#প্রেমরোগ-১৬
#তাসনিম_তামান্না
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে কুয়াশা মেঘা পাশাপাশি শুয়ে ফোন দেখছে। মেঘা ফোন রেখে শব্দ করে শ্বাস নিতে নিতে বলল
” কুয়াশা আমার না দম বন্ধ হয়ে আসছে ”
কুয়াশা ফোন রেখে ভয়ার্ত চোখে বসে তাকিয়ে বলল
” এই তো এখন ভালো ছিলি। কি হলো? খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে? দাড়া সবাইকে ডাকি ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে তোকে ”
কুয়াশা কেঁদে দিবে এমন অবস্থা। কুয়াশা যেতে নিলে মেঘা কুয়াশার হাত ধরে থামিয়ে। বলল
” এটা হচ্ছে প্রেমরোগ বুঝলি এরোগের একমাত্র ঔষধ রিদ ”
কুয়াশা রেগে গেলো। সে এতোক্ষণ ভয়ে ম র তে ছিল। আর মেঘা কি না মজা করছে। কুয়াশা রেগে বালিশ দিয়ে মেঘাকে মে রে বলল
” দূর হ তুই আমার চোখের সামনে থেকে জানিস কত ভয় পেয়েছিলাম সবসময় মজা না? ”
মেঘার হাসি যেনো থামছেই না।
” একদম হাসবি না মুডটাই নষ্ট করে দিলি।
মেঘা ভাব নিয়ে বলল
” আমার মুড নষ্ট করতে খুব ভালো লাগে ”
কুয়াশার বিরক্ত চোখে তাকালো কিছু বলল না
মেঘা উঠে বসে কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে বলল
” তুই যে আমাকে এতো ভালোবাসিস এ্যাকটিং টা না করলে তো জানতেই পারতাম না ”
কুয়াশা ভেংচি কেটে বলল ” কে বলেছে আমি তোকে ভালোবাসি? আমি বলেছি? ”
” না বলিস নি কিন্তু এই যে উতলা হলি এটাই ভালোবাসা ”
” এহ আইছে ভালোবাসা নিয়ে পিএইচডি করে ফেলছিস যেনো ”
” ইয়েস। ভালোবাসলেই পিএইচডি করা হয়ে যায় ”
” তুই কিভাবে সিউর তুই রিদ ভাইয়া কে ভালোবাসিস এটা প্রেম ও হতে পারে ”
” প্রেম সহজে ভুলে যাওয়া যায় কিন্তু ভালোবাসা ভোলা যায় না। ভালোবাসায় অনুভূতিরা কাজ করে
” তোর কাজ করে? ”
” ওয়াভিয়েসলি ”
” বাহ! ভালো তো তাহলে বিয়ে করে ফেল ”
” করবো তো রিদ কে আমার ভালোবাসার জা লে ফেলি ”
” এটা ওয়ান সাইড লাভ। তোর কি মনে হয় তুই যেটা বলছিস সেটা পারবি? দেখ জোর করে কিছু হয় না ”
” হুম দেখা যাক কি হয় ”
” আর সারাক্ষণ রিদ রিদ করে আমার মাথা খা স না ”
” তা হয় তো কি করিস? ”
” জাস্ট ফিলিংস টা বোঝানোর চেষ্টা করি তোকে ”
” যাকে নিয়ে ফিলিংস তাকে বোঝালেই হবে আমাকে বুঝিয়ে কি করবি ”
” তুই জানিস তুই আনরোমান্টিক তুষার ভাইয়া যে তোকে নিয়ে কি করবে ”
কুয়াশা রেগে বলল ” সবসময় আজাইরা কথা বলিস কেন? থাক তুই তোর সাথে থাকলে মেজাজ ঠিক থাকবে না আমার ”
” হ্যা হ্যা যা দূর হ হার্ডলেস মেয়ে একটা ”
মেঘার কথাটা শুনেও কুয়াশা কোনো রিয়াক্ট করলো না মাথায় ঘুর ঘুর করতে লাগলো মেঘার কথা গুলো। কুয়াশা ড্রাইংরুমের সোফায় বসে ভাবনায় মশগুল হয়ে গেলো ” আসলেই কি আমি হার্ডলেস? তুষারকে নিয়ে কি কোনো অনুভূতিরা কাজ করে না আমার। কিন্তু ওনি দূরে গেলে আমি মিস করি এটা কি ভালোবাসা? ওনার হাসি, রাগ সব কিছু ভালো লাগে এটা ভালোবাসা? উহুম এটা ভালোলাগা তাহলে সত্যি আমি হার্ডলেস? আমার মনে কি ভালোবাসা নাই। কিন্তু আমি যে ভালোবাসি সবাইকে ওগুলো কি? দূর এসব ভেবে মাথা গুলিয়ে ফেলছি ”
দুপুরে যে যার রুমে রেস্ট নিচ্ছে কুয়াশা বসে রইলো একা। কিছুক্ষণ পর তুষার নিচে এসে কুয়াশা কে দেখে বলল
” চা বানিয়ে খাওয়াও তো ”
” এই দুপুরে চা খাবেন? ”
” হুম মাথা ধরেছে ”
কুয়াশা চলে গেলো কিচেনে। এখানে কোথায় কি আছে কুয়াশা জানে না খুঁজে পেতে একটু বেগ পেতে হলো। তুষার রান্নাঘরে দরজায় হেলান দিয়ে বুকে হাত বেঁধে দাড়িয়ে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে। কুয়াশা আনইজি লাগছে কুয়াশা মৃদুস্বরে বলল ” আপনি গিয়ে বসুন আমি চা দিচ্ছি ”
তুষার তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
” তুমি আদেও চা বানাতে পারো তো? ”
কুয়াশা ভ্রু কুঁচকে বলল ” আমি এতোটাও অপকর্মা নয় যে চা বানাতে পারবো না ”
” তাহলে আমি থাকলে সমস্যা কি? ”
কুয়াশা রাগ সামলিয়ে বলল ” থাকুন। আপনার ভালোর জন্য ই বলছিলাম ”
কুয়াশা চুপচাপ চা বানানোয় মনোযোগ দিলো। তুষার কুয়াশার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। কুয়াশা সেটা দেখে বলল ” এখানে এসে দাড়িয়েছেন কেনো আবার ”
তুষার ত্যাড়া ভাবে উত্তর দিলো ” কিচেন-রোমাঞ্চ করতে এসেছি বউয়ের সাথে কোনো সমস্যা? ”
কুয়াশা ফ্যালফ্যাল করে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল ” মানে ”
” মানে বুঝো না প্রাক্টিকালি করে দেখিয়ে দিতে হবে”
কুয়াশা চোখ বড়বড় করে বলল ” না না সেটা বলি নি… ”
তুষার বিরক্ত হয়ে কুয়াশাকে থামিয়ে বলল ” তুমি কি বলতে চাইছিলে বা বলতে চাইছ আপাততঃ শুনতে চাইছি না। চা নিয়ে রুমে আসো তোমার সাথে ইনপ্টেন কথা আছে ”
কুয়াশা শুকনো ঢোক গিলে বলল ” রুমে কেনো? এখানেই বলুন। ”
তুষার এবার তীক্ষ দৃষ্টিতে শান্ত কন্ঠে বলল
” কেনো রুমে গেলে কি সমস্যা তোমাকে আমি খে য়ে ফেলবো? ”
কুয়াশা তুষারের দৃষ্টি দেখে মনে হলো এখনি ও ভ্যানিস হয়ে যাবে। দ্রুত কন্ঠে বলল ” না না কোনো সমস্যা নাই আপনি যান আমি আসছি ”
তুষার গটগট করে চলে গেলো। কুয়াশা যেনো এতোক্ষণে জমিয়ে রাখা শ্বাস ফেলে হাফ ছেড়ে বাচলো। এতোক্ষণে ঠিক মতো শ্বাস নিতেও পারছিল না। চা কাপে ঢেলে তুষারের রুমে নক করে বলল ” আসবো? ”
” হুম ”
তুষার চোখ বন্ধ করে সোফায় শুয়ে ছিলো কুয়াশা সোফারা সামনে টি-টেবিলে চা রেখে বলল
” নিন খেয়ে দেখুন আমি চা বানাতে পারি কি না ”
তুষার উঠে বসে বলল ” তোমার চা তুমি আগে টেস্ট করে বলো কেমন হয়েছে ”
” আমি কেনো খাবো? ”
” আমি চলে আসার পর তুমি কোনো কারসাজি করেছো কি না? বি ষ টিষ ও মিশিয়ে দিতে পারো ”
কুয়াশার মন কেঁদে উঠলো ‘ সবাই এতোটাই খারাপ ভাবে তাকে ‘
কুয়াশা তুষারের কাপ থেকে একচুমুক চা খেয়ে দৃষ্টি নত রেখে বলল ” আমি এতোটাও খারাপ নই যে মানুষকে মে রে ফেলবো ”
তুষার কুয়াশার দিকে তাকিয়ে কাপে চুমুক দিয়ে বলল
” জানি তো তা বলো তোমার বানানো চা তোমার কেমন লাগলো ”
কুয়াশা মুখ ঘুরিয়ে বলল
” জানি না ”
” আমার পাশে এসে বসো ”
” না আমি এখানেই ঠিক আছি ”
” ভয় পাচ্ছো আমাকে? ”
কুয়াশা জেদ করে তুষারের পাশে বসে বলল
” ভয় পাবো কেনো? আপনি বাঘ নাকি ভাল্লুক? ”
তুষার চা-টা শেষ করে কুয়াশার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। কুয়াশা চমকে বলল
” কি করছেন? ”
” মাথা টিপে দাও ”
কুয়াশার কেমন লাগছে। নার্ভাস? তবুও কাপা হাতে তুষারের মাথা টিপে দিতে লাগলো।
” আপনি কিছু বলতে চাইছিলেন ”
” হুম। মেঘা আর রিদের মধ্যে কি চলে? আমি জানি তুমি জানো তাই লুকিয়ে লাভ নেই ”
কুয়াশা ভয় পেলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ