#প্রেমরোগ-১৩
#তাসনিম_তামান্না
সকালে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই রেডি হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো। মুন্নি কেয়া সকলের জন্য কিছু খাবার রান্না করে নিলো। যেহেতু পাখি প্রেগন্যান্ট ওর বাইরের খাবার না খাওয়ায় ভালো। দুইটা মাইক্রো নেওয়া হলো। একটায় বড়রা যাবে আর গুলায় ছোটরা যাবে। গাড়িতে সব জিনিস পত্র তোলার সময় তুষরা এসে পৌঁছালো। তুষার সবুজ রঙের শার্ট, কালো জিন্সের প্যান্ট, হাতে কালো ঘড়ি, চুলগুলো বেশ স্টাইল করেই আঁচড়ানো, । কুয়াশা সাদা কালো চেকের জামা ওড়না গলায় পেচিয়ে নিয়েছে, চুল গুলো পনিটেল করে বাঁধা, মুখে ফেস পাউডার, ঠোঁটে লিপবাম দেওয়া। মেঘাও কুয়াশার একই ড্রেস পড়েছে। তুষার কুয়াশকে স্ক্যান করে মেঘাকে বলল
” তোমাকে সুন্দর লাগছে। পাশের জনকে পে ত্নির মতো লাগতেছে ”
মেঘা মুখ টিপে হেসে তুষারের কথায় সাই দিয়ে বলল ” হ্যাঁ তাই তো পুরাই পে ত্নি ”
কুয়াশা রেগে গিয়ে কিছু বলতে গিয়ে ও নিজেকে দমিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। এক এক করে সকলে উঠে বসলো।
মেঘ গাড়ি চালাচ্ছে। পাশের সিটে তুষার বসে আছে। পিছনে কুয়াশা, তুতুল, মেঘা বসে আছে। তার পিছনে কুশান, পাখি বসে আছে। সকলে চুপচাপ বসে আছে। মেঘা মুখ বেজার করে বলল
” বোরিং কেউ কথা বলো না কেনো? ”
মেঘ গাড়ি চালাতে চালাতে বলল ” তোর মতো সবাই সবসময় গল্প করার মুডে থাকে না ”
” তুই সবসময় আমাকে পিন্স মেরে কথা বলিস কেনো ভাইয়া আমি তোর কোন পাকা ধানে মই দিসি ”
তুতুল বলল ” চুপ করো ঝগ’ড়া করছো কেনো?”
মেঘা বলল ” তোমার বর ই তো আগে শুরু করলো”
তুতুল ‘বর’ কথাটা শুনে লজ্জা পেয়ে মিনমিন করে বলল ” আচ্ছা থামো তোমরা। ”
কুয়াশা তুতুলের অবস্থা দেখে হেসে কানে কানে বলল ” বাবাহ। বাসরের পরের এতো লজ্জা কোথা থেকে আসছে গো ”
তুতুল চোখ পাকিয়ে কুয়াশাকে ধমকালো। মেঘ সেটা লুকিং গ্লাসে দেখে বলল ” কুয়াশা আমার বউ এর কানে কানে কি বললি রে? ”
তুতুল এদের লাগাম ছাড়া কথায় কুশানের সামনে খুব লজ্জা লাগছে। তুতুল বিরবির করে বলল ” নিল’র্জ্জ, বেহা→য়য়া ”
মেঘা, কুয়াশা পাশে বসে থাকায় শুনতে পেয়ে হেসে মেঘা বলল ” আসলেই ভাবিপু তোমার বরটা নিল’র্জ্জ একেবারে। ”
তুতুল ফিসফিস করে বলল ” কি হচ্ছেটা কি ভাইয়া আছে তো পিছনে। তোমাদের ঝগ’ড়া থামানোই আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ”
কুয়াশা তুতুলের অস্তিত্বকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে বলল ” বউকে না দেখে গাড়ি চালানোই মন দাও আর একটা সুন্দর গান দাও। তোমাদের কথা শুরু হলে ঝগ’ড়া শেষ হবে ”
তুষার গান দিলো। কুশান, পাখি, তুষার নিরব ভূমিকা পালন করছে। কিছুক্ষণ পর কুয়াশা বলল
” ক্ষুদা লাগছে ”
মেঘ খোঁচা মে’রে বলল ” তোরা এতো পেটুক কেন রে সারাদিন খাইখাই করিস শুধু ”
কুয়াশা রেগে বলল ” কখন খাই? ক্ষুদা লাগলে খাবো না ”
কুশান এতোক্ষণে মুখ খুলে বলল ” বাচ্চাদের মতো ঝগ’ড়া করছিস কেনো তোরা? বড় হবি না কখনো না-কি? তোদের কাছ থেকে আমার ছেলেমেয়ে ও দেখছি ঝগ’ড়ায় ফাস্ট হবে ”
মেঘা হেসে বলল ” আমরা দায়িত্ব নিয়ে তোমাদের বাবুদের ঝগ’ড়া শেখাবো। যাতে পাশের বাসার আন্টির সাথে ঝগ’ড়া করতে পারে ”
” হুম বুঝলাম ”
কুয়াশা বলল ” কি বুঝলে ভাইয়া? ”
কুশান বলল ” এই যে তোরা নিজেও ভালো হবি না আমার ছেলেমেয়ে কেও ভালো হতে দিবি না ”
মেঘ বলল ” তুমি কি আমাদের ইনসাল্ট করলে ভাইয়া? ”
” বলতে পারিস ”
তুতুল মুখ টিপে হাসলো। কুয়াশা বলল
” ভাইয়া তুমি ছেলে বাবু হলে খুশি হবে নাকি মেয়ে বাবু হলে খুশি হবে? ”
কুশান বলল ” আল্লাহ যেটা দিবেন সেটাতেই খুশি ”
মেঘা বলল ” নাহ্ একটা চুজ করো ”
” মেয়ে হলে কিন্তু ছেলে হলে যে অখুশি হবো এমনটাও নয় ”
” তোমার কি মনে হয় ভাবিপু ”
” আমার মনে হয় ছেলে হবে ”
কুয়াশা বলল ” মেয়ে বাবু হলে সবসময়ই সাজুগুজু করিয়ে রাখবো ছেলে বাবু হলে সাজাতে পাবো না তো”
মেঘা বলল ” ছেলে বাবু হলেও সাজাতে ইচ্ছে হলে সাজাবো ”
এসব শুনে মেঘ বলল ” ভাইয়া দেখছো ছেলে হোক বা মেয়ে হোক ওরা তাকে সাজিয়েই ছাড়বে। কি অ-ত্যা+চা’র টাই না করবে ”
” তাই তো দেখতেছি ”
পাখি বলল ” কুয়াশা আম্মু মামনি খাবার দিয়েছিলো খাবি? ”
কুয়াশা বলল ” কি খাবার ”
” রুটি, মাংশ ”
” না ওগুলা রুগি দের খাবার আমি খাবো না ”
” তাহলে কি খাবি? চকলেট ”
মেঘ বলল ” তুই পাগ’ল নাকি মে’ন্টাল ক্ষুধা লাগলে কেউ এসব খাই ”
” আমি খাই ”
কিছুক্ষণ পর দোকান আর হোটেল দেখতে পেয়ে তুষার বলল ” মেঘ গাড়ি থামা ”
মেঘ গাড়িতে ব্রেক কোষে বলল ” কেনো? ”
” খাবার কিনবো। মেঘা, তুতুল, কি খাবে? ”
মেঘা বলল ” চিপস, বার্গার আর জুস ”
তুতুল বলল ” পিৎজা আর কোক ”
তুষার বলল ” কুশান ভাইয়া, ভাবিপু কি খাবেন ”
পাখি একটু ভেবে বলল ” এখানে কি রসমালাই পাওয়া যায়? ”
” সেটা তো জানি না দেখতে হবে ”
” আচ্ছা পেলে নিয়ে আসবে আর কিছু লাগবে না ”
“আচ্ছা। ভাইয়া আপনি? ”
” চলো আমি যাচ্ছি ”
কুশান কথা বলে নেমে গেলো। তুষার বলল ” কুয়াশা তুমি কি শুধু ই চকলেট খাবে না-কি অন্য কিছু ও খাবে ”
কুয়াশার তুষারের সাথে কথা বলাতে মোটেই ইচ্ছে ছিলো। না কিন্তু তুষারের দিকে না তাকিয়েই বলল
” চিপস, চকলেট, আইসক্রিম আর জুস ”
ওদের গাড়ি থামাতে দেখে বড়দের গাড়িটাও থামিয়ে দিলো। দুপুর হয়ে যাওয়ায় সকলের জন্য এক প্যাকেট করে বিরিয়ানির কিনলো। গাড়িতে বসে যেনো যে যার ইচ্ছে মতো খেয়ে পারে। বিরিয়ানি, পানি, আর সকলের পছন্দের খাবার নিয়ে গাড়ি আবারও চলতে শুরু করলো।
তিশা কৌশলকে বলল ” ভাই কুয়াশার অর্নাসের এক্সাম তো এই বছরের শেষের দিকে। আমি বলছিলাম কি ও এক্সাম হয়ে গেলে। তুষার কুয়াশার অনুষ্ঠান করে বিয়েটা হয়ে যাক কি বলেন ”
কৌশল বলল ” আমি ও তাই ভাবছিলাম ভাবি। দূরে দূরে রেখে ওদের দূরত্ব বাড়ছে বৈই কমছে না ”
কেয়া আমতা আমতা করে বলল ” এতো তারাতাড়ি
কৌশল কেয়ার কথার অর্থ বুঝতে পেরে বলল
” তোমরা তো সারাদিন ঝগড়া। কুয়াশা চলে গেলেই তো বাঁচো বল এখন মন খারাপ করছ কেনো? ”
কেয়া রাগলো না বলল ” তোমার কষ্ট হচ্ছে না মেয়ের বিয়ে কথা শুনে ”
” কষ্ট হলেই বা কি ওদের তো বিয়ে হয়ে গেছে। ”
মুন্নি বলল ” এক্সাম শেষ হলে মেঘাও বিয়ের কথা ভাবিছি। ছেলে দেখতে হবে। ”
মনির বলল ” হ্যাঁ সে তো ছেলে মেয়েগুলো কত বড় হয়ে গেছে। বিয়েও দিতে হবে ”
কৌশল বলল ” সেদিন ছোট ছিল আজ কত বড় হয়ে গেছে ”
তিয়াশ বলল ” এতো মন খারাপ করছিস কেনো? বিয়ে তো দিতেই হবে একদিন ”
কেয়া বলল ” মেঘা আর কুয়াশার বিয়ে একসাথে হলে কেমন হয়? ”
তিশা বলল ” ভালোই হয়। মেঘার জন্য তো সুপাত্র খুঁজতে হবে ”
মুন্নি বলল ” ঘটক কের সাথে এসে কথা বলতে হবে মেয়েকে নিয়ে আমি বড্ড চিন্তায় আছি ”
কেয়া বলল ” চিন্তা করিস না ছোটো মেঘার জন্য ভালো ছেলেই খুঁজে আনবো সকলে মিলে। কোনো তারাহুড়া নেই দেরি হলেও সমস্যা নেই তো ”
কৌশল বলল ” কুয়াশাকে কি তুষার সাথে করে সুইজারল্যান্ডে চলে যাবে ”
তিয়াশ বলল ” এসব নিয়ে তো এখনো কিছু কথা হয়নি তুষারের সাথে। ”
তিশা বলল ” তুষারের জব যেহেতু ওখানে কুয়াশা কেউ ওখানেই নিয়ে যাবে ”
কৌশলের মনের মধ্যে মেয়েকে না দেখতে পাওয়ার কষ্ট হলো যেনো। মেয়ে ছাড়া থাকা হয় নি কখনো মেয়ে দুইটাকে ছাড়া বাড়ি ফাকা ফাঁকা নিষ্প্রাণ লাগে। তাদের কে ছাড়া বাড়ি কিভাবে থাকবে এতোগুলো মানুষ তারাই বা কিভাবে থাকবে? থাকতে পারবে কি? না-কি সেই ছোট বেলার মতো কেঁদে কেটে সমুদ্র বানিয়ে ফেলবে? তার রাজ্যের রাজকণ্যাটা কি সুখী হবে? তুষার ছেলে হিসেবে খারাপ না ভালোই তবুও মেয়ে ছেলে মানুষী তো কম না। একটুতেই অভিমান হয় তার। একটুতেই কেঁদে দেয়। এসব নিয়ে তুষারের সাথে তার বসতে হবে।
চলবে ইনশাআল্লাহ