প্রেমরোগ পর্ব-১৪

0
749

#প্রেমরোগ-১৪
#তাসনিম_তামান্না

দীর্ঘ ৭ ঘন্টা জার্নি করে চাঁদপুরে এসে পৌঁছেছে ওরা তখন সন্ধ্যা নেমেছে। চারিদিকে আঁধার গ্রাস করে ফেলছে। গাড়ির এসে থেমেছে পুরোনো রং চটা কালো শেওলা পড়া দু’তালা বাড়িটার সামনে গাড়ির শব্দ পেতেই বাড়ির কেয়ারটেকার জিরো বাল্বের হলদেটে আলো জ্বালিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসলো। কুশল বিনিময় করে। ব্যাগ পত্র নিয়ে সবাই ভিতরে চলে গেলো। রান্না করার জন্য রাধুনি ঠিক করে রাখা ছিলো। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো। ক্লান্ত হওয়ায় সকলে ঘুমে ঢলে পড়লো। কুয়াশার চোখ মাত্র লেগে এসেছিল তখনি ফোন বেজে উঠলো ঘুমে ব্যঘাত ঘটায় বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফোনে দেখলো তুষার ফোন দিয়েছে। কুচকানো ভ্রু যুগল আরো কুঞ্চিত হলো। কৌতুকলে ফোন ধরে বলল ” কি হয়েছে? ”
তুষারের গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো
” ছাদে আসো ”
কুয়াশার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো অবাক হয়ে বলল
” এতো রাতে? ছাদে যাবো কেনো? ”
” আমি বলছি তাই ”
তুষারের উত্তরে কুয়াশা ফোঁস করে উঠে বলল
” আপনি বললেই যেতে হবে না-কি? পারবো না যেতে ”
তুষার শান্ত গাম্ভীর্যের সঙ্গে হু ম কি দিয়ে বলল
” আমি কিন্তু রুমে চলে আসবো ”
কুয়াশা একটু দমে গেলো। শান্ত কন্ঠে বলল
” আমি ক্লান্ত কাল দেখা করি ”
” তুমি আসবে? না-কি আমি আসবো? ”
কুয়াশা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল ” আসছি ”
ভেবসা গরমে মাথার ওপরের পাখাটায় মৃদু শব্দ করে ঘুরছে। পাশে মেঘা বেঘোরে ম রার মতো ঘুমাচ্ছে। কুয়াশা আস্তে করে দরজা চেপে ফোনের ফ্লাস জ্বালিয়ে সতর্কতার সাথে ছাদে চলে গেলো। চাঁদনী রাত চারিদিকে প্রকৃতির আলোয় ঝলমল করছে স্পষ্ট সব কিছু দেখা যাচ্ছে। ছাদে এসে দেখলো তুষার রেলিং এর ওপর পা ছুলিয়ে বসছে আছে। কুয়াশা আঁতকে ওঠে দ্রুত পায়ে কাছে গিয়ে তুষার হাত ধরে নিচে নামিয়ে বলল
” পা গ ল না-কি আপনি? এতো রাতে কেউ রেলিং এর ওপরে উঠে বসে। যদি পড়ে যেতেন ”
তুষার কুয়াশার কথার প্রতিউত্তর করলো না। তুষার কুয়াশার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো চাঁদে আলো পড়ায় কুয়াশার রূপ যেনো বহুগুণ বেড়ে গেলো। তুষার কুয়াশার সামনে থাকা একগুচ্ছ চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলল
” ~চন্দ্রকন্যা তোমার রূপে মুগ্ধ আমি
তোমার আলোয় আলোকিত আমি~
তুমি কি জানো চন্দ্রকন্যা?
কেউ তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে!
তার হৃদয় তোমার হৃদয়ের স্পর্শ পেতে বড্ড ব্যাকুল হয়ে থাকে ”
তুষারের ঘোর লাগা কন্ঠে প্রতিটা কথায় কি জেনো ছিল। কুয়াশার বুকের ধুকপুকানি কয়েকগুন বাড়তে লাগলো। কুয়াশা জ্বীব দিয়ে অধর জোড়া ভিজিয়ে শুকনো ঢোক গিলে দৃষ্টি এলোমেলো করে আমতা আমতা করে বলল ” কি বলছেন এগুলা? ”
তুষার চমকে উঠে দুকদম পিছিয়ে গিয়ে ঘাবড়ে গিয়ে বলল ” কই কি বললাম? আজব? ”
কুয়াশার ভ্রু যুগল কুঞ্চিত বিরক্তি হয়ে বুঝে গেলো তুষার পালটি খাচ্ছে। তাই সে প্রশংঙ্গ বাদ দিয়ে কন্ঠে ঝাঁঝ এনে বলল ” কেনো ডেকেছেন? তারাতাড়ি বলে ফেলুন নিচে যাবো ঘুম পাচ্ছে ”
তুষার কোনো ভনিতা ছাড়ায় বলল ” আমাকে ইগনোর করছ কেনো? ”
কুয়াশা ঝাঁজ মেশানো গলায় বলল ” আজব। আমি কেনো আপনাকে ইগনোর করতে যাবো? ”
” ইগনোর করছ না? তাহলে কি করছ? ”
কুয়াশা মুখ ঘুরিয়ে বলল ” কিছু করছি না। আপনার কথা শেষ হলে যাচ্ছি ”
তুষার কুয়াশার হাত ধরে আটকে দিলো রিনরিনে শান্ত স্বরে বলল ” আ’ম সরি। আমি জানি তোমাকে চ ড় মা রা টা ঠিক হয় নি। কিন্তু তখন ঔ সময় আমার মাথার ঠিক ছিল না রাগের মাথায় মে রে দিয়েছি বিশ্বাস করো ”
কুয়াশা তুষারের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো। তুষারের চোখমুখে তীব্র অ প রা ধ বোধ ফুটে উঠেছে। তুষার কুয়াশার দৃষ্টি দেখে হেসে হাত ধরে কাছে এনে বলল ” চলো দোলনায় বসি ”
কুয়াশা মিনমিন করে বলল ” ঘুম পাচ্ছে ”
” বেশিক্ষণ থাকবো না। জাস্ট ১৫ মিনিট ”
কুয়াশা সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে তুষারের পিছনে পিছনে দোলনায় গিয়ে বসলো। কুয়াশা ছাদের চারিদিকে চোখ বুলালো ছাদটা পরিষ্কার কিন্তু ছাদে দোলনা ছাড়া কিছু নেই। মনে মনে ভাবলো ফুল গাছ হলে ফুলের সুবাসে চারিদিক মুখরিত হতো।
তুষার গান ধরলো কুয়াশার কোমড় চেপে কাছে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। কুয়াশা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে তুষারের মুখে লেগে ক্ষীণ হাসিটায় মুগ্ধ হলো

অবাক চাঁদের আলোয় দেখো
ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী
আড়াল হতে দেখেছি তোমার
নিষ্পাপ মুখখানি,

ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়,
ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়

[বাকিটা ইউটিউবে শুনে নিবেন]

গান শেষ করে তুষার কুয়াশার দিকে ভ্রু নাচিয়ে বলল ” এখন ঘুম পাচ্ছে না? সারারাত এভাবে থাকবে? ”
কুয়াশা হঠাৎ লজ্জা পাখিরা এসে হানা দিলো মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল ” ছাড়ুন ”
তুষার কুয়াশার মুখ দেখে বলল ” তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? ”
কুয়াশার লজ্জা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো আমতা আমতা করে বলল ” লজ্জা পাবো কেনো ”
” আই সি ”
কুয়াশা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল ” ছাড়ুন না ”
” আচ্ছা ছাড়ছি না ”
কুয়াশা হতভম্ব হয়ে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল
” ছাড়তে চলছি আমি ”
” কই এখনি যে তুমি ছাড়তে বারণ করলে ”
” এমন বিহেভ করছেন কেনো? জ্বর হয়েছে আমার?”
কুয়াশা হাতের উল্টো পিট দিয়ে তুষারের কপাল ছুঁয়ে দেখে বলল ” না তো ঠিকি আছে ”
” উহুম শরীরের জ্বর না মনের জ্বর ”
” সেটা আবার কেমন জ্বর? ”
” সেটা কারোর বিরহে পুড়তে পুড়তে যখন মন বিষিয়ে উঠে চারিদিকে তিক্ততায় ভরে যায়। তারপর তার সাথে সংস্পর্শ পায় ওখন মনের জ্বর হয় ”
কুয়াশার কন্ঠে অবাক ঢেলে বলে
” এটা আবার কেমন জ্বর? ”
” তুমি ভালোবাসলে এমন জ্বর হবে তোমার ও ”
” তাহলে আপনিও কি কাউকে ভালোবাসেন? ”
” হুম বাসি ”
” বাসি কাউকে ”
কুয়াশার হঠাৎ মন খারাপ হলো ছোট করে বলল
” ওহ ”
তুষার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল ” কুয়াশা জানো তুমি খুব বো’কা ”
কুয়াশা কোনো রিয়াক্ট না করে বলল ” জানি ”
” বাহ তাই না-কি আর কি কি জানো? ”
কুয়াশা ছটফট করে বলল
” আমি ঘুমাবো। ছাড়ুন আমায় ”
” শোনো আমি তোমাকে আমার চন্দ্রকন্যা কল্পনা করে অনেক কিছু বলে ফেলছি তুমি কিছু মনে রেখ না কেমন ”
কুয়াশা শান্ত হয়ে গিয়ে বলল ” আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে? ”
” হুম থাকবে না কেনো? ”
কুয়াশার হঠাৎ রাগ লাগলো রাগে সব কিছু ধ্বং’স করে দিতে ইচ্ছে হলো। কান্নারা কুন্ডলী পাকিয়ে ঠেলে বের হতে চাইলো। অদৃশ্য শক্তি এসে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেললো। মনে মনে মেয়েটার জন্য ঈ-ষৎ হলো। কন্ঠ নালি সরু করে বলল
” থাকে বাংলাদেশ আবার সুইজারল্যান্ড ও ”
কুয়াশার মন কেঁদে উঠলো। অসুরের শক্তি ভর করলো যেনো নিজেকে ছাড়িয়ে বলল ” আসছি বড্ড ঘুম পাচ্ছে ”
বলে দ্রুত পায়ে চলে গেলো। তুষারের কুয়াশর ফেস দেখে মুখ টিপে হেসে নিজেও নিচে চলে এলো। কুয়াশার রুমে এসে শুতেই চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি গড়িয়ে পড়লো। কুয়াশা বির বির করে বলল
” ওনাকে তো আমি ভালোবাসি না তাহলে কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে? ”
চলবে ইনশাআল্লাহ
রিচেক করি নাই