প্রেমজাল পর্ব-০৯

0
1139

#প্রেমজাল
পর্ব ০৯
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন

শাড়ির কুচি নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ চালাচ্ছি৷ কুচির এক ভাজ দিতেই অন্য ভাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাওকে ডেকে যে সাহায্য চাইবো তারও কোনো জোয়ার নেই। কাধের শীর্ষে কোনোমতো শাড়ির আচল উঠিয়ে রাখসি। সদ্য গোসল করার কারণে এখনো চুল থেকে টুপ টুপ করে অনায়সে পানি ঝরছে। যার ফলে পিঠ-কোমর ভিজে একাকার। আপাতদৃষ্টিতে এই অবস্থায় শাড়ি পরার মতো বিরক্তির জিনিস মনে হয় আর দু’টো নেই। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম উদয় হয়েছে। যখন আমি কুচি ভাজ দিতে পরম ভাবে মগ্ন, কেও যেনো দরজা ঠেলে ঘরে আসলো। আমি কিঞ্চিৎ চমকালাম। পিছনে ফিরতেই এক সুদর্শন সুঠাম বলিষ্ঠ বাহু বেষ্টনে ব্রাউন মণি ঘন পাপড়ি যুক্ত নীল রঙ এর পাঞ্জাবি পরিহিত যুবক তার ঐতিহাসিক ফোন স্ক্রলিং করতে করতে ঘরে আগমন করলো।

আয়ান আমার দিকে তাকাতেই কিছু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। শাড়ির কুচি সামলাবো নাকি বুকে আঁচল টানবো বুঝে উঠতে পারলাম না। আনমনে ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। এখন নির্ঘাত কয়েক দফা রামদমক শুনবো। কয়েকটা সুন্দরী রমনীকে দেখিয়ে জ্ঞান দিবে। আসলেই আমার দ্বারা কিছুই হয় না। তাড়াতাড়ি অগোছালো কুচি কোমরের দিকে গুজে নিলাম। এই লোককে বিদায় করে পুনরায় যুদ্ধে নামবো। আঁচল টেনে ঠিক করে আনতেই আয়ান একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,

-“আশ্চর্য তো! এতো ঢাকাঢাকির কি আছে? সবকিছু খুলে উড়নচণ্ডী হয়ে থাকলেও আমি মোটেও মাইন্ড করবো না। তবে শুধুমাত্র আমার সামনে”

উনার লাজুক লাজুক চাহনি আমাকে গ্রাস করছে। তবে সেটা লজ্জা পেয়ে নয়, শুধু মাত্র রাগে। আমি উনার দিকে রাগি ভাব নিয়ে তাকালাম। উনার কোনো ভাবান্তর হলো না। মানুষটার চোখ-মুখে দুষ্টু হাসি ফুটে ওঠেছে। উনি খানিকটা এগিয়ে আমার দিকে ঝুকে ফিসফিস করে বললেন,

-“ছোট কালে তুই কতো খালি গায়ে আমার সাথে গোসল করেছিস। এখন করতে চাইলেও আই ডোন্ট মাইন্ড (I Don’t Mind)” বলে চোখ টিপ মারলো আয়ান।

আয়ানের এমন পিত্তি জ্বলানোর কথা আগুনের মধ্যে ঘি ঢালার মতো। রাগে আমার গা ইতিমধ্যে রিন রিন করছে। একদিন নিশ্চিত এই ব্যাটার ফাতরা কথায় হার্ট অ্যাটাক করবো। একরাশ বিরক্ত মিশ্রিত মুখ নিয়ে দাতে দাত চেপে বললাম,

-“আপনি কতটা যে অসহ্যকর পাবলিক, তা আপনার জানা আছে?”

আয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,

-“দি গ্রেট আয়ান চৌধুরী যে মাস্টার পিস সেটা সে জানে। তোর মতো পেত্নীর এমন গরুর নাক ডাকার ন্যায় ফোস ফোস না করে বললেও চলবে”

এই লোক দেখি সাংঘাতিক। শুধু সাংঘাতিক না! সেই চরম লেভেলের সাংঘাতিক। আমাকে ডাইরেক্ট ইন্ডারেক্ট কন্টিনিয়াসলি অপমান করে যাচ্ছে। আয়ানের গা জ্বলানোর মতো একের পর এক কথা কর্ণকুহর হতেই উনার দিকে তেড়ে যেতেই উনি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হেসে বললেন,

-“এই যে আমার বাসর ছাড়া বউ। কুচি খুলে গেলো কিন্তু”

অমনি আমি সটান থেমে গেলাম। তাড়াতাড়ি বেহাল হয়ে পরলাম কুচি সামলাতে। কিন্তু কুচি আগের ন্যায় অগোছালোই কোমরে গোজা আছে।

আমি উনার দিকে তীক্ষ্ণ নজর দিতেই দেখলাম, উনি মুখ টিপে হাসছেন। উনি বেশ মজা পাচ্ছে আমাকে এভাবে অপদস্ত করে। ধ্যাত!

আমি নাক-মুখ শক্ত করে বললাম,

-“আপনি আসলেই একটা অসহ্যকর, হুহ” বলে অন্যদিকে পা বারাতেই অসাবধানতায় শাড়ির কুচিতে পা লাগলো। যার ফলস্বরূপ শাড়ির কুচি খুলে গেলো।

সাথে সাথে হাসির আওয়াজে ঝংকার দিয়ে উঠলো সারা ঘর৷ এখন তো আমার রাগে-ক্ষোভে কষ্টে লজ্জায় কান্না করতে ইচ্ছা করছে।

-“নে তুই যে অকর্মা ঢেকি সেটাও প্রমাণ হয়ে গেলো। আয় আমি ঠিক করে দেই”

-“এই না না। একদম আমার ধারে কাছে আসবেন না”

আয়ান আমার কথা গায়ে মাখলেন না। সামনে এগিয়ে এসে একপ্রকার ছিনিয়ে কুচি ভাজ উনার হাতে নিয়ে নিলেন। আমি উনার এমন এলাহী কান্ডে হতবাক। অটোমেটিক মুখ হা হয়ে গেলো। আমি মেয়ে হয়েও পারি না আর উনি ছেলে হয়েও এতো নৈপূন্যতার সাথে ভাজ দিচ্ছে।

-“এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি? খেয়ে টেয়ে ফেলার ধান্দায় আছিস নাকি?” ভ্রু কুচকে বললো আয়ান।

আমি মুখ স্বাভাবিক করে বিড়বিড়িয়ে বললাম,

-“অসভ্য কোথাকার”

আয়ান শাড়ির কুচি ভাজ দিতে দিতে অনেকটা আমার কাছাকাছি এসে পরলো। উনার নাক-মুখের উষ্ণতপ্ত নিশ্বাস আমার দিকে উথাল-পাথাল আছড়ে পরছে। খুব দ্রুত গতিতে হৃদ স্পন্দন উঠা-নামা করছে। ইতিমধ্যে কাপাকাপি শুরু হয়ে গেসে।

-“আ..আ..আপনি এবার দি..দিয়ে দেন। আমি গুজে নিতে পারবো”

আমার কথায় উনার মুখটায় বিরক্তি মিশ্রিত ভাব উদয় হলো। উনি আমার দিকে ভ্রু সংকোচন করে তাকালান। কি ভেবে যেনো উনার ঠোঁট প্রসারিত করে হাসির রেখে টানলেন। আমি বুঝে উঠতে পারলাম না কি চলছে উনার মাথায়। এভাবে হাসার রহস্য কি? রহস্য ভেদের কথা ভাবতে ভাবতেই উনি আমার চুলের মাঝে আলতো করে হাত ডুবিয়ে দিলেন। আর কিছু না বুঝে উঠতেই আমার ডান গালে আকস্মিক ভাবে পর পর দুইটা ডিপলি চুমু দিলেন।

সাথে সাথে পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বেয়ে গেলো। আয়ানের এমন তাজ্জব কান্ডে ইতিমধ্যে চোখ দু’টো মার্বেল এর আকার ধারণ করেছে। হয়তো এখনি বের হয়ে ফুটবলের মতো গড়াগড়ি খাবে। আমি যেনো হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। খানিকের জন্য রিয়েক্ট বাটন অফ হয়ে গেছে। আমি স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম।

পেটের নিচে গভীর স্পর্শ পেতেই চোখ বন্ধ করে শাড়ি খামচে ধরলাম। এই বুঝি প্রাণ পাখি ফুড়ুৎ করে উড়াল দিলো। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। কয়েক দফা ভারী নিশ্বাস নিতে চেষ্টা করলাম।

-“এমন আহাম্মক এর মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো?”

খানিকটা দূর থেকে কণ্ঠ স্বর কর্ণপাত হতেই পিট পিট করে তাকালাম। আয়ান বিছানায় আধ-শোয়া হয়ে গা এলিয়ে আছেন। আমাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি ভ্রু নাচিয়ে বললো,

-“কি হয়েছে? আরো চাই নাকি? আমি কিন্তু একদমি মাইন্ড করবো না। না নিতে আর না দিতে”

আমি এবারো কিছু বলার সুযোগ পেলাম না। যখনি কিছু বলতে যাবো তখনি উনার কাবাব মে হাড্ডি ফোনটা বেজে উঠলো। উনি রিসিভ করতেই আমি রাগে গোজ গোজ করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম। শাড়ির আচল ঠিক করতে করতে, মনে মনে বিড়বিড়ি করতে করতে লাগলাম। ছি! কি অশ্লীল লোক! এতো অসভ্য কেনো উনি? দেখে নিবো উনাকে। ভুলেও তো কখনো মনে হয় না আমার সাথে টুক টাক কথা বলে। আর যখন বলে তখন আমার মুখ লাল নীল সবুজ হওয়ার উপক্রম ঘটে। আসলেই অসহ্যকর লোক!

চলবে…