#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব ত্রিশ
৩০.
দুদিনের জ্বর কাটিয়ে নীতি আজ সুস্থ হলো৷ তাই সে অফিসে যাচ্ছে আজ ফারাজের সাথে৷ ফারাজ তার সাথে একদম স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে।সেদিন রাতে ফারাজ তার রুমে এসেছিল তার মনে আছে কিন্তু সে কি কি বলেছে তার পুরোপুরি মনে নেই৷ তবে কান্না করছিল এটা মাথায় আছে। এবং সেটা নিয়ে সে ভীষণ লজ্জিত।
ফারাজ গাড়ি চালাতে চালাতে বলল,
‘নীতি আজ আপনাকে অফিস শেষে আমার সাথে শপিংমল যেতে হবে।’
‘জি’
‘জিজ্ঞেস করবে না কেন? ‘
নীতি উত্তর দিল,
‘আমি জানি আপনি গিফ্ট কিনতে যাবেন অপরাজিতা আর ভাইয়ের জন্য।’
ফারাজ অবাকের সুরে বলল,
‘আরে কিভাবে বুঝলেন?’
‘আপনিই বলেছিলেন।’
ফারাজ খেয়াল করলো নীতি স্বাভাবিক এর চেয়ে চুপচাপ।হয়তো দুর্বলতা এখনো কিছুটা রয়ে গিয়েছে।
কাল অপরাজিতা আর ফায়াদের আকদ। তা নিয়ে মহা ব্যস্ত আখি বেগম। কাছের কিছু আত্নীয়দের দাওয়াত করেছে।তারা কাল আসবে৷ আর রাফিয়া,রিজু আর তাদের মা আগেই হাজির।রাফিয়ার বাবা ব্যবসায়ীক কাজে অন্য কোথাও থাকে তাই আসতে পারে নি।
বাসায় তো ফায়াদ আর ফারাজ নেই তাই আখি বেগম ফারদিন আহমেদ ও রিজুকে এইটা ওটা বলে ফরমায়েশ করতেই আছেন৷ শেষে রিজু আর না পেরে পড়ার বাহানা দিয়ে বাহিরে চলে এসেছে। বেচারা ফারদিন আহমেদ পড়ে গেছে বউয়ের চিপায়।তার বউয়ের নতুন করে বাড়ি সাজাতে মন চাচ্ছে।ছেলে বিয়ে করছে তাই।এতো করে বুঝালো ছেলের বউ তো এখন আসছে না। পরে আসবে।কিন্তু কে শুনে কার কথা!
‘এই তুমি কাজ করছো না কেন?’
‘বলছিলাম কি আমি একটু অফিস থেকে ঘুরে আসি?’
আখি বেগম দৃঢ় কন্ঠে বললেন,
‘একদম না ‘
‘আচ্ছা’
রাফিয়া মিট মিট করে হাসছে এই দৃশ্য দেখে৷ হাসবেন্ড রা এভাবেই জনম জনম ধরে বউকে মান্য করে আসছে বুঝি!
রিজু বাসা থেকে বের হয়েই ফায়াদের কাছে গেল। গিয়ে দেখলো ফায়াদ বসে বসে মোবাইল স্ক্রল করছে।আজ হয়তো রোগী কম। ফায়াদকে ডাকতেই ফায়াদ মাথা তুলে তাকালো।
‘ তুই এখানে?’
রিজু হেসে বলল,
‘বাসায় ফুপি জালাচ্ছে সবাইকে। তাই বের হয়ে আসলাম।’
ফায়াদ হালকা হেসে বলল,
‘জানতাম।’
‘কাজ নেই?’
‘আপাতত নেই’
‘বের হবে ভাই?’
‘কোথায়?’
‘চলো ফারাজ ভাইয়ের অফিসে যাই’
ফায়াদ ভাবলো। যাওয়া যায়। আজ তার কাজও নেই হাসপাতালে তেমন।তাই সে আপত্তি করলো না।
রিজু আর ফায়াদ অফিসে এসে হাজির। ফারাজ তাদের দেখে চমকে গেলেও খুশি হলো।ফায়াদ সচরাচর অফিসে আসে না।
‘ডাক্তার ভাই আজকে অফিসে ব্যপার কি?’
ফায়াদ গিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
‘দেখতে এলাম অফিস কেমন চলে’
ফারাজ শব্দ করে হেসে দিল।বলল,
‘তোমার অফিস নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই আমি জানি। ‘
ফায়াদ হাসলো। আসলেই নেই। তার বিজনেস ভালো লাগে না। রিজু বসে বলল,
‘ভাই ডিস্টার্ব করলাম না তো এসে?’
ফারাজ বলল,
‘না। ভালো হয়েছে এসেছিস।আর এটাকে নিয়ে এসেছিস ভালো করেছিস৷ কাল থেকে তো বউয়ের হয়ে যাবে। আমাদের আর সময় দিতে পারবে নাকি?’
রিজু হাসলো।দাত কেলিয়ে বলল,
‘একদমি পারবেনা। অপরাজিতাকে তো চিনো না। তাকে সময় না দিলে মাথায় উঠে নাচবে।’
ফারাজ খোচা মেরে বলল,
‘কি ব্যাপার ভাই।আজ এখনো ফোন দিল না যে?’
ফায়াদ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
‘দিবে না’
‘ওহ দিবে দিবে’
ফায়াদ বলল,
‘দিবে না। ব্লক মেরে দিয়েছে।’
ফারাজ আর রিজু একসাথে বলল,
‘কি???’
ফায়াদ তখনও স্বাভাবিক। মাথা নেড়ে হ্যা বলল।
রিজু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ব্লক?তোমাকে? কেন?’
‘সে আরেক কাহিনী।’
ফারাজ বলল,
‘বল না ভাই?’
তখনি নীতি এলো সবার জন্য কিছু খাবার নিয়ে।রিজু নীতিকে বলল,
‘বসো আপু।ফায়াদ ভাইকে অপরাজিতা ব্লক করে দিয়েছে শুনবা না?’
নীতি অবাক হলো। ব্লক করে দিল। তাও ফায়াদকে। কিন্তু কেন?সে বসে পড়লো শোনার জন্য। সবার কৌতুহল দেখে ফায়াদ মাথায় হাত দিল। এখন এদের বলতেই হবে!
————
গতকাল অপরাজিতা এসেছিল হাসপাতালে ক্লাস শেষে।ফায়াদের কেবিনে ঢুকতেই দেখলো ফারাজ নেই। সে অপেক্ষা করলো।কিছুক্ষণ পর এক মাঝবয়সী নার্স আসলো। মহিলা কে দেখে মনে হচ্ছে সে অপরাজিতাকে দেখে বিরক্ত। অপরাজিতা জিজ্ঞেস করলো,
‘উনি কোথায় গিয়েছেন?’
মহিলা ত্যাছড়াভাবে উত্তর দিল,
‘রাউন্ডে গিয়েছেন। আসবে।’
‘ওহ আচ্ছা।’
নার্সটি বের হতে গিয়েও আবার আসলো। এসে অপরাজিতাকে বলল,
‘তুমি মেয়েটা কেমন বলো তো। প্রতিদিন আসো ফায়াদ এর জন্য। ফায়াদ ছেলে টা নেহাত ভদ্র তাই কিছু বলে না। তোমাদের মতো মেয়ে গুলো সুন্দর ছেলে দেখলেই পিছে পিছে ঘুরে। যতসব ছ্যাছ’ড়ামি!’
‘কি?’
অপরাজিতা থম মেরে উনার কথা শুনে। তার রাগ ও লাগছে। কিন্তু মায়ের বয়সী ইনার সাথে অভদ্রতা করতে ইচ্ছে করছে না। নিজেকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
‘আপনি জানেন আমি কে?’
মহিলা এবার বাকা ভাবে বললেন,
‘সে তুমি যাই হও বাবা ফায়াদের পিছে আর ঘুরোনা। ফায়াদকে আমি আমার মেয়ের জামাই বানাবো।মেয়ে মানুষ এভাবে ছেলেদের পিছে ঘুরো না। এখানে এসেছি ২ মাস হলো। প্রতিদিনই দেখি আমার ফায়াদ বাবার পিছে ঘুরো। কিসব কাণ্ড!’
এরই মধ্যে ফায়াদ প্রবেশ করলো।অপরাজিতার তো রাগে শরীর কাপছে।তাকে কি যা তা বলছে এই মহিলা৷ তাকে এভাবে কেউ বলে নি কখনো! সে নাকি ছেলেদের পিছনে ঘুরে! ভাবা যায়?
ফায়াদকে দেখে অপরাজিতা রাগে দাতে দাত চেপে বলল,
‘করেন উনার মেয়েকে বিয়ে!’
বলে হন হন করে বেরিয়ে গেল সে।তারপর আবার ফিরে ফায়াদকে একটা চিমটি কেটে গেল। ফায়াদ ব্যথায় আহ করে উঠলো। সে তো আগাগোড়া কিছুই বুঝলো না। অপরাজিতা এভাবে বেরিয়ে গেল কেন?তাকে কেন চিমটি দিল।
নার্সটির দিকে তাকাতেই সে হেসে বলল,
‘চিন্তা করো না ফায়াদ।মেয়েটা তোমাকে আর জ্বালাতন করতে পারবে না।কতো বড় বেয়াদব তোমাকে চিমটি ও দিয়ে গেল।’
ফায়াদ অবাক হয়ে বলল,
‘মানে?’
নার্সটি তাকে সব বলল।সব শুনে ফায়াদের মাথায় হাত।ফায়াদ ভাবছে শুধু তো চিমটি দিয়েছে৷ চুল যে ছিড়ে নাই তাই তো তার কতো জন্মের ভাগ্য।পরে যখন ফায়াদ অপরাজিতা কে কল করে তার নাম্বার ততক্ষণে ব্লক লিস্টে চলে গিয়েছে।
————
সব শুনে রিজু বলল,
‘তুমি নার্সটিকে কিছু বলো নি?’
ফায়াদ বলল,
‘নার্সটা কে জিজ্ঞাসা কর!’
‘কে?’
‘সায়মা আন্টি!’
ফারাজ আর রিজু একসাথে বলে উঠলো,
‘ওয়াট!!’
‘হুম’
তাদের এই রিয়েকশন দেখে নীতি বুঝলো না কি হয়েছে।
তখন ফারাজ বলল,
‘আমি বলছি সায়মা আন্টি কে? আমার মায়ের অনেক দূর সম্পর্কের বোন। তিনি নার্স।কাহিনী হলো আমরা জন্ম হওয়ার পর তিনি আমাদের দেখেই সবার আগে যে কথা টা বলেন তা হলো আমার মেয়ের জামাই! অথচ তার মেয়ে তখন আমাদের থেকে ৩ বছরের বড়।’
রিজু পাশ থেকে নীতির কানে ফিসফিস করে বলল,
‘মহিলার মাথায় একটু সমস্যা আছে।’
ফায়াদ তা শুনে হালকা করে চোখ রাঙালো।
ফারাজ আবার বলা শুরু করলো,
‘তো ছোট বেলা থেকেই উনি যখন আমাদের বাসায় আসতেন আমাদের আশে পাশে কোনো মেয়ে দেখলেই তাকে এটা ওটা বলে দূরে সরিয়ে দিতেন৷ আমাদের মা তো এই কান্ডে মহা বিরক্ত ছিল৷একবার এমন হয়েছিল যে পাশের বাসার এক পিচ্চি মেয়ে আমাদের সাথে খেলতো।আন্টি এটা দেখে তাদের মায়ের কাছে বলে এসেছিল আমাদের নাকি তার মেয়ে ডিস্টার্ব করে। এটা শুনে আমাদের মায়ের সে কি রাগ! উনি আন্টিকে বুঝাতে আন্টি আবার মাকে উল্টো বুঝায়। সায়মা আন্টি রা তারপর অনেক দূরে বাসা নেওয়ায় তাদের আসা যাওয়া কমে যায়।’
তারপর ফায়াদ বলল,
‘এখন তিনি আবার এখানে শিফট করেছেন এবং আমার হাসপাতালে আছেন। অপরাজিতা কে চিনেন না তাই উল্টাবপাল্টা কি কি বলেছেন কে জানে!’
ফারাজ দুষ্টুমি করে বলল,
‘এখন এই পুচকি ফুল তোকে বিয়ে করবে তো?’
ফায়াদ বাকা হেসে বলল,
‘সে দুনিয়া উল্টে গেলেও আমাকেই বিয়ে করবে।’
রিজু বলল,
‘ব্লক তো খুলল না।’
ফারাজ এক চোখ টিপে বলল,
‘আরে বুঝিস না কেন? কাল আদর দিয়ে ব্লক খুলাবে।’
নীতি ফারাজের কথা শুনে লজ্জা পেল। তাই সে সেখানে আর থাকলো না। কাজের কথা বলে বেরিয়ে গেল। ফায়াদ নীতি আর ফারাজকে পর্যবেক্ষণ করছিল অনেকক্ষণ। সে জিজ্ঞেস করলো,
‘নীতির কি হয়েছে?’
ফারাজ বলল,
‘কই কি হয়েছে?’
ফায়াদ আর কিছু বলল না। নিরবে শুধু দেখে গেল।
তারপর তারা তিন ভাই বেশ কিছুক্ষন আডডা দিল। একটা সময় ফায়াদ আর রিজু বের হলো।দুজনে বাসায় এলো।
ফায়াদ বাসায় আসতেই বিচার দেয়া শুরু করলেন আখি বেগম।
‘তোর বাপ একটা কাজও ঠিকভাবে পারে না। কিভাবে কি করবো বল তো।’
ফায়াদ তার মা কে শান্ত করে বলল,
‘মা অপরাজিতা এখন এ বাড়িতে আসছে না। এতো আগে থেকে এগুলো করে কি লাভ।পরে তো থাকবে না।’
আখি বেগম ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,
‘পরে আবার করবো। এখন তুই আমাকে সাহায্য কর। ওপাশের পর্দা গুলো চেঞ্জ করে দে যা।তারপর আরো কিছু আছে।’
ফায়াদ আর কি করবে৷ মায়ের খুশি বড় খুশি। এসব করে যদি সে শান্তি পায় তাহলে করুক।
অফিসের পর নীতি আর ফায়াদ শপিংমল এ গিয়ে ফায়াদ আর অপরাজিতার জন্য গিফট কিনল।বাড়ি ফেরার পথে কেউ কোনো কথা বলছে না। অথচ তারা কতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতো।
একটা পর্যায়ে ফারাজ বলল,
‘এভাবে আর কতোদিন চলবে নীতি?’
হঠাৎ এ প্রশ্নে নীতি অবাক হলো,
‘জ্বি?’
ফারাজ গাড়ি টাকে এক সাইডে পার্ক করে বলল,
‘আমরা তো ফ্রেন্ড তাই না?’
‘জ্বি’
‘তাহলে এতো অস্বস্তি এসেছে কেন আমাদের মধ্যে?’
নীতি মাথা নিচু করে বলল,
‘স্যরি স্যার।’
ফারাজ নীতির মাথা আলগোছে উচু করে দিল। বলল,
‘নো নো মাথা নিচু করবেন না। লিসেন নীতি আমি আপনার অনুভূতির সম্মান করি।কিন্তু আপনি তো জানেন যে—‘
কথা শেষ হওয়ার আগেই নীতি বলল,
‘আমি কোনো ইনটেনশন নিয়ে সেগুলো বলি না। আমি বলতাম না কখনো। আমি বলেছি তাই আমি লজ্জিত৷ আর কখনো এ ধরনের কথা আমি বলবো না৷আপনি আমাকে ক্ষমা করুন স্যার।’
কথা গুলো বলতে নীতির খুব কষ্ট হচ্ছিল। তবুও সে নিজেকে নিজে ওয়াদা করলো আর কখনো নিজের অনুভুতি ফারাজের সামনে যাতে না আসে সে খেয়াল রাখবে। অনুভুতি গুলো না হয় মনের মাঝে চেপে রয়ে যাক।
ফারাজ বলল,
‘ক্ষমা করার কিছু নেই। আপনি সহজ হোন। হুম?’
নীতি হাসিমুখে বলল,
‘জ্বি স্যার’
গাড়ি স্টার্ট দিল। তারপর তারা টুকটাক নানা গল্প করছে যাওয়ার পথে।নীতি হাসিমুখে আবার আগের মতো কথা বলার চেষ্টা করছে।মুখে হাসি থাকলেও তার ভিতরে ভাঙচুর হচ্ছে। এতো সহজ অনুভূতি চেপে রাখা? লোকটা বুঝলো না। বুঝলো না সে।
(চলবে)
#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব একত্রিশ
৩১.
সকাল বেলা ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জাগাচ্ছে রাফিয়া আর আখি বেগম। ফায়াদ তো মহা বিরক্ত এভাবে ঘুম ভাঙানোতে। তবুও নিরবে বসে রইলো সোফায়। নীতি হাই তুলতে তুলতে বসলো সোফার এক কোণে৷ সোফায় বসে ঝিমুচ্ছে সে। সবাই এসে বসলেও ফারাজের এখনো খবর নেই। তাই আখি বেগম গিয়ে কান টেনে নিয়ে আসলো তাকে। ফারাজ গাল ফুলিয়ে সোফায় নীতির বিপরীত পাশে বসলো৷
সোফায় বসতেই ফারাজের নজর গেল বসে বসে ঘুমে ঢলে পড়া এক রমনীর দিকে৷ এলোমেলো চুল, ফুলোফুলো মুখে সোফায় গালে হাত দিয়ে বসে বসে ঝিমুচ্ছে নীতি।হুট করেই দৃশ্য টা খুব কিউট লাগলো ফারাজের নিকট। সে মোবাইল দিয়ে একটা ছবি তুলতে চাইলো কিন্তু মোবাইল তো সে রুমে ফেলে এসেছে। হঠাৎ ই আবার তার মাথায় আসলো সে ছবি কেন তুলতে চাইলো?
রিজু হাই তুলে বলল,
‘ফুপি কি শুরু করলা সকাল সকাল!’
আখি বেগম কোমরে হাত রেখে বললেন,
‘সকাল?সময় দেখেছিস! আজ বিয়ে না?’
ফারদিন আহমেদ এবার মুখ খুললেন,
‘আহা বিয়ে তো তোমার ছেলের। তোমার আর আমার না।’
আখি বেগম চোখ গরম করে বলল,
‘চুপ থাকো।’
ফারদিন আহমেদ ভদ্র বাচ্চাদের ন্যায় বললেন,
‘আচ্ছা।’
সকলে এই কান্ডে হেসে দিল। সবার দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই সবার হাসি বন্ধ।
রাফিয়ার মা সবাইকে চা এনে দিলেন।
আখি বেগম বললেন,
‘আমি আর অপরাজিতা মিলে একটা প্লান করেছি। যতই ঘরোয়া ভাবে হোক। বিয়ে তো! তাই ছবি তো তুলবোই। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মেয়েরা সবাই শাড়ি পড়বে। একই রকম। আর ছেলেরা সবাই পাঞ্জাবি, একই রকম। শুধু ফায়াদ আর অপরাজিতা ভিন্ন রকম পড়বে। শাড়ি আনিয়েছি। পাঞ্জাবিও আনিয়েছি। কিন্তু তাদের দেওয়া হয় নি। ফারাজ আর রিজু গিয়ে দিয়ে আসবি একটু পর।’
ফারাজ বলল,
‘এতো সকালে?’
আখি বেগম তার পিঠে চাপড় মেরে বললেন,
‘দুপুরে বিয়ে। দুপুরে দিবি গা’ধা?’
ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘এটা বলতে সবাইকে একসাথে করার কোনো দরকার ছিল?’
আখি বেগম স্বাভাবিক ভাবে বললেন,
‘ছিল তো।’
‘কি?’
আখি বেগম কুটিল হাসি দিয়ে বললেন,
‘তোমাদের ঘুম নষ্ট করা আর কিছু না। ‘
বলেই তিনি গেলেন তার কাজে। বাকিরা যেন আহাম্মক বনে গেল। ফায়াদ সোফা থেকে উঠে বলল,
‘এখনই এই অবস্থা। না জানি অনুষ্ঠানে কি করে!’
ফারাজ অসহায় চাহনী দিয়ে বলল,
‘ভাই এভাবেই তুলে নিয়ে আসিস।নাহয় তুই বুঝতেছিস না।আম্মু, রাফিয়া আর তোর এই পুচকি ফুল। তিন মাথা একসাথে হয়ে আমাদের অবস্থা খারাপ করে ফেলবে।’
ফারদিন আহমেদ চা খেয়ে মাথা ঝাকাতে ঝাকাতে বললেন,
‘এই আমার বউকে কিছু বলবি না। বউ আমার লাখে এক!’
ফায়াদ আর ফারাজ একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। তাদের বাবা এই কথা টা প্রায়ই বলে। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছে। বাবা মায়ের এতো সুন্দর বন্ধন যেন বাকি বন্ধন গুলো কে ঠিক রাখে।
সকাল ৮:৩০ বাজে অপরাজিতা সোফায় গাল ফুলিয়ে বসে আছে কারন তার ছোট খালা এসে তাকে টেনে তুলেছে। বলছে বউরা নাকি এতো সকাল পর্যন্ত ঘুমায় না। তার তো কাজ নেই সে উঠেই বা কি করবে।
আসিফ ইসলাম মেয়ের চেহারা দেখে বললেন,
‘আম্মা তুমি আবার গিয়ে ঘুমাও যাও!’
এই কথা আমিনা বেগম শুনে বললেন,
‘ঘুমাও মানে? দুলাভাই আপনি বাজারে যান আগে। আপনারে আপা না বাজারে যাইতে বলছে।’
আসিফ ইসলাম অপরাজিতাকে আস্তে করে বলল,
‘তোর এই ছোট খালা বি’চ্ছুই রয়ে গেছে। আমার বিয়ের সময়ও বি’চ্ছুগিড়ি করছে। এখনো করতেছে।’
আমিনা বেগম কাশি দিয়ে বলল,
‘দুলাভাই আমি কিন্তু শুনতেছি।’
আসিফ ইসলাম বললেন,
‘হ্যা বাজারে যাচ্ছি।’
তিনি গেলেন বাজারে। অপরাজিতাকে তার মা নাস্তা দিয়ে গেল করার জন্য। তাই সে সোফায় বসে নাস্তা করছে আর টিভি দেখছে। কলিং বেল বাজলো।
কলিং বেল এর আওয়াজ শুনে অপরাজিতা মাথায় ঘোমটা টেনে গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই সামনে রিজু আর ফারাজকে দেখলো। তাদের ভিতরে আসতে বলল।
রিজু আর ফারাজকে দেখে রামিসা বেগম বললেন,
‘আরে ফায়াদ বাবা! তুমি এখন?বসো বসো।’
অপরাজিতা আবারো সোফায় বসে বলল,
‘এটা ফারাজ ভাইয়া।’
রামিসা ভালোভাবে তাকালেন ফারাজের দিকে৷ এখন তিনি বুঝবেন কিভাবে কোনটা ফারাজ আর কোনটা ফায়াদ? আচ্ছা মুশকিল তো!রামিসা বেগমকে কনফিউশানে দেখে ফারাজ এবার নিজেই বলল,
‘আন্টি আমি ফারাজ। এগুলো দিতে এসেছি।’
‘ওহ আচ্ছা আচ্ছা। কি যে করবো বাবা! তোমরা দু ভাই দেখতে একই রকম। মাথা গুলিয়ে যায়।’
‘সমস্যা নেই আন্টি।আসি আমরা তাহলে।’
রামিসা ব্যস্ত হয়ে বললেন,
‘আসি মানে কি? নাস্তা করো বাবা।বসো’
ফারাজ বলল,
‘না না আন্টি ব্যস্ত হবেন না। নাস্তা করে এসেছি। এগুলো দেওয়ার জন্য আম্মু পাঠালো। বাসায় কাজ আছে। একটু পর তো আবার আসতেই হবে।’
রামিসা মানলেন। তিনি আবারো ভিতরে তার কাজে গেলেন।এদিকে সামিয়া এসে রিজু আর ফারাজকে দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আজকে ফারাজকে নয়। রিজুকে দেখছে সে। রিজুর তো মনে হচ্ছে সে তাকে মুখস্ত করছে চোখ দিয়ে। রিজু ফারাজকে বলে বাহিরে চলে গেল। ফারাজও বের হবে। অপরাজিতা দরজা লাগাতে এসে জিজ্ঞেস করলো,
‘উনি কেমন আছে?’
ফারাজ দুষ্টুমি করে বলল,
‘এটা উনাকে ব্লক থেকে ছুটিয়ে জিজ্ঞেস করে নিন!’
তারপর চলে গেল। অপরাজিতা ব্লক তো ছুটাবেই না। তাকে কিনা বলে সে ছেলেদের পিছে ঘুরে। বুঝুক মজা।
ফারাজ বাসায় এসে দেখে ফায়াদ ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। ফারাজ গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসে বলল,
‘উনি কেমন আছে?’
ফায়াদ ভ্রু কুচকে রইলো।ফারাজ বলল,
‘আমি বলি নি। তোর উনি জিজ্ঞেস করছে।’
ফায়াদের মুখে হাসি ফুটলো। ভাইয়ের মুখে হাসি দেখে ফারাজের মুখেও হাসি ফুটলো। সে ফায়াদের কাধে হাত দিয়ে আফসোস এর সুরে বলল,
‘মিস করছিস বুঝি?থাক আর তো কিছু ঘন্টা তারপর…..’
ফায়াদ শেষ করতে দিল না। তার কাধে রাখা ফারাজের হাত মুচরে বলল,
‘হুম হুম তারপর?’
ফারাজ ব্যথায় উহআহ করতে করতে বলল,
‘তারপর আমার ভাবি হবে ভাবি!! ভাইইই ছাড়!’
ফায়াদ ছেড়ে দিল। ফারাজ ফায়াদের পাশ থেকে উঠে বলল,
‘যেই একটু খবর এনে দিলাম ওমনি তোর শক্তি বেড়ে গেছে! সাংঘাতিক!’
ফায়াদ ফারাজের দিকে তাকাতেই ফারাজ মেকি হেসে বলল,
‘মজা করছিলাম হেহে’
————-
‘আহা তোমরা মেয়েরা এতো দেড়ি কেনো করো বলো তো। সবসময় লেট।গিয়ে আবার নামাজে যেতে হবে তো আসো রে বাবা!’
আখি বেগম শাড়ি ঠিক করতে করতে এসে বললেন,
‘এসেছি এসেছি।’
ফায়াদ বলল,
‘ফারাজ গিয়ে নীতিকে ডাক আর রিজু গিয়ে মামি আর রাফিয়া কে ডাক।’
আখি বেগম বললেন,
‘ওদেরও হয়ে গিয়েছে। নীতিকে আগেই শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছি। ও হয়তো কোনো কিছুতে ব্যস্ত রুমে।আমি নিয়ে আসি ওকে।’
ফায়াদ বাধা দিয়ে বলল,
‘ফারাজ যাক মা।আমার তোমাকে লাগবে। ‘
ফারাজ নীতিকে ডাকার উদ্দেশ্যে নীতির রুমের দিকে হাটা ধরলো।
নীতির রুমে নক করছে সে।
‘নীতি হয়েছে? বাকিরা অপেক্ষা করছে।’
‘হয়েছে হয়েছে।’
বলতে বলতে নীতি দরজা খুলে দিল৷ নীতিকে দেখে ফারাজ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। সে ভেবেছিল নীতিকে শাড়িতে সুন্দর লাগবে কিন্তু এতো টা সুন্দর! ফারাজ অপলক চেয়ে রইলো।সে ভুলে গেল সে যে নীতি কে ডাকতে এসেছে।
শাড়ি পড়ে নীতির খুব লজ্জা লাগছে।প্রথম বার শাড়ি পড়েছে সে। মনে হচ্ছে খুলে যাবে। হাজারটা সেফটি পিন লাগিয়েছে সিকিউরিটির জন্য৷ ফায়াদকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার খুব লজ্জা লাগছে। তাকে ভালো দেখাচ্ছে তো?
নীতি গলা খাকারি দিল।ফারাজের মনোযোগ সরলো। ফারাজ অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
‘এসেছেন! চলেন’
তারা সবাই একসাথে হলো। রাফিয়া নীতিকে দেখেই খুশিতে লাফিয়ে বলে উঠলো,
‘আপু গো তোমাকে শাড়িতে কি যে সুন্দর লাগছে। আজকে যতগুলো ছেলে তোমাকে দেখবে সব দেওয়ানা হয়ে যাবে!’
নীতি এরকম প্রশংসা শুনে খুবই লজ্জা পেল। সে লজ্জা পেয়ে মিনমিন করে বলল,
‘ধুর কি বলো!’
তার কথা শুনে সবাই হেসে দিল। হাসলো না শুধু ফারাজ।সে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে নীতির দিকে। আসলেই কি ছেলেরা দেওয়ানা হয়ে যাবে? পরক্ষণেই আবার নিজেকে শাসিয়ে বলল হোক তাতে তোর কি রে।
সবাই অপরাজিতাদের বাসায় এসেছে বেশ অনেকক্ষণ হলো। ছেলেরা বর্তমানে মসজিদে।সেখানে নামাজ পড়ে ছেলের বিয়ে মসজিদে পড়ানো হবে। তারপর কাজী এসে মেয়েকে বিয়ে পড়াবে। অপরাজিতা পড়েছে সাদা কাজ করা সুন্দর একটা শাড়ি। হাল্কা সাজে তাকে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।খুবই সামান্য সেজেছে সে। বাকি সব রমনীরা পড়েছেন নীল শাড়ি। অপরাজিতা বসে আছে তার রুমে। তাকে ঘিরে আছে সব মেয়েরা।এতো নীল শাড়ির মাঝে অপরাজিতাকে সাদা শাড়িতে একটুকরো মেঘের মতো লাগছে। অপরাজিতা বসে বসে খুব নার্ভাস হচ্ছে। বিয়ে বলে কথা। ঘরোয়া ভাবে হোক আর অনুষ্ঠান করে হোক। বিয়ে মানে তো বিয়েই৷ আজকের পর সে আরেক পরিবারের অংশ হবে। জীবনটা আরেকদিকে মোড় নিবে। বাবা বাড়ির অতিথির খাতায় নাম লিখাবে। পরে চলে যেতে হবে এই বাড়ি ছেড়ে।এসব ভেবে ভেবে অপরাজিতার বুকের ভেতর চাপা কষ্ট হচ্ছে।
আখি বেগম তা হয়তো বুঝতে পারলেন। অপরাজিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ভয় পাচ্ছো।ভয় পেয়ো না।আমিও তোমাকে মায়ের মতো আগলে রাখবো। এই পরিবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছো এটা ভাববে না। ভাববে নতুন আরেকটি পরিবার যোগ হচ্ছে তোমার সম্পর্কের খাতায়।হুম?’
অপরাজিতা মাথা হেলিয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।মূলত সে কিছু বলতে পারছে না। বলতে গেলে হয়তো কান্না করে দিবে। তাই চুপ করে আছে। অপরাজিতার খালামণি অপরাজিতার মাকে টেনে এনে অপরাজিতার পাশে বসালো। অপরাজিতাকে বলল,
‘এই তোর মাকে পাশে রাখ। লুকিয়ে লুকিয়ে শুধু কান্না করে।’
অপরাজিতা মায়ের দিকে তাকালো। রামিসা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘এতো বড় কিভাবে হলি রে? এখনো দেখি আমাকে তোর পিছে লাঠি নিয়ে ঘুরতে হয়।’
অপরাজিতা হেসে দিল। মেয়ের হাসি দেখে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
‘এভাবেই হাসতে থাকবি।’
রাফিয়া এসে বলল,
‘ভাইয়া ফোন করেছিল।ফায়াদ ভাইয়ের বিয়ে পড়ানো হয়ে গিয়েছে। আপুর জন্য আসছে তারা।’
তারা আসছে শুনে সকলে সবকিছু ঠিকঠাক করতে লাগলো।অপরাজিতা বসে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। আর মাত্র কিছুক্ষণ। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল।এই মুহুর্ত গুলো প্রত্যেকটা মেয়ের জন্য কি এক মুহুর্ত তা ভাষার প্রকাশ করার মতো নয়।
কাজী অপরাজিতার রুমে প্রবেশ করলো। অপরাজিতা মাথায় ভালোভাবে ঘোমটা চাপিয়ে একটু নড়েচড়ে বসলো।অপরাজিতার বাবা রুমে প্রবেশ করতেই আখি বেগম পাশ থেকে উঠে উনাকে জায়গা করে দিলেন বসতে। মেয়ের এখন পাশে বাবা মা কে দরকার।
অপরাজিতা নিজের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে৷ হাত কাপছে তার।
ফায়াদ রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে চেয়ে রইলো অপরাজিতার পানে। তার মনেও এক আলাদা অনুভূতি। আজকের পর থেকে এই মেয়ে টা তার। শুধুই তার।
কাজী অপরাজিতাকে কবুল বলতে বলছে। অপরাজিতা আটকে যাচ্ছে বারবার। সে ভয় পাচ্ছে।
অপরাজিতা বাবা বলল,
‘আম্মা! ভয় পেয়ো না। বাবা সবসময় পাশে আছি।’
রামিসা বেগমও পাশে থেকে মেয়ের হাতে হাত রেখে তাকে আশ্বস্ত করলেন। অপরাজিতা মাথা তুলে তাকাতেই দরজায় দাঁড়ানো ফায়াদকে দেখলো। ফায়াদও যেন চোখ দিয়ে অপরাজিতাকে আস্বস্ত করলো সে আছে।
সেদিকে একপলক তাকিয়ে অপরাজিতা কবুল বলে দিল প্রথম বার।চোখ দিয়ে অশ্রু বেয়ে তা কোলে পড়লো তার। আবার বলল কবুল। শেষ বার কবুল বলে সে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।
সকলে বলে উঠলো আলহামদুলিল্লাহ। বিয়ে পড়ানো হয়ে গিয়েছে। আজ থেকে ফায়াদ আর অপরাজিতা স্বামী-স্ত্রী। ফায়াদও মনে মনে বলল,
‘আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ’
অপরাজিতাকে তার বাবা বুকে চেপে আছে।অপরাজিতার বাবার চোখেও পানি। কিন্তু তিনি হাসি মুখে মেয়েকে সামলাচ্ছেন। অপরাজিতার মাও মেয়েকে সামাল দিচ্ছে।
এই দৃশ্য দেখে নীতিও কাদছে নিরবে।ফারাজ তার পাশে গিয়ে আস্তে করে বলল,
‘আপনি কাদছেন কেন?’
নীতি নাক টেনে বলল,
‘ইমোশোনাল লাগছে।’
ফারাজ বলল,
‘ছিচকাদুনে’
নীতি কান্নারত কন্ঠেই বলল,
‘শাট আপ!’
ফারাজ অবাক হয়ে বলল,
‘আপনি আমাকে শাট আপ বললেন?’
নীতি যেন এবার হুশ ফিরে পেল। সে তাড়াতাড়ি বলল,
‘না না ভুলে স্যার। স্যরি।’
ফারাজ সিরিয়াস ভাবে বলল,
‘মনে থাকে যেন।’
তারপর উল্টো ঘুরে নীতির আড়ালে হাসতে হাসতে চলে এলো তার ভাইয়ের পাশে।
অপরাজিতা শান্ত হলো।সকলে তাকে বুঝাচ্ছে।
ফারাজ এবার বলে উঠলো,
‘কারো কোনো আপত্তি না থাকলে বর বউকে একটু টাইম নিজেদের মতো দেওয়া যাবে? আসলে তারা তো এখনো নিজেদের সাথে কথা বলে নি ভালোভাবে৷ কথা বললে ইজি হতো আরেকটু।’
সবাই মেনে নিল। একে একে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ফায়াদ মনে মনে খুশিই হলো। ফারাজকে তার চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। ভাইটা তার কাজে দিয়েছে। ফারাজ যাওয়ার সময় ফায়াদের কানে কানে বলল,
‘থ্যাংস নিব না। দামী কিছু চাই!’
বলে বের হয়ে গেল সে। সবাই গিয়ে সোফার রুমে বসলো। নানা গল্প করছে তারা।
ফায়াদ রুমে প্রবেশ করেই দরজা টা আটকে দিল আস্তে করে। শব্দটা যাতে কারো কানে না যায়।
গিয়ে অপরাজিতার পাশে বসলো।অপরাজিতা চোখ তুলে ফায়াদকে দেখেই তার বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। ফায়াদ হালকা পিছিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিল। শক্ত করে ধরে আছে অপরাজিতাকে। অপরাজিতা জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,
‘ফাইনালি আপনি আমার!’
ফায়াদ হেসে দিল। বলল,
‘তুমি না রাগ করেছো?’
‘হুম’
‘তাহলে এটা কি?’
অপরাজিতা ফায়াদের বুকে নাক ঘষে বলল,
‘এটা ভালোবাসা।রাগ আলাদা।ওটা পরে করবো।’
ফায়াদ অপরাজিতাকে বুক থেকে সরিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলল,
‘তাই!’
অপরাজিতা এবার দূরে সরে গেল।বলল,
‘রাগ করেছি।রাগ ভাঙান’
ফায়াদ অপরাজিতার দিকে তাকালো তার ঠোঁটে ফুটে উঠলো বাকা হাসি। সে হাসি দেখে অপরাজিতা ভ্রু কুচকে তাকালো।অপরাজিতা কিছু ভাবার আগেই ফায়াদ তাকে কোমর টেনে সামনে এনে বিছানার সাথে চেপে ধরলো। অপরাজিতা বড় বড় করে তাকালো। সে দু হাত ফায়াদের বুকে ঠেকিয়ে ফায়াদকে উঠাতে চাইলো। কিন্তু সে কি ফায়াদের সাথে পারবে? ফায়াদ অপরাজিতার দুহাত তার এক হাত দিয়ে ধরে অপরাজিতার মাথার উপর চেপে ধরলো।অপরাজিতা আরো বিস্মিত হলো। ফায়াদ এবার অপরাজিতার চেহারায় চোখ বুলিয়ে ধীর কণ্ঠে সুধালো,
‘এখন শুরু করি।রাগ ভাঙানোর অনেক ওয়ে আছে।আগে বলো রাগ করেছো কেন?’
অপরাজিতা দম আটকে তাকিয়ে আছে ফায়াদের দিকে।এটা কেমন রাগ ভাঙানো হলো? তার মনোযোগ কি আর রাগের দিকে আছে এখন?মনে তো এখন অন্য কিছু হানা দিচ্ছে। ফায়াদ যেন তাকে বশ করে ফেলছে।সে আটকে আটকে বলল,
‘ডা ক্তা র সা সাহেব!’
ফায়াদ অপরাজিতা চোখে চেয়ে সম্মোহনী ভাবে বলল,
‘উহু!ফায়াদ বলো’
অপরাজিতা যেন সম্মোহন হয়ে গেল। সে এলোমেলো ভাবে বলল,
‘ফা ফা য়া দ’
বলার সাথে সাথে ফায়াদ তার উন্মুক্ত গলায় ঠোঁট ছুয়ে দিল। অনেকটা সময় নিয়ে কাজটা করেছে সে। গলা থেকে মুখ তুলে ফায়াদ একই কণ্ঠে বলল,
‘রাগ কেনো করেছো বলো?’
অপরাজিতা থেমে থেমে বলতে লাগলো,
‘ওই মহিলা ব বলে ছে আ মি নাকি ছে ছেলেদের পি ছে–‘
অপরাজিতার নিশ্বাস আটকে আসছে। ফায়াদ একে একে তার চোখ, গাল, নাক ছুয়ে দিচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে।অপরাজিতা থামতেই ফায়াদ অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
‘কন্টিনিউ’
অপরাজিতার শ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। সে বলতে পারছে না। ফায়াদকে বলল,
‘আ আপনি উঠুন’
ফায়াদ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
‘কথা শেষ করো।’
অপরাজিতা বুঝলো কথা শেষ হওয়ার আগে তাকে উঠতে দিবে না। সে একনিশ্বাসে বলল,
‘উনি বলেছে আমি নাকি ছেলেদের পিছনে ঘুরি।’
ফায়াদ অপরাজিতার কান্ডে হাল্কা হেসে দিল। বলল,
‘উনি বলেছে।আমি বলেছি?’
‘না ‘
‘তাহলে আমাকে ব্লক দিয়েছো কেন?’
অপরাজিতা বলল,
‘রাগ হচ্ছিল’
ফায়াদ অপরাজিতার গালে হাত বুলিয়ে বলল,
‘এখনো রাগ হচ্ছে?’
‘না’
‘রাগ ভেঙেছে?’
‘হুম’
ফায়াদ অপরাজিতাকে ছেড়ে দিল। অপরাজিতা যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। পাগল হয়ে যাচ্ছিল সে। অপরাজিতাকে দেখে মৃদু হেসে ফায়াদ দাঁড়িয়ে বলল,
‘এখন বের হওয়া উচিত আমার।পরে কথা হবে। এখন বের না হলে বাকিরা অন্যকিছু ভাববে।’
ফায়াদের কথা শুনে অপরাজিতা মনে মনে বলল,
‘উনারে নিরামিষ ভাবছিলাম। অস’ভ্য ডাক্তার! রাগ ভাঙানোর নাম করে কি কি করলো!ইশ ভাবতেই গাল গরম হয়ে যায়।’
দরজার কাছাকাছি যাওয়ার পর ফায়াদ দরজা না খুলে অপরাজিতার দিকে ফিরে বলল,
‘একটা কাজ আজও করা হলো না।’
অপরাজিতা উৎসুক চোখে চেয়ে বলল,
‘কি?’
বলতে দেড়ি কিন্তু ফায়াদের কাজটা করতে দেরি নয়। ফায়াদ অপরাজিতার কাছে ফিরে এসে তার ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিল। অপরাজিতা খিচে চোখ বন্ধ করে ফেলল।এটা তার ভাবনার বাহিরে ছিল। অপরাজিতা নিজের অনুভুতি গুলোকে সামলাতে পারছে না। তার কেমন মাতাল মাতাল লাগছে। ফায়াদের বুকে হাত রাখতেই অনুভব করতে পারলো হৃদপিণ্ডের দ্রুত চলা।তার হৃদস্পন্দনও বেড়ে গিয়েছে অনেকখানি।
রাফিয়া এসে দরজায় নক করছে। ধীর স্বরে ডাকছে সে। ফিসফিস করার মতো বলল,
‘এই ভাইয়া বের হও এখন। আর কতো বউরে দেখবা’
রাফিয়ার শব্দ শুনে অপরাজিতাকে ছেড়ে দিল ফায়াদ। কপালে চুমু খেয়ে বলল,
‘আসি’
তারপর ঠিকঠাক হয়ে দরজা খুললো।রাফিয়াকে নিয়ে বসার রুমে গেল। এদিকে রেখে গেল লজ্জায় লাল হওয়া অপরাজিতাকে। কি হলো এটা তার সাথে। সে মুখে হাত দিয়ে বসে রইলো। লজ্জায় তার মাটিতে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। কেমন অদ্ভুত অনুভুতি! পুরো শরীরে কারেন্ট বয়ে গেল লাগছে৷ ভাবতে ভাবতে বালিশ মুখে চেপে শুয়ে পড়লো সে। পাগল করা অনুভূতি!
(চলবে)