#প্রেমমোহ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_২১
নীলু কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে নাক টেনে টেনে বলল,
–” অন্তু স্যার আমার সাথে এমন করবে আমি কখনো ভাবিনি। আপনার ভাই স্পন্দনও উনার সাথে জড়িত। আপনার ছোট ভাইকে আমি কত সম্মান করতাম আর শেষমেষ কিনা উনি আমার সাথে।”
বলেই কান্না করতে লাগলো নীলু। নীলুর এইটুকু কথা শোনে সাকিবের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। সে বিশ্বাস করতেই পারছে না তার ভাই কিংবা অন্তু এমন কিছু করবে। যে ভীত কণ্ঠে বলল,
–” কি, কি করেছে ওরা দুজন?”
–” আমি যখন ভার্সিটির উদ্দেশ্য যাচ্ছিলাম তখন আমার রিক্সা থামিয়ে আমাকে নামতে বলে অন্তু স্যার। আমি রিক্সা থেকে নেমে স্যারকে জিজ্ঞাসা করি, কি হয়েছে? তখন স্যার বললেন, আমার ফ্রেন্ড আসু নাকি পায়ে ব্যাথা পাইছে তাই আমাকে এক্ষুনি উনার সাথে যেতে হবে। শুভ্রতা নাকি রক্ত দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে। শুভ্রতার কথা শোনে স্পন্দন এসেছে আর আসু নাকি আমার নাম জপ করছে। স্যারের কথা শোনে এক কথায় চলে গেলাম স্যারের সাথে। একটা রুমে আমাকে যেতে বলে। রুমের ভিতরে যেতেই বাহির থেকে বন্ধ করে ওরা দুজন চলে যায়। এমনকি আপনার ছোট ভাই আমার ব্যাগপত্র আগেই রেখে দিয়েছিল সেই কারণে আমি ফোন দিতে পারেনি। আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? সরি আমার জন্য আপনি কাজকর্ম ফেলে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু এখন আপনার ভাই আমার পথে বাঁধা সৃষ্টি করলো। পনেরো দিন আমি আপনাকে না দেখে থাকবো কিভাবে? মরে যেতে ইচ্ছা করছে আমার। হে ভগবান কিছু একটা করো।”
সাকিব ধকম দিয়ে উঠলো নীলুকে। ধমক খেয়ে নীলু চুপচাপ কান্না করতে লাগলো। সাকিবের এখন ছোট ভাইয়ের জন্য গর্ববোধ হচ্ছে। স্পন্দন কাছে থাকলে হয়তো দু’গালে একশোটা চুমু দিতো সে। নিজের খুশি দমিয়ে রাখতে না পেরে বলেই ফেলল,
–” ছোট ভাইয়ের কারণে গর্বে আমি গর্ভবতী সরি গর্ববোধ ফিল করছি জানু।”
নীলু এইবার ভীষণ ক্ষেপে গেল। সে যেতে পারেনি এইজন্য সাকিবের কষ্ট হওয়া উচিৎ কিন্তু সে তা না করে খুশি। তারমানে কোনো ঘাপলা আছে। সন্দেহ কণ্ঠে বলল,
–” আমার সতীন খুঁজে নিশ্চয়ই পাইছেন। ওয়েট আমিও আপনার সতীন খুঁজে বের করছি। জানেন একটা ফুঁ দিবো একশোটা ছেলে এসে হাজির। তারমধ্যে আমার কাজনই হবে ষাটের কাছাকাছি। জানেন না কোন বংশের মেয়ে আমি? ”
সাকিবের ইচ্ছা হলো আজ নীলুকে সে জ্বালাবে। তাই নীলুর ছবির দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলল,
–” হুম । সে কিন্তু খুব সুন্দরী। একদম কুমিল্লার রসমালাই । কলকাতার রসগোল্লা।”
–” বাজে লোক একটা। শয়তানের নানা। রাম ছাগলের বড় ভাই। পঁচা নদীর মরা মাছ, টিকটিকির হাগু বিড়ালের নানা ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা, পৃথিবীতে যত ছিঃ মার্কা কথা আছে সব আপনি। ব্যাটা লুচু। সামনে থাকলে চোখ খুলে লুডু খেলতাম।”
সাকিবের খুশি কে দেখে। নীলুর বকা শুনছে আর হাসছে। নীলু এইবার বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিবার আগে বলল,
–” উফফ অসহ্য।”
_________________
শুভ্রতা ভাবছে কোথায় ঘুমাবে সে। রাতে বাহিরে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয় আবার স্পন্দনের সাথে এক রুমে তাতো আরো অসম্ভব। চিন্তা করতে করতে সে পায়চারি করছে। অন্য রুমে থাকলে সন্দেহ করবে লোকজন। ভাবনা চিন্তার পাহাড় যখন গড়ে উঠে তার মাথায় তখনই হাজির হয় স্পন্দন।
–” কি ভাবছেন মেডাম?”
–” কিভাবে আপনাকে খুন করা যায় তাই ভাবছি।”
–” আমি তো অনেক আগেই খুন হয়ে গেছি ম্যাম। আপনার শুভ্র রাঙা মুখটি দেখে আমি আগেই খুন হয়ে গেছি। আমাকে খুন করার জন্য আপনাকে জেলে পাঠানোর গুরুত্বর আবেদন জানাচ্ছি প্রধান মন্ত্রীর কাছে।”
বিরক্ত নিয়ে বলল শুভ্রতা,
–” কথার কি বালাই। শুনলেই তো বমি পায় আমার। ছিঃ মার্কা কথাবার্তা। মরণ।”
মরণ শব্দটি শুভ্রতা টেনে বলল। স্পন্দন কপালের চোখগুলো এক হাতে উপরে তুলে শুভ্রতাকে ভেংচি কেটে সেও টেনে টেনে বলল,
— ম-র-ণ। এই শব্দটা তোমার মুখে জোস লাগে শুনতে আরেকবার বলবে?”
–” আপনি জানেন আপনাকে কি করতে ইচ্ছা করছে?”
–” জানলে তো বলেই ফেলতাম। সো জানি না যেহেতু বলে ফেলো।”
–” আপনাকে ইচ্ছা করছে কুঁচি কুঁচি করে কেটে লবণ ছাড়া রোদে শুকিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসি।”
–” নদীতে যেহেতু ভাসাবে তাহলে এত খাতির করার কি দরকার? সোজা আমাকে নিয়ে মধু চন্দ্রিমায় নিয়ে চলো সেখানে গিয়ে নদীতে ফেলে দিবে।”
ভয়ানক ক্ষেপে গিয়ে দরজা শব্দ করে খুলে বের হয়ে স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে বলল,
–” মরণ।”
_________________
আসু সেই কখন থেকে বসে আছে। তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য বসে আছে অন্তুও। নীলু এইমাত্র ফোন দিয়ে জানালো সে কেন আসতে পারেনি। নীলুর কথা শোনে রাগে থ মেরে বসে আছে আসু। শুভ্রতার হারিয়ে যাবার ব্যাপার নিয়ে সে কিছু বলল না নীলুকে। শুধু মেয়েটা চিন্তা করবে, পনেরো দিনের আগে হয়তো কিছু করা সম্ভব হবে না। অন্তু কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
–” আর ইউ ওকে? আসু?”
অন্তুর কথায় জ্বলে উঠলো আসু। রাগে গজগজ করছে সে। দাঁতের সাথে দাঁত চেপে ধরে রাগান্বিত স্বরে বলতে লাগলো,
–” নীলুর সাথে এমন কেন করেছেন?”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো অন্তু,
–” কি করেছি?”
–” ট্যুরে আসতে পারেনি কেন ও? স্পন্দন ভাইয়া আর আপনি নাকি ওকে মিথ্যা বলে রুমে আটকে রেখেছিলেন কিন্তু কেন?”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল অন্তু,
–” স্পন্দনের জন্য।”
–” উনার জন্য কেন?”
–” এত পেঁচিয়ে কথা কেন বলো। বলছিনা? স্পন্দন ট্যুরে যেতে চাইছিল তাও আবার শুভ্রতার সাথে বসে। আর তোমরা তিনজন যাবে, তুমি যেহেতু আমার পাশে বসবে তাহলে নীলু আর শুভ্রতা একত্রে বসবে। তাই বাধ্য হয়েই এই কাজটা করতে হলো।”
–” স্পন্দন ভাইয়া কেন এই কাজ করলো?”
–” আগেই তো বলেছি স্পন্দন শুভ্রতাকে ভালোবাসে।”
–” ভালোবাসুক আর না বাসুক আমার ফ্রেন্ডকে আটকে রাখার অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের। ইচ্ছা করতেছে এক কলসি পানিতে আপনাকে চুবিয়ে খুন করতে, তেলাপোকার রোস্ট খাওয়াতে, টিকটিকির হাগুকে ঘী বানিয়ে আপনাকে খাওয়াতে, করলার জুস, মুলার জুস সব আপনাকে খাওয়াতে, বিয়ারের সাথে জঙ্গলে হানিমুনে পাঠাতে ইচ্ছা করছে আপনাকে। আপনার চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে।আপনারে আমি পঁচা পানিতে ভিজিয়ে নর্দমায় ফেলে দিবো।”
আসু আরো কিছু বলতে যাবে তখন অন্তু চিৎকার করে বলতে লাগলো,
–” ওই কেউ ওকে প্যাক করে টাইম মিশনে করে পেত্নী শাকচুন্নি ডাইনি বা ড্রাকুলার আমলে দিয়ে আসো আর একটা কিছুতে লিখে দিয়ে আসবে যে আপনাদের বংশধর ভুল করে আমাদের সময়ে চলে এসেছে আর আমাদের মাথা নষ্ট করে ফেলছে এখন আপনাদের বংশধর আপনারা নিয়ে নিন। যত্তসব বাজে বকনি।”
মাথা ধরে যাওয়াতে চলে গেলো অন্তু। অন্তুর কথা বুঝার চেষ্টা করলো বেশ কিছুক্ষণ ধরে। যখনি মাথায় ঢুকলো অন্তু কি বলেছে তখনই ওড়না কোমরে বেঁধে অন্তর কাছে যেতে লাগলো। আজ কিছুতেই অন্তুর শান্তি নেই। এত্ত বড় কথা। শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে।
অপূর্ব সৌর্ন্দযের লীলাভূমি এক নিঃভৃত পল্লীতে গড়ে ওঠা ছোট্ট ছন এবং বাঁশের তৈরি দু’চালা ঘর। ঘর মাটি থেকে অনেক উপরে, বুঝায় যাচ্ছে বৃষ্টি হলে পানিতে মেতে উঠে এই উঠান। বৃষ্টি থেকে বসতঘর বাঁচানোর জন্যই সুরক্ষিত ভাবে তৈরি করা হয় এই বিশেষ সুন্দর দেখতে ঘরগুলো। বাঁশ দিয়ে সুন্দর করে সিঁড়ি বানানো যা দেখতে মইয়ের মত। প্রথমে ভয় লাগলেও পরে আনন্দ অনুভূতি সৃষ্টি হবে মনে। শহরে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য না থাকলেও গ্রাম অঞ্চল এখনও ধরে রেখেছে প্রকৃতির সেই অপরূপ সৌন্দর্যের ছোঁয়া। শুভ্রতা ঘুম থেকে উঠে জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলো সবে ভোর। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শুরু হয়েছে নাম জানা অজানা পাখির কিচির-মিচির শব্দে ছুটে চলা। চলতে থাকে সারাদিন, থেকে থেকে আকাশের বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে থাকে অতিথি পাখির দল। অতিথি পাখি সাধারণত শীতকালে দেখা যায় কিন্তু এইখানে এই অসময়ে কয়েকটি অতিথি পাখি থেকে চমকে উঠলো শুভ্রতা। সাদা সাদা বক উড়ছে আকাশে, সাদা ডানায় উড়তে থাকা বকের দল। পাখির কিচির মিচির ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে চারিদিক। পিছন থেকে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে শুভ্রতা। সে বুঝতে পারে স্পর্শটা কার। মুচকি হেসে পিছনে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলতে লাগলো,
চলবে,
বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।