#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব ষোল
১৬.
বাসায় ফিরেই অপরাজিতাকে অনেক বকা খেতে হয়েছে। শাড়ি পড়ে অসময়ে ভেজার কারনে দারুণ বকা জুটেছে তার কপালে। কিন্তু একটা কথাও সে কানে নিয়েছে কিনা সন্দেহ। তার কানে এখনো ভাসছে ফায়াদের কথা। চোখের এখনো ভাসছে তার চেহারা। মাথায় এখনো ঘুরছে তার নিকটে যাওয়া।আজকের সেই মুহুর্তটা তে অপরাজিতার মনে হচ্ছিল তার চেনা গম্ভীরমুখো ফায়াদ হারিয়ে গিয়ে প্রেমিক ফায়াদ এসেছে তাকে অনুভূতিতে ভাসাতে।
অপরাজিতা মায়ের কথা মন দিয়ে শুনছিল না বলে শেষে খেল এক রাম ধমক। ধমক খেয়ে ভাবনা থেকে ছিটকে সরলো সে।তারপর আরো কিছু বকা হজম করে রুমে ফেরত আসলো সে। রুমের দরজা আটকে দিল চেঞ্জ করবে বলে। আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো সাজ খোলার জন্য। চুড়ি খুলে আয়নার দিকে তাকাতেই তার চোখ পড়লো ঠোটের দিকে৷ সাথে ভেসে উঠলো ফায়াদের সেই ফিসফিসানো কথা। দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল সে। লজ্জায় মরি মরি তার অবস্থা।মনে মনে বলল,
‘ চির চেনা এই সভ্য পুরুষ মোটেও সভ্য নয়!’
ফায়াদ অপরাজিতাকে পৌঁছে দিয়ে সাথে সাথে বাসায় গেলো না। বেশ খানিকটা ড্রাইভিং করে তারপর বাসায় গেল। তার মাথায় যেন শাড়িতে জড়ানো বৃষ্টি কন্যা ঘুরছে। একটা প্রবাদ শুনেছিল,’শাড়িতে নারি’। তার সত্যতা যেন আজ দেখেছে ফায়াদ। পুচকি সেই মেয়েটা আজ প্রেমিকা রূপে ফায়াদের মন ভুলাতে এসেছিল। কিন্তু সে কি জানে সে যে ফায়াদকে সম্মোহন করে ফেলেছে! মনটা যেন আজ একেবারেই অবাধ্য হতে বলছিল তাকে।
বাসায় পৌছানোর পর পরই ফায়াদ কাপড় চেঞ্জ করে ফেলল। ফারদিন আহমেদ আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছেন অফিস থেকে। বৃষ্টির মৌসুমে বাসায় বসে টিভি দেখা আর পাকোড়া খাওয়া টা দারুন এনজয় করেন তিনি।
ফায়াদ বাবা-মায়ের রুমের দরজায় নক করলো। আখি বেগম অনুমতি দিলেন,
‘আয়’
ফায়াদ ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো দুজনেই মুভি দেখতে ব্যস্ত। দুষ্টুমি করে বলল,
‘কাপলদের অসময়ে ডিস্টার্ব করলাম নাকি?’
আখি বেগম কোলের বালিশ টা ছুড়ে মারলেন ছেলের মুখে।ফায়াদ ক্যাচ ধরে ফেলল। মায়ের দিয়ে দেখে হাসছে সে। তার বাবা লজ্জা না পেলেও মা এখনো লজ্জা পায় ছোট ছোট ব্যাপারএ। ফারাজ আগে কোনো সুযোগ ছাড়তো না।এখন ফারাজের হয়ে ফায়াদ মাঝেমধ্যেই এরকম করে থাকে। আখি বেগম চোখ রাঙালেন ফায়াদকে।
‘অসভ্য ছেলে!’
ফারদিন আহমেদ পাকোড়া মুখে দিয়ে আফসোস এর সুরে বললেন,
‘কতো সুন্দর বৃষ্টি বাহিরে, শান্তি ময় এক আবহাওয়া অথচ তোমার বউ নেই। আহারে!’
ফায়াদ হাসলো।বাবা তাকে খোচানোর চেষ্টায় আছে সে বুঝতে পেরেছে।মাথা চুলকে বলল,
‘বউ লাগবে এজন্যই তো বাবা-মায়ের কাছে আসলাম’
ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘ওহ আচ্ছ—কি??’
সাথে সাথে টিভি অফ করে দিলেন তিনি। পুরো মনোযোগ ছেলের দিকে দিয়ে বললেন,
‘বিয়ে করবে বলছো?’
ফায়াদ বিছানার সাইডে আয়েশ করে বলল,
‘করবো না কেন?’
এবার ফারদিন আহমেদ কে বলার সুযোগ না দিয়ে তার মুখে পাকোড়া গুজে দিয়ে আখি বেগম বললেন,
‘পুচকি ফুলকে?’
ফায়াদ কপালে হাত দিল।পুচকি ফুল শুনার পর থেকে সবাই শুধু এই নামেই বলে যাচ্ছে। কপাল থেকে হাত সরিয়ে ফায়াদ সঠিক করার মতো করে বলল,
‘পুচকি ফুল নয় মা। ওর নাম অপরাজিতা।’
‘ নামটা তো ফুলই দেখছি।’
ফারদিন আহমেদ ভাবছেন। নামটা চেনা চেনা লাগছে উনার কাছে কিন্তু মনে করতে পারছেন না উনি। পাকোড়া চিবুতে চিবুতে ছেলেকে বললেন,
‘মেয়েটাকে কি আমরা চিনি? নামটা চেনা চেনা লাগছে কেন বলতো?’
ফায়াদ কিছুটা লুকিয়ে চুড়িয়ে বলল,
‘চেনো আসলে। আসিফ আঙ্কেল এর মেয়ে!’
শুনে ফারদিন আহমেদ অবাক হলেন। চোখ বড় বড় করে স্ত্রীকে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন,
‘দেখেছো? কত বড় চোর তোমার ছেলে! আমাদের চোখের সামনে দিয়ে প্রেম করছিল!’
ফায়াদ কানে হাত দিল। আখি বেগমও অবাক হলেন।
ফায়াদ আবার বলল,
‘আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছি। বিয়ে করলে তাকেই করবো।’
বলে সে বের হয়ে গেল রুম থেকে। ভাবনায় রেখে গেল মা বাবা কে। আপাতত সে কোনো জেরার সম্মুখীন হতে চাচ্ছে না। সে জানে এখন মা-বাবা যা করার করবে।
রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সারা দিনের ক্লান্তি যেন ভুলে গেল। আরাম এসে সারা দেহ জুড়ে স্থান দখল করেছে। চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসলো। অপরাজিতাকে ম্যাসেজ করে বলল,
‘একটা জ্বরের ট্যাবলেট খেয়ে নিও। আমাকে আজ আর কল দিও না। আমি ঘুমোতে গেলাম। তুমিও ঘুমাও খাওয়া দাওয়া করে। নতুন ভোরের জন্য অগ্রীম শুভেচ্ছা। হতে পারে নতুন কিছুর আগমন ঘটবে। শুভ রাত্রি ফুল!’
অপরাজিতা ফায়াদের সে ম্যাসেজ দেখলো অনেক পরে। সে রাতে আর কল করলো না সে।রাতে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সারা দিনের স্মৃতি গুলো জমতে লাগলো চোখের পাতায়। ডুবে যাচ্ছে সে কল্পনার দুনিয়ায় ধীরে ধীরে।
————-
‘তো সব গোছগাছ শেষ?’
নীতি হাসলো।ফারাজ হাসি দেখে বলল,
‘কি ব্যাপার হাসছেন কেন?’
‘স্যার আপনাকে একটু খুশি খুশি লাগছে।’
ফারাজও এবার হেসে দিল।বলল,
‘তা বোধহয় লাগছে কারন আমি সত্যিই খুশি। অনেক বছর পর পরিবারকে দেখবো এজন্য হয়তো।’
‘তাহলে পরশু সত্যিই বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছি আমরা?’
‘ইয়েস’
নীতি দ্বিধা নিয়ে বলল,
‘স্যার আমার যাওয়া টা কি ঠিক! মানে আমি গিয়ে কি করবো সেখানে?’
ফারাজ নীতির কপালে টোকা দিয়ে বলল,
‘আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট এর দায়িত্ব পালন করবেন।এবং বন্ধুরও।’
নীতি কপাল ঘষতে ঘষতে বলল,
‘বাংলাদেশে অ্যাসিস্ট্যান্ট কিসের?’
ফারাজ মেকি হেসে নাটকীয়ভাবে বলল,
‘কারন আমি জানি বাংলাদেশ গেলে বাবার বিজনেস আমাকেই দেখতে হবে। উনি আমাকে দেখে আলসেমির রাজা সাজবে। তাই সে প্রস্তুতি নিয়েই যাবো।’
নীতি হেসে দিল ফারাজের বলার ভঙ্গিমা দেখে। জিজ্ঞেস করলো,
‘এখানের কাজের কি হবে?’
‘এখানের লোকেরা দেখবে। আমি এসে মাঝেমধ্যে দেখে যাবো।’
‘ওহ’
‘আপনি এবার ভাবাভাবি বাদ দিয়ে এক কাপ কফি এনে দিন আমাকে। অনেক কাজ! ‘
নীতি গেলো কফি আনতে। ফারাজ কাজে ডুবে গেলো। সে আসলে কাজে ডুবে যেতে চাচ্ছে। কিছু স্মৃতি আছে যারা ফারাজকে দুর্বল করতে চাচ্ছে। কিন্তু ফারাজ এগিয়ে যেতে চায়। স্মৃতিরগুলোকে আকড়ে ধরে এগিয়ে যেতে চায় সামনের দিকে। বাংলাদেশ!! মায়ের দেশ। তার দেশ! হয়তো নতুন কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য!
———————-
সকাল বেলা হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে নিলেই বাধা দেন আখি বেগম। ফায়াদকে সোফায় বসিয়ে চা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
‘আজ কোথাও যাবি না।আমরা মেয়ে দেখতে যাবো।’
‘ওয়াট!!’
‘জি’
‘এতো জলদি কিভাবে কি? ম্যানেজ কিভাবে করলা।’
আখি বেগম হেসে দিলেন। বললেন,
‘তোর বাবার সাথে আসিফ ভাইয়ের সম্পর্ক ভালো। ব্যবসায়িক কাজের ক্ষেত্রে অনেক পরামর্শ করেন তারা প্রায়ই!’
ফায়াদ ভ্রু কুচকে বলল,
‘তারপর?’
‘তারপর সে কাল রাতেই তোর পুচকি ফুলের বাবা কে ফোন দিয়েছে। বেশ অনেক্ষন আড্ডা দিয়েছেন তারা।অনেক রাত অবধি কথা বলেছেন দুজনে। এক পর্যায়ে তোর কথা বলল। পুচকি ফুলকে নিজের মেয়ে করে নিয়ে আসতে চায় হ্যান ত্যান আকড়ুম বাকড়ুম আরো কতো কি!’
ফায়াদ আবারো তার মা কে শুধরে দিতে চাইলো,
‘অপরাজিতা অপরাজিতা!’
আখি বেগম হালকা ধমকে উঠলেন,
‘আরে রাখতো অপরাজিতা। আমার পুচকি ফুল নামটা অনেক পছন্দ হয়েছে। আমি এটাই ডাকবো।’
ফায়াদের নিজের মাথার চুল নিজের ছিড়তে মন চাচ্ছে। কারন সে না ছিড়লেও অপরাজিতা ছিড়বে যখন সে জানতে পারবে তার এই নামের কথা।
ফায়াদ তারপর জিজ্ঞেস করলো,
‘তারপর?’
‘তারপর তোর জন্য প্লাস পয়েন্ট হলো আসিফ ভাই তোকে খুব পছন্দ করেন৷আর.. ‘
তারপর চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,
‘তুই নাকি তাদের কয়েকমাস আগেও হাসপাতালে সাহায্য করেছিলি? কই আমি তো কিছু জানি না’
ফায়াদ চুরি ধরা পড়েছে ধরনের হাসি দিল। তারপর বলল,
‘আংকেল এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেল?’
‘তোর বাপ কথার ওস্তাদ।রাজি আবার না হবে! তার নাকি তর সইছে না তোর বিয়ে করানোর জন্য।এবার তুই রুমে যা। হাসপাতাল আজকে যাওয়া হবে না।আমরা দুপুরের পর পর রওনা দিব।’
ফায়াদকে ঠেলে ঠুলে রুমে পাঠিয়ে দিল। ফায়াদ ভাবে নি যে একদিনের মধ্যে তার বাবা এমন খেল দেখাবে।
অপরাজিতাকে তার মা এই দেখতে আসার কথা বলার পর থেকে অপরাজিতা মায়ের সাথে ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছে।তার শুধু কান্না করা বাকি। বিয়ে তো সে অন্য কাউকে করবেই না। কখনোই না!!
‘তুমি কি এখন আমাকে জোর করে বিয়ে দিবা?’
‘জোর করে বিয়ে দিব কেন? বিয়ে তো দিচ্ছি না। তারা শুধু তোকে দেখতে চাচ্ছে।’
অপরাজিতা নাকমুখ কুচকে বলল,
‘আমি কি শোপিস?’
রামিসা বেগম এবার ধমকে উঠলেন,
‘বেশি হচ্ছে এখন!এমন কেন করতেছিস বুঝতেছি তো আমি। তোকে যে আমি বললাম তোর পছন্দের ছেলে কে আমার সাথে দেখা করতে বলতে, কই সে ছেলে?আসলো তো না।’
মায়ের ধমক শুনে অপরাজিতার কান্না আসছে। খুব কষ্টে কান্না আটকে আছে সে। যার দরুন তার সমগ্র মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।মেয়ের মুখ দেখে রামিসা একটু নরম হলেন।বললেন,
‘তোর বাবার একজন পরিচিত মানুষ। ছেলেটাকেও তোর বাবা পছন্দ করে। তারা আসুক। আসলেই তো বিয়ে হয়ে যাবে না। তারা তোকে দেখতে আসবে। এমন করে বলল যে তোর বাবা মানা করতে পারে নি। আর ছেলেকে তুই চিনিস।তাই এখন কোনো আপত্তি করিস না মা আমার। ‘
অপরাজিতা আর কিছু না বলে রুমে এসে পড়লো। কল লাগালো ফায়াদকে। তার জিদ উঠছে এই ডাক্তারের উপর। কেন তার মার সাথে দেখা করতে আসলো না?
ফায়াদ ফোন ধরে কিছু বলার আগেই অপরাজিতা বলল,
‘আমাকে অন্য ছেলে দেখতে আসছে আর আপনি শুধু রোগীই দেখেন।আমাকে আর দেখা লাগবে না।রোগীকেই বিয়ে করেন তারপর ওটারেই চিকিৎসা দেন সারাজীবন!’
ফায়াদকে কিছু বলার সুযোগ ই দিল না। ফায়াদ বলল,
‘শ্বাস নাও আগে। তারপর বলো। দেখতে আসছে বলতে?’
অপরাজিতা নিজেকে বহু কসরত করে সামলে বলল,
‘পাত্রী দেখা বুঝেন? আমাকে দেখতে আসবে আজকে।’
‘ওওওওওও’
ফায়াদ বুঝতে পারলো অপরাজিতা পাত্রর ব্যাপারে কিছু জানে না এখনো।ফায়াদের স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে অপরাজিতার মেজাজ গরম হলো।চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘ওও মানে কি হ্যা?আপনি আমার মার সাথে দেখা করেন নি কেন? এখন আমি কি করবো?’
‘তুমি ছেলেকে চিনো?৷ যে আসবে তোমাকে দেখতে।’
‘মা বলল চিনি। আর আমাকে বুঝ দিচ্ছে দেখতে আসলে নাকি বিয়ে হয়ে যায় না।’
ফায়াদ ভীষণ স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘হ্যা ঠিকই বলেছে। আর হলে হবে। করবা বিয়ে!’
অপরাজিতার এবার যেন মেজাজের বারোটা বাজলো।রাগে জিদে চিল্লিয়ে বলল,
‘করবা মানে? হ্যা? আমি কি পুতুল? বিয়ে তো আমি আপনাকেই করবো।এতো সহজ আমি? আর আমি বলে রাখলাম যে ছেলে আসবে তার মাথা যদি না ফাটা’ইছি আমি! আপনারও খবর করে ছাড়বো দেইখেন!’
বলে খট করে ফোনটা কেটে দিল। ফায়াদ কান থেকে ফোনটা সরিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে বিরবির করলো,
‘সাংঘাতিক!’
(চলবে)
#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব সতেরো
১৭.
বসার ঘরে খুব সুন্দর আয়োজন করা হচ্ছে মেহমানদের জন্য।এসব দেখে অপরাজিতার মেজাজ তুঙ্গে। তখন ফায়াদের সাথে কথা বলার পর অপরাজিতা ফোনের ধারে কাছেও যায় নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই যারা আসার তারা চলে আসবে৷ অপরাজিতার বাবা গিয়েছে তাদের আনতে। অপরাজিতাকে রামিসা বেগম অ্যাশ কালারের মধ্যে কালো পাড়ের সুন্দর একটি শাড়ি পড়ালেন৷ একটু সাজাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ের জিদের কাছে পারলেন না।তারপর ভাবলেন মেয়ে তার এমনিতেই মাশাল্লাহ, সাজানো লাগবে না।
অপরাজিতা শাড়ি পড়ে সোফায় বসে আছে মুখ ফুলিয়ে। রামিসা বেগম কাজের ফাকে ফাকে মেয়ের চেহারা দেখছেন আর মিটিমিটি হাসছেন। মা কে হাসতে দেখে অপরাজিতা মুখ ফুলিয়েই বলল,
‘হাসো কেন?’
রামিসা বেগম হেসে দিয়ে বললেন,
‘তোকে কিউট লাগছে। পাত্রের সামনে এভাবে বসে থাকলে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবে।’
অপরাজিতা বুঝলো মা তাকে ক্ষ্যাপাচ্ছে।ক্ষ্যাপাবেই তো তার পছন্দের ছেলে তো আসলো না মায়ের সাথে দেখা করতে। ফায়াদকে ধরে নদীতে চুবাতে ইচ্ছে করছে অপরাজিতার। কি হতো যদি মায়ের সাথে দেখা করতো!তাহলেই তো তাকে অন্য ছেলের সামনে বসতে হতো না। মনে মনে ফায়াদের চৌদ্দ গোষ্ঠী ধুয়ে দিচ্ছে অপরাজিতা। এরই মধ্যে আবির এসে বলল,
‘আপু তুমি বিয়ে করে চলে যাবে?’
বলার সাথে সাথে ছোট খাটো এক চ’ড় খেলো বেচারা। আবির টিভিতে দেখেছিল বিয়ে করে মেয়েরা কান্না করতে করতে চলে যায়। তাই সে এসেছিল আপুর সাথে ইমোশনাল হতে। কিন্তু বেচারা তো আর জানে না তার আপুর মাথা আগুনের মতো গরম হয়ে আছে।
রামিসা বেগম আবির কে সেখান থেকে সরিয়ে বলল,
‘ থাক কান্নার নাটক করা লাগবে না আব্বাজান। গিয়ে দেখেন আপনার আব্বা কতো দূর!গেটের বাহিরে দাড়ান। বাড়ি থেকে বেশি দূরে যায়েন না।যান।’
তারপর অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ আর তুই তোর রুমে যাহ। এখানে বসে থাকিস না। যখন তোর দরকার হবে ডাকবো নে।’
‘যাবো কেন? আমাকেই তো দেখতে আসতেছে। দেখুক এখানেই বসে থাকি।’
অপরাজিতার ত্যাড়ামি দেখে চোখ গরম করে তাকালেন রামিসা বেগম। নিরুপায় হয়ে অপরাজিতা রুমে গেল।
ফায়াদ একটা সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে। বর্তমানে সে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে আছে। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে।আর পিছে ফারদিন আহমেদ ও তার স্ত্রী বসে আছে। ফারদিন আহমেদ একটু সময় পর পর ই ছেলেকে জিজ্ঞেস করছেন,
‘তুই মেয়েটাকে পটালি কিভাবে বলতো? এতো সুন্দর ফুলের মতো মেয়েটা তোকে কেন পছন্দ করলো?’
এখন আবার জিজ্ঞেস করলেন। এবার আখি বেগম হালকা ধমকের স্বরে বললেন,
‘আহহা! আমার ছেলে কি কম সুন্দর নাকি? মেয়েরা ওর পিছনে লাইন ধরে যায় আর তুমি আসছো আজগুবি কথা নিয়ে। কলেজে থাকতে এই দুই ছেলে নিয়ে কতো ঝামেলা পোহানো লাগতো আমার তা কী ভুলে গেছি নাকি আমি!’
ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘সুন্দর না সেটা তো বলছি না। ফারাজ হলে মানতাম। কিন্তু এটা তো মেয়েদের থেকে দূরে দূরে থাকতো।কখন কোন ফাকে প্রেম করলো? করলো তো করলো ধরাও পড়লো না! কিভাবে সম্ভব?’
ফায়াদ পিছে ঘুরে তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,
‘মা তুমি বাবাকে সহ্য করো কিভাবে! এতো কথা মানুষ কিভাবে বলে? কিভাবে সম্ভব!’
শেষ কথা টা বাবাকে কপি করে বলল সে। ফারদিন আহমেদ চোখ রাঙালেন ছেলেকে৷ কিন্তু ফায়াদ পাত্তা দিল না। আখি বেগম হাসছেন বাপ ছেলের কান্ড দেখে। এরা যে বাপ ছেলে এদের কান্ড দেখে মনে হয় বন্ধু।মনে মনে মাশাল্লাহও বললেন। অটুট থাকুক তাদের বন্ধন। ফারাজকে অনেক মনে পড়ে উনার। ছেলেটাকে সামনাসামনি আবার কবে যে দেখবেন!
অবশেষে তারা এসে পৌছালো অপরাজিতার বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে নামলো একে একে সবাই। অপরাজিতার বাবা তাদের অপেক্ষায়ই ছিলেন। ফারদিন আহমেদ ও আসিফ ইসলাম কুশল বিনিময় করলো গলাগলি করে। ফায়াদ এগিয়ে এসে সালাম দিল,
‘আসসালামুআলাইকুম আংকেল’
সালামের জবাব দিলেন আসিফ ইসলাম,
‘ওয়ালাইকুমুসসালাম’
মনে মনে বললেন,
‘মাশাআল্লাহ ছেলেটাকে সাদা পাঞ্জাবি তে কতো স্নিগ্ধ লাগছে।’
ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘এই হলো আমার বড় ছেলে। আপনি চিনেন আমি জানি। আর ইনি আমার প্রিয়তমা স্ত্রী।’
আখি বেগম সালাম দিলেন। আসিফ ইসলাম ব্যস্ততা নিয়ে সবাইকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাচ্ছেন। মা আর বাবাকে ফায়াদ আগে যেতো দিল। ফায়াদ গেট দিয়ে ঢুকতে গেলে আবির এসে বলল,
‘তুমি আপুকে বিয়ে করতে আসছো? তুমি তো সুন্দর তাহলে আপু রাগে কেন?’
ফায়াদ গেটের ভেতরে ঢুকে হাটতে লাগলো আবিরকে পাশে নিয়ে। বলল,
‘তোমার আপু আমাকে দেখে নি তাই।’
হঠাৎই ফায়াদের মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো,
‘আমার একটা কাজ করবে?’
আবির বলল,
‘না’
ফায়াদ ভ্রু কুচকে বলল,
‘কেনো?’
‘আমার কি দিবা?’
ফায়াদ মনে মনে বলল,
‘এই ভাই বোন দুইটাই ফাজিল!’
মুখে বলল,
‘কি লাগবে?’
আবির কিছুক্ষন ভেবে বলল,
‘আমাকে আইস্ক্রিম খাওয়াবা আর একটা গাড়ি কিনে দিবা’
‘আচ্ছা দিব। আমার কাজ টা করে দাও।’
তারপর আবিরের কানে কানে কিছু বলল।আবির সবটা শুনে আগে আগে চলে গেল।
ঘরে প্রবেশ করেই আবারো সবাই কুশল বিনিময় করলো। বসার ঘরে সোফায় বসলো সবাই। ফায়াদের সাথে অপরাজিতার বাবা ভালো মন্দ অনেক কথা বলছেন। খোজ খবর নিচ্ছেন। আবার ফারদিন আহমেদের সাথেও বিভিন্ন বিষয়ে কথা হচ্ছে।
রামিসা বেগম রান্না ঘরে ব্যস্ত হয়ে গেলেন আবার। সাহায্য করার জন্য কেউ নেই। হঠাৎ করে এসব আয়োজন হওয়ায় কাউকে ডাকতেও পারেন নি।
আখি বেগম ছেলেদের একসাথে ছেড়ে তিনি গেলেন রামিসা বেগমের কাছে।
‘আরে আপা আপনি আসলেন কেন আবার? আপনি বসুন আমি আসছি এগুলো নিয়েই।’
আখি বেগম বললেন,
‘ব্যস্ত হবেন না। ওখানে ছেলেদের কথা বার্তা মজা লাগছে না। তাই আসলাম। আপনার সমস্যা হবে না তো?’
রামিসা বেগম হালকা হেসে বললেন,
‘কি যে বলেন! সমস্যা হবে কেন?’
‘আপনার একজনই মেয়ে?’
‘হ্যা একজন মেয়ে নাম অপরাজিতা । আর ছোট ছেলে আবির।’
‘বাহ নাম গুলো ভীষণ কিউট। আমার দুই ছেলে। ফায়াদ বড় এবং ফারাজ ছোট। ফারাজ দেশের বাহিরে থাকে। ফায়াদ ডাক্তারি তে আছে।’
‘ ফায়াদ কে দেখেছি আমি। আপনার ছেলেটা আপা মাশাআল্লাহ।আমার খুবই ভালো লেগেছে।আমার যদি এমন একটা ছেলে থাকতো!’
আখি বেগম হেসে দিয়ে বললেন,
‘নিয়ে যান ছেলে টাকে। আমার কোনো মেয়ে নেই। আপনার মেয়েটা কিন্তু আমার চাই ই চাই আপা।’
রামিসা বেগম আখি বেগমের কথায় মুগ্ধ হচ্ছেন।খুবই ফ্রেন্ডলি ভাবে কথা বলছেন। এমন ভালো শাশুড়ী যদি অপরাজিতা পায় রামিসা বেগম এর থেকে খুশি কেউ হবে না। কারন আজকাল অনেক শাশুড়িদের জ্বালায় সংসারে অশান্তি লেগে থাকে।
আখি বেগম আবার জিজ্ঞেস করলেন,
‘আপনার মেয়েটা কোথায় আপা?’
রামিসা ব্যস্ত হয়ে বললেন,
‘আপনি বসুন না আপা! আমি নিয়ে আসি ওকে?’
আখি বেগম চমৎকার হেসে বললেন,
‘আপনি রুম বলেন। আমি নিয়ে আসি। আমি ফুলকে দেখার জন্য ভীষণ এক্সাইটেড!’
রামিসা বেগম তার এক্সাইটমেন্ট বুঝলেন না। তবে রুমটা দেখিয়ে দিলেন তিনি। আখি বেগম রুমের দিকে এগোলেন।
অপরাজিতা বসার ঘরে মানুষের কথার আওয়াজ পেয়েছে আগেই। সে মন খারাপ করে বসে আছে।শাড়ি পড়ে বিছানায় পা উঠিয়ে তো বসতে পারবে না। তাই বিছানার কিনারে পা ঝুলিয়ে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে।হঠাৎ শুনলো,
‘ অপূর্ব সুন্দর ফুল মাশাল্লাহ!’
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো মাঝবয়সী এক নারী দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে খুবই কিউট একজন মানুষ মনে হলো অপরাজিতার কাছে।সে তাকাতেই বলল,
‘ভেতরে আসতে পারি?’
অবাক হলো তার কাছে রুমে আসার পারমিশন চাচ্ছে।
অপরাজিতা সোজা হয়ে বসে বলল,
‘জি জি আসুন’
আখি বেগম রুমে প্রবেশ করে অপরাজিতার সামনে গিয়ে বললেন,
‘ আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে!’
আখি বেগমের কথা বুঝতে না পেরে অপরাজিতা ভ্রু কুচকে তাকালো। কিন্তু কিছু বলল না।আখি বেগম আবার বললেন,
‘চলো বাকি কথা বসার রুমে হবে।তোমার মা তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে।’
অপরাজিতার যেতে ইচ্ছা না করলেও মায়ের কথা শুনে গেল। অপরাজিতা ইচ্ছে করছে শাড়ি টাড়ি খুলে ঘুমিয়ে থাকতে। এসব তার কাছে বিরক্ত লাগছে।
বসার ঘরের কাছাকাছি যেতেই পুরুষদের গলা শুনতে পেল সে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল এই ছেলেকে এমন কথা বলবে যে মেয়ে দেখতে আসার আগে একশ বার ভাববে কার প্রেমিকা কে দেখতে আসছে!
বসার ঘরে ঢুকেই তিনজন পুরুষকে দেখতে পেল। তার বাবার চেহারা দেখতে পেলেও বাকি দুজনকে সে দেখতে পারছে না কারন সে তাদের পিছন দিকে দাঁড়িয়ে আছে।রামিসা তাদের নাস্তা খাবার দাবার দিচ্ছেন। অপরাজিতাকে দেখেই আসিফ ইসলাম বললেন,
‘এইতো আমার আম্মাজান এসে পড়েছে।’
আসিফ ইসলামের কথা শুনে দুজন পুরুষ পিছে ঘুরলো।দুজনকে দেখেই অপরাজিতা অবাকের থেকেও অবাক হলেন।এদেরকে এখানে সে কল্পনা তেও আশা করে নি। ডাক্তার আর ডাক্তারের বাবা! এরা দুজন এখানে।তার মানে তার সাথে দাড়ানো নারী আর কেউ নয় ফায়াদের মা! ফায়াদের বাবা কে অপরাজিতা চিনলেও মা কে চিনে না। সে অবাক হয়ে তার পাশের আখি বেগমের দিকে তাকালো।আবার ফায়াদের দিক তাকালো।
মেয়েকে এমন ড্যাবড্যাব করে তাকাতে দেখে রামিসা বেগম এগিয়ে এসে আস্তে করে বললেন,
‘এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? চোখ নামা ফাজিল!’
আখি বেগম তা শুনতে পেরে ফিক করে হেসে দিলেন। লজ্জা পেল অপরাজিতা। আখি বেগম অপরাজিতাকে নিজের পাশে বসিয়ে নিজেও বসলেন। অপরাজিতা আড়চোখে ফায়াদের দিকে তাকাচ্ছে। যতবার চোখাচোখি হচ্ছে চোখ রাঙাচ্ছে সে। ফায়াদ মিটমিটিয়ে হাসছে।
রামিসা বেগমও বসলেন স্বামীর পাশে। আখি বেগম বললেন,
‘এখন বলেন আপা আর ভাই।মেয়ে কি আমাদের দেওয়া যায়? আমাদের কোনো মেয়ে নেই।তাই ছেলের বউকে মেয়ের থেকে কম আদরে রাখবো না ইনশাআল্লাহ।’
ফারদিন আহমেদ হেসে হেসে বললেন,
‘আমার ছেলে কি পছন্দ হয় আসিফ?মেয়ের জামাই করা যায় নাকি?’
আসিফ ইসলাম মুচকি হেসে বললেন,
‘আপনার ছেলে তো মাশাআল্লাহ। যেকোনো মেয়ের বাবা চাইবে এমন ছেলেকে তার মেয়ের জন্য। এখন আমি বললেই তো হবে না। আমার মেয়েটার মতও লাগবে আমার। আমি আমার আম্মাজানের উপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না।’
অপরাজিতা বাবার কথায় মাথা তুলে বাবার দিকে তাকালো।তার কাছে মনে হলো এর থেকে ভালো বাবা আর কোথাও নেই।
ফারদিন আহমেদ ফায়াদের কানে কানে বললেন,
‘কিরে মেয়ে কি তোকে পছন্দ করে না?’
ফায়াদ বাবাকে ইশারায় বুঝালো, থামো রে বাবা!
ফারদিন আহমেদ হাসলেন। আসিফ ইসলামকে বললেন,
‘তা তো অবশ্যই। কারো কোনো আপত্তি না থাকলে ছেলে মেয়েকে আমরা একে অপরের সাথে কথা বলতে দেই?’
আসিফ ইসলাম বললেন,
‘হ্যা অবশ্যই। আম্মাজান তুমি ফায়াদকে নিয়ে ছাদে চলে যাও। আবিরকে নিয়ে যাও সাথে।আমরা ততোক্ষণ বড় রা কথা বলি।’
অপরাজিতা মাথা হেলিয়ে ফায়াদকে ইশারায় আসতে বলল।তাদের সাথে আবিরও এলো।বসার ঘর থেকে বের হতেই অপরাজিতা মাথার থেকে ঘোমটা ফেলে দিল।আবিরকে বলল,
‘এই তোর যাওয়া লাগবে না ছাদে। তুই এখানেই থাক আমি ডাকলে আসিস।আমার ব্যাগে চকলেট আছে তোকে দিব পরে।’
চকলেট এর লোভে আবির মেনে গেল।তারপর ফায়াদের দিকে ফিরে রাগী ভাবে বলল,
‘আসেন’
বলার পর নিজেই আবার হাত টেনে নিয়ে গেল ছাদে। রেলিঙের পাশে দাঁড়িয়ে অপরাজিতার কোমরে হাত দিয়ে বলল,
‘আপনি আমাকে এভাবে ধোকা দিলেন! আমাকে বললে কি হতো? আপনি জানেন আপনার জন্য আমাকে কতো কথা শুনতে হইছে। আপনি আমার পছন্দের ছেলে এটা তো আর আম্মু জানেন না।আমার সারা জীবন কথা শুনাবে যে আমার পছন্দের ছেলে ভয় পেয়ে পালাইছে। আর আমাকে এভাবে ভয় দেখালেন এটা কি ঠিক? আমি ভাবছি কে না কে দেখতে আসবে।যদি অন্য কেউ এসে আমাকে—‘
মাঝপথেই থেমে গেল অপরাজিতা।থামতে বাধ্য করা হয়েছে তাকে। হৃদস্পন্দন থেমে গেল যেন এক মুহুর্তের জন্য। ফায়াদ খুব যত্ন সহকারে ঠোঁট ছুয়ে আছে অপরাজিতার কপালের মধ্যখানে। চোখ বন্ধ করে ফেলল অপরাজিতা। হাত মুঠো করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। এ যেন এক সুখের পরশ বইছে সাড়া মন জুড়ে।
কপালে ঠোঁট ছুয়ে অপরাজিতার চুলগুলো ঠিক করে দিল ফায়াদ। অপরাজিতার কপালের ছোট্ট টিপ টা খুলে ফেলে দিল। তারপর আরো একবার কপালের মধ্যেখানে ছুয়ে দিল।শাড়ির আচল দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে বলল,
‘অন্য কেউ আসবে না। তুমি আমার বাগানের ফুল। তাই আমারই বউ হবে।’
তারপর কপালে হাত বুলিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
‘টিপ পড়বে না আর কখনো’
অপরাজিতা তাকিয়ে রইলো। তার কান্না পাচ্ছে। ভীষণ রকম কান্না পাচ্ছে। কেন কান্না পাচ্ছে সে জানে না। ফায়াদকে নিজের কাছে রেখে দিতে ইচ্ছে করে তার। মনে হয় যেন দূরর গেলেই হারিয়ে যাবে। কিশোরী বয়সের সেই প্রথম ভালোবাসা ফায়াদ তার। হারালে সে নিজেকে সামলাতে পারবে? পারবে না। তাই ভয় হয়! ভীষণ রকম ভয়।
অপরাজিতা ভীষণ অস্থিরতা নিয়ে এলোমেলো ভাবে ফায়াদকে বলল,
‘আমি আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?’
ফায়াদ অপরাজিতার বলার ধরণে কেপে উঠলো। তাকে অনুরোধ করছে অপরাজিতা। এভাবে কেউ কাউকে অনুরোধ করেছে কখনো একটু জড়িয়ে ধরার জন্য?
অপরাজিতা আবার বলল,
‘প্লিজ!’
ফায়াদের অপরাজিতার এই ব্যাকুলতা এবার আর সহ্য হলো না। সে এক টান দিয়ে অপরাজিতাকে বুকে জড়িয়ে নিল। খুব নিবিড়ভাবে জড়িয়ে নিল তার পুচকি ফুলকে। অপরাজিতা হাত দিয়ে পিঠ জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। চোখের কুর্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো এক ফোটা জল।বিরবির করে বলল,
‘শান্তি’
ফায়াদ শুনলো। শুনে আরেকটু আকড়ে ধরলো অপরাজিতাকে। কানের কাছে বলল,
‘জায়গা টা তোমারই।’
কিছু সময় ছাদে কাটিয়ে দিল একে অপরের অনুভূতি আদান-প্রদান এর মাধ্যমে ।ছাদ থেকে নিচে নেমে অপরাজিতা আর ফায়াদ আবারো বসার ঘরে গেল। অপরাজিতা বাকিদের সাথে এবার স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে মুচকি হেসে হেসে। আখি বেগমের সাথে এটা ওটা বলছে। আবার আড়চোখে ফায়াদকেও দেখছে কিছু সময় পর পর। ফায়াদও দেখছে শাড়িতে জড়ানো তার ফুলকে।
বেশ অনেকটা সময় তারা কথা বলল। এখন বিদায়ের পালা। আসিফ ইসলাম এবং রামিসা বেগম সকলকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন।আসিফ ইসলাম ফারদিন আহমেদ এর সাথে টুকটাক কথা বলছিল তখন ফায়াদ একটু দূরে দাঁড়ানো রামিসা বেগমের কাছে গিয়ে বলল,
‘আন্টি একটা কথা ছিল’
রামিসা হাসি মুখে বললেন,
‘বলো বাবা’
ফায়াদ কিছুটা ইতস্তত হয়ে বলল,
‘অপরাজিতা যাকে পছন্দ করে সে আমি। অন্য কেউ নয়।’
তখনই ডাক পড়লো ফায়াদের,
‘ফায়াদ আসো!’
‘আসছি আব্বু’
তারপর রামিসা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,
‘আসি আন্টি। আসসালামু আলাইকুম!’
বলে গাড়িতে বসে গেল। রামিসা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।
গাড়িতে বসে অপরাজিতাকে ম্যাসেজ পাঠালো ফায়াদ,
‘আর কথা শুনতে হবে না। পছন্দের ছেলে ভয় পেয়ে পালায় নি।’
(চলবে)