প্রেমহিল্লোল পর্ব-০৩

0
28

#প্রেমহিল্লোল||০৩||
#তাসনীম_তামান্না

জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি সাথে রোদের সংঘর্ষ হয়ে। রংধনুর দেখা মিলছে। মাতাল হওয়া বয়ছে। ওরা সকলে ছাদে এসেছে রংধনু দেখতে সবচেয়ে বেশি আনন্দ করছে কুশ আর শান।

কুয়াশা রেলিংয়ে হেলান দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েকদিন হয়ে গেছে কেউ আর তুষার, কুয়াশার বিয়ের ব্যাপারে কোনো রকমের কথা বা প্রশ্ন করে নি। কুয়াশার কাছেও কেমন লাগছিলো। তুতুলের চোখের দিকে তাকাতে বা আগের মতো সহজ হতে পারছে না।

তুতুল আর পাখি কফি এনে সকলকে দিলো। তুতুল কুয়াশার পাশে দাঁড়িয়ে বলল
–তোমার কী কিছু হয়েছে? আমার সাথে কথা বলছ না কেনো? রেগে আছো?

ও অপ্রস্তুত অস্বস্তি নিয়ে বলল
–তেমন না ভাবিপু আসলে ভেবেছি তুমি রেগে আছো।

–আরে দূর, ওসব কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। একদম মন খারাপ করে থেকো না। তুমি এমন ভাবে থেকো না আবার আগের মতো হও।

কুয়াশা হেসে তুতুলের গাল টিপে দিয়ে বলল
–ঠিক আছে, ঠিক আছে মন খারাপ করো না। আমি কুয়াশা ছিলাম কুয়াশাই থাকবো।

ওর বাচ্চামিতে তুতুল হাসলো। ওর ডাক পড়ায় ও চলে গেলো। মেঘা এলো ততক্ষণই কুয়াশার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল
–কী রে ভাবি কী তোকে রাজি করাতে এসেছিল? এতো কী কথা বলছিলি?

কুয়াশা চোখমুখ কুঁচকে বলল
–সব কথা তোকে শুনতে হবে? যা দূরে গিয়ে মর।

মেঘা মন খারাপ করে বলল
–ক’দিন পরেই তো চলে যাবো এমন করিস কেনো?

কুয়াশারও মন খারাপ হলো কিন্তু প্রকাশ না করে বলল
–তোর সাথে চলে যাবো সমস্যা নেই।

–তুই তুষার ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে ভালো হতো দুজনের একসাথে একদিনে বিয়ে হয়ে যেতো। কেনো যে এতো ঢং করিস। আমার একটা দেবরও নেই যার সাথে তোর সেটিং করিয়ে দিবো কী এক জ্বালা।

–তুই চুপ করবি! বিয়ে বিয়ে করে মাথা খাস না। আমি বিয়ে টিয়ে করছি না।

–এটাই তো আমার সমস্যা তুই একা কেন সবার আদর খাবি। এই রিদ ব্যাটাকে ভালোবেসে সব গেলো নাহলে আমিও বলতাম বিয়ে করবো না উহুমম…! চল তার চেয়ে এক কাজ করি। তুই আর আমি রিদকে বিয়ে করে নি। দুই সতীনে মিলেমিশে সুখে সংসার করবো।

কুয়াশা ওর কথায় ভয়ানক রেগে চিৎকার করতে গিয়েও চুপ করে হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–তুই কী কখনো মানুষ হবি না? নিজের হবু বর আর বোন সম্পর্কে এসব কেউ বলে? হৃদয় কাঁপলো না?

–চেঁতে যাচ্ছিস কেন? আর এতো খারাপ ভাবে নিচ্ছিসই বা কেনো?

–তো এতে ভালোর কী আছে? তোর পুরো কথাটাই তো খারাপ মাথা গরম করে ছাড়তে বাধ্য!

–এতো কিছুর মধ্যে আমার ভালোবাসা, স্যাক্রিফাইজটা দেখলি না? তোকে আর রিদকে খুবই ভালোবাসি বলেই দু’জনকে একসাথে চাই বলেই তো প্লানটা বললাম।

–তুই চুপ করবি? না-কি ধাক্কা মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিবো। অসভ্য মেয়ে মুখে কিছু আটকায় না।

–আমার ভালোবাসাটা দেখলি না? ভালোবাসাটা দেখ।

কুয়াশা মৃদু চিৎকার করে ‘মেঘা’ বলে ধমক দিয়ে জায়গায় থেকে প্রস্থান করতে করতে বলল
–তুই আমার সাথে কথা বলবি না।

কেউ ওদেরকে খেয়াল করলো যে যার মতো ব্যস্ত। মেঘা একা একা হাসতে লাগলো।

——

মেঘার বিয়ের তোড়জোড় পুরোদমে শুরু হয়েছে। শপিং বাড়ি সাজানো, সেন্টার হল সাজানো। বড় ভাই কুশান আর মেঘ সব দিকে খেয়াল রাখছে। আত্মীয় স্বজনরা ইতিমধ্যে আসা শুরু করেছে। তুতুলের বাবা-মাও এসেছে প্রথম প্রথম কুয়াশার তাদের সাথে কথা বলতে লজ্জা, অস্বস্তি লাগছিলো। কিন্তু তিশা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সহজ করে নিয়েছে।

তুষার এখনো দেশে ফিরেনি। কবে ফিরবে সে ব্যাপারে কাউকে কিছু জানায় নি। শুধু বলেছে আসবে। কিন্তু কবে, কখন আসবে কারোর জানা নেই। তুতুল সেই ঘটনার জন্য তুষার আসতে লজ্জা, সংকোচ করছে ভেবে ভাইকে ফোন দিলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছে যে করেই হোক ভাইকে আনবে। দুইবার রিং হওয়ার পর তুষার ফোন ধরলো তুতুলের রাগ হলো রাগে, জিদে বলল…

–বিয়ে দিয়ে বোনকে পর পরে দিয়েছো? এখন আর বোনের কথার দাম নেই? বোনের দাম নেই? যে ফোন ধরছ না।

তুষার শান্ত গলায় বলল
–কী হয়েছে? রাগ করছিস কেনো? ব্যস্ত ছিলাম সেজন্য লেট হলো এতে এতো রিয়াক্ট করার কী আছে?

তুতুল এবার নাক টেনে টেনে কেঁদে উঠলো বলল
–না রিয়াক্ট করার অধিকার নেই আমার কেউ না আমি তোমার, বিয়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ পর করে দিয়েছ। আমার কথার কী কোনো মূল্য আছে? বড় ভাবির পরিবারের সবাই চলে এসেছে আর তুমি? থাক আসতে হবে না।

তুষার চুইংগাম চিবাতে চিবাতে থেমে গেলো দৃষ্টি সমুদ্রের উৎতল টেউ তীরে এসে বারি খাচ্ছে সেদিকে।
–ঈশানও এসেছে?

বোকা তুতুল ভাইয়ের কথার মানে বুঝলো না নিজের মতো করে বলল
–এসেছেই তো সব ভাইয়েরা কী তোমার মতো? কবে আসবে কী করবে কিছু বলছো না। শুধু বলছ আসবে আচ্ছা তুমি আদেও আসবে তো? না-কি মিথ্যা বলে আশা দিয়ে রেখেছো।

তুষার থমথমে গলায় বলল
–আসবো

–দেশে কবে আসবে? এয়ারপোর্ট থেকে তোমাকে আনতে যাবো। সোজা এবাড়িতে আসবা কোনো না শুনবো না।

ওদের কথার মাঝে কুয়াশা তাড়াহুড়া করে এসে বলল
–ভাবিপু, তোমাকে আন্টি মানে তোমার আম্মু ডাকছে, ওনার সিড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছে। পা-ও ব্যথা করছে। তুমি যেতে না পারলে বলছে ওনার মেডিসিনগুলো দিতে।

–তুমি যাও আমি নিয়ে আসছি।

‘আচ্ছা’ বলে কুয়াশা চলে গেলো। তুষার জিজ্ঞেসা করলো
–কে এসেছিলো?

–কুশু মায়ের পায়ের ব্যথাটা আবার বেড়েছে।

তুষার চুপ থাকলো। তুতুল ও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
–তুমি কী কুশুর জন্য আসতে চাইছ না ভাইয়া?

–কেনো? তোর ননদকে কী আমি ভয় পাই? যে ওর জন্য যেতে চাইবো না।

–তেমনটা নয় ভাইয়া। আসলে তুমি সংকোচ করছ সেটা বোঝাতে চাইছি।

–আমি দেশে ফিরেছি। কক্সবাজার সমুদ্রে বন্ধুরা মিলে বেড়াতে এসেছি।

তুতুল মৃদু চিৎকার করে বলল
–কী তুমি এসেছ? আগে জানাও নি কেনো?

–আগে জানালে কী হতো? আসছি কাল। বেশি ঘ্যানঘ্যান করবি না। যা মায়ের পায়ে তেল মালিশ করে দে, মেডিসিন খাইয়ে দে। রাখছি।

তুষার ফোন কেটে সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে এগিয়ে গেলো। অস্পষ্ট স্বরে বলল
–কুশু ছোট বেবি, তোমাকে কাঁদতে আসছি। আর ইউ রেডি ফর দ্যাট!

চলবে ইনশাআল্লাহ