প্রেমময়ী তুমি পর্ব-৪২+৪৩

0
542

#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_৪২
#নিশাত_জাহান_নিশি

“বেশরমের মতো এখানে দাঁড়িয়ে আঁড়ি পাতছিলি কেন হ্যাঁ? দিন দিন তো বড্ড বে”য়াদব হয়ে উঠছিস তুই। কিছু বলছি না দেখে খুব সাহস পেয়ে গেছিস না?”

অতিরিক্ত চাপা হাসির প্রভাবে চাঁদের চোখের কোটর জুড়ে জল চিকচিক করে উঠল। ফুলকো গাল দুটো টমেটোর মতো লাল টগবগে রূপ ধারণ করল। দমটা যেনো তার বন্ধ হয়ে আসছিল! সোহানীর দিকে এক পলক হাসোজ্জল দৃষ্টিতে তাকিয়ে চাঁদ বিদ্রুপাত্নক গলায় বলল,,

“দেখলে আপু? তোমার দেবর এখনও প্যান্টের চেইন-ই লাগাতে শিখলনা! কতোটা বাচ্চা প্রকৃতির এই ছেলে!”

সোহানী এবার নিজেও ফিক করে হেসে দিলো! দস্তুর মতো চাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। নূরের দিকে সরল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নীড়! নূরের কাচুমাচু ভাব দেখে কপাল চাপড়ালো সে। শ্লেষাত্মক গলায় বলল,,

“মানে এখনও চেইনের প্যান্টটা কীভাবে কায়দা করে লাগাতে হয় এটাও শিখলিনা? অথচ দুইদিন পরে বিয়ে দিলে তিন/চার বাচ্চার বাপ হয়ে যাবি!”

নূর ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল! মাথা নুইয়ে জিভ কাটল। লজ্জামাখা গলায় বলল,,

“কম বললে ভাইয়া! তোমার শা’লীকে তো আমি ফুটবল টিমের জননী বানিয়ে ছাড়ব-ই ছাড়ব! শুধু একবার বিয়েটা হতে দাও! সব ভাইদের তুলনায় আমি চ্যাম্পিয়ান হয়ে দেখাব!”

নীড় ভ্রু কুচকালো। সন্দেহপ্রবণ দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কিছু বললি?”

নূর থতমত খেলো। মাথা উঁচিয়ে নির্বোধ দৃষ্টিতে নীড়ের দিকে তাকালো। অস্ফুটে গলায় বলল,,

“কিকিছু না তো।”

নীড় বিশৃঙ্খল শ্বাস ছাড়ল! শার্টের হাতা ফোল্ড করে নূরের প্যান্টের চেইনের দিকে এগিয়ে এলো। নিরুপায় হয়ে প্যান্টের চেইনটা সে নিচ থেকে উপরে তোলার প্রয়াসে লিপ্ত হয়ে পড়ল। নূরের বড্ড অস্বস্তি হচ্ছিল! তবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে হলে তাকে অবশ্যই এখন অস্বস্তিকর কাজটাই করতে দিতে হবে।

চাঁদ আর এক মুহূর্ত এখানে দাঁড়ালো না। দৌঁড়ে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে সে সোজা নিচতলায় নেমে এলো। কারণ ফ্ল্যাটের ভেতরে সে মন খুলে একফোঁটাও হাসতে পারছে না। হঠাৎ কারো চোখেন সামনে পড়লেই তাকে প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করে তুলবে। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর সে মুখ ফুটে বলতে পারবেনা! লজ্জায় মরণ হয়ে যাবে। কুজো হয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ কোমরে দু’হাত গুজল। প্রাণ খুলে হু হা শব্দে হেসে উঠল। অস্ফুটে গলায় বলল,,

“খোদা এ কোন মহা এলিয়েনের পাল্লায় পড়লাম আমি? এতো বড়ো ছেলে নাকি এখনো প্যান্টের চেইনটাও খুলে লাগাতে পারেনা? এ আমি কী দেখলাম মাবুদ? কী শুনলাম এসব?”

ইতোমধ্যেই নিচতলার ফ্ল্যাট থেকে হাঁক ডাকের শব্দ ভেসে এলো চাঁদের কর্ণকুহরে! হকচকিয়ে উঠল চাঁদ। হাসি থামিয়ে উদ্বেগী হয়ে উঠল।ফ্ল্যাটের ভেতরে কী চলছে তা জানতে উৎসুক হয়ে উঠল। চক্ষুজোড়া কৌতূহল এবং বিস্ময় নিয়ে চাঁদ ফ্ল্যাটের দরজায় কান পাতল। অমনি তার কর্ণতলে মিহিভাবে ভেসে এলো তাশফিয়ার নরম কণ্ঠস্বর! থমথমে গলায় সে আয়মনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“প্লিজ ভাইয়া যা হয়েছে সব ভুলে যান এবার। রেষারেষিটা এখানেই সমাপ্ত করুন প্লিজ। আমি তো আপনার ছোটো বোনের মতো তাইনা? ছোটো বোনের একটা অন্যায় কী মাফ করা যায়না?”

আয়মন রাগে ফোঁস করে উঠল! কেন জানিনা “বোনের মতো” কথাটা শুনতেই রাগে তার গাঁ টা গরম হয়ে এলো! শরীরে প্রবল তিক্ততা কাজ করতে লাগল। তাশফিয়াকে ধরে কেলাতে মন চাইল। দু’চারটা চড় দিয়ে বলতে ইচ্ছে করল,,

“তুমি আমার কোন জা’তের বোন লাগো হ্যাঁ? ছেলে মানুষ দেখলেই শুধু ভাই বানাতে মন চায়?”

চোয়াল শক্ত করল আয়মন। পেছনের চুলগুলো টেনে ভয়ঙ্কর শ্বাস ছাড়ল! খরখরে গলায় তাশফিয়াকে বলল,,

“চাঁদ ছাড়া আমার আর কোনো ছোটো বোন টোন নেই ওকে? ফারদার এই কথাটা যদি বলছ না? তো আই ওয়ানা কি”ল ইউ ওকে? একদম জানে মেরে ফেলব। যখন যাকে দেখো তাকেই ভাই বানিয়ে দাও। অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব।”

তাশফিয়া শুকনো ঢোঁক গিলল। আয়মনের অত্যধিক রাগমিশ্রিত মুখমণ্ডল থেকে ভয়াল দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। ঝট করে মাথাটা নুইয়ে নিলো! বিড়বিড় করে বলল,,

“এরে তো তেল মারতে মারতে তেলের দাম আরও বাড়িয়ে দিলাম! এখন তো কিছুতেই সেই দাম কমানো যাবেনা। নম্রতাও এই লোকের জেদের কাছে হার মেনে গেল। তবে যে মা বলল নম্রতার উপরে আর কোনো অস্ত্র নেই!”

,
,

মাহিন অন্তপ্রাণ চেষ্টা করছে তিথীকে একটুখানি পটানোর! পানি খাওয়ানোর বাহানা দিয়ে তাকে রান্নাঘর অবধি নিয়ে এসেছে সে! প্রাইভেটলি কিছু কথা বলার জন্য। তিথীর মনের হালচাল বুঝার জন্য। তাদের সম্পর্কটাকে আরও একটু সহজ করার জন্য। তিথীর সাথে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য। এতে করে তিথী খুব সহজে-ই মাহিনের সাথে মিশে যেতে চাইবে। তিথীকে নিজের করে তুলতেও তার সুবিধা হবে।

পানিভর্তি গ্লাসটা মাহিন তিথীর দিকে এগিয়ে দিলো। স্মিত হেসে তিথীর দিকে তাকালো। গলায় দারুন ভঙ্গিমা এনে বলল,,

“এই নিন ম্যাম। আপনার পানি।”

তিথী জোরপূর্বক হাসল। মাহিনের হাত থেকে গ্লাসটা তুলে নিলো। জড়তাগ্রস্ত হয়ে মাথা নুইয়ে পানির গ্লাসে চুমুক দিতেই মাহিন বুকের পাঁজরে দুহাত গুজল। ব্যগ্র হেসে রসাত্নক গলায় বলল,,

“হায়! কতো ভাগ্য এই গ্লাসটার। আপনার মতো সুন্দরীর ঠোঁটের স্পর্শ পেল!”

তৎক্ষনাৎ তিথীর নাকে-মুখে উঠল৷ কাশতে কাশতে সে দলামোচড়া হয়ে গেল। চোখ তুলে মাহিনের দিকে একবার তাকালো। হঠকারি দৃষ্টিতে মাহিনকে কিয়ৎক্ষণ প্রদর্শন করল! মাহিন বাঁকা হাসল। মগ্ন স্বরে বলল,,

“সুন্দুরীদের নাকেমুখে উঠলেও কতো সুন্দর দেখায়!”

তিথীর সারা শরীরময় রাগে রি রি করে উঠল! পানির গ্লাসটা সে সশব্দে রান্নাঘরের তাকে রাখল। দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“ফ্লার্ট করছেন আমার সাথে?”

“রিয়েলি? ফ্লার্ট কেউ এভাবে করে? আগে তো জানতাম না! আপনার থেকে নতুন কিছু শিখলাম। এবার থেকে সত্যিই ফ্লার্ট করা যাবে।”

তিথীর মাথায় সাংঘাতিক রাগ চেপে বসল! মাহিনের বিহেভিয়র তার কাছে ফ্লার্ট টাইপ মনে হলো! আর এসব ফালতু ফ্লার্টিং টার্টিং তার একদম-ই পছন্দ নয়। এসব বাজে দিক থেকে সে নিজেকে যথেষ্ট বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে। অতি দ্রুত স্থান থেকে প্রস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। এমনকি এই বাড়ি থেকেও! মাহিনকে চোখের গরম দেখিয়ে সে তড়িঘড়ি করে পিছনে ঘুরতেই মাহিন পেছন থেকে ব্যতিব্যস্ত গলায় তিথীকে ডাকল! হেয়ালি স্বরে শুধালো,,

“কী হলো? ক্ষমা টমা চাইবেনা নাকি? চড় মারার কথাটা এতো জলদি ভুলে গেলে হ্যাঁ?”

“ক্ষমা চাইতেই এসেছিলাম ওকে? তবে আপনাদের দুই ফ্রেন্ডের হাবসাব আমার মোটেও পছন্দ হচ্ছেনা। একজন রাগ ঝাড়ছেন তো অন্যজন ফ্লার্টিং করছেন। সব অ’সভ্যের দল এখানে! এদের মাঝে থাকতে আমার অস্বস্তি হচ্ছে। বিচ্ছিরি লাগছে সব।”

বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলোনা তিথী মাহিনের উপর বেশ ক্ষেপে গেছে। এখনই এই জ্বলন্ত আগুন না নিভালে তিথীর সাথে ভাব জমানো তার আজন্মের জন্য অসম্ভব রয়ে যাবে। যে ব্যর্থতা মাহিনের পক্ষে সহ্য করা নিতান্ত-ই অসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে৷ হন্তদন্ত হয়ে মাহিন তিথীর পেছনে ছুটল। বড়ো বড়ো শ্বাস ফেলে তিথীর মুখোমুখি দাঁড়ালো। হাঁসফাঁস গলায় বলল,,

“ক্ষমা না চাইলে তুমি বাড়ি ফিরবে কীভাবে হ্যাঁ? আন্টিকে কী জবাব দিবে?”

“ক্ষমা আর কীভাবে চাইব হ্যাঁ? পায়ে ধরে চাইব? দুই ফ্রেন্ডের পায়ে ধরব এখন?”

“না। তবে একটা পথ খোলা আছে! সরি বলা ছাড়া বা পায়ে ধরা ছাড়াও তুমি ক্ষমা পেতে পারো! যদি আমার দেখানো পথ তুমি মানো।”

“কী সেই পথ শুনি?”

“যা বলব সত্যি মানবে?”

তিথী গলায় ঝাঁঝ এনে বলল,,

“আপনাকে না আমার একদম বিশ্বাস হয়না! চূড়ান্ত ব’দ’মা’ইশ আপনারা! কখন কোন পথের কথা বলে কোন ট্রেপে ফেল দেন বলা যায়না।”

মাহিন বেশ ভাব নিলো! শার্টের কলারটা পেছনের দিকে এলিয়ে তিথীর একদম মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো৷ অপলক দৃষ্টিতে তিথীর দু’চোখে তাকিয়ে রইল। মুখশ্রীমে প্রেমময় ভাব ফুটিয়ে একরোঁখা গলায় বলল,,

“আমার শর্ত না মানলে আমি কিছুতেই তোমাকে ক্ষমা করবনা ওকে? আর ক্ষমা না পেলে তুমি তো জানোই বাড়িতে ফিরলে তোমার ঠিক কী অবস্থা হবে! কতোটা সাফার করতে হবে।”

তিথী ফেঁসে গেল মহা ফ্যাসাদে! নিজের মনের কথা শুনবে নাকি মাহিনের করা প্রস্তাবে রাজি হবে তাই ভেবে সে হয়রান হয়ে উঠল। অস্বস্তিতে সে হাত-পা কচলাতে লাগল। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে লাগল। মনে মনে মাহিনের ষষ্ঠী পূজো করতে লাগল! তিথীর বর্তমান অস্বস্তিকর অবস্থাটা মাহিন বুঝতে পারল। গলা খাঁকিয়ে সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল,,

“কী হলো বলো? আমার শর্তে রাজি তুমি?”

তিথী সেই একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল। জেদের সাথে না পেরে আক্রোশিত গলায় বলল,,

“কী শর্ত? আগে তো শুনি?”

মাহিন আর কোনো ভনিতার আশ্রয় নিতে নিলো না। গলা ঝেড়ে একদম সোজাসাপ্টা গলায় বলল,,

“তোমার ফোন নাম্বারটা দিতে হবে!”

তিথী মাথা তুলল। উজবুক দৃষ্টিতে মাহিনের দিকে তাকালো। সচকিত গলায় বলল,,

“এ্যাহ্?”

“এ্যাহ্ না হ্যাঁ।”

“হোয়াট রা’বি’শ!”

রাগে গটগট করে তিথী মাহিনকে উপেক্ষা করে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! মাহিন আচমকা ফিক করে হেসে দিলো। তিথীর যাওয়ার পথে সে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সম্ভাবনাময় গলায় বলল,,

“তোমার নাম্বার কালেক্ট করতে কিন্তু আমার পাঁচমিনিটও সময় লাগবেনা। তবে সুন্দুরীদের এতো রাগতে নেই বুঝলে? উফফ! দেখলেই কেমন প্রেম প্রেম পেয়ে যায়! ছেলের প্রেমে আকৃষ্ট করার জন্য কিন্তু তোমরা মেয়েরাই দায়ী!”

অসহ্য হয়ে তিথী কানে হাত চেপে ধরল। পিছু ঘুরে লোহিত দৃষ্টিতে মাহিনের দিকে তাকালো। শাণিত গলায় বলল,,

“হেই ইউ লিসেন টু মি। এই পর্যন্ত কোনো ছেলে আমার সাথে ফ্লার্ট করে পাড় পায়নি ওকে? আর আপনিও পারবেননা? সো এসব দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন। বাস্তবে ফিরে আসুন।”

“আমি তো তোমার সাথে ফ্লার্ট করছিনা মিস সুন্দুরী! যা বলছি সব মন থেকেই বলছি। যদি উদ্দেশ্য সৎ হয় না? তবে দিবাস্বপ্নও সত্যি হয় বুঝলে?”

,
,

দ্বিধাদ্বন্ধ ভুলে চাঁদ এবার ফ্ল্যাটের দরজায় সশব্দে টোকা মারল। আয়মনের নাম ধরে ডাকতে লাগল। এতক্ষণ যাবত সে একমনে ভেতরের সব কথাবার্তা শ্রবণ করেছিল। তাশফিয়ার গলার স্বর পেয়ে সে যতোটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে আয়মনের সাথে তাশফিয়ার তর্কাতর্কির আভাস পেয়ে! দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে আয়মন হম্বিতম্বি হয়ে দরজার কাছে ছুটে এলো। রাগী ভাবভঙ্গি নিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই চাঁদের মুখোমুখি হয়ে গেল। চাঁদ বুকে দু’হাত গুজে আয়মনের মুখশ্রীতে ভ্রু যুগল উঁচিয়ে তাকালো। দৃষ্টিতে অপার সন্দেহের ছাপ ফুটিয়ে তুলল। জিজ্ঞাসু গলায় বলল,,

“ভেতরে কে?”

আয়মন কিছু আড়াল করলনা। উল্টো চাঁদকে দেখে অভয় পেল। রাগে গজগজ করে চোয়াল শক্ত করে বলল,,

“ভেতরে আয়। দেখ কে এসেছে।”

চাঁদকে টানতে টানতে আয়মন ফ্ল্যাটের ভেতর ঢুকিয়ে নিলো। তাশফিয়ার মুখোমুখি চাঁদকে দাঁড় করালো। ভয়ার্ত তাশফিয়ার মুখশ্রীতে রাগের ছটা বিলিয়ে দিয়ে আয়মন খরখরে গলায় চাঁদকে বলল,,

“দেখ। এই মেয়েটা বাড়ি বয়ে এসেছে আমাদের কাছে ক্ষমা চাইতে। বলছে নাকি প্রয়োজনে আমাদের পা ধরেও ক্ষমা চাইবে! তুই-ই বল এসব কথা কি আদো বিশ্বাসযোগ্য?”

তাশফিয়া অসহায় দৃষ্টিতে চাঁদের বিবর্ণ মুখমণ্ডলে তাকালো। মাথা নুইয়ে গলা খাদে এনে বলল,,

“আমি সত্যিই তোদের কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি চাঁদ। ঐদিনের ঘটনার জন্য আমি এবং তাশফিয়া সত্যিই খুব লজ্জিত এবং অনুতপ্ত! খুব বড়ো রকম অন্যায় করে ফেলেছি আমরা। যার ক্ষমা হয়তো হয়না! তবুও নির্লজ্জের মতো আমরা তোদের কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। বিশ্বাস কর কাল রাত থেকে আমার খাওয়াদাওয়া টোটালি বন্ধ হয়ে গেছে! ঘুম-নিদ্রা সব চোখ থেকে পালিয়েছে। মানসিক শান্তির অভাবে ক্রমাগত অসুস্থ হয়ে পড়ছি। পড়াশোনায়ও ঠিকভাবে মন বসাতে পারছিনা। কাল প্রথমবারের মতো আমি রিয়েলাইজ করতে পেরেছি জানিস? বন্ধুত্বহীনতা কতোটা ভয়ঙ্কর! এরচেয়ে ভয়ঙ্কর কিছু আর হতেই পারেনা। বিশ্বাস কর এতোটা কষ্ট হচ্ছিল আমার যে আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলাম! চেয়েও যেনো কান্না থামাতে পারছিলাম না একরত্তি। ভেতরে ভেতরে একধরনের শূণ্যতা কাজ করছিল। যা ভাষায় ব্যক্ত করার মতো না চাঁদ।”

তাশফিয়ার গলাটা ধরে এলো। নেত্রকোটরে অশ্রুরাজির আনাগোনা শুরু হলো! নিজের আবেগকে ধরে রাখতে না পারে সে অবিলম্বেই চোখের জল ছেড়ে দিলো। চাঁদের অশান্ত মন বিগলিত হয়ে উঠল! রাগ-জেদ-অভিমান সব যেনো জানালা দিয়ে পালালো। আবেগে আপ্লুত হয়ে সে তাশফিয়াকে জড়িয়ে ধরল! কান্নাজড়িত গলায় বলল,,

“আর কিছু বলতে হবেনা তোকে। চুপ কর এবার। যা বুঝার আমি বুঝে নিয়েছি। আসলে আমিও বুঝতে পেরে গেছি জানিস? তুই আমাদের ঠিক কতোটা ভালোবাসিস। এই ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে একটা জিনিস ভালোই হলো বল? আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আরও স্ট্রং হলো! আমরা বুঝতে পারলাম একে-অপরকে ছাড়া আমরা কতোটা অসহায়। কতোটা নাজুক আর ভঙুর।”

তাশফিয়া মৃদু হাসল৷ চাঁদকে ছেড়ে তার হাত দুটো আঁকড়ে ধরল। হাত দু’খানার দিকে তাকিয়ে সে চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে বলল,,

“মন থেকে আমাকে ক্ষমা করতে পেরেছিস তো?”

তাশফিয়ার হাত দুটোও চাঁদ আঁকড়ে ধরল। তাশফিয়াকে অভয় দিলো। মিষ্টি হেসে বলল,,

“হ্যাঁ পেরেছি। সব ভুলে আমরা আবার এক হতে পেরেছি।”

তাশফিয়া এবার চোখ ঘুরিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আয়মনের দিকে তাকালো। অশ্রুসিক্ত চোখে সে করুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আয়মনের দিকে। নাক টেনে বলল,,

“আমার মা খুব অসুস্থ ভাইয়া। সেই অসুস্থ মা’কে ফেলে রেখে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি! আমার একটা মা ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ নেই ভাইয়া। মায়ের কথা রাখতেই আপনাদের কাছে এভাবে ছুটে আসা। প্লিজ আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দিন।”

সঙ্গে সঙ্গেই আয়মন মাথা নুইয়ে নিলো। আর কিছুক্ষণ তাশফিয়ার নির্মম আকুতিভরা মুখমণ্ডলের দিকে তাকিয়ে থাকলে তার জানটাই হয়তো এখন বের হয়ে যাবে! তাই আয়মন ঝুঁকি নিতে চাইলনা। গলা খাকিয়ে উঠল সে। মন্থর গলায় বলল,,

“ফারদার এসব ভুল কারো সাথে করবেনা। পরিচিত, অপরিচিত কারো সাথেই না। মেয়ে হয়েছ নিজেকে যথেষ্ট আগলে রাখবে। নম্রতা, ভদ্রতা, সভ্যতা নিজের মধ্যে ধরে রাখবে। অবশ্যই সাহসী হতে হবে। তবে অতিরিক্ত সাহসী হলে এভাবেই ছেলেদের তোপের মুখে পড়তে হবে। আই থিংক তোমাকে সবটা বুঝাতে পেরেছি?”

তাশফিয়া মাথা নাঁড়ালো। মৃদু স্বরে বলল,,

“হুম। বুঝতে পেরেছি।”

“আন্টিকে আমার সালাম দিও। আর উনার যত্ন নিও!”

হনহন করে আয়মন জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। বেডরুমে ঢুকে সে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো। তিথী এসে তাশফিয়া এবং চাঁদের সাথে যুক্ত হলো। মাহিন তার পিছু নেওয়া বন্ধ করে দিলো। আজ তিথীকে যা জ্বালিয়েছে যথেষ্ট জ্বালিয়েছে। এরচেয়ে বেশি জ্বালাতে গেলে হীতে বিপরীত হতে পারে। সবকিছুরই তো একটা লিমিট থাকে। সেই লিমিটের বাইরে গেলেই মহা বিপদ।

তাশফিয়া এবং তিথীকে আজ নাশতা করানো ছাড়া কিছুতেই ছাড়ল না চাঁদ এবং জায়মা। দুজনকে ঠেসেঠুসে খাইয়ে এরপরই বিদায় দিলো দুজনকে। চাঁদ বাড়ির প্রত্যককে তাশফিয়া এবং তিথীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। তাদের দুজনের সাথে পরিচিত হয়ে বাড়ির সবাই বেশ খুশি। তবে তাদের হঠাৎ এই বাড়িতে আগমনের কারণ বাড়ির কেউ জানতে পারলনা! চাঁদ, জায়মা, আয়মন এবং মাহিন কাউকে কিছু খোলসা করে বললনা। রীতিমতো বাড়ির সবার থেকে বিষয়টা আড়াল করে গেল। যেনো তাশফিয়া এবং তিথীকে ভুল না বুঝে তাই।

,
,

দেখতে দেখতে দুদিন কেটে গেল মাঝখানে! আজ দুপুর একটা থেকে চাঁদ এবং জায়মার এক্সাম। এই দুইদিন নূর খুব কমই বিরক্ত করেছে চাঁদকে! চাঁদকে যথেষ্ট সময় দিয়েছে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে। তবে প্রতিরাতে সে ঘুমুনোর পূর্বে অন্তত একবার হলেও চাঁদকে দূর থেকে দেখে গেছে! নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করে গেছে। বেহায়া মনকে তৃপ্তি স্বাদ দিয়েছে। এই দুইদিন তার আয়মন এবং মাহিনের সাথে ফাজলামো করতে করতেই সময় কেটে গেছে। তিন বন্ধু মিলে পুরো কুমিল্লা শহর ঘুরে বেড়িয়েছে। জায়গায় জায়গায় ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডা মেরেছে।

দুপুর বারোটা বাজতেই চাঁদ এবং জায়মা রেডি হয়ে যাচ্ছে এক্সাম হলের উদ্দেশ্যে। নাওয়া খাওয়া ভুলে চাঁদের করুন এক অবস্থা। পরীক্ষার টেনশানে এবং পড়ার চাপে পড়ে তার মুখমণ্ডল বেশ নেতিয়ে গেছে। ফ্যাকাসে হয়ে বিবর্ণ রূপ ধারণ করেছে। এই নিয়ে সামিয়া আহমেদ বেশ চিন্তিত। একটু আগেও তিনি খাবার নিয়ে চাঁদকে অনেক সেঁধে গেছেন৷ তবে চাঁদ কিছুতেই মুখে কিছু তুললনা! অভুক্ত অবস্থাতেই পড়া রিভাইস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কথাটা কোনোভাবে নূরের কানে গেল! মুহূর্তের মধ্যেই সে বেশ হাইপার হয়ে উঠল। রাগে দিশাহীন হয়ে চাঁদের রুমে প্রবেশ করল। চাঁদকে পড়ার টেবিলে দেখে সে দ্রুত পায়ে হেঁটে চাঁদের পড়ার টেবিলের দিকে ছুটে গেল। পড়াশোনায় চাঁদ এতোটাই ব্যস্ত যে রুমে দ্বিতীয় কারো উপস্থিতি সে টের পেলোনা! অনর্গল ভনভন করে পড়তেই লাগল। অধৈর্য্য হয়ে নূর সশব্দে টেবিলের উপর হাত রাখল। চাঁদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। টেবিলে আওয়াজ হওয়ার সাথে সাথেই অন্তর্আত্তা কেঁপে উঠল চাঁদের! থমথমে হয়ে সে পাশ ফিরে তাকালো। অমনি নূরের রাগান্বিত চোখদুটো তার ভয়াল দু’চোখে স্পষ্ট হলো। শুকনো ঢোঁক গিলল চাঁদ। মনে মনে নূরের রাগের কারণ খুঁজতে লাগল। নূর চোয়াল শক্ত করল। কঠিন গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কাল রাত থেকে কিছু খাওনি কেন?”

“পপপড়ছিলাম!”

“এতো পড়ে কী হবে হ্যাঁ? যদি পরীক্ষার হলে দুর্বল হয়ে পড়ো? তখন তোমার পরীক্ষাটা কে দিবে হ্যাঁ? তোমার হয়ে কে লিখবে? কীভাবে পাশ করবে তুমি?”

#চলবে…?

[রি-চেইক করা হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]

#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_৪৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

“এতো পড়ে কী হবে হ্যাঁ? যদি পরীক্ষার হলে দুর্বল হয়ে পড়ো? তখন তোমার পরীক্ষাটা কে দিবে হ্যাঁ? তোমার হয়ে কে লিখবে? কীভাবে পাশ করবে তুমি?”

অবিলম্বেই চাঁদ মাথাটা নুইয়ে নিলো। নূরের কথাগুলো কোনো অংশে ভুল না হলেও এই মুহূর্তে এই প্রিয় সত্যিগুলো সে মানতে পারছেনা। পরীক্ষা অতি সন্নিকটে এলেই তার খাওয়াদাওয়ার রুচি এক্কেবারে কমে যায়। সবক্ষেত্রেই অবসাদ এবং বিষণ্ণতা দেখা দেয়। মাথার ভেতর একটা আলাদা চাপ অনুভব হয়। যতক্ষণ অবধি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না হবে ততক্ষণ অবধি সেই মানসিক চাপ তাকে উভয়দিক থেকে ঘিরে ধরবে। নূরের রোষের মুখে পড়েও সে বইয়ের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে পড়ছে! এই মুহূর্তে পড়াটাই যেনো হলো তার একমাত্র ধর্ম। বিষয়টাতে নূর আরও অধিক রুষ্ট হয়ে উঠল। গরম চোখে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করতে লাগল। নূরের রোষাগ্নি দেখেও চাঁদের কোনো ভাবান্তর না দেখে নূর এবার রাগে এবং জেদে টেবিলে সজোরে এক লাথ মারল! সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ কেঁপে উঠল! অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। নূর ঝট করে চাঁদের সামনে থেকে বইটা ছিনিয়ে নিলো। কোনোরকম তর্কে না জড়িয়ে সে বইটা নিয়ে সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেল! নূরের যাওয়ার পথে চাঁদ নির্বোধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ক্ষীণ গলায় বলল,,

“এই? বই নিয়ে কই যাচ্ছেন আপনি?”

নূর কোনো প্রত্যত্তুর করলনা। দ্রুত পা ফেলে সোজা বাড়ির ড্রয়িংরুমে চলে এলো। পুরো ফ্ল্যাট এখন ফাঁকা প্রায়। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। নীড়, মাহিন এবং হাবিব আবরার একটু আগেই বেরিয়েছেন জামান আহমেদের অফিসটা একটু ঘুরে দেখতে। আয়মন তার বাবার সাথে অফিসে গেছে কিছু জরুরি কাজে। পড়ালেখাের ফাঁকে ফাঁকে আয়মন তার বাবাকে অফিসের কাজে সাহায্য করে। এই বছরই আয়মন অনার্স ফোর্থ ইয়ারে উঠল। সোহানীর পরের ব্যাচ সে। নূর ও তার ব্যতিক্রম নয়। সোহানীর ফোর্থ ইয়ার ফাইনালের পর পরই থার্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম শুরু হয়েছিল। থার্ড ইয়ারের এক্সাম কোনোমতে শেষ করে নূর সেকেন্ড ইয়ারের এক সাবজেক্ট ইম্প্রুভমেন্ট দিয়েই পরেরদিন কুমিল্লা এসেছে। নূর এবং আয়মনের থেকে সোহানী তিন বছরের বড়ো হলেও সে এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি এক্সামে দুইবার ইম্প্রুইমেন্ট দিয়ে সবেমাত্র অনার্স কমপ্লিট করেছে! ভালো রেজাল্টের জন্যই মূলত ইম্প্রুভমেন্ট দেওয়া।

ডাইনিং টেবিলের একটা কর্ণারে ঝট করে বইটা রেখে নূর নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসল। ঘামে সিক্ত শার্টের কলারটা পেছনের দিকে এলিয়ে দিলো। সামনের অপরিপাটি চুলগুলো টেনে সে রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল। চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে গরমের প্রাদুর্ভাবে আঁখিযুগল বুজে নিলো। দাঁতে দাঁতে চেপে চাঁদকে আবিষ্কার করে বলল,,

“খাবার তুমি খাবা না, না? তোমার জামাইসহ খাবে বুঝলা? তোমার জামাই তোমার চেয়ে আরও বড়ো ঘাড়ত্যাড়া!”

শ্লেষাত্নক হাসল নূর। রান্নাঘরে হেঁশেল সামলানো সামিয়া আহমেদকে উচ্চস্বরে ডাকল। রাগী গলায় বলল,,

“খালামনি? চাঁদের খাবারটা দিয়ে যাও।”

সামিয়া আহমেদ পুটি মাছগুলো মাত্র কষালেন। বেশ ব্যস্ত গলায় জবাবে বললেন,,

“চাঁদ তো খাবে না বলল বাবা। আমি অনেকবার সেঁধেছিলাম তো।”

“খাবে খালামনি। তুমি খাবারটা নিয়ে এসো তো।”

সামিয়া আহমেদ নিবোর্ধ ভাব নিলেন। নূরের জেদের কাছে হার মেনে চাঁদের জন্য আলাদা প্লেটে খাবার সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। চাঁদ হাত-পা কচলাতে কচলাতে রুম থেকে বের হয়ে এলো! রাগে গটগট করে অনুমান বশত সোজা ড্রয়িংরুমে চলে এলো। ডাইনিং টেবিলে নূরকে দেখামাত্রই চাঁদ ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ল। ঝাঁঝালো গলায় বলল,,

“বইটা দিন বলছি। পড়াটা শেষ করে এক্ষণি আমাকে বের হতে হবে।”

পাশ থেকে নূর বইটা তার বুকের পাঁজরে আঁকড়ে ধরল। ট্যারা দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। ব্যগ্র গলায় বলল,,

“আগে খাবার খাবে। তারপর বই পাবে। শরীরে এনার্জি না থাকলে হাজার পড়েও লাভ হবেনা বুঝছ? দুর্বল শরীর নিয়ে পরীক্ষার হলে একঘণ্টার বেশি স্টে করতে পারবেনা। এতে হীতে ক্ষতি তোমার-ই হবে। আমার বা খালামনির কিছুই হবেনা কিন্তু। সো, যদি বুদ্ধিমতী হও তাহলে আমার কথা মেনে নাও। আর যদি নির্বোধও হও তবে আমার কোনো সমস্যা নেই। কজ ত্যাড়া ঘাড় কীভাবে সোজা করতে হয় আমার খুব ভালোভাবেই জানা আছে!”

চাঁদ হুড়মুড় করে নূরের দিকে তেড়ে এলো। তেজী দৃষ্টিতে নূরকে কিয়ৎক্ষণ প্রদর্শন করে সে আচমকা নূরের পাশের চেয়ারটা টেনে বসল। ঠোঁট উল্টে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তাহলে খেতে খেতে পড়ি?”

নূর গাঁ ছাড়া ভাব নিলো। চেয়ারের পেছনে হেলান দিয়ে বলল,,

“ইট’স ইউর চয়েজ। বাট খেতে খেতে না আবার পড়া খেয়ে বসো সেদিকে খেয়াল রেখো!”

“খাবো না। বইটা দিন এবার।”

হাত বাড়িয়ে চাঁদ নূরের কাছ থেকে বইটা চাইল। সোজা হয়ে বসে নূর ভাবলেশ ভঙ্গিতে বইটা চাঁদের দিকে বাড়িয়ে দিলো। বইটা পেয়ে চাঁদ মৃদু হাসল। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করেই সে তড়িঘড়ি করে বইটা খুলে পুরোনো পড়াগুলো বিড়বিড় করে পড়তে লাগল। থুতনিতে ডান হাতটা ঠেকিয়ে নূর বেখবর দৃষ্টিতে অপলক চাঁদকে দেখতে লাগল! রোদের তাপে মাথার উপরে থাকা ঘূর্ণায়মান সিলিং ফ্যানটাও এখন বেশ উত্তপ্ত হাওয়া দিচ্ছে। যার প্রভাবে চাঁদের কপাল, নাক এবং থুতনিতে খুবই স্পষ্টভাবে ঘামরাশি দেখা দিয়েছে। এলোকেশী চুলগুলো উন্মুক্ত থাকার দরুণ যেনো তার শরীরের গরমের মাত্রা অধিক বেড়ে যাচ্ছে। গলা বেয়েও টুপটুপ করে ঘাম ঝরে পড়ছে। নূর বিব্রত হলো বিষয়টাতে। চাঁদকে এই নাজেহাল রূপে দেখতে তার মোটেও ভালো লাগছেনা। চাঁদকে তো কেবল স্নিগ্ধ রূপেই মানায়! যার স্নিগ্ধতায় চোখ জুড়িয়ে যায়। মন-প্রাণ স্থির হয়ে ওঠে। চাঁদের আলোয় আলোকিত হওয়ার ব্যাকুলতা কাজ করে। তড়িঘড়ি করে নূর চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। চাঁদের পেছনের দিকটায় দাঁড়ালো। কোনো রকম জড়তা বা দ্বিধাদ্বন্ধ ছাড়াই সে চাঁদের উন্মুক্ত চুলে হাত রাখল! চাঁদকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে সে চুলগুলো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে খুব সুন্দর করে একটা খোঁপা বেঁধে দিলো! পড়াশোনা ভুলে চাঁদ ঘাড়টা খানিক বাঁকিয়ে আড়চোখা দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। বিস্মিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“আপনি খোঁপা বাঁধতে পারেন নূর ভাইয়া?”

খোঁপাটা বিজ্ঞ হাতে বেঁধে নূর হাত দুটো ঝাড়ল। অতঃপর আবারও চেয়ার টেনে চাঁদের পাশে বসল। শার্টের কলারটা ঝাঁকিয়ে বেশ ভাব নিয়ে বলল,,

“এ আবার কঠিন কী কাজ? সবাই পারে। আম্মুর চুলে খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে এখন অভ্যেস হয়ে গেছে।”

চাঁদ কিছু বলার পূর্বেই পেছন থেকে সাবরিনা আররার এসে চাঁদের মুখের কথা টেনে নিলেন। নূরকে ইন্ধন যুগিয়ে বললেন,,

“হ্যাঁ রে চাঁদ। নূর মাঝেমধ্যেই আমার চুলে খোঁপা বেঁধে দেয়। মাঝেমধ্যে রান্নাঘরে কাজে এতো কাজের চাপ থাকে যে চুল বাঁধার সময় থাকেনা। তখনই উচ্ছৃঙ্খল চুলগুলো খুব বিরক্ত করে। কখনো সখনো শক্ত খোঁপা থেকেও চুল খুলে যায়। আর তখনই নূর আমার খোঁপা বেঁধে দেয়।”

সাবরিনা আবরার রান্নাঘরের দিকে মোড় নিলেন। চাঁদ মগ্ন দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। বিড়বিড় গলায় বলল,,

“ইশশশ। আমার ফিউচার জামাইটাও যদি এভাবে খোঁপা বাঁধতে জানত! তাহলে আমাকে আর আধাঘণ্টা পরিশ্রম করে খোঁপা বাঁধতে হতোনা। পাঁচ মিনিটেই মুশকিল আছান হয়ে যেতো!”

নূর ফিক করে হেসে দিলো। চাঁদের কানের কাছে তার ঠোঁট ঠেকালো! রসাত্মক গলায় বলল,,

“কোনো ব্যাপার না। তুমি চাইলে আমি-ই তোমার ফিউচার জামাই হবো!”

চাঁদ তাজ্জব দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো! শুকনো ঢোক গিলে আবারও মনে মনে আওড়ে বলল,,

“এই লোকটা আমার মনের কথা কীভাবে শুনল?”

,
,

ভর দুপুর। সূর্যের প্রখর আস্তরণে ঢাকা মহাকাশ। সমগ্র পৃথিবীকে যেনো মুহূর্তের মধ্যেই গ্রাস করে তুলছে আকাশে বিস্তরণ করা এই রোষানল সূর্যটি। অসহনীয় গরমে জনজীবন তিক্তময়, ক্লান্তময় এবং বিষাদময়। প্রকৃতির কোথাও কোনো বাতাসের ছিটেফোঁটাও নেই। রোদের তীর্যক ঝাঁজে শরীর ঝলসে একাকার সবার! চাতকপাখির ন্যায় সবাই একটুখানি শিথীল হাওয়ার অপেক্ষায় অপেক্ষমান। আকাশজুড়ে কালো মেঘের অপেক্ষায় দুড়ুদুড়ু সবার মন। ফুটপাতে অবস্থান করা মুদি দোকান এবং শরবতের স্টলগুলোতে মানুষের একাধিক লাইন পড়ে গেছে। কেউ বরফের টুকরো চিবিয়ে খাচ্ছে তো কেউ আস্ত আইসক্রীম চিবিয়ে খাচ্ছে। আবার কেউ শরীর ঝরা ঘাম নিয়ে শরবতের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে একটুখানি স্বস্তির খুঁজে। গাঁ জ্বালানো গরম থেকে একটুখানি পরিত্রান লাভের জন্যে।

ঘড়িতে খুব সম্ভবত ২টা বেজে ৩০ মিনিট চলমান। পরীক্ষার হলে বসে খুব নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিচ্ছে চাঁদ, জায়মা এবং তাশফিয়া। প্রশ্ন এতোটাই কমন পড়েছে যে কোনটা ছেড়ে তারা কোনটার আনসার করবে তা নিয়েই চিন্তিত! আগেপিছে, ডানে-বায়ে না তাকিয়ে তারা একমনে পরীক্ষা দিচ্ছে। অতি উত্তেজনায় চাঁদ তার মাথার হিজাব খুলে ওড়নার মতো পড়ে নিয়েছে! অত্যধিক গরমে মাথার তুলি গরম হয়ে উঠছিল তার। সারা শরীর জ্বালা করে উঠছিল। যার কারণে লিখায় মনোযোগ বসাতে পারছিলনা সে। তার উপর হাত দুটো ঘেমে নেয়ে একাকার। কলমটা পিছলিয়ে ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে লিখতে। হিজাব দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর সে হাতটা মুছছে। টিস্যু না থাকার দরুন হিজাব দিয়েই মুখের ঘামগুলো মুছছে। তার পাশের সিটে বসা মেয়েটি কেমন যেনো ঢুলুঢুলু করছে। তার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যেনো এক্ষণি সে জ্ঞান হারাবে। গরমের ভাপে এবং অভুক্ত থাকার কারণে তার শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে! নিজের শরীরকে স্থির করে কিছুতেই লিখালিখি করতে পারছেনা সে!

নূর, মাহিন এবং আয়মনের অবস্থান এখন কলেজ গেইটের বাইরে! বাইকের উপর বসে তারা ঢকঢক করে লেবুর শরবত গিলছে। আয়মন আস্ত বরফ চিবিয়ে খাচ্ছে। গরমে একেকজনের অবস্থা খুবই দুর্বিষহ। ঘামের অতিরিক্ত প্রভাবে তাদের চোখ-মুখই বুঝা যাচ্ছেনা! গাঁয়ের রং কুচকুচে কালো হয়ে উঠেছে৷ মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা পর্যন্ত। চাঁদ বারণ করা সত্ত্বেও নূর ঘাড়ত্যাড়ামো করে চাঁদের পিছু পিছু কলেজ অবধি ছুটে এসেছে! সারা রাস্তায় চাঁদকে জ্বালিয়ে মেরেছে সে। এটা ওটা নিয়ে বকর বকর করে। বিভিন্নভাব চাঁদকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কথার মারপ্যাচে চাঁদকে জড়িয়ে ফেলেছে। অফিস থেকে ফিরে আয়মনও মাহিনকে নিয়ে নূরের কথামতো কলেজের দিকে চলে এসেছে! আয়মন মূলত আসতে চায়নি তবে মাহিনের জোরাজুরিতেই তাকে বাধ্য হয়ে আসতে হলো। কোথাও না কোথাও মাহিনের মন জানান দিচ্ছিল “আজ তিথী আসবে!” তাশফিয়াকে পিক করতে সে কলেজে একবার হলেও আসবে। মনের ডাকে সাড়া দিয়েই সে জোরজবরদস্তি করে আয়মনকে সাথে নিয়ে কলেজে আসা। তিথীর সাথে একটিবার দেখা করার সুযোগ যেনো সে মিস করতে চাইছেনা। টানা দুইদিন পর আজ তিথীর সাথে দেখা হবে তার। এই ভেবেই খুশিতে সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। তিথীর কন্ট্রাক্ট নাম্বার জোগাড় করতে সে প্রায় মরিয়া হয়ে উঠেছে।

চার থেকে পাঁচ গ্লাস শরবত শেষ করে আয়মন এবার বাইক থেকে ওঠে দাঁড়ালো। ঘর্মাক্ত শার্টের কলারটা ঝেড়ে সে ঝাঁঝালো গলায় নূরকে বলল,,

“এই? তোরে কি শ’য়’তা’নে লা’ড়’ছিল? কে কইছিল ঢঙ দেখিয়ে আজ এখানে আসতে? চাঁদ, জায়মা ওরা কী বাড়ি-ঘর চিনে না নাকি? ছোটো ওরা? সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে ওরা একই কলেজে পড়ছে। তাছাড়া এটা আমার কলেজ। আমার বোনদের সবাই খুব ভালোভাবেই চিনে। কোথায় কী করলে কী হবে তারা বেশ ভালোভাবেই জানে। তো কী দরকার ছিল কলেজের সামনে এসে এভাবে বডিগার্ডের মতো দাঁড়ানোর?”

নূর চোখ টিপল! আয়মনকে শান্ত করার জন্য বাঁকা হেসে বলল,,

“ইউ আর লুকিং সো হ’ট ব্রো! রাগলে মেয়েদের খু্ব সুন্দর লাগে দেখেছি তবে ছেলেদেরও যে এতোটা সুন্দর লাগে আজ তোকে দেখে বুঝলাম!”

মাহিন হু হা শব্দে হেসে দিলো! নূরের কাঁধে চাপড় মেরে আয়মনকে লক্ষ্য করে বলল,,

“তোকে দেখে আজ মেয়ে মেয়ে ফিলিংস হচ্ছে আয়মন! সিরিয়াসলি ইউ আর লুকিং সো হ’ট!”

আয়মন রক্তিম দৃষ্টিতে নূর এবং মাহিনের দিকে তাকালো। চোয়াল শক্ত করে বেফাঁস গলায় বলল,,

“তোরা দুইভাই মিলে হি’জ’রা’গি’রি শুরু করছস হ্যাঁ? কেন ভাই? মেয়ে খুঁজে পাস না? অভাব পড়ছে দেশে?”

নূর তপ্ত শ্বাস ছাড়ল। আয়মনের দিকে সরল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। স্বাভাবিক গলায় বলল,,

“পেয়েছি বলেই তো এই রোদে পুড়ে তার কাছাকাছি থাকতে আসা!”

আয়মন ভ্রু কুঁচকালো। নূরের দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কৌতূহলী গলায় শুধালো,

“কোন মেয়ে? কার কথা বলছিস তুই?”

নূর ঝট করে বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো। শার্টের কলার ঠিক করে আয়মনের মুখোমুখি দাঁড়ালো। কোনোরকম ভনিতা ছাড়াই সোজাসাপ্টা গলায় বলল,,

“আমি তোর বোনকে খুব চাই! নিজেকে যতোটা চাই তাকেও ঠিক ততোটাই চাই।”

“কোন বোন? কার কথা বলছিস তুই?’

“চাঁদের কথা বলছি আমি!”

আয়মন থমকালো! হতবিহ্বল দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। বিদ্বেষি গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“তুই জানিস না? সাদমান চাঁদকে পছন্দ করে?”

“জানি! আমি সব জানি! তবে ভালোলাগা আর ভালোবাসার মধ্যে কিন্তু অনেক ফারাক আয়মন। সাদমান চাঁদকে পছন্দ করে আর আমি চাঁদকে ভালোবাসি! এখানেই আমাদের দুজনের মধ্যে পার্থক্য! আমার ভালোবাসাটাও কিন্তু মিথ্যে নয় আয়মন। চাঁদ ঢাকা থেকে ফেরার পর থেকেই কেনো জানি না আমি তার প্রতি একটু একটু করে দুর্বল হতে শুরু করি! সারাক্ষণ আমার আশেপাশে চাঁদকে ফিল করতে থাকি। চাঁদের চঞ্চলা হাসি, চাঁদের দুষ্টুমিষ্টি কথা, চাঁদের মায়াবি চোখ, চাঁদের স্নিগ্ধ মুখ, চাঁদের পাগলাটে স্বভাব সব আমাকে সত্যিই পাগল করে তুলেছে! রোজের মায়া কাটানোর জন্য চাঁদের ঐ সময়ের সাপোর্ট সব আমাকে চাঁদের প্রতি খুব আকৃষ্ট করে তুলেছে। প্রথমবারের মতো চাঁদের প্রতি মুগ্ধতা খুঁজে পাই আমি। কোথাও হেঁটে, বসে, খেয়েদেয়ে একরত্তিও শান্তি পাইনি আমি। রোজের প্রতি দুর্বলতা কাটতে শুরু হয় আমার। রোজকে ভুলতে বসি প্রায়। মন থেকে চাঁদকে গ্রহণ করতে শুরু করি! লাস্ট পাঁচমাসে এসে মনে হয়, “না, তাকে ছাড়া আর একদন্ডও থাকা সম্ভব না! বেঁচে থাকার স্পৃহাও আর কাজ করছেনা। তার কাছে এবার আমার ধরা দিতেই হবে। আমার ভালো থাকার ঔষধকে আমার করে পেতেই হবে। একটা শেষ চেষ্টা করতেই হবে। লাইফের প্রথম প্রেম সাকসেস না হলেও দ্বিতীয় প্রেমকে সাকসেস করতেই হবে! এবার তাকে না পেলে আমি ম’রে’ই যাব! তাই আমি স্বার্থপরের মতো সাদমানের কাছে লাস্ট কয়দিন আগে এই প্রস্তাবটা রাখি। বুঝতে পারিনি সাদমান এতোটা হিংস্র হয়ে ওঠবে! আমাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হবে! তুখার ঝগড়া হয় ঐদিন সাদমানের সাথে। ঝগড়াঝাঁটির এক পর্যায়ে এসে সাদমান বলে, “চাঁদ যাকে মন থেকে নিবে, যাকে সে মন থেকে ভালোবাসবে চাঁদ শুধু তারই হবে!” আমি মেনে নিলাম তার শর্ত! কারণ, আমার যেকোনো মূল্যেই হোক চাঁদকে চাই। তাই চাঁদের মন জয় করার জন্যই আমি মূলত কুমিল্লায় আসি! তবে এখানে আমার একটা প্লাস পয়েন্ট হলো যে, সাদমান কোনো একটা বিরাট সমস্যার কারণে কুমিল্লায় আসতে পারেনি। ঢাকায় আটকে পড়েছে। জানিনা এই সময়টাতে আমি কতোখানি চাঁদের মন জয় করতে পেরেছি। তবে শেষ পর্যন্ত আমি লেগে থাকব। যতক্ষণ অবধি না চাঁদ আমাকে মন থেকে মেনে নিবে ততক্ষণ অবধি আমি চাঁদের পিছনে লেগে থাকব। চাঁদকে নিজের করেই তবে আমি শান্ত হবো।”

আয়মন নির্বাক মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল! চাঁদকে নিয়ে দুই ফ্রেন্ডের মধ্যে রেষারেষি দেখে সে হতবাক হলো। মেয়েলি ব্যাপার নিয়ে এই প্রথমবার নিজের ফ্রেন্ডের মধ্যে হওয়া হানাহানি দেখে সে হতাশ হলো। বিষয়টাতে চাঁদ কতোটা আঘাত পাবে তা ভেবেই সে হয়রান হয়ে উঠল! পকেট থেকে সিগারেট বের করে নূর একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিলো। লম্বা একটা ফুঁক দিলো সিগারেটটায়। ঘাড়ের রগ টান টান করে বলল,,

“যেকোনো মূল্যেই হোক চাঁদকে আমার চাই আয়মন। দুনিয়া লন্ডভন্ড করে হলেও তাকে আমার চাই। ভাগ্য এবার আমাকে নিয়ে আর খেলতে পারবেনা। দোয়া নাকি ভাগ্য বদলাতে পারে? চাঁদকে পাওয়ার জন্য আমি পৃথিবীতে যতো রকম দোয়া আছে সব দোয়া মন থেকে করব! আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি কোথায় আছে সব আমি খুঁজে বের করব। এরজন্য যদি আমার নিজেকে পরিবর্তন করতে হয় প্রয়োজনে আমি তাও করব। একজনকে ভালোবেসে আমি বাবা-মাকে ছাড়তে চেয়েছি। এবার চাঁদকে ভালোবেসে আমি দুনিয়া ছাড়তে রাজি!”

মাহিন আপাতত এসব ক্যাচালে নেই! সে অস্থির দৃষ্টিতে কেবল রাস্তার এদিক-ওদিক দৃষ্টি বুলাচ্ছে। তিথী কখন এসে তার সামনে হাজির হবে তার জন্য সে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। দমটা যেনো তার হাঁসফাঁস করছে তিথীকে এক ঝলক দেখার জন্য।

,
,

দুপুরের খাবার খেয়ে মাত্র সোহানী তার বেডরুমে প্রবেশ করল। নীড় খুব রিলাক্স মোডে আছে! খোশমেজাজে সে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে ফোন টিপছে। নীড়ের এই হাসিমাখা বদন দেখে সোহানীর রাগটা যেনো আরও তড়তড় করে বেড়ে গেল! রুমের দরজাটা সে সশব্দে বন্ধ করল। চট করে নীড় আঁচ পেয়ে গেল ঘরের চেয়ারম্যান আজ বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে আছে! সোহানীর রাগকে আরও উস্কানোর জন্য নীড় ছলনার আশ্রয় নিলো। ইচ্ছে করে বিষয়টাকে তেমন আমলে নিলো না! এমনকি সোহানীর দিকেও ফিরে তাকালো না। সোহানী বেশ বিরক্ত হলো। দ্রুত পা ফেলে সে নীড়ের দিকে তেড়ে এলো। রাগে গজগজ করে নীড়ের পাশে বসল। নীড় ফোন চাপতে এতোটাই ব্যস্ত ভঙ্গি নিলো যে রুমে সোহানীর অস্তিত্ব সে টের পেল তা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে দিলোনা। সোহানী আরও বিগড়ে গেল। নীড়ের মুখের সামনে সে ভেজা চুলগুলো খুলে দিলো! টুপ টুপ করে চুলের জলগুলো নীড়ের চোখে-মুখে আছড়ে পড়তে লাগল! নীড় বাঁকা হাসল। ফোনটা সে হাত থেকে সরালো। হেঁচকা টানে সোহানীকে তার বিপরীত পাশে শুইয়ে দিলো। সোহানীর গাঁয়ের উপর ওঠে সে সোহানীর থুতনি চেপে ধরল। কঠিন গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী? জামাইয়ের ট’র্চা’র ভাল্লাগে? তাই আমাকে রাগাতে এসেছ?”

উজবুক ভঙ্গিতে সোহানী মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। অস্ফুটে গলায় বলল,,

“আমাকে বললেন না কেন কাল আপনারা ঢাকা ফিরে যাচ্ছেন?”

“আগে বললে কী হতো হ্যাঁ? জামাইকে আরও বেশি আদর দিতা? ওমাগো! টুরু আদর?”

সোহানী রাগী শ্বাস ছাড়ল। তিক্ত গলায় বলল,,

“ফা’ই’জ’লামি ছাড়া কি জীবনে আর কিছুই শিখেন নাই? জানতে চেয়েছিলাম বিয়ের ডেইট ফিক্সড না করেই কি আপনারা চলে যাবেন?”

সোহানীর থুতনিটা ছেড়ে দিলো নীড়। উত্তেজিত হয়ে সোহানীর ঘাড়ে দীর্ঘ এক ভালোবাসার পরশ ছুঁইয়ে দিলো। ঘোরজড়ানো কণ্ঠে বলল,,

“উঁহু বউ। আজ রাতেই বিয়ের ডেইট ফিক্সড করব দেন কাল সকালে বাড়ি ফিরব।”

#চলবে…?