#প্রেমরোগ-১৫
#তাসনিম_তামান্না
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো মিষ্টি সোনালী রোদ মুখে এলো লুটোপুটি খাওয়ায় পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো মেঘা গুনগুন করে গান গাইছে আর ভেজা চুল মুচ্ছে। কুয়াশার বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল ” কি সমস্যা তোর সকাল হতে পারে নি জানালা খুলছিস কেনো? দেখছিস না আমি ঘুমিয়ে আছি ”
” হ্যাঁ দেখছি ”
” তো জানালা খুললি কেনো? ”
” তোকে জাগাতে ”
কুয়াশা রেগে গজগজ করতে করতে বলল
” শ য় তা ন মেয়ে দূর হ সামনে থেকে ঘুম পাচ্ছে আমার। ক্লান্ত আমি ”
” সারারাত প্রেম করলে তো ক্লান্ত থাকবেই ”
কুয়াশা চমকালো না অবাক হলো না এখন ওর ঘুমটাই ইনপটেন ভ্রু কুঁচকে বলল ” তাতে তোর সমস্যা কোথায়। রুম থেকে বের হ ”
” ৯ টা বেজে গেছে। খেতে ডাকছে নিচে ”
” তুই যা আমি পরে খাবো ”
মেঘা কুয়াশাকে ডেকে ঠেনে ঠেলে উঠিও নিয়ে যেতে পারলো না আগরতা নিজেই চলে গেলো। নিচে এসে খেতে বসে বলল ” মামনি তোমার মেয়ে উঠছে না এখন ও না-কি ও ঘুমাবে ”
” তোরা খা আমি দেখছি ”
কেয়া ওপরে মেয়েকে ডাকতে গেলো। কুয়াশা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে চোখের পাতা নড়ছে। কেয়া মেয়ের মাথায় হাত রাখলো কুয়াশা খুলে মাকে দেখে কেয়ার কোলে মাথা রেখে বলল ” মাথা টিপে দাও ”
কেয়া মাথা টিপতে টিপতে বলল ” কি হয়েছে শরীর খারাপ লাগছে ”
” উহুম ”
” তাহলে কি হয়েছে? ”
” কিছু ভালো লাগতেছে না আম্মু ”
” চল উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবি ”
কুয়াশা উত্তর করলো না। কেয়াও মেয়েকে আর জোর করলো না ওভাবেই বসে রইলো। মিনিট ক্ষনিক নিরবতা থেকে কুয়াশা কেয়াকে ডেকে উঠলো ” আম্মু ”
” হুম ”
” তোমরা আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো? ”
কেয়ার ভ্রু কুঁচকে গেলো বলল
” হঠাৎ এমন কথা বলছিস কেনো? কি হয়েছে বল তো? ”
কুয়াশা চোখ খুলে কেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
” আমি না খুব খারাপ স্বপ্ন দেখি ”
” কেমন? ”
” এই আজ দেখলাম আমি সবুজেঘেরা জঙ্গলে হারিয়ে গেছি। হিং স্র পশু গুলো আমাকে তাড়া করছে তোমাদের কে কত ডাকলাম কেউ শুনলে না উল্টো হেসে ক্রমশ দূরে সরে গেলে। আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরতে গেলাম তোমরা ভেনিস হয়ে গেলে ”
কেয়া হেসে বলল ” দূর পাগলি ওগুলো স্বপ্ন। স্বপ্ন কখনো আবার সত্যি হয় নাকি? তুমি অযথা মন খারাপ করছো ”
কুয়াশা ছলছল চোখে বলল ” আম্মু আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ”
কেয়া মন পুলকিত হলো খুশিতে মেয়ের কপালে
চু!মু খেয়ে বলল ” আমি ও তোকে ভালোবাসি মা। শুধু একটু রাগের মাথায় বকে ফেলি ”
কৌশল রুমে ডুকে মা মেয়ের চোখে পানি দেখে অস্থির হয়ে বলল ” কি হয়েছে কাঁদছ কেনো? কুয়াশা মা তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? ”
কুয়াশা বাবার অস্থিরতা দেখে হেসে উঠে বসে বলল
” কিছু হয় নি আব্বু ”
কৌশল মানলো না মেয়ের কথা মাথায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বর এসেছে কি না। বাবার অস্থিরতা দেখে কুয়াশা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বাবার বুকে মাথা রেখে বলল ” আব্বু আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ”
কৌশল কুয়াশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল ” আমি ও তোমাকে ভালোবাসি মা ”
কুয়াশা উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখলো টি-টেবিলে খাবার রাখা মেঘা বসে ফোন টিপছে। কুয়াশা সন্দিহান চোখে মেঘাকে দেখে বলল
” তুই বিবাহিত মহিলাদের মতো আচরণ করছিস কেনো?”
মেঘা যেনো আকাশ থেকে টুপ করে পড়লো এমন রিয়াকশন দিয়ে বলল ” মানে কি বলছিস তুই? আমি বিবাহিত মহিলাদের মতো আচরণ করছি কি এমন করলাম আমি? ”
” মানে সকাল সকাল সাওয়ার নিলি আবার চুল মুছতে মুছতে গান গাইছিলি ”
মেঘা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ” দিলি তো এতো সুন্দর মুডটা নষ্ট করে ”
” তুই আজ আমার ঘুম নষ্ট করেছিস তেমন আমিও আজ সারাদিন তোর মুড নষ্ট করবো ”
মেঘা মুখ ভেংচি কেটলো। কুয়াশা পরেটা দিয়ে কষা গরুর মাংস খেতে শুরু করলো। মেঘা ফোন দেখতে দেখতে বলল ” তুই না-কি কি সব স্বপ্ন দেখে আপসেট হয়ে গেছিস ”
কুয়াশা খাওয়া থামিয়ে মেঘার দিকে তাকিয়ে বলল
” তোকে এসব কে বলল? ”
” মামনি আম্মু, মামনির সাথে গল্প করছিল তাই শুনলাম ”
কুয়াশা একটা হতাশ নিশ্বাস ছাড়লো। মা’কে সিক্রেট কিছু বললে মা সেটা আবার সিক্রেট ভাবে অন্য র সাথে শেয়ার করে।
মেঘা মন খারাপ করে বলল ” জানিস কাল রাতে কি হয়েছে ”
” না বললে কি ভাবে জানবো? ”
” আমি ও খারাে স্বপ্ন দেখেছি ”
কুয়াশা কৌতুহলী গলায় বলল
” কি দেখছিস? ”
মেঘা আপসেট হয়ে বলল
” দেখলাম আমি ছাদ থেকে পড়ে গেছি। ঠিক তখনি মাজায় ব্যথা পেলাম চোখ খুলে দেখলাম আমি ফ্লোরে ”
কুয়াশা মেঘার কথা শুনে হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে আসলো। মেঘা কুয়াশার হাসি দেখে রাগে ফেটে পড়লো। কই বোনের দুঃখে দুখবিলাস করবে তা না হেসে মজা নিচ্ছে। এটা কোনো কথা? দিস ইজ টু মার্চ।।
তখনি তুতুল রুমে ডুকলো। তুতুল ওদের হাসতে দেখে বলল ” কি ব্যপার ননদীনিরা এতো হাসছো যে ”
কুয়াশা বলতে নিলেই মেঘা কুয়াশার মুখ চেপে ধরে বলল ” কিছু না ” বলে কুয়াশার দিকে চোখ রাঙালো। তুতুল বলল
” আচ্ছা চলো আমরা সকলে এখন আশপাশ ঘুরতে যাবো যাবে তো? ”
” হুম যাবো তো ”
” খেয়ে নিচে আসো আমরা নিচেই আছি ”
কুয়াশা খেয়ে নিচে এসে দেখলো সকলে বসে গল্প করছে। কিছুক্ষণ পরপরেই ওরা গ্রাম ঘুরতে বের হলো।
গ্রামীণ পরিবেশ কাঁচের মতো সুন্দর নীলাভ অন্তরিক্ষে শুভ রঙের টুকরো টুকরো মেঘ কুয়াশা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে সবটা দেখছিলো। উষ্ণ হাতে শীতল স্পর্শ পেতেই চমকে পাশ ফিরে তাকালো। তুষার কুয়াশার গলা মোমোর মতো নরম তুলতুলে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে হাত গলিয়ে দিয়ে হাঁটতে লাগলো। কুয়াশা অবাক হয়ে থেমে গেলো। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সকলে গল্প করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে। কুয়াশা চারিদিকে দেখায় এতোই মগ্ন ছিলো যে ও পিছনে গেলো। তুষার ও এমন একটা সুযোগে অপেক্ষা করছিলো। কুয়াশাকে থেমে যেতে দেখে তুষার ও থেমে গিয়ে বলল
” কি হলো দাড়িয়ে গেলে কেনো? ”
” না কিছু না ”
বলে আবার হাটতে লাগলো। ছাত্র ছাত্রীরা দল বেধে স্কুলে যাচ্ছে। গ্রামের বধূরা কাকে কলসিতে পানি নিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা মাঠে ধান কাটছে। তার পাশে ছোট্ট পুকুরটায় জাল ফেলে মাছ ধরছে। কুয়াশা সবটা নোটিশ করছিল তখন তুষারে বলা কাল রাতের কথা মনে পড়লো।
” আপনি যে আমার হাত ধরেছেন। আপনার গার্লফ্রেন্ড রাগ করবে না ”
তুষার স্বাভাবিক ভাবে বলল ” রাগ করবে কেনো? তারা তো জানে আমার বউ আছে ”
কুয়াশা বিস্ময় চোখে তাকিয়ে বলল ” তারা? কয় জন আপনার প্রেমিকা ”
তুষার মুচকি মুচকি হেসে বলল ” আছে ডজনখানেক ”
” আপনি সবাইকে সময় দেন কিভাবে? ”
” দি রুটিন লেখা আছে তোমাকে পরে দেখাবো ”
কুয়াশা মন খারাপ হলো রেগে গিয়ে বলল ” আমি বউ থাকতেও প্রেম করেন লজ্জা লাগে না? ”
” লজ্জা লাগবে কেনো? বউ তো আর আমাকে ভালো টালো বাসে না তাই তো অন্যর কাছে যেতে হয় ”
” আমি একটা ছেলের সাথে কথা বললে আপনি ওমন করেন কেনো? আমি ও প্রেম করবো আপনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ”
তুষার চলন্ত পা থেমে গেলো কুয়াশাও থেমে গেলো। তুষার দাঁতে দাঁত চেপে বলল ” তোর সাহস থাকলে কর পরে আমি বুঝে নিবো ”
তুষারের হঠাৎ তুই তোকারিতে কুয়াশা ঘাবড়ে গেলো। বুঝে গেলো জায়গা গরম হয়ে গেছে। এখানে থাকলে বি প দ ঘনিয়ে আসবে। তাই যেই ভাবা সেই কাজ। তুষারের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে মেঘার পাশে গিয়ে হাঁটতে লাগলো। মেঘা ফিসফিস করে বলল
” ভালোই তো চলে। আজ আমি সিঙ্গেল বলে। ”
কুয়াশা অবাক হয়ে বলল ” তুই সিঙ্গেল তাহলে রিদ ভাইয়া কে “.
” তুই চুপ কর ঔ ব্যাডা আমাকে পাত্তা দেয় না আমি ও দিবো না ওর সামনে প্রেম করে বেড়াবো যদি একটু জেলাস টেলাস হয়ে রিয়াক্ট করে তাহলে বুঝবো ঔ ব্যাডাও আমাকে ভালোবাসে। প্লানটা জোস না? ”
” হুম চলার মতো ”
ওরা হাঁটতে হাঁটতে নির্জন মাঠে চলে এলো যার পাশ দিয়ে নদীর পানি বয়ে যাচ্ছে। মাঠের মাঝক্ষানে একটা বটগাছ তাতে দোলনা মেঘা দৌড়ে উঠে বসে কুয়াশাকে বলল ” দোল দে তো ”
কুয়াশা মেঘাকে জোরে দোল দিয়ে সরে আসে। মেঘা ভয়ে আঁতকে ওঠে বলল ” আরে ছেমড়ি এটা কি করলি। আহ! আমাকে থামা আমি পড়ে যাবো তো ”
কেউ থামালো না উল্টে মেঘার কান্ডে হাসতে লাগলো। গ্রাম ঘুরে বাসায় আসতে আসতে দুপুর হয়ে গেলো বেশ। কুয়াশা সাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখলো ফোন বাঝছে। অনু ফোন দিয়েছে।
” হ্যালো অনু বল ”
অনু বাঝখাই গলায় বলল
” কি বলবো? ”
কুয়াশা ঘাবড়ে গেলো বলল
” কি হলো রেগে আছিস কেনো? ”
” ফোন দি যায় না কেনো? ”
” আরে আমি তো গ্রামে এখানে তেমন নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না ”
অনু একটু শান্ত হলো উৎতেজিত গলায় বলল
” কি হয়েছে জানিস? ”
” না তো কি হয়েছে? ”
” উমা আর ঈশান বিয়ে করেছে ”
কুয়াশা আকাশ থেকে পড়লো বলল ” হোয়াট? কখন? কিভাবে? কি করে? ”
” আরে জানিস ই তো উমার বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপাচাপি করছিল। তো কাল ছেলেপক্ষ পছন্দ করে বিয়ে পাকাপাকি করেছিল। উমা ভয় পেয়ে বাসা থেকে রাতে পালিয়ে আসে ফেন্ডের বাসায় রাতটা থেকে আজ সকালে ওরা বিয়ে করছে আমি ও জানতাম না রাহুল বলল ”
” এভাবে কে বিয়ে করে ভাই? একলিস্ট বাসায় মানানোর ট্রাই করতো তখন না মানলে বিয়ে করতো। আর ঈশান তো সবে বিজনেসের প্লান করছে। কিভাবে কি হবে? চলবে কিভাবে ওরা? ”
” জানি না। ঈশানের বাসায়ও বোধহয় কেউ মেনে নিবে না ”
” আচ্ছা। যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। ওরা সুখি থাকলেই হলো। ”
” তোরা কবে ফিরছিস? ”
” নট সিওর ”
” মেঘা পে ত্নি কই রে? ”
” ও নিচে আমি কেবল সাওয়ার নিয়ে বের হলাম ”
” আচ্ছা রাখছি আবার পরে কথা হবে ”
” ওকে ”
ভাগ্য কোথায় কাকে কিভাবে পৌঁছে দেয়। একমাত্র ওপর ওয়ালা ছাড়া কেউ বলতে পারে না।
চলবে ইনশাআল্লাহ