প্রেমময়ী তুমি পর্ব-৫৮+৫৯

0
480

#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_৫৮
#নিশাত_জাহান_নিশি

দৃষ্টি নুইয়ে নিলো সাদমান! থতমত খেয়ে গেল সে। বাঘের মতো গর্জন তার থেমে গেল। ফোঁসফোঁস আওয়াজও কমে গেল! নূরের কথায় দারুন জব্দ হয়ে গেল সে।

সাদমানের কাঁধ থেকে শক্ত হাতের বোঝাটা নামিয়ে নিলো নূর। বেশ রাগী ভাব নিয়ে সজোরে শার্টের কলারটা ঝাড়ল সে। সাদমানের দিকে হিংস্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঝাঁঝালো গলায় বলল,,

“আমি চাইনি কথাগুলো কখনো প্রকাশ্যে আনতে। তোর দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে। বাট তুই আজ আমাকে বাধ্য করলি তোর ত্রুটিগুলো আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে। চাঁদের সামনে তোর সো কল্ড ভালোবাসাকে ছোটো করতে!”

সাদমান কেবল মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বিষয়টা সে নিজেও মন থেকে ভাবল। আসলেই তো ঐ ছয়মাসে চাঁদের কথা একবারও মনে করেনি তার! চাঁদের খোঁজ-খবর নেওয়ারও কোনোরকম চেষ্টা করেনি সে। চাঁদের কথাটা প্রায় মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিল তার। নূর চাঁদকে ভালোবাসে এই কথাটি জানার পর থেকেই তার চাঁদের প্রতি পুরনো ফিলিংস কাজ করতে শুরু করল! রাগ, হিংসা এবং ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে নূরের সাথে চ্যালেঞ্জ ও রাখল। কাজিনদের পেয়ে চাঁদের সাথে দেখা করার কথাটাও সে প্রায় ভুলে গিয়েছিল। নিজের বোকামীর কারণে তার দুর্বল জায়গাগুলো নূরকে বুঝিয়ে দিলো। এখন নূরের সাথে চাঁদকে দেখলেই তার হিংসে হয়। প্রচণ্ড রকম হিংসে হয়! ইচ্ছে হয় নূরকে মে’রে দিতে। গলা চেপে ধরতে। তবে নূর তো কখনই এই কাজটি করেনি! নিজে হাজার কষ্ট পেয়ে হলেও চাঁদকে তার হাতে তুলে দেওয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা করেছিল। যেখানে নূরের মনে কোনো হিংসে নেই কোনো মনোমালিন্যতা নেই সেখানে তার মনে কেন এত হিংসে? সে কী আজকাল এটেনশান সিকার হয়ে যাচ্ছে? স্বার্থপর এবং হিংসুটে টাইপ? তার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে সে হিংসে করছে? সামান্য একটা চ্যালেঞ্জে জিতে যাওয়ার জন্য এভাবে তাকে হার্ট করছে? বন্ধুদের সম্পর্কটাকে এভাবে অসম্মান করছে?

কয়েকদফা রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল নূর। নিজেকে ধাতস্থ করার অন্তঃপ্রাণ চেষ্টা করল। রাগটাকে কীভাবে কন্ট্রোল করা যায় তার সলিউশন খুঁজতে লাগল। আইডিয়া খুঁজে পেতেই নূর ঘাড় বাকিয়ে পিছনে তাকালো। চাঁদ নীরব দর্শকের মতো একবার নূরের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার সাদমানের দিকে তাকাচ্ছে! পুরো ব্যাপারটাতে সে দারুন শকড!তবে চাঁদের চোখে-মুখে একপ্রকার খুশির লহর দেখা যাচ্ছে তার! নূরের মোক্ষম জবাবে ভীষণ খুশি সে। কান্না ভুলে নূরের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসল চাঁদ। চাঁদের হাসি মুখ খানা দেখে নূরের সমস্ত রাগ তড়তড় করে নিচে নেমে গেল! ঠোঁটের আলিজে ফুটে উঠল এক মৃদু হাসির রেখা। ঘাড়টা ঘুরিয়ে নূর পুনরায় নিবার্ক চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকা সাদমানের দিকে তাকালো। এক কদম হেঁটে সাদমানের দিকে এগিয়ে গেল। সাদমানের কাঁধে হালকাভাবে হাতটা রাখল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বলল,,

“দেখ যা হয়ে গেছে ভুলে যা। আমি যেমন চাঁদকে ভালোবাসি, তেমনি চাঁদও কিন্তু আমাকে ভালোবাসে। দুজন ভালোবাসার মানুষের মাঝখানে তৃতীয় পক্ষ হয়ে থাকাটা তোর শোভা পায়না! আজ সন্ধ্যায় নীড় ভাইয়ার হলুদ। হোপ সো তুই ওখানে এটেন্ড থাকবি। আর যদি সঠিক সময়ে তোকে না পাই তো আমি তোকে টেনে হেছড়ে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব। তুই কিন্তু জানিস আমি কতটা জেদী এবং একরোখা!”

সাদমানের প্রতিউত্তরের অপেক্ষা করলনা নূর। পিছু ঘুরে রুমের দরজার দিকে পা বাড়ালো। ব্যস্ত স্বরে চাঁদকে লক্ষ্য করে বলল,,

“চলে এসো চাঁদ৷ বাসায় অনেক কাজ পড়ে আছে। সাদমানের সাথে আমরা পরেও ফ্রি টাইম কাটাতে পারব।”

নূরের কথামতো চাঁদ মাথা নুইয়ে নূরের পিছু পিছু হাঁটা ধরল। ইতোমধ্যেই সাদমান পেছন থেকে সরল গলায় নূরের নাম ধরে ডেকে উঠল! চোখে-মুখে উদ্বিগ্নতা সমেত চিন্তিত গলায় বলল,,

“এই নূর? বাসায় পৌঁছে গালটায় আগে বরফ ঘঁষে নিস। অনেকখানি লাল হয়ে গেছে।”

সাদমানের কেয়ারিং দেখে নূর বেশ অবাক হলো! পিছু ঘুরে সন্দিহান দৃষ্টিতে সাদমানের দিকে তাকালো। গলা খাকিয়ে বলল,,

“সিরিয়াসলি? তুই বললি কথাটা?”

“কেন? বলতে পারিনা? এতটাই খারাপ বন্ধু আমি?”

বিনিময়ে নূর মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। সাদমান মাথা নুইয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে বিছানার উপর বসল। নিচু গলায় বলল,,

“চিন্তা করিসনা। এবার অন্তত আমি নাটক করছিনা!”

কাঁথা মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল সাদমান। নিজের বিবেকের কাছে সে দ্বগ্ধ হতে লাগল। নূর সৌহার্দ্য হাসল! এই সাদমানকে চিনতে তার একটুও সমস্যা হচ্ছেনা। ছোটো বেলা থেকে ঠিক সাদমানের এই রূপটার সাথেই সে পরিচিত। মাঝখানে কিছুটা সময়ের জন্যে যদিও সাদমান পাল্টে গিয়েছিল! তবে এখন হয়তো সে আবারও সঠিক পথে ফিরে আসছে। চাঁদের হাতটা ধরে নূর হাসি খুশি মুখে সাদমানের বাড়ি থেকে বিদায় নিলো। রিকশা করে দুজন দুদিকে চলে গেল।

__________________________________

সন্ধ্যা হতেই হলুদের আমেজ পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ল! বর-কনে উভয়ই তৈরী হলুদের সাজে। দেখতে অস্থির সুন্দর দেখাচ্ছে দুজনকে। নীড় কিছুক্ষণ পর পর ভিডিও কলে সোহানীকে দেখছে। সোহানীকে একপ্রকার সে বিরক্ত করে ছাড়ছে! সন্ধ্যার পর থেকেই মুখের সামনে ফোন ধরে রেখেছে। কিছুতেই যেনো রাখতে চাইছেনা ফোনটা সে। দুই বাড়িতেই হলুদের রমরমা পরিবেশ বিরাজ করছে। আত্নীয়-স্বজনদের কোলাহল বেগতিক বাড়ছে। ব্যস্ততায় নুইয়ে পড়ছে বাড়ির ছেলেফেলে এবং মুরুব্বিরা। সবার খাতির, যত্ন-আদর, আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি রাখা হচ্ছেনা। চা, পানি এবং বিভিন্ন নাশতার আইটেম থেকে শুরু করে মিষ্টি, কোল্ড ড্রিংকস সবকিছুর ব্যবস্থা করা রয়েছে। দুই বাড়ির হলুদের স্টেজই একই রকম ভাবে সাজানো হয়েছে। লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, কাঠ গোলাপ, রজনীগন্ধা এবং গাদা ফুলের সমারোহে তৈরী পুরো স্টেজ! মিষ্টি ঘ্রাণে ব্যাকুল হয়ে উঠছে সবাই। পুরো বাড়িতে যেনো স্টেজটিই সবার নজর কাটছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের লাইটিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে বিশাল প্যান্ডেল জুড়ে।

নূর এবং মাহিন হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে রেডি বউয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য। তাদের মন আনচান আনচান করছে তাদের প্রেয়সীদের একনজর দেখার জন্য! কাজের চাপে তারা একবারও প্রেয়সীদের খোঁজ খবর নেওয়ার সময় সুযোগ পেয়ে ওঠেনি। তবে এবার সেই সুযোগ ঘনিয়ে এসেছে! আগে সোহানীর গাঁয়ে হলুদ মেহেদী পড়ানো হবে এরপর নীড়ের। এজন্য তাদের হলে ছুটে যাওয়া তাড়া। নিয়ম অনুযায়ী মিষ্টি, পান- সুপারি ফুলমূল এবং যাবতীয় যা যা লাগে সব নিয়ে নূর এবং মাহিন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল হলের উদ্দেশ্যে। সাদমান এখনো আসেনি হলুদের অনুষ্ঠানে! দুইবার কল করা হয়েছিল তাকে তবে কলটা তুলেনি সে। নূর মনে মনে ভেবে নিলো হল থেকে ফেরার পথে সাদমানকে জোর করে হলেও অনুষ্ঠানে নিয়ে আসবে। তাদের মধ্যে বেড়ে ওঠা দ্বন্ধগুলোকে অচিরেই নিরসন করবে।

চাঁদ, জায়মা, তিথী এবং তাশফিয়া সেজেগুজে প্রায় বিয়ে বাড়ি হয়ে আছে। সবার থেকে বেশি গর্জিয়াস লাগছে চাঁদকে! হলুদ লেহেঙ্গাতে তাকে হলদে পরীর চেয়ে কম সুন্দর দেখাচ্ছেনা। নূরের আইডিয়া এতটাও খারাপ নয়। সে যা আন্দাক করেছিল ঠিক তাই হয়েছে। সেজেগুজে চাঁদ সেই কখন থেকে নূরের অপেক্ষাতে পথ চেয়ে বসে আছে। তবে নূরের কোনো দেখাটি নেই। অস্থির মন তার আরও উচাটন হয়ে উঠছে। রুমের জানালা থেকে হলগেইটটা সে দূরদর্শী দৃষ্টিতে দেখছে। অনেকক্ষণ যাবত এই জানালার সামনেই সে ঘুরঘুর করছে। নূরকে হলুদ পাঞ্জাবিতে দেখার জন্য যেনো তার তর সইছেনা। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে।

আয়মনের হার্ট তো প্রায় দুর্বল হয়ে আসছে! তাশফিয়াকে হলুদ শাড়ি এবং হলুদের সাজে দেখে। তার যেনো মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরে আসছে। কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে সে তাশফিয়াকে আড়চোখে দেখছে। তাশফিয়া প্রায় বহুবার নোটিশ করেছে বিষয়টা! কোনো না কোনোভাবে সে নিজেও আয়মনকে আড়চোখে দেখছে! ঐ দিনের আয়মনের সেই হঠাৎ চুমু তার ধ্যান-জ্ঞান পাল্টে দিয়েছে! সেই চুমু খাওয়ার পর থেকেই সে যেনো আয়মনের প্রতি কেমন কেমন হয়ে গেছে! আয়মনকে নিয়ে মনে মনে সে অনেক কিছু ভাবে! সেই ভাবনাচিন্তারাই কিছু অপ্রকাশিত অনুভূতিতে পরিণত হচ্ছে। যা জ্ঞান খাটিয়ে তাশফিয়া বুঝতেই পারছেনা। আয়মন যেমন এই প্রথম তাশফিয়াকে হলুদ শাড়িতে দেখেছে তেমনি তাশফিয়াও এই প্রথম আয়মনকে হলুদ পাঞ্জাবিতে দেখেছে। তাই দুজনই দুজনকে দেখে মুগ্ধ হচ্ছে!

তিথীও এসে এবার চাঁদের সাথে যোগ দিলো। দুজনই জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে রইল। ব্যাকুল দৃষ্টি তাদের হলগেইটের দিকে সীমাবদ্ধ৷ অধীর আগ্রহের যেনো অন্ত নেই তাদের৷ কখন তারা তাদের দুই প্রেমিক পুরুষকে দেখবে সেই চিন্তায় ব্যাকুল। পাশ ফিরে তিথীকে দেখামাত্রই চাঁদ বেশ অবাক হলো। ত্যাড়া দৃষ্টিতে সে তিথীর দিকে তাকালো। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এই? তুই এখানে কী করছিস?”

তিথী ঠোঁট উল্টালো। নীরস দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। ঢঙি গলায় বলল,,

“তোর কি সত্যি সত্যি মনে হয় মাহিন ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে?”

“কেন? তোর মনে হয়না?”

“কিছুক্ষণ হয় তো কিছুক্ষণ হয়না! উনি একদিন বলেছিলেন উনার পিছনে নাকি অনেক মেয়েরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বিদেশেও নাকি অনেক মেয়ে উনার পিছনে ঘুর ঘুর করত। কিন্তু উনি পাত্তা দিত না। এবার তুই-ই বল আমি কীভাবে বিশ্বাস করি আমার মতো সাধারণ একটা মেয়েকে উনি পছন্দ করতে পারেন। যেখানে আমি উনার বুড়ো আঙুলের যোগ্যও না।”

চাঁদ হা করে কিছু বলার পূর্বেই জায়মা পেছন থেকে দৌঁড়ে এলো। ব্যস্ত ভঙ্গিতে চাঁদ এবং তিথীর কাঁধে হাত রাখল৷ হাঁপিয়ে ওঠা গলায় বলল,,

“এই? কী নিয়ে কথা বলছিস রে তোরা?”

চাঁদ ঘাড় ঘুরিয়ে জায়মার দিকে তাকালো। রূঢ় গলায় বলল,,

“তিথী বলছে মাহিন ভাই নাকি তাকে পছন্দ করেনা। একটু বুঝা তো এই বলদিটাকে!”

জায়মা গলা ঝাঁকালো। তিথীর দিকে তৎপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। মোলায়েম গলায় বলল,,

“আরে করে করে। শুধু পছন্দই করেনা। ভালোও বাসে। আমি নিজ কানে শুনেছি৷ তুই রিলাক্সে থাক তো। প্যারা খাওয়ার মত কিছুই না এসব। আরে, শুধু তুই কেন? আয়মন ভাইও তো তাশফিয়াকে পছন্দ করে! দুই ফ্রেন্ড মিলে এসবই ভুজুংভাজুং করছিল ঐদিন! ভাগ্যিস আমি আড়াল থেকে সব শুনে নিয়েছিলাম।”

চাঁদ এবং তিথী হঠকারিতায় মাথা ঝাঁকালো। দুজনই মুখে হাত চেপে ধরল। জায়মার দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সমস্বরে বলল,,

“কী বললি তুই? আয়মন ভাইয়াও তাশফিয়াকে পছন্দ করে?”

“হ্যাঁ। ঐদিন তো আমি এসবই শুনেছিলাম। তবে এখনি যেন তাশফিয়াকে কিছু বলিস না তোরা। আয়মন ভাই বারণ করেছে। খবরটা এখান থেকে লিক হলে পরে আমার কপালে কিন্তু দুর্গতি আছে।”

চাঁদ এখনো তাজ্জব বনে রইল। বিস্মিত গলায় বলল,,

“কী রে ভাই। ভেতরে ভেতরে এতকিছু চলছে অথচ আমি টেরই পেলামনা? আয়মন ভাই আমাকেও কিছু বললনা?”

জায়মা তিক্ত হয়ে উঠল। বিরক্তির স্বরে বলল,,

“আরে ছাড় তো এসব। আমি ভাবছি আমাকে নিয়ে। আমার কী হবে বল তো? তোরা তো সবাই মনের মানুষ পেয়ে গেলি। আমার দিকে তো কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেনা! কী হবে আমার কী হবে? আর কতকাল আমি এভাবে সিঙ্গেল থাকব? এই জ্বালা প্রাণে সইছেনা।”

জায়মা নাকি কান্না জুড়ে দিলো! হতাশায় কপাল চাপড়াতে লাগল। পাশ থেকে তিথী মুখ চেপে হাসছিল। জায়মার হায়-হুতাশ দেখে চাঁদের মাথায় একটা দুর্দান্ত বুদ্ধি খেলল। উত্তেজিত গলায় সে জায়মাকে শুধালো,,

“আচ্ছা? তোর সাদমান ভাইকে কেমন লাগে?”

জায়মা কান্না থামালো। ফ্যাল ফ্যাল চাহনিতে চাঁদের দিকে তাকালো। নাক টেনে বলল,,

“মানুষ হিসেবে ভালোই লাগে। কেন?”

“আরে মানুষ হিসেবে না তো! ছেলে হিসেবে। কতটুকু ভালো লাগে তোর বল?”

চাঁদের ইশারা জায়মা বুঝতে পারল। তবে সে বিষয়টাকে গুরুত্ব দিলো না। শ্লেষাত্মক হেসে বলল,,

“সাদমান ভাই তোকে ভালোবাসে চাঁদ! আমাকে না। সো এসব ভুলে যা! আমি ঠিক অন্য কাউকে জুটিয়ে নিব। যে শুধু আমাকেই ভালোবাসবে!”

___________________________________

অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে নূর এবং মাহিনের আগমন ঘটল হল গেইটের ভেতরে। গাড়ি পার্ক করে তারা তাড়াহুড়ো করে নামল গাড়ি থেকে। গাড়ির ব্যাক সিট থেকে প্রথমে তারা যাবতীয় জিনিসপত্রগুলো বের করল। হাতে হাত লাগিয়ে দুইভাই মিলে জিনিসপত্র গুলো নিয়ে পিছু ঘুরতে ঘুরতে বেশ ব্যস্ত স্বরে বলল,,

“ড্যাম ইট। অনেকটাই লেইট হয়ে গেল।”

মাহিনের আগেই নূর যেই না মিষ্টির বক্সগুলো নিয়ে পিছু ঘুরল অমনি সে সাক্ষাৎ চাঁদের দেখা পেল! ব্যস্ত চোখদুটো তার মুহূর্তের মধ্যেই চঞ্চলতায় ভরে উঠল। মিষ্টির ঢালাটি অযাচিতভাবেই হাত ফসকে পড়ে গেল! শরীরটা হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। বেসামাল হয়ে সে বুকের বাঁ পাশে হাত রাখল। রংধনুর লহর খেলতে লাগল তার মোহভরা দৃষ্টি জুড়ে। রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে সে প্রেমময় গলায় বলল,,

“চোখ দুটো ব্লাইন্ড হয়ে গেল। হার্টবিট ফার্স্ট হয়ে গেল। বুকটা দুড়ুদুড়ু করে কেঁপে উঠল। শুধুমাত্র তোমায় দেখে!”

ফিক করে হেসে দিলো চাঁদ! নূরের দিকে তাকিয়ে হাসি থামালো। এক কদম বাড়িয়ে নূরের সামনে এগিয়ে এলো সে। অনু্ভূতিশূণ্য নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো৷ নূরের চোখের সামনে তুড়ি মেরে মন্থর গলায় বলল,,

“শুধু আপনারই বুঝি হার্টবিট ফার্স্ট হয়ে যায় হ্যাঁ? আর কারো হয়না? অনুভব করে দেখুন না আমার বুকটাও কেমন কাঁপছে! এতক্ষণ আপনার আসার অপেক্ষায় কাঁপছিল আর এখন আপনাকে দেখার পর! কী অদ্ভুত এক জ্বালা। যদিও আপনাকে দেখার পর এই জ্বলনটা কমে এখন প্রশান্তিতে পরিণত হয়েছে। তবে এখন আমার তৃষ্ণার্ত মন জানতে চাইছে এত দেরি হলো জনাবের আগমনের হুম? কী এমন বিশেষ কারণ ছিল?”

নূর জমে বরফ হয়ে গেল! হীমশীতল বাতাস বইতে লাগল তার দেহের অভ্যন্তর জুড়ে। চাঁদের মুখ থেকে নিঃসৃত প্রতিটি তপ্তশ্বাস তার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অদ্ভুত এক উন্মাদনার সৃষ্টি করছিল। এই দমফাটা অনুভূতি থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য৷ নূর ঝট করে এক কদম পিছু হটে গেল! সঙ্গে সঙ্গেই ফলমূল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মাহিনের সাথে ধাক্কা খেল সে। মাহিনের হাত থেকেও ফলের বক্সগুলো নিচে পড়ে গেল! দুই ভাই একসাথে বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ইতোমধ্যেই চাঁদের পেছন হুট করে তিথীর আগমন ঘটল! চাঁদের কাঁধে হাত রেখে তিথী বিভোর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মাহিনের দিকে চোখ টিপে তাকালো! মাহিনের চোখ যেনো ট্যাড়া হয়ে গেল তিথীর চোখ টিপা দেখে! দুই উন্মাদ প্রেমিকের অবস্থা দেখে চাঁদ এবং তিথী দুজনই দম ফাটা হাসিতে মত্ত হয়ে উঠল। ঘাম ঝড়তে লাগল মাহিনের কপাল জুড়ে। বুকে হাত রেখে সে নূরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,

“আরে ভাই চল। আজ আমরাও আমাদের হলুদটা সেরে ফেলি! তিনভাই মিলে একদিনে বিয়ে করি। নতুন ইতিহাস গড়ি।”

অস্থির দৃষ্টিতে নূর দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাহিনের দিকে তাকালো৷ দিশাহীন গলায় বলল,,,

“আমার না হয় চান্সেস আছে চাঁদকে বিয়ে করার। তোর কীসের চান্সেস হ্যাঁ? এখনো তিথীকে বলেছিস? তিথীকে ভালোবাসিস তুই?”

মেয়েদের মতো নখ কামড়ালো মাহিন। অধীর গলায় বলল,,

“আজই তিথীকে আমি আমার মনের কথা জানাব। মাঝখানে যতোই বাঁধা আসুক না কেন। আমাদের এক হওয়া চাই ই চাই।”

#চলবে…?

#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_৫৯
#নিশাত_জাহান_নিশি

“আজই তিথীকে আমি আমার মনের কথা জানাব। মাঝখানে যতোই বাঁধা আসুক না কেন। আমাদের এক হওয়া চাই ই চাই।”

নূর গলা ঝাড়লো। মাথা নুইয়ে মাহিনের কর্ণতলে গুঞ্জন তুলল। ফিসফিসিয়ে বলল,,

“এসব পরে দেখা যাবে। এখন এখান থেকে বেঁচে ফেরার ব্যবস্থা কর ভাই। এরা তো আমাদের রূপের আগুনে জ্বালিয়ে পুঁড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে! বেঁচে ফেরার রাস্তা কই?”

তদ্রুপ মাহিনও নখ কামড়ে গুনগুনিয়ে বলল,,

“আমি কিচ্ছু জানিনা ভাই। তিথী আমারে চোখ মারছে! প্রাণবায়ু যায় যায় করছে আমার। শক্ত করে ধর আমারে ভাই। কখন কোনদিক থেকে মাথা ঘুরে পড়ে যাই!”

নূর নাক-মুখ কুঁচকালো। তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় মিহি স্বরে বলল,,

“ধুর বেটা। চোখ মারলে কী হয়? এতে আরও ভালোবাসা বাড়ে। দেখছিস না? তিথীর ভালেবাসা কেমন বাড়ছে? যেনো তেনো ভাবেই হোক বুকের ছাতিটা টান টান করে এখন আমাদের এখান থেকে পালাতে হবে! আমার মতো বুকটা ফুলা রে ভাই। বড়ো বড়ো করে নিশ্বাস নে। ফুসফুসে দম সঞ্চার কর। বুঝা আমরা ম’রে যাইনি তার রূপে!”

সোজা হয়ে দাঁড়ালো নূর। নিজেকে যথেষ্ট ফিটফাট রাখার চেষ্টা করল। প্রচুর ভাব দেখিয়ে পাঞ্জাবির কলারটা ঝেড়ে ঠিক করল। সামনে যে চাঁদ দাঁড়িয়ে আছে তার তোয়াক্কাও অবধি করলনা। আড়চোখে মাহিনকেও সে ইশারা করে বলল তার মতো ভাব নিতে! নূরের ইশারা বুঝে মাহিন সত্যিই নূরকে অনুসরণ করতে লাগল। নূরের মত বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে ফুসফুসে দম সঞ্চার করল। বুকের ছাতি টান টান করে তারা দুজন সামনে এগুতে লাগল! চাঁদ এবং তিথী ট্যাড়া দৃষ্টিতে নূর এবং মাহিনের দিকে তাকালো। পাশা যেনো মুহূর্তের মধ্যেই পাল্টে গেল! ভ্রু যুগল ঈষৎ উঁচিয়ে তারা দুজন দুজনকে প্রত্যক্ষণ করতে লাগল। মতিগতি কিছু বুঝতে পারছেনা তারা। কী থেকে কী হচ্ছে এসব? তাদের রূপে কী ছেলেরা আদো জব্দ হয়নি? জব্দ হলে তো এতক্ষণে মাথা টাথা ঘুরে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু না! এরা তো আরও গজিয়ে উঠল! দিব্যি তাদের সামনে বুক ফুলিয়ে হেঁটে এলো। এদিকে তিথী তো এটাও এখনও ধরতে পারলনা এদের মধ্যে মাহিন কে! কাকে সে চোখ মেরেছে! শুধু আন্দাজের বসেই সে দুই ভাইয়ের মধ্যে একজনকে চোখ মেরেছে। এখন তার অনুমান কতটা সঠিক তাই এখন পরখ করার পালা।

সন্দেহ দূর করার জন্য তিথী মরিয়া হয়ে উঠল। তার মধ্যে বেশ গিলটি ফিল শুরু হতে লাগল। যদি নূরকে সে চোখ মেরে থাকে তাহলে তো সে ভারী অন্যায় করছে! এই অন্যায়বোধের অস্থিরতা থেকেই সে চাঁদের কানে মিহি আওয়াজ তুলে বলল,,

“এই চাঁদ? তুই জানিস এদের মধ্যে মাহিন কোনটা?”

ঘাড় ঘুরালো চাঁদ। তাজ্জব দৃষ্টিতে তিথীর দিকে তাকালো। সচকিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী বললি তুই? মাহিন ভাইকে চিনিস নি এখনও?”

“না রে ভাই। চিনব কেমনে বল? এই জমজদের তো আমি আলাদা করতে পারিনা! সব হুবহু তো। চেনার উপায় আছে কোনো?”

“তাহলে শোন। ঐ যে বাসন্তী কালার পাঞ্জাবিটা দেখছিস না? ওটা হচ্ছে মাহিন ভাই। আর হলুদ কালার পাঞ্জাবিটা হচ্ছে নূর ভাই। সব হলুদের ফাংশনেই মাহিন ভাই বাসন্তী পড়ে। আর নূর ভাই হলুদ পড়ে বুঝেছিস? এটাই হলো এদের পার্থক্য করার উপায়।”

তিথী বাঁকা হাসল! তার অনুমানশক্তির প্রখরতা দেখে সে নিজেই নিজেকে বাহবা দিতে লাগল! ধীর গলায় বলল,,

“হ্যাঁ বুঝেছি।”

নূর এবং মাহিন দুজনই হেঁটে এসে এবার চাঁদ এবং তিথীর মুখোমুখি দাঁড়ালো। দুজনই তাদের প্রেয়সীদের অতি নিকটে দাঁড়িয়ে। অদ্ভুত এক মন মাতানো শিহরণ কাজ করতে তাদের উভয়ের মধ্যে। ভালোলাগা, ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তৈরি হয়ে উঠল এক শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি। তাদের মধ্যে মুখে মুখে কোনো কথা হচ্ছেনা। শুধু চোখে চোখে কথা হচ্ছে! নীলাভ চোখ দ্বারা তারা দুইভাই তাদের দুই প্রেয়সীদের অতি রঞ্জিত দৃষ্টিতে ঘায়েল করে তুলছে। চাঁদ এবং তিথীও কেমন মুগ্ধিত দৃষ্টিতে তাদের প্রেমিক পুরুষদের চেয়ে চেয়ে দেখছে! সমস্ত দ্বিধাদ্বন্ধ যেনো ঘুচে গেছে। প্রেম আসলে কী তারা তা অক্ষরে অক্ষরে টের পাচ্ছে। চাঁদের সম্মোহিত দৃষ্টি দেখে নূর বাঁকা হাসল! সম্মোহন ভুলে পায়জামার পকেট থেকে কালো সানগ্লাসটা বের করল। সানগ্লাসটায় দুটো ফুঁ দিয়ে বেশ ভাব ধরে ঝট করে সানগ্লাসটা চোখে পড়ে নিলো! ভাবলেশহীন ভাবে সে চাঁদের সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিলো। যেতে যেতে চাঁদকে আদেশের সুরে বলল,,

“মিষ্টির বক্সগুলো নিয়ে ভেতরে এসো!”

চাঁদ মুখটা হা করে নিলো। পিছু ঘুরে নূরের যাওয়ার পথে তাকালো। হঠকারি গলায় বলল,,

“এ্যাঁ!”

মাহিনও নূরের মতো ভাব নিলো। সানগ্লাসটা চোখে পড়ে চাঁদকে ব্যঙ্গ করে বলল,,

“এ্যাঁ না হ্যাঁ! দুজনই মিষ্টি এবং ফলের বক্স গুলো নিয়ে ভেতরে এসো। তোমাদের জন্যই তো বক্স গুলো নিচে পড়ে গেল না? এক্সট্রা কাজ তো তোমরাই বাড়িয়েছ। এবার করো সেই কাজ!”

শেষবারের মত তাজ্জব বনে দাঁড়িয়ে থাকা তিথীর দিকে ট্যাড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাহিন হিরোদের মত ভাব নিয়ে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! হেলেদুলে হেঁটে নূরের পিছু নিলো। রণরঙ্গিণীদের মত ভাব নিলো চাঁদ এবং তিথী। ছেলেদের জব্দ করতে এসে তারা নিজেরাই জব্দ হয়ে গেল? এটা কোন ধরনের সাইন্স হলো ভাই? কী ধরনের লজিক?

নূর এবং মাহিন প্যান্ডেল পাড় করে যেইনা হলের ভেতর ঢুকতে যাবে অমনি বাড়ির মুরুব্বিদের মুখোমুখি হয়ে গেল। তাদের মামা-মামিনী, আঙ্কেল-আন্টি, দুঃসম্পর্কের নানা-নানু এবং বিয়েতে আমন্ত্রিত যত আত্নীয়-স্বজন আছে সবার সাথে দেখা হয়ে গেল। ভদ্রতার খাতিরে দুজনই চোখ থেকে সানগ্লাস নামিয়ে নিলো। নম্রতার সহিত সবাইকে সালাম জানিয়ে কৌশল বিনিময় করল। সবাইকে যতটুকু শ্রদ্ধা এবং সম্মান করা প্রয়োজন ততটুকুই করল। এরমধ্যে নাদিয়া, সাদিয়া এবং রুহির সাথেও দেখা হয়ে গেল তাদের৷ কিছুক্ষণ আগেই তারা ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। পরীক্ষার চাপে এতদিন তারা ঢাকা আসতে পারেনি৷ তবে হলুদ এবং বিয়ে তো কোনোভাবেই মিস করা যাবেনা। তাই চট করে তাদের পরিবারের সাথে চলে আসা। এসেই রেডি হতে লেগে পড়েছিল তারা। তাশফিয়া খুব সুনিপুণভাবে তাদের তিনজনকে সাজিয়ে দিয়েছে। বিয়ে শাদির অনুষ্ঠানে খুব ভালো সাজাতে পারে তাশফিয়া! শুধু সোহানীকে ছাড়া বকি চাঁদ, জায়মা এবং তিথীকেও সে নিজেই সাজিয়ে দিয়েছে। নিজের সাজটাও সে নিজেই সেজেছে।

আত্নীয়-স্বজনদের ভীড় ঠেলে নূর এবং মাহিন এবার সোহানীর রুমের দিকে অগ্রসর হলো। নীড়ের কঠিন নির্দেশ প্রথমেই যেন তারা সোহানীকে দেখতে যায়। সোহানীর সুবিধা অসুবিধা সবকিছুর খোঁজ-খবর নেয়। আর কিছু প্রয়োজন কিনা জানার চেষ্টা করে। এরপর যেনো বাকি সমস্ত কাজ করে! চলতি পথেই হঠাৎ তাদের আয়মনের সাথে দেখা হয়ে গেল। ব্যস্ত ভঙ্গিতে আয়মন সিঁড়ি বেয়ে নামছিল। মনে মনে কীসব যেনো ভনভন করছিল। খুব জরুরি হিসাব নিকাশ করছিল বোধ হয়। ব্যস্ত আয়মনকে দেখামাত্রই মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আটল নূর এবং মাহিন। উচ্চস্বরে তারা ভাও করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গেই আয়মন থতমত খেয়ে ভয়ে আঁতকে উঠল! এদিক-ওদিক না তাকিয়ে সে প্রথমেই বুকে থুথু ছিটানোর প্রয়াসে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আয়মনের এহেন ভীতসন্ত্রস্তা দেখে নূর এবং মাহিন হু হা শব্দে হেসে দিলো। আয়মনকে হেনস্তা করে বেশ মজা পেল তারা। তাদের পৈশাচিক হাসির আওয়াজে আয়মনের মেজাজটা চটকে গেল। রাগী দৃষ্টিতে সে দুজনের তাকালো। চোয়াল শক্ত করে বলল,,

“এই তোরা কী রে? এসেই শুরু করে দিলি?”

নূর এবং মাহিন গাঁ ছাড়া ভাব নিলো। দুজনই ভ্রু যুগল উঁচিয়ে আয়মনের দু’কাঁধে হাত রাখল। সন্দিহান দৃষ্টিতে নূর আয়মনের দিকে তাকালো। ঝেড়ে কেশে বলল,,

“আরে এসব বাদ দে তো এখন। আগে বল এত মনযোগ দিয়ে কী ভাবছিলি হুম? দেখে মনে হচ্ছিল যেনো বিয়ে শাদির দিন-ক্ষণ হিসাব করছিস!”

নূর এবং মাহিন আবারও উচ্চ শব্দে হেসে উঠল। আয়মনের মজা উড়াতে পেরে তারা বেশ খুশি। হঠাৎই আয়মনের রাগী ভাবমূর্তি পাল্টে গেল! ঠোঁটের আলিজে ফুটে উঠল মৃদু হাসির রেখা। মাথাটা নুইয়ে সে পেছনের চুলগুলো টেনে ধরল। লাজুক স্বরে বলল,,

“ঠিক ধরেছিস। আজ আমি সত্যিই তাশফিয়াকে প্রপোজ করব! ধরতে পারিস এখন থেকেই বিয়ে শাদির দিন-ক্ষণ ঠিক করে রাখছি!”

হতবাক হয়ে থাকা নূর এবং মাহিনকে ঠেলে আয়মন পকেট থেকে ছোটো একটি বক্স বের করল। বক্সটিতে রয়েছে একটি সুন্দর স্বর্ণের আংটি! আংটিটির দিকে তাকিয়ে সে ধীর পায়ে হেঁটে জায়গা পরিত্যাগ করল। এবং সম্মোহিত গলায় তার দুই বন্ধুকে বলল,,

“এই সেই আংটি। যা দিয়ে আজ আমি তাশফিয়াকে প্রপোজ করব!”

নূর এবং মাহিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আয়মনের কাণ্ড কীর্তি দেখে মাহিনের যেনো কী একটা মনে পড়ে গেল। খুব তাড়াহুড়ো করে সে তার পায়জামার পকেট থেকে কী যেনো একটা গিফট বক্স বের করল। বক্সটার দিকে তাকিয়ে সে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। নূর ভ্রু উঁচিয়ে মাহিনের কাণ্ড দেখল। ক্ষীণ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী রে? কী হলো তোর? হাতে ওটা কী?”

“নূপুর! আজ এই নূপুরটা আমি তিথীর পায়ে পড়িয়ে দিব। আমার ভালোবাসার প্রথম নিশানা হিসেবে!”

ফুড়ফুড়া মন নিয়ে মাহিন নূপুরের বক্সটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো। নূরকে উপেক্ষা করে গুনগুনিয়ে গান গেয়ে উপরে ওঠে গেল। নূরের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ল! কপালে আপনাআপনি হাত ওঠে গেল। তিক্ত গলায় বলল,,

“ওত্তেরি! এবার আমার কী হবে? আমি যে চাঁদের জন্য কিছুই আনলাম না! কাজের চাপে সব ভুলে গিয়েছিলাম। এসব দেখার পর কী চাঁদ আমাকে আস্ত ছাড়বে?”

হায়-হুতাশ করতে করতেই নূরের মাথায় একটা দারুন বুদ্ধি এলো। বাঁকা হেসে সে মাহিনের পিছু পিছু ছুটে চলল। সুযোগ বুঝে বুদ্ধিটা কাজে লাগানোর বন্দোবস্ত করল! মাহিনকে কিছুতেই এখন চোখের আড়াল করা যাবেনা। সোহানীর রুমে প্রবেশ করে প্রথমেই দুজন সোহানীর ভালো-মন্দের খবর নিলো। বেশ কিছুক্ষণ বসে সোহানীর সাথে খোশগল্প করল। এরপর সোহানীকে নিয়ে স্টেজের দিকে রওনা হলো। চাঁদ, জায়মা, তিথী, তাশফিয়া, নাদিয়া, সাদিয়া এবং রুহি এসে সোহানীকে ধরাধরি করে স্টেজে নিয়ে গেল। সবার হাতেই বিভিন্ন ডিজাইনে ডেকোরেট করা ফুলমূল, হলুদের ডালা, মিষ্টি এবং কেক ছিল। ভিডিওম্যানরা চারিপাশ থেকে তাদের ভিডিও করতে শুরু করল। আস্তেধীরে মেতে উঠল হলুদের অনুষ্ঠান৷ উচ্চ শব্দে গান বাজতে লাগল। বিয়েতে আমন্ত্রিত সমস্ত অতিথি-মেহমানরা ও হলুদের অনুষ্ঠানে মেতে উঠল। এক এক করে সবাই সোহানীকে হলুদ পড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমেই সোহানীর বাবা-মা সোহানীকে হলুদ পড়াল৷ এরপর অন্যান্য সব আত্মীয় স্বজনরা। পরিশেষে বাড়ির ছেলে মেয়েরা হৈ-হুল্লোড় করে হাজারটা দুষ্টুমি করে নাচ গান করে সোহানীকে হলুদ পড়ানো শেষ করল। শুধু যে সোহানীকেই হলুদ পড়ানো হলো বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। সোহানীর সাথে সাথে বাড়ির সব ছেলে মেয়েদেরও হলুদে গোসল হয়ে গেল! এক আরেক জনকে হলুদ মাখিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়ে দিলো। তাদের দুষ্টুমি দেখে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সমস্ত আত্নীয় স্বজনরা বুক ফাটিয়ে হাসতে লাগল। এই হলুদ মাখামাখির মধ্যেই তাশফিয়া এবং আয়মন খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল! তদ্রুপ মাহিন এবং তিথীও তাদের ভালোবাসার অনুভূতিগুলো অনুভব করতে পেরেছিল! চার চারটি মন আজ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।

অনুষ্ঠানের মধ্যেই নূর চাঁদকে টানতে টানতে প্যান্ডেলের বাইরে নিয়ে এলো! দুজনই নিরিবিলি স্থানে দাঁড়ালো। লোকজনের কলরব এখানে নেই বললেই চলে। দুজনে মিলে এখানে কিছুক্ষণ ব্যক্তিগত সময় কাটানো যাবে। হাঁপিয়ে ওঠে দুজনই বড়ো বড়ো শ্বাস ফেলতে লাগল। নূর অস্থির দৃষ্টিতে মোহময়ী চাঁদের দিকে তাকালো। চাঁদ বিশৃঙ্খল শ্বাস ছেড়ে নূরের দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকালো। জিজ্ঞাসু গলায় বলল,,

“কী হলো? হঠাৎ এখানে নিয়ে এলেন কেন?”

নূর রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল। পায়জামার পকেট থেকে কী যেনো একটা বের করল। কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই সে হাঁটু ভাজ করে ধপ করে নিচে বসে পড়ল! চাঁদের ডান পা টা তার ডান হাঁটুর উপর রেখে চাঁদের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালো। চাঁদ প্রকাণ্ড দুচোখে নূরের কার্যকলাপ দেখতে লাগল। তবে এসবের কিছুই বুঝে উঠতে পারলনা সে। নূর তার উষ্ণ হাতের ছোঁয়াতে চাঁদের পায়ের টাকনু থেকে লেহেঙ্গার নিচের অংশটা আস্তে আস্তে করে উপরে তুলল। বাঁ হাতের মুঠো থেকে কিছু একটা বের করে সে খুব মোলায়েম ভাবে চাঁদের ডান পায়ে কিছু একটা পড়িয়ে দিলো। চাঁদ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে পা টার দিকে তাকালো। আনন্দে তার ঠোঁটের কোণ প্রশ্বস্ত হয়ে উঠল। খুশিতে উত্তেজিত হয়ে সে মুখটা হা করে বলল,,

“নূপুর?”

নূর স্মিত হাসল! চাঁদের সুনিপুণ মুখমণ্ডলে প্রেমময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। মৃদু স্বরে বলল,,

“হুম। তোমার জন্য!”

চাঁদ খুশিতে ফিক করে হেসে দিলো। প্রাণোচ্ছ্বল হয়ে সে তার বাঁ পা টার দিকে তাকালো। আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলল,,

“বাঁ পায়েরটা কই?”

নূর থতমত খেয়ে গেল! অস্থিরতায় পাঞ্জাবির কলারটা সে টেনে ধরল। মাথা নুইয়ে বিড়বিড় করে বলল,,

“যাহ্! এবার কী বলব? আরেক পায়ের নূপুরটা হারিয়ে গেছে? নাকি বলব মাহিন নিয়েছে ঐ নূপুরটা! তিথীকে দেওয়ার জন্য?

____________________________________

এদিকে সেই কখন থেকে মাহিন যেনো কেমন পাগল পাগল করছে! পুরো বাড়িতে সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কী যেনো খুঁজে চলছে। মাথামুথা খুব গরম হয়ে যাচ্ছে তার। মেজাজ তিরিক্ষিপূর্ণ হয়ে উঠছে। মাথার চুলমূল টেনে একাকার অবস্থা। যেসব জায়গাগুলোতে সে হুড়োহুড়ি করেছে সেই সব জায়গাগুলোও এতক্ষণে খুব সূক্ষ্মভাবে খোঁজা হয়ে গেছে। তবে এত খোঁজার পরেও কিছুতেই সে যেনো তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি খুঁজে পেলনা! কোথায় গেল সেই জিনিসটি? তিথীকে অনেকক্ষণ যাবত ছাদে দাঁড় করিয়ে রেখেছে সে। অপেক্ষা করতে করতে তিথী প্রায় তিক্ত হয়ে উঠছে। মাহিন এবার হাল ছাড়তে বাধ্য হলো। যা আছে তা দিয়েই কাজ চালিয়ে দেওয়ার চিন্তা করল। নাই মামুর চেয়ে কানা মামু অনেক ভালো!

হম্বিতম্বি হয়ে মাহিন ছুটে চলল ছাদের উদ্দেশ্যে। হাঁপাতে হাঁপাতে সে ছাদে ওঠে একরাশ তিক্ততা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তিথীর মুখোমুখি দাঁড়ালো। অস্থির শ্বাস ছেড়ে অপরাধী গলায় বলল,,

“সরি সরি। খুব লেইট হয়ে গেল। এতক্ষণ তোমাকে ওয়েট করানোর জন্য আমি সত্যিই সরি!”

তিথী ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ল। রাগী ভাব নিয়ে বুকের উপর দু’হাত গুজল। ভ্রু যুগল কুচকে সরু দৃষ্টিতে মাহিনের দিকে তাকালো। বিদঘুটে গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“বলুন? কী বলবেন?”

তিথী রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে মাহিন শুকনো ঢোঁক গিলল। আমতা আমতা করে বলল,,

“একটা কিছু দেওয়ার ছিল!”

“কী সেটা?”

“এর জন্য বসতে হবে!”

“আমি বসব?”

“না আমি।”

তিথীর প্রতিউত্তরের আশা না করে মাহিন ধপ করে হাঁটু গুজে ছাদের মেঝেতে বসে পড়ল। পকেট থেকে নূপুরটা বের করে সে বিনা অনুমতিতে তিথীর বাঁ পা টা টেনে ধরল। সঙ্গে সঙ্গেই তিথী নড়েচড়ে উঠল! গাঁয়ের লোমগুলো তার দাঁড়িয়ে গেল। অজানা শিহরনে চোখ বুজতে সে বাধ্য হলো। মাহিন মাথা উঁচিয়ে মুগ্ধিত দৃষ্টিতে চোখ বুজে থাকা তিথীর দিকে তাকালো। মৃদু হেসে তিথীর পায়ে নূপুরটা পড়িয়ে দিলো। তিথীর শুভ্র রঙের পা দুটো তাকে আকৃষ্ট করতে লাগল। গভীর ঘোরে ডুবে সে অজান্তেই তিথীর পায়ে চুমু খেয়ে দিলো! তিথীকে উদ্দেশ্য করে বেসামাল গলায় বলল,,

“আই লাভ ইউ তিথী!”

এই মুহূর্তে তিথীর দমটা যেনো বের হয়ে আসছিল। ঝট করে সে মাহিনের কবল থেকে তার পা টা হেঁচকা টানে ছিনিয়ে নিলো। চোখ জোড়া খুলে তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে নিচুতে বসে থাকা মাহিনের দিকে তাকালো। শুকনো ঢোঁক গিলে অগোছালো গলায় বলল,,

“আমিও আপনাকে ভালোবাসি মাহিন!”

আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না তিথী! একছুটে ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। মাহিন খুশিতে উত্তেজিত হয়ে ঝট করে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। ছাদের উপর লাফিয়ে জোরে চিৎকার করে বলল,,

“আমিও তোমাকে ভালোবাসি তিথী। খুব খুব খুব ভালোবাসি।”

_____________________________________

হলগেইটের পেছনের জায়গাটা আজ আর ফাঁকা, নোংরা বা ভীতিকর নেই। আলো এবং রোশনাইয়ে ঝকঝক করছে জায়গাটা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং নির্মলতায় ঘেরা। চারপাশ থেকে ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণও ভেসে আসছে। যদিও মেহমান অতিথিদের ভীড় এখনও এই জায়গাটাতে চোখে পড়েনি। তবুও আয়মন তাশফিয়াকে আজ এখানেই ডেকেছে! নীরবে নির্জনে মনের সব কথা খুলে বলবে বলে। হাতে সেই স্বর্ণের আংটিটা নিয়ে অধীর আগ্রহের সাথে দাঁড়িয়ে আছে আয়মন। কখন তার সমস্ত অপেক্ষা ঘুচিয়ে তাশফিয়া তার সামনে আসবে। কখন সে তার মনের কথাগুলো তাশফিয়াকে খুলে বলবে সেই চিন্তায় ব্যাকুল সে!

সমস্ত জল্পনা কল্পনা এবং অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে তাশফিয়ার আগমন ঘটল আয়মনের সামনে! মাথা নুইয়ে তাশফিয়া তুখোড় আড়ষ্টতা নিয়ে কাপড়ের আঁচল পেঁচাতে পেঁচাতে আয়মনের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। আয়মনের ডাকে বুকটা কেমন যেন তার অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছিল। যার কারণ সে সত্যিই খুঁজে পাচ্ছিলনা। এখনও মনের ভেতর বাড়তে থাকা এত ভয় ভীতির কারণ সে খণ্ডাতে পারলনা। আয়মনের সামনে সে কীভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠল। লজ্জায় এবং ভয়ে ভীতু হয়ে দাড়িয়ে থাকা তাশফিয়াকে দেখামাত্রই আয়মন প্রথমে গলা ঝাঁড়ল। শান্ত স্বরে কথা বলে প্রথমে তাশফিয়ার জড়তা কাটানোর চেষ্টা করল। তাশফিয়ার ভয়কে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। নমনীয় গলায় সে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কে সাজালো আজ তোমাকে?”

কাপড়ের আঁচলটা আরও দ্রুততার সাথে পেঁচাতে লাগল তাশফিয়া। মাথা নুইয়ে আমতা আমতা স্বরে বলল,,

“আআআমি নিনিজেই।”

“বাহ্! তুমি এত সুন্দর করে সাজতে পারো?”

“ঐ তো একটু আধটু।”

“একটা কথা বলি?”

“কী?”

“তুমি এখনো আমাকে ভয় পাও?”

তাশফিয়া বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। আয়মন ফিক করে হেসে দিলো। মাথা ঝাকিয়ে বলল,,

“তাহলে লজ্জা পাও?”

তাশফিয়া ঠোঁট উল্টালো। মাথা দুলিয়ে বলল,,

“হুম!”

“ঠিক আছে। এবার থেকে আর লজ্জাও পাবেনা। সেই ব্যবস্থাটাই এখন করছি।”

তাশফিয়া মাথা তুলল। কৌতূহলী দৃষ্টিতে আয়মনের দিকে তাকালো। আয়মন বলতে বা বুঝাতে চাইল তা বুঝার চেষ্টা করল। খুব তাড়াহুড়ো করে আয়মন তার পায়জামার পকেট থেকে স্বর্ণের আংটিটি বের করল! মৃদু হেসে তাশফিয়ার দিকে তাকালো। কোনো দিকে কালক্ষেপণ না করেই সে তাশফিয়ার বাঁ হাতটা টেনে ধরল। কোনো ইতস্তত বোধ ছাড়াই সে তাশফিয়ার ডান হাতের মধ্যমা আঙুলে আংটিটা পড়িয়ে দিলো! ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল তাশফিয়া। বাকশক্তি রুদ্ধ তার। অনুভূতিহীন নীরব মূর্তি। আয়মন মৃদু হাসল তাশফিয়াকে দেখে। প্রফুল্ল গলায় বলল,,

“আজ থেকে তুমি শুধু আমার। একান্তই আমার। যাকে দেখলে তোমার আর ভয় পেতে হবেনা। আবার লজ্জাও পেতে হবেনা! শুধু ভালোবাসা পাবে!”

,
,

কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে নূর! নূরের আশেপাশে চাঁদ গোল গোল হয়ে ঘুরছে আর কতবার নূর উঠ বস করেছে তার কঠোর হিসেব রাখছে! নূর যে নূপুরটা কোথা থেকে এনে চাঁদের পায়ে পড়িয়ে দিয়েছে তা চাঁদ বেশ ধরতে পেরে গেছে! তাই সে রাগে দুঃখে লজ্জায় নূরকে তার ইচ্ছে মতো শাস্তি দিচ্ছে! নূর ও ভ্যাবলার মতো চাঁদের শাস্তি মেনে নিচ্ছে। মশার কামড় খেয়ে খেয়ে সে লাগাতার উঠবস করছে। ছোটো বাচ্চাদের মতো মুখটা কাঁদো কাঁদো করে রেখেছে। নূরের এই অসহায় অবস্থা দেখেও চাঁদের মন গলছেনা। সে তার করা হুকুম থেকে একচুলও নড়ছে না। নূর নাটক করে এবার নাক টানল। বিরক্তির স্বরে বলল,,

“হয়েছে তো চাঁদ। আর কত?”

“উহ্। আর একটাও কথা বলবেন না আপনি। মাত্র তো পঞ্চাশ হয়েছে। আরও পঞ্চাশ বাকি আছে!”

“মানে কী? তুমি সত্যি সত্যিই আজ আমাকে একশ বার কানে ধরে উঠবস করাবে?”

“করাব না কেন? অবশ্যই করাব। অন্যায় করেছেন আর শাস্তি পাবেন না? এতই সহজ নাকি চাঁদের হাত থেকে পাড় পেয়ে যাওয়া?’

“কী অন্যায় করেছি আমি হ্যাঁ? কী অন্যায় করেছি?”

“নিজের ভাইয়ের পকেট থেকে নূপুর চুরি করে এনে আমার পায়ে পড়িয়ে দিয়েছেন আবার জানতে চাইছেন আপনি কী অন্যায় করেছেন?”

“আরে আমি কী করব বলো? তোমার জন্য কিছু একটা কিনতে আমি ভুলে গিয়েছিলাম। কাজের প্রেশার ছিল খুব তাই। এখন যদি আমি নূপুরটা না এনে তোমার পায়ে পড়াতাম তবে তো তুমি তিথী এবং তাশফিয়ার নূপুর এবং আংটিটা দেখে মন খারাপ করতে। তাই তো বাধ্য হয়ে আমাকে এই কাজটা করতে হলো! হাতে সময়ও ছিলনা যে তোমার জন্য কিছু কিনে নিয়ে আসব।”

ইতোমধ্যেই প্যান্ডেলের ভেতর থেকে হঠাৎ সাদমানের গলার স্বর ভেসে এলো! গলা ছেড়ে সে ডেকে উঠল,,

“এই নূর, মাহিন, আয়মন কোথায় তোরা? আমাকে ছাড়াই তো ভাবির বাড়ি চলে এলি। এত পর হয়ে গেলাম আমি হ্যাঁ?”

#চলবে…?