এলো। রুফিয়া সাইমুম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
‘মা-রে তুই চিন্তা করিস না-রে। দেখবি দেশে তোর বাবা আর আমার শ্বশুর মিলে ঐ ফরিদের বাচ্চা কে ফাঁসি দেওয়াবে। হা’রা’মজাদার রস খসে যাচ্ছিল আমার বাড়ির বউয়ের শরীর ভোগ করা! তাকে আমরা ছাড়ব না বউমা। তুমি একটুও এসব ভেবো না। আমরা কেউ কিছু মনে করছি না‌। তুমি আমাদের কাছে পবিত্র নারী।’

তনুদি চট করে রুফিয়া সাইমুম এর কোমর জড়িয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। তার সাথে সেই ছোট ছেলেটি ধ’র্ষণ এর মত কাণ্ড ঘটাল। এ যেনো অবিশ্বাস্য ঘটনা! ফরিদ এর বয়স তখন কতই বা ছিল! সতেরো কী আঠারো। ওত বয়সী ছেলেটার ইচ্ছে হলো আর ভোগ করে নিজের খিদে অব্দি মিটিয়ে নিলো। রুফিয়া সাইমুম আর ভাবতে পারছেন না। ফরিদ কে কত বিশ্বাস করেই না সেদিন বাড়ি দেখেশুনে রাখার জন্য রেখে গিয়ে ছিলেন। সেই ছেলেটা যে তাদের বাড়ির ইজ্জতে হাত দেবে কে জানতো! ইদরিব সাবেক রেগে আছেন। তিনি গলা উঁচিয়ে স্ত্রী কে ডাক শুধান। রুফিয়া সাইমুম ভয় পেলেন। সব দোষ তার। তনুদি ও ভয়ে কেঁপে উঠেছে। তিনি তাকে শান্ত হতে বলেন,’বউমা রুম থেকে বের হবে না একদম। কায়েসাম আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
কথার মারপ্যাঁচ না করেই তিনি ছুটে স্বামীর কাছে যান‌।
ইদরিব সাবেক পায়চারী করছেন। বয়স হয়েছে তার। প্রফেসর এবং ট্রাস্টি বোর্ড এর অধ্যক্ষ পদ থেকে বিরতি নিয়েছেন একবছর হলো। ছেলেই এখন সেই পদের উত্তরাধিকারী। কানাডার নামকরা ভার্সিটিতে তার ছেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েছে এই যেনো সুনামধন্যের। কিন্তু আজ হঠাৎ এমন খবর শুনলেন। যার ফলে তিনি হিতাহিত বিবেকহীন হয়ে পড়েছেন। ফোনের মধ্যে তখনো অনবরত কল আসছে। তিনি ধরছেন না‌। স্ত্রীর কাছ থেকে শোনার পরই নিশ্চিন্ত হবেন তিনি!
রুফিয়া সাইমুম ভয়ে ভয়ে দরজা পেরিয়ে ঢুকলেন।
‘তুমি আমায় না জানিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলে বুঝলাম! কিন্তু কোন বিবেকে এক ছেলের কাছে আমাদের বাড়ির ইজ্জত রেখে গেলে হুম! এত বড় মূর্খের পরিচয় কেমনে দিলে তুমি!’

রুফিয়া সাইমুম নিশ্চুপ কাঁদতে লাগলেন। তার দোষে ঘটেছে এটাই সবাই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। তিনি সহ্য করতে পারছেন না। ইদরিব সাবেক স্ত্রীর কান্না দেখে নিরব হয়ে বসে পড়লেন। ফোনের বারবার শব্দে বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করলেন।

“স্যার আমি পুলিশ অফিসার জিসান থানা থেকে বলছি। ফরিদ কে ধরতে পেরেছি আমরা। সেই এখন সব সত্য কথা বলবে। এই কু’ত্তার বাচ্চা বল কী করেছিস, কেমনে করেছিস!”

কষে এক চ’ড় বসিয়ে দিলো অফিসার জিসান। ফরিদ কান্না করছে। ইতিমধ্যে তার উপর মাই’র নাম ঝড় বয়ে দিয়েছে পুলিশগণ। ফরিদ হাত জোড় করে সব সত্য শিকার করতে লাগল।
‘সাহেব আমারে মাফ কইরা দেন। তনুদি আফার উপর বহুত আগ থেইকা নজর আছিল। আফা-রে আমি পছন্দ করতাম। তার লগে বিয়ে রইচাতে চাইতাম। তার আগেই আফা কায়েসাম ভাইয়া বিয়ে কইরা ফেলাইছে। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ জম্মাছিল। তহন বাড়িতে থেইকা আফার কাপড় বদলানোর সময়, রান্নাঘরে কাম গড়বার সময়, আফার কিছু লাগব কি-না জানতে দৌড়ে রুমে ছুটে যাইতাম। আফা ভাবত আইমি ভাইয়ের দায়িত্বে করছি। কিন্তু আইমি আফারে ভালোবাসতাম। ঐদিন ম্যামসাব হাসপাতালে যাইবো শুইনা প্রথমে পাত্তা দি নাই। পরে যহন ম্যামসাব কইছেন তিন-চার ঘণ্টা সময় লাগিব। তহন মাথায় আফারে একলা ভোগ গড়িবার মোক্ষম সুযোগ মাথায় আসিল। ম্যামসাব চলে গেলে আইমি প্রথমে ঘুমের ট্যাবলেট দুটো দুধে মিশিয়ে আফার কাছে যায়। আফা কে কাঁচা ঘুম থেকে জাইগা দিয়ে বলি, আফা ম্যামসাব দুধ খাইয়ে ঘুমাইতে কইছেন।’ আমার কথা আফা ওতো গুরুত্ব না দিয়া খাইয়ে ফেলছে। ব্যস আমি ঠিক ত্রিশ মিনিট পর রুমে যাইয়া দেখি আপা গভীর ঘুমে অচেতন হইয়া গেছে। আমিও তহন আআআফারে উ’ল’ঙ্গ কইরা মনের ঝাঁঝ মিটাইয়া নেই। কিন্তু বাচ্চা হওনের ভুল হতে দিলাম না। প্রস্তুতি নিয়া করছি তাই। পরে আফা-রে পরিষ্কার করে কাপড় পইড়া দিয়ে আইমি ঘরত মধ্যে চলে আছিলাম‌। এ ঘটনার দুঘণ্টা পরই ম্যামসাব ফেরত আসেন। কেউ কিছু বুঝতে পারিল না। আফাও ঘুম থেইকা জাইগা নিজে কে নিয়ে ভাবতো। কিন্তু কায়েসাম ভাইয়ার কথা ভেবে হেসে দিতেন। হয়ত আফার মনে হতো আফা কায়েসাম ভাই-রে কল্পনা করতাছেন। এই সুযোগ দেইখা তিন-চার বার আফার লগে বিছানায় গেছিলাম। আফা পরপর পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা কে সত্যি ধরে রুমের দরজা শক্ত করে আটকাইয়া দিতো। তাই আর সুযোগ না পাইয়া শেষে কায়েসাম ভাইয়ারা বিদেশ চইলা গেল।”

ফরিদ আর কিছু বলতে পারল না। তার নেশাখোর চেহারায় এলোথেরাপি মাই’র লাগায় তনুদির বাবা।‌ তিনি এতক্ষণ যাবত দরজার মধ্যে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন। কথা শেষ হতেই পুলিশ অফিসারদের তোয়াক্কা না করেই মেয়ের সাথে হওয়া ঘটনার শোধ বোধ করতে লাগলেন। ফরিদ আর সহ্য করতে না পেরে হুঁশ হারিয়ে ফেলল। অচেতন আসামি কে তৎক্ষণাৎ জেলবন্দি করে তনুদির বাবা কে ধরে পানি পান করান অফিসার জিসান। সে আশ্বাস দিলো। ‘আপনার মেয়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের ফয়সালা হবে। তাকে ফাঁসি দেওয়া হোক সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা।’

ধপ করে জোরালো শব্দ হলো। রুফিয়া সাইমুম এবং ইদরিব সাবেক চমকে পেছন তাকান। তাদের রুমের বাহিরে তনুদি কে অবচেতন হতে দেখেই তারা ঘাবড়ে তার কাছে যান। তনুদির ব্যাপারে জানাতে ইদরিব সাবেক কায়েসাম কে ফোন দেন। কিন্তু রিসিভ না হওয়ায় তারা অপেক্ষা করলেন না। চটজলদি তনুদি কে ধরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন।

ঘণ্টাখানেক পর তনুদির জ্ঞান ফেরে। চোখের সামনে আবছায়া বেশে পুরুষেলী অবয়ব নজরে আসল তার। কায়েসাম তার পাশে মাথা ঠেকিয়ে আছে। তনুদির চোখ গড়িয়ে জল পড়ল। সে অপবিত্র এটা ভাবতেই তার শরীর ঘিনঘিন করছে। হাতজোড়া নাড়তে গেলেই চট করে কায়েসাম চিবুক তুলে তাকায়। তার হাতের মুঠোয় বন্দি তার হাত জোড়া। তনুদির সংকোচবোধ দেখে কায়েসাম সেই হাতজোড়া ছাড়ল না। বরং মুচকি হেসে বলে,’শুভ সকাল আমার হবু বাবুর আম্মু কে।’
থমকে গেল তনুদি। কী শুনল সে! কায়েসাম তার হাতের আলতো স্পর্শ দিলো তনুদির কামিজ এর উপর থেকে। স্ত্রীর কপালে চুম্বন এঁকে বলে,
‘অশুভ ভাবনা এবং চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। যদি লেইম এক্সকিউজ দিতে চাও। তাহলে চ’ড়ে চ’ড়ে তোমার এই কোমল গালটা লাল করে দেবো। ইউ নো মি ভেরি মাচ। আই ডোন্ট লাইক লেইম এক্সকিউসেস।’

তনুদি তার দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা কত ভালো! তার অতীত জেনেও তাকে ভালোবাসতে পিছপা হচ্ছে না। সে হুট করেই কায়েসাম কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল। ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে সে। স্ত্রীদের কান্না বুঝি অনিয়মিত এবং অপরিকল্পিত। যখন তখন গড়িয়ে পড়তে সক্ষম তারা!
তনুদির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে। তনুদি কাঁপা কণ্ঠে বিলাপ বকে গেল। সে শুনল কী শুনল না বোঝা গেল না। তবে অহেতুক কথা তনুদির শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিধেয় সে উন্নত পদ্ধতি অবলম্বন করল। ধপ করে নিভে গেল তনুদির বচনধারা। তার অধরজোড়ায় তার স্বামীর অধর। এ দৃশ্যের জন্য সে সর্বদা ব্যাকুল থাকে। কায়েসাম এর চুলের ভাঁজে হাত গুলিয়ে তনুদিও সাড়া দেয়। কায়েসাম বুঝল তার স্ত্রী শান্ত হয়েছে। ফলে অধর ছেড়ে নেশাক্ত গলায় বলে,

“প্লিজ ডোন্ট ক্রাই মাই কুইন। ইটস হার্টস টু মি। আওয়ার বেবি উইল কাম আফটার নাইন মান্থস। সো বি পেশেন্স। তোমার অতীতে যে তোমার সাথে অন্যায় করেছে সে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো একদিন নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সো সেসব ভেবে কেনো আমরা আমাদের ক্ষতি করব হ্যাঁ! আর কখনো নিজেকে ইউজলেস অর ইমপিউর ভাববে না। ইউ আর মাই পিউর ওয়াইফ। আই নো ইউ ভেরি মাচ।”

তনুদি হাসল। তার মনের বোঝা কমল। কায়েসাম তাকে শুইয়ে দিয়ে চুলের মধ্যে বিলি কাটতে লাগল।
দরজার বাহির থেকে ইদরিব সাবেক এ দৃশ্য দেখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়েন। রুফিয়া সাইমুম তৃপ্তির শ্বাস ফেলেন। হঠাৎ ইদরিব সাবেক এর ফোন বেজে উঠল। তিনি ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশে থেকে শুনতে পান।

“স্যার গড়বড় হয়ে গেছে। আসামি ফরিদ জেলবন্দি থাকা অবস্থায় আত্মহত্যা করেছে ঘণ্টাখানেক হলো। এখন থানায় তোড়জোড় রিপোর্টার এসে ভরপুর। জিসান স্যার কোনো মতে সব সামলে আসামি কে দাফন করে দিয়েছেন।”

ইদরিব সাবেক স্তদ্ধ। ফরিদ এর চেহারা তার চোখের সামনে ভেসে উঠল। নিজ হাতে দুঃখী ছেলেকে সহায়তার সমীপে বাড়িতে এনে ছিলেন। আর আজ তার মৃত্যু খবর শুনে দুঃখ পাবেন না খুশি হবেন বুঝতে পারছেন না। পরক্ষণে কেবিনে তার ছেলে-মেয়েদের বউয়ের কথা স্মরণে এলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,
‘আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। হয়ত ফরিদের নিয়তিতে আত্মহত্যাই ছিল একমাত্র বেঁচে যাওয়ার উপায়।’
তিনি ফোন কেটে দিলেন। তারা সামনে ফিরতেই দেখল কায়েসাম নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে। ইদরিব সাবেক আমতার সুরে স্ত্রী কে আঁকড়ে বলেন,
‘আরে তুই বেরিয়েছিস। এখন আমরা যায় কেমন!’
তারা ভেতরে গেলে কায়েসাম এর ঠোঁটের কোণে রহস্যময় এক হাসি ফুটল। সেই হাসির তালে মুখ থেকে বেরুল এক কঠিন বাক্য!
‘ভালোবাসা বড্ড অদ্ভুত শব্দ! যার প্রতি হয়ে যায়, তার প্রতি রয়ে যায়। আর যার প্রতি একবার মায়া জম্মে যায়, তার প্রতি নেশা হয়ে যায়।’

___
একমাস পর….

“মা মা দেখো নিউজপেপারে কী এসেছে!”
জাহানারা পুষ্প সারোয়ার এর পাশে বসে ছিলেন। মিসেস মিশকিতা স্বামীর সাথে চলে গিয়েছেন একমাস হয়ে গেল। মিসেস মিশকিতার স্বামী অবশ্য এসে তাদের কে দেখে যান।
ছেলের হতভম্ব কণ্ঠস্বর শুনে স্বামী-স্ত্রী দুজনে একসাথে বসল। সারোয়ার নিউজপেপার তার বাবার হাতে দিয়ে বলে,

“ছেলেটা কে চিনছো! এই ছেলেটা হলো শেহরীনা কে নিলীমার কথায় অপহরণ করে ছিল।”

শেহরীনা সবার জন্য নাস্তা এনে টেবিলে রাখল। সবার জরুরি তলব দেখে সেও কৌতুহলে দৃষ্টিপাত করে। নিউজপেপার এ ছাপানো ছবিটার দিকে তাকিয়ে অবাককর গলায় বলে,

“আরে এ তো ফরিদ। যে আমি কালো বলে উত্যক্ত করতো এবং আমার সাথে সারোয়ার এর বিয়ে না হওয়া অব্দি। বিয়ে করার জন্য লাফিয়ে ছিল। তবে বিয়ের পর তাকে আর নজরে আসেনি। কিন্তু এর ছবি নিউজপেপারে কেনো!”

সারোয়ার দেখে তৃপ্তি হেসে বলে,’ওহ তাহলে ভালোই হলো মরছে কু’ত্তাটা। একটু আগেও দরদ প্রকাশ পাচ্ছিল তোমার কথা শুনে দরদ উভে গা’লি আসতে চাইছে মুখ দিয়ে। কিন্তু আমি আবার বাবা-মায়ের আর্দশ পুত্র বলে গা’লিগা’লাজ করি না।’
মোঃ আবু সিদ্দিক ছেলের মাথায় চাপড় দিয়ে বলে,’বেয়াদব ছেলে একটু আগেই তুই গা’লি দিয়েছিস।’
‘ওবাবা আপনি বুঝি কান খাড়া করে আমার কথা শুনছিলেন।’
‘তুই আমার থেকে এক ইঞ্চি মাত্র দূরত্ব বজায় বসে আছিস। শুনতে তো অবশ্য পারব।’
‘উহু উহু উহু মুরব্বি মুরব্বি বাবা এসব মুরব্বিদের শুনতে নেই।’
মোঃ আবু সিদ্দিক রেগে ছেলের মায়ের উদ্দেশ্যে বলেন,’এই তোমার ছেলে কী বলছে দেখছো! আমি নাকি মুরব্বি।’
‘শোকর করেন মুরব্বি বলছে বুড়ো ড্রাম তো আর ডাকেনি।’
শেহরীনা ফিক করে হেসে ফেলল। মোঃ আবু সিদ্দিক মুখ ভেটকি দিয়ে বলেন,
‘সব কটা শ’য়’তান এর দল।’

মোঃ আবু সিদ্দিক আরো কথা বলতেন তবে তার ফোন আসায় তিনি ফোনে কথা বলতে লাগলেন। শেহরীনা নিউজপেপারটি হাতে নিয়ে ফরিদের দিকে একপলক তাকায়। তার কেনো যেনো মনে হয় এটা আত্মহত্যা নয় খু’ন হতে পারে!
সারোয়ার সকলের অগোচরে স্ত্রীর গালে চুম্বন দিয়ে মুখ সরিয়ে নিলো। শেহরীনা নিউজপেপার রেখে চোখ রাঙালে। সারোয়ার বলে,
‘এখন চোখ রাঙানি রেখে মিষ্টির ব্যবস্থা করো। তানভির এবার ব্যারিস্টার হওয়ার পথে। তার প্রমোশন হয়ে গেছে।’

“কী সত্য বলছেন! যাক ছেলেটা নিলীমার শোক কাটিয়ে পড়াশোনায় মন বসিয়ে সফল হচ্ছে। নাহয় নিলীমার শোকে থেকে নিজের পরিবার সমেত রাস্তায় বসতে হতো।”

সারোয়ার শুনে তপ্ত শ্বাস ফেলল। আসলেই সত্য কথা। নিলীমার আকস্মিক মৃত্যু তানভির কে পাগলপ্রায় করে দিয়ে ছিল। এতে তার পরিবারে অসহায় বিধবা মা এবং ছোট ভাইয়ের উপরও ঝড় বয়ে আসে। ঘরের বিল না দেওয়ায় কারেন্ট বন্ধ করে দেওয়া, পানির লাইন বন্ধ করে দেওয়া, ছোট ভাই কে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া মাত্রাতিরিক্ত টাকা জমে যাওয়ার কারণে। ঘরের ভাড়া না মেটানোর কারণে ঘরের মালিক এসে হুমকি অব্দি দিয়েছিল। এসব তানভির এর কান অব্দি পৌঁছালে ও সে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের মত খালি ‘নিলীমা’ নাম জপে যেতো। সারোয়ার নিজ উদ্যোগে তানভির এর মায়ের দুর্বিষহ সময়ে এগিয়ে আসে। মোঃ আবু সিদ্দিক ও তার ইনকামের অর্ধভাগ তানভির এর মায়ের কাছে উপহার স্বরূপ দিয়ে দেন। দীর্ঘ সাত মাস পর তানভির সুস্থ হয়। তখন মায়ের পা জড়িয়ে ক্ষমা চাইল। ছোট ভাই কে আবার স্কুলে দিয়ে সেও ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠে।‌ সারোয়ার নিজ হাতে সব পড়িয়ে দেয়। আজ সেই শোক-পাগল প্রায় তানভির ব্যারিস্টার তানভির হবে। এই যেনো এক মায়ের দোয়ার নতিজা।
আজ বাড়িতে সাজিয়া, তার স্বামী আর দুটো বাচ্চা নিয়ে আসবে। সাজিয়ার দ্বিতীয় সন্তান সানজিদা হয়েছে একবছর হবে তার। সাফওয়ান তো শেহরীনা কে বড় আম্মু বলতে পাগল।
শেহরীনার নিজ সন্তান নেই তাতে কী!
তার কাছে সাফওয়ান এবং সানজিদা ও আপন সন্তানের মতোই। তাদের কে পেলে সে মাতৃসুখ অনুভব করে। শেহরীনা সারোয়ার কে নিয়ে মার্কেটে এলো। সারোয়ার সাফওয়ান এর জন্য জামা কিনছে। শেহরীনা সানজিদার গায়ের সাইজ অনুযায়ী জামা দেখছে। তখনি কেউ তার পা ধরে হরবড়ে বলে,
‘ও মা আমারে কিছু টাহা দাও। খিদে লাগছে হনেক। মা আল্লাহ তোয়ার ভালা গড়িব।’
শেহরীনা চমকে যায়। সে মহিলাটির হাত সরিয়ে ব্যাগ হাতড়ে পাঁচশ টাকার নোট ধরিয়ে দিলো। মহিলাটি টাকা পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বাঁকা পথে চলল। শেহরীনা মুচকি হেসে পেছন ফেরে সারোয়ার কে স্তদ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে খানিক অবাক হয়ে পেছন ফিরে পুনরায় স্বামীর দিকে তাকাল। তার নিকট গিয়ে বলে,
‘কী হলো আপনি নিরব কেনো!’
সারোয়ার এর ধ্যান ফেরল। চোখের দৃষ্টি স্ত্রীর দিকে দিয়ে একপল সেই মহিলার দিকে তাকাল।
‘তোমাকে দেখছিলাম কৃষ্ণ বউ।’
শেহরীনা হাসল সারোয়ার তাকে শক্ত হাতে আগলে নিয়ে মনের ভেতরকার চাপা কষ্ট কে মাটি চাপা দিলো। কেস কাউন্টারে গিয়ে বিল পে করে তারা চলে যায়। অতীতের খাতা খোলার মত বিবেকহীন পুরুষ সারোয়ার নয়। অতীত মানেই অতীত।

রাত তখন দশটা…
সারোয়ার বিছানায় গাল ফুলিয়ে বসে আছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তার পাশেই সাফওয়ান তাকে ঠেলে বিছানার থেকে ফেলে দিতে চাইছে। সাফওয়ান ভারী দেহের এই পুষ্টিকর পুরুষ কে ফেলতে না পেরে গলা উঁচিয়ে ‘বড় আম্মু’ বলে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ কান্না শুরু করল। সারোয়ার হা হয়ে গেল। শেহরীনা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই সাফওয়ান এর কান্না শুনে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল।

“কী হয়েছে বাবা কাঁদছো কেন! কে কী করেছে হুম বলো তো কী হয়েছে!”

“বড়আম্মু বড় আব্বু আমায় ধমক দিয়েছেন। আপনার সাথে ঘুমাতে চাইছি তাই।”

শেহরীনা মেজাজ গেল বিগড়ে। চোখ রাঙিয়ে বলে,’এই আপনি ছোট একটা বাচ্চা কে এমন কথা বলতে পারলেন!’
সারোয়ার এর মাথা ঘুরে উঠল। এটুকুন পুচ্চকা ছেলের কী সিয়ানাবাজি কথা! সেও গলা গম্ভীর করে বলে,
‘আমি কোনো ভাবেও তোমার লাটপাগল পোলা কে বকি নাই।’
‘হ্যাঁ বকোনি। বকলে আরো বলতাম এখন তো আপনি ধমক দিয়েছেন।
‘এই বাচ্চা পোলা আমি কবে তোকে ধমক মারলাম।’
সারোয়ার উত্তেজিত হওয়ায় শেহরীনাই ধমকে দিলো। সারোয়ার মুখ ফুলিয়ে চট করে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। সাফওয়ান তার বড়আম্মুর কোলে মাথা রেখে ভেংচি দিলো। শেহরীনা সাফওয়ান কে বিছানায় রেখে ঘাড়ে রাখা গামছা আলনায় শুকাতে দেওয়ার জন্য বেলকনির কাছে গেল। তখন সারোয়ার চোখ ছোট ছোট করে বলে,
‘মীর জাফর কোথাকার! তোর সাথে আমার ডিল ক্যান্সেল। আমার মেয়ে হলে কখনো তোর সাথে বিয়ে দেবো না হুউ।’
‘ছিঃ আপনি তো ঘষেটি বেগম এর মত কথা বলছেন! সমস্যা নেই আপনি না দিলেও আমি আমার হবু বউকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করব।’
‘ব্যস বহুত হলো। তোর কারণে আমার মেয়েকে হওয়ার পরই নিজের সাথে রেখে দিতে হবো। ওমন ভিলেন আমার মেয়ের জীবনে কাম্য নয়।’
‘আমি আপনার মত নায়ক নয় তাই হিহিহি‌।’

সারোয়ার দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকিয়ে আছে।‌ তখনি দৌড়ে রুমে এলো সাজিয়া। ‘সরি সরি ভাই সাফওয়ান দুষ্টু হয়েছে খুব।’ সাজিয়া তড়িঘড়ি ছেলেকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেলে সারোয়ার ও ঝড়ের গতিতে গিয়ে দরজা আটকে জোরালো দম ফেলল। কদম ফেলে শেহরীনা কে কোলে নিয়ে ফেলে। সে চোখ পিটপিট করে এতক্ষণ হওয়া দৃশ্য দেখে জোড় পূর্বক হেসে বলে,
‘বাচ্চা মানুষ ওমন করেই ছেড়ে দিন।’
‘উহুম বাচ্চার সাথে মিলে খুব চোখ রাঙিয়েছো। এবার লজ্জায় গুটিসুটি হয়ে পড়ে থাকতে রেডি হও।’

সারোয়ার একহাতে বাতি নিভিয়ে দিলো। উবে গেল দুজনে সুখের সাগরে। তাদের জীবনে এই মিলন আসুক বহুবার। সন্তান রবের দেওয়া। সেই হিসেব চুকে রাখুক কোনো এক গল্পের মধ্যে। তারা থাকুক একভাবে অটুট মিলনে। সারোয়ার এর ঘাড়ে কামড় বসালো শেহরীনা। কাঁপা গলায় বলে,
‘আমার হৃদয় কে আপনি ব্যাকুল করে দিয়েছেন মিস্টার বিলেতি ব্যারিস্টার।’
‘আপনি আমার হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়েছেন কৃষ্ণ বউ। আজ তুমি আমি আরেকবার কেমন!’
লাজুক হেসে স্বামী কে আগলে নিলো শেহরীনা।

সমাপ্ত