#প্রিয়াঞ্জনা, এককাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই
#পর্ব-১৩
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি
ছন্দ কাটা জীবন। তাল হারানো মন। ছাদের রেলিং এর পাশটায় দাঁড়িয়ে নিজের জীবনকে অনেকটা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো লাগছে সুমনার কাছে। কলঙ্কিত জীবন তার। সবই জ্বলে যায়, পুড়ে যায়। ছোটবেলায় জন্ম দিতে গিয়ে যখন মা মারা গেলেন তখন বাবা কোলে তুলেও দেখেনি তাকে। কত যুদ্ধ, কত পরিশ্রম করে নিজেকে গড়ে তুলেছিলো। পায়ের নিচের মাটিকে লাগতো চোরাবালির ন্যায়। কোথাও দাঁড়াতেও ভয় হতো। অবচেতন মন বাস্তবতা বুঝতো না। ভালোবাসার কাঙাল ছিল বেহায়াটা। তখনই ডিপার্টমেন্টের সামনে সাপের কবল থেকে রক্ষা করলো এক যুবক। মন তখন লোভী হয়ে উঠে। সেই যুবকের হাসি, তার আদর মাখা ডাক, তার ছোট ছোট কেয়ারিং। মন আঙুল তুলে মস্তিষ্ককে বোঝায় এই সেই স্বপ্নের পুরুষ। একান্ত পুরুষ। তোমার পুরুষ। এত এত ভালোবাসার স্বপ্ন, সুখের স্বপ্ন যে দেখিয়েছিলো সে আজ এতটা পরিবর্তিত! সময় বদলায়, ভালোবাসা বদলায়। কথাটা ঠিক? হয়তো কিঞ্চিৎ ভুল। আজ যদি প্রীতম সন্তান জন্ম দানে অক্ষম হতো তখন কি সুমনা তাকে ছেড়ে যেতো? কখনোই না। লালবর্ণ আকাশ। দুটো চিল উড়ে বেড়াচ্ছে। বাতাসে শরতের ঘ্রাণ। মূলত জুঁই ফুলের ঘ্রাণের কারণেই এতটা অনেক অনুভব করা যাচ্ছে। বিল্ডিং ঘেঁষে দুটো জুঁই ফুলের গাছ আছে। পুকুর পাড়ে সদ্য কাশফুলের দল উঁকি দিচ্ছে। বাড়ির সামনেই সোজা পাকা রাস্তা। একটি বাচ্চা মেয়ে স্কুল থেকে ফিরছে হয়তো। হাতে বই, কাঁধে ব্যাগ। পরনে নীল ফ্রক। মাথায় সাদা হিজাব। কোনো টেনশন নেই, কোনো দোটানা নেই। সুমনা এখন ছাদ থেকে লাফ দিবে। এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় কষ্টগুলোর যদি তালিকা করা হয় তাহলে তন্মধ্যে একটি হলো প্রিয় মানুষ, ভালোবাসার মানুষকে ঘৃণা করা। এই যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এই যন্ত্রণা হৃদয়ে সুপ্ত থাকে। অনেকটা বিষধর বিষের মতো। আস্তে আস্তে নিষ্প্রাণ করে দেয় মন, দেহ, প্রাণ। সুমনার পক্ষে এই অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করা সম্ভব নয়। সুমনা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। প্রকৃতি দেখে নেয় শেষ বারের মতো। এবারে পরপারে যাওয়ার পালা।
দুপুরে জমির দলিল সম্পন্ন হয়েছে। আড়াই কোটি টাকার ঝামেলা ভেঙেছে শাহবাজ। এছাড়াও পাঁচজন ব্যাক্তি টাকা পাবেন। আরো আড়াই কোটি প্রয়োজন। তারা সময় দিয়েছে কেবল ছয়মাস। এই আড়াই কোটি টাকা কোথায় পাবে তা নিয়ে শাহবাজ বেশ চিন্তায় রয়েছে। তবে যেহেতু কিছুটা ঋণ কমেছে তাই স্বস্তিও হচ্ছে মনে। শিবপুরের চাচার নাম্বার আবার বহু কষ্টে জোগাড় করেছে সে। বদরুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথমে আকাশ থেকে পরেছিলেন এটা শুনে যে শাহবাজ শিক্ষকতা করবে। তাও মেইন শহর ছেড়ে দূরে। সম্পূর্ণ শুনে তিনি বেশ হতবাক হয়েছেন। এত সুন্দর একজন ছেলের জীবন যে এরকম ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি। ভদ্রলোকের নিজের বাড়ি। সেই বাড়ির দুতালায় দুটো কামরা খালি আছে। আপাতত শাহবাজ সেখানেই প্রিয়াঞ্জনাকে নিয়ে উঠবে। শিক্ষকতা করবে শিবপুর অগ্রণী মডেল কলেজ নামক সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া কলেজে। বাকিটা আল্লাহ তায়া’লা যা চান। শাহবাজ সিদ্ধান্ত নেয় আগামীকাল রাতে প্রিয়াঞ্জনাকে চলে আসতে বলবে। নিজের অর্ধাঙ্গীকে ছাড়া থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। বিগত কয়েকটি মাস কেবল এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলো শাহবাজ চৌধুরী। শ্রাবণ কাটিয়ে ভাদ্র আসবে। শরতের আগমন ঘটবে। সেই সাথে প্রাণপ্রেয়সীকে পুনরায় আপন করে পাবে শাহবাজ। অন্তর কাঁপছে।
রিমন ছেলের পাশে বসে আছে। রিফাত পড়ছে হলদে লাইটের আলোতে। শাহবাজ বসলো চৌকিতে।
“চলে যাবি শাহ্?”
“হুম”
“যাওয়ার আগে ভাবীকে নিয়ে আছিস এই গরিবখানায়।”
কি সহজ সরল ছেলেটা। চিকন গড়ন, কালো গাঁয়ের রঙ। চোখে অসীম মায়া। কৃতজ্ঞতায় শাহবাজের চোখ ছলছল করে উঠে। রেলস্টেশনে যখন যাযাবরের মতো ঘুরছিলো শাহবাজ। এই ছেলেটাই তাকে আশ্রয় দিয়েছে। খাবার দিয়েছে। ঠিক একজন প্রকৃত বন্ধুরমতো। শাহবাজ ডাকে,
“রিমন?”
“কি?”
শাহবাজ জড়িয়ে ধরে রিমনকে। তার জিন্সের পকেটে গুঁজে দেয় পাঁচ হাজার টাকা।
“তুই আমার দুঃসময়ের বন্ধু রিমন। তোর ঋণ এই শাহবাজ চৌধুরী কখনো পূরণ করতে পারবেনা, ভাই।”
দুই বন্ধুর আবেগঘন মুহূর্ত দেখে সুফিয়ার চোখেও অশ্রু চলে আসে। শাহাবাজ ভাই একজন খাঁটি মানুষ।
সুফিয়ার কোনো ভাই নেই। বিগত কয়েকটি মাসে কেমন এক অজানা বন্ধনে শাহবাজ ভাইয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলো তারা। বাইরে থেকে ফিরেই বলতেন,
“ভাবী, ভাত দেন। ক্ষুধা লেগেছে।”
এত মায়া হতো সুফিয়ার। মানুষটা চলে যাবেন। সুফিয়া আল্লাহর কাছে প্রাণপণে দোয়া করে। এই মানুষটা যেন তার পরিবার নিয়ে ভালো থাকেন।
সুমনা চোখ বন্ধ করেছিলো অনেকক্ষণ। মাগরিবের আজান দিচ্ছে। জুঁই ফুলের ঘ্রাণ কড়া হয়ে উঠেছে। অসহনীয় কড়া। এই তো একটু পর কেবল শান্তি আর শান্তি। সামনে আগায় সুমনা। আরেকটুখানি..
হঠাৎ কে যেন কনুই ধরে টেনে পিছনে নিয়ে আসে। কম্পমান হৃদয় আরো জোরে কেঁপে উঠে। লাব-ডাব শব্দ প্রায় বাজছে সুমনার কানে। সে কি ছাদের দরজা লাগায় নি! আফসোস হয় তার। মইনুল সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। প্রীতি-প্রাপ্তির ইংরেজি শিক্ষক। ওঁকে দেখে কিঞ্চিৎ লজ্জা পায় সুমনা।
“কি করছিলেন আপনি? আমি যদি নিচ থেকে খেয়াল না করতাম তাহলে কি হতো বলুন তো!”
“কি হতো আবার ম রে যেতাম!”
এমন অকপট কথায় থতমত খায় মইনুল। প্রশ্ন করে,
“প্রাণ এত সস্তা আপনার কাছে? আপনি কি পাগল!”
“যা জানেন না তা নিয়ে কথা বলবেন না প্লিজ। আমার জীবনে কি ঝড় চলছে তা নিশ্চয়ই আপনি জানবেন না তাইনা? আপাত দৃষ্টিতে আপনার কাছে লাগতেই পারে আমি পাগল। কিন্তু আমার জীবনটা যদি আপনি যাপন করতেন তাহলে হয়তো একই কাজেটাই করতেন।”
বলেই প্রস্থান করে সুমনা। মৃ ত্যুতেও বাঁধা! এত অদ্ভুত কেন তার জীবন!
প্রিয়াঞ্জনা আপাতত ব্যস্ত। টুকটাক যা গুছানোর গুছিয়ে নিচ্ছে। শরতের কাশফুলের মতো দুলছে তার মন। শাহ্ আর সে আবার একসাথে থাকবে! নতুন মেয়েটার সাথে তার তেমন কথা হয়নি। সুমনা ভাবীকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া সত্যি কোনো ভাষা নেই প্রিয়াঞ্জনার। প্রীতম ভাইয়া যে এতটা নিচে নামবে কখনো কল্পনাতেও আসেনি তার।
(চলবে)
#প্রিয়াঞ্জনা, এককাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই
#পর্ব-১৪
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি
শরতের ভোর। স্বচ্ছ নীল আকাশে পেঁজা পেঁজা তুলোর মতো মেঘেরা উড়ে বেড়াচ্ছে। বাতাসে জুঁই ফুলের তীব্র ঘ্রাণ। পুকুরপাড়ের তাল গাছটায় বাসা বেঁধেছে এক বাবুই পাখি। শালিক, বাবুই সকলে শরতের ভোরকে আমন্ত্রণ জানাতে কিচিরমিচির শব্দ তুলতে ব্যস্ত। সুমনা ঘুমিয়ে ছিলো প্রিয়াঞ্জনার পাশে। আজ তার শরীর খারাপ। তাই ফজরের নামাজ আদায় করতে পারেনি। প্রিয়াঞ্জনা ফজরের নামাজ আদায় করেই বোরকা পরে নেয়। আস্তে করে ডাকে,
“ভাবী, শুনছো?”
রাতে কান্নার কারণে এখন তীব্র মাথা ব্যথা করছে সুমনার। চোখ জোড়া খুলতেই চাইছেনা। বহু কষ্টে চোখ খুলে তাকায় সে। শোয়া থেকে উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে।
“আমি চলে যাচ্ছি ভাবী। আবার কবে দেখা হবে জানিনা। ভাইয়া এরকম একটা ঘৃ ণ্য কাজ করেছে! আমি কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা।”
সুমনা মলিন হাসে। প্রিয়াঞ্জনার নরম হাতটি নিজ হাতে নিয়ে বলে,
“ভালো থেকো বোন। সুখে থেকো। অনেক দোয়া রইলো।”
“তুমি কান্নাকাটি করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।”
“সবাই শাহবাজ ভাইয়ের মতো না প্রিয়া। শাহবাজ ভাই অমূল্য রত্ন। তাকে ভালো রেখো।”
“ঠিক আছে, ভাবী। তুমি তাহলে আবার শুয়ে পড়ো। তোমার শরীর তো ভালো না। আমি আসি।”
সুমনার মাথায় খুব য’ন্ত্র’ণা করছিলো। তাই শুয়ে পড়ে। প্রিয়াঞ্জনা নিজের ঘরের দরজা আটকে ড্রয়িং রুমে চলে আসে। ড্রয়িং রুমে অন্ধকার বিরাজ করছে। পা টিপে টিপে মেইন ডোর খুলে বেরিয়ে পড়ে বাইরে। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আল্লাহ কে ডাকছিলো সে। কেউ যদি ধরে ফেলে তাহলে আর শাহবাজের কাছে যেতে পারবেনা প্রিয়াঞ্জনা। তাকে আটকে ফেলবে তারা। বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতন নিজের পিতৃভূমিটাকে দেখে নিচ্ছিলো প্রিয়াঞ্জনা। আর হয়তো কখনো আসা হবেনা। নিজের অজান্তেই চোখের কোণ ভিজে উঠে তার। মাকে সে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে। এতকিছুর পরও মার প্রতি কোনো ঘৃ ণা কিংবা ক্ষো’ভ তার নেই। কিন্তু একদিকে ভালোবাসার মানুষ আর অপরদিকে পরিবার। যেকোনো একটাই বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রিয়াঞ্জনা জানে তার ভালোবাসার মানুষটি এখন রিকশায় বসে তার অপেক্ষা করছে মেইন রোডে। বুকের ভিতর আজ কেন যেন চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে প্রিয়াঞ্জনার। নিজের আবেগকে দমিয়ে রেখে প্রিয়াঞ্জনা বেরিয়ে পড়ে কংক্রিটের রাস্তায়। কিছু দূর হেঁটে সামনে গেলেই মেইন রোড। রাস্তার দু’পাশে বিল। বিলে ফুটেছে শুভ্র শাপলা। বাবুই পাখির বাসা দেখে প্রিয়াঞ্জনার মন ভালো হয়ে যায়। আবার তার একটি নতুন রাজ্য হবে। সে হবে রাণী আর তার শাহ্ হবেন রাজা। হাসি ফুটে উঠে প্রিয়াঞ্জনার মুখে। মোবাইল তার কাছে নেই। গতরাতে প্রীতির মোবাইলে কথা হয়েছিলো শাহ্ এর সাথে।
রিকশা থেকে নেমে বিলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো শাহবাজ। তার বুক কাঁপছে। আদোও প্রিয়াঞ্জনা আসতে পারবে তো? যদি না আসতে পারে! রাস্তা শূন্য। রিকশাওয়ালা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছেন। হঠাৎ করেই শাহবাজ অনুভব করে তাকে পিছন থেকে কেউ একজন জড়িয়ে ধরেছে। একেবারে আষ্টেপৃষ্টে। অধিকারবোধ নিয়ে। হাসি ফুটে উঠে শাহবাজ চৌধুরীর মুখে। মুখ উঁচিয়ে চোখ বন্ধ করে আকাশ পানে তাকায় সে। তার অশান্ত বুক শান্ত হয়ে যায় নিমিষে। পিছু ফিরে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় নিজের অর্ধাঙ্গীকে। যেমন করে দূর্বাঘাসকে ভিজিয়ে স্নিগ্ধ করে তুলে শিশির বিন্দু, তেমন করে শাহবাজ চৌধুরীর অন্তরকে পুলকিত করে তুলেছে তার প্রিয়াঞ্জনা। বুকের পাশটায় ভেজা অনুভব করতেই ধ্যান ভাঙে তার। প্রিয়াঞ্জনা কাঁদছে। শাহবাজ বড়ই যত্নে মুছিয়ে দেয় প্রিয়াঞ্জনার আর্দ্র নয়নযুগল।
“এত সুন্দর চোখ দুটোতে আর যেন পানি না দেখি।”
হালকা ধমক। হালকা শাসন। প্রিয়াঞ্জনার মন ভরে যায়। সেই শাহ্! পুরানো শাহ্!
রিকশায় উঠে বসে দুজনে। মিষ্টি রোদে মুখরিত চারপাশ। দুপাশে বিলে সাদা, গোলাপি শাপলা। মাঝখান দিয়ে কংক্রিটের রাস্তা। আসমানে পেঁজা তুলোর মতন ভেসে বেরানো মেঘ। হুড তোলা রিকশায় প্রিয় মানুষের বুকে মাথা রেখে বসে থাকা। এই অনাবিল সুখ কি টাকা দিয়ে কেনা যায়! প্রিয়াঞ্জনার অন্তর চিৎকার করে বলে উঠে, ‘কখনোই না’।
শাহবাজের হাতে প্রিয়াঞ্জনার ডানহাত। আঙুল গুলো নিয়ে খেলছে সে। ঠিক ছোট বাচ্চার মতো করে।
“এই যে শাহ্!”
“হু”
“ক্ষুধা লেগেছে আমার।”
বিলের পাশে চায়ের দোকান। চা দোকানদার সবে মাত্র দোকান খুলে বসেছেন। শাহবাজ রিকশা থামায়। ভাড়া মিটিয়ে প্রিয়াঞ্জনার হাত নিজের হাতে ধরে চা দোকানে গিয়ে বসে। বুড়ো দোকানীকে বলে,
“দুটো চা দেন তো চাচা। একটা রং চা আরেকটা দুধ চা। একটা পাউরুটিও দিয়েন।”
“জ্বে, আচ্ছা।”
বলেই তিনি চা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিলে খুব সুন্দর শাপলা ফুটেছে। প্রিয়াঞ্জনা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সেদিকে। কিনারাতেই জন্মেছে।
“কি শাপলা চাই?”
শাহবাজ জিজ্ঞেস করে দুষ্টু সুরে। প্রিয়াঞ্জনা মাথা ঝাঁকায়। অমনি বেঞ্চ থেকে উঠে বিলের পাশটায় গিয়ে শাপলা ফুল তোলার চেষ্টা চালায় শাহবাজ। কিনারা ঘেষে বেশ কচু জন্মানোতে শাপলার নাগাল পাওয়া যাচ্ছেনা। তবুও চেষ্টার ত্রুটি নেই তার। প্রিয়াঞ্জনা অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে তার পুরুষের পানে। জিন্স প্যান্ট, নেভি ব্লু শার্ট পরনে অভূতপূর্ব যুবকটি তার। একান্তই তার। হঠাৎ মনে ভয় দানা বাঁধে। সা’পের দল ঘাপটি পেতে থাকে এরকম স্থানে।
“চলে আসুন শাহ্। আমার শাপলা লাগবেনা।”
কে শুনে কার কথা! শাহবাজ দুটো শাপলা তুলে বিশ্বজয়ের হাসি দেয়। তুলে দেয় তা প্রিয়াঞ্জনার হাতে। চা চলে এসেছে। শাহবাজের রং চা আর প্রিয়াঞ্জনার দুধ চা। শাহবাজ প্রিয়াঞ্জনার কানের কাছে গিয়ে গায়,
প্রিয়াঞ্জনা, এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই,
ডাইনে ও বায়ে আমি তোমাকে চাই,
দেখা না দেখায় আমি তোমাকে চাই,
না বলা কথায় আমি তোমাকে চাই…..
আবারও নিজের অজান্তে চোখ ভিজে উঠে প্রিয়াঞ্জনার। এই মানুষটাকে ছাড়া সে কখনোই বাঁচতে পারবেনা। কখনোই না।
(চলবে)….