#প্রেমহিল্লোল||১২||
#তাসনীম_তামান্না
মানুষ যা চাই তা পায় না, আর যা চাই না তাই পায়। মূল কথা, মানুষের ইচ্ছে বা পরিকল্পনা মতো তার কোনো কিছু হয় না হয় তার চেয়ে ভালো হয় নাহয় খুব খারাপ হয়। কুয়াশার সাথেও তেমনটিই ঘটেছে। ভেবেছিলো বাসায় এসে ভাবিদেরকে সবটা বুঝিয়ে বললে তারাই সবদিক সামলে নিবে। কিন্তু বাসায় ঢুকতেই দেখতে পেলো সকলে হাস্যজ্জ্বল, আনন্দ মুখর পরিবেশ। এতো খুশির কারণ ও বুঝতে পারলো না ওকে দেখে তুতুল টেনে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে বলল “কী গো ননদিনী এতো মিষ্টি একটা খবর তুমি নিজে আমাদেরকে জানাতে লজ্জা পাচ্ছিলে বুঝি?”
কুয়াশা অবুঝের মতো তাকিয়ে থেকে বলল “কী বলছ ভাবিপু কিছু বুঝতে পারছি না। কীসের খবর? আর এতো খুশি কেনো তোমরা? এসফেসিফিক কোনো রিজন আছে না-কি?”
মেঘ ওর মাথায় গাট্টা মেরে বলল “কী রে প্র্যাংক করছিস না-কি! নিজের বিয়ের খুশিতে সব ভুলে গেছিস? হবু বরকে এতোটাই পছন্দ হয়ে গেছে যে বিয়ের জন্য তর সইছে না? বিয়ের তারিখ ঠিক করতে কালই আসছে তারা!”
সকলের মুখে এমন সব কথা শুনে ও বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। মাথার নিউরনগুলো কাজ বন্ধ করে দিয়েছে সকলের হাসিখুশি মুখের দিকে তাকিয়ে রইল এদের খুশি নষ্ট করতে তার কিছু কথায় যথেষ্ট। কেয়া এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “ছেলে খুব ভালো। তুই সুখী হবি দেখবি।”
কুয়াশা ঝরঝরে করে কেঁদে উঠলো কেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল “মা আমি বিয়ে করব না।”
কেয়া মেয়ের মন খারাপ ভেবে আদুরে কণ্ঠে বলল “দূর পাগলি তুই যখন-তখন ইচ্ছে হবে আমাদের সাথে দেখা করতে আসতে পারবি। আমরাও যাবো। এভাবে কাঁদলে হয়? সব মেয়েদেরকে শশুর বাড়িতে যেতে হয়।”
কুয়াশার খুব রাগ হলো রেগে মাকে ছেড়ে বলল “হ্যাঁ হ্যাঁ বিয়ে দিয়ে আমাকে বিদায় করতে পারলেই তো তোমার শান্তি। আমি তো তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি। তাই তো এমন একটা খারাপ ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছো। একটা ভালো মনের রিকশা ওয়ালার সাথে বিয়ে দিতে চাইলেও কিছু বলতাম না। তোমরা যে যাই বলো ওমন খারাপ ছেলের সাথে কখনোই বিয়ে করবো না।”
আনন্দমুখর পরিবেশ মূহুর্তেই থমথমে হয়ে গেলো। সকলে ওর কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। কুয়াশার রাগে ফুঁসে কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেলো। কেয়া সবার দিকে তাকিয়ে বলল “ও কী বলে গেলো? খারাপ ছেলের সাথে ওকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে চাইছি? ও ওর বাবা-মার সম্পর্কে এমনটা ভাবে?”
পাখি গিয়ে শাশুড়িকে ধরে বলল “মা ওর কথা ধরছো কেনো? রাগের মাথায় মানুষ কত কী বলে তাই বলে ওর কথা ধরবে বাচ্চা মেয়ে বাদ দাও।”
কুশান এতোক্ষণ চুপ থাকলেও সবটা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে ছিলো এবার বলল “বাদ দেওয়ার মতো বিষয় নয়। ও তো গেলো স্বাভাবিক ভাবে এসে এমন রিয়াকশন দিচ্ছে কেনো? নিশ্চয়ই কিছু না কিছু হয়েছে নাহলে এভাবে কথা বলার মতো মেয়ে আমার বোন নয়।”
মেঘ ও সাই জানিয়ে বলল “আমারও মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটেছে। পাত্রপক্ষে কথায় বিশ্বাস করে হৈচৈ শুরু না করে কুশুর কাছ থেকে মতামত নেওয়াটা আগে জরুরি ছিলো। ভাবি, তুতুল তোমরা গিয়ে একবার শুনো ওর মতামত নাও কী বলে দেখো।”
কেয়া স্থির হয়ে বলল “ওরা যে কাল আংটি পড়াতে আসবে। তোদের বাবাকে কী বলবো?”
কুশান মাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল “ভেঙে পড়ো না মা। দেখি কুয়াশা কী বলে। বিয়েটা ওর মা, সংসার ও করবে। তাড়াহুড়া শয়তানের কাজ এভাবে একটা অঘটন ঘটে গেলে। তখন মেয়েকে পাবে?”
কেয়া আঁতকে উঠে বলল “এসব কী অলক্ষুণে কথা বলছিস। না না আমার মেয়ে সুখে শান্তিতে থাকবে ও যা চাইবে তা-ই হবে।”
পাখি, তুতুল ওদের কথার মাঝে কুয়াশার রুমে গেলো। রুমের ভিতর থেকে দরজা লাগানো। কুয়াশা চেঞ্জ না করে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে। পাখি তুতুল দুজনে ভীত হয়ে পড়লো রাগের মাথায় কী কুয়াশা নিজের ক্ষতি করে ফেলবে? পাখি দরজা ধাক্কা দিয়ে বলল “কুশু দরজা খোল। দরজা লাগিয়েছিস কেনো?”
–এখান থেকে যাও ভাবিপু। আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমাকে একা থাকতে দাও।
–কী হয়েছে সোনা? এমন করছিস কেনো? না বললে আমরা কীভাবে বুঝবো? ওখানে কী হয়েছে বল আমাদের
–কিছু হয়নি কী আবার হবে? তোমরা তো আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে পারলেই বাঁচো যাও আজই বিয়ে করবো সব আয়োজন করো।
–তোকে দরজা খুলতে বলা হয়েছে দরজা খোল এতো পাকনামি করতে বলেছে কে তোকে? দরজা খোল নাহলে তোর ভাইদের ডেকে দরজা ভাঙব এখন।
পাখি তুতুলের ধমকাধমকিতে ও দরজা খুললো। কান্নাকাটির জন্য চোখ-মুখ ইতিমধ্যে ফুলে গেছে। ওকে বিছানায় বসিয়ে পানিয়ে খাইয়ে তুতুল বলল “এবার কী হয়েছে সবটা বলো তো! না বললে আমরা বুঝবো কীভাবে?”
কুয়াশা কান্নাকাটি করতে করতে সবটা জানালো। ওরা অবাক হলো এতো ভালো ফ্যামেলির ছেলের ব্যবহার আচার-আচরণ এমন! তুতুল ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “তাই বলে কিছু না জানিয়ে এমন করবে? বড়মা কতটা টেনশনে পড়ে গেছে।”
পাখি বলল “ছেলেটা এমন? ওর পরিবার তো ভালো। ওমন পরিবারে ওমন ছেলে।”
–এমন হয় ভাবিপু। সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। সেখানে ও তো একটা মানুষ। আমার মনে হয় সবটা ঘেঁটে যাবার আগে সবাইকে জানানো উচিৎ। তুমি ভাইয়াকে গিয়ে জানাও। ওমন ছেলের সাথে কুয়াশা কিছুতে সুখি হতে পারবে না।
পাখি নিচে গিয়ে সকলকে ব্যাপারটা জানালো। কেয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে হা-হুতাশ করে বলল “এ কী সর্বনাশ করতে যাচ্ছিলাম মেয়ের।”
মেঘ বলল “ওদের এতো তাড়াহুড়া দেখে আমাদের আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো। ওরা এমন ভাবে সবটা করলো যেনো কুশুর কাছে না শুনি। কুশুও রাগের মাথায় সবটা মেনে নিলে কী হলো ভাবতে পারছো?”
মুন্নী বলেন “বাবাহ যা হওয়ার হয়ে গেছে এবার ভাইজান বাড়িতে ফিরলে ওনাকে জানিয়ে বিয়ে ভাঙার ব্যবস্থা করো না হলে ওরা কাল এসে আংটি পড়িয়ে গেলে। তখন আরেক অঘটন ঘটবে।”
পাখি বলল “হ্যাঁ, কিন্তু বাবাদের তো এতোক্ষণে চলে আসার কথা এতো দেরি তো করে না।”
মেঘ বলল “হয়তো কাজে আটকা পড়েছে। আবার মেয়ের বিয়ের খুশিতে বাজার করতেও যেতে পারে।”
মুন্নী ছেলের পিটে হালকা চাপড় মেরে বলল “সবসময় ফাইজলামি না?”
–আহ্ মা মারছ কেনো? যা সত্যি তাই বলছি। আর যদি সেটা হয় চলো কাল আমরা পিকনিক করি। না হলে বাজার গুলো শুধু শুধু কষ্ট করে করা হবে।
ওরা এটা-সেটা নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো। কুয়াশাও ফ্রেশ হয়ে তুতুলের সাথে নিচে আসলো। গোমড়া মুখে বলল “সরি আসলে ওভাবে বলতে চাই নি তোমরা আমার কাছ থেকে কিছু না শুনে না বুঝে বিয়ের জন্য নাচানাচি শুরু করে দিয়েছিলে তাই তো রাগের মাথায় বলে দিয়েছি।”
কেয়া বলল “থাক হয়েছে। আমরা কী তোর কথা শুনবো না না-কি বুঝবো না।”
মুহূর্তেই পরিবেশ জমজমাট হলো। কুশ, শান মিলে দুষ্টুমিতে মাতিয়ে দিলো। এরইমধ্যে কুশানের ফোনে ফোন আসলো। দেখলো কৌশল চৌধুরীর ফোন ধরে বলল “বাবা, কোথায় তুমি? এতো দেরি করছ কেনো? তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে তোমার সাথে কথা আছে…”
–এই ফোনের মালিকের কে হন আপনি? ইমিডিয়েটলি *** হসপিটালে আসুন রোগী ক্রিটিকাল অবস্থা।
চলবে ইনশাআল্লাহ