#প্রিয়াঞ্জনা, এককাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই
#পর্ব-২৩
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি
সময় থেমে থাকেনা। মানুষের জীবনও থেমে থাকেনা। সময় চলে নিরন্তরভাবে। কারো দিকে ফিরে তাকানোর তার ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা কোনোটাই নেই। বেশ নি ষ্ঠু র সে। মানুষের জীবনও সেই সময়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটা বুঝতেও পারেনা কেমন তুড়ি মা রার মতো সে বার্ধক্যে পৌঁছে যায়। মনে হয় এই না সেদিন জন্মালাম। মায়ের থেকে ছিন্ন করা হলো আমাকে। নাড়ি কাঁটা হলো আমার! আজ আমি শয্যাশায়ী। কিভাবে কেটে গেলো এত দীর্ঘ সময়, এত দীর্ঘ জীবন! তখন তার নিজেকে মনে হয় কড়া রোদে ধানক্ষেতে পানি জোগানো সেচ মেশিনের মতো। পানি জোগানোই যার কাজ। একলা তার জীবন। কৃষক আসেন যখন তখন তার খানিক ভালোলাগে। তবে আবার সে একলা হয়ে যায়। তার কাজ একটাই সেচ দাও, সেচ দাও, সেচ দাও। থেমে গেলে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। নতুন সেচ মেশিন আসে।
সুমনার স্থান হয়েছে আজিমপুর ব স্তিতে। একটা মাস বেশ মিশ্র কেটেছে তার। কখনো কষ্ট কখনো সুখ। ডিভোর্সের বন্দোবস্ত করেই চলে এসেছিলো নরসিংদী রেল স্টেশন। দাঁড়িয়ে ছিলো বেশ অনেকটা সময়। রেললাইনের পাশে ফেলে রাখা ময়লাগুলোর উপরে বেশ কয়েকটা কাক উড়ছিলো। সুমনা তাকিয়ে ছিলো সেদিকে। একাধারে। পলকও পড়েনি তার। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে আছে। যার জন্য ঘর ছাড়লো, পরিবার ছাড়লো। যার খুশির জন্য সব সহ্য করলো সে কি করে এত বড় বিশ্বাস ঘা ত কতা করতে পারলো! সুদর্শন ছেলেটা সা পের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিলো তাকে। কত কত ওয়াদা করেছিলো। সুমনার মনে পড়ে নির্জন পাহাড়ে এক গোধূলিলগ্নে দূর্বা ঘাসের উপর প্রথম প্রনয় হয়েছিলো তাদের। নিজেকে সঁপে দিয়েছিলো বিশ্বাসঘা ত কের হাতে। প্রতিটি প্রনয়ে কত শত ওয়াদা করেছিলো। আর আজ! হাতটা ছেড়ে দিলো। আজ সুমনা একদম একা। তার অন্তর চিৎকার করে বলছে, ‘সে আমাকে ভালোবাসেনি।’ সুমনার ধ্যান ভেঙেছিলো ট্রেনের তীব্র শব্দে। যন্ত্রের মতো উঠে বসেছিলো ট্রেনে। কখন যেন ট্রেনটা চলতে শুরু করলো। রাত তখন কয়টা বাজে সুমনার খেয়াল নেই। ট্রেন থেমেছিলো ঢাকা এয়ারপোর্টের পাশে রেলওয়ে স্টেশনে। রাতটা কেটেছিলো সেখানেই। তারপরের দিনটাও সেখানেই কাটলো। কোথায় যাবে? কি করবে? কোনোকিছুই মাথায় আসছিলো না তার। রেল স্টেশনে বসে থাকতে থাকতে সুমনা অনুভব করে জীবন কোনো সিনেমা নয়। জীবন বড় য ন্ত্র ণার। ভাতের হোটেলে দুপুরের তীব্র ক্ষুধায় যখন ভাতের লোকমা মুখে তুলতো তখন মনে হতো হায়! এটাই কি ভালোবাসার পরিণাম? জাবেদা নামক একজন মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। মেয়েটি একটি সুপারশপে কাজ করে। থাকে আজিমপুর ব স্তিতে ছোট একটি টিনের ঘর নিয়ে। ওর যা ইনকাম তাতে ভালো একটা হোস্টেলে থাকা যায়। তবে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়। ব স্তিতে ছোট ঘরটা অল্প টাকায় পেয়েছিলো। গত দু’বছর ধরে থাকে। সুমনা নিজের জীবনের গল্প শুনালো তাকে। জাবেদার মায়া হলো। সেই থেকে সুমনা
ব স্তিতে জাবেদার সাথে থাকছে। মেয়েটাকে তাকে সুপারশপে চাকরিও নিয়ে দিয়েছে। কৃতজ্ঞতায় চোখ ছলছল করে উঠেছিলো সুমনার। একটা ঠাঁই তো হলো। হোক সেটা ব’স্তিতে! কিছুদিন পর থেকে টিউশনি শুরু করবে সুমনা। রাতে টিউশনি করাবে। ব’স্তির কয়েকজন বাচ্চাকে সে পড়ায়। সেটা অবশ্য বিনামূল্যে। দিনগুলো এখন ভালোই কাটছে সুমনার। চা খারাপ হলে এখন আর কেউ হাতের মধ্যে গরম চা ঢেলে দেয় না। ছোট কোনো অপরাধের জন্য কেউ এখন গাঁয়ে হাত তুলে না। দীর্ঘ সময় আদরের নামে কেউ ম্যারিটাল রে’প করেনা। কারো মন জুগিয়ে চলারও প্রয়োজন হয় না৷ নিজের মতো চলে সুমনা। স্বাধীন জীবন। বেশ আছে সুমনা। শপথ করেছে আর কখনো সংসার নামক রণক্ষেত্রে প্রবেশ করবেনা।
“প্রিয়াঞ্জনা, নাদিয়ার আচরণ স্বাভাবিক না। আমি আগেও তোমাকে বলেছি। ও আমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। সাজগোছ করে আসে। মানুষ এত বেহায়া কি করে হয়! সে জানে আমি একজন বিবাহিত পুরুষ। তারপরও আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে। একটা মাস আমি ওকে পড়াচ্ছি। কেবল চাচার কথা ভেবে আমি কিছু বলিনা। নয়তো তুমি তো আমাকে চিনো। থাপড়ে দাঁত ফেলে দিতাম। অসভ্য একটা!”
বেশ রেগে রয়েছে শাহবাজ। প্রিয়াঞ্জনা বেশ মজা পাচ্ছে। ও নিজের শাহ্ কে চিনে। আল্লাহর পরে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসও করে। এতটুকু নিশ্চিত বলা যায় এই মানুষটা তাকে কখনো ধোঁকা দিবেনা। মুচকি হেসে প্রিয়াঞ্জনা শুধায়,
“ভালোই তো। পুতুলের মতো একটা মেয়ে আপনাকে পছন্দ করছে আর আপনি রেগে যাচ্ছেন শাহ্? রাগ কেন?”
শাহবাজ বেশ বুঝতে পারছে প্রিয়াঞ্জনা মজা নিচ্ছে।
“তাই না!”
বলেই প্রিয়াঞ্জনাকে নিজের মাঝে আবদ্ধ করে ফেলে শাহবাজ। এলোমেলো, ছন্নছাড়া চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলে,
“বেশ মজা পাচ্ছো তাই না? বসুন্ধরার কথা মনে নেই?”
“নেই আবার। শুধু শুধু আপনি মেয়েটাকে অপমান করেছিলেন।”
“শুধু শুধু প্রিয়াঞ্জনা? আমার সাথে আঠার মতো লেগে থাকতো। তোমার সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলতো। কত চেষ্টা করেছে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করার।”
“বন্ধুত্ব তো শেষ করে দিয়েছি শাহ্। এমন বন্ধু আমার চাই না যে আমার স্বামীকে ছিনিয়ে নিতে চায়।”
“এ জগৎ বড় স্বার্থপর প্রিয়াঞ্জনা। বড়ই স্বার্থপর।”
মন খারাপ হয়ে যায় শাহবাজের। আর মাত্র কিছুদিন। কোথায় পাবে এত টাকা! কোনো কূল কিনারা পাচ্ছেনা শাহবাজ। প্রিয়াঞ্জনাকে বুঝতেও দিচ্ছেনা। প্রিয়াঞ্জনা উঠে বসে। খোলা চুলগুলো খোঁপা করে বলে,
“পুকুরপাড়ে যাবেন শাহ্?”
“চলো”
অপরাহ্ন। আশ্বিনের দুপুর পেড়িয়ে ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজমান চারপাশে। মহালয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। পাশেই দুর্গাপূজার আয়োজন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ। মাঝে মধ্যেই ঢাকের আওয়াজ আসে। বেশ আমেজ ভাব চতুর্দিকে। লোকজনের শোরগোল শোনা যাচ্ছে। তরুতে ঘেরা শতবর্ষী পুকুরের সিঁড়িতে বসে প্রিয়াঞ্জনা আর তার পাশে শাহ্। আলোছায়ার খেলা দেখা যাচ্ছে পুকুরের পানিতে। প্রিয়াঞ্জনা আনমনে হয়ে যায়। সে একটা জিনিস জানতে পেরেছে। কি করে শাহ্কে বলবে বুঝতে পারছেনা। সাহস পাচ্ছেনা। ঘরে মজা করলেও মনের ভিতর বেশ বড় একটি কথা চেপে রেখেছে প্রিয়াঞ্জনা। হুট করে কি যে হলো। শাহবাজকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখে প্রিয়াঞ্জনা। হু হু করে কেঁদে দেয়। ভ্যাবাচ্যাকা খায় শাহবাজ। নিজেকে সামলে প্রশ্ন করে অর্ধাঙ্গীকে,
“কি হয়েছে ময়না পাখি? আমি কোনো দোষ করেছি?”
প্রিয়াঞ্জনা জবাব দেয় না। কান্না করে যায় কেবল। শাহ্ হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। বারবার শুধায়,
“প্লিজ, প্রিয়াঞ্জনা। কি হয়েছে বলো? কান্না করো না প্লিজ। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। কি হয়েছে তোমার?”
সূর্য অস্ত যায়। প্রিয়াঞ্জনা নিরব হয়। আস্তে করে বলে,
“আপনি বোধহয় বাবা হতে চলেছেন শাহ্।”
(চলবে)……
#প্রিয়াঞ্জনা, এককাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি
#পর্ব-২৪
চাতক পাখি হা করে আকাশপানে চেয়ে থাকে। আর্তনাদ করে এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্য। অনেক সময় দেখা যায়, বৃষ্টির মৌসুম ছাড়াই শীতকালে অথবা অসময়ে আকাশে কোনোরকম মেঘ, আন্ধার ছাড়াই হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি নামে। এরকম হঠাৎ বৃষ্টি হলে গ্রামের মুরুব্বীরা বলেন, চাতক পাখির আর্তনাদ আর প্রার্থনায় মিকাইল ফেরেশতা বৃষ্টি দিতে বাধ্য হয়েছেন। সেই বিশ্বাস থেকেই আগের দিনে গ্রামবাংলায় চৈত্র-বৈশাখে অনাবৃষ্টি আর খরা দেখা দিলে, খড়কুটো দিয়ে প্রতীকী চাতক পাখি বা চাতকমূর্তি বানিয়ে; সেটিকে খোলা মাঠে আকাশের দিকে অনেক উঁচু করে রাখা হতো। যাই হোক সে এক ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে চাতক পাখি বৃষ্টি পেলে কতটা আনন্দিত হয় সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। মানব মনও অনেকসময় চাতক পাখির ন্যায় হয়ে উঠে। নির্দিষ্ট একটি জিনিস পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন আল্লাহর কাছে আকুল আবেদন করে। তারপর একদিন চাতক পাখির বৃষ্টির মতোই পেয়ে যায় সে জিনিস। মুখ ফুটে কখনো বলেনি কিন্তু একটি সন্তান শাহবাজের নিকট সেই চাতক পাখির বৃষ্টির মতোই। পুরুষ মানুষের পুরুষত্বে সবচেয়ে বেশি আ ঘা ত লাগে তখন, যখন তাকে মানুষ বাঁঝা হিসেবে অপবাদ দেয়। অপবাদ দিয়ে বলে, ‘তুমি বাচ্চা দিতে অক্ষম। তুমি বাঁঝা।’
ভরা মজলিসে যখন প্রিয়াঞ্জনার মা তাকে এই অপবাদ দিয়েছিলো আত্মসম্মানে বড্ড লেগেছিলো তার। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর মুহূর্তে প্রিয়াঞ্জনা যখন বললো,’আপনি বোধহয় বাবা হতে চলেছেন শাহ্।’ সেই হতে ঠাটা পড়া মানুষের ন্যায় বসে আছে শাহবাজ। প্রিয়াঞ্জনা তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গিয়েছে। বারবার জিজ্ঞেস করছিলো,’আপনি খুশি হননি তাই না শাহ্?’
শাহবাজ কোনো জবাব দেয়নি। একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তার পাগলিনী। অন্ধকার হয়ে আসছে চতুর্দিকে। মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। মসজিদে যেতে হবে। শুকরিয়া আদায় করতে হবে। তবে ছোট বাচ্চার মতো ঘুমিয়ে থাকা আদরিণীকে জাগানোর ইচ্ছে তার হচ্ছেনা। আলতো করে কোলে তুলে নেয় তাকে। মেয়েটা কিছুই খায় না। একদম শোলার মতো পাতলা যেন! তীব্র আবেগে শাহ্ একখানা ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয় প্রিয়াঞ্জনার কপালে। পা বাড়ায় বাড়ির পথে। নিজের ঘরের বারান্দায় বসেছিলো নাদিয়া। নিচতলায় ঘর হলেও প্রশস্ত বারান্দা আছে এই বাড়িতে। সন্ধ্যে নাস্তা আর চা নিয়ে বসেছিলো সে বারান্দায়। গেট খোলার শব্দে সেদিকে তাকায়। হলদে টিমটিমে লাইটের আলোয় নিজের প্রিয় মানুষটার কোলে প্রিয় মানুষের প্রিয় মানুষ। কি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে! নাদিয়া এক পলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। এ যাতনা সহ্য করা দায়। কেন সে ভুল মানুষটাকে মন দিলো? জ্বলে যাচ্ছে অন্তর। নাদিয়া তীব্র আক্রোশে ঘরে ছুটে যায়। বারান্দার দরজা লাগায় উচ্চ শব্দে। নিরবতায় সে শব্দ বিকট শোনায়। শাহবাজ অবাক হয়। শব্দের উৎস ধরতে পারেনা অবশ্য। প্রিয়াঞ্জনা গভীর ঘুমে। ঘুম ভাঙেনি তার। নিজেদের ‘চন্দ্রবিলাস’ নামক স্বপ্নের কুঠিরে প্রবেশ করে শাহ্। অতি যত্নে অর্ধাঙ্গীকে শুইয়ে দেয় খাটে। উঠতে নিলে দেখে বুকের কাছটায় সফেদ শার্টটা আঁকড়ে ধরে আছে তার প্রিয়াঞ্জনা। ছাড়িয়ে নেয় সে। টুপি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে। আজ অনেক খুশি শাহ্। অনেক বেশি খুশি।
কেউ ভাসে পদ্মজলে
কেউ পু ড়ে অঙ্গারে
জ্বলন্ত অঙ্গারে পু ড় লে কেমন য ন্ত্র ণা হয় প্রাপ্তি জানেনা। তবে সে যেরকম জীবন অতিবাহিত করছে তা হয়তো সেই য ন্ত্রণার চাইতেও অধিক। একটু আগেই চা ভালো হয়নি বলে তার হাতে গরম চা ঢেলেছে ফাহিম। প্রাপ্তি বারান্দায় উদাসী হয়ে বসে আছে। এই বারান্দায় বসলে শহরের অনেকটুকু দেখা যায়। অন্ধকারে ঢেকে গেছে শহর। জ্বলজ্বল করে জ্বলছে বাতি। প্রাপ্তি দেখতো তার ভাই প্রীতম এই কাজ করতো। সুমনা ভাবী কতটা করতো তাদের পরিবারের জন্য! প্রাপ্তির মাঝেমধ্যে মনে হতো সুমনা তার ভাবী না। সুমনা তাদের বাড়ির কাজের মহিলা। প্রীতম ভাইয়ের এত লাঞ্ছনা সয়েও পড়ে থাকতো তাদের বাসায়। প্রাপ্তি কখনো প্রতিবাদ করেনি। প্রীতি করতো আর প্রিয়া আপা করতো। সে দেখেও না দেখার ভান করতো। এমন কতদিন গিয়েছে ভাবীর বিরুদ্ধে ভাইকে উস্কে দিতো সে। আর ভাই মা র তো সুমনা ভাবীকে। এমন করতো প্রাপ্তি মায়ের কথায়। এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। এই পৃথিবীতে কেউই অপরকে কষ্ট দিয়ে নিজে ভালো থাকতে পারেনা। ভুক্তে হয় তাকে। চরম মূল্য দিতে হয়। ফুপিমা ডাকতো প্রাপ্তি। বছরে একবার হয়তো প্রাপ্তিদের বাসায় যেতেন। কত আদর করতেন! এই একটা মাস সেই ফুপিমারই অন্য রূপ দেখেছে প্রাপ্তি। একজন মানুষের এত রূপ থাকতে পারে? পান থেকে চুন খসলেও প্রাপ্তিকে সেটার চরম মূল্য দিতে হয়। সেই ভয়াবহ রাতের পর প্রতিটি রাতই এমন কেটেছে তার। মাকে বলার চেষ্টা করেছিলো। মা এক ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে তাকে। স্বামী-স্ত্রীর গোপন কথা অপরকে জানানো উচিত নয়। মা কঠোর ভাবে তাকে একথা বলে দিয়েছেন। সে লাজলজ্জার মাথা খেয়ে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলেছিলো,
“মা, আমি অনেক ব্যথা পেয়েছি। উনি আমার সাথে খুবই জঘন্য আচরণ করেছেন। তুমি প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো আমাকে।”
“চুপ, বেয়াদব মেয়ে। আরেকবার এসব কথা মুখ দিয়ে বের করলে খবর আছে তোমার। প্রথমবারে এমন হয়ই।”
আর একটা কথাও মাকে বলেনি প্রাপ্তি। এতটা অসহায় লাগে নিজেকে! চারদিন পর ফাহিম এবং তার মা আমেরিকা চলে যাবেন। প্রাপ্তি থাকবে তার বাবা বাড়ি। যাওয়ার কিছুদিন পর প্রাপ্তিকে আমেরিকা নেওয়া হবে প্রথমে। পরে নেওয়া হবে প্রীতম কে। ড্রয়িং রুমে বসে হেসে হেসে এমনই প্রীতমকে বলেছিলো ফাহিম।
“প্রাপ্তি, বারান্দায় তুমি?”
চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ায় প্রাপ্তি। ডাকার সাথে সাথে সামনে না গেলে শাস্তি পেতে হবে তাকে।
“জ্বি, বলুন।”
ওয়ারড্রব থেকে লাল শাড়ি বের করে ফাহিম। প্রাপ্তির সামনে এনে তার হাতে দেয়। মুখে বলে,
“আমার দুজন বন্ধু আসবে কিছুক্ষণ পর। আমাকে যেভাবে খুশি করো তাদেরও সেভাবে খুশি করবে।”
প্রাপ্তি ছোট মানুষ। জটিল কথা বুঝতে বেশ সময় লাগে তার। শুধায়,
“মানে?”
অমনি গালে শক্ত করে চেপে ধরে ফাহিম। হুংকার ছেড়ে বলে,
“ঢং করিস! বুঝিস না? শুতে হবে তাদের সাথে। ওরা আমার ভালো বন্ধু বুঝেছিস?”
প্রাপ্তি অবাক হয়। হতবাক হয়। যাতনা জড়ানো কন্ঠে বলে,
“আমি পারবোনা।”
এবারে গালে দানবীয় চড় পড়ে। ফাহিম চিৎকার করে বলে,
“তোর ভাইয়ের কাছ থেকে তোকে আমি টাকা দিয়ে কিনেছি। তোর ভাই তোকে বিক্রি করে দিয়েছে আমার কাছে। জুয়া খেলে শু*রের বাচ্চা। তোর
হা রা মী ভাই টাকা আর বিদেশ যাওয়ার লোভ সামলাতে পারেনি। আমি যা বলবো তাই তোকে করতে হবে।”
নিজের ভাইয়ের নামে এমনসব কথা শুনে বিস্ময়ে ফাহিমের পানে তাকিয়ে থাকে প্রাপ্তি।
(চলবে)…