#প্রীতিলতা ❤️
#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury
#১৯_তম_পর্ব🍂
পুরো টেবিল জুড়ে আম্মু তার জামাইয়ের জন্য এলাহী কাণ্ড বাধিয়ে ফেলেছে । কি নেই এখানে সরষে ইলিশ, চিংড়ি মাছের মালাইকারি,তেল কই, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, পোলাও,পায়েস, সালাদ।
চোখ বুলিয়ে শেষ করতে গিয়েই তো আমার চোখ ব্যথা হয়ে গেল আর এই ব্যাটা এত খাবে কি করে? কোথায় তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে বাকিটুকু বলবে তা না রান্নার যা বহর দেখছি খেতে খেতেই তো দুইদিন পার হয়ে যাবে।
সাফওয়ান হাত ধুয়ে এসে টেবিলে বসতেই চোখ চড়ক গাছ। দেখতে পেলাম ভয়ে তার মুখটা চুপসে গেছে। আহারে বেচারা…!
আমার মা আজ হাতে করে তার সকল ডায়েটের বারোটা বাজাবে। বেশ হয়েছে, একদম ঠিক হয়েছে।
সাফওয়ান এবার মুখ খুললেন,
— মামনি এত খাবার ?
আমার মা তার প্লেটে পোলাও বেড়ে দিতে দিতে বলল,
— আমি জানতাম প্রীতমের জন্মদিনে আমার মেয়ে জামাই ঠিকই আসবে আর প্রথমবার আমার মেয়ে জামাই আমাদের বাড়িতে আসছে আয়োজন করতে হবে না এই তো তাড়াহুড়োর মধ্যে এই টুকুই আয়োজন করতে পেরেছি।
আমি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারের উপর দুহাত ভাঁজ করে রেখে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আম্মুর কথা শুনে চেয়ার নিয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম।
এটাকে সামান্য আয়োজন বলে…..! উরি মা রে তাহলে বড় আয়োজন কাকে বলে রে ভাই?এই যে আয়োজন করেছে এই যদি আমি একা রান্না করতে যায় তো চোখের জল নাকের জল এক হয়ে যাবে।
আমার।
আম্মু আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল,
— কি হইছে একটু কোমর সোজা করে দাঁড়ায় থাকা যায় না। ঠুস ঠাস করে চেয়ার নিয়ে পড়ে যাচ্ছিস।
আমি চেয়ারটা টেবিলের সাথে সোজা করে লাগিয়ে রেখে মায়ের উদ্দেশ্যে বললাম,
— আমি ঠিক আছি কিন্তু তোমার এতো এতো রান্না গুলো তোমার জামাই বাবাকে খাওয়ালে তিনি ঠিক থাকবেন কিনা সন্দেহ।
আম্মু আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলল কি বললি
না না কিছু বলিনি খাওয়াও খাওয়াও তোমার জামাই বাবাকে খাওয়াও। তা আমাদের কপালে কি কিছু জুটবে নাকি দেখেই পেট ভরতে হবে।
আম্মু আমাদের সামনে প্লেট দিয়ে বলল ,
তোরাও খেতে বস অনেক বেলা হয়ে গেছে।
আমি প্রীতমকে ডাক দিলাম। কিছুক্ষণ পরে দেখলাম প্রিতমের হাত ধরে পুতুল হেলতে দুলতে এসে ডাইনিং এর চেয়ারে বসলো। আমি ওর সামনের প্লেটটা সোজা করে তাতে পোলাও তুলে বললাম,
— কি দিয়ে খাবি পুতুল সোনা?
— আমি পোলাও আর সরিষা ইলিশ খাব।
ভয়ে আমার মুখ শুকিয়ে গেল। আমি নিজেই ঠিকমতো ইলিশ মাছ বেছে খেতে পারি না। ওকে খাওয়াবো কি করে? পুতুলের কথার প্রতি উত্তরে মা শব্দ করে হেসে উঠলো।
— মামনি ও খাওয়াবে তোমাকে ইলিশ মাছ বেছে। নিজেই খেতে পারে না। ও নাকি আবার ইলিশ মাছ বেছে তোমাকে খাওয়াবে। আমার কাছে এসো মামনি, আমি তোমাকে ইলিশ মাছ বেছে পোলাও দিয়ে খাইয়ে দেবো।
পুতুল কিছুক্ষণ দুই ঠোট চিপে আমার দিকে তাকিয়ে বসে থাকলো চেয়ারে। আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
— আমি পোলাও আর রোস্ট খাব। খাইয়ে দাও প্রীতিলতা।
আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তাড়াতাড়ি প্লেটে পোলাওয়ের রোস্ট তুলে নিয়ে ভাত মেখে ওর মুখে তুলে দিতে দিতে আম্মুর দিকে তাকালাম দেখলাম আম্মু সহ সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
— বাবা কি ভালোবাসে প্রীতিলতাকে। তার হাতেই খেতে হবে। একদিন একটু আন্টির হাতে খাওয়া যাচ্ছিল না।
পুতুল মুখের খাবার চিবিয়ে খেয়ে নিয়ে বলল,
— তুমি আমাকে ইলিশ মাছ বেছে দিও আন্টি রোস্ট খাওয়ার পরে আমি তোমার বাছা ইলিশ মাছ খাব।
আমরা সবাই ওর কথা শুনে হেসে উঠলাম।
প্রীতম এসে সাফওয়ানের পাশে বসলো। আর আম্মু সে তো তার মেয়ে জামাইয়ের প্লেটের উপরে সুন্দর করে একটা পাহাড় বানাই দিল।
সাফওয়ান অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। আমি ক্যাবলাকান্তের মতো একটা করে হাসি দিচ্ছি। আব তেরা কেয়া হোয়েগা কালিয়া হিহি হিহি।
________🌺🌺________
সাফয়ানদের খাওয়ার পর্ব শেষ হলো কিছুক্ষণ আগে। একটা বিষয় দেখে অবাক ও সাথে খুশি হলাম যে সাফোয়ান আম্মুকে নিরাশ করেনি। আম্মু যত্ন করে যাই মেয়ে জামাইয়ের প্লেটে তুলে দিয়েছে সাফওয়ান তার সব ই অতি তৃপ্তি সহকারে খেয়েছে। খাবারের অপচয় করিনি। যেটুকু খেতে পারবে। সেটুকুই প্রত্যেকটা আইটেম থেকে নিয়েছে।
আম্মু আজ মেয়ে জামাইকে খাইয়ে অনেক সন্তুষ্ট। শেষে প্লেটে মিষ্টি আর দই তুলে দিতে গেলে সাফওয়ান বাধা দিয়ে বলে,
— মামনি এতক্ষণ কিন্তু তোমার ছেলে তোমার সব কথা শুনেছে। তুমি যা যা প্লেটে তুলে দিয়েছো সব কিন্তু আমি তৃপ্তি ভরে খেয়েছি। সত্যি বলতে পেটের মধ্যে আর এক ফোটাও জায়গা নেই। মিষ্টি আর দুই পরে খাব এখন আর নয়।
— আর তোমার রান্না এককথায় দুর্দান্ত । বাহিরে এসে এত খাবার কিন্তু আমি কখনো খাই নি। এবার বুঝেছি প্রীতির হাতের রান্না কেন এত সুন্দর।
লাস্টের কথাটা কানে আসতেই চমকে উঠলাম। তাকিয়ে পড়লাম সাফওয়ানের দিকে। উনি কি আদৌ সেই সাফওয়ান। নাকি এই বাড়িতে আসার আগে ওনাকে জিনে ধরেছে। আমার আম্মুকে ও মামনি বলছে আবার আমার হাতের রান্নার প্রশংসা করছে।
সাফানের মুখে আমার হাতের রান্নার প্রশংসা শুনে আম্মু খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
— তুমি যাও বাবা উপরে গিয়ে বিশ্রাম করো।
এই প্রীতম তোর ভাইয়াকে নিয়ে যা। পরে প্রীতমের সাথে সাফওয়ান রুমে চলে গেল। পুতুলেরও খাওয়া শেষ তাই পুতুল ও তাদের পিছন পিছন চলে গেল।
আমি আর আম্মু এবার খেতে বসলাম। আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি জ্বলজ্বল করছে। আমাকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে বললেন,
ভাগ্য করে সত্যিই আমি একটা মেয়ে জামাই পেয়েছি। এত বড় লোকের ছেলে হওয়ার পরেও কত তৃপ্তি সহকারে গরিবের ঘরে ভাত খেলো। প্রিতমের সাথেও দেখলি কত মিলেমিশে চলছে। আবার তোর রান্নার প্রশংসা করলো।
মায়ের কথা সবগুলো শুনে আমার মনের মত আলাদা একটা শান্তি অনুভব করলাম । মুখে বিড় বিড় করে কয়েকবার আওড়ালাম,” আমার জামাই”।
_______🌺🌺_______
দই আর মিষ্টির ট্রে নিয়ে আমার রুমে আসলাম আমি। প্রথমে প্রীতমের রুমে গিয়ে দেখি সাফোয়ান সেখানে নেই। পরে প্রীতম বলল যে সাফওয়ান নাকি আমার ঘরে গেছে। রুমে এসে দেখলাম আমার পরিপাটি ছিমছাম রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছেন তিনি। আমার রুমে তেমন কিছুই নেই কিছু প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ছাড়া।
দই আর মিষ্টির ট্রেটা বিছানার ওপরে রেখে তাকে বললাম খেয়ে নিন মা পাঠিয়েছে।
সাফওয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— তোমার রুমটা খুব সুন্দর। আর ওয়াল আর্ট গুলো তো আরো বেশি সুন্দর। তোমার হাতের কাজ সত্যিই প্রশংসা যোগ্য আর এই মেডেল গুলো কিসের জন্য পেয়েছিল?
আমি স্থির দৃষ্টিতে সাফওয়ানে দিকে তাকিয়ে থাকলাম এই এক মাসে হয়তো তিনি আমার সাথে এত কথা একসাথে বলেননি। কিন্তু আজ উনার কি হয়েছে বুঝতে পারছিনা।
আমি খাটে বসে দেয়ালে ঝোলানো মেডেল গুলোর দিকে পুরাতন স্মৃতি গুলোর মধ্যে ডুবে গিয়ে বললাম
— এগুলো আমি স্কুলে থাকতে পেয়েছিলাম। জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৮ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল “সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় খুলনা।”
যার তিনজন প্রধান প্রতিযোগী ছিলাম আমি , তন্বী আর হিয়া ট্রফি তো স্কুল রেখে দিয়েছিল কিন্তু এই মেডেলগুলো আমাদের পরিয়ে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ জাফর ইকবাল আর প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুর হক।
কথাগুলো বলা শেষ হতেই ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। ইস্ আবার যদি সেই লাল সাদা স্কুল ড্রেসটা গায়ে জড়িয়ে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ফিরে যেতে পারতাম সেই স্কুলের বারান্দায়। কতটাই না সুখময় ছিল সেই দিনগুলো।
২০১৭ চ্যাম্পিয়ন কিন্তু আমরা ছিলাম খুলনা জিলা স্কুল এটা ভুলে যেও না কিন্তু। আর চ্যাম্পিয়নশিপের প্রধান প্রতিযোগী কিন্তু আমি ছিলাম।
আমি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে গাল বাঁকিয়ে হেসে বললাম,
— তাহলে তো আপনি আমার চিরকালের প্রতিদ্বন্দ্বী।
তা ঠিক বলেছ। যেহেতু দুইজনই চ্যাম্পিয়ন ছিলাম বিতর্কতে সেহেতু একদিন প্র্যাকটিকাল প্রতিযোগিতা করাই যাই বল।
আমি তার দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বললাম,
— এখন কি কম হচ্ছে নাকি যে আলাদাভাবে প্রাকটিক্যাল প্রতিযোগিতা করতে হবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে আমরা এভাবে এক জায়গায় বসে থাকবো তার কি গ্যারান্টি আছে। এমনও তো হতে পারে এটাই আপনার সাথে আমার শেষ যাত্রা।
সাফওয়ান বোধহয় কিছুটা চমকে উঠলেন। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না। আমি উঠে চলে আসছিলাম তো আমার ডান হাতটা আঁকড়ে ধরে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
— বাকিটুকু শুনবেনা?
আমি তার দিকে না তাকিয়েই দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বললাম আপনার ওই অর্ধেক বিয়ের কাহিনী আমার শুনতে ইচ্ছা করছে না।
সাফওয়ান হাসলেন। তারপর আমার হাতটা জোরে টান দিয়ে তার বুকের সাথে আমার পিঠ ঘেঁষে বসিয়ে দিয়ে দুই হাতে আমাকে আটকে দিয়ে বললেন,
— আরে শোনো শোন, না হলে দুপুরে যে কটা ভাত খেয়েছ ওগুলো আর হজম হবে না।
ঐদিন এনগেজমেন্টের সন্ধ্যায় ভাইয়াদের পরে আমার আর সায়মার এনগেজমেন্ট ও হয়ে গিয়েছিল। খালামনির আমার হাত আঁকড়ে ধরে বলা কথাগুলো আমি ফেলতে পারিনি। তোমাকে আগেই বলেছি আমার জীবনে খালামণির অবদান অনেক।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সায়মার মুখে আমি কোন হাসি দেখতে পাই নি। মুখ দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে কি সে আদৌ খুশি হয়েছে নাকি আপত্তি আছে । অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আমরা সবাই যে যার বাসায় চলে আসি এবং আমার বাবা আগ বাড়িয়ে ই একই দিনে দুই ছেলের বিয়ে ঠিক করেন তাও সামনের সপ্তাহে । মানে এগুলো তাদের আগে থেকেই প্ল্যান করা ছিল।
রাতে বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার সময় হঠাৎ আমার সেই বন্ধুটার কথা মনে পড়ল যে বলেছিল বুয়েটের এক শিক্ষকের সাথে নাকি সায়মার সম্পর্ক আছে। আমি তাকে ফোন করলাম। আমার ব্যাপারে তার কাছে শুনলাম সে সিউরিটি দিয়ে বলল আমাকে যে যা সে যা বলেছে সব সত্য। ফোন কেটে দিয়ে এবার আমি সাইমাকে ফোন দিলাম। দেখলাম ফোন এনগেজড। পরে কিছুক্ষণ পরে সাইমা আমাকে কল ব্যাক করে তাড়াহুড়ো করে বলে,
— আসলে বাসা থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেবে আমি নিজেও জানতাম না। তোমার এই বিয়েতে মত আছে।
ওর কথার উত্তর না দিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলাম,
— তুমি কি অন্য কাউকে পছন্দ করো সাইমা?
সাইমা ওপাশে চুপ হয়ে গেছে আর একটা কথাও বলছে না। আমার সন্দেহ আরো গাড়ো হয়। ও হঠাৎ বলে ওঠে ,
— না না আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। এ বিয়েতে আমার কোন সমস্যা নেই।
সাফওয়ানকে থামিয়ে দিয়ে আমি তাকে বললাম,
— তাহলে বিয়েটা হলো না কেন? আর ও কানাডা চলে গিয়েছিল বলে, সেদিন তো আমাকে তাই বলল। ও নাকি অনেক সুন্দর একটা অপরচুনিটি পেয়েছিল।
সাফওয়ান গাল বেঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
অপরচুনিটি না ছাই। ওর ওই বুয়েটের স্যারের সাথেই পালিয়ে ছিল সেদিন।বউ কমিউনিটি সেন্টার থেকে পালিয়ে গেছে।
বিয়ের ঐ ভরা মঞ্চে ওতগুলো আত্মীয়-স্বজনের সামনে আমি একটা কার্টুনে পরিণত হয়েছিলাম। আমার ইউনিভার্সিটি টিচার আমার ফ্রেন্ডস সবাই ছিল সেখানে। আমার বাবার ওই হটকারী সিদ্ধান্তের জন্য সেদিন অনেক অবদস্থ হয়ে ছিলাম আমি।
তারপরও সেদিন বড় ভাইয়া আর সামিরা আপুর বিয়ে সম্পন্ন হয়। খালামণি আমার হাত ধরে বলেছিল,
— মাফ করে দে সাফু বাবু। আমি বুঝতে পারিনি ওই মেয়ে এমন করবে। আর দয়া করে এই কথা তুই সায়েম কে জানাবি না ও তো এখন ইন্টার্নশিপের জন্য বান্দরবনে আছে। জানতে পারলে ওই মেয়ের মুখ আর কখনো সায়েম দেখবে না।
খালামনির কথাগুলো শুনে ওই কমিউনিটি সেন্টারে আরেক মুহূর্ত দাঁড়াইনি আমি বেরিয়ে চলে এসেছিলাম। আমার ফ্রেন্ডরা তো আমাকে বারবার বলতে লাগলো তোকে সাবধান করেছিলাম কিন্তু তুই শুনিস নি। দেখ গরিবের কথা বাসি হলেও মিষ্টি হয়।
বাড়ি এসে পোশাক পরিবর্তন করে কাউকে কিছু না জানিয়ে ফোন অফ করে ছোট একটা ব্যাগ গুছিয়ে রওনা হয়ে গেলাম উদ্দেশ্যহীন পথের দিকে। সেখান থেকেই আমার ভ্রমণের নেশা চেপে বসেছে। যখনই মনটা খারাপ হয়। বা মনে হয় যে আমার চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে গেছে তখনই আমি বেরিয়ে পড়ি মুক্ত বায়ু সন্ধানে।
পরে অবশ্য জানতে পেরেছিলাম বুয়েটের ওই স্যারের অন্য আরেক জায়গায় আগেই বিয়ে হয়েছিল সেটা জানতে পেরে ঢাকায় সেই হোস্টেলে কয়েকদিন ছিল সায়মা। বাড়িতে আসার তো কোন উপায় ছিল না ওর ।তারপরে কানাডা চলে গিয়েছিল। এই কয়েকদিন আগে ফিরেছে কানাডা থেকে। ফিরে এসেই আবার….
কৌতুহলীভাবে প্রশ্ন করলাম,
— আবার কী?
— প্রথম অপশনটাকে হারিয়ে এখন দ্বিতীয় অপশনের পিছনে ছুটছে।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঝের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললাম,
— তা সমস্যা কোথায় বলুন। আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না। সাইমাকে না হয় একটা সুযোগ দিন।
সাফওয়ান দাঁতে দাঁত চেপে আমাকে দুই হাতে নিজের সাথে চেপে ধরে মুখটা নামিয়ে এনে আমার কানের কাছে বললেন,
— আমাকে কি বাজারের আলু পটল পেয়েছো? যে যাকে ইচ্ছা তাকে অধিকার দিয়ে বসে থাকবো। মনের সিংহাসনে বসার অধিকার মাত্র একজনের থাকে বুঝেছ।
তার বুকে পিঠ ঘেষে বসে থাকা অবস্থায় মাথাটা তার কাঁধে এলিয়ে দিয়ে ধিমে গলায় বললাম,
— তা পেয়ে গেছেন বুঝি…!
সাফওয়ান নিজের হাতের বাধন আরও শক্ত করে বললেন,
— হয়তো।
কথাটা শুনে অভিমানে চোখে পানি চলে আসলো আমার। ধরা গলায় বললাম,
— সে কি আপনার খুব বেশি আপন….?
আমার কাধের কাছে তার উষ্ণ নিঃশ্বাসের অস্তিত্ব অনুভব করলাম। তৎক্ষণাৎ আমার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে জড়ানো কন্ঠে বললেন,
— হুমমমম খুবই….!
আমি আবেশে চোখ বুজে নিলাম।
লাস্টের লাইনটা কান পর্যন্ত পৌঁছালেও মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছালো না আমার।
#চলবে….❣️