#প্রেমহিল্লোল||০৪||
#তাসনীম_তামান্না
ঠিক দুপুরে মেঘলা আকাশ শীতল বাতাসে ভ্যাপসা গরম কিছুটা দূর হয়েছে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে সকলে যে যার মতো শুয়ে বসে গল্প করছে। তখন তুষারের আগমন ঘটলো। বাসার মেন দরজা খোলায় ছিলো। তুতুল ড্রইংরুমে এঁটো থালাবাসনগুলো জড়োসড়ো করছিলো। তুষার বাসায় ডুকতে দেখে সব রেখে দৌড়ে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
–ভাইয়া তুমি এসেছো? এতো দেরি করলে কেনো? আমার কথার তো কোনো দমই নেই।
–তোর কথার দাম না থাকলে আসতাম না।
তুষারকে নিয়ে সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। প্রথম প্রথম ইতস্তত করছিলো আস্তে আস্তে কথা বলতে বলতে সয়ে গেছে। তুষারের আসার খবর শুনে কুয়াশা সেই যে রুমে বসে আছে কেউ রুম থেকে বের করতে পারছে না। নানা বাহানায় রুমে বসে আছে। আজ মেহেন্দি অনুষ্ঠান অন্য কাজিনরা আনন্দে মতে কাজ করছে। কুয়াশা রুম থেকে নড়ছে না। মেঘা রেগে বলল
–তুই কী চাইছিস বলতো? আর রুম থেকে বের হবি না? একটু পর সন্ধ্যা নামবে। নিজেও সাঁজছিস না আমাকেও সাঁজাচ্ছিস না। আমার বিশেষ দিনগুলো তুই এভাবে মাটি করে দিবি?
–আমি কী করলাম? আমি না গেলে তুই বাসরও করবি না না-কি! এমনই কেমন কেমন জানি লাগছে।
–বিয়ে আমার আর তোর কেমন কেমন লাগছে? তুষার ভাইয়ের জন্য তুই লুকিয়ে থাকবি? পালিয়ে বেড়াবি? ছিহঃ তুই এতো ভিতু? ছিহঃ ছিহ্ ছিহ্
ওর কথায় কুয়াশা খেপে গেলো চোখ রাঙিয়ে বলল
–চুপ কর কে কাকে ভয় পাই। কাউকে ভয় পাই না।
–সে তো দেখতেই পাচ্ছি ভয়ে রুম থেকে বের হচ্ছিস না।
কুয়াশা আমতা আমতা করে বলল
–কে বলল? আমি রেডি হচ্ছি তুই যা। আমার রেডি হতে বেশি সময় লাগবে না।
মেঘা মিটমিট করে হাসতে হাসতে চলে গেলো। ঢিলটা ঠিক জায়গায় লেগেছে। কুয়াশা নিজে নিজে বকবক করতে করতে রেডি হতে লাগলো। সাথে আরো কয়েকজন কাজিন ও পাল্লা দিয়ে রেডি হতে লাগলো। কে কার থেকে বেশি সেজেগুজে সুন্দর হতে পারে। এক আয়নার সামনে ঠেলাঠেলি করতে লাগলো। কুয়াশা বকেও ওদের থামাতে পারলো না। আর না নিজে একটু জায়গা পেলো। ওয়াসরুমের মিররে গিয়ে হালকা সেজে নিলো। এসে দেখলো তখনও ওদের হয়নি। মেঘার ওখানে গিয়ে দেখলো একজন চুল বাঁধছে, একজন সাজাচ্ছে, একজন গহনা পড়াচ্ছে। কুয়াশা নিজেও হাত লাগালো।
মেঘা গাঢ় সবুজ রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে আর সকলে লেমন কালারের ড্রেস, শাড়ি, যে যেমন পছন্দ করে তেমনটাই পড়েছে। ড্রইংরুমে নিচে সকলে বসেছে। তুষার এসে নিজেও কাজে লেগে পড়েছে। কুয়াশা কাজের ফাঁকে তুষারকে দেখতে পাই কিনা সেজন্য এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ওদের ফেন্ড রাহুল, অনু, ঈশান এসেছে। তারাও থেমে নেই কাজেকর্মে লেগে আছে। ঈশান ও রাহুল কাজে ক্লান্ত হয়ে দোকান থেকে ঠান্ডা কয়েকটা কোকের ক্যান কিনে নিয়ে এনেছে সকলের জন্য। সকলকে দিয়েছে। ঈশান তুষারকে দিতে এলো আগে তেমন একটা কথা হয় নি ওদের। সকল কাজ মোটামুটি কমপ্লিট তুষার চেয়ারে বসে ছিলো ঈশান ওর পাশে বসে ক্যান এগিয়ে দিয়ে বলল
–ভাইয়া এই নিন ঠান্ডা খান যা গরম পড়েছে।
তুষার ভ্রু কুঁচকে ক্যানটা নিলো।
–দুই বার দাওয়াত পেয়েছি বলে। ডাবল খাটিয়ে নিচ্ছে এটা অন্যায় না বলেন ভাইয়া?
তুষার উত্তর না দিয়ে ক্যান খুলে ঢকঢক করে খেতে লাগলো। পাশ থেকে কয়েকজন মেয়ে বলাবলি করছে ‘ছেলেটা কী হ*ট না? হ্যান্সাম!’ ওদের কান অবধি আসলো। তুষার সেদিকে তাকিয়েও দেখলো না। ঈশানের বিষম লেগে গেলো। মেয়েগুলো আর তুষারের কয়েকবার চোখ ঘুরিয়ে দেখলো। ঈশান তুষারের গা ঘেঁষে বসে বলল
–ভাইয়া আপনি তো ফেমাস। আপনার ছোঁয়া দেন আপনার ছোঁয়া যদি আমার দিকেও কোনো মেয়ে ফিরে তাকায়।
তুষার বিরক্ত হয়ে গেলো বলল
–দূরে সরো ডিসটেন্স মেইনটেইন করো ইডিয়ট।
ঈশান দূরে সরে গিয়ে বলল
–একটু ফেমাস বলে গবিরদের পাত্তা দিচ্ছেন না। ঠিক আছে ব্যাপার না একদিন আমিও হ্যান্সাম হয়ে কাউকে পাত্তা দিব না।
–গুড ট্রাই করতে থাকো। বেস্ট অফ লাক।
তুষার ক্যানটা বাস্কেটে ফেলে বাসার ভিতরে দিকে রওনা দিলো বিরবির করে বলল
–যাকে চাই সে পাত্তা দেয় না। অন্যরা আদিখ্যেতা করে। অসহ্য!
বাসার ড্রইংরুমে ডুকতে দেখলো মেয়ে, বাচ্চা, মহিলারা সকলে নাচ-গান করতেছে। সকলের দিকে চোখ বুলিয়ে কুয়াশার দিকে আঁটকে গেলো। হাস্যজ্জ্বল মুখে দু-হাত ভরে মেহেদি পড়েছে। উঠে ডাইনিং রুমের দিকে গেলো। দেখলো ওদিকটা ফাঁকা সকলে অনুষ্ঠানের দিকে তুষার ওর পিছনে পিছনে গেলো। কুয়াশা পানি তৃষ্ণায় এদিকে এসেছিলো। কিন্তু দেখলো একা এসে ভুল করে ফেলেছে। এদিকটায় কাউকে পাচ্ছে না হাতের মেহেদিও শুকায়নি। কিছু ধরতে গেলে ঘেঁটে যাবে। পিছনে ফিরে চলে যেতে নিলে সজোরে ধাক্কা খেলো কারোর বুকে মানুষটাকে না দেখে হাতের মেহেদি নষ্ট হয়ে গেলো কি-না দেখলো না নষ্ট হয় নি। চোখ তুলে তুষারকে দেখে চোখ বড়বড় করে তাকালো। ও ভ্রু নাচিয়ে বলল
–কী ব্যাপার কুশু বেবি। শুনলাম আমার ভয়ে না-কি রুম থেকে বের হচ্ছিলে না।
ওর ভয় মনে রেখে সাহস সঞ্চয় করে বলল
–মোটেও না। আমি কাউকে ভয় পাই না। আপনি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে আপনাকে ভয় পাবো?
–ওহহ ভয় পাও না বলছো? গুড গুড। বাই দ্যা ওয়ে, পানি খাবে? আমি দি?
কুয়াশা দু’দিকে অনবরত মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি দিয়ে বলল
–না না দরকার নেই। আমি কাউকে ডেকে নিচ্ছি।
তুষার ধমকে বলল
–চুপ করে দাঁড়াও নাহলে কিন্তু মেহেদি নষ্ট করে দিবো।
ওর ধমক খেয়ে কুয়াশা চোখের পলক ঝাপটে তাকিয়ে রইল। তুষার জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে ওর দিকে এগিয়ে যেতে ও বলল
–দূর থেকে দিন।
তুষার দুষ্টু হেসে ভ্রু নাচিয়ে ফিসফিস করে বলল
–কেনো? আমি কাছে গেলে নটি ফিল হয়? নটি গার্ল!
কুয়াশা চোখ বড়বড় করে বলল
–একদম বাজে কথা বলবেন না।
–হয়েছে এবার পানি নাও।
তুষার ওর মুখের সামনে গ্লাস ধরতে কুয়াশা পানি পান করে তৃষ্ণা মেটালো। ওর গোলাপি লিপবাম মাখা ঠোঁটে পানির বিন্দু লেগে ছিলো তুষার সেটা আঙ্গুলের ডগায় মুছে দিলো। কুয়াশা অপ্রস্তুত হয়ে দূরে সরে গেলো। তুষার দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–আমি ছুলে ফোস্কা পড়ে যায়? আর ঈশান ছুলে ভালো লাগে?
কুয়াশা ভয়ানক রেগে গেলো বলল
–ছিহ্! সবসময় ঈশানকে নিয়ে নোংরা কথা কেনো বলেন? কুশান ভাইয়া, মেঘ ভাইয়ার মতো ঈশান আর রাহুলও আমার ভাই তাদেরকে নিয়ে আমাকে জড়িয়ে নোংরা কথা বলে কী বোঝাতে চান? আমি বাজে মেয়ে! রাস্তার মেয়ে? তাই সবসময় এমন করেন? আমাকে এতো সস্তা মনে হয়?
কথাগুলো বলতে বলতে কুয়াশার চোখে পানি চলে এলো। ওর কথায় তুষার অস্থির হয়ে বলল
–না না আমি সেভাবে বলি নি তুমি আমাকে ভুল বুঝছ। আমি রাগের মাথায় বলে ফেলেছি।
–রাগের মাথায় হোক আর যেভাবেই হোক বলেছেন। আমি রাস্তার মেয়ে? ওসব মেয়ে?
তুষার ওর বাহু চেপে বলল
–জাস্ট সাট আপ। আমি ওসব বলি নি। হুঁশশ! কাঁদছ কেনো? আমি সেভাবে বলি নি। সরি! প্লিজ কেঁদো না। তোমাকে কাঁদাতে চেয়েছিলাম কিন্তু এভাবে না।
কুয়াশার কান্না থামলো না উল্টো বাড়লো। তুষার ওর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকা পানি গুলো মুছতে মুছতে বলল
–তুমি অকারণে কাঁদবে মেনে নিবো। কষ্ট, ব্যাথা পেয়ে কারণে কাঁদবে না। ভীষণ কষ্ট হয়।
পিছন থেকে তুতুল বলল
–ভাইয়া তোমরা কী করছো? কুশু কাঁদছে কেনো?
চলবে ইনশাআল্লাহ