প্রেমহিল্লোল পর্ব-০৭

0
24

#প্রেমহিল্লোল||০৭||
#তাসনীম_তামান্না

চারিদিকে উল্লাস থেমে নিস্তব্ধতা গ্রাস করে করেছে। অন্ধকারে ডুবে থাকা আকাশে চাঁদতারার দেখা নেই। মেঘা সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমে ঢলে পড়েছে। কুয়াশার চোখে ঘুম নেই উৎখুস করতে করতে উঠে বসছে আবার শুয়ে পড়ছে। ঘুম আসছে না শুধু তুষারের কথা মনে পড়ছে। না এটা প্রেমের না মনে হচ্ছে তুষার বাচ্চা মেয়েটার ক্ষতি করে দেয়। কালকে বাচ্চাটাকে বোঝাতে হবে। কিন্তু দুঃশ্চিন্তা কিছুতেই কমছে না। মেঘা ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে বলল

–কী রে? কী করিস এতো নড়েছিস কেনো? নিজে ঘুমা আমাকেও শান্তিতে ঘুমাতে দে। কাল বিয়ে তখন ঘুম পেলে ঘুমাতে পারব না।

কুয়াশাও ভাবলো কাল অনেক কাজ সেই সাথে মেঘার বিদায় ভাবতেই মন খারাপ হুরহুর করে বাড়তে লাগলো। তুষারের কথা সাইডে ঝেড়ে ফেলে রাখলো। কুয়াশা মেঘাকে জড়িয়ে ধরে শুলো মেঘাও ওর গায়ের ওপরে পা তুলে দিলো। কুয়াশা হেসে বলল
–পাগল একটা।

মেঘা ঘুমঘুম কণ্ঠে বলল
–তুইও।

কুয়াশা জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। ধীরে ধীরে সফলও হলো।

সকালে তপ্ত রোদে চোখ-মুখ পুড়লো, গরমে আরামে ঘুম ভেঙে গেলো। নিচে হইচই শুরু হয়ে গেছে। বাচ্চা কাচ্চাদের হাওকাও শুরু করে দিয়েছে। কুয়াশা উঠে দেখলো মেঘা শুয়ে আড়মোড়া খাচ্ছে। দু’জনে সব গুছিয়ে নিয়ে নিচে গেলো। মেঘা সাওয়ার নিতে গেলো। কুয়াশা সব গোচ্ছাছিলো মিলিকে দেখে ওর কালকের কথা মনে পড়লো। ততক্ষনাৎ মিলিকে ডাকলো বলল

–এই তুই কাল ঐ যে ভাবির ভাইকে কিছু বলছিস? কোনো রকমের কথা হয়েছে তোদের মধ্যে?

মিলি মন খারাপ করে বলল
–না গো, সময় সুযোগ পাচ্ছি না। ওনি তো আমাকে পাত্তায় দেয় না।

–শুন ওর থেকে দূরে থাকবি। ও কিন্তু মোটেও ভালো না। ওর বিদেশে অনেক গার্লফ্রেন্ড আছে। স্বভাব খুবই খারাপ। আর তুই এখনো ছোট আবেগের বয়স তোকে ঠকিয়ে চলে যাবে টেরও পাবি না।

মিলি চিন্তিত হয়ে বলল
–কিন্তু সবাই তো ওনার সুনাম করছিলো। ওনি না-কি অনেক ভালো ছেলে।

–সবাই কী আর ভিতরের খবর জানে? সবাই তো ওপরে ওপরে দেখবে। বিলেতি পোলাপান কী ভালো হয় তাদের ক্যারেক্টর লুজ হয়।

–তোমার কথা বিশ্বাস করবো কেনো? তুমি তো ওনাকে সহ্য করতেই পারো না।

–সহ্য করতে না পারার কারণই তো তোকে বললাম। বিশ্বাস না করার কী আছে? আমি কী তোর খারাপ চাইবো? আমার স্বার্থ কী? আমাকে বিশ্বাস করছিস না ওকে। তোর যা ইচ্ছে কর পরে যখন ধোঁকা দিয়ে চলে যাবে তখন আমাকে বলতে আছিস না।

কথাগুলো বলে কুয়াশা নিজের কাজে মন দিলো। মিলি দ্বিধায় পড়ে গেলো তুষারের কোনো খারাপ দিক ওর চোখে পড়ে নি। অবশ্য কোনো মানুষকে এইটুকু সময় চিনে বিবেচনা করা যায় না। কুয়াশার কথাও ফেলে দিতে পারছে না। বিদেশে কী না কী করে বেড়ায় কেউ তো জানে না। তাছাড়া তার মা’কে এসব বললে মা কিছুতেই মানবে না উল্টো ধরে বেধে ওকে কারোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। এসব কথা ভেবে ও শুঁকনো ঢোজ গিললো। কুয়াশা কাজের ফাঁকে আড় চোখে মিলিকে পর্যবেক্ষণ করলো। মিলি আমতা আমতা করে বলল
–তুমি ঠিকি বলেছ আপু। একটা মানুষকে সারাজীবনেও চেনা যায় না। সেখানে দু’দিন দেখে ভালোভেবে নেওয়াটা বোকামি। তুমি আম্মুকে এসব কিছু বলো না প্লিজ।

ও চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
–তোর আম্মুকে বলে দেবো ভেবে আমার সাথে নাটক করছিস? পিছনে তো ঠিকই তুষারের সাথে লাইন মারবি।

–এমা না না কখনো না। আমি এমন করবো না। তাছাড়া ওনি আত্মীয় ওনাদের সাথে ঝামেলাঝাটি হয় এমন কিছু করবো না প্রমিজ।

কুয়াশা হেসে ওর গাল টিপে দিয়ে বলল
–তুই মাঝে মাঝে ম্যাচুউরের মতো কথা বলিস শুনতে খুব ভালো লাগে। যা মজা কর। মন খারাপ করে থাকিস না।

মিলি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। কুয়াশাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কাজে মন দিলো। মেঘা গোছল সেরে অনুকে দেখলো রুমে আর কেউ নেই। অনু সকাল সকাল চলে এসেছে কিছু দরকারে কালকে বাসায় ফিরে যেতে হয়েছিলো। ওকে শুকনো মুখে দেখে বলল
–কী রে কী হয়েছে?

ও চমকে উঠে বলল
–কই কিছু না তো।

–বলে ফেল। এতো ঢং করিস না।

অনু বিছানার ওপরে পা তুলে আরাম করে বসে বলল
–ভাবছি বিয়ের পর তুই বরকে পেয়ে আমাদেরকে ভুলে যাবি।

ও কিছু বলবে তখন হইচই করে ইতি চলে এলো। মেয়েটা সবজায়গায় মাতিয়ে রাখে তারজন্য সকলের কাছে প্রিয় হয়ে উঠে। সে বাসায় ছিলো না বোনের বাসা থেকে সোজা বিয়েতে এটেনন্ড করতে এসেছে। হইচই থেকে হইচইপূর্ণ হলো। কুশ আর শান ফুপির বিয়েতে ভাব নিয়ে মজা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাথে এখন পেয়েছে ইতিকে তাদের আর কী লাগে। মেঘা ঠ্যাঁস মেরে বলল

–এতো তাড়াতাড়ি আসলে যে। বিয়ে হয়ে গেলে আসলে মাইন্ড করতাম না।

ইতি মন খারাপ করে মেঘাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–আসতে চেয়েছিলাম মেঘুপু। কিন্তু পরিস্থিতি…!

পাখি এসে বলল
–হয়েছে হয়েছে আর সেন্টি খেতে হবে না। সবাই খাবে আসো। সকাল থেকে তো কিছু মুখে দাও নি কেউ।

ইতি পাখিকে দেখে বলল
–পাখি আপু তোমার ভাই কই?

–সে কই আমার থেকে তোমার ভালো জানার কথা।

ইতি ওর অগোচরে দাঁত দিয়ে জিহ্বা কাটলো। পাখির সাথে কুয়াশাও সবাইকে সার্ভ করে দিচ্ছে। সকালের ব্রেকফাস্টের পাট চুকে গেলে। ইতি কুশ আর শানকে ঈশানের খোঁজে পাঠালো। ইতি কুয়াশার পাশে দাঁড়িয়ে বলল
–শুনো না,

–বলতে থাকো শুনছি

–আমার হবু শাশুড়িটা এমন হাড়ে বজ্জাত কেনো? সাথে তার ছেলেকেও ওর মতো বানিয়েছে।

কুয়াশা শব্দ করে হেসে বলল
–তুমি আছো কী করতে ভালো বানিয়ে নিও।

–তা তো করবো। এখন দেখি বেডা কোন মেয়ের সাথে টাংকি মারতেছে।

ইতি ঈশান কোথায় খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখলো বেডা বহুত বিজি মানুষ ও গিয়ে না দেখার মতো করে নিজের ইচ্ছাতে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল
–চোখে দেখোস না? মেয়ে দেখলে ধাক্কা খেতে মন চাই।

ঈাশন বিরক্তি দৃষ্টি ফেলে বলল
–দেখ মেজাজ খারাপ করবি না। চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা।

–হ সব বুঝি আমি থাকলে তো মেয়েদের সাথে টাংকি মারতে পারছিস না।

–ইয়েস। ইউ আর এ্যাপসুলিটলি রাইট।

ইতি রেগে ওর বাহুতে জোরে আঘাত করে চলে গেলো। তুষার ভ্রু কুঁচকে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলো তা দেখে ঈশান হেসে বলল
–কপাল বুঝলেন ভাইয়া। কোন কপাল নিয়ে এই মেয়ের সাথে প্রেম করতে গিয়েছিলাম। এখন আমাকে সহ আমার পরিবারকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায়। ব্রেকআপ করেছি। কিন্তু আমার বাপকে পটিয়ে ফেলেছে। এখন এই আপদের জ্বালা সহ্য করতে হচ্ছে।

তুষার হাসলো বলল
–তোমার তো প্রাউড ফিল করা উচিৎ এমন মেয়ে পেয়েছ। এই ছেড়ে দেওয়ার যুগে সে থেকে গিয়েছে আর কী চাই? তোমারও উচিৎ তাকে অবহেলা না করে আগলে নেওয়া নাহলে পরে আপসোস করতে হবে।

ঈশান তুষারের কথাগুলো ভাবলো সত্যি ইতির মতো মেয়ে হয় না। শুধু অতিরিক্ত ফাইজলামি করে যা ওর রাগ বাড়িয়ে দেয় কিন্তু মানিয়ে নিলে সমস্যা হবে না।

চলবে ইনশাআল্লাহ